জাহিদ ভাইয়ের মাতৃপ্রেম

মা (মে ২০১১)

তুষার কুমার রয়
  • ১৬
  • 0
  • ১০৯
গ্রামের নির্মল পরিবেশ, মায়ের স্নেহ আর পিতার ভালোবাসা পেয়ে বড় হয়েছেন জহির ভাই। আমাদের পাড়ার একটি মেসে উঠেছিলেন ছয় মাস হল। উনার সাথে আমার সম্পর্কটা গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে ক্রমাগত। বিশ্বকাপ উপলক্ষে একজন ডাচ মেয়ের সাথে উনার পরিচয় হওয়ার পর ব্যাপারটা আমাকেই দেখতে হচ্ছে। উনার ই-মেইল আইডি নেই বলে আমার ই-মেইল আইডির মাধ্যমে ঐ মেয়ের সাথে কথা বলতে হয়। উনাকে বললাম, ‘জহির ভাই, আপনি একটা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খুলেন, তাহলে এর সাথে নিরিবিলি সুন্দর আলাপ করতে পারবেন।’ জহির ভাই বললেন, ‘ধুর বোকা, আমি অ্যাকাউন্ট খুলি আর তোর সাথে আমার সম্পর্কটা হালকা হোক, তাই না! এই উছিলায় তোর সাথে আমার প্রতিদিন দেখা করতে হয়, সেই সাথে তোর সাথে আমার সব কিছু শেয়ার করি, তা নষ্ট হোক, আমি চাই না।’ জহির ভাইকে আমার খুব ভালো লাগে উনার সরলতার জন্য। মনে যা আছে মুখেও সেগুলি প্রকাশ পায়, আমার কাছে কোন কিছুই লুকান না তিনি। জহির ভাই বেশ আবেগপ্রবণও বটে, উনার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে এই ব্যাপারটা বেশ লক্ষ করেছি। কয়েকবার বারণ করার পরেও উনি আমার জন্য কিছু অনবেনই, আমার মন কী ভালো না খারাপ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করবেন।
জহির ভাই একদিন বললেন, ‘জানিস, আজকে একটা স্বপ্ন দেখেছি, খুব সুন্দর স্বপ্ন।’ আমি বললাম, ‘ঐ সুন্দরী ডাচ মেয়েকে নিয়ে, না আমাকে নিয়ে?’ উনি আবার বরতে লাগলেন. ‘একটা প্রজাপতিকে নিয়ে আমার বয়স তখন অনেক কমে গেল, বিকেলবেলা মাঠে খেলতে গেলাম।খেলার সাথী না পেয়ে এক কোনে বসে রইলাম আনমনে। হঠাৎ একটি রঙিন প্রজাপতি আমার হাতের উপরে এসে বসল। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, প্রজাপতিটা দিব্যি কথা বলছে মানুষের মতো। সে বলছে, “আচ্ছা, তুমি কী আমার মাকে দেখেছ। মাঠের ভিতর উড়তে এসে মাকে হারিয়ে ফেলেছি, এখন কী করব বলো তো। আকাশের অবস্থাও ভালো না, বলো না দেখেছ কি না।” আমি উত্তর দিলাম “তোমাকে ছাড়া আর কোন প্রজাপতি তো আমি দেখিনি, তবে খোঁজে পেলে তোমাকে বলব।” সে বলল, “জানো, মা আমার জন্য প্রতিদিন একটা করে নতুন উপহার দেয়। আমি কিছু দিতে পারি না। আজকে একটা সারপ্রাইজ দিব মাকে।” আমি বললাম, “তুমি বুঝি তোমার মাকে খুব ভালোবাসো।” কিছুক্ষণ বাদে প্রজাপতিটি বলল, “আমার মাকেই আমি সবচাইতে বেশি ভালোবাসি। তুমিও তোমার মাকে আমার মতো ভালোবাসো, তাই না!” আমার চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু হাতে হাতের উপর পড়ল, প্রজাপতিটিও উড়াল দিল। কিছুদূর যেতেই ও তার মাকে খুঁজে পেল। দেখতে পেলাম দুটি প্রজাপতি উড়ে উড়ে যাচ্ছে দিগন্তপাণে।’
আরেকদিন, জহির ভাই হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে এসে বলতে লাগলেন, ‘দেখ, দেখ, আমার হাতের উপর একটা ফড়িং নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে, ওর কান্না থামানোর শক্তি যে আমার নেই।’ আমি একটু ভাব মেরে বললাম, ‘ফড়িং আবার কাঁদতে যাবে কেন? এটা তো ওডোনাটা বর্গের অন্তর্ভুক্ত একটা ইনসেক্ট। আর আপনি আবোল-তাবোল কি সব বলছেন, বুঝতেই পারছি না।’ উনি বললেন. ‘তুই তো জানিস না আজকে সকালে একটা ফড়িং বারান্দায় এসেছিল। আমি ওটাকে ধরে ওর লেজে সুতা লাগিয়ে মজা করছিলাম, কিন্তু লেজ ছিঁড়ে ওটা দুখণ্ড হয়ে গেল। বিকেলবেলায় এই ফড়িংটি বারান্দায় এসে আমার হাতে বসল নির্দ্বিধায় সে বলল, “তুমি আমর মাকে দেখেছ, সেই সকালবেলা বের হয়েছে, এখনও বাসায় ফিরেনি। আমার মা তো কখনও এত দেরি করে না। দুপুরেও কিছু খেতে পারিনি। বলো না, দেখেছ কিন না...।” আমি কোন উত্তর দিতে পারলাম না। সে আবার বলল, “কত জায়গায় খুঁজলাম মাকে পাচ্ছিনা। মাকে ছাড়া এখানে থকতে কী যে কষ্ট হয় সেটা তো আমিও বুঝি। অথচ আমি কি না...।’ জহির ভাই কাঁদতে লাগলেন, আমি নিশ্চুপ ফড়িংটির দিকে এক পলকে চেয়ে রইলাম।
অনেকদিন হয়ে গেল, জহির ভাই আমার কাছে আসছেন না। মনটা আনচান করতে লাগল- উনার কিছু হলো নাতো! খোঁজ নিতে উনার রুমে গেলাম। উনার বন্ধুরা বলল, ‘ কয়েকদিন ধরেই জহির নেই।’
বাড়ীতে গেছে বলেই তারা নিশ্চিন্তে আছে। অথচ আমার মন মানতে চাইছে না, আমাকে কিছু না বলেই জহির ভাই চলে গেল! উনার রুমটা ভালো করে দেখতে লাগলাম, উনার টেবিলে রাখা একটা খাতা নজরে আসল। খাতার মধ্যে একটি কাগজ কিছুটা বের হয়ে আছে। কাগজটা বের করে জহির ভাইয়ের লেখাগুলো গড়তে লাগলাম-
প্রতিদিন ঘুমানোর সময় পুতুলটিকে বলি-তুমি কেমন আছ। সত্যি করে বলো তো, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করো তো নাকি আমার সাথে সবসময় মিথ্যে বলে যাবে আমাকে খুশি রাখার জন্য।পুতুলটি কোনও উত্তর দেয় না, তারপরও আমি একের পর এক প্রশ্ন পুতুলটিকে করে যাই। মন যে মানে না, তাই পুতুলের মাঝেই তোমাকে খোঁজার চেষ্টা করি। সবসময় ফোন করলে তুমি বলো, ‘আমি ভালো আছি, তুই খাওয়-দাওয়া করিস তো ঠিক ভাবে।’ আমি বলি, ‘আচ্ছা মা, তুমি আবার আমার সাথে মিথ্যে বললে। তুমি সবসময় ভালো থাকো কিভাবে, তোমার কী অসুখ করে না!’ আর তুমি বলো, ‘সন্তান ভালো থাকলে মায়ের কখনও অসুখ হয়রে বোকা।’ একথা শোনার পর চোখের জল ধরে রাখতে পারি না তাই ফোনটা তড়িঘড়ি করে রেখে দিই। অসুস্থ বাবর কাছে ফোন দিলেও একই কথা- আমি এখন সুস্থ, তুই খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করিস। তোর পড়ালেখা কেমন চলছে?’ অথচ কিছুদিন আগে যখন বাড়ীতে গেলাম তখন দেখলাম উল্টোটা-“অসুস্থ বাবা তপ্ত দুপুরে বাইরে যাচ্ছে কৃষিজমি দেখার জন্য, আর তুমি! জ্বর নিয়েও রান্না-বান্না চালিয়ে যাচ্ছ, আমাকে কিছু জানাওনি, বুঝতেও দাওনি।” তাই পুতুলটিকে জিজ্ঞেস করে রাতে ঘুম আনার চেষ্টা করি। কিন্তু এ বড় কঠিন কাজ মা, নাড়িছেঁড়া ধন যে বারবার তোমার কাছেই ছুটে যেতে চায়, এ তুমি বুঝ না।
জহির ভাইয়ের লেখা পড়ে গায়ের লোম সোজা হয়ে যেতে লাগল। বালিশের পার্শে রাখা এনার প্রিয় পুতুলটি দেখে বিস্মিত হলাম। অভিভূত হলাম জহির ভাইয়ের মাতৃপ্রেম ও ভালোবাসা দেখে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শিশির সিক্ত পল্লব অনেক সুন্দর ব্রাদার.....ভোট তো করবই...অনেক শুভ কামনা রইল
অদৃশ্য শুভ কামনা রইল।
সূর্য N/A ডাচ মহিলার সাথে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে দিলে গল্পটায় আবেগ আরো বাড়তে পারতো। ভালই হয়েছে। আর একটা কথা লেখকের পরিচয়ে বাংলায় নাম কিন্তু কমেন্টে ইংরেজীতে, একটু দৃষ্টিকটু লাগে একটা আইডিই ব্যবহার করা ভাল।
Shahnaj Akter N/A darun ekti golpo .................................
আহমেদ সাবের মোটামুটি ভাল লেগেছে।
তৌহিদ উল্লাহ শাকিল N/A মনোযোগ সহকারে লিখলে আরো ভালো হত বলে মনে করি . তারপর ও বলব ভালো হয়েছে .
মাহমুদা rahman আর একটু যত্ন পেলেই অসাধারণ হত....একটু বর্ণনামূলক...সুন্দর......

২৬ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫