চন্দ্রগ্রহণ

বৃষ্টি (আগষ্ট ২০১২)

মনির মুকুল
  • ২৫
  • ৫২
১.
ঘুমের আবেশ জড়ানো অবস্থায় আরেকটু আরাম করে বাম পাশে পাশমোড়া দিয়ে শোয় রহমত আলী। টুপটাপ বৃষ্টি ঝরছে। ইদানিং প্রায় প্রতি রাতেই কমবেশি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির উষ্ণ আবেশে ঘুমাতে বেশ ভালো লাগে তার। হঠাৎ সে অনুভব করে তার ডান চোয়ালের উপর এক ফোটা শীতল পানির পরশ। সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের আবেশ কেটে যায় তার। পানির ফোটাটি চোয়াল গড়িয়ে মাথার পিছন দিকে যেতে থাকে। এই এক ফোটা পানি তাকে বেশ ভাবনায় ফেলে দেয়। এক ফোটা বৃষ্টির পানি ক্ষতিকারক তেমন কিছুই না, তবে গত দুই দিন আগে এমনভাবে একফোটা থেকে দু'ফোটা, তারপর কয়েক ফোটা, তারপর ফোটা ফোটা পানি পড়তে শুরু করায় ঘরের পুর্ব পাশের তার ও তার স্ত্রী রাহেলার নিয়মিত ঘুমানোর জায়গাটা ছেড়ে এসে এখন উত্তর পাশে ঠাঁই নিতে হয়েছে। তাই ভাবনাটা সেদিকেই গড়াচ্ছে। না জানি চালের এই অংশটাও দুর্বল হয়ে গেছে কি না। পানির পরবর্তী ফোটা আবার কতক্ষণ পরে পড়ে সেটা বোঝার জন্য রহমত সেভাবে কাত হওয়া অবস্থায় থাকে। পানির ফোটা পড়ার ব্যবধান যদি দীর্ঘক্ষণ তাহলে হয়তো সামান্য ডানে বামে সরে এসে এভাবেই আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে বাকী রাতটুকু পার করার সিদ্ধান্ত নেবে, আর যদি ব্যবধান স্বল্প সময়ের হয় তাহলে হয়তো এভাবে আর শুয়ে থাকা সম্ভব হবে না। এ মৌসুমে ঘরের চালের ছাউনিটা পাল্টানোর বড্ড প্রয়োজন ছিল। দুইটা বর্ষাকাল পার হয়ে গেছে। ছনগুলো বেশ পাতলা ও দুর্বল হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিকে ভেতরে ভেদ করতে না দিয়ে ঢালুভাবে বাইরে ফেলে দেয়ার মত শক্তিটুকু ছনের জীর্ণ শরীরে নেই।

রহমত মাথা উচিয়ে রাহেলার দিকে একবার দেখে নেয়। রাহেলা ঘুমিয়ে আছে। রহমত মনে মনে কামনা করে ওর ঘুমটা যেন না ভাঙ্গে। ঘুম ভাঙলেই- আজও পলিথিন না আনার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করে কিছু অভিমানের কথা উপস্থাপন করা হবে। রাহেলা অনেক আগে থেকেই বলছে বড় পলিথিন এনে যে জায়গাগুলোতে বেশি পানি পড়ে সেখানে লাগিয়ে দিতে, কিন্তু সংসারের সওদাপাতির চাহিদাগুলোকে সামাল দেয়ার পর টাকার অংশ আর পলিথিন পর্যন্ত পৌঁছায় না। তাছাড়া ক'দিন আগেই ভ্যানটার পিছনে হাজার খানেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। টায়ার-টিউব ও বেয়ারিং পাল্টাতে হয়েছে। একটা নতুন ছইও লাগাতে হয়েছে। বর্ষার দিনে ভালো ছই না হলে মানুষ উঠতে চায় না। সব মিলিয়ে বড় অংকের ঐ টাকাটা চলে না গেলে বোধহয় এতটা টানাটানিতে পড়তে হতো না।

আবারও একফোটা পানি পড়ার শব্দ শোনা যায়। তবে এবার আর তার চোয়ালের উপর নয়; অন্য কোথাও পড়েছে। চোয়াল বরাবর যেহেতু পড়েনি সেহেতু এখন আবার ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমানো যায়।

হঠাৎ রাহেলা নড়ে চড়ে ওঠে। পানির ফোটা এবার সেও অনুভব করছে। সে উঠে বসে। এখনও রহমত আলীর ঘুম আসেনি তবু পলিথিন সংক্রান্ত ব্যাপারে রাহেলার তীব্র বাক্যবানের সঙ্কায় চোখ বোজা অবস্থায় আছে। রাহেলা উঠে টিম টিম করে জ্বলা লাইটটা জ্বালিয়ে ঘরের মেঝের দুই তিন জায়গায় বাটি পেতে দেয়। স্বামীর এখানে পানি পড়ছে কিনা বোঝার জন্য তার শরীর ধরে নাড়িয়ে জাগানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পুনরায় আর তাকে জাগানোর চেষ্টা করে না। দ্বিতীয়বার তার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা না করার কারণ- স্বামী সারাদিন কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। রাতের বেলা তার ঘুমের ক্ষতি করা নিশ্চয় ঠিক হবে না। অবশ্য রাহেলা চেষ্টা করলেও হয়তো জাগাতে পারতো না, কারণ ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে জাগিয়ে তোলা যত সহজ, ঘুমের ভান করে থাকা মানুষকে জাগিয়ে তোলা অতটা সহজ নয়। এই না জাগার পেছনে যে তার বাক্যবানের ভীতি আছে সেটা রাহেলার ভাবনাতে পৌঁছায় না। রহমত আলী নাসিকার গর্জনে ঘুমের গভীরতার প্রকাশ করার চেষ্টা করে।

বারান্দার সাথে ছোট্ট রুমটাতে তাদের একমাত্র ছেলে সবুজ ঘুমায়। রাহেলা সবুজের দিকে একবার নজর করে এসে আবার শুয়ে পড়ে। একসময় রহমত আলীর কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের সুর শুনতে শুনতে নিজেই ঘুমের ঘোরে হারিয়ে যেতে থাকে।

২.
সকালে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হতে রহমত আলী প্রতিজ্ঞা করে নেয় আজ বাড়ি ফেরার সময় পলিথিন আনবেই। ঘরের মধ্যে বেশ কিছুটা অংশ জুড়ে পানি পড়ে শ্যাতশেতে হয়ে গেছে। পানি পড়া স্থানগুলোতে রাহেলা বাটি, থালা পেতে না দিলে সম্পূর্ণ ঘরটাই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যেত।

খালি ভ্যান নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে রহমত। হালকা বৃষ্টি ঝরছে, সে কারণে রাস্তায় মানুষের আনাগোনা নেই। বৃষ্টি হলে তেমন ভাড়া পাওয়া যায় না। আর যদিওবা পাওয়া যায় নিজেকে ভিজতে হয়। নিজে না ভিজলে ভাড়া ধরা যায় না। রাহেলা শুধু ঘরের পলিথন কেনার জন্য না; রহমত আলীর জন্য একটা রেইনকোটও কিনতে বলে। কিন্তু কোনটাই কেনা হয় না। বৃষ্টিতে বেশি ভিজলে অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে থাকতে হবে তখন আয়ের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে, একথা রাহেলা অনেকবারই তাকে বুঝিয়েছে। রাহেলার সে কথা রহমত আলী যে বোঝেনি তা নয়; তবে তা বাস্তবায়ন করতে যে বাজেটের দরকার তা জোগাড় করতেই তো হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কিছুদূর সামনে দুইটা মানুষ ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের ভ্যান লাগতে পারে। রহমত আলী ওদের দিকে নজর করে প্যাডালে জোরে চাপ দিয়ে ভ্যানের গতি বাড়ায়।

গতকাল বৃষ্টির সময় একটা ক্ষ্যাপ মারতে মারতে রহমত আলী ভেবে দেখেছে বৃষ্টির সময়টাতে ভ্যান ভাড়ার রেট একটু বেশি হওয়া উচিত। এমনিতেই এ সময় ভাড়া পাওয়া যায় কম, তার উপর চালককে পুরোপুরি বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করে চালাতে হয়। যাত্রীরা তা বোঝার চেষ্টা করে বলে মনে হয় না। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় যে ভাড়া দেয়, বৃষ্টির সময়ও তাই। রহমত আলী একবার তার চাচাত ভাই ছামাদের সাথে ঢাকায় গিয়েছিল রিক্সা চালাতে। ছামাদ অনেকদিন থেকে ঢাকায় রিক্সা চালায়। ঢাকায় বৃষ্টির সময় ভাড়াও বেশি পাওয়া যায়। ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকায় চাইলেও যাত্রীরা আপত্তি করে না। তাছাড়া ওখানে প্রায় সবাই চাকুরিজীবী বলে বৃষ্টি হলেও টাইমমত তাদের অফিসে যাওয়া যাওয়া লাগে। তাই রিক্সারও দরকার হয়। ভালোই ইনকাম হচ্ছিল ঢাকায়। কিন্তু ১৫ দিনের মাথায় জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে গ্রামে আসার পর রাহেলা আর তাকে যেতে দেয়নি। ছামাদ অবশ্য রাহেলাকে বুঝিয়ে বলেছিল যে, ওখানে সাপ্লাই পানি খাওয়ার জন্য প্রথম প্রথম প্রায় সব রিক্সাওয়ালারই এই রোগটা হয়, তারপর আস্তে আস্তে সয়ে যায়। কিন্তু তাতেও রাহেলার কাছ থেকে সম্মতিসূচক রায় পাওয়া যায়নি।

মানুষ দুটির কাছাকাছি আসতেই দেখা গেল তাদের পাশে একটা মাছের বাজরাও আছে। নিশ্চয় আড়তে বিক্রী করতে যাবে। রহমত আলীকে দেখেই তারা ডাক দেয়। সোনারমোড় আড়তে যাবে কি না জানতে চাইলে রহমত যাবে বলে জানায়। তারা মাছের বাজরাটি ভ্যানে ওঠাতে বলে। রহমত নেমে আসে। বাজরার মধ্যে বড় বড় সাইজের বেশ অনেক মাছ। ওরা দুজন আর রহমত তিন জন মিলে বাজরাটি ধরে ভ্যানে ওঠায়। তারপর তারা দুইজন ভ্যানের অগ্রভাগে এসে বসে। রহমত চালকের আসনে বসে ভ্যানের প্যাডেল ঘুরাতে শুরু করে।

মাছগুলোর সাইজ বেশ বড়, দামও নিশ্চয় অনেক বেশি হবে। ইদানিং কোনো বড় মাছ দেখলেই সবুজের আবদারের কথাটা মনে পড়ে যায়। হাফিজ শেখের ছেলের বিয়েতে যখন সামনে সারির ধনি মেহমানদের প্লেটে বড় মাছের পেডি আর সবুজের প্লেটে ছোট মাছের টুকরা দিয়েছিল তখন তার বড্ড খারাপ লেগেছিল। বাড়িতে এসে সে বাবার কাছে দুঃখ করে ঘটনাটা বলার পর একটা বড় মাছ কিনে আনার আবদার করেছিল। তখন রহমত আলীর এমন মনে হয়েছিল যে, যদি সামর্থ থাকতো তাহলে সেই মুহুর্তে বড় মাছ কিনে এনে দিত। কিন্তু সে অপারগ। তবে সেদিন সবুজের কাছে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বড় মাছ নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে। রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি যেমন মুখেই থেকে যায় বাস্তবায়ন হয় না, তেমনি তার দেয়া প্রতিশ্রুতিটা আজও বাস্তবে রূপ নেয়নি। কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে তারও ঠিক নেই। রহমত আলী ছেলের আবদারের কথাটা একেবারে যে ভুলে গেছে তাও নয়; বেশ কয়েকবার মাছের আড়তেও যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বড় মাছের যে দাম দেখা গেছে তা রহমতের সাধ্যের মধ্যে থাকেনি। সোনারমোড়ের মাছের আড়ৎটা হওয়ার আগে মাছের এমন চড়া দাম ছিল না। সে সময় যে কোনো মাছ কেনা তেমন দুঃসাধ্য ছিল না। এই আড়তে এখন সরাসরি ঢাকা, খুলনাসহ অনেক বড় জায়গার বেপারীরা মাছ কিনতে আসে। এক দিনের মধ্যেই মাছ চলে যায় দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। এসব বেপারীদের কারণেই এলাকার মানুষ কম দামে আর মাছ কিনতে পারে না। একজন পিতা হিসেবে সন্তানের আবদার পুরণ করতে না পারায় নিজেকে দুর্ভাগাই মনে হয়। ভ্যানের প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতে রহমত আলী ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের মাছগুলো একবার দেখে নেয়।

৩.
পলিথিনের গোছাটা বগলদাবা করে বেশ খুশি মনেই বাড়ির মধ্যে ঢোকে রহমত আলী। এবার আর রাহেলার সামনে যেতে কোনো সঙ্কোচ নেই। এই জিনিসটার জন্য আজ ক'দিন যাবত রাহেলার মুখোমুখি হতে সাহস পায় না। আজ দুপুরের আগেই বেশ ক'টা ভাড়া পাওয়া গিয়েছিল। পলিথিনের টাকা জোগাড় করতে অসুবিধা হয়নি। অবশ্য আজ ধার করে হলেও পলিথিন নিয়েই বাড়ি ফেরার ইচ্ছে ছিল। সেটার আর দরকার হয়নি।

প্রতিদিন দুপুরের দিকে একবার বাড়িতে আসা হয়। গোসল করে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার ভ্যান নিয়ে বের হতে হয়। আজ গোসল করার আগে পলিথিন দিয়ে ঘরের চাল মেরামতের কাজটা করে নিতে হবে। অন্তত তাতে বৃষ্টির হাত থেকে ঘরটা রক্ষা পাবে, আর রাতের ঘুমটুকুও নিশ্চিন্তে হবে।

বগলদাবা করা পলিথিনটার দিকে রাহেলা একবার তাকিয়ে আবার তার কাজে মনোযোগী হলো। রহমত আলীর মনে হয়েছিল পলিথন দেখে রাহেলা বেশ খুশি হবে। কিন্তু সে রকম কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলো না। তাছাড়া অন্যদিন তাকে গুরুগম্ভীর মত দেখা গেলেও আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে। সবুজ বারান্দায় বসে খেলা করছে। তাকেও বেশ উচ্ছল মনে হচ্ছে। বাবাকে আসতে দেখে সবুজ দৌড়ে এসে হাসি হাসি মুখে জানালো যে, সে আর জামাল চাচা মিলে জাল দিয়ে তাদের পুকুর থেকে অনেক বড় একটা ভেটকি (করাল) মাছ ধরেছে। কথাটা বলার সময় তার চেহারায় যে হাস্যোজ্জল রূপটা ফুটে উঠেছিল সেটা রহমত আগে কোনদিন দেখেছে বলে মনে হয়নি। খবরটা শোনার পর রহমত আলী পরিবারের লোকজনের উদ্দীপ্ত হওয়ার কারণটা বুঝতে পারলেও নিজে কিছুটা ভাবনার ঘোরে পড়ে গেল। তাদের পুকুরে বড় মাছ তো দূরের কথা, ছোট জাতের মাছও তো থাকার কথা না। গত দু'তিন বছরে কোন মাছ ছাড়া হয়েছে বলে মনে হয়। এই মাছ আসলো কোত্থেকে? ভাবতে ভাবতেই সে এগিয়ে যায়।

রহমত সামনে এসে দাঁড়াতেই রাহেলা বলে উঠে- "জামাল আইয়েলো জাল নিতি। দুপুরে রান্নার কিছু ছেলো না তাই ওরে কলাম জালটা আমাগো পুকুরে দুএক বার ফেলে যাইয়ো। ও জাল নিয়ে পুকুলে ফেলতেই ঐ বড় মাছটা জালে পড়লো। তুমি বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় ভালো দেখে মিস্টি কুমড়ো নিয়ে আসপা। সবুজ কুমড়ো খাতি পছন্দ করে। রাতে ভালো কইরে রান্না করবো।" এই মুহুর্তে সবুজ ও রাহেলার মত রহমতেরও হয়তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে- তাদের পুকুরে এ মাছ কীভাবে আসলো? কথার ফাঁকে রাহেলা এটাও জানিয়ে রাখলো যে, সে জামাল ও তার বউকে রাতে দাওয়াত করেছে। জামাল বিয়ে করার পর থেকে অনেক বারই নতুন বউটাকে এ বাড়িতে দাওয়াত করতে চেয়েছিল কিন্তু সংসারের টানাপোড়ের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। এই সুযোগে সে তার ইচ্ছেটা পুরণ করতে চায়।

উঠানে মুরগি ঢাকার ঝুপড়িটা দিয়ে খুশির কেন্দ্রবিন্দু মাছটাকে ঢেকে রাখা হয়েছে। রহমত তার হাতে থাকা পলিথিনের গোছাটা রেখে ঝুপড়ির কাছে এগিয়ে যায়। বিস্ময়ের সাথে তাকায় মাছটার দিকে। মাছটাকে দেখেই হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় ক'দিন আগের কথা। একটানা বর্ষায় তাদের পুকুর ও মেম্বর সাহেবের পুকুর পানিতে ডুবে একাকার হয়ে গিয়েছিল। সেদিনই মেম্বর সাহেবের ছেলে তাকে ডেকে বলেছিল- সে পুকুরে ভেটকি মাছের চাষ করেছে। অনেক টাকার মাছ ছিল তার পুকুরে। বর্ষার পানিতে ডুবে রহমতের পুকুরে হয়তো কিছু চলে গেছে। রহমত কোনো মাছ পেলে অবশ্যই যেন তার কাছে দিয়ে আসে। তার পুকুরে কয়টা মাছ ছিল তার হিসেব আছে। মেম্বর সাহেব প্রভাবশালী লোক। এ তল্লাটে তার ছেলের কথার উপর কেউ কথা বলার সাহস পায় না।

রহমত আলী এখন বুঝতে পারে না এই মূহুর্তে তার কি করা উচিত? তার বিমর্ষ চেহারা দেখে রাহেলা তার চিন্তিত হওয়ার কারণ জানতে চায়। রহমত খুলে বলে মেম্বর সাহেবের ছেলের বলা কথাগুলো। শুনে রাহেলাও যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। সবুজ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। বাবার কথাগুলো সেও শুনেছে। সে ঝুপড়িটা দু'হাতে আকড়ে ধরে জোর গলায় ঘোষণা দেয়- এ মাছ তাদের পুকুর থেকেই ধরা হয়েছে, সুতরাং এটা তাদেরই মাছ, এটা মেম্বরদের ফেরত দেয়া হবে না। রহমত আলী অভাগার মত তাকিয়ে থাকে ছেলের মুখে দিকে। ছেলেকে বুঝানোর মত মানসিক শক্তিও যেন সে হারিয়ে ফেলেছে। সমাজে সবার কাছে সব যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা যে সমান নয় একথা সবুজকে কীভাবে বোঝাবে? সবুজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অন্যবারের মত এবারও প্রতিশ্রুতি দেয়- "মন খারাপ করিসনে বাবা, এর চেয়ে বড় মাছ আমি কিনে আনবো"। কথাটা বলার সময় তার মনে হয়েছিল এমন ব্যর্থ প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি আর কতদিন দিতে হবে তাকে?

সবুজ কাঁদো কাঁদো অবস্থায় বসে আছে, রাহেলাও নির্বাক। তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে রহমতের যেন মনে হচ্ছে- সে কারো আশা পুরণ করতে তো পারেই না বরং পুরণ হতে যাওয়া আশাটাকেও ধুলিষ্যাৎ করতে পারে। সে নিজের মনটাকে শক্ত করে আস্তে আস্তে মাছটা বের করে হাতে নিয়ে কারো দিকে না তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে অসহায়ের মত হাঁটতে শুরু করে। রাহেলা এগিয়ে এসে সবুজের মাথার উপর হাত রাখে। সবুজ অপলকভাবে তাকিয়ে আছে বাবার হেঁটে চলা পথের দিকে। তার চোখ দুটি ছল ছল করছে। এই মায়াবী চোখের দিকে ফিরে তাকানোর মত শক্তি যেন রহমত হারিয়ে ফেলেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রোদেলা শিশির (লাইজু মনি ) অনেক দিন পর ফিরে এলেন ... মনির মুকুল ..... !! স্বাগতম ..... !! সুন্দর লেখা .... !!! অভিনন্দন ...
জাফর পাঠাণ মনির ভাই আপনার গল্পটি দিয়ে আমার সহানুভূতি ও অনুভবকে কাঁদিয়ে ছাড়লেন ।বড্ড হতচ্ছাড় আপনার গল্পটি । মোবারকবাদ কবিকে ।সাথে কৃতজ্ঞচিত্তের ভোট ।
সালেহ মাহমুদ এই গল্পটি আগে একবার খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি, আবারো পড়লাম। খুব ভালো লাগলো আপনার গল্প ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা। তবে একজনের পুকুরে পাওয়া মাছ তো তারই, যেভাবেই এসে থাকুক, সেই মাছের মালিক সেই পুকুরওয়ালা। এর ব্যতিক্রম কিছু মেনে নেওয়া কষ্টকর। ধন্যবাদ মনির মুকুল।
ফয়সাল বারী এই ধরনের হাতগুলো খুব tane
মোঃ আক্তারুজ্জামান রহমতদের অক্ষমতাগুলি গল্পকবিতায় বোধ হয় আপনার চেয়ে ভালো আর কেউ তুলে ধরতে পারে না| অসাধারণ লাগলো| অনেক অনেক শুভ কামনা|
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন .................................এটাই তো বাস্তব, এই নিয়ে আমাদের চলতে হয়। ভাল লাগল। শুভেচ্ছা রইল।
জয়নাল হাজারী “ ভ্যানের প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতে রহমত আলী ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের মাছগুলো একবার দেখে নেয়।”মনির ভাই হৃদয়ে তীর বিদ্ধ করে দিলো উক্ত এতটুকুন লাইন ।মুগ্ধতার কোন্ উপমায় ভূষিত করবো ভাই ? তবে গল্পকে পরে,আগে আপনার আবেগের প্রশংসা করতে হয় ।
রুপম খুব খুব সুন্দর গল্প, তবে নিজের পুকুরের মাছ এভাবে অন্যকে ফেরত দেওয়ার যুক্তি টি ভালো লাগলো না
ইউশা হামিদ মন খারাপ করিসনে বাবা, এর চেয়ে বড় মাছ আমি কিনে আনবো"। কথাটা বলার সময় তার মনে হয়েছিল এমন ব্যর্থ প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি আর কতদিন দিতে হবে তাকে? ------ --- ----- মুকুল ভাই , এমন করে কথাটা বললেন ; আমার চোখ ভিজে উঠতে চাইল ! অভিনন্দন ।

০১ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪