কি???

মা (মে ২০১১)

Lutful Bari Panna
  • ২১
  • 0
  • ৩৬
এটা একেবারেই নিজের গল্প। তখন আমার বয়স হবে বছর তিনেক। ঘটনাক্রমে হাঠাৎ করেই আম্মার চাকরি হয়ে গেল। ট্রেনিঙের জন্য তাকে ঢাকা থাকতে হবে মাস ছয়েক। আমার ছোট একটা ভাইও আছে। তার বয়স তখন ছ’মাসের মত। এরকম ছোট দুটো বাচ্চা রেখেই তাকে যেতে হবে। তিনি মোটেই স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন না, বলা বাহুল্য। যে মহিলা হোস্টেলে তাকে থাকতে হবে সেখানে মাঝে মাঝে বেড়াতে যাওয়া যাবে কিন্তু সব সময় দুটো ছোট বাচ্চা নিয়ে থাকা সম্ভব ছিল না। সবাই ট্রেনিং নিয়ে ব্যস্ত। একটা একদম পিচ্চি আর একটা দুরন্ত এরকম বাচ্চাদের দেখেশুনে রাখার লোক নেই। আমাদের বাড়ি বরিশালে। ঢাকা যাওয়ার সহজ পথ তখন একমাত্র লঞ্চ। আম্মাকে লঞ্চে তুলে দিতে গেলাম। আমাদের দু’ভাইকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করলেন।

ছোট ভাইটা একেবারেই ছোট। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। ছোটভাইয়ের দায়িত্ব নিলেন আমার মেঝ চাচি। তাঁর তখন প্রায় একই মাপের আর একটা পিচ্চি আছে। দুজনকেই নিজের বুকের দুধ দিয়ে মানুষ করতে তিনি মোটেই অবিচার করেননি। এখনো আমার ছোট ভাই চাচিকে মা ডাকতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যাই হোক ওর তখন এতকিছু বুঝে ওঠার বয়স হয়নি। কিন্তু আমার তখন মায়ের অনুপস্থিতি বোঝার মত পর্যাপ্ত অনুভূতি হয়েছে। সারা রাত ঘুমের মধ্যে আম্মাকেই স্বপ্নে দেখলাম। দেখলাম বিকেলে আম্মাকে যে লঞ্চে তুলে দিয়ে এসেছি সে লঞ্চে আমিও আম্মার সংগেই যাচ্ছি, তার কোলের মধ্যে শুয়ে শুয়ে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে যখন বুঝলাম সবটাই স্বপ্ন, তখন মায়ের তীব্র অভাব বোধ আমাকে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। কোন পথে লঞ্চঘাটে যেতে হয় জানা নেই। তাই যে দিকে গিয়েছিলাম সে দিকেই রওয়ানা হলাম। নাজির পোল ব্রিজের কাছে এসে দেখলাম নীচে বড় বড় নৌকা বাঁধা। নৌকা যখন আছে, লঞ্চ এখানেই আছে ধারণা করে নীচের দিকে নামলাম। পানির উপর দিয়ে গাছের শেকড়-বাকড় তারপর আর একটা পথ। কিছু না ভেবেই ওদিকে পা বাড়ালাম। আসলে আমার সামনের দিকে যাওয়া দরকার ছিল কারণ আম্মা পেছনে কোথাও যাননি।

কিছুদূর গিয়েই পথ হারিয়ে ফেললাম। (আসলে তো হারানো পথেই আছি।) ফিরে এলাম। যে প্রবল আগ্রহ নিয়ে শেকড়-বাকড় পেরিয়ে ওপাড়ে গেছি ঠিক সে রকম আগ্রহ বা সাহস নিয়ে আর ফিরতে পারলাম না। সে রাস্তায়ই কাঁদতে কাঁদতে ঘুরতে শুরু করেছি। এর পর বাকিটা স্মৃতি থেকে বিস্মৃত হয়ে গেছে। বাকিটা আব্বার মুখে শোনা।

তিনি তখন স্কুলে গেছেন। খবর পেলেন আমাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরিপূর্ণ ঘোরের মধ্যে তিনি ক্লাস না করেই ফিরে আসতে শুরু করলেন। যে গাড়ীতে ফিরছিলেন সে গাড়ির এক ভদ্রলোক তার অবস্থা দেখে তাকে সংগে নিয়ে ঠিকানা জিজ্ঞেস করে বাসায় নিয়ে এলেন। আর আমি নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছি, কাঁদছি এরকম অবস্থায় কয়েকজন তরুণের মুখোমুখি হলাম। তারা আমার অবস্থা দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই বলেছি, আমি হারিয়ে গেছি। আম্মার কাছে যাব। বলেই কেঁদে যাচ্ছি ক্রমাগত। তারা আমাকে নিয়ে ফিরতি পথে রওয়ানা হলেন। এক একটা রাস্তা দেখি আর মনে হয় এটাই তো বাড়ির রাস্তা। তারা আমাকে নিয়ে সেখানে ঢোকেন। কিছুদূর ঢুকলেই মনে হয়, এটা না। আবার ফিরে আসি। অন্য রাস্তায় ঢুকি। তারাও প্রবল ধৈর্য নিয়ে আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে মাইকিং শুরু হয়েছে। বয়স্ক কয়েকজন এ অবস্থায় আমাদের দেখে ফেললেন। একটু আগে তারা মাইকিং শুনেছেন। সে ঠিকানা অনুযায়ী তারা সবাই মিলে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেলেন।

এ গল্পের কি কোন উপসংহার আছে? এটা একটা ঘটনা, প্রাত্যহিক অতি সাধারণ একটা ঘটনা। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে প্রতিনিয়ত হারায় আবার ফিরে আসে। কিন্তু সে হারিয়ে যাওয়ার পেছনের গল্পটা কি থাকে? তিন বছরের একটা বাচ্চা যে ঠিকমত হাঁটতেও শেখেনি, আশেপাশের জায়গা চেনার প্রশ্নই ওঠেনা। সে কিসের টানে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তার মাকে খোঁজে। খুঁজে না পেয়ে অচেনা রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে কাঁদে। পথ হারায়। এসব ঘটনা আমার মনে থাকার কথা না, অথচ মনে আছে শুধু সে তীব্র অনুভূতিটুকুর জন্যই। পথ হারিয়ে মাকে খুঁজে ফেরা সে শিশুটি আর আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ এখন। কিন্তু সে অনুভূতিটুকু আজো একইরকম আছে।

আর একটা কথা, আমরা মানবজাতি কেন যেন মনে হয় সেই পথ হারিয়ে কেঁদে কেঁদে ঘুরে বেড়ানো আমার শৈশবের মতই। আমরা কি খুঁজি, কি হারিয়েছি? শিশুটির বুকের ভেতরের সেই তীব্র অনুভূতিটুকু!! কি? কি???
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হাসান নিরো গল্পের মেসেজটা মোটামুটি ভাল লেগেছে। বর্ণনাভঙ্গী ঝরঝরে। কিন্তু লেখাটা ব্লগের মত হয়ে গেছে। ঠিক গল্প হিসেবে সার্থক না।
omor siddique valo legeche.apnar jonno shuvo kamona roilo.
বিন আরফান. অনুভূতিটা আমার নিজের সাথে কিছু আর স্ত্রীর সাথে কিছু মিলে গেল. যা আমাকে অতীতে নিয়ে কস্ট দিয়েছে. আমিও মাকে খুব ভালবাসি. যেরূপ আপনি. আর প্রশ্নের উত্তরটিও তাই. সামনে আরো লিখবেন. শুভ কামনা রইল.
মেহেদী আল মাহমুদ বাস্তব জীবনের ঘটনাই আপনার বণর্নায় গল্প হয়ে ধরা দিয়েছে। বেশ ভাল।
মাহমুদা rahman ঘটনাটি হৃদয় ছুয়েছে
খন্দকার নাহিদ হোসেন আপনার অনুভূতি হয়তো ছুঁতে পেরেছি কারন ভালো লেগেছে।
Lutful Bari Panna সবশেষে পৃথিবীর সব কিছুই যে বিজ্ঞান ঠিকঠাক মেনে চলে তা কিন্তু না। বরং যখন এসব অসংগতি আবিস্কৃত হয় তখনি বিজ্ঞানের মোড় ঘুরে যেতে থাকে। আগে প্রকৃতি, পরে বিজ্ঞান। প্রকৃতির সূত্রগুলো আবিস্কার করাই বিজ্ঞানের কাজ। আর সে কাজে ভুলভ্রান্তি তো অহরহ হচ্ছে। সবশেষে, ব্যক্তিগতভাবে আপনার সংগে কোন বিরোধ বা দ্বন্দ না, জাষ্ট আপনার বক্তব্যের ব্যাপারে দ্বিমত জানিয়ে গেলাম নিজের অভিজ্ঞতার আলোয়।
Lutful Bari Panna বিজ্ঞান তো পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞান। হয়ত আমার মত সাবজেক্ট তাদের চোখ এড়িয়ে গেছে। তবে স্মৃতি নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু হাইপো থিসিস আছে। কোন একটা ঘটনা আপনার কত বেশী মনে থাকবে তা নির্ভর করে ঘটনাটা আপনার মনে কতটা দাগ কেটেছে তার উপর। গল্পে এমন একটা কথা বলেছি ও বটে।
Lutful Bari Panna আর স্মৃতি প্রসংগে বলি- আমার তো ভাই আরো আগের কিছু কথাও স্পষ্ট মনে আছে। এখন বিজ্ঞানের হিসেবে আমি ব্যতিক্রমের তালিকায় পড়েছি কি না তাতো বলতে পারবো না। তবে এও ঠিক অনেক সময় আমার কালকের কথাও মনে থাকে না। আবার ২৫ বছর আগের পড়া নির্ঝরের স্বপ্নভংগ এখনো নির্ভুল মুখস্ত বলে যেতে পারি। বানিয়ে বলছি না। সার্ধশত রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রোগ্রাম উপলক্ষ্যে সেটা করতে পেরে নিজেই অবাক হয়ে গেছি।

০৩ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪