সুপ্তি ও পাহাড় রাজকুমার

স্বপ্নলোক (জুন ২০২৫)

ফারহানা বহ্নি শিখা
  • ৪২
হে আল্লাহ , দুইদিন নেট বন্ধ করে দাও, মোবাইল থেকে চোখ সরে যাক, শুধুমাত্র নোটে চোখ আটকে থাক আর মাথা ভর্তি লেখা আসুক..আমিন।
নিজের জন্য দোয়া করতে করতে সুপ্তি ঘুমিয়ে পড়ে । আজ চারদিন সুপ্তি এক লাইনের একটা বাক্যও লিখতে পারেনি।
অথচ কলেজ নাই, বন্ধ চলছে। এম্নিতে তার মাথায় সারাক্ষণ লেখা ঘুরতে থাকে। বিশেষ করে কলেজে স্যারের লেকচারের সময়। একদিন তো ধরা খেয়েই ফেলেছে। ঘটনাটি বলি।
ক্লাস চলছে। স্যার মাইক্রো ইকনমিক্সের বই নিয়ে আলোচনা করছেন। সুপ্তি'র ঐদিকে মনোযোগ নেই। তার মাথায় গল্প এসেছে। চরিত্রগুলো লাফাচ্ছে, ওকে তা ধরতে হবে এবং গুছাতে হবে। কিন্তু অত সময় কই? পরপর ক্লাস।
এরপরও ধরে রাখা বিশেষ দরকার , কারণ তারা শিঘ্রই অভিমান করে চলে যেতে পারে। ওর গল্পের চরিত্রগুলো সবসময় খুবই অভিমানী। অনেকটা সুপ্তি'র মতো। তাই সে মনোযোগ অর্থনীতি থেকে একটু বের করে অর্থনীতির নোট খাতার পেছনের পৃষ্টায় লিখতে লাগলো মাথায় ঘুরতে থাকা চরিত্র:
আইনুদ্দিন= হাজব্যন্ড , শরিফা =বড় বউ,নরম,লক্ষী। জমিলা = ছোট বউ, দজ্জাল। শাহদাত =একমাত্র সন্তান। গ্রাম বাংলা।

পেছনে স্যার এসে জানতে চাইলেন, micro economics = কি হবে, লিখবেনা ?
তারপর ছোট খাটো একটা বক্তৃতা দিলেন, ও মাথা নীচু করে, সেটা অবশ্য মনোযোগ দিয়েই শুনল।
আর অন্যান্য হাস্যমুখ কিছু মজা নিল।
সুপ্তি প্রার্থনা করে তো ঘুমিয়ে পড়ল । গভীর ঘুমে সে স্বপ্ন দেখে তার বিয়ে হচ্ছে, বর এসেছে ঘোড়ায় চড়ে। কিন্তু ঘোড়া কই, ওটাতে একটা গাভী, নীচে ওলান ভর্তি দুধ! পেছনে দুইটা শাবক ব্যা ব্যা করে হাঁটছে। একটা এসে মা গাভী'র ওলানে মুখ দিয়ে ডুঁশ মেরে দুধ খাচ্ছে। আর সবাই বলছে,
-কি সুন্দর ঘোড়া !!
সুপ্তি'র পরনে শাড়ি বা ঘাগড়ার বদলে প্যান্ট আর চকমকে কারুকাজের ফতোয়া। আর তার উপরই এত্তোগুলা অলংকার ! কেমন বেখাপ্পা দেখাচ্ছে!
ওর গায়ে উড়নাও নেই। কি আশ্চর্য হচ্ছে কি এসব! সুপ্তি সেলোয়ার কামিচ উড়না ছাড়া অন্য কোনো ড্রেসই পরেনা। অথচ বিয়ের দিন এসব কি পরল!
বর, ঘোড়া মানে গরুর উপর বসে আছে। ও দু'তলা থেকে মুখ দেখতে পাচ্ছে না। তবে বুঝা যায়, ছোট খাটো একটা পাহাড় বসে আছে। চিকনা সুপ্তি, সাথে পাহাড় সম হাজব্যন্ড !

আম্মু আব্বু সবাই বর নিয়ে নীচে ব্যস্ত। সুপ্তি'র পাশে কেউই নাই। ও একটা বন্ধু বান্ধবীকেও নেমন্ত্রণ করলো না, আশ্চর্য ! কিভাবে সম্ভব!
হঠাৎ খালা এসে ওকে অসুস্থ মানুষের মতো জড়িয়ে ধরে নীচে নামিয়ে নিয়ে গেলেন। যেন সে হাঁটতে পারেনা, ওকে ছেড়ে দিলে পড়ে যাবে।
তারপর বর কে দেখলো গাভী থেকে নামতে, বর নামতে নামতে গাভীটা ঘোড়া হয়ে গেল, কি সুন্দর সাদা ঘোড়া ! কি সুন্দর তার রেশমী লেজগুচ্ছ!

বরও সুন্দর মানুষ, তবে একটু বেটে আর মোটা। লম্বা হলে রাজপুত্রই লাগতো।
বিয়ে কখন সম্পন্ন হলো সুপ্তি জানলোও না।
সুপ্তিকে ঘোড়া'র পিছনে কয়েক'জন ধরাধরি করে বসায় দিলো। সুপ্তি আম্মু আব্বু'র জন্য নয় ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে দেয়ায় চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো তো কাঁদতেই লাগলো...
মা এসে ডেকে দেন,
-কি হলো সুপ্তি! চিল্লাচ্ছিস কেনো?
উঠ, সকাল আট টা বাজে, বন্ধের দিনে দেরি করে উঠতেই হবে, না?
-হুম আসছি-
তাহলে কি এটা স্বপ্ন ছিলো !
সুপ্তি গোসল, নাস্তা সব কাজ সেরে বান্ধবী রাত্রি'র সাথে শপিং যাবার জন্য তৈরি হয়ে বের হয়। একটু হেঁটে রিক্সা নেবে। মাথায় সুন্দর করে উড়না দেয়, ওকে কেমন বউ বউ লাগছে, নিজে নিজেই বলে।
ধ্যাৎ, কিসব ভাবছে! রোদ আর গরমে অস্থির সুপ্তি এদিক ওদিক তাকায় না। হঠাৎ সামনে দিয়ে একজন পেছনে কিছু দূর গিয়ে ফেরত এসে জিজ্ঞেস করেন,
-এক্সকিউজ মি..
-জ্বি! সুপ্তি মুখ দেখে থমকে দাঁড়ায়। ছোট খাটো পাহাড় রাজ কুমার, এ যে ওর স্বপ্নের বর!
-প্রমথ বাবু'র বাসাটা খুঁজে পাচ্ছিনা, একটু বলবেন প্লিজ। উনার ফোন বন্ধ পাচ্ছি এখন।
-সামনের দু'ঘরের আগেরটায়, ফেলে এসেছেন।
-ধন্যবাদ আপনাকে। এতক্ষণ কেউ জবাবও দিচ্ছিল না।
-এক্সকিউজ মি..এবার সুপ্তি বলে।
-জ্বি বলুন!
-আপনি কি বিবাহীত?
এমন প্রশ্নে বেচারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ।
-জ্বি!!
-আপনি কি বিবাহীত ?
-হ্যাঁ, তবে দু'বছর আগে আমাদের সন্তান হতে গিয়ে আমার স্ত্রী মারা গেছেন। কেন বলুন তো?
-না, এমনি, জানতে ইচ্ছে হলো।

সুপ্তি একটি খালি রিক্সা পেয়ে উঠে চলে যায়। ওর মাথা কেমন এলোমেলো লাগে।
পাহাড় সাহেবও অবাক , দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়া দেখে।
রিক্সায় যেতে যেতে এই অপরিচিত স্বপ্নের বরটার জন্য ওর বুকটা হু হু করে কেঁদে উঠল। মনে হতে লাগলো কত চেনা পরিচিত প্রিয় মানুষটাকে পেছনে ফেলে দূরে কোথাও চলে যাচ্ছে। উনার এখন তার সাথে রিক্সায় থাকাটাই যেন সঠিক ছিল। কি হচ্ছে এসব!

ও ভাবতে পারছে না কিছু, মাথা কাজ করছেনা। রাত্রিকে ফোন করে শপিং প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করে সুপ্তি রিক্সা নিয়ে এলোমেলো ঘুরতে থাকে। সবকিছু তার কাছে অদ্ভুত মনে হয়।

তিন মাস পর...
রিক্সায় করে সুপ্তি, তার কোলে আড়াই বছরের প্রত্যয়, সোনাটার হাতে লাল নীল বেলুন। সাথে পাশাপাশি বসা পাহাড় রাজকুমার । খুউব হাসি খুশি সুখি একটি পরিবার, চিড়িয়াখানায় যাচ্ছে ছোট্ট প্রত্যয়কে বানর দেখাবার জন্য।
ক'দিন ধরে বাবুটি টেলিভিশনে সারাক্ষণ বানর দেখতে চাইছে।
সুপ্তি'র এখন গল্প লেখা, কলেজ সবকিছু থেকে প্রত্যয় এর সাথেই বেশি সময় কাটাতে ভালো লাগে।
ওর জীবনটাই এখন একটা সুন্দর গল্প হয়ে গেছে, ও ভাবে।
(অনেক পুরনো লেখা)
১৮.০৪.১৭
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোশফিকুর রহমান এক কথায় অসাধারণ,তাই সর্বোচ্চ ভোট দিলাম

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

স্বপ্ন, কল্পনা সবকিছুর মিশ্রণে লেখা।

১৭ জানুয়ারী - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫