এই তো সেদিনের কথা । পলাশীর আম্রকাননে তুমুল লড়াই হচ্ছে । তরুণ সেনা-নায়ক মীর মদন ও মোহনলাল অমিতবিক্রমে যুদ্ধ করে ক্লাইভ বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছে । চারদিকে নবাবের তরুণ সেনাদের বীরোচিত উল্লাস । জয় শুধু সময়ের ব্যাপার । এরকম একটি মুহূর্তে মীরজাফরের নেতৃত্বে অতি সেয়ানা অমাত্যবর্গের ষড়যন্ত্রের ফলে নবাব সিরাজ দিশেহারা হয়ে পরেন । তরুণ প্রজন্মের তরুণ সেনাদের নিশ্চিত বিজয় সেয়ানা প্রজন্মের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে হাতছাড়া হয়ে যায় । বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হয় । শুরু হয় ব্রিটিশ রাজত্ব । ইংরেজিকে রাষ্ট্রভাষা করা হয় ।
ধর্মীয় মূর্খতাকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধানো হয় বার বার । সেই স্বার্থলোভী সেয়ানা প্রজন্মের সহায়তায় শুরু হয় ইংরেজদের সীমাহীন শোষণ , দুঃশাসন ও নিপীড়ন । কিন্তু এ অবস্থা বেশীদিন চলতে পারে নি । জেগে উঠে তরুণ প্রজন্ম । শুরু হয় স্বদেশী আন্দোলন । নারীরাও এগিয়ে আসে জীবন বাজী রেখে । ভারতবর্ষ স্বাধীন হয় । পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি দেশের জন্ম হয় । কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল অধরাই থেকে যায় । উর্দু আর হিন্দিকে দুদেশের রাষ্ট্রভাষা করা হয় । তরুণ প্রজন্মের উদারতার সুযোগে সেয়ানা প্রজন্ম ক্ষমতার দ্বন্দ্ব , দুর্নীতি আর লুঠপাটে মেতে উঠে । শুরু হয় জন-অসন্তোষ । এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ বাঁধে । ভারতীয় ট্যাঙ্ক বহর লাহোর অভিমুখে এগিয়ে যায় । বিপন্ন পাকিস্তান । পরাজয় নিশ্চিত । এমন সংকটময় মুহূর্তে বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালী সেনারা বুকে মাইন বেঁধে ট্যাঙ্কের নিচে ঝাঁপিয়ে পরে । একেকটি ট্যাঙ্ক বিকট শব্দ করে হাওয়ায় উড়তে থাকে । সেই যাত্রায় পাকিস্তানের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাথতে বাঙালী সৈন্যদের বীরোচিত ভূমিকা ইতিহাস সৃষ্টি করে । এরকম অবস্থার পরেও পাকিস্তানী সেয়ানা নেতাদের মিথ্যা আর চাতুরী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অসন্তোষকে বাড়িয়ে তোলে ।
১৯৭১ সাল । বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে ৭ই মার্চ জাতির পিতা শেখ মজিবর রহমান একটি কালজয়ী ভাষণ দিলেন । জেগে উঠলো বাঙালী । তরুণ প্রজন্ম মুক্তির বাসনায়---স্বাধীনতার চেতনায়---নয় মাসের যুদ্ধে লড়াকু ভূমিকা পালন করে গেল ।
আশা ছিল---, দেশ স্বাধীন হলে আমরা আগের চেয়েও অনেক সুখে থাকতে পারব । কিন্তু বিধি বাম । আবার সেয়ানা প্রজন্মরা স্বাধীনতাকে বিফল মনোরথ করে দিলো । মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে গেল । মৌলিক অধিকার মুখ থুবড়ে পরলো ।
একটি স্বাধীন দেশের সুন্দর ধর্মীয় নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করেছিলেন । বহুভাষাবিদ ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেবের নেতৃত্বে নামকরা বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের প্যানেল করে কুরান ও হাদীসের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন । এতে করে মাতৃভাষায় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা এদেশবাসীর জন্য সহজ হয়েছিল । কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এই ধারা মুখ থুবরে পরে । উদাসীনতা ও উদারতার মিশেলে ধর্মীয় নির্দেশনার ক্ষেত্রে এক মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয় । সেয়ানা প্রজন্ম আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে । এর একটি অংশ ধর্মের নামে ধান্ধাবাজী শুরু করে দেয় । আর একটি অংশ গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তোলে । আর একটি অংশ লুঠপাট , দুর্নীতি করে কালোটাকার মালিক বনে যায় । জনগণ দিশেহারা হয়ে পরে । স্বাধীনতা এলো । কিন্তু একে রক্ষা করবে কে ? সেয়ানা প্রজন্মের দ্বারা কখনোই সম্ভব নয় । সবক্ষেত্রে সেয়ানা প্রজন্মের দৈরাত্ব এত বেড়ে গেছে যে---, জনগণ স্বাধীনতার সুফল আর কি ভোগ করবে ---,এটা কেমন ---সেটা ভাববার মানসিকতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে ।
এই অবস্থার অবসানের সময় এসেছে । জাতির তরুণ প্রজন্ম আবার জেগে উঠেছে । এদেশের মানুষের সত্যিকার মুক্তির জন্য ধর্ম-ব্যবসায়ীসহ সব সেয়ানাদের মুখোশ খুলে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
তরুণ প্রজন্মের হাতে নেশা আর নীল ছবি তুলে দিয়ে সেয়ানা প্রজন্ম কম খেলা খেলেনি । বিবেক -বুদ্ধি আর জ্ঞান-ধ্যান সহ তরুণ প্রজন্ম যদি একবার জেগে উঠে---, তাহলে যুগ যুগ ধরে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া মতলববাজ সেয়ানা প্রজন্ম খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না । পিছু হটতে বাধ্য হবে । জয় বাংলার গগন বিদারী আওয়াজে সকল অপশক্তির পতন হবে । জাতী আবার জেগে উঠবে---, জেগে উঠবে বার বার ।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাইম ইসলাম
গল্পের দীর্ঘসুত্রতাকে সংক্ষেপে সুন্দরভাবে রুপদান করেছেন। কালের স্রোতে নেতিবাচক ভাবনার লোকদের কারণে অনেক পিছিয়ে পরেছে আমাদের এই অঞ্চলের পথচলা! তবে থেমে থাকেনি! সহজ, স্বাবলিল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন জুয়েল ভাই। ভালো লাগলো।
সূর্য
অল্পকথায় অনেক বড় ইতিহাস। যুগে যুগে দালালরা ছিল আছে হয়তো ছাড়ের কারনে থেকেও যাবে। তবে একটা কথা প্রমানিত বাঙালি পরাধিন হয়ে বাঁচতে পারে না চায় না কখনো। অনেক ভাল লাগল জুয়েল ভাই আপনার মতো আমিও আশায় আছি " বিবেক -বুদ্ধি আর জ্ঞান-ধ্যান সহ তরুণ প্রজন্ম যদি একবার জেগে উঠে---, তাহলে যুগ যুগ ধরে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া মতলববাজ সেয়ানা প্রজন্ম খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না । পিছু হটতে বাধ্য হবে । জয় বাংলার গগন বিদারী আওয়াজে সকল অপশক্তির পতন হবে।" এই পতন দেখার।
আহমেদ সাবের
"মীরজাফরের নেতৃত্বে অতি সেয়ানা অমাত্যবর্গের ষড়যন্ত্রের ফলে নবাব সিরাজ দিশেহারা হয়ে পড়েন" - অন্য মঞ্চ, একই নাটক চলছে যুগের পর যুগ। আশা শুধু মরীচিকা। অসাধারণ বক্তব্যের চমৎকার একটা লেখা (গল্প বললাম না )।
মোঃ আক্তারুজ্জামান
অল্প কথায় বিশাল ব্যাপ্তির প্রদর্শন করেছেন। ইতিহাস, ন্যায় অন্যায়, আশা নিরাশা, স্বপ্ন সম্ভাবনার অনেক কথা বলেছেন। খুব ভাল লাগলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
তাপসকিরণ রায়
লেখক স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে আলচলা করেছেন--আমাদের স্বাধীনতা কি ভাবে এলো--কি ভাবে আজ আমরা স্বতন্ত্র হলাম--ভাবনা ভাষার সুন্দর বর্ণনা চোখে পড়লো।প্রকৃত স্বাধীনতা থেকে আমরা অনেক দূরে দাঁড়িয়ে--তাই সময় এসেছে সেই প্রকৃত স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার।তরুণপ্রজন্ম জেগে উঠছে--এ কাজ তাদেরই।লেখকের এমনি ধারা বক্তব্য বেশ সমসাময়িক মনে হোল।লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।