দেশপ্রেম?
গ্রাম-গঞ্জের চা দোকান হতে শুরু করে সংসদভবন পর্যন্ত সর্বদা আমাদের দেশ প্রেমের কথা শুনতে শুনতে একবারে কান জ্বালা ফালা হয়ে যাচ্ছে। পোড়া কপাল আমার! আবার গল্প কবিতা ব্লগে ও সেই একেই কথা বলতে বা শুনতে হবে? সভা-সেমিনার আলাপ-আলোচনা মাঠের বক্তৃতা সর্বত্র শুধু দেশপ্রেম আর দেশপ্রেম, একেবারে দেশপ্রেমের ছড়াছড়ি বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই। সরকার বলে দেশপ্রেমের বদান্যতায় বাংলাদেশ আজ তরতর করে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, আর বিরোধী দল বলছে ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলেই দেশপ্রেমের তোড়ে দ্রুত গতিতে সকল সমস্যার সমাধান করে ত্বরিত গতিতে দেশটাকে হীরকাঙ্গে সাজিয়ে স্বপি্নল একটি দেশে পরিণত করবে। আবার রাজাকারের দেশপ্রেমের কাওয়ালির সুরে প্রাণটা একেবারে টগবগ করে উঠে। অন্যদিকে দেখি বুলেট বিদ্ধ বুক নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা মাগিয়া মাগিয়া অন্ন যোগার করে। আর কোটি কোটি মানুষ চরম সঙ্কটে হায়! হায়! মাতমে দিশেহারা বাঁচিবার তরে। ধূত ছাই! এসব আমার গল্পের কোন বিয়য়বস্তু নয়। আজকের এই অপ-সংস্কৃতি বা আকাশ সংস্কৃতি যা কিছু বলা হউক না কেন, সেই মোহ গুলোকে উপেক্ষা করে আমার যে গুটি কতেক সাহিত্য প্রেমিক বন্ধু আছে বিভিন্ন সময়ে (সত্য কী মিথ্যা জানি না) বড়দের মুখ হতে শুনা কয়টি কথা মনে পড়ছে সে গুলোই তাঁদের কাছে আজ বলছিঃ-
১/ শুনেছি- কোন এক সময় নাকি, সীমান্তবর্তী ভারতীয় নাগরিকেরা সন্ধ্যা রাতে চুপিসারে এই সোনার বাংলার পাশর্্ববতর্ী গ্রাম-গঞ্জে এসে পাতার বিড়ির বিনিময়ে চাল ডাল সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সাামগ্রী নিয়ে যেত।
২/ শুনেছি- কোন এক সময় নাকি, চায়নার মানুষ চরম খাদ্য সঙ্কটে ক্ষুধার জ্বালায় সাপ, ব্যাঙ্গ, ইদুর, তেলাপোকা ইত্যাদি ইত্যাদি প্রাণী খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করত।
৩/ শুনেছি- কোন এক সময় নাকি, নারীদের দেহ ব্যবসাই ছিল থাইল্যান্ডের আয়ের প্রধান উৎস। পাশ্চাত্যে ও বিভিন্ন অঞ্চলের পুরুষদের যৌন লালসা পূরণের আকর্ষণীয় দেশ হিসাবে থাইল্যান্ডকে প্রাচ্যের ভিনাস বলা হত।
তোবা তোবা! যা কিছু চোখে দেখিনি ও সব আজগুবি কথা নিয়ে প্যাঁচাল না করে স্বচোখে দেখা তিনটি বাস্তব ঘটনার কথা এবার বন্ধুদের কাছে বলছিঃ-
প্রথমঃ- স্নাতকোত্তর সমাপনী পরীক্ষা সমাগত সুতারাং ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক শিক্ষা সফরের জন্য আমরা ভারত গিয়েছিলাম। যাবার সময় আমাদের কতিপয় চতুর বন্ধু ২-৪ টা করে টালের জ্যাকেট, চকচকে শার্ট, সুইস ঘড়ি নিয়ে গিয়েছিল। ওমা! আমারত আক্কেল-গুড়ুম অবস্থা, যখন দেখলাম চুপি চুপি ভারতীয় যুবকেরা এসে বন্ধুদের টালের ১০০/ ১৫০/-টাকার ক্রয়কৃত শার্ট, জ্যাকেট গুলো ৫০০/- ৬০০/- ৭০০/- টাকা করে দাম হাঁকছে, অথচ এসব জ্যাকেট বা শার্ট বাংলাদেশে পরলে সবাই টাল কোম্পানী বলে ঠাট্টা করে। তখন কৌতূহল বশতঃ চতুর বন্ধুদের নিকট কারণ জানতে চাইলে বন্ধুরা সাদা-মাটাভাবে আমাকে যা বুঝালেন তা হলো-ভারত এ উৎপাদন হয় এমন কোন জিনিস বিদেশ হতে আমদানি করা নিষিদ্ধ এবং স্বদেশী ছাড়া বিদেশী কোন জিনিস-পত্র খোলা-মেলা ভাবে ব্যবহার করা ও নিষিদ্ধ। তাই সখীন যুবকেরা লুকিয়ে লুকিয়ে ছড়া দামে এগুলো গোপনে কিনছে। আবার এইত কয়দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, বাংলাদেশ-ভারত স্থল বন্দর বন্ধ বলে বাংলাদেশে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম হুড়হুড় করে বেড়ে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ঃ- চট্টগ্রামের একটি অভিজাত বিপণী বিতানে এক বন্ধুর একটি প্রসাধনীর দোকান ছিল। সব সময় দেশী-বিদেশী দামি দামি পণ্যের প্রচুর মজুদ থাকত বলে এর আলাদা একটা সুনাম ছিল। মাঝে মাঝে আমরা ঐ বিশেষ দোকানে আড্ডা দিতে যেতাম। ঐ দোকানে একদিন বিকাল বেলায় আমরা দুই বন্ধু দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম, হঠাৎ গোলগাল চেহারার এক বিদেশী দম্পতি দোকানে ঢুকলো, আমরা দুইবন্ধু তাদের হলুদের মত রং, তাগড়া চেহারা....ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম আর লক্ষ্য করলাম তরুণ সেলসম্যান ঐ দম্পতিকে এক এক করে দেশী-বিদেশী একটার পর একটা টুথপেষ্ট, সাবান ও ক্রীম দেখাছে আর কনভিন্স করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। অনেক চেষ্ঠার পর ও পটু সেলসম্যান ব্যর্থ হয়ে বাংলায় বলে উঠলো চিনাইয়ার বাচ্ছা চিনাইয়া আস্ত খচ্চর দেখছি। আমরা জিজ্ঞাস করলাম, কি ব্যাপার কী হয়েছে ? সেলসম্যান বলল বেটা খচ্চরকে দেশী-বিদেশী অত ভালো ভালো জিনিস দেখালাম বেটা-বেটির কোনটাই পছন্দ হলো না, তাদের একেই কথা চাইনিজ চাই। দেখেন না, চায়নার মাল কি এখানে আসে বা কেউ খোঁজে? আসলে শালারা কৃপণের হাড্ডি। ততক্ষণে ওরা দোকান হতে বেরিয়ে পাশের দোকানে ঢুকলো। আমরা দুই বন্ধু কৌতূহল বসত ওদেরকে অনুসরণ করতে লাগলাম। না তাদের ভাঙ্গা ভাঙ্গা উচ্চারণ 'নো নো ঊই ওয়ান্ট চাইনিজ, চাইনিজ' এভাবে তারা চারটি দোকান খোঁজ করে ও কিছু না কিনে মলিন মুখে সোজা গাড়িতে গিয়ে উঠলো। জানি না সেদিন তারা তাদের পছন্দের চাইনিজ টুথপেষ্ট, সাবান ও ক্রীম কিনতে পেরেছিল কি না পারেনি। তবে আজ এই গল্প লিখতে বসে ভাবছি ফুটপাত হতে শুরু করে বাংলাদেশের এমন কোন দোকান কি আছে যেখানে চাইনিজ পণ্য-দ্রব্য পাওয়া যায় না?
তৃতীয়ঃ- একদিন আমাকে সাথে নিয়ে আমার এক ধনাঢ্য বন্ধু একটি এসি কেনার জন্য বের হলো। সকাল হতে বিকাল পর্যন্ত শহরের প্রতিটি ইলেট্রনিঙ্রে শৌ-রুম এ অনেক খোঁজা খুঁজি করে ও বন্ধুর পছন্দের এসি পাওয়া গেলো না, দোকানীদের একেই কথা এসি গুলোর অত বেশি ডিমান্ড আসার সাথে সাথেই সব বিক্রি হয়ে যায়। বন্ধুকে বললাম গরমের যা অবস্থা এক কাজ কর অন্য ব্র্যান্ডের একটি এসি কিনে নাও। না সে কোন অবস্থাতেই কিনবে না, বললো প্রয়োজনে আরো এক-দুই মাস না হয় অপেক্ষা করব তবু আমি মেইড ইন থাইল্যান্ডের 'ও-জেনারেল' এসি এ কিনব। আবার ইদানিং দেখছি বড়লোকেরা চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়ে সিরিয়ালের জন্য লম্বা লাইন দিয়ে মাথা নুইয়ে অপেক্ষা করছে।
উল্লেখিত কানে শুনা কথা, আর চোখে দেখা বাস্তব ঘটনাবলীর মধ্যে দেশপ্রেমর যে ইঙ্গিত সুস্পষ্ট, আমাদের মত নগণ্য জন সাধারণ বুঝলে ও চোখ-কান বুজে নীরবে হজম করা ছাড়া অন্য কোন কিছু করার মত শক্তি, সুযোগ বা ক্ষমতা কোনটাই নেই। তাই আমাদের দেশে যে সমস্ত ক্ষণজন্মা রাজনীতিদি ক্ষমতার মসনদ দখল করে আছেন বা ঘুরেফিরে ক্ষমতার তুঙ্গে অধিষ্ঠত হন বা হবেন ঐ সকল ক্ষমতাবানদের বুঝার জন্য যাতে আল্লাহর রহমত নাজিল হয় ও বুঝার তওফিক দান করেন; আর যদি বুঝেও না বুঝার ভান করেন সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁদেরকে হেদায়েত করেন। এই ক্ষমতাহীন আপামর জনতার জন্য এ ক্ষুদ্র কলম বন্দনা ছাড়া আরত কোন পথ খোলা নেই। তাই করজোড়ে প্রভু তোমার নিকট এই প্রার্থনা করি আজি বারেবার! বারেবার! বারেবার! কবুল কর ওগো প্রভু মিনতি আমার। আমিন!
০১ মার্চ - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৬ টি
সমন্বিত স্কোর
৬.০২
বিচারক স্কোরঃ ৪.২৯ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ১.৭৩ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪