তখন মনে হয় ফাইভ অথবা সিকসে পড়ি, ইতোমধ্যে বাইসাইকেল চালাতে পারদর্শী হয়ে গেছি, দুপুরে ভাত খাবার পর ঢেকুর দিলেও তা দেই বাইসাইকেলে । বিশাল একটা ব্যাপার। স্কুলের মাঠ টা ছিল আমাদের সাইকেল চালনার বাহাদুরী দেখানোর সবচে উত্তম স্থান,আমরা বাজারে যেতাম, দোকানে যেতাম, প্রাইভেট পড়তাম সব এই সাইকেলে । স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দুপুরে ঘুমের ভান ধরে থাকতাম যে মা চোখ বন্ধ করলেই সাইকেল নিয়ে দৌড়। মুসা, বুলেট ,রানা,আজাদ আমরা সবাই যার যার সাইকেল নিয়ে বের হতাম আর পাল্লা দিতাম কে কত জোরে চালাতে পারে । সকাল বেলায় সবাই প্রাইভেট পড়তে যেতাম বুলেটের আব্বার কাছে এই সাইকেল নিয়ে, মিলন, সাজু, রফিকুলরাও আসত , টিচার ঘুমাচ্ছেন এরপরেও আমরা পড়ছি , মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে হুংকার উউউউমা উমাম্ম মা... আর বিশাল শব্দ করে হাই তোলে বলতেন –তোমরা কিছুই জাননা কিছুই পারনা , কিছুই হয় নাই , নির্দিষ্ট কয়েকটা টেস্ট পেপার দেয়া থাকত আর আমরা তা দেখে দেখে আমরা উত্তর লিখতাম আর টিচার ঘুম থেকে উঠে তা মুল্যায়ন করে আমাদের ভুল ভ্রান্তি গুলো
ধরিয়ে দিবেন, এই ছিল আমাদের প্রাইভেট পড়া , ব্যতি্ক্রমী এই শিক্ষকের পড়ানোর পদ্ধতি আমরা তখন বুঝিনি কিন্তু পরবর্তীতে বুঝতে পারি যে আমাদের অজপাড়া গায়ের এই মহান শিক্ষক জনাব গোলাম মোস্তফা বিশাল এক দর্শন ধারন করতেন আমাদের শেখানোর জন্যে, যার প্রতি আমরা বিশেষ করে মুসা বুলেট রানা নিপুন মিলন সবাই কৃতজ্ঞ ও ঋনী । মুসা আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট ব্য় হবার কারনে সবার কাছে একটা গ্রহনযোগ্যতা ছিল যার ফলে ব্যাকবেঞ্চার থেকে শুরু করে ফার্স্টবাঞ্চার সবাই তাকে পরোয়া করতেন যদি নাম লিখে স্যারের কাছে জমা দেন তাহলে এক মোটা হুজুরই নিতম্বের গোশ্তের কাবাব বানাবেন আর জোহা স্যার ডাস্টার ফিকে মারবেন সাথে সাথে বেঞ্চের ঠেলায় থেতলে দিবেন ,তাই সবাই সাবধানে থাকেন যাতে শনি গ্রহের আবির্ভাব না হয় । ক্লাসের দ্বিতীয় স্থান ছিল মামার মানে ছুট বাউ এর অর্থাৎ তৌফিক্ এলাহী বুলেট, মায়ের পেট থেকেই তার কি যেন পাকা ছিল !যিনি ক্লাস ফাইভ থেকেই প্রেম বোঝেন এবং প্রেম করেন । আমাদের উৎসাহিত করতেন মেয়েদের প্রেম নিবেদনের এবং প্রেমে ফেলার
সব কলাকানন, তাই মামাও আমাদের সুজন বন্ধু, সবাই মিলে প্লান হল সাইকেল চালিয়ে বুড়ির বাধে যাব, যে কথা সেই কাজ আমরা সাত জন মিলে রওনা দিলাম, আমাদের কলোনী থেকে বুড়ির বাধ তিন চার কিলোমিটার রাস্তা হলেও যাওয়াটা ছিল হিমালয় জয় না হলেও কেওকারাডং জয়ের সমান ! কারন যেতে হত রেললাইনের পাশ দিয়ে তিন তিনটি পুলসিরাত সম রেইলের ব্রীজ পার হওয়াটা ছিল যথারীতি বিভীষিকার মত,আমি তো একটাতে পড়েই গেলাম ,আমাদের হিরো মাম্মা বুলেট আর এডভেঞ্চারিস্ট মুসা ডোক ডোক করে পার হয়ে গেলেন , আর আমরা সুরা কালেমা পড়া শুরু করে দিয়েছিলাম। বুড়ি বাধ হচ্ছে একটা স্লুইস গেট যেখানে বর্ষার সময় পানিকে আটকি্যে রাখা হত শু কনা মৌসমের জন্যে , তাই ওখানের পানির গভীরতা আর স্লুইস গেটের ঢালের পানির তীব্রতা আর জোয়ার কে যেকেও প্রমত্তা নদীর স্রোত ভেবে ভুল করতে পারেন আমরা বাধের কাছে গিয়ে বিড়ি ধরালাম , নাটের গুরু যথারীতি মামা হামার ছুট বাউ ! সবাই টানছে কিন্তু মুসা টানছে না , সংগ দোষে শুধু লোহা ভাসে এটা ঠিক না, মুসা টান দিল না, সবাই চেসটা করেও পারলাম না, এরপরে পানিতে নামার পালা , আমি যেহেতু সাতার জানতাম না তাই কিনারাই আমার ভরসা আমি কিনারাতেই ঝাপাচ্ছিলাম হঠাৎ করেই মুসা আমাকে টেনে ঝাপটে মাঝখানে নিয়ে গেল ,আমি ভয়ে তটস্থ হয়ে পানি গিলতে শুরু করলাম, আর বাবারে মারে করে চিৎকার, কিছুক্ষন পরে মুসাকে নিয়ে টানাটানি শুরু হল , বাধের ঢাল থেকে পিছলে পড়ে মুসা ব্যাথা পেয়েছে । এবং কাশতে কাশতে মুসার জান শেষ , এক পর্যায়ে ওর মুখ দিয়ে লাল মরিচের মত কি যেন বের হল , আমরা সবাই থ বনে গেলাম, লাল মরিচ কিভাবে মুখ থেকে বের হবে ? চোখ মুখ লাল করে আমরা গা মুছতে মুছতে ফেরার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম ।পরে বুঝলাম যে ওটা লাল মরিচ নয় , জিহবার নিচে লুকিয়ে রাখা লাল চকলেট !
(সুহ্রদ ও ছেলেবেলার সহপাঠী বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট জয়ী মুসা ইব্রাহিম কে ,যার জন্যে গর্বে বুক ফুলে যায়, তার স্মরণে )
০২ মার্চ - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪