মানসুর চৌধুরী তার পারসোনাল লাইব্রেরিতে রোজ রাতে এক ঘণ্টা সময় কাটান। আজ বসেছেন দিনের বেলায়। মনটা ভালো না। আজ অফিসেও যান নি। মাত্রই রেজিগনেশন লেটার লেখা শেষ করেছেন। এইচ আর হেডের পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। এত তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা ছিল না। এমডি কতদূর যেতে পারেন তিনি দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মন্টির সাথে দিন পাঁচেক আগে ঘটা অঘটনটার পর তিনি মনের জোর হারিয়েছেন।
: কোই গো! তাড়াতাড়ি আসো… দেখো মন্টি কেমন করছে
স্ত্রী সালেহা চৌধুরীর আর্তনাদ ভাবনার জাল ছিন্ন করে দিলো। মানসুর চৌধুরী প্রায় ছুটে গেলেন মেয়ের শোবার ঘরে।
মন্টির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। ছোটবেলা থেকে ওর অ্যাজমার সমস্যা, ইনহেলার ইউজ করতে হয়। তবে ইদানিং ঘন ঘন এটাক হওয়ার কারণ ওর নরম মনের ওপর চেপে বসা নিরেট বোঝাটা। এইটুকু বয়সে এমন শকিং ইনসিডেন্স সয়ে নেয়াটা হয়ত কোনো মেয়ের পক্ষেই সম্ভব নয়। সাইকিয়াট্রিস্ট বলে দিয়েছে চোখে চোখে রাখতে। বয়সটাই তো ইমোশনের! আবেগের বশবর্তী হয়ে কখন কী ঘটিয়ে ফেলে!
ইনহেলারের এক পাফ নেয়ার পর মন্টি আবার বিছানায় ঢলে পড়ল। ইদানিং অল্পতেই কাহিল হয়ে পড়ছে মেয়েটা। মানসুর মেয়ের মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর মন্টি স্বাভাবিক হয়ে এলো।
: বাবা, যাবে না?
: কোথায় মা?
: বা রে, ভুলে গেছ? সাদাত আংকেলের চেম্বারে!
অ্যাডভোকেট সাদাত ইসলাম মানসুরের বন্ধু। ফ্যামেলি ল’ইয়ারও। হাইকোর্টে ওকালতি করেন।
: তোমাদের বাবা-মেয়ের ঘটনা না আমি বুঝি না! কোথায় যাবে ডাক্তারের কাছে। না তো গোঁ ধরে বসে আছে কোর্টে যাওয়ার। (মানসুরের দিকে ফিরে) কী গো, বোঝাও তোমার মেয়েকে…
: মা রে, তোর আম্মু তো ঠিকই বলছে! এই মুহূর্তে আমরা ওসব নিয়ে না ভাবি, কেমন?
: বাবা, তুমি এটা বলছ! তুমি! যেই তুমি আমাকে ছোটবেলা থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষ না করার কথা শিখিয়েছ, সেই তুমি বলছ এটা!
মানসুর চৌধুরী বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। কী বলবেন তিনি মন্টিকে? যে তাকে মলেস্ট করেছে তাকে মাফ করে দিতে? লোকটা তো রাস্তার বখাটে না, গুণ্ডামাস্তান না। তার মেয়ের পিতৃতুল্য শিক্ষক! ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান, প্রো-গভর্নমেন্ট প্রফেসর বা বলা যায় সরকারের দালাল। অনেক পাওয়ারফুল, আর সেই পাওয়ারের জোরে ইনফ্লুয়েন্স করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটিকে। যারা মন্টির অভিযোগ পাওয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় রিপোর্ট করেছে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার।
এরপর থেকে মন্টির ওপর শুরু হয়ে মেন্টাল টর্চার। সরকারের লেজুর ছাত্রবাহিনী আর ড. তৈমুর এলাহির প্রিয় স্টুডেন্টরা অনলাইনে সমানে এটাক করছে মন্টিকে। তার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। অফিস আওয়ারের পর একাকী একটা মেয়ে কেন নির্জন ডিপার্টমেন্টে স্যারের রুমে যাবে যদি কোনো বদ মতলব না থাকে? ফার্স্ট পজিশন ধরে রাখতে স্যারের হাতে থাকা অমূল্য মার্কসটাই কি লক্ষ্য ছিল? স্যারের মতো এমন পরিশুদ্ধ একজন মানুষকে সিডিউস করতে ব্যর্থ হওয়াই কি এত নাটকের কারণ?
মন্টি ক্যাম্পাসে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে আরো আগে। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সার্ফিং আর নিউজ দেখাও বাদ। ভেঙে পড়া মেয়েটাই যে এভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তা বাবা-মা ভাবেন নি। তাই বলে মেয়ে এরকম স্পর্শকাতর একটা ব্যাপার নিয়ে আদালতে মামলা করবে এটা মা কোনোক্রমেই চান না। জল যা ঘোলা হয়েছে, হয়েছে। আর না!
: তাহলে আমাকে কী করতে বলো?
: এসব ভুলে যা মা! তোকে কানাডায় তোর স্নিগ্ধা খালার কাছে পাঠিয়ে দি। তোর এদেশে আর লেখাপড়া করারই দরকার নেই। ক্রেডিট ট্রান্সফার করে…
: তোমার কি ফাতিহার কথা মনে আছে, আম্মু?
: তোর স্কুল ফ্রেন্ড ফাতিহা?
: হুম! ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ওর মা-বাবাও বলেছিল চেপে যেতে। ও চেপে গেছিলও। কিন্তু শেষটায় কী হলো, দিনের পর দিন ডিপ্রেশনে ভুগে গলায় ফাঁস নিল। তোমরা কী চাইছ, আমিও…
মা ঝট করে মন্টির মুখটা চেপে ধরলেন। মন্টি মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে বলল
: দেখো, আজ যদি আমি চুপ করে যাই তাহলে ওই লোকটা প্রশ্রয় পেয়ে আরেকটা মেয়ের সর্বনাশ করবে, আমি তো তা হতে দেবো না? আর, পালিয়ে যাওয়ার শিক্ষা তো তুমি দাও নি, বাবা! আজ তাহলে কেন আমাকে পালিয়ে যেতে বলছ? তুমি না বলতে বীরেরা কখনো যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালায় না! এসব কী তাহলে মিথ্যা?
মানসুর মাথা নাড়ল
: তাহলে রেডি হও, চলো আমার সাথে
: আমাকে এক মিনিট দে মা
বলেই মানসুর লাইব্রেরি রুমে ফিরে এলেন। টেবিল থেকে রেজিগনেশন লেটারটা কুড়িয়ে নিয়ে এক মুহূর্ত চিন্তা না করেই সেটাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললেন।
ছোটবেলা থেকে একমাত্র সন্তানকে তিনি মানসিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছেন। আজ মেয়ের কাছ থেকে তিনি শক্তি পেলেন। পদত্যাগ তিনি করবেন না। যে মিথ্যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছে তার বিরুদ্ধে তিনি লড়বেন শেষতক।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
অফিসে অন্যায়-অন্যায্যতার মুখে রেজিগনেশন দেয়াটাই সমাধান না। এটা পালিয়ে যাওয়ার নামান্তর। আমার গল্পের নায়ক পদত্যাগ না করে শেষপর্যন্ত দেখতে চেয়েছে। পদত্যাগ করতে চাওয়া আর না চাওয়া নিয়েই গল্পটা লিখেছি।
২৫ নভেম্বর - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।