"দ্বিতীয় অংশ , প্রথমে কবিতা তে অপরাজিতার তরুনী কথা বলেছিলাম ,এখন অপরাজিতার কাছে নীলের চিঠি । একটু কষ্ট করে পড়বেন প্লিজ । ভুল ত্রুটি মার্জনীয় ।"
অপরাজিতা কেমন আছো তুমি ? ভালো যে নেই তা আমি জানি। আমার উপর ক্ষোভ আর কষ্ট নিয়ে কি ভাবে ভালো থাকবে। তোমার প্রতিটি দীর্ঘ শ্বাসের ধ্বনি আমার হৃদয়ে বাজে। আমি দূর থেকে তোমার কষ্ট গুলো অনুভব করতে পারি। আমার হৃদয়টা তোমার অজান্তে তোমার হৃদয়ের গহীনে বন্দী হয়ে আছে অপরাজিতা । দেখনা কতো কাছাকাছি ছিলাম আমরা কিন্তুু সময়ের নিষ্ঠুর নিয়মে আজ একে অন্যের কাছে স্মৃতি হয়ে গেলাম। যা আমরা কল্পনা করি নি কোনো দিন। তোমার নামটা আমার অপছন্দ ছিলো। কে যে রেখেছিলো নির্জলা ? তুমি কষ্ট পাবে এজন্য বলি নি কখনো ,তাই মনে মনে নাম দেই অপরাজিতা । তোমাকে তুই সম্বোধন করতাম তা তোমার পছন্দ ছিলো না। জানো কতো দিন চেয়েছি “তুমি” বলতে কিন্তু গলার কাছে এসে আটকে যেতো। যে দিন পুরোপুরি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম “তুই” থেকে তুমি বলার সেদিন-ই জীবনটা মোড় নেয় অন্য দিকে। অপরাজিতা জানো আমার ময়নাটা কে শিখিয়ে দিতাম তোমাকে “তুমি” বলতে কিন্তু বদমাস ময়নাটা “তুই” বলতো। তোমাকে যে তুই তুই বলতাম সেটাই ওর মাথায় ছিলো। আমি যতো ই শেখাতাম বল ““নির্জলা তুমি আমার বউ হবে? বজ্জাত টা বলতো নির্জলা তুই আমার বউ হবি? তোমার মুখটি লজ্জায় লাল হতো তা দেখার মতো ছিলো। তুলতুলি কে একদিন মেরেছি। তুমি কেনো যে ওকে এতো ভয় পেতে। আসলে জানো বিড়াল টা তোমাকে খুব পছন্দ করতো। তুমি এলে ই ঘা ঘেসতে চাইতো। তোমার মায়াবী মুখটি সবার পছন্দ ছিলো। আমি এখনো চোখ বন্ধ করে তোমার সাথে মনে মনে কথা বলি । মনে হয় তুমি একদম কাছে । তখন বলি আমাকে এক কাপ চা করে দেবে ?তুমি ঠোঁট বাকিয়ে বলো যাও নিজে বানিয়ে খাও ,আমার হাতে এখন অনেক কাজ। এভাবে প্রতিনিয়ত তোমার সাথে ঘর করি। অপরাজিতা জানো ? চোখ বন্ধ থাকলে আরো একটি জিনিস অনুভব করি আর তা হলো তোমার চুলের গন্ধ । তুমি কি একটা তেল দিতে মাথায়, খুব মিষ্টি গন্ধ ছিলো । পাশ দিয়ে হেটে গেলে গন্ধ টা লাগতো নাকে। তোমাকে কখনো ছুঁয়ে দেখিনি। এতো বড় সাহস আমার ছিলো না। একদিন চড় মেরেছিলাম সেটা ই ছিলো প্রথম এবং শেষ ছোঁয়া । তুমি মাকে বলে ছিলে আমার ধুমপানের কথা। রেগে তোমাকে চড় মারি। এরপর কি যে কষ্ট হয়েছিলো তা বুঝাতে পারবনা। সিগারেটে আর কখনো হাত লাগাই নি। তুমি আমাদের বাসায় আসতে প্রতিদিন ,ভালোবাসার কথা আমার মুখ থেকে শুনতে চাইতে। আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না ? আমি বলতে চাইতাম। প্রতিদিন কতো প্রেক্টিস করতাম কিন্তু তোমার সামনে এলে ভুলে যেতাম সব। অপরাজিতা তোমার মনে আছে তুমি যখন চা বানিয়ে নিয়ে আসতে আমি এক চুমুক দিয়ে বলতাম “আরে তুই তো চিনি দিসনি” তুমি অবাক হয়ে আমার হাত থেকে কাপ নিয়ে চুমুক দিয়ে “বলতে চিনি তো আছে! আমি কাপটা তোমার হাত থেকে নিয়ে চরম তৃপ্তিতে চা শেষ করতাম। তুমি আবার বলতে “এই না বললা চায়ে চিনি নাই! আমি হেসে বলতাম একটু কম ছিলো এখন টিক আছে। তুমি বলতে তোমার কিছু কিছু বিষয় আমি বুঝি না। অপরাজিতা আমি চাইতাম আমার চায়ে তোমার একটি চুমুক থাকুক । বিষয়টা অনেক দিন পর তুমি টের পাও। তারপর থেকে তুমি নিজেই এক চুমুক দিয়ে বলতে এই নাও পরে বলবে চায়ে চিনি নেই। এই ছোটখাট ভালোলাগা গুলা কি যে মধুর ছিলো । এখন এসব শুধু ই স্মৃতি । তবুও ভাবতে ভালো লাগে । অপরাজিতা শিউলী তলা এখনো শিউলী ফুলে ছেয়ে যায়। সাদা আর কমলার মিশ্রণে অপূর্ব মায়ায় ঘিরে থাকে জায়গাটা,কিন্তু সেখানে তুমি নেই আমি ও নেই মা বসে বসে কাঁদতেন । এখন মা ও নেই। হৃদয় এর কাছ থেকে এসব খবর পাই । তুমি শুনলে অবাক হবে হৃদয় এখন আমার এক মাত্র বন্ধু । যাকে একদিন আমি পাষণ্ডের মতো মেরেছিলাম। ও তোমার চুলের প্রশংসা করেছিল বলে। ভুলে গিয়েছিলাম সুন্দরের প্রশংসা করার অধিকার সবার আছে। শেফালী কে দুচোখে দেখতে পারতাম না কি বেহায়া মেয়ে ছিলো। ক্লাস টেনে পড়ুয়া একটি মেয়ে বলে কি না নীল তোমাকে ভালোবাসি। মনে হয়েছিলো এক চড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দেই। কিন্তু মার জন্য কিছু বলি নি । অপরাজিতা তোমার একটি কাণ্ড এখনো আমাকে খুব আনন্দ দেয় তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার শার্ট ‘পাঞ্জাবি গুলা পরতে। তোমার হলুদের দিন বললে যদি পারো পাঞ্জাবিটা রেখে যেও । সেদিন তোমার চোখের গহীনে যে কষ্ট আমি দেখেছিলাম তা আজো আমার পাজরে বিধে। আমাদের জীবনটা কেনো এমন হলো?বলতে পারো? না অপরাজিতা তুমি পারো না ,তুমি তো কিছুই জানো না। আর আমি তোমাকে জানাতে চাই নি। তোমার বাবার এক মাত্র সন্তান তুমি । আমাদের পাড়ার নামী ব্যক্তি । তিনি যে দিন এসে বললেন তোমার বিয়ে টিক হয়ে গেছে আর বিয়ের সব দায়িত্ব আমার উপর। আমি বুঝে গেলাম আমাদের নীরব প্রেম টা তোমার বাবার জানা হয়ে গেছে। তিনি আরো বললেন তুমি ভালো করে জানো আমার মেয়ের যোগ্য তুমি নও , আমার মেয়ে কে তোমার হাতে দিবো না। আমি জানি ও তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে । তোমরা যে একে অন্যকে বলো নি তা ও জানি। এই না বলার জন্য বিষয় টা একদম সহজ হয়ে গেলো তোমার , আমার কাছে। এখন তুমি কি ভাবে সামলাবে তা তুমি জানো । আমার স্ত্রীর বাল্যবন্ধু তোমার মা এই সুবাদে মেয়ে যাওয়া আসা করতো আমি বাধা দেই নি। আর এই দূর্বলতার সুযোগ টা নিলে তোমরা মা ছেলে মিলে। আমার সম্পদের দিকে নজর দিলে তোমরা । এসব কি বলছেন আপনি!নির্জলা কে আমি আপনার মতো সচ্ছলতা দিতে পারব না জানি কিন্তুু অসুখী রাখবো না। আরে রাখো তোমার এসব সস্তা আবেগ । তুমি আমার মেয়ের যোগ্য নও। নির্জলা হলো তোমার উপরে উঠার সিঁড়ি। আমি যতো বলি আপনি ভুল ভাবছেন তিনি তত বলেন ভুল টা প্রমাণ করবে তুমি। আর তা হলো নির্জলার বিয়েতে উপস্থিত থেকে সব তদারকি তুমি করবে। ওকে বুঝাবে তুমি ওর জন্য নও। তিনি আরো বললেন যদি আমার কথা না শুনো বিকল্প পথ আছে আমার। আর আমি কি করতে পারি তা তুমি জানো। অপরাজিতা জানো তুমি? আমার মায়ের এবং আমার উপর লোভী অপবাদ টুকু দিয়ে তোমার বাবা চলে গেলেন। আমি সেই অপবাদ থেকে নিজেকে এবং মাকে বাঁচাতে গিয়ে তোমাকে অন্যের হাতে তুলে দিলাম। আমি সেদিন দেখেছি তোমার চোখে তীব্র ঘৃণা আর কষ্ট । তোমাকে শ্রীমতী কন্দর শ্রী বলে ডাকতাম। কিন্তু সেদিন তোমার চোখে অশ্রুর বদলে ঘৃণা দেখেছি । তোমার কাজল কালো চোখ থেকে আগুন ঝড়ছিলো। চোখের ভাষা ছিলো ক্ষমা করবো না তোমাকে। আমার মরণ টা সেদিন হয়ে যায়। তোমার বাবার কথা বলি নি তোমাকে আমি জানতাম তুমি সব ছেড়ে ছলে আসবে। তুমি শুধু আমার মুখের কথা শুনার অপেক্ষায় ছিলে। আমি পারি নি অপরাজিতা ভালোবাসার জন্য একজন মাকে লোভী অপবাদ দিতে কিংবা একজন হেরে যাওয়া পিতার পরাজয় দেখতে।তার চেয়ে এই ভালো তোমার কাছে কাপুরুষ হয়ে রইলাম। মা- বাবার সম্মান এর কাছে ভালোবাসা তুচ্ছ অপরাজিতা । বাসায় এসে প্রথমে ময়না টা কে ছেড়ে দেই কিন্তুু জানো ও যায় নি। আমাকে দেখে বলতে থাকে ““নির্জলা তুই আমার বউ হবি? আমি বাবা মারা যাবার পর অনেক কেঁদেছিলাম এরপর আর কাঁদিনি । ময়নার কথা শুনে অনেক কাঁদি। পরে পুকুর পাড়ে যাই শিউলী গাছটি কাটতে। হৃদয় এবং মা এসে আমাকে থামিয়ে দেন। মা বলতে থাকেন জীবন জীবনের মতো চলে তুমি এমন করছো কেনো?মাকে আমি কি করে বুঝাই মন টা তো কারো কথা শুনে না মা? তারপর কেটে যায় অনেক দিন তুমি আসা যাওয়া করতে তোমাদের বাড়িতে । আমাদের বাসায় আসতে না। তোমাকে এক নজর দেখার জন্য মনটা ছটফট করতো কিন্তুু যাওয়ার তো অনুমতি ছিলো না। চৌরাস্তার মোড়ে কতো দিন দাঁড়িয়ে থেকেছি তোমাকে এক নজর দেখার জন্য। দেখতে পাইনি এক দিন ও পরে তোমার বাসার কাজের ছেলে রসিদ বলেছিলো তুমি জানতে আমি দাঁড়িয়ে আছি তাই তুমি রাত্রে বের হতে । রসিদ জানাতো আমি ওখানে আছি কি না। এ কথা শুনার পর আর দাঁড়াই নি ওখানে । অনেক কষ্ট হতো মনে হতো কেউ আমাকে চৌবাচ্চায় চুবিয়ে রেখেছে ,আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না। এর মধ্যে একটি চাকরি হয়ে যায় । চলে যাই সিলেটে । মন লাগাতে পারি না কাজে দুই বৎসরের মাথায় চাকরিটা ও চলে যায় । কবিতা লিখতে থাকি পাগলের মতো । তোমার খুব পছন্দ ছিলো কবিতা আমি নিয়মিত লিখতাম না বলে বকা দিতে । তুমি কি জানতে তখন তো তুমিই ছিলে আমার কবিতা। এখন কবিতা আমার হয়েছে । শুধু তুমি রয়ে গেলে পর। কবিতা লিখে টিউশনি করে কোন রকম দিন যাচ্ছিল। এর মধ্যে হৃদয় তোমার দুর্ঘটনার কথা বলে । তুমি দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছো । কি করে কি হলো ও বলতে পারে না কিছু । তোমাকে দেখার জন্য মন টা বেকুল হয়ে উঠে তোমার বাবার কথা মনে হয় তোমার বিয়ের দিন আরও বলেছিলেন দেখো নীল তোমাকে যেনো আমার বাড়ির আশপাশ না দেখি। যদি কোনো দিন দেখি “নির্জলা কে বলবো নীল আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তোমার জীবন থেকে সরে যাবার জন্য। তোমাকে দেখার পথ সবদিক থেকে বন্ধ ছিলো। দিন চলে যাচ্ছিল দিনের মতো। বাড়িতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় । মা চলে গেলেন না ফেরার দেশে আমার আর কোনো পিছুটান রইলো না। হৃদয় কে বুঝিয়ে দিলাম বাড়িটা ও টাকাপয়সা দিয়ে যেতো । আমাকে অনেক টানাহেঁচড়া করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বলে তোমার কাছে সব বলে দেবে। আমি ওকে বারণ করি । একবারে ছন্নছাড়া হয়ে যাই । অনেক চেষ্টা করে ও তোমার ভালোবাসার মায়াজাল থেকে নিজেকে বের করতে পারি নি। মনে মনে তোমার সাথে কথা বলি সংসার করি। কেউ কেউ বলে পাগল না কি? জানো কাল কেও তোমার সাথে বসে দুপুরের ভাত খেয়েছি । তুমি কত যত্ন করে আমাকে খাওয়ালে। আমার চুলে বিলি কেটে দিলে । তোমার চুলের গন্ধটা এখনো পাচ্ছি। স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায় পার্কে মানুষের হৈচৈ শুনে একটি ছেলেকে কয়েকজন মিলে দাওয়া করছে । মনে মনে হাসতে থাকি এভাবে আমাকে হয়তো মানুষ দৌড়াবে একদিন। আমার সব প্রহর গত হওয়া দিন, আজ -কাল ,স্বপ্ন মধুর স্মৃতি ,ভালোবাসা তোমাকে নিয়ে কাটানো সময়,শিউলী তলার সব শিউলী এমন কি হৃদয় টাও । মনের মধ্যে মনের বসতি সেতো চিরদিনের । আমার হও নি তাতে কি “ভালোবাসা ” যতো সব গচ্ছিত তোমার জন্য। আমাকে পাবে তোমার চোখের জলে তোমার দীর্ঘশ্বাসে,তোমার সকালে তোমার সন্ধ্যায়,আমি রইবো তোমার আঁচলের মায়ায়,শিতানের বালিশে,নকশিকাঁথার বাজে বাজে। তোমার আলমারিতে রাখা ন্যাপ্থালীনের গন্ধে,তোমার পায়ের নূপুরের ছন্দে। অপরাজিতা ক্ষমা করো আমায়। ভালোবেসেছি কিন্তু কাছে রাখতে পারি নি তোমায়। এজন্মের সব অপরাধ না পাওয়া টুকু পুষিয়ে নেবো যদি আরেক জনম পাই, ভালোবাসায়,মায়ায় প্রতিশ্রুতিতে শুধু তোমারই রবো। আরেক জন্মে তোমাকেই চাইবো। ভালো থেকো সব সময় তোমার নীল স্থান অপরাজিতার হৃদয়
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ
আমার কিন্তু চমৎকার লেগেছে গল্প টা।গল্প বলার ঢং টা ছিল অসাধারণ।আমি একটুও বাড়িয়ে বলছিনা।দারুণ কষ্টের একটা ছোট উপাখ্যান পড়লাম যেন।আপনার নির্জলার জন্য শুভ কামনা।শোক কে শক্তিতে পরিণত করুন।শুভ কামনা ভোট আর পছন্দ রইল।আমার কবিতায় আমন্ত্রণ জানিয়ে গেলাম।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।