তার স্বপ্নটা কারও কারও কাছে আজব, কারও কাছে মহৎ, কারও কাছে বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। নামকরা প্লাস্টিক কোম্পানি 'দিহান প্লাস্টিক' এর স্বত্বাধিকারী আবু দিহান। তার আজ স্বপ্নপূরণের দিন। কৈশোর থেকেই তার স্বপ্ন ছিল বাবার মত টাকা হলে সপ্তাহে একদিন করে হলেও শহরের সমস্ত অভুক্ত শিশুদের তিনি খাওয়াবেন। আজ তার প্রথম সপ্তাহ। তার মনে এক অদ্ভুত ভাল লাগা কাজ করছে। তিনি ফিরে গেলেন তার ছেলেবেলায়-----
-'দিহান এই দিহান, নাস্তা সব খেয়েছ তো?'
-'হ্যাঁ মা খেয়েছি।'
-'ঠিক আছে এখন স্কুল যাও।'
ছেলে দিহান স্কুলে গেল। মা রাহেলা বেগম এসে দেখলেন দিহান সব নাস্তা খায়নি। কেবল কলা খেয়েছে একটা, বিস্কুট খেয়েছে চারটা। ডিম খেয়েছে একটা, আপেল খেয়েছে একটা। এখনো টেবিলে দুধ, কমলার রস, আঙ্গুর, ডালিম পরে আছে। মা বড় চিন্তায় পড়ে গেলেন-- 'ছেলে এ বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা দেবে। তার শরীরের যত্ন দরকার। আর ছেলেটা এত কম খাওয়া দাওয়া করলে কিভাবে চলবে? ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা গেল না। তার বাবা তো বাড়িতে সময় দিতেই পারেনা। এত খেঁটে মরছি তার জন্য আর ছেলেটা আমার কথা বুঝবে না!'--
রাগ করে মা বাদবাকি খাবার সব জানালা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলেন।
বিকেলে স্কুল থেকে এসে দিহান দেখল মা রেগে আছে। বলল---
-'তোমার কি হয়েছে মা?'
-'কিছু হয়নি।'
-'আমি সকালের নাস্তা সব খাইনি তাই বুঝি রাগ করেছ?'
-'তুই খেলেই কি আর না খেলেই কি? আমি কিছু বলব না তোকে।'
-'রাগ করছ কেন মা?'
-'কাল থেকে তোকে কিছু খেতে হবে না।'
এ সময় কাজের মহিলা বললেন, 'তোমার মা তোমার উপর রাগ করে খাবার বাহিরে ফেলে দিয়েছেন।'
'ঠিক করেছি। এত কষ্ট করছি তোর জন্য। তোর যাতে শরীর ঠিক থাকে। তুই যাতে ভালো রেজাল্ট করিস। আর তুই সব খাবার খেলি না?' --বললেন মা।
দিহান জানে তার মা তাকে অনেক ভালবাসে। তাকে সব সময় একটু বেশী যত্ন করে খাওয়ায়। এটা নিয়ে মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে দিহানের। এত খাবার কি খাওয়া যায়? তারপরও মা কষ্ট পাবে মনে করে খেয়ে নেয় দিহান। মাকে অনেক ভালবাসে সে। মাকে কোন কষ্ট দিতে চায়না। কোন দিন একটু কম খেলেই মা চিন্তায় পড়ে যায়। নানা ভাবনা তার মাথায় ঘোরে-- 'ছেলের কোন অসুখ করল নাকি? তার খাবারের স্বাদ বদলে গেল নাকি?'
আজকে মার খাবার ফেলে দেয়ায় দিহানের মাথায় দারুন আইডিয়া এল। এতে তার খাবারও কম খাওয়া লাগবে। আবার মাও মন খারাপ করবে না।
পরদিন সকালে মা আবার শাহী নাস্তার থালা নিয়ে এলেন। দিহান দেখল তাতে ৮ পদের নাস্তা। সে মাকে বলল, 'মা আমি ঘরে গিয়ে নাস্তা করব।'
দিহান ঘরে এসে দুই পদ খেল আর ৬ পদ বাহিরে ফেলে দিল। জানালা দিয়ে দেখল রাস্তার কুকুরের দল তার খাবার নিয়ে টানাটানি করছে। পনের মিনিট পরে মাকে এসে বলল--
-'মা রাগ কর না। সব খেয়েছি।'
-'ওরে আমার লক্ষ্মী রে...'--মা খুব খুশি হলেন নাস্তার প্লেট খালি দেখে।
দিহানের মা দুপুরে টিফিন টাইমে গিয়ে তাকে খাবার দিয়ে আসে। কে জানে ছেলে কোন বাসি খাবার খাচ্ছে কি না? এটা নিয়ে স্কুলের মেয়েরা খুব হাসাহাসি করে। এত বড় ছেলেকে কেউ স্কুলে খাবার দিতে আসে! দিহানের খুব লজ্জা লাগে। তারপরও মাকে কিছু বলতে চায়না। মাকে কষ্ট দিতে চায়না দিহান। তবে দুপুরে অল্প খায়। মা সবার সামনে তাকে জোর করতে পারে না। ভাবে কোন ক্ষতি নাই। সকালে ৮ পদ খেয়েছে। রাতে আবার ৫ পদের তরকারি দিয়ে খেতে দেব। রাতে বেশী খাওয়া ঠিক নয়, তাই মাত্র ৫ পদ। এটা নিয়ে খুব কষ্ট লাগে রাহেলা বেগমের। তারপরও মনকে সান্ত্বনা দেন এটা ভেবে যে কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতে হয়।
রাতে দিহান যথারীতি একপদ তরকারি দিয়ে খাবার সারে। বাদ বাকিটা ঘরে খাবে বলে মার সাথে ছলনা করে জানালা দিয়ে পাচার করে। মা ভাবে ঘরে খাচ্ছে খাক, সব তো খাচ্ছে।
এভাবে দিন যায়। মা দেয় দিহানকে। দিহান যায় ঘরে। ঘর থেকে খাবার যায় বাহিরে। মাঝখান থেকে পাড়ার কুকুরেরা তার বড় ভক্ত হয়ে উঠেছে। সে জানালার গ্লাস খুলে দিলেই তারা বুঝে যায় খাবারের সময় হয়েছে।
সেদিন স্কুল ছুটির পর দিহান আর তার ক্লাসমেট অনিক একসাথে ফিরছে। তাদের বাড়ির রাস্তা একই। তারা একসাথে গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরছে। আর কিছুদূর গেলেই আগে অনিকের বাড়ি পড়বে, এমন সময় অনিক বলল--
-'এই দিহান চল আজকে একটা রোমাঞ্চকর কাজ করি।'
-'সেটা কি?'
-'চলই না। আগে বললে আকর্ষণ থাকে না।'
-'দেখ আজকে কোন জুলিয়েটের বাসায় যেতে পারব না।'
-'আরে না। একদিন নিয়ে গিয়েছি বলে প্রতিদিন কি তোকে আমি মানুষের বাসায় নিয়ে যাব?'
-'তবে?'
-'আজকে ভিন্ন জিনিস।'
-'কতদূর?'
-'আরে ঐতো ঐ বস্তিটা দেখছিস না? ওখানে।'
-'ওখানে কেন?'
-'গিয়েই দেখ।'
এরপর অনিক আর দিহান গেল বস্তির কাছাকাছি একটা গাছের আড়ালে। এখান থেকে বস্তি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু মেইন রোড থেকে একটু দূরে আর গাছের আড়াল হওয়ায় তাদেরকে রাস্তা থেকে দেখা সম্ভব না। অনিক পকেট থেকে এক প্যাকেট সিগারেট বের করল। বলল--
-'এই দেখ।'
-'সর্বনাশ তুই সিগারেট ধরেছিস!'
-'ধুর এখনও ধরিনি। ধরব ভাবছি।'
-'তুই এমন কেন রে? আগে জানলে তোর সাথে আসতাম না।'
-'চুপ শালা মেয়েমানুষ!, এই বয়সে একটু সিগারেট না খেলে চলে? খেয়ে দেখ শালা।'
-'তুই খা।'
দিহান অন্য দিকে মুখ ফেরাল। এসময় দিহানের চোখ গেল বস্তির দিকে। একটা ফাঁকা জায়গায় কয়জন ছেলেমেয়ে জমা হয়েছে। একজন মহিলা একটি পাতিলে একের পর এক পলিথিনের প্যাকেট খুলছেন আর কি যেন ঢালছেন।
দিহান বলল, 'এই অনিক?'
অনিকের পরম সুখে সিগারেট টানছে। সে বিরক্তভাবে বলল, 'কি?'
-'ঐ মহিলাটা কি করছে রে?'
-'আমি কি করে জানব?, কাছে গিয়ে দেখ তোকে প্রেম নিবেদন করবে মনে হয়।'
-'চুপ থাক মাতাল।'
দিহানের কৌতূহল বেড়ে গেল। সে একটু এগিয়ে গেল। দেখল মহিলাটা সেসব প্যাকেট এতক্ষণ খুলছিলেন সেসব এঁটো খাবারের প্যাকেট। মানুষরা এসব খাবারের প্যাকেট খেয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। দিহান মহিলাটার কাছে গিয়ে বলল---
-'আপনি কি করছেন চাচী?'
মহিলাটা মুখ তুলে তাকাল। বলল--
-'তুমি কে?'
-'আমি দিহান।'
-'কি কর এইখানে?'
-'এখানে হাঁটতে এসেছি।'
-'হাঁটতে আইছো? না গাঞ্জা খাইতে আইছো?'
-'না না চাচী। তা না।'
-'তো এইখানে কি চাও?'
-'আমি জানতে চাচ্ছি আপনি কি করছেন?'
-'কি আবার করমু, রান্ধি।'
-'এসব এঁটো প্যাকেট থেকে কি ঢালছেন?'
-'এই ছেলে দেখি কিছুই জানে না? আরে এইটাই তো আমাগো খাওন।'
এরপর অনিক কোন কথা না বলে সেখান থেকে দূরে সরে আসল। দেখল মহিলাটা খিচুরি,মুগের ডাল, মসুরের পাতলা ডাল, লাউ এর তরকারি, মাছের তরকারি, ফুলকপির তরকারি, মাংসের ঝোল, বিরিয়ানির ভাত, সাদা ভাত, কচুর ঘণ্ট, ৮-১০ রকমের ভর্তা সব একত্র করে পাতিলে ঢেলে দিলেন। দিহান অনিকের কাছে আসল। বলল--
-'তোর নেশা কেমন হল?'
-'আমার কথা বাদ দে। তুই এতক্ষণ কি করলি?'
-'তোর সাথে এসে একটা জিনিস দেখলাম। আমার ভাবনায় হঠাৎ আঘাত পেয়েছে রে। আমার মাথা তো উলট পালট হয়ে গেল।'
-'কি হয়েছে? তুই কি বস্তির ভিতরে গিয়ে গাঞ্জা খাইছোস?'
-'কথা বলতে ভালো লাগছে না রে। চল বাড়ি যাই।'
দিহান সেদিন রাতে ঘুমাতে পারল না। সে রাতের খাবার ফেলে না দিয়ে মার অলক্ষ্যে ফ্রিজে জমিয়ে রাখল। পরদিন স্কুল থেকে বাসায় এসে সেসব খাবার নিয়ে গেল। গতকালের জায়গায় গিয়ে একটা ছোট ছেলেকে ডাকল---
-'এই ছেলে শোন।'
ছেলেটি আসল। দিহান বলল--
-'তোমাদের আজকের খাবার খেয়েছ?'
-'মা এখনো আয়ে নাই।'
-'মা কোথায় গেছেন?'
-'খাওন কুড়াইতে।'
-'ঠিক আছে তুমি এসব খাবার নাও। আমি বাড়ি থেকে এনেছি।'
এরপর সন্ধ্যা লাগলেও দিহান বাড়ি গেল না। সেদিন শহরের বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্টের আশপাশে ঘুরে ঘুরে দিহান দেখল ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা রাস্তার পাশে, হোটেলের পাশে খাবার কুড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের হাতে একটা করে বস্তা। যেখান থেকে যে খাবারই পাচ্ছে বস্তায় ঢোকাচ্ছে। মাছের কাঁটা, মাংসের হাড় কোন কিছুই বাদ যাচ্ছে না। ভদ্র লোকরা প্যাকেটের খাবারের ভালো করে না খেয়ে ফেলেছেন-এমন প্যাকেট দেখামাত্র তাদের চোখ চকচক করে উঠছে। ফেলে দেয়া ওয়ান টাইম প্লেটের অবশিষ্ট খাবার তারা সেখানেই খেতে শুরু করেছে। খাবার হোটেলের পাশের ডাস্টবিন ঘেঁটে ঘেঁটে তারা খাবারের প্যাকেট বের করছে!। এসব দেখে দিহানের মনটা বড় খারাপ হয়ে গেল। সে এত দিন মাকে খুশি করার জন্য এত খাবার নষ্ট করেছে!!। তার মায়ের খাবারের প্রাচুর্যে সে এতদিন সে বুঝতে পারেনি ক্ষুধার পৃথিবী কতটা নির্মম?!! তার চোখে জল এসে গেল। নিজেকে বড় অপরাধী মনে হল।
সে রাত ৯টায় বাড়ি ফিরল। বাড়ি ফিরে দেখে মা খুব টেনশনে পড়ে গেছেন। দিহান তো কোন দিন এত রাত পর্যন্ত বাহিরে থাকে না। মাকে দেখে দিহান কোন কথা বলল না। সোজা তার ঘরে গেল। মাও ভাবলেন ছেলেটা বাহিরে থেকে কেবল এসেছে। তাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না।
রাত ১০টা বেজে গেল। দিহান এখনো খেতে আসল না। মা এবার সত্যিই শঙ্কিত হয়ে পড়লেন। ছেলের আজ কি হয়েছে? তার মাঝে হঠাৎ পরিবর্তন কেন? দিহান কি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে!! রাহেলা বেগম আর ভাবতে চাইলেন না। সোজা দিহানের ঘরে গেলেন। দেখলেন ঘরের দরজা বন্ধ। মা আরও ভেঙ্গে পড়লেন। তার ছেলে কখনো দরজা লাগানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। আজ হঠাৎ কি হল তার যে তাকে অবেলায় দরজা লাগাতে হল? সে কি লুকিয়ে প্রেম করছে!? মেয়েটি কি তাকে ছ্যাকা দিয়েছে!? আমি সেই মেয়েটির শেষ দেখে ছাড়ব ---মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন রাহেলা। তিনি ডাকলেন--' দিহান খেতে আস।' দিহান বলল, ' একটু পরে যাচ্ছি মা।'
রাহেলা চলে আসলেন। একটু পরে দিহান আসল। টেবিলে দেখে মা তার জন্য খাবার সাজিয়ে রেখেছে। দিহান বলল---
-'মা,আমি তোমাকে না বলে একটা অপরাধ করেছি মা।'
রাহেলা বেগম সত্যি এবার মুষড়ে পড়লেন। দিহান বলল--
-'আমি তোমার দেয়া খাবার জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেই মা। আমি এতো খাবার খেতে পারিনা। আমাকে মাফ করে দাও। আমি আর কখনো খাবার নষ্ট করব না।'
-'তোর কি হয়েছে রে?'
-'মা আমি আর বেশী করে খাবার খেতে পারব না মা।'
-'কি হয়েছে রে তোর?' ---রাহেলা বেগম কেঁদে ফেললেন। দিহান বলল---
-'আমি মানুষের কষ্ট দেখেছি মা। যারা রাস্তা থেকে খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে। মানুষের এঁটো খাবার তৃপ্তি করে খাচ্ছে। আমার দেশের লোক এত গরিব কেন মা?'
-'তুই এসব কথা বলছিস কেন রে?'
-'মা তুমি আর আমার জন্য কখনও ১ পদের বেশী রান্না করবে না মা। যদি করো আমি কিন্তু সব নিয়ে গিয়ে রাস্তার লোকদের দিয়ে আসব।'
-'সে কি রে! তোর হঠাৎ কি হল রে আজকে?'
-'আমি মানুষের ক্ষুধা দেখেছি মা। তারা রাস্তা থেকে এঁটো খাবার তুলে খাচ্ছে!!'
-'তারা যে গরিব বাবা।'
-'তারা গরিব কিন্তু তুমি তো ভদ্র মানুষ। তুমি কি বোঝনা আমার একার পক্ষে কতখানি খাবার খাওয়া সম্ভব?'
-'তোর ভালোর জন্য তোকে আমি বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেই...'
-'তুমি দাও ঠিক আছে, কিন্তু তুমি আমার চাহিদার অতিরিক্ত দাও।এরপর থেকে এমন করবে না।'
রাহেলা বেগম কোন কথা বললেন না। ছেলেটা এখন ইমোসনাল হয়ে আছে। তাকে এখন কষ্ট দেয়া যাবে না।
পরদিন সকালে দিহান দেখল মা আবার শাহি নাস্তার থালা সাজিয়েছেন। দিহান কেবল দুটি রুটি খেল।
মা বলল--'দিহান তোমার শরীর খারাপ?' দিহান কোন কথা বলল না। চুপচাপ স্কুলে চলে গেল।
মা বড় চিন্তায় পড়ে গেলেন। ছেলেকে কি ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন? ওর কি মানসিক বা শারীরিক সমস্যা? মনে হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা। ওর বাবার সাথে কথা বলতে হবে।
সেদিন রাতে খাবার টেবিলে মার মুখোমুখি হল দিহান। মা প্রথম কথা শুরু করলেন। বললেন--
-'দিহান তোমার কি হয়েছে ভাল করে বলতো?'
-'আমার আবার কি হবে মা? আমি তো ভাল আছি।'
-'তাহলে তুমি খাচ্ছো না কেন? তোমার বাবাকে তোমার কথা বলেছি। তোমার বাবা কিন্তু তোমাকে ডাক্তার দেখাতে বলেছে।'
-'আমার তো কিছু হয়নি।'
-'তাহলে তোমার অন্য কিছু হয়েছে?'
-'আমি বলেছি আমার যা দরকার আমি শুধু তাই খাব।'
-'বড় খাদ্যবিদ হয়ে গেছ? তোমার কি কি পুষ্টি দরকার সব বুঝে গেছ তাই না?'
-'মা আমি ছোট শিশু নয় যে আমাকে চার্ট করে করে খাওয়াতে হবে।'
-'তার মানে কি বলতে চাইছ তুমি?'
-'বলতে চাইছি আমি অভুক্ত লোকের কষ্ট দেখেছি। আমার পক্ষে আর বেশী খাবার খাওয়া বা খাবার নষ্ট করা সম্ভব না।'
ছেলের এই কথার পিছনে রাহেলা বেগম আর কোন কথা বললেন না। তিনি দেখলেন ছেলেটা তার বাবার মত কিছুটা কথার ঝাঁজ পেয়েছে। তিনি ভাবলেন,ছেলেটা তো খারাপ কিছু বলেনি। তবে আমি যা ভাবছি ব্যাপারটা বোধহয় তা না। যাক বাঁচা গেল।
এরপর থেকে দিহানকে তার মা আর জোর করে খাওয়াতে চেষ্টা করেননি।দিহান নিজে থেকে খেয়েছে। তবুও মাঝে মাঝে রাহেলা বেগম ভুলবশত বেশী খাবার রান্না করে ফেলেন। সেদিন দিহান সিদ্ধান্ত নেয় আজকে তাকে বস্তি থেকে ঘুরে আসতে হবে।
এমনি একদিন অতিরিক্ত খাবার বাঁচিয়ে বস্তিতে নিয়ে গেল দিহান। দেখল চার পাঁচজন ছেলেমেয়ে একখানে বসে গোল হয়ে গল্প করছে। দিহান তাদের মাঝে গিয়ে তার খাবারগুলো দিয়ে সেখান থেকে চলে আসল। একটু দূর থেকে দেখতে লাগল তাদের। চারজন একেবারে চেটেপুটে খেয়ে হাতকে পরিষ্কার করে ফেলল। এক মেয়ে বলল----ওর মা হেবি পরোটা করে...
আরেক মেয়ে বলল---আর গোস্ত যে টেস্ট হছে!...
এক ছেলে বলল---সেই ঈদের দিন গোস্ত খাইছি...
আরেক ছেলে বলল---এমন খাওন যদি মাঝে মাঝে হইত...
কথাগুলো শুনে দিহানের মন ভারি হয়ে গেল। তার নিজের খাবারের কোন চিন্তা নাই। তার স্বপ্ন দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর। বরফ,মরুভূমি, পাহাড় দেখবে সে। সে অপেক্ষায় আছে বাবা তাকে কবে বিদেশে বেড়াতে নিয়ে যাবে। অথচ এই ছেলেমেয়েগুলোর স্বপ্ন তার তুলনায় কত সামান্য। একটু ভাল খাবার খাওয়ার জন্য এরা স্বপ্ন দেখে। দিহান স্বপ্ন দেখতে লাগল তাদের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য...
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
ক্ষুধার শহরে দিহানের স্বপ্ন পূরণের গল্প...
১১ জুন - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
২০ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৭৫
বিচারক স্কোরঃ ২.০৫ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ২.৭ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪