মন্টু স্কুলে আসে না প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। প্রথমে ভাবলাম হয়তো অসুস্থ, কিন্তু পরে সহপাঠীদের কাছ থেকে জানতে পারি, মন্টু গিরস্তীর কাজে ব্যস্ত। সাধারণত এমন হয়, তবে এবার যেন বেশ দীর্ঘ সময় হলো। মনে একধরনের উদ্বেগ কাজ করছিল। তাই স্কুল ছুটির পর সোজা হাঁটা দিলাম মন্টুদের বাড়ির দিকে।
মন্টুদের বাড়ির উঠানে ঢুকতেই চোখে পড়ল ধান, খড় আর গরুর গাড়ির চাকার গুঁইন শব্দ। উঠানে ছোট ছোট ঢিবির মতো করে রাখা ধান শুকাচ্ছে, পাশে এক কোণে খড়ের গাদা। মন্টু নিজেই ধান মাড়াইয়ের কাজ করছে। ঘামে ভেজা গা, কাঁধে গামছা। আমাকে দেখে দৌড়ে এল, মাটির ধুলা মেখে থাকা হাতে সালাম দিল।
আমি তার মাথায় হাত রেখে বললাম, “আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি মন্টু। বলো তো, স্কুলে আসছো না কেন?”
মন্টু কিছু বলার আগেই আমি জানতে চাইলাম, “তোমার আব্বা কই?”
সে উঠে গিয়ে বাড়ির ভেতর ডাক দিল, “আব্বা, স্যার আইছে!”
একটু পর মন্টুর বাবা এলেন, মুখে ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু চোখে মমতা। আমাকে দেখে সালাম দিলেন, তারপর পাশে একটা খালি পিঁড়িতে বসতে বললেন।
আমি বললাম, “আপনার ছেলে মন্টু এক সপ্তাহ হলো স্কুলে আসছে না। পরীক্ষা আসছে সামনে। ও তো ভাল ছাত্র, হঠাৎ এমন হলো কেন?”
মন্টুর বাবা কষ্ট মাখা গলায় বললেন, “স্যার, কাজের ভিড়ে কোনো দিন বুঝি সময় থাকে না। ধান উঠছে, খড় গাদতে হয়, গরু খাওয়াতে হয়। আমার একার পক্ষে সব সামলানো কঠিন। মন্টু নিজেই আমার দিকে তাকিয়ে বুঝে যায়, কাজের ভিড়ে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। তাই ও নিজের ইচ্ছায় পাশে দাঁড়ায়। আমি নিষেধ করি, কিন্তু সে শোনে না। ভাবে, তার আব্বার কষ্ট সে কমাতে পারবে।”
আমি নীরবে শুনছিলাম। মন্টুর চোখে তখন অপার ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ আর শিশুসুলভ আন্তরিকতা। আমি বুঝলাম, মন্টু শুধু ছাত্র নয়, সে এক পরিণত হৃদয়ের ছেলে, যে পরিবার বুঝতে শিখেছে ছোটবেলাতেই।
মন্টুর বাবা বললেন, “স্যার, আমি চাই মন্টু মানুষ হোক। স্কুলে যাক, লেখাপড়া করুক। আমি তো জানি, সে ভালো পড়াশোনা করে। কিন্তু যখন কাজের চাপে আমি দাঁড়াতে পারি না, তখন মন্টু নিজে থেকেই পাশে এসে দাঁড়ায়। মন ভরে যায়, কিন্তু ভয়ও লাগে—এই দায়িত্বের ওজন ওর ছোট কাঁধে বেশি না হয়ে যায়।”
আমি মন্টুর হাত ধরে বললাম, “তোমার বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসেন মন্টু। ঠিক যেমন তুমিও তাকে ভালোবাসো। কিন্তু পড়াশোনা হলো ভবিষ্যতের চাবি। তুমি যদি আজ স্কুলে না যাও, আগামী দিনে হয়তো এমন জীবন থেকেও নিজেকে বাঁচাতে পারবে না। তোমার পড়াশোনাই একদিন তোমার আব্বার কষ্ট লাঘব করবে।”
মন্টু মাথা নিচু করে বলল, “স্যার, আমি কাল থেকে আবার স্কুলে যাব। কাজ তো থাকবে, কিন্তু আমি চেষ্টা করব সময় বুঝে সব সামলাতে।”
মন্টুর বাবা চোখ মুছলেন। হয়তো কাজের ধুলো নয়, সেটি ছিল চোখের কোণে জমা ভালোবাসার জল।
চলে আসার পথে আমার মনে হলো, শুধু মন্টু না, এই দেশজুড়ে এমন অনেক মন্টু আছে—যারা ভালোবাসা, দায়িত্ব আর স্বপ্নের ভার কাঁধে নিয়ে হাঁটে। আমরা যদি সবাই তাদের পাশে একটু দাঁড়াতে পারি, তাহলেই গড়ে উঠবে এক সত্যিকার মানবিক সমাজ।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
গল্পে মন্টু নামের এক ছাত্রের কথা বলা হয়েছে, যে এক সপ্তাহ ধরে স্কুলে আসে না। সহপাঠীদের কাছ থেকে জানা যায়, সে গিরস্তীর কাজে ব্যস্ত। শিক্ষক স্কুল ছুটির পর মন্টুর বাড়িতে গিয়ে দেখে, মন্টু তার বাবার সাথে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছে। মন্টুর বাবা জানান, কাজের চাপে মন্টু স্কুলে যেতে পারে না, কারণ সে বাবার কষ্ট দেখে সাহায্য করে। শিক্ষক বুঝিয়ে বলেন, পড়াশোনাই ভবিষ্যতের চাবি, যা দিয়ে মন্টু একদিন সত্যিকারের সাফল্য অর্জন করতে পারবে। মন্টু প্রতিশ্রুতি দেয় পরদিন থেকে আবার স্কুলে যাবে। গল্পটি শিশুদের দায়িত্ববোধ, পারিবারিক ভালোবাসা এবং শিক্ষার গুরুত্বের সুন্দর বার্তা বহন করে।
১১ আগষ্ট - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
২১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫