মেয়েটির দিকে আড়চোখে তাকায় ইমন।আগ বাড়িয়ে কথা বলে। মেয়েটির মনোযোগ আকর্ষনের চেষ্টা করে। একই অফিসে দু’জনে চাকরী করে। একই পদে। মোনালিসা মেয়েটির নাম। খুব সুন্দরী না হলেও স্মার্ট। অন্যদিকে ইমন ছেলে হিসেবে সুদর্শন। সাথে স্মার্টও। অফিসের বস তুষার দেখতে আহামরি কিছু নয়। অথচ-- হ্যা, অথচ মোনালিসা মেয়েটি তার সাথে হেসে হেসে কথা বলে,সময় কাটায়। এটা দেখে ইমন কষ্ট পায়। মনে মনে ভাবে তুষার অফিসের কর্তা বলেই কি মোনালিসা তার সাথে হেসে হেসে কথা বলে। তার সাথে সময় কাটায়। শুধু কি কাজের খাতিরে নাকি অন্য কিছু----। প্রশ্নটা প্রায়ই মনে উঁকি দেয় ইমনের। তুষারের টাকা আছে।হয়তো সে কারনেই সহজে মোনালিসাকে কিংবা ওদের মত মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের তুষারের মত ছেলেরা কাবু করতে পারে। কিন্তু তাই বলে,মোনালিসা!একটা বিবাহিত পুরুষের সাথে সখ্যতা!উঃ ভাবতেই রাগে গা শিউরে উঠছে। মানুষের রুচি---
কি ইমন সাহেব কিছু ভাবছেন? চমকে চোখ তুলে তাকায় ইমন।-ও আপনি!কিছু বলবেন? না মানে বলছিলাম,ফাইলটা কি দেখেছেন? কোন ফাইলটা? বসুননা একসাথে একটু চা খাই। এখন চা খাওয়ার সময় নাই। বস রেগে আছেন।তারপর একটু থেমে মোনালিসা বলে, আপনি দেখে না থাকলে আমাকে দিন। আমাকে দেখে দিতে বলেছেন। না আমি দেখে দিচ্ছি।টেবিলের উপর রাখা ফাইলটা খুলে দেখতে শুরু করে ইমন।
ইদানিং ঘন ঘন তুষারের রুমে মোনালিসার যাওয়া দেখে বিরক্ত হয় ইমন। কথাটি বলেই ফেলে সে মোনালিসাকে,বিষয় কি মোনালিসা,আপনি ঘন ঘন স্যারের চেম্বারে যাওয়া আসা করছেন। অনেকটা বিরক্ত হয়েই জবাব দেয় মোনালিসা, কাজের প্রয়োজনে যেতেই হতে পারে।আর ইমন সাহেব আপনি কাজ বাদ দিয়ে এসবই খেয়াল করেন নাকি। না ঠিক তা নয়। আমাদেরকে স্যার আর ঘন ঘন ডাকেননাতো! আপনি গিয়ে আপনার কাজ করেন।বেশ রাগতঃ স্বরেই কথাটা বলে মোনালিসা।
কি করা যায় ভেবে পায়না ইমন। মোনালিসার ভালবাসা সে পেতে চায়। সে তাকে ভালবাসে সেটা কতটুকু সত্য জানে না তবে মোনালিসা তাকে এড়িয়ে চলাতে সে কষ্ট পায়।তুষারের প্রতি তার ঈর্ষা জন্মে। এরি মধ্যে মোনালিসার প্রমোশন হয়ে যায়। রাগে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে ইমন।
ইমন জানে এসময় বাড়িতে থাকেনা তুষার।ইচ্ছে করেই সে তুষারের বাড়িতে যায়। দরজা খুলে দাঁড়ায় তুষারের স্ত্রী। স্লামালাইকুম ।তুষার সাহেব নেই। না উনিতো এখনও ফিরেননি। তারপর একটু থেমে বলে,আপনাকে ঠিক---- ও,আমি ইমন আহমেদ। ওনার অফিসে চাকরী করি। এই এদিকে এসেছিলাম তাই ভাবলাম একটু ওনার বাসা ঘুরে যাই। ও আচ্ছা। আমি কি একটু বসতে পারি। হ্যা আসুন। আমারই বসতে বলা উচিত ছিল।অপ্রস্তুত হয়েই দরজা ছেড়ে ভেতরে ঢোকবার সুযোগ করে দেয় তুষারের স্ত্রী। না ঠিক আছে।সোফাতে বসে ইমন বলে,কেমন আছেন ভাবী? ভালো। কিভাবে বলবে,কি করে শুরু করবে ভাবতে সময় নেয় ইমন। আপনি বসুন আমি চা নিয়ে আসছি। না চা খাবনা। আসলে ঠিক কিভাবে বলব বা বলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছিনা। কেন কি বলতে চাচ্ছেন? আর কেনইবা এত অস্বস্তি বোধ করছেন। না আসলে তুষার সাহেবের ব্যাপার কিনা! ঠিক বুঝলাম না। আপনি খুলে বলুন।অসুবিধা নাই। না বলছিলাম কি---অফিসে একজন মহিলা সহকর্র্মী আছেন।উনাকে তুষার সাহেব পছন্দ করেন। উনার প্রমোশন করিয়েছেন। আপনি এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বাসায় এসেছেন। আপনি রাগ করছেন কেন?এ কথা বলার জন্য আসবো কেন?এদিকে এসেছিলাম তাই ভাবলাম তুষার সাহেবের সাথে দেখা করে যাই। তাই এলাম।তারপর একটু থেমে নেয় ইমন।আর প্রসঙ্গটাতো তুলতে চাইনি। তুললাম আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগলো আপনাকে তাই। ঠিক আছে আপনি আসুন।এরপর তুষার থাকলে তখন আসবেন। বেশ আসি। তবে বিষয়টা হাল্কাভাবে নেবেননা।আর আমি যে এসেছি এটা তুষার সাহেবকে জানাবেননা।
ইমন চলে যাবার পর তুষারের স্ত্রী লুবনার মনে খটকা লেগেই থাকল।ঘটনা সত্যিইতো মনে হয়। কয়েকদিন থেকে তুষারের আচরন কেমন যেন লাগছে। কিছুটা দূরত্ব দূরত্ব ভাব। হুট করে অফিসে চলে আসে তুষারের স্ত্রী লুবনা।সে এমন সময় এসে অফিসে উপস্থিত হয় যখন মোনালিসা তুষারের ঘরে। লুবনাকে অফিসে দেখে যতটা না তুষার অবাক হয় তার চাইতে বেশী অবাক হয় ইমন।অবাকের চাইতেও বেশী খুশি হয় ইমন।কারন তুষারের ঘরে এখন মোনালিসা।
রুম থেকে বেরিয়ে চলে যাবার সময় লুবনা ইমনকে বলে আপনি একসময় একটু বাড়িতে আসবেন। সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত।লজ্জিত।
লুবনার আমন্ত্রন পেয়ে দ্রুতই সাড়া দিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত ইমন। লুবনা ইমনকে বলে আপনি আমাকে একটু সাহায্য করবেন। ওরা কোথায় যায় কি করে একটু যদি আমাকে জানান আমার খুব উপকার হয়। নিশ্চয়ই জানাবো।
ইমন এর কাছ থেকে ফোন পেয়ে লুবনা বলে ,কোন রেষ্টুরেন্টে? ঠিক আছে আমি আসছি।আপনিও চলে আসুন।আজ হাতেনাতে ধরে ফেলবো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। মুঠোফোনটা অফ করে লুবনা।
রেষ্টুরেন্টে ঢুকেই কর্ণারের টেবিলে পেয়ে যায় দু’জনকে।না ঠিক দু’জন নয়।তিনজন।লুবনা কিছু বলার আগেই মোনালিসা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসে। ও ভাবী আপনি এসেছেন। আসুন।পরিচয় করিয়ে দেই। উনি সোহাগ আহমেদ। আমার বাগদত্তা।গত সপ্তাহে এনগেজমেন্ট হয়েছে। আমরা দুজনে পূর্ব পরিচিত।দুজনের মধ্যে এ্যাফেয়ার ছিল। কনগ্রাচুলেশনস। ও ইমন সাহেব আপনিও এসেছেন ।আসুন। তারা সবাই একসাথে লাঞ্চ করে।
পরদিন অফিসে তুষার নিজের ঘরে ডাকে ইমনকে। বসুন। একটু থেমে তুষার বলে,শোনেন ইমন সাহেব। অফিস কাজের জায়গা।এখানে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়। উন্নতি হয় নিজেরও । প্রমোশন হয়।অফিসে অফিসিয়ালি কাজ করতে সহকর্মীদের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা,ভালবাসার সম্পর্ক থাকতে হয়। কিন্তু সেটা অফিসিয়াল রীতিনীতির মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। এখানে পরিবারকে টেনে আনা ঠিক নয়।বেশ কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছি আপনি অফিসের কাজের পরিবেশ নষ্ট করতে অনেক কিছু করেছেন। তাই অফিসের বৃহত্তর স্বার্থে আপনাকে অব্যহতি দেয়া হল। আপনার চিঠি তৈরী করা আছে। আপনাকে দিয়ে দেবে। আপনি আপনার পাওনা বুঝে নিবেন। এবার আপনি আসুন। মাথা নীচু করে তুষারের রুম থেকে বেরিয়ে আসে ইমন। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবে সহকর্মীর প্রতি ঈর্ষা তাকে কোথায় নিয়ে গেছে সে নিজেও বুঝতে পারেনি। তার মাশুল তাকে এভাবে দিতে হবে ভাবতেও পারেনি। অদৃশ্য কোন এক রমনীর হাত তাকে টেনে তুলে পার্কের বিলের ধার হতে। সে মেয়েটিকে দেখতে পারেনা। কিন্তু অনুভব করে এক কোমল স্পর্শের। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে আর কখনো সে কাউকে ঈর্ষা করবে না। কোনদিনও না।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহমেদ সাবের
খুব সুন্দর একটা শিক্ষণীয় গল্প। ঈর্ষার অনলে কত পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়; শর্ষের মাঝে ভুত দেখে। একটু উদার ভাবে দেখলে সে সমস্যাগুলো কাটানো যায়। ইমনের মতো যদি সবাই নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারতো! বেশ ভালো লাগলো গল্পটা।
সূর্য
ইর্ষাটা যখন যেনতেন ভাবে পাবার আকাঙ্খা অববা প্রতিশোধ পরায়ণতায় রূপ নেয় তখন এর চেয়ে ভাল কিছু কপালে জোটে না। ইমনের মতো কেউ কেউ এভাবেই ঠেকে ঠেকে শিখে। সুন্দর গল্প।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।