ক্ষুধার পৃথিবী

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

ম্যারিনা নাসরিন সীমা
  • ৮৩
  • 0
  • ৬৯
( হায়রে পৃথিবী ! এখানে কেও ভাতের ক্ষুধায় মরে , কেওবা ভালবাসার ক্ষুধায় । খুনাখুনি হয় মানুষ , টাকা আর ক্ষমতার ক্ষুধা মেটানোর প্রতিযোগিতায় । আর কামনার ক্ষুধায় অমানুষ হয়ে যায় সিদ্দিক সাহেবের মত মানুষেরা ।যার বলি হয় নার্গিসের মত কত শত মিষ্টি মেয়ে .............)


(১)
দরজার সামনে বেশ কিছুক্ষণ থেকে দাড়িয়ে আছে নার্গিস । ভাবছে দরজার কড়া নাড়বে নাকি কলিং বেল এ চাপ দিবে । এমনিতেই বিশাল এই বিল্ডিং এ ঢুকতে অনেক কষ্ট হয়েছে তার। কিছুতেই দারোয়ান ঢুকতে দেয় না, পরে এক মহিলার পিছনে পিছনে চুপিচুপি ঢুকে পড়েছে।
বড় বড় দালানের এই সব বড় বড় লোকেরা বড়ই আজব প্রকৃতির । কড়া নাড়লে বুঝতে পারে ফকির , তখন আর দরজা খুলতে চায় না। আবার কলিং বেল দিলেও নানা প্রশ্ন , কে? কোথা থেকে আসছ ? ইত্যাদি । তখনও যদি বুঝতে পারে ফকির সাথে সাথে বলবে, মাপ কর
। নার্গিসের মনে মনে হাসি পায় ফকিরের কাছে আবার মাপ চাওয়া ? ভিক্ষা দিবি না শেষ ! আবার মাপ কিসের? মাপ করবো আমার আল্লায় ।
এই বিল্ডিং এর পাশের বস্তিতেই মায়ের সাথে থাকে । দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সে তৃতীয় । মা বাসা বাড়ীতে বুয়ার কাজ করে। বুয়া নামটা শুনলেও তার ভীষণ হাসি পায় । মাকে মাঝে মাঝে বলে, মা, তোমারে মালিক বেডিও বুয়া কয়, হের মাইয়াও কয় বুয়া, আবার মালিক ব্যাডাও কয় বুয়া, তুমি হইলা গিয়া হগল মাইনষের ফুপু। আমিও তোমারে বুয়া ডাকুমনে। বলে খিল খিল করে হেসে উঠে সে।
হিন্দি সিনেমা দেখে সে জানে যে বুয়া মানে ফুপু। মেয়ের কথা শুনে মাও হেসে ফেলে ।
চুপ থাক মাইয়া ! মায়েরে হে ফুপু ডাকব শয়তান কুনহানকার!
নারগীসের মায়ের তিন দিন ধরে অসুখ, ঘরে পড়ে আছে। কাল দুপুরে ভাইবোনেরা মিলে ঘরে যতটুকু খাবার অবশিষ্ট ছিল খেয়ে শেষ করেছে । তারপর থেকে উপোস । ক্ষুধার কষ্ট নারগীস মোটেই সইতে পারে না । তাই ঘরে কাউকে না বলেই এখানে চলে এসেছে । যদি কোন বাসা থেকে কিছু খাবার দেয় সেই আশায়। এ কাজ সে আগেও করেছে তবে প্রতিবার সে একই বিল্ডিংয়ে ঢোকে না । একেক বার এক এক বিল্ডিং এ যায়। আজ যেখানে এসেছে এখানে সে আর তিন মাসের মধ্যে আসবে না।
কিছুক্ষণ চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত দরজার কড়া নাড়ে নার্গিস । কলিং বেল চাপলে এরা বড়ই বিরক্ত হয়। দরজা খুলেই বলবে কড়া নাড়তে পারিস না ? কলিং বেল দেওয়াটা ফকিরের জন্য সাহসের বিষয় ।
কে ? ভিতর থেকে ভেসে আসে মহিলা কণ্ঠ । নার্গিস কোন কথা বলে না।
কে ? কথা বলছেন না কেন ? বলে দরজা খোলে এক ভদ্র মহিলা।
নারগীস ফিক করে হেসেই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে, বাপরে ! কি মোডা বেডী? হেই কিছু দিব না মনে মনে বলে।
ভ্রু কুঁচকে তাকায় রাহেলা দশ-বারো বয়সের মিষ্টি চেহারার মেয়েটির দিকে। ধমক দিতে গিয়েও থেমে যায়।
কি চাই ?
খালাম্মা কাল থন কিছু খাই নাই, দুইল্যা ভাত দিবাইন ?
এতবড় মেয়ে ভিক্ষা না করে বাসাবাড়িতে কাজ করতে পারিস না?
মাথা নিচু করে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মেঝেতে খোঁচাতে থাকে, কিছু বলে না । এসব কথা শুনে শুনে সে অভ্যস্থ।
কিরে কথা বলিস না কেন? কাজ করবি ?
বেডী, তুমি খাইয়া খাইয়া মোডা হইছ । আমি আছি না খাইয়া ! আমারে কও কামের লাইগা যাও । মোডা বেডী তোমার খাওন আমার লাগবো না, আবার মনে মনে বলে ।
থাকিস কোথায়?
ঐ যে আপনাগোর পাশের বস্তিতে।
আর কে কে থাকে?
মা, তিন ভাই বোন আছে।
আমার বাসায় কাজ করবি? ভাল বেতন দেব।
নারগীস রাহেলার মুখের দিকে চোখ তুলে তাকায়। তার কি যে হয় হঠাৎ করে বলে ফেলে, করমু ।
আচ্ছা, আয় ভিতরে আয়।
নারগীসকে নিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে রাহেলা । হায় আল্লাহ ! তোমার দুনিয়ার মাইনষের কত ট্যাহা ? ঘরে ঢুকে নারগীস চারদিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে ওঠে। মনে মনে কথা বলা তার একটা অভ্যাস ।
কি বিশাল বিশাল ঘর। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। ২০০০ স্কয়ার ফিটের এই ফ্ল্যাটে চোখ ধাধানো জৌলুস । নারগীস হা করে সেসব দেখতে থাকে । হঠাৎ করে খেয়াল করে ঘরের ভিতর অদ্ভুত এক ধরনের ঠান্ডা । শরীরটা যেন জুড়িয়ে আসছে । বাইরে দাড়িয়ে থেকে গরমে ঘেমে ভিজে উঠেছিল । মনে মনে ভাবে বড়লোকদের ঘর বুঝি ঠান্ডাই হয় । এ ধরনের বাসায় আসা এই তার জীবনে প্রথম ।
রাহেলা নারগীসকে রান্না ঘরে নিয়ে যায় সেখানে এক মহিলা রান্না করছে । আর একজন বটিতে বসে মুরগী কাটছে । যে মহিলা রান্না করছে তার চেহারা দেখলে মনে হচ্ছে তার মত অসুখী মানুষ পৃথিবীতে নেই । মুখটা আমলীর মত করে আছে। অন্যদিকে আর এক মহিলা এমন গভীর মনযোগের সাথে মুরগী কাটছে, যেন পৃথিবীতে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর কিছু নেই ।
খুব আশ্চর্য হলো নারগীস, তাদের দুজনের কেউই তার দিকে ফিরেও তাকালো না । রাহেলা যে বয়স্ক মহিলা রান্না করছিল তার দিকে ফিরে বলেন, কুলসুম বুয়া, একে কিছু খেতে দাও ।
বলে তিনি চলে গেলেন ।
কুলসুম বুয়া নিতান্তই নিরস কন্ঠে নারগীসের কাছে জানতে চায়, কই থেকে আইছস ?
ঐ যে পাশের বস্তি থেইকা ।
কাম করবি ?
হ । আরকিছু বলে না সে। রান্না ঘরের চারদিক দেখতে থাকে । রান্না ঘর এত বড় হয়? চার চারটা চুলা, থরে থরে হরেক রকম থালা বাটি, হাড়ি পাতিল সাজানো ।
কিছুক্ষণ পর কুলসুম বুয়া একটা থালায় করে ভাত, সবজী, মুরগীর মাংস এনে দেয় ।
ল খা ।
নারগীস থালা নিয়ে রান্নাঘরের এক কোনে বসে পড়ে দ্রুত। ভাত দেখে তার চোখ চক চক করে ওঠে । ইস! কতকাল যে মুরগীর মাংস খায় নাই! ভাই বোনদের কথা মনে হয় তার। আহা! ওরাও যদি থাকতো ?
ভাতে হাত দিয়ে চমকে ওঠে । হায় আল্লাহ ! এক্কেরে বরফের লাহান ঠান্ডা দেহী !
এটা যে ফ্রিজ থেকে বের করা ভাত বুঝে সে । কিন্তু সেদিকে কোন নজর না দিয়ে গোগ্রাসে গিলতে থাকে সেগুলো । খাওয়া শেষে হলে কুলুসম বুয়া তাকে রাহেলার ঘরে নিয়ে যায়। বিশাল ঘরের মাঝখানে বিশাল খাট, হিম ঠান্ডা । একপাশে ড্রেসিং টেবিল, সোফাসেট । আশ্চর্য এ ঘরের সবকিছুই সাদা । সাদা পর্দা, সোফার কাভার, কার্পেট সব....
নারগীস একটু কুন্ঠিত হয়ে পড়ে তার পায়ে ময়লা নেই তো ? কার্পেটে বসিয়ে রাহেলা পুলিশের মত জেরা করতে থাকে, কয় ভাইবোন, বাবা আছে কিনা, আগে কোন বাড়ীতে কাজ করেছে কি না । সে সব কিছুর ঠিক ঠিক জবাব দেয়। রাহেলা বলে, ঠিক আছে আজ যা। কাল তোর মাকে নিয়ে আসবি ।
মার বড় অসুখ আইতে পারবো না,
আচ্ছা তাহলে অসুখ সারলে পরে নিয়ে আসিস।
আইচ্ছা । বলে সে গুটি গুটি পায়ে বের হয়ে আসে ।
ঘরে এসে দেখে মা তখনো জ্বরে অজ্ঞান। ছোট ভাইটা শুধু তার পাশে । আর কাউকে দেখতে পায়না। সে যে এতক্ষণ ধরে অনুপস্থিত কারো নজরেই সেটা পড়েনি। নারগীস যে খেয়ে এসেছে সেটা আর কাউকে বলে না। কিন্তু নিজের মনে একটা অনুতাপ বোধ করতে থাকে । স্বার্থপরের মত সে নিজের ক্ষুধা নিবারন করে এসেছে। এই পৃথিবীতে নিজের মত আপন আর কেও নেই এটুকু বয়সে সে সেটা বুঝে।
বুবু, মার জ্বর খুব বাড়ছে। নার্গিসকে দেখে ছোট ভাইটা বলে ।
মায়ের কপালে হাত দেয় নার্গিস গরমে পুড়ে যাচ্ছে। হাতের স্পর্শে রমিছা চোখ মেলে তাকায়, লাল টকটকে চোখ।
মা খারাপ লাগতাছে?
হ, মাগো মাথায় একটু পানি ঢালো তালু ফাইটা যাইতাছে। থেমে থেমে বলে সে ।
নারগীস বুঝতে পারে না কিভাবে পানি ঢালবে । রাস্তার পাশের এই ঘরের মাটির মেঝে । চারদিকে চাটাই দেওয়া । আর পলিথিনে তৈরি ঘরের চাল । পানি ঢাললে পুরো ঘর ভিজে যাবে ।
আস্তে আস্তে বলে মা, এদিকে একটু সইরা আসো ।
রমিছা আস্তে আস্তে সরে আসে । ঘরের বাইরের দিকে। মাথাটা নীচে একটা পলিথিন দিয়ে পানি ঢালে নার্গিস । পানি গড়িয়ে যায় রাস্তায় ।
পানি ঢালে আর ভাবে একটু আগে দেখে আসা বেহেস্তের মত ঘরের কথা । মনে মনে বলে মানুষের ভাগ্য এত আলাদা আলাদা কেন ?
এরপর দুইদিন কেটে যায় । রমিছার এখনো জ্বর সারে নাই । কিন্তু জ্বর নিয়ে ঘরে বসে থাকলে গরীবদের চলে না । আবার সে বাসা বাড়ীতে কাজে যাওয়া শুরু করে।
সন্ধ্যায় রমিছা ঘরে আসলে নার্গিস সেদিনকার সব কথা খুলে বলে মাকে। এটাও বলে ঐ বাসায় সে কাজ করতে চায় । রমিছা অবাক হয়ে তাকায় মেয়ের দিকে ।
কেন পরের বাড়িত কাম করবা ? আমি করতাছি তাতে হয় না ? কুনুহানেই কাম করন লাগত না ।
না মা আমি করুম । হেরা খুব ভালা । আর এই কাছেই তো !
রমিছার মনে হয় একদিনেই মেয়ে অনেক বড় হয়ে গিয়েছে । ক্ষুধার যন্ত্রনা বুঝি মানুষকে অনেক কিছু শেখায়। সে নিজে কষ্ট করে কিন্তু বাচ্চাদেরকে আজ পর্যন্ত কোন বাসায় কাজে দেয়নি । সব বাসা তাদের জন্য নিরাপদ না ।
তবুও মেয়ের আগ্রহ দেখে আর যেহেতু বাড়ীটা কাছেই তাই রাজী হয়ে যায় । মনে মনে ভাবে একটা পেটের চিন্তা তার করা লাগবে না । তাছাড়া তার মেয়ে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী একে নিয়ে চিন্তা নেই । চিন্তা বড় মেয়েটাকে নিয়ে । বোকার শেষ ।
কিছুক্ষণ ভেবে বলে, কাজ যে লইবি, করবার পারবিতো ?
কোনদিন তো করস নাই। আর একবার ভাইবা দেখ । পরে আমারে কইতে পারবা না।
পারমু মা । হ্যারা মনে হইলো মানুষ ভালা।
ঠিক আছে, কাইল লইয়া যামুনে ।


(২)

পরদিন সকালে রমিছা মেয়েকে নিয়ে যায় । কিন্তু বিল্ডিংয়ে ঢোকা বড় কষ্ট । দারোয়ান ঢুকতে দিতেই চায় না অনেক কাকুতি মিনতি করার পর ফোনে কার সাথে যেন কথা বলে ঢুকতে দিল ।
ডাইনিং রুমের মেঝেতে নার্গিস এবং তার মা বসে আছে । চেয়ারে রাহেলা বেগম । দীর্ঘসময় জেরা চলার পর ঠিক হলো নারগীস কাজ করবে তার বেতন পাঁচশ টাকা । তবে মা ঘন ঘন এখানে আসতে পারবে না । নারগীস দুই মাস পর পর তার বাড়ী যেতে পারবে ।

নার্গিসকে রেখে রমিছা চলে যায় যাওয়ার সময় চোখে পানি চলে আসছিল কিন্তু সে মেয়েকে সেটা দেখাতে চায়না বলে ঘর থেকে দ্রুত বের হয়ে পড়ে। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে আঁচলে চোখ মুছতে থাকে আর মনে মনে বলতে থাকে, আল্লাহ ! আমাগো যে প্যাটে খিদা ক্যান দিলা? মাইয়াডারে পরের বাড়ীতে কামে দিয়া কেমনে থাকুম ?
শুরু হয় নার্গিসের কর্মজীবন। আগে কখনো কোন বাসায় কাজ করে নাই। কিভাবে করবে, বুঝতে পারে না মনে মনে একটু ভয় পায় সে ।
নার্গিস, এদিকে আয় ।
নার্গিস রাহেলার ডাকে দৌড়ে যায় তার ঘরে, জী খালাম্মা!
এদিকে আয় । এই কাপড়টা নে । এটা দিয়ে খুব সাবধানে ফার্নিচার গুলো মুছে ফেল।
ফার্নিচার কি ? তাকিয়ে থাকে সে ।
কিরে ? কথা বুঝিস না ? ধমক দিয়ে ওঠে রাহেলা। এই যে সোফা, আলমারী সব ভাল করে মুছবি।
ডিরেকশন অনুযায়ী কাজ করতে থাকে নার্গিস । ঘরের দেওয়ালে ঘড়িতে তখন এগারোটা বাজে। নার্গিস তার বড় বোনের কাছে ঘড়ি দেখা শিখেছে। বড়বোন ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়েছে তার কাছে সেও একটু একটু পড়াও শিখেছে কিন্তু কোনদিন স্কুলে যায়নি ।
একটা বিষয় তার অবাক লাগছে সেদিন যখন বাসায় এসেছিল তখনো শুধু রাহেলা বেগম আর দুই বুয়া ছিল । আজো তাই । মনে মনে বলে, পোলাপাইন নাই না কি ?
কাউকে জিজ্ঞাসা করবে সে সাহস পায়না । বুয়া দুইটার দিকে তাকাইলে মনে হয় সে তাদের শত্রু । কেমন করে যেন চেয়ে থাকে তার দিকে । নারগিস শুনেছে গরীবরা গরীবদের কষ্ট বুঝে । কিন্তু, এদের দেখলে মনে হয় কথাটা সত্য নয় ।
খালাম্মা, কাম শেষ আর কি করতাম?
রাহেলা মনোযোগ দিয়ে কি যেন পড়ছিল মুখ তুলে তাকায় তার দিকে। হঠাৎ করে নার্গিসের কেন জানি মনে হলো এই মহিলাকে সে যত ভাল মনে করেছিল তত ভাল নয়। তাকানোর ভংগীতে তা স্পষ্ট।
জী না । কাম শেষ না । রান্না ঘরে অনেক কাম আছে । মুখ বিকৃত করে উত্তর দেয় রাহেলা । তাকে নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে। কুলছুম বুয়া! একে চাউল দাও বসে বসে বাছুক।
কুলসুম বুয়া কুলায় করে চাল এনে ধপাস করে নারগীসের সামনে রাখে।
এইহানে বইয়া বইয়া চাউল বাছ। খবরদার একটা কালা চাউল ধান যেন না থাকে। পাইলে বিবিসাব তোমারে দিব ধইরা...।।

নার্গিস এ বাড়ীতে এসেছে এখনো দুই ঘন্টাও হয়নি । কিন্তু বাড়ীর মানুষগুলো তার সাথে এমন করে কথা বলছে কেন বুঝতে পারে না । সেদিন তো এমন করে নাই । হঠাৎ করে তার বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে । চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে থাকে । মায়ের কথা মনে পড়ে । কেউ যাতে চোখের পানি দেখতে না পারে তার জন্য মুখ আরো নিচু করে ফেলে চাউল বাছতে থাকে সে ।
সাদা ধবধবা লম্বা চিকন চাউল । তেমন কোন কালো চাউল নেই । মাঝে মাঝে দুই একটা ধান । কি সুন্দর ঘ্রান চাউলে ! ইচ্ছে হয় মুখে দুইটা দেয় কিন্তু সাহস কুলায় না । চাউল বাছতে বাছতে কুলসুম বুয়ার দিকে তাকায় । দুইজন বুয়া কাজ করছে কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নাই । আজব ! কথা ছাড়া থাকে ক্যামনে ?
খালা তোমার পোলাপাইন কয়জন ? নারগীস কুলসুম বুয়ার কাছে জানতে চায়।
তোর জাইন্যা কাম কি ? যা করতাছস কর ? জাউরা বেডী ! মনে মনে গালি দেয় নার্গিস । দরজায় কলিং বেলের শব্দ হচ্ছে সুন্দর গানের সুর ।
এই ছেরি ! দরজাটা খোল গিয়া । আফা আইয়া পড়ছে।
এতক্ষণে প্রথম কথা শুনলো নার্গিস ২য় বুয়ার কন্ঠে । তার নাম জানে না সে ।
আমার নাম নার্গিস ! ছেরি শব্দ শুনলে তার মেজাজ খারাপ হয় ।
ওরে বাবা ! ছেরির তেজ দেহ !
নার্গিস গিয়ে দরজা খুলে । সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারই বয়সের একটা মেয়ে । দেখতে পরীর মত । দরজা খুলে হা করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
এই তুমি কে ? হা করে কি দেখ ? দরজা ছাড়।
দরজা থেকে সরে দাড়ায় নারগীস ।
মম, হু ইজ সী ?
নিউ মেইড । পছন্দ হয়েছে তোমার ? তোমার সাথে খেলবে তোমার ঘরে শোবে।
ওহ, ফাইন । সি ইজ সো সুইট !
যাও অর্পা, স্কুল ড্রেস ছেড়ে ফ্রেস হয়ে নাও।
ওদের কথার অর্থ না বুঝলেও অর্পা যে রাহেলা বেগমের মেয়ে এটা সে বুঝতে পারে ।
অর্পাকে দেখে মন ভাল হয়ে যায় নার্গিসের । পরীর মত দেখতে ঐ মেয়েটার সাথে সে খেলবে , ওকে ছুঁতে পারবে ? ভাবতেই অবাক লাগছে তার।
বিকালে অর্পার ভাই অমিত বাসায় ফিরে চুপচাপ তার ঘরে ঢুকে যায় । ইউনিভার্সিটিতে পড়ে অমিত ।
আর অনেক রাতে ‌বাসায় ফিরলো এই বাসার মালিক। মোঃ সিদ্দিকুর রহমান । ব্যবসায়ী । ইয়া মোটা সোটা একটা লোক। দেখলেই ভয় লাগে । লোকটাকে মোটেই পছন্দ হয়নি নার্গিসের । দেখলেই কেমন একটা অভক্তি আসে ।
নার্গিসকে দেখেই বলে, এই তুই কে ? নার্গিস কিছু বলে না । ভয় লাগে লোকটাকে দেখে । রাহেলা এটা কি তোমার নতুন আমদানী ?
হ্যা ,কেন ? কোন সমস্যা?
সমস্যা হবে কেন তুমিতো দুইদিন পরপরই একটা করে নতুন হাজির কর । পাও কই ? মেয়েটা দেখতে বেশ মিষ্টি তো !
রাহেলা ভ্রু কুঁচকে তাকায় নার্গিসের দিকে । এই যা ! রান্না ঘরে গিয়ে বস, না ডাকলে এদিকে আসবি না । রাহেলা বেগমের রাগের কারণ খুঁজে পায় না নার্গিস ।



(৩)
অর্পার সাথে খুব দ্রুত খাতির হয়ে যায় নার্গিসের । খুব সুন্দর করে কথা বলে অর্পা । রাতে অর্পার ঘরে মেঝেতে শোয়ার ব্যবস্থা হয় তার। ঘরে ঢোকার সাথে সাথে অর্পা বলে ,
এই মেয়ে , নার্গিস নামের অর্থ কি তুমি জান?
জী না । মাথা নাড়ায় সে ।
নার্গিস হলো ফুলের নাম । বুঝেছো গাধা ?
আচ্ছা তুমি কি মশা খেতে পার ?
নার্গিস অবাক হয়ে তাকায় ,
হায় হায় ! কি কয়, পাগল নাকী ? মশা ? মশা মাইনষে কেমনে খাইব ?
আমার খালাতো ভাই খেতে পারে । খুব টেষ্টি নাকি । আমি কোন দিন খাইনি । তবে খেতে হবে । তুমি একটা মশা ধরে দিওতো । এ বাসায় মশা পাওয়া কঠিন ।
ক্ষুধার তাড়নায় কাজ নিয়েছিল নার্গিস । পেটের ক্ষুধা তো শেষ হয়েছে কিন্তু মনের ক্ষুধা তাকে দিন রাত তাড়া করে ফেরে । সারাদিন চরকীর মত ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হয় । রাহেলা বেগম কথায় কথায় ধমকায়, দুই বুয়াও কখনো ভালভাবে কথা বলে না। অমিত ভাইয়ের সামনে নারগীস সহসা যায় না । আর সিদ্দিক সাহেবকে দেখলে নার্গিসের বুকের মধ্যে ভয়ে ঢিপঢিপ করে । অথচ লোকটা কখনও বকা দেয়না । কাছে ডাকে, গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করে ।
সিদ্দিক সাহেবের এই আদরটা মোটেই পছন্দ হয় না। তার বয়স অল্প হলেও বুঝে, এই আদর স্বাভাবিক না । ফলে সিদ্দিক সাহেব যত সময় বাসায় থাকে সে রান্না ঘর থেকে সহসা বের হয় না।
নার্গিসের মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে হয়, ভাই বোনকে দেখতে মন চায়। কিন্তু সাহস করে রাহেলাকে বলতে পারে না । দুই মাসের জন্য তার বাড়ীতে যাওয়া নিষেধ । বাড়ি তো না পলিথিনের ঘর । তবুও তো ঘর । কত আদর আর মায়ার ছড়াছড়ি সেখানে । এ বাড়ীতে একমাত্র অর্পাকে তার খুব ভাল লাগে। রাতে দুজনে কুটুর কুটুর করে গল্প করে। অর্পা মাঝে মাঝেই বলে , নার্গিস আমাদের বাসা কেমন লাগেরে ? মিথ্যা বলবি না ।
ভালই আপা !
না, সত্যি বলিসনি, আমি জানি, তোর ভাল লাগে না । জানিস, আমারো ভাল লাগে না । সবাই কেমন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত । তুই কোনদিন মমকে দেখেছিস আমাকে আদর করে কাছে ডাকতে ? বা বাবাকে কখনো আমার সাথে গল্প করতে ?
মম তার বান্ধবীদের নিয়ে ক্লাবে ব্যস্ত । বাবা ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে । ভাইয়া তার পড়া আর বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটায় । আর আমি ? একা।
নার্গিস ভাবে অর্পার মনেও ক্ষুধা । ভালবাসার ক্ষুধা, পরিবারের ভালবাসা।
দিন যেতে থাকে । এর মধ্যে নার্গিসের মা একবার আসে মেয়েকে দেখতে । কিন্তু রাহেলা বেগম নার্গিসকে তার মায়ের সাথে বেশি কথা বলার সুযোগ দেয় না ।

নার্গিসের কাছে সবচেয়ে প্রিয় , রাতে যখন অর্পার রুমে ঘুমাতে যায় সেই সময়টুকু । মন্ত্রমুগ্ধের মত অর্পার কথা শুনে সে, তাকে নার্গিসের মানুষ মনে হয় না । মনে হয় অন্য জগতের কেউ।
কিছুদিন থেকে সে খেয়াল করছে সিদ্দিক সাহেব নানা অছিলায় তাকে ঘন ঘন ডাকেন । কোন সময় পানি আনতে । কোন সময় জুতা পরিস্কার করতে । তার মোটেই ভাল লাগে না । বিশেষ করে যখন রাহেলা বেগম বাড়ীতে থাকে না তখন তিনি বেশী ডাকাডাকি করেন । গতকাল রাহেলা বেগম বাসায় ছিলেন না । সিদ্দিক সাহেব তখনো অফিসে যাননি । এ সময় সিদ্দিক সাহেব ডাকেন ,
নার্গিস, জুতো জোড়া নিয়ে এদিকে আয় । নার্গিস জুতা সামনে রেখে চলে যাচ্ছিল।
কিরে কই যাস ? মুছে দে ।
সে তাকিয়ে দেখে পরিস্কার ঝকঝকে জুতা । বুঝতে পারে না এটাত মোছার কি আছে ? তবুও বলে, জী খালু ।
জুতা মোছার ব্রাশ এনে দেখে ইতিমধ্যে সিদ্দিক সাহেব পায়ে জুতা পরে ফেলেছে ।
এদিকে আয়, মোছ ।
নার্গিস নীচু হয়ে জুতা মুছতে থাকে ।
সিদ্দিক সাহেব নার্গিসের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে ওঠে, এ কদিনেই তোর স্বাস্থ্য তো বেশ ভাল হয়েছে রে !
নার্গিসের শরীর শির শির করে উঠে দ্রুত উঠে চলে আসে রান্না ঘরে । থর থর করে কাঁপতে থাকে সে । কুলছুম বুয়া দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে । পরম মমতায় গায়ে হাত বুলিয়ে বলে , হুন আমি একটা কথা কই ! এইহানে কাম করন লাগতনা । বাড়িত যা গা ।
আজ কুলছুম বুয়াকে খুব আপন লাগছে । সে তাকে যত খারাপ ভেবেছিল হয়তো ততটা খারাপ নয় । আসলে চেহারা দেখে মানুষকে চেনা কঠিন ।
নার্গিসের মনে সারাদিন কিসের একটা একটা অস্বস্তি চলতে থাকে । ছোট্ট বেলায় বাবা তাদেরকে ছেড়ে আর একটা বিয়ে করেছে । বাবার আদর কেমন সে জানেনা । কিন্তু তার এক মামা, খালু আছে তারা মাঝে মাঝে আসে । মাথায় , গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করে কিন্তু কখনো এমন খারাপ লাগেনি । বরং সেটাকে একটা পরম আশ্রয় মনে হয়েছে । কিন্তু সিদ্দিক সাহেবের এ কথা সে কাউকে বলতে পারেনা ।
রাতে ঘরে ঢুকতেই অর্পা বলে, নার্গিস ? কি হয়েছে ? তোর মন খারাপ কেন ?
নার্গিস অবাক হয় সারাদিন অর্পার সাথে তেমন দেখাও হয়নি । এমনেও দেখা হয়না । কারণ অর্পা ভোরে স্কুলে যায় । দুপুরে এসে খেয়ে কম্পিউটারে বসে খেলে । বিকালে একটু ঘুমিয়ে বের হয় গান ,নাচের ক্লাসে । আসতে আসতে সন্ধ্যা । তবে বাসায় থাকলেও লাভ নেই । কারণ কাজ ছাড়া তার রান্না ঘর ছাড়া অন্য ঘরে যাওয়া নিষেধ । তবে রাহেলা বেগম বাসায় না থাকলে প্রায় সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তার লোকজনের যাওয়া আসা দেখে । আর মানুষের হাঁটাচলা দেখে মানুষের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করে । ইদানিং এ কাজে সে খুব মজা পায় ।
কিরে কিছু বলিস না যে ?
কই মন খারাপ ? নাতো । অর্পার কথায় চিন্তা ছেড়ে বাস্তবে ফিরে আসে নার্গিস ।
আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমা !
তাদের মধ্যে আর কথা এগোয় না । কিন্তু আজ নার্গিস কিছুতেই ঘুম আসে না । বার বার মা ভাইবোনদের কথা মনে পড়ে আর চোখের পানিতে ভিজতে থাকে বালিস । আবার মনকে এই ভেবে সান্তনা দেয় আর মাত্র চারদিন তারপরেই দুই মাস পূর্ণ হলেই মা এসে নিয়ে যাবে বেড়াতে । এতো কাছে ঘর অথচ প্রায় দুইমাস ধরে ভাইবোনের মুখ দেখতে পারেনা । কি আজব দুনিয়া !
ভাবতে ভাবতে কখন যেন দুই চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে তার । কিন্তু হটাৎ করে পায়ে কিসের একটা স্পর্শে লাফ দিয়ে ওঠে । কিছু বোঝার আগেই কে যেন শক্ত হাতে তার মুখ চেপে ধরে ।ঘরে জিরো পাওয়ারের বাল্বের আলো কিন্তু লোকটাকে তার চিনতে মোটেই কষ্ট হয়না ।
খালুজান, ছাড়েন ! চিৎকার করতে চায় নার্গিস । কিন্তু পারেনা । এক হাতে মুখ শক্ত করে চেপে ধরে আছে পাষণ্ডটা ,অন্য হাত ঘুরছে ছোট্ট শরীরটার নানা জায়গায় ।
নার্গিস মরিয়া ওঠে । পুরো শক্তি একসাথে করে দুইপা ছুড়তে থাকে । পায়ের কাছে অর্পার পড়ার চেয়ার টেবিল । ক্ষুধার্ত পশুর মত ফোঁস ফোঁস করতে থাকে বাবার বয়সের অমানুষটা । হটাত করে পায়ের আঘাতে চেয়ার টা পড়ে যায় ।
চেয়ার পড়ার শব্দেই হোক আর অন্য কোন কারনেই হোক অর্পা বিছানায় উঠে বসে । মুহূর্তে নার্গিসকে ছেড়ে দিয়ে প্রায় দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় সিদ্দিক সাহেব ।
বিছানার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকায় নার্গিস ।অর্পা আবারো বিছানায় শুয়ে পড়েছে । ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝে উঠে বসা তার অভ্যাস । কিছু সময়ের জন্য তার স্মৃতি শুন্য হয়ে যায় বুঝতে কষ্ট হয় একটু আগে কি ধরনের ঘটনা ঘটে গেল তার সাথে । কিন্তু তার এতোটুকু চিন্তা করার বয়স এখনো হয়নাই যে কি ভয়ঙ্কর ঘটনা তার জীবনে ঘটতে পারত ।
একটু ধাতস্থ হয়ে দ্রুত দরজা লক করে নার্গিস । তাদের ঘরের দরজা সবসময় বন্ধ থাকে কিন্তু ভিতর থেকে লক করা থাকে না । ঘরের এক কোনে জড়সড় হয়ে বসে বাকি রাত কাটিয়ে দেয় । ঘটনার আকস্মিতায় এতো আতঙ্কিত যেন কাঁদতেও ভুলে গেছে সে ।
(৪)
সব রাত এক সময় শেষ হয় ।ভোরের আলো তখনো ভালভাবে ফুটে নাই । চারদিকে নিস্তব্ধ । ঘরের কোণ থেকে ধীর পায়ে উঠে আসে সে । অর্পার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে । কি গভীর নিশ্চিন্ত ঘুম ! চোখ জ্বালা করে ওঠে তার । আজ আর মেয়েটাকে তার কাছে পরীর মত লাগেনা ।
এক ধরনের হিংসা বুকের মধ্যে জেগে ওঠে । একই বয়সের তারা দুজনেই অথচ কি ভীষণ ফারাক দুজনের ভাগ্যের মধ্যে ।
খুব সাবধানে ঘরের মূল দরজার ছিটকিনি খুলে বের হয় নার্গিস একদম খালি হাতে । এই বাসায় আসার সময় সে যে কাপড় এনেছিল সেটা নেওয়ারও কোন রুচি হয়না তার । নীচে নেমে দেখে দারোয়ান গ্যারেজের এক দাঁড়িয়ে পাশে ব্রাশ করছে । গেট খোলা । একটা গাড়ী বের হচ্ছে । গাড়ীর পিছনে পিছনে সেও বের হয়ে আসে বাইরে ।
দশ বার বছর বয়সের মেয়ে সে কিন্তু আজ ওর মুখের দিকে তাকালে মনে হবে মেয়েটার বয়স যেন অনেক বেড়ে গিয়েছে । চটুল চঞ্চল মিষ্টি মেয়েটাকে সমাজ একদিনেই ধীর স্থির একটা কঠিন মানুষে পরিনত করেছে । মনে পড়ে যেদিন প্রথম এখানে এসেছিল পেটে ক্ষুধা নিয়ে সেদিনের কথা । হায়রে ক্ষুধা !
কিন্তু সে জানেনা এটাই শেষ নয় । কেবল শুরু, পৃথিবীতে শুধু পেটের ক্ষুধাই ক্ষুধা না । আরও কত ধরণের ক্ষুধা রয়েছে । এখানে কেও ভাতের ক্ষুধায় মরে , কেওবা ভালবাসার ক্ষুধায় । খুনাখুনি হয় মানুষ , টাকা আর ক্ষমতার ক্ষুধা মেটানোর প্রতিযোগিতায় । আর কামনার ক্ষুধায় অমানুষ হয়ে যায় সিদ্দিক সাহেবের মত মানুষেরা ।
বাইরে এসে বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে সে । কিন্তু পারেনা । বার বার ডানে বায়ে থু থু ফেলতে থাকে । মুখ বিকৃত হয়ে আসে অসীম এক ঘৃণায় । তবুও ধীর পায়ে সামনে সএগিয়ে যেতে থাকে সে.........।।

ক্ষুধার পৃথিবীতে এভাবেই চলতে থাকে জীবন......।।


আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার নাহিদ হোসেন ও আর যা যা বলতে চেয়েছিলাম দেখলাম প্রজ্ঞা আপুই তার সব বলে দিয়েছে। তো আর নতুন করে কিছু নাই বা বললাম।
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
খন্দকার নাহিদ হোসেন বড় সুন্দর করে লিখেছেন। খুব ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
Md.Nazmul Hasan Shanto emon golpo jeno likhte nahoy emon prithibi chai,jekhane manush manush ke tar mullayon kore.......darun ekta golpo porlam....tnx
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ম্যারিনা নাসরিন সীমা তানভির ভাই , আমি ছোট করে গল্প লিখতেই চাই কিন্তু কীভাবে যেন বড় হয়ে যায় । আমার সামনের গল্প টাও অনেক চেষ্টা করেও ছোট করতে পারলাম না । এখন ভয় পাচ্ছি আপনারা পড়বেন কিনা । পাঠক যদি না থাকে লিখে কি হবে ? হাহাহা !! আমার ভোটের দরকার নেই পড়লেই খুশী ।
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ম্যারিনা নাসরিন সীমা প্রজ্ঞা , তোমার মন্তব্য খুব ভাল লাগলো । আমিও বুঝতে পারছি না সুচনায় কিছু লেখা ঠিক কিনা । তবে আমার উদ্দেশ্য গল্পের মূল বিষয় সম্পর্কে পাঠক দের আগে থেকে একটা ধারণা দেওয়া । আর গল্পের পিছনে সময় দেওয়ার বিষয় যেটা সেটার বিষয়ে বলি , তুমি কি বিশ্বাস করবে আমি এই গল্পের বেশীরভাগ টুকু এক বসাতেই পিসিতে সরাসরি কম্পোজ করে পোস্ট করেছি । আমার বেশির ভাগ লেখাই সরাসরি টাইপ করা । কোন কাগজে নাই । খুব অলস আমি । মশা খাওয়ার বিষয়টা কিন্তু সত্যি । আমার ছেলে একদিন আমাকে বলছে মা তুমি কি মশা খেতে পার ? খুব মজা ।তার হাতে একটা মশা । আমার ভাইস্তার কাছে শিখেছে । সবসময় পজেটিভ ভাবতে চাই তাই এই পরিণতি ।
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
প্রজ্ঞা মৌসুমী গল্প শুরুর আগে সূচনাকথা দিয়ে ধারণা দেয়ার ব্যাপারটা ভালো না মন্দ বুঝতে পারছিনা। ভাবছিলাম কিছুক্ষণ আগেই জানা ভালো নাকি পড়তে পড়তে জানা...সামনে এগিয়ে মুগ্ধ হলাম। সুন্দের লিখেছেনল। গল্পে সময় দিয়েছেন সেটা স্পষ্ট। একবার ফেলুদা হবার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু আপনার লেখার নজর সব প্রশ্নের উত্তরই দিল। "বাড়ি তো না পলিথিনের ঘর। তবুও তো ঘর । কত আদর আর মায়ার ছড়াছড়ি সেখানে-" সুন্দর বললেন। তানভীর ভাই বলছিলেন গল্পটা বড়। কথোপকথন অনেক থাকায় গল্প বড় দেখাচ্ছে কিন্তু বেশিরভাগ চরিত্রের উপস্থিতি অল্প সময়ের জন্য এসেছে। নার্গিসের আলাপগুলাই ভালো লেগেছে পড়তে; বুদ্ধিমতী আর প্রাণবন্ত মেয়ে। আচ্ছা মশা খাওয়ার ব্যাপারটা সত্যি সত্যি ঘটেছে নাকি? আমি ভয়ে ছিলাম কি হয় নাগির্সের; আপনাকে ধন্যবাদ দিতেই হচ্ছে শেষটার জন্য। কান্না নয়, অসহায় ভাব নয়; প্রবল ঘৃণা নিয়ে সে যে চলে যাচ্ছে দৃশ্যটা ভাবতেই ভালো লাগছে। জানি বাস্তব জীবনে সচরাচর এমন হয়না। চাওয়া মেয়েরা সাহসী হয়ে উঠুক; প্রতিবাদী হউক সিদ্দিকদের স্ত্রীরা আর ভালো থাকা নিশ্চিত হউক নার্গিসদের। sob
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
তানভীর আহমেদ গল্প খুব ভালো হয়েছে। লেখায় গতি আছে। তবে এত বড় না করেও সম্পূর্ণ ভাব ফুটিয়ে তোলা যেত। তাতে গল্পের ক্ষতি না হয়ে বরং শ্রী বৃদ্ধিই হতো বলে মনে করি।
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১
সীমান্ত খোকন ক্ষুধার পৃথিবীতে এভাবেই চলতে থাকে জীবন.....মর্মস্পর্শী.।।
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
সাজিদ খান অসাধারণ লিখেছেন
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১
Lutful Bari Panna প্রথমে একটু একঘেয়ে লাগছিল। কিন্তু পরে একটানে শেষ করে ফেললাম। খুব ভাল লেখেন আপনি..
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

০৩ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪