চাঁদমারির মাঠে বিকেলে ক্রিকেট খেলতাম আমরা। পাশেই খাল, খালের ওপারে গ্রাম্য বউ-ঝিরা বসে বসে খেলা দেখত। অধুনা প্রবর্তিত T20 তখনই আমরা খেলে পুরনো করে ফেলেছি। (২০ ওভারের বেশী খেলা টিকলে তো)। একদিন এক হৈহৈ রৈরৈ কাণ্ড ঘটে গেল, খেলা দেখার দর্শক হয়ে এল তালুকদার বাড়ির কনিষ্ঠা কন্যা, গ্রামের সবচেয়ে হার্টথ্রব তরুণীটি এবং তারপর থেকে নিয়মিত।
দিকে দিকে সাড়া পড়ে গেল খেলোয়াড়দের মধ্যে। সব ব্যাটসম্যানদের মধ্যেই প্রবল শচীন শচীন ভাব প্রস্ফুটিত হল। বলটি মিস করেও খুব ভাব নিয়ে শ্যাডো করার অভ্যাস গড়ে উঠল। বোলারের দিকে তাকালে মনে হত ওয়াসিম আকরাম বা শোয়েব আক্তার বল করতে এগিয়ে আসছে। সহজ একটা ক্যাচ নিতে গিয়ে ফিল্ডার এমনভাবে ডিগবাজী খেতে শুরু করল যেন এইমাত্র পৃথিবীর কঠিনতম ক্যাচটি সে নিয়ে ফেলেছে।
ক্রিকেটীয় সাজ পোশাকের দিকেও সবার বাড়তি মনোযোগ দেখা গেল। এমনকি আমাদের লুঙ্গি পড়া ক্রিকেটারটিও একটা সাদা রঙের ট্রাকস্যুট বাগিয়ে ফেলল। আমাদের বাঁধা আম্পায়ার (যিনি আসলে খেলা এবং আম্পারিং-এর কিছুই জানেন না বলে তাকে আম্পায়ার করা হয়েছে। আসলে অন্য কোথাও সেট হচ্ছিল না।) নিয়মিত কালো সাদা পোশাক পড়ে মাথায় ক্যাপ লাগিয়ে আসতে শুরু করলেন। এমন ভাব নিয়ে আম্পারিং করেন যেন ডিকি বার্ড স্বয়ং। (সম্ভব হলে হয়ত রাতারাতি একটা ভূড়িও বাগিয়ে ফেলতেন)।
দুর্ঘটনাও কম ঘটছিল না। অনবদ্য অ্যাকশনে কভার ড্রাইভ মেরে ব্যাটসম্যান বোল্ড। কিংবা বোলারের ঘন ঘন ওয়াইড নো দেয়া। একদিন তো আরো সাংঘাতিক ব্যাপার। অ্যাকশনের তাল সামলাতে না পেরে এক বোলার মোহনীয় ভঙ্গীতে ধরনীপাত হয়ে- ঠোঁট কেটে রক্তারক্তি অবস্থা। তবু কারো পরোয়া নেই, রক্ত যখন দিয়েছি আরো দেব....। ওদিকে দুর্দান্ত ভঙ্গীতে ক্যাচ নিতে গিয়ে বল বাউন্ডারি পার করে দেয়া তো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। "বল যায় যাক আগে ডাইভ দিয়ে নেই"- নীতিটি দিন দিন জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলল। মজার ব্যাপার হল কেউই কিন্তু মূল ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলত না। কেউ যেন এ ব্যাপারে সচেতনই নয়। যেন কেউ দেখেই নি, নতুন কোন দর্শক এসে জুটেছে। আমাদের হার্টথ্রব কন্যাটি খেলার মধ্যকার এতসব রাসায়নিক পরিবর্তনে নেহাত ক্যাটালিস্ট বা প্রভাবকের ভূমিকাই পালন করছিল মাত্র।
তো এর মধ্যে হটাৎ একদিন তিনি অনুপস্থিত। ব্যাস খেলোয়াড়রা কেমন যেন মিইয়ে গেল। সবার মধ্যে একটা গা ছাড়া ভাব, কারোই খেলায় মন বসছে না। ধমকা ধমকি করেও ঠিক করা যাচ্ছিল না। ঠোঁটকাটা এক খেলোয়াড় একজন ফিল্ডারের মিস করা দেখে (এর চেয়ে কঠিন কঠিন মিস বিগত দিনগুলোতে অহরহ হয়ে আসছিল) হঠাৎ করেই খেপে গেল। (আসলে আমার ধারণা সে নিজেও ফেড আপ, হতাশা জনিত বিরক্তি আর রাগ থেকেই খেপে যাওয়া)। তারপর বিতং করে বর্ণনা করতে লাগল সেই অনুচ্চারিত কথাগুলি- যা এতদিন প্রতিটি খেলোয়াড়ের অবচেতনে বদ্ধমূল হয়ে নেপথ্য কুশীলবের ন্যায় কাজ করে যাচ্ছিল বা কাজ (অকাজও বলা যেতে পারে) করিয়ে যাচ্ছিল।
মাঠে উপস্থিত সবার মন আসলে কোথায় পড়ে আছে (জায়গাটির বর্ণনা যথেষ্ট রসসিক্ত, লোভনীয় এবং কিঞ্চিত শারীরবৃত্তি) এবং কোন বিশেষ দাওয়াইটি দিলে এই রোগ চিরতরে ভাল হয়ে যেতে পারে তার একটা সরস (আদিরসসহ) সমাধান যথেষ্ট ধৈর্য সহকারে বর্ণনা করে যেতে লাগল। আর আমরা সবাই আয়নায় নিজেদের মুখোমুখি হয়ে ভয়াবহ মজা পাওয়ার ভঙ্গীতে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।