স্বর্ণদ্বীপ

অন্ধকার (জুন ২০১৩)

Azaha Sultan
  • ১২
  • 0
ফুটফুটে জোছনা, কী সুন্দর চাঁদিনীরাত! মৃদুমধুর বাতাস। খদ্যোতের মিটিমিটি আলো। চারি দিকে ঝিঁঝিঁ নিস্তব্ধ নিঝুম। বসি ঘরের দাওয়ায় নিভৃতে নিরালায় ভাবছি দাদিমার গল্পের কথা--

চতুর্দিকে কাঁটাবন নাম স্বর্ণদ্বীপ। এদ্বীপে বাস করত কিছু নিরীহ প্রাণী এবং বিরাট দুটি সর্প। সর্পদুটোকে বিষধর বলাও যায় না আবার ক্ষেত্রবিশেষে অবিষধরও বলা যায় না। কারণ জীবনচলার পথে যেমন একটা জীবনের অনেক ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে তদ্রূপ রাজত্ব করতে গেলে অল্পবিস্তর ভুলত্রুটি বা অপরাধ যে হবে না এমন কথা কে বলে। সৃষ্টি বলতেই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। হোক মানুষ অথবা অমানুষ...

প্রাণিগুলো বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গড়ে উঠেছিল সর্পদুটির রাজ্য। কখনো এদলের রাজত্ব চললে কখনোবা ওদলের রাজত্ব চলত। আর দলেরা ছিল তাদের খেলার সামগ্রী। নানান ঘাতপ্রতিঘাতে একরকম ভালই চলছিল রাজ্য এবং তাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপন। হঠাৎ একসময় মাটি ফুঁড়ে এক রাক্ষসদলের আবির্ভাব! রাজত্বদলের আশকারা পেয়ে ভক্ষণ করতে তৎপর পুরো রাজ্যটাকে! তাদের অকল্পিত উত্থানে অপর সর্পদল আনন্দে আত্মহারা হয়ে হেসে কুটিকুটি। কেননা এমন এক রাক্ষসদলের উদয়কামনার প্রত্যাশা কেউ না করলেও এসময় এমন একটা দুর্দমনীয় শক্তি তাদের একান্ত দরকার, নাহয় তারা স্বপ্নের দুয়ারে পৌঁছানো সহজ ব্যাপারই নয় একেবারে সাধ্যাতীত বলা যায়। তাই কালক্ষয় না করে তাদের সঙ্গে আঁতাত করা যথার্থ মনে করল। যেন ঘরের শত্রু বিভীষণ। আরও শক্তিশালী হয় পিশাচদল। এবার তারা একই স্বপ্নবাহনের তীর্থযাত্রী--শুরু হল যাত্রা। তবে এযাত্রার তীর্থ কোথায় তারা কেউ জানে না...

আক্রোশাক্রোশি করে ধ্বংস করা যায় নির্মাণ করা যায় না। সর্পদলের ফোঁস ফোঁসে কখনো বিষপ্রয়োগ হচ্ছে রাক্ষসদলের উপর এবং রাক্ষসদলের অগ্ন্যুগলনে প্রতিমুহূর্তে ছাই হয়ে যাচ্ছে দ্বীপের একেক নগরী, একেক অঙ্গরাজ্য। দুয়ের তাণ্ডবে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হাজার নিরীহ প্রাণী...

যতই কাঁটা হোক দ্বীপটা সুবর্ণ বটে কিন্তু তুফানবেগে ধাবিত হতে দেখা যায় অন্ধকারে। কারণ এরাজ্যের প্রাণিগুলো বড়ই অন্যরকম : কাণ্ডজ্ঞানহীন--নিজবুদ্ধিবিবেচনায় চলতে অক্ষম। বুঝতে পারছে না তারা তাদের ভবিষ্যৎ কী, অন্ধকার ছাড়া যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

এবার রাজত্বদলের জড়তা কাটল। তারা বুঝতে পারল, এ অবস্থা জারি থাকলে দুই সর্পরাজ এক হয়েও রাজ্য রক্ষা করা দূরে থাক নিজেকেও রক্ষা করা দায় হবে একদিন। কেননা সাইক্লোন যখন আসে তখন তাকে রুখে দেওয়া যায় না, সবকিছু চুরমার করে ভাসিয়ে নিয়ে যাবেই আপন গন্তব্যে। তাই সাইক্লোনপূর্বে জরুরি পদক্ষেপ দরকার, নাহয় ভেঙেচুরে চুরমার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই তারা অপর সর্পদলকে এক হওয়ার আহ্বান জানাল। কিন্তু তারা কিছুতেই সাড়া দিল না। কারণ তারা তখন তাদের পাঁচ পা দেখছে। আগত রাক্ষসদল তাদের আশীর্বাদ। তা হলে, কি দুঃখে তারা মীমাংসায় আসবে? তাদের ধারণা, সর্পদলের নীতিধারা স্বেচ্ছাচারী রাজত্বকায়েম। অনৈতিক এধারা বহমান থাকলে তাদের স্বপ্নের রাজত্ব গড়া দুষ্করই নয় একেবারে দুঃসাধ্যও বটে। রাক্ষসদলের আবির্ভাবে তারা তখন বড় সুখী। তবে বেশি সুখ কারও কারও কপালে খুব দুঃখের কারণ হয়। কারও কারও ইতি ঘটায়। কারও কারও ভরা নৌকা অতলে ডুবায়।

রাজত্বদলের শক্তি সীমাহীন কিন্তু যুদ্ধে তারা জয়লাভ করতে পারল না। কারণ, কয়েক বড় শক্তি যখন এক হয়ে যায় তখন একমাত্র অলৌকিক শক্তি ছাড়া পার্থিব কোনো শক্তি কাজে আসে না। রাহুকেতুর মতো রাজত্বদলকে রাক্ষসদল গ্রাস করল। শুরু হল কালনেমির লঙ্কাভাগ। এবার রাজ্যের অধিকারিত্ব নিয়ে রাক্ষসদল আর তাদের অংশীদার সর্পদলের মধ্যে লেগে যায় বাকবিতণ্ডা তারপর মহা সংগ্রাম! খুব তাড়াতাড়ি রাক্ষসদলের পেটে এসর্পদলও ভক্ষিত হয়। কথায় আছে, পরের ধন হরণে গতি নাই তার মরণে।

এদ্বীপ শুধু নামেই স্বর্ণ নয়, কাজেই সোনার চেয়ে বেশি ছিল। এদ্বীপের আকাশ বাতাস মাটিসর্বস্ব-রূপবর্ণনা করে কোনকালে কেউ শেষ করতে পারল না। তবে এদ্বীপের বোকা প্রাণিগুলোর বোকামির কথা যেকেউ অল্পতেই বর্ণনা করে সমাপ্ত করতে পারল, একমাত্র তারা একে অপরের প্রতি হিংস্র হয়ে উঠার কারণে। বলা যায়, তাদেরই নির্বুদ্ধিতার জন্যে এমন একটি সুবর্ণদ্বীপ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে অন্ধকারে পরিণত হয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক কল্পিত কাহিনীর সুন্দর বুনন....ভালো লাগল....
সৈয়দ আহমেদ হাবিব কবিতা পড়তে ভয় লাগে বুঝবনা বলে, এখনতো দেখছি গল্পেও ভয় ধরিয়ে দিলেন, সে যায় হোক, মুসকিলে পড়লাম সর্পদ্বয় এর খাম খেয়ালীতে রাক্ষস এর আবির্ভাব উত্তরণতো আর দেখছিনা, মুসকিলটা ওখানেই, আমাদের বেছে নিতে বলা হল দুইটা আম থেকে একটা, কিন্তু দুইটাইতো ঠগ আম, একটা বেশী পঁচা অন্যটা একটু কম, খাওয়াতো যাবেনা একটাও, পথযে একদম নেই তাও নয়, আমের বিচির উপর ভরসা, বিচিটা রোপন করা গেলে আম পাওয়া যাবে যদিও ততদিন আপনি আমিও আপনার দাদিমার স্থানটা দখন করব, সেও কম কিসে, নাতি নাতনিদের চোখেই নাহয় দেখলাম নতুন ভোর................................
এশরার লতিফ দেখা যাক, সুবর্ণ দ্বীপ হয়তো আবার বর্ণ ফিরে পাবে। ভালো লাগলো গল্পটি।
তাপসকিরণ রায় স্বর্ণদ্বিপের রূপকথার গল্প বেশ ভাল লাগল।ধন্যবাদ।
Lutful Bari Panna বুঝলাম, আজহাদা- আমরা স্বর্ণদ্বীপবাসীরা বড়ই দুর্ভাগা...
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# দাদা অনেক ভালো লাগলো আপনার রূপক গল্পটি। ধন্যবাদ।
মোঃ আক্তারুজ্জামান প্রখর ভাবনার সুন্দর প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
অদিতি ভট্টাচার্য্য রূপক গল্প। বেশ ভালো লাগল।
মোঃ মুস্তাগীর রহমান সাহসীর সাহসের পরিচয়.........ধন্যবাদ.................

০২ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪