আইসিসি ট্রফি ১৯৯৭ এবং বিশ্বকাপের মোবারকীয় ভাবনার মাঠ পালানো গরু

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

দেওয়ান লালন আহমেদ
  • ২০
  • 0
  • ৫৭
১৯৯৭ সাল, বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দিতা করছে কেনিয়ার সাথে, ভীষন উৎকন্ঠা আর উদ্বেগের সাথে প্রতীক্ষা চলছে খেলা নিয়ে , টিভিতে খেলা দেখান হচ্ছে না, তবে রেডিও তে সরাসরি ট্রান্সমিটেড করছে আমাদের দুই সেরা ভাষ্যকার চৌধুরী জাফরুল্লাহ সরাফত এবং খোদা বক্স মৃধা । রেডিও তে আমরা সবাই সজাগ কর্ণপাত করে আছি বাসার পাশের চায়ের দোকানে , এই দোকানে আমরা বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেই বাড়ি তে এলেই, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি, সামনে কোরবানীর ঈদ, ছুটিতে বাড়ি এসেছি, ঠিক সেই সময়ে এই ঐতিহাসিক খেলাটি হচ্ছে,সুতরাং আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের সীমা নেই । আমরা থাকতাম কলোনীতে , পিতার কর্মস্থল হিসেবেই এখানে থাকা, কলোনীর ভিতরে স্কুল ,বিশাল মাঠ, মসজিদ, মক্তব সব আছে আর আছে প্রবেশ দ্বারে বিশাল এক আম্রকানন, স্কুলে পড়ার সময় মাঝে মাঝে ভাবতাম পলাশীর প্রান্তরের আম্রকানন বুঝি এই রকমই , ছুটিতে বাড়ি এলেই শুধু ঘোরাঘুরি আর আড্ডা ,বাসায় খাবারের সময় এবং ঘুমের সময় ছাড়া একদন্ডও থাকা হত না, বাসার পাশেই মাঠ আর মাঠের শেষ প্রান্তে ছিল বাবা চাচাদের ক্লাবঘর যার একপাশেই আমাদের সেই আড্ডার স্থান আলমগীর মামুর দোকান, সেই মামু আবার আমাদের বয়সী একাডেমিকভাবেও ইয়ারমেট ছিল, আমরা সিগারেট খেতাম ওর দোকানে খুব গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে পাছে বাপ চাচারা কেউ না দেখে ফেলে, সকলেই সিগারেট খেয়ে শেষের অংশটুকু মামুকে দিতাম আর মামু সুখ টান দিত চোখ বন্ধ করে, চোখ খুলতেই দেখত তার বাবা দাঁড়িয়ে, আর সকলের মাঝে হাসির রোল পড়ে যেত । যথারীতি আজকের এই খেলাশ্রবনের স্থান টিও আলমগীর মামুর দোকান, আর মাঠে বাধা আছে বিভিন্ন জাতের গরু যা কোরবানীর ঈদের জন্য কেনা , সবাই নিজ নিজ গরু গুলোকে বেধে ঘাস খাওয়াচ্ছেন, আর আমরা এই দোকানে বসে বসে ধুম্রটান এবং খেলাশ্রবন করছি, রেডিও তে ভেসে আসছে খোদা বক্স মৃধার সেই চিরচেনা স্বর- আটার সুজি নয়,ময়দার সুজি নয় , এ হচ্ছে মার্টিন সুজি, এগিয়ে আসছেন মার্টিন সুজি ! হাহাহাহা এটা কি ধরনের উপমা বোঝা গেল না ?খুব শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা চলছে, কেনিয়া প্রথমে বেটিং করে ৫০ ওভারে ২৪১ রান ৮ উইকেটে, স্টিভ টিকোলো করেছে ১৪৭ রান , ভীষন চিন্তিত সবাই , Duckworth-Lewis method এ বাংলাদেশ কে করতে হবে ২৫ ওভারে ১৬৬ রান, সকলেই খুব মনোযোগী খেলার মাঝে এর মধ্যে আমরা দেখতে পেলাম আমাদের এক বন্ধু (দূর সম্পর্কের!) জাহাংগীরের আব্বা মোবারক চাচা মাঠে তাদের ঈদের গরুটি কে ঘাস খাওয়াচ্ছেন, ভীষন peculiar এই মোবারক চাচার জন্য আমরা ঈদের দিনে বলতাম-ঈদ জাহাংগীরের আব্বা ! আমরা কিছুক্ষন পর পর চার ছক্কার কল্যানে চিৎকার মেরে উঠি আর উনি রাগী রাগী চোখে আমাদের দিকে তাকান, উল্লেখ্য যে সেই সময়েও ক্রিকেট এত বেশি পরিমানে জনপ্রিয় ছিল না , অনেকে জানতই না যে খেলা হচ্ছে, পাশেই ক্লাবে বসে অনেক চাচারাই খোশ গল্প করছিলেন,ক্যারাম খেলছিলেন কিন্তু খেলা শুনছেন এমন সংখ্যা খুব বেশি নয়, চার ,ছক্কা আর সিংগেলসে একে একে সেই মুহুর্ত এল, খালেদ মাসুদ পাইলটের সেই ত্রাতাবাহী রান টি হবার সাথে সাথেই সবাই এক সাথে হুররাহ দিয়ে চিৎকার আর সাথে বুড়িমার চকলেট বোমের ফটকাবাজ়ি, কিছুক্ষনের জন্যে আনন্দ আর প্রাপ্তির ডামাডোল আর উচ্ছ্বাসের দামামায় মোহিত হয়ে গেল সব, - বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলছে- এই আনন্দে ভাসতে ভাসতে আনন্দ মিছিল আর রঙ্গে রঙ্গিন হতে লাগলাম, সেকি আনন্দ যা বোঝান যাবে না , আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে ! সন্ধ্যার দিকে দেখি মাঠে জটলা , কি ব্যাপার ? ঈদ জাহাংগীরের আব্বা আমাদের সব বন্ধুদের ডেকেছেন, আমিও গিয়ে বিড়ালের মত চুপ করে বসলাম, সবাই নিস্তব্ধ- উনি একাই বলছেন। কি লাভ হইছে তোমাগো ? এই যে তোমরা সবাই হাউ হাউ কাউ কাউ করলা বোম ফুটাইলা তাতে কি কেউ তোমাগো দশ টেকা দিছে ? মাঝখান দিয়া তোমাগো বোমের শব্দে আর চিল্লানিতে আমার এত শখের কোরবানীর গরুটা রশি ছিড়া পালাইছে, এই গরু ধরতে আমরা চার জন মানুষ আট মাইল দৌড়াইলাম ,দৌড়াইতে দৌড়াইতে জান শেষ! এখন কও তোমাগো কী বিচার হউয়া দরকার ? আমি বন্ধু বুলেট, রানা, আজাদ, রুস্তম ,মাহাবূব আমরা সবাই জিহবাতে কামড় দিয়ে আছি হাসিঁ ঠেকাতে ,
আমরা বললাম কাকা আমরা এটা ইচ্ছা করে করি নাই, বাংলাদেশের এত বড় একটা খবর তাই আনন্দ আর ধরে রাখতে পারি নাই, উনি বলেন কি হইছে বাংলাদেশের ? আমাগো সবাইরে কি আমেরিকায় পাঠায় দিব নাকি ? তাইলে আর বড় খবর কি? বললাম বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে , উনি বলেন তাতে তোমাদের কি লাভ ? আমরা বললাম আমাদের লাভ কিছুই না তবে আপনার আরেকটা গরু যাতে দৌড় মারে সেই ব্যবস্থা হবে বিশ্বকাপে খেললে, এই কথা বলা মাত্রই আমরা যে যার মত দৌড়ে পালাই আর বলি
–বাংলাদেশ জিতে গেল
গরু একটা দৌড় মারল
মোবারকের ঈদ গেল
তাই না দেখে কান্না পেল,

আমরা সবাই হলুস্থুলে
বাংলাদেশকে জিতিয়ে নিয়ে
বিশ্বকাপে সবার মাঝে
প্রানের উত্তাপে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এস, এম, ফজলুল হাসান অনেক ভালো লেখেছেন , ধন্যবাদ আপনাকে
নষ্ট কবি "মানুষ ও মানবতার কন্ঠ" শিরোনামে মানবাধিকার বিষয়ক কবিতা উৎসব ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটর্স ডিফেন্ডারস্‌ এন্ড প্রেস সোসাইটি" ও "সার্বজনীন পরিবেশ মানবাধিকার সংস্থা"র উদ্যোগে এই ব্লগে আয়োজন করা হলো "মানুষ ও মানবতার কন্ঠ" শিরোনামে মানবাধিকার বিষয়ক কবিতা উৎসবের । আজ ১৮/০৪/২০১১ইং থেকে ২৫/০৪/২০১১ইং তারিখ বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই উৎসব চলবে । ২৬/০৪/২০১১ইং তারিখে রাত ৮টার পর ঘোষনা করা হবে কে হলো "মানবতার শ্রেষ্ঠ নবীন কবি" । পহেলা মে যেকোন সময় আমাদের সংস্থার অফিসে "মানবতার শ্রেষ্ঠ নবীন কবি" পদক প্রদান করা হবে এবং শ্রেষ্ঠ কবিকে আমাদের সংস্থার আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হবে । http://www.somewhereinblog.net/blog/ihrdps/29365173#c6338832 এখানে কবিতা লিখেন-মানবতার জয়গান গেয়ে উঠুন.
আহমেদ সাবের চমৎকার স্মৃতিচারন। দারুন ভাল লাগলো। গল্প লিখুন, জমাতে পারবেন।
নাজমুল হাসান নিরো একটা ব্লগ হয়ে গেছে। যা-ই হোক তবে খারাপ লাগল না।
মাহমুদা rahman আমার স্মৃতির একটা বড় অংশ আইসিসি....স্কুল থেক ফরার পথে সাদা ইউনিফমর্টা আনন্দ উল্লাসে মাতাল ছেলেদের দেযা রঙে লাল হয়ে গিয়েছিল
বিষণ্ন সুমন স্মৃতি মনে রাখা, আবার পরে তা হুবুহু উগরে দেওয়া দুটুই কঠিন কাজ. কিন্তু এই কঠিন কাজটাই আপনি বেশ ভালো ভাবে করেছেন.শুধু যদি ইংরেজি শব্দগুলু বাংলায় দিতেন, তবে পড়ার ক্ষেত্রে এতটুকু ছন্দপতন হতনা. আপনি চাইলে অনেক ভালো গল্প'ও লিখতে পারবেন. আমাদের জন্য একটিবার চেষ্টা করে দেখুন না প্লিজ.

০২ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪