আজ রাশেদের বাসর রাত। আয়নায় বিয়ের শেরওয়ানি আর পাগড়ীতে নিজেকে দেখে কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। কত সাধ ছিল বিয়ের আগে তাগড়া একটা প্রেম করবে। সেই সাধ আর মিটল না! তবে একটা সুযোগ কিন্তু ছিল...
দুই বছর আগে...
গোলাপের গোছাটা হাতে নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে আছে রাশেদ। পাশে তন্বী। একটু পর পর টিস্যু দিয়ে চোখ মুছছে। রাশেদ জানে তন্বীর হৃদয়ে কী ঝড় বইছে। কিন্তু তন্বী কি জানে রাশেদের হৃদয়ে কী চলছে?
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। সকাল সকাল রাশেদের ঘুম ভেঙেছে তন্বীর ফোনে। ওদের ভার্সিটি গ্রুপ ক্যাম্পাসে থাকছে বিকেল চারটায়। তিনটার মধ্যে যেন রাশেদ গাড়ি নিয়ে তন্বীদের বাড়ির সামনে থাকে! গত সপ্তাহে ও নিজে গিয়ে রাশেদকে একটা মেরুন রঙের পাঞ্জাবী চয়েস করে দিয়েছে। রাশেদের পছন্দ যা খ্যাতমার্কা! আজ ওকে ওই পাঞ্জাবীটা পড়ে যেতে হবে, ম্যাডামের আদেশ! আর ম্যাডামের আদেশ রাশেদের শিরোধার্য। আজ না, সেই স্কুলজীবন থেকে।
রাশেদ আর তন্বীদের বাড়ি একই গলিতে। দুজনের বাবা একে অন্যের কলিগ। ওদের ছোটবেলা থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে যাতায়াত। ওদের বন্ধুত্বের শুরু সেই কিন্টারগার্টেন থেকে। হাইস্কুল কলেজ পেরিয়ে দুজনই চান্স পেল একই ভার্সিটিতে, তাও আবার একই সাবজেক্টে! দুই পরিবার মহাখুশি। খুশি ওরা দুজনও। একসাথে ভার্সিটিতে যাতায়াত; টিএসসি, গেমস রুম, পাবলিক লাইব্রেরি... কোথায় নেই দুজন!
ও হ্যাঁ, এখন কিন্তু ওরা দুজন না, চার জন! আসিফ আর নয়না যুক্ত হয়েছে ওদের সাথে। নয়না অবশ্য সম্পর্কে তন্বীর কাজিন। আসিফ নয়নার কলেজ ফ্রেন্ড। ফলে চারজনের জমজমাট গ্রুপ।
একটা অনির্বচনীয় আনন্দে রাশেদের মনটা ভরে আছে সেই সকাল থেকে। তন্বীর ফোনটা পাওয়ার পর থেকে। তন্বী বলেছে ও আজ খুব খুশি, রাশেদ যা-ই চাক ও না করবে না! আজ মনের সব কথা তন্বীকে ও হৃদয় নিংড়ে বলে দেবে। বন্ধুত্ব কবে ভালবাসায় বদলে গেছে রাশেদ নিজেও জানে না। অবশ্য তন্বীকে দেখে ও একটু কনফিউজড। কখনো মনে হয় ও নিজেও রাশেদকে পছন্দ করে। কিন্তু বলায় যত ভয়- we are just friends! মেয়েদের কমন ডায়লগটা না জানি শোনা লাগে! শেষে ভালবাসার চক্করে পড়ে বন্ধুত্বটুকুও না হারায়।
তবে আজ সবটুকু সাহস জোগাড় করে তন্বীকে প্রপোজ করবে রাশেদ। যাই হোক হবে, হয় এস্পার নয় ওস্পার! দেখতে দেখতে গ্রাজুয়েশন শেষ হতে চলেছে, এখন যদি না বলে তো কবে?
সকাল সকাল ফুলের দোকানে গিয়ে একটা বড়সর লাল গোলাপ কিনেছে। তন্বীর লাল গোলাপ পছন্দ। রাত জেগে একটা কবিতাও লিখে ফেলেছে। কীভাবে প্রপোজ করবে আয়নার সামনে তার রিহার্সাল দিয়েছে অজস্রবার।
রাশেদ বেলা তিনটার মধ্যে গাড়ি নিয়ে তন্বীদের বাড়ির সামনে পার্ক করেছে। তন্বী রেডিই ছিল। গাড়ির হর্ন শোনামাত্রই নেমে এলো। রাশেদ মোহাবিষ্ট চোখে তন্বীর দিকে তাকিয়ে আছে। মেরুন-রঙা শাড়িতে ওকে লাগছে পরীর মতো। ওর পাঞ্জাবীর সাথে ম্যাচ করেই কি তবে...
তন্বীর একগোছা রেশমি চুড়িভর্তি হাতের ঝাঁকুনিতে ঘোর কাটল রাশেদের। তন্বীর হাতে এক গুচ্ছ হলুদ গোলাপ। গাড়ি স্টার্ট করে রাশেদ জিজ্ঞেস করল গোলাপগুলো কার জন্যে। ভেবেছিল ওরই জন্যে হবে। কিন্তু উত্তরে যখন শুনল আসিফের নাম তখন ও একটা হার্টব্রেক খেলো। আর গাড়ি খেলো হার্ড ব্রেক! তন্বী অবাক হয়ে জানতে চাইল কী হয়েছে? কিন্তু রাশেদ একটা কথাও বলল না। ভাগ্যিস আজ রাস্তা ফাঁকা, নইলে ঝাঁপসা চোখে গাড়ি চালিয়ে কার যে কপাল পোড়াত!
মাঝপথে কেন জানি গাড়ি থামাল রাশেদ। সিগারেট খাবার ছলে গাড়ি থেকে একটু নিরালায় গেল স্বাভাবিক হতে। অবশ্য অন্য কোনদিন হলে সিগারেট খাওয়ার ওসিলায় বেরুতে পারত না। স্মোকিং তন্বীর একেবারেই অপছন্দ। কিন্তু আজ রাশেদ যা চাইবে তা-ই তো সে দিতে রাজি!
গোলাপখানা আর বের করা হলো না, পড়া হলো না স্বরচিত কবিতাও। কাঠের অর্নামেন্টাল বক্সটা সিটে রেখে যখন দুজন নামতে যাচ্ছিল, তন্বীর চোখে পড়েছিল। কী ফেলে যাচ্ছিস- জিজ্ঞাসার জবাব রাশেদ দিল এককথায়- কিছু না!
খুঁজে খুঁজে টিএসসির দক্ষিণ কোনে আসিফকে পাওয়া গেল। একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে রাশেদকে ফেলেই তন্বী জোর কদমে এগিয়ে গেল আসিফের দিকে এক গাল হাসি নিয়ে। কিন্তু সেই হাসি মুহূর্তে ম্লান হয়ে গেল। আসিফের পাশে ওটা কে কাঁধে হাত দিয়ে?
ওর নাম ক্যামেলিয়া। আসিফের ভ্যালেন্টাইন! মাস পাঁচেক হলো ফেসবুকে পরিচয় দুজনের। এতদিন বলে নি ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে বলে।
তন্বী মেয়েটা বেশ শক্তমনের। মনের ডিপ্রেসড ভাবটা সে বাইরে প্রকাশ পেতে দিল না। আসিফ আর ক্যামেলিয়ার সাথে ফরমাল দু’চার কথা বলল। এরপর enjoy your privacy বলে রাশেদকে হাত ধরে অন্যদিকে নিয়ে চলল। you two too! পেছন ঘুরতে ঘুরতে আসিফের কথাটা তন্বীর কানে গেল, সাথে ‘সব বুঝে গেছি’ টাইপ একটা এক্সপ্রেশন। তন্বী মুখে কিছু বলল না। চোখমুখ শক্ত করে রাশেদকে নিয়ে চলে এলো কলাভবনে।
বটতলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত দুজন বসে আছে, মুখে একটাও কথা নেই কারো। শুধু ওঠার আগমুহূর্তে তন্বী নিচুগলায় বলল- আসিফ যেন না জানে...
রাশেদের মনটা বিষাদে ভরে গেল। ভীষণ আঘাত পেয়েছে মেয়েটা। দুজনের এত মিল, তাই বলে একই দিন হার্টব্রেক খেতে হবে? রাশেদের খুশি হওয়ারই কথা। কিন্তু ভালবাসার মানুষের দুঃখে সে খুশী হয় কী করে?
এবারের ভ্যালেন্টাইন ডে ওদের সবার জীবনে বেশ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ক্লাসের বিরতিগুলোয় সহসা চার মাথা এক হয় না। আসিফ ক্যামেলিয়াকে নিয়ে টাইমপাস করে। তন্বী ডিপার্টমেন্ট লাইব্রেরীতে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকে। নয়না কোনোদিন তন্বীর সাথে লাইব্রেরীতে, কোনোদিন রাশেদের সাথে টিএসসি।
ক্লাসমেটদের ‘তন্বীর ড্রাইভার’ নামের সার্থকতা রেখে রাশেদ এখনো ওকে ভার্সিটি-বাসা বাসা-ভার্সিটি ড্রাইভ চালিয়ে যাচ্ছে। দুজনের মধ্যে কথাবার্তাও কমে গেছে। হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মেয়েটার চুপচাপ স্বভাবের সাথে বাসায় কারো পরিচয় নেই। একদিন ফাঁক পেয়ে ওর মা রাশেদকে জিজ্ঞেস করেছিল ওর এভাবে মৌন হওয়ার কারণ কী? রাশেদ মিথ্যে করে বলেছে, সামনে পরীক্ষা তো, ওই নিয়ে হয়ত একটু টেন্সড...
অনার্স ফাইনাল ইয়ারের শেষটা যেন দেখতে দেখতে চলে গেল। পরীক্ষা শেষ, রাশেদের ড্রাইভারিও খতম! তন্বীর সাথে হাই হ্যালো যা হয় তা ফোনেই। রাশেদ দুয়েকবার গেছে ওর বাসায়, কিন্তু ও রাশেদদের বাসায় আসাও ছেড়ে দিয়েছে।
এরমধ্যে নয়নার কাছ থেকে রাশেদ জানতে পারল তন্বীর স্কলারশীপ পাওয়ার খবর। নেক্সট মান্থে ইউকে যাচ্ছে। ও একবার জানালও না! রাশেদ মনঃক্ষুণ্ণ হলো। তারপরও নিজে থেকেও ফোন দিল তন্বীকে
-কনগ্রাচুলেশনস!
-থ্যাংক ইউ...
-কবে যাচ্ছিস?
-সামনের মাসের ৭ তারিখ
-কই, কিছু তো জানালি না...
-না, হুট করেই তো হলো... আর তোকে না জানালে জানাব কাকে? আমাকে এয়ারপোর্টে ছেড়ে আসতে তো তোকেই ড্রাইভ করতে হবে!
-যাক, ড্রাইভারের চাকুরি তাহলে এখনো আছে!
-আছে মানে? সারাজীবন থাকবে!
এতক্ষণে ওপাশে হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল। হাসলে তন্বীকে যে কী সুন্দর লাগে! ওর হাসিমুখটা যেন সামনে থেকে দেখতে পেল রাশেদ।
তন্বী ইউকে গেছে তিন মাস হলো। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। রাশেদের সাথে ফেসবুকে প্রায়ই চ্যাটিং হয়। তন্বীর অ্যাস্টনে ক্লাস শুরু হয়েছে সেও মাস দুই হলো। বার্মিংহামে এখন উইন্টার। তুষারমানব বানিয়ে উচ্ছ্বল আনন্দে মেতে ওঠার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছিল তন্বী। তুষারের মধ্যে ওকে যে কী সুন্দর লাগছে!
কিছুদিন পর লন্ডন ব্রিজে তোলা একটা ছবি শেয়ার করল তন্বী। ওর পাশে খুব হ্যান্ডসাম এক যুবক। ছেলেটার হাত জড়িয়ে ধরা ছবির সাথে তন্বীর স্ট্যাটাস- my loving one...
রাশেদের রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে ছবিটা দেখার পর থেকে। এরপর আরো কত ছবি যে তন্বী শেয়ার করেছে! সবগুলোতে ওই ছেলেটা! তন্বীর কাজিন ব্রাদার- নিলয় জাহেদ। এর সাথে নাকি তন্বীর বিয়ে পাকাপাকি! নয়না বলেছে। এরপর থেকে রাশেদ ফেসবুক দেখাই ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তন্বীকে এক নজর দেখতে মন আঁকুপাঁকু করে। ফেসবুকে লগিন করে তন্বীর আপডেট তো পায়, কিন্তু সাথে সেই নিলয়! ছবিগুলোতে আবার রাশেদকে ট্যাগ করা! missing dear dosto RASHED... দুঃখে কষ্টে অভিমানে রাশেদ ফেসবুকই ডিলিট করে দিল।
ফেসবুকে টানা কয়েকদিন না পেয়ে তন্বী ওকে হোয়াটসঅ্যাপে নক করল। রাশেদ মিথ্যে করে বলল সামনে মাস্টার্স এক্সাম, স্টাডিতে সময় দিচ্ছে বলে ফেসবুক লগিন করে না।
বসন্তে গাছের পাতা ঝরার মতো একটা একটা করে দিন ঝরে গেল ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে। রাশেদের মাস্টার্স শেষ। অনার্স শেষেই একটা জবে ঢুকে গেছিল ও। মাস্টার্স শেষে পুরো ধ্যানজ্ঞান দিল ক্যারিয়ারের দিকে। ফেলে আসা জীবনের অনেক কিছুই মন থেকে ঝেড়ে ফেলেছে সে। ওদিকে তন্বীরও মাস্টার্স কোর্স শেষ। আগামীকাল সকালে দেশে ফিরছে। যথারীতি রাশেদই ওকে এয়ারপোর্টে এটেন্ড করতে গেল গাড়ি হাঁকিয়ে।
পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি- ভ্যালেন্টাইনস ডে! এইসব প্রেম ভালবাসা দিবসের খোঁজ রাশেদ আর এখন রাখে না। কিন্তু এবার রাখতে হলো। সকাল সকাল তন্বীর ফোন-
-নেমে আয়...
-নেমে আসব মানে?
-হাঁদারাম, নিচে আসতে বলসি! আমরা তোর জন্যে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছি তো...
-কিন্তু আমার তো অফিস...
-গুল্লি মার তোর অফিসের! ছুটি নিয়ে নে
-বসকে কী বলব?
-বল বান্ধবীর বিয়ের কেনাকাটা করতে যাব!
সত্যি সত্যি তন্বী গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। ড্রাইভারের সিটে নিলয়! রাশেদের মাথায় রক্ত উঠে গেল। হবু 'হাবি'কে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে যাচ্ছিস যা, কাবাবমে হাড্ডির মতো মাঝে রাশেদকে টানা কেন? কিন্তু আচরণে প্রকাশ পেতে দিল না বিরক্তিভাবটা।
কেনাকাটা বলতে নিলয়ের জন্যে শেরওয়ানি পাগড়ি নাগড়া.. এইসব। রাশেদকে একটা মেরুন পাঞ্জাবি গিফট করল তন্বী। ও মিথ্যে করে বলেছিল আগেরটা ছিঁড়ে গেছে। তন্বীর সেকি বিরক্তি- কী একটা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়ে এসছে! ক্ষ্যাত একটা! শপিং মলেই ওকে নতুন পাঞ্জাবিটা পড়িয়ে ছাড়ল।
লাঞ্চ করে ওরা তিনজন গেল টিএসসি। নয়না আরো আগেই এসেছে, ওদের জন্যেই অপেক্ষা করছে। রাশেদ খুব অস্বস্তি বোধ করছে। এতক্ষন শো রুমে শো রুমে ঘুরেছে। কাজ যা করার তা করেছে বাকি দুজন; রাশেদ শুধু পিছে পিছে গেছে আর কিছুক্ষণ পর পর তন্বীর ‘দেখ তো ওকে কেমন মানাচ্ছে’ প্রশ্নের জবাবে ফোন থেকে মুখ তুলে এক কথায় ‘ভাল’ বলে রিপ্লাই করেছে। কিছু এখন চারজন মুখোমুখি বসে অস্বস্তি কাটাতে পারছে না।
-এতক্ষণ একসাথে ঘুরলাম, কিন্তু নিলয়কে তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই নি! কারণ একবারে নয়না আসলে পরিচয় করানো বেটার মনে হলো
রাশেদ এখনো স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে বসে আছে। সবই কানে যাচ্ছে, কিন্তু এমন ভাব ধরে আছে যেন মোবাইলে অতিজরুরি কিছু করছে!
-কিরে, শুনতে পাচ্ছিস? তোকেই বলছি
-হুম? ও হ্যাঁ বল...
-পরিচিত হ... এ হলো নিলয়, আমাদের সেজো চাচার ছেলে... আর নয়নার হবু হাজবেন্ড!
রাশেদ মুহূর্তে বিস্ফোরিত চোখে নয়নার দিকে তাকাল। নয়নার ঠোঁটে ফিচকেলে হাসি। তবে যে নয়না বলেছিল নিলয় তন্বীর হবু... বিয়ে পাকাপাকি...? হিসাব মিলাতে পারছে না ও। ওর হিসাব কষতে কষতেই নিলয় আর নয়না বিদায় নিল।
-কীরে হাঁদারাম! হিসাব মিলছে না?
তন্বীর ঠোঁটে রহস্যের হাসি। রাশেদ হাঁ করে বসে আছে তো বসেই আছে
-মুখ বন্ধ কর, মাছি ঢুকে যাবে!
-কিন্তু নয়না যে বলেছিল...?
-কী? নিলয়ের সাথে আমার বিয়ে ফিক্সড...?
-হুম!
-আমিই ওকে বলেছিলাম বলতে!
-অ্যাঁ!
-হ্যাঁ! কিন্তু তাতেও কি তোর মুখ ফোটাতে পারলাম! কী ছেলেরে তুই? বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না... এই জমানায় এইরকম থাকলে চলবে...?
তন্বী কী বলছে রাশেদ বুঝতে পারছে না। তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। এরমধ্যে তন্বীর মোবাইলে কল এসেছে। আসিফ! তন্বী কল রিসিভ করে লাউড স্পীকার অন করে দিল
-কীরে, মাম্মা মুখ খুলছে?
-আরে ধুর, ও আর মুখ খুলছে! এখনো মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে, মৌনী সাধু একখান...
-বুঝছি মামা, তোরেই মুখ খুলতে হবে... স্বয়ংবরা হয়ে যা!
-তোরা কই?
-এই তো, আধঘন্টা লাগবে... তোরা ততক্ষণ চিল কর
আসিফ কল কেটে দিয়েছে। রাশেদের মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। এই আসিফরে নিয়ে কী একটা ব্যাড বাজ খাইলো মেয়েটা, কিন্তু ওর সাথেই কত স্বাভাবিক এখন!
-তন্বী, আমি না কিছু বুঝতে পারছি না!
-এইবার বুঝছস?
তন্বী পার্স থেকে একটা কাগজ বের করে রাশেদের সামনে মেলে দিল। চিঠি! রাশেদের নিজের হাতে লেখা। দুবছর আগের ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে তন্বীকে দেবে বলে রাশেদ যেটা লিখেছিল। রাশেদের আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না।
সেদিন তন্বীকে বাসায় ড্রপ করে ফেরার পথে সামনে প্রথম যে ডাস্টবিনটা পড়েছিল, ফুলসমেত বাক্সটা সেটাতে ফেলে দিয়েছিল রাশেদ। ওটার ভেতর থাকা চিঠিটা যে কেউ গায়েব করে দিয়েছে তা কে জানত!
-কিন্তু তুই কী করে বুঝলি চিঠিটা তোকে লেখা? কোথাও তো তোকে এড্রেস করি নি!
-ভ্যালেন্টাইন ডে-তে খেটেখুটে প্রেমের কবিতা লিখলি, অথচ সেটা কাউকে না দিয়েই চলে এলি; আমার মুখে আসিফের কথা শুনে গাড়ি হার্ডব্রেক করলি- এর কী মানে হতে পারে? মেয়েদের এত বোকা ভাবিস না...
-কিন্তু এমনও তো হতে পারত, তোকে নামিয়ে দিয়ে চিঠিটা অন্য কাউকে...
-যে তুই সামান্য এসিডিটি হলেও আমাকে জানাস সে লুকাবে এত বড় একটা খবর? হতেই পারে না! ডাউট যদি বা কিছু থাকত সেটাও দূর হয়ে গেছে ‘জেলাসি টেস্টে’!
-জেলাসি টেস্ট? সে আবার কী?
-ওই যে, নিলয়ের সাথে আমার ছবিতে তোকে ট্যাগ করতাম... ঈর্ষায় জ্বলেপুড়ে শেষমেশ ফেসবুকই ডিলিট মারলি!
-(হাসতে হাসতে) তোর মাথায় যা দুষ্ট বুদ্ধি রে বাবা...!
-বুদ্ধি না কচু! পেরেছি তোর মুখ থেকে কথা বের করতে? আর তুই মানুষও বটে... আচ্ছা অনেক হইসে... (চিঠিটা বাড়িয়ে দিয়ে) এবার নে, পড়ে শোনা...
-আবার কী পড়ব? তুই তো নিজেই পড়ছিস
-তবু... তুই পড়, তোর মুখ থেকে শুনি
অগত্যা রাশেদ আবৃত্তির ঢংয়ে কবিতা পড়তে লাগল-
“আজ কথা হবে চোখের তারায় তারায়,
নিভে যাক সব উটকো আলো;
প্রিয়! আঁধারেই যে চাঁদ বেশি ফোটে!
তুমি জ্যোৎস্না ছড়াও প্রাণখুলে,
তোমার অনুমতি ছাড়া আমার ভুবনে সূর্য অপাংক্তেয়!
তুমি এসো নির্ঝর হয়ে,
বয়ে যাও হৃদয়ের অলিন্দ-নিলয় জুড়ে।
তোমার আগমনী গানে জেগে উঠুক নিষ্প্রাণ এ ভুবন।
তোমার রঙে দুনিয়া রাঙাতে ঋতুরাজ তোমারই অপেক্ষায়-
তুমি আসবে তো?
আমার হৃদয়ের রক্তে রাঙা লাল গোলাপ নিয়ে, প্রিয়া
দাঁড়িয়ে আছি তোমার হৃদয়ের রাজপথ ধরে,
তোমার প্রত্যুত্তরের আশায়...”
A big YES!… please please please… !!
রাশেদ গভীর আবেগ নিয়ে কবিতাটা পড়ল। শুনতে শুনতে কখন জানি তন্বীর চোখে জল চলে এসেছে। মাথাটা একটু ঘুরিয়ে আবডালে চোখ মুছল।
-কেমন হইসে?
-পচা হইসে!
-তোর জন্যে এরচেয়ে ভালো কবিতা লিখতে পারব না রে! তা বল তোর উত্তর কী?
-কোন প্রশ্নের?
-এই যে এতক্ষণ কবিতায় যা করলাম
-কবিতা বুঝি না! বুঝিয়ে বল...
-I want to be your DRIVER, for life... সারাজীবন তোর ড্রাইভার হতে চাই, নিবি?
-sorry, no vacancy!
-আচ্ছা বাবা, অনেক মজা হইছে। আই অ্যাম সিরিয়াস... will you marry me?
কথাগুলো বলতে বলতে রাশেদ নিজের আঙুল থেকে আংটিটা খুলে নিলডাউন হয়ে তন্বীর সামনে বাড়িয়ে ধরল
-ও বাবা! প্রেমের প্রস্তাব না, ডিরেক্ট বিয়ে!
-হুম বিয়ে! অনেক সময় নষ্ট হইসে, আর না। প্রেমের জন্য সারাটা জীবন পড়ে আছে। জমিয়ে প্রেম করব দুজন বিয়ের পর... তুই যদি রাজি হোস। বল রাজি?
তন্বী মৃদু হেঁসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
১০ দিন পর... (আজকের দিনে)
ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে রাশেদ বাসরঘরে ঢুকল। রক্তলাল গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো বিছানায় আনতমস্তকে বসে আছে তন্বী। ঘোমটার মধ্য থেকেও ওর সলজ্জ হাসি রাশেদের চোখে এড়ায় না।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
আজ রাশেদের বাসর রাত।
৩০ সেপ্টেম্বর - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
২১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪