এটা মানুষের একটা নরমাল হিউম্যান টেন্ডেন্সি যে, স্মৃতিচারনমূলক কোন কিছুর বর্ননায় সে তার ছোটবেলাকে টেনে আনবেই। কারন আমাদের জীবনের অধিকাংশ গুরুত্বপুর্ন ঘটনাই আমাদের ছোটবেলায় ঘটে থাকে। যদিও আমরা তখন নেহাতই শিশু । তখন আমরা হই ঘটনার শিকার আর নাটকের প্রধান কৌতুক চরিত্র। ছোটবেলায় অনুভুতির পূর্ন বিকাশ হয়না বলে আমাদের চারপাশের ঘটনা আমরা শুধু ঘটতেই দেখি অনুভব্ কিংবা প্রকাশ ভঙ্গির অভাবহেতু সেসব ঘটনা বা স্মৃতি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। তা আর আলোর মুখ দেখে না। তারুন্যে কিংবা যৌবনে এসে তা মহীরুহ হয়ে ধরা দেয়। আর বার্ধক্যে তো কেবলই স্মৃতিচারন আর স্মৃতির জাবরকাটা।
এমন অনেকেই আছেন বৃষ্টি খুব ভালাবাসেন । কেউ কেউ বৃষ্টি দেখতে আর কেউ কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে ভালবাসেন। আমি আসলে ঠিক কোনটা ভালবাসি এ ব্যাপারে আমি আজো কনফিউজড। তারপরেও ছোটবেলা থেকেই বৃষ্টির সাথে আমার অগাধ সখ্যতা। বৃষ্টি হলেই স্কুলে যেতে হবে না এমন স্বতঃসিদ্ধ সহজ সমীকরন ততদিনে আমার আয়ত্বে। হা ভাতে পরিবারের ছেলে হিসাবে লাল নীল রঙের ছাতা মাথায় দিয়ে স্কুলে যাওয়ার মতো বিলাসিতা করা সম্ভব ছিল না। সুতরাং বৃষ্টির বদান্যতায় পঞ্চমুখ আমি। আমি আর আমার সহপাঠী কাজিন আসমা স্কুল কামাই করে বৃষ্টিতে ভিজতাম। আর এক্কা দোক্কা খেলতাম। বর্ষাকালে প্রায় প্রতিবছরই আমরা কলা গাছ দিয়ে ভেলা বানাতাম। সকাল বিকাল দুবেলা আমরা কলার ভেলায় ঘুরতাম আর বড় হয়ে একদিন সিনবাদের মতো নাবিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। আমাদের ভেলায় চড়ার সুযোগ দিয়ে আমাদের উপর দায়িত্ব পড়তো শাপলা তোলা ও শামুক কুড়ানোর। শাপলা বেশ ভাল একটা তরকারী হিসাবে সমাদৃত আমাদের এলাকায়। আর শামুক হাসের বাচ্চার প্রধান খাবার। কখনোবা আউশ ধানের ক্ষেতের মধ্যে ঢুকে পড়তাম বড়শি নিয়ে। আবার কখনো বা কোচ বা বশর্া নিয়ে । বিলের পানিতে কালো কালো জোক কিলবিল করত । কখনো দু একটা ভেলায় উঠে পড়ত সন্তর্পনে আমাদের গায়ে চুম্বন বসাত। জোক ভয় পাওয়া তো দুরের কথা হাত দিয়ে জোক ছাড়ানোর মতো মামুলি কাজটা আসমাও স্বচ্ছন্দে করতে পারত। আমি সবসময় থাকতাম জাহাজের নাবিক আর আসমা থাকত কেবিন ক্র। তবুও আহরিত শাপলা আর শামুক আর দুজন সমান ভাগ করেই নিতাম।
বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর হবে এমন সাবধান বানী প্রায়ই শুনতাম আমরা। তবে এর বাস্তব প্রমান আমার জীবনে কখনো ঘটেছে কিনা আমার মনে পড়ে না। উল্টো প্রচন্ড গরমে স্বর্দি জ্বর আর কাশিতে আমার অবস্থা সঙ্গিন হয়ে যেতো মাঝে মাঝে। বষর্াকালে আমাদের বাগান বাড়ি আর উঠান পানিতে তলিয়ে যেতো। মনে আছে ১৯৯৮ সালের বন্যায় একবার আমাদের উঠানে কোমর পানি হয়েছিল। সেজো কাকার বারান্দায় ইয়া বড় এক নৌকা বাধা থাকত সবসময়। আমরা সবজায়গায় নৌকায় করে যাতায়াত করতাম। আর একবার আমি এইটে পড়াকালীন ওই বড় নৌকাটা বেয়ে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। বাগান বাড়িতে কারেন্ট জাল দিয়ে বেশ মাছ ধরা হতো আর সন্ধ্যার পরে কোচ নিয়ে বের হতাম আমি আর আমার কাজিন সাইফুল। বর্ষার সেই দিনগুলো ছিল বেশ মজার এবং এ্যাডভেঞ্চারাস। বর্ষায় গ্রামের কাচারাস্তা প্রায়ই কর্দমাক্ত থাকত। আমাদের স্কুলে যাওয়ার রাস্তার অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। হাটু কাদা ভেঙ্গে আমরা স্কুলে যেতাম সদলবলে। আমাদের বাড়ি থেকে সামান্য দুরত্বেই ছিল বেশ বড় আকারের ভাঙ্গা রাস্তা। এবং সেখারে কাদার পরিমান ছিল এতই বেশি যে লুঙ্গি মালকোচা না মেরে যাওয়ার উপায় ছিলনা। স্থানীয় ইউপি মেম্বার দেবাশীয় কুমার লিটুর সৌজন্যে সেখানে সুপারি গাছ ও বাশ দিয়ে বেশ বড় এক সাকো তৈরি হলো। আমাদের বাড়ির এত কাছে এমন মহান উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানালাম বঙ্গবন্ধু সেতুর অনুকরনে "লিটুবন্ধু সেতু" নামকরন করে। বর্ষার দিনে কর্দমাক্ত রাস্তায় একবার মারামারির অভিজ্ঞতাও হয়েছিল আমার। পাশের বাড়ির জগদিশের সাথে বেশ ধুন্দুমার মারামারি লেগে গেল একদিন স্কুল ফেরার পথে। সেকি এলাহী কান্ড। কাদায় জামাকাপড় সব মাখামাখি। চেহারাও চেনা দায় হয়ে পড়েছিল।
যাই হোক সেদিন আর নেই্। সেই কলার ভেলায় চড়া, শাপলা শাালুক তোলা, মাছ শিকার সবই আজ ফিকে হয়ে গেছে। কোথাও এক ফোটা রং নেই। যা দেখি আজ সবই যে সাদাকালো। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই যে, এখন জোক দেখলেই বেশ ভয় পাই আমি। কেননা এখন আর সেই ছোট্টটি নেই। সময় বদলেছে । বদলেছে মন মানসিকতা আর রুচির প্রকাশ। আজো বর্ষা আসে। ঝুম বৃষ্টিতেও ঘুম আসে। যদিও কোন একদিন ছিলাম দুরন্ত কিশোর। এখন বৃষ্টিতে ভিজতে ভয় লাগে,যদি জ্বর এসে ধরে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
M.A.HALIM
ছোট গল্পটা পড়ে বুঝতে পারলাম, আপনার শিক্ষার মান ও ভাষা জ্ঞান অনেক সমৃদ্ধ।। জীবনের সামান্য স্মৃতি দিয়ে অসাধারণ করে একটা গল্প লিখলেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
পন্ডিত মাহী
জানি না কতটা পড়েন... তবে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন... এখানেও। কারন আপনি যেমন আশা করেন আপনার লেখা কেউ পড়ুক, তেমনি অন্য সবাই আশা করে... ভালো থাকুন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।