১.
মাঝরাত্রে ভয়ানক এক চিল-চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে বসলাম। একটু পরে আবার সেই চিৎকার এবং আমার বন্ধু মারুফ হুড়মুড় করে আমার পাশে শোয়া থেকে উঠে বসল। এতক্ষণে বুঝলাম—চিৎকারটা সেই-ই করছিল!
আমি বললাম—কীরে? কী হলো? অমন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিস কেন?
মারুফ হতভম্বের মতো আমার দিকে চেয়ে বলল—ও তুই! ভেড়া নোস?
আতি তাজ্জব হয়ে বললাম—আমি ভেড়া হতে যাব কোন দুঃখে?
মারুফ বলল—কেন, দুঃখ না পেলে কী ভেড়া হওয়া নিষেধ?
আমি বললাম—হঠাত্ ভেড়াদের পক্ষে এতো সাফাই গাচ্ছিস যে! আর এরকম ষাঁড়ের মতো চিৎকার করার মানে কী?
মারুফ বলল—আর বলিস নে। ঘুমের মধ্যে সেই ভেড়াটা এসে এমন গুঁতোনো শুরু করলো না! আর হাতও কামড়ে দিয়েছে! এই দেখ!
আমি জানলা দিয়ে আসা চাঁদের ঝকঝকে আলোয় হতভম্ব হয়ে দেখলাম মারুফের হাতে ছোটো-ছোটো কিছু লালচে-লালচে দাগ। দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরলে যেমন দেখায় ঠিক তেমনি! ব্যাপার দেখে মাথা পুরো ঘুলিয়ে গেল! কী ভুতুড়ে ব্যাপার রে বাবা!
গল্পটা এগিয়ে নিতে হলে এই পর্যায়ে এই আঙুল-কামড়ানো ভেড়াটার পরিচয় দেওয়া আবশ্যক। কয়েকদিন আগেই মারুফের বিসিএস পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পরীক্ষার সময় কয়েকদিন রাত জেগে পড়ার পর পরীক্ষা শেষে দেখা গেল তার ঐ রাত জাগার অভ্যাসটা একেবারে আসন গেঁড়ে বসেছে। যতোই সে সকাল-সকাল ঘুমোনোর চেষ্টা করুক লাভ হয় না। ঘুম যেন একেবারে গুমই হয়ে গেছে!
কাজেই আমি তাকে ভেড়া গোণার পরামর্শ দিলাম। প্রথমদিন ভেড়া গোণা শেষ করে সে বেশ সকাল-সকাল ঘুমিয়ে গেল। কিন্তু পরদিনই বাঁধল বিপত্তি! ভেড়া গোণা শেষ করে সে সবে ঘুমিয়েছে কি ঘুমায়নি—এমন সময় কোত্থেকে চশমা চোখে এক ভুঁড়ি-ওয়ালা ভেড়া এসে হাজির! তার চেহারায় যেমন জ্ঞানী-জ্ঞানী, ভাব, কথাবার্তায়ও তেমনি পণ্ডিতি স্পষ্ট। একের পর এক বিদঘুটে প্রশ্নে মারুফকে সে এমন ত্যক্ত-বিরক্ত করে তুলল যে, পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেও সে পুরো ভ্যাবলার মতো বসে রইল! তারপর থেকে প্রতি রাত্রেই তার এই আজগুবি প্রশ্নের বায়নাক্কা! আর আজকে রাত্রে আবার শুরু হলো এই নতুন উৎপাত কামড়ে দেওয়া আর গুঁতোনো!
আমি মারুফকে জিজ্ঞেস করলাম—ভেড়াটা তোকে কোনও কারণ ছাড়াই কামড়ে দিল? ভারি বেয়াড়া তো! কোনও আদব-কায়দা নেই!
মারুফ বলল—সে তো তোরও নেই।
তারপর সিরিয়াস হয়ে বলল—সে কিন্তু এমনি-এমনি কামড়ায়নি! একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করেছিল। উত্তর দিতে পারিনি বলে কামড়ে দিয়েছে!
আমি কী বলব বুঝতে না পেরে বললাম—এখন ঘুমো। কালকে দেখা যাবে।
পরদিন রাত্রে আবার সেই ভেড়ার কামড়, মারুফের চিল-চিৎকার আর হাতে কামড়ের দাগ!
আমি অতিষ্ঠ হয়ে বললাম—ভেড়াটাই খালি তোকে ধাঁধা জিজ্ঞেস করবে আর না-পারলে কামড়ে দেবে ক্যান? কালকে থেকে তুইও ওকে ধাঁধা জিজ্ঞেস করবি।
মারুফ বলল—আর ও যদি উত্তর না দিতে পারে তবে আমিও ওকে কামড়ে দেব আর গুঁতোবো? কিন্তু আমার তো শিং নেই!
আমি বললাম—সে দেখা যাবেখন। আগে তো তাকে পাল্টা প্রশ্ন করে দেখ!
কিন্তু পরদিন রাত্রেও মারুফের চিৎকারে কাঁচা-ঘুমটা ভেঙে গেল! বিরক্ত হয়ে তাকে বললাম— তুই ভেড়াটাকে পাল্টা ধাঁধা জিজ্ঞেস করেছিলি?
মারুফ কপাল কুঁচকে বলল—মনে ছিল না।
পরদিন সকালে আমি মারুফকে বললাম—একটা ভেড়া কী-এমন ধাঁধা ধরতে পারে যে তুই উত্তর দিতে পারিস নে?
মারুফ দুহাতে কপাল চেপে ধরে বলল—ঘুম ভাঙার পর কিছুতেই মনে করতে পারি নে!
আমি বললাম—আচ্ছা তুই আমাকে এই ধাঁধাটার জবাব দে দেখি—
নদী-তীরে থাকি আমি, নদী-তীরে চরি
আমি আর আমি মিলে বকবক করি!
মারুফ খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল—বক।
আমি বললাম—ঠিক আছে। এবার তুইও আমাকে আরেকটা ধাঁধা জিজ্ঞেস কর।
এইভাবে আমরা সেদিন ঘণ্টা তিনেক ধাঁধার চর্চা চালিয়ে গেলাম! দেখা যাক, মারুফ এবার ভেড়াটার ধাঁধার উত্তর দিতে পারে কি না!
রাত্রিবেলা আবার মারুফের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল! আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ও বলল—ভেড়াটাকে আজকে পাল্টা ধাঁধা জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু সে উত্তর দিয়ে দিয়েছে। অথচ আমি তার ধাঁধার জবাব দিতে পারিনি! এইজন্য এই দেখ আবার কামড়ে দিয়েছে!
আমি মারুফের আঙুলে সেই দাঁতের দাগ দেখে বড়ো একটা নিশ্বাস ফেললাম।
পরদিন রাত্রে ঘুমোনোর আগে মারুফকে বললাম—দেখিস আজকে ভেড়াটা তোকে কামড়াতে পারবে না। এমনকি হয়তো গুঁতোনোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে!
কিন্তু রাত্রিবেলা আবার সেই চিৎকার! আমি উঠে বসে বললাম—আবার কামড়ে দিল না কি?
মারুফ বিস্মিত হয়ে বলল—না, আজকে কামড়ে দেয় নি! এই দ্যাখ, আঙুলে কোনও দাগ নেই! তবে ভেড়াটা কিন্তু ঠিকই গুঁতিয়েছে! কিন্তু, আজকে যে কামড়াবে না, তুই জানলি কী করে?
আমি রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে শুয়ে পড়লাম!
পরদিন মারুফকে বললাম—আচ্ছা এই ধাঁধাটার জবাব দে দেখি—
নয়তো ভেড়া,বলদ-ঘোড়া—ক্ষুর আছে তার তবু;
পেঁয়াজ, মরিচ, বেগুন খেলেও খায়না সে ঘাস কভু!
ভেড়ার সারা গা জুড়ে ভাই কোঁকড়া চুলের সারি,
তার গাঁয়ে ভাই অত্ত চুলের নেই তো বাড়াবাড়ি।
কিন্তু, মাসে একটা ভেড়া এককেজি চুল দিলে,
তিন কেজি সে পারবে দিতে—পড়বে না মুশকিলে!
মারুফ মিনিটখানেক চিন্তা করে বলল—উহু! পারছি নে। বড্ড কঠিন! তুই বলতো!
আমি বললাম—বলা যাবে না। এই ধাঁধাটা তোর সেই ভেড়াকে আজ রাত্রে জিজ্ঞেস করবি। দেখ, সে এর উত্তর জানে কি না!
সেদিন রাত্রে একঘুমে সকাল হয়ে গেল! বুঝলাম, ভেড়া বাবাজি কামড়ে দেওয়ার সুবিধে করতে পারেনি! এই ধাঁধার উত্তর দেওয়া তার কম্মো নয়!
মারুফ বলল—তোর ধাঁধা ব্যাপক কাজে দিয়েছে! কিন্তু উত্তরটা কী?
আমি না-শোনার ভান করে এড়িয়ে গেলাম।
এরপর থেকে ভেড়া-বাবাজির আর কোনও পাত্তাই নেই! আর আমাদের রাতগুলোও একঘুমে কাবার হয়ে যাচ্ছে!
সপ্তাহ দুয়েক পরে সেলুনে চুল কাটাতে গিয়ে আমাদের মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রির হেড রিয়াদ আহমেদের সাথে দেখা! না, তিনি ওখানে চুল কাটছিলেন না, কাটাচ্ছিলেন! ভদ্রলোকের সাথে মারুফের ভেড়ার বিষয়টা নিয়ে বেশ একটা গুরুগম্ভীর আলোচনা হলো। তিনি বললেন—এমন আজগুবি ব্যাপার আগে কোনওদিন শুনিনি!
কিন্তু, সেদিন রাত্রে আবার মারুফের সেই চিৎকার! আমি ধড়মড় করে উঠে বসে বললাম—কী হলো?
মারুফ চোখ বড়ো-বড়ো করে বলল—ভেড়াটা আবার কামড়ে দিয়েছে! এই দ্যাখ! আর তোর সেই ধাঁধার উত্তরও দিয়ে দিয়েছে!
আমি পুরো হতভম্ব হয়ে গেলাম!
পরদিন সকালে মারুফকে বললাম—তোর ভেড়ার কেস সলভড! আর কোনওদিন তোকে কামড়াতে আসবে না! শুধু এই ধাঁধাটা তাকে জিজ্ঞেস করবি—
থাবড়া দিলে ঘাবড়াবে সে, ভাব নেবে সে মেলা—
কিন্তুু ধরে গাট্টা দিলে চুপ থাকে তার বেলা!
রাত্রে থাকে পাত্রে বসে, সাঁতরে পেরোয় নদী;
যাত্রাপালার নৃত্য দেখে হাতড়ে বেড়ায় গদি!
গদির নিচে, নদীর নিচে দধির মতোন থাকে!
আটটা করে গাট্টা মারে বধির লোকের টাকে!
এরপর থেকে মাঝরাতে আর ঘুমের ব্যাঘাত হয়নি!
এর দু-মাস পরে মারুফ একদিন খুব করে ধরে বসল, ভেড়া-রহস্যের সমাধান জানানোর জন্য।
আমি তাকে বললাম—মানুষ স্বপ্নে যা দেখে এর ব্যাখ্যা কী?
মারুফ বলল—কী?
আমি বললাম—তুই তো জানিস আমি নরমাল, প্যারানরমাল, অ্যাবনরমাল সব কিছুর ব্যাখ্যা আগে কুরআন-হাদিসে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। তো, তোর স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য প্রথমেই ওগুলোর দ্বারস্থ হলাম! বুখারির ‘স্বপ্ন’ চ্যাপ্টারটা খুলে দেখলাম স্বপ্ন দেখার কারণ তিন রকমের—
১.আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ
২. শয়তানের তরফ থেকে ভয় দেখানো
৩. মনের কল্পনা। যেটা নিয়ে বেশি ভাবা , সেটাই স্বপ্নে হাজির হওয়া।
আমি প্রথমেই তোর স্বপ্নটাকে কোন ক্যাটাগরিতে ফেলব ভেবে নিলাম। ১ম ক্যাটাগরির যে না সে-তো বোঝাই যাচ্ছে! বাকি থাকে ২ আর ৩।
তুই কয়েক দিন ধরে চোখের সমস্যার কারণে চশমা নেওয়ার কথা ভাবছিলি, আবার পরীক্ষার জন্য সারাদিন বসে-বসে পড়ে ভুঁড়ি বানিয়ে ফেলে ওজন নিয়েও চিন্তিত ছিলি। আর ঐ সময়েই ভেড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করলি, যে কিনা ভেড়া হয়েও চশমা পরে, আবার ভুঁড়িও আছে! বোঝাই যাচ্ছে তুই যে-সব বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলি সেগুলোর মূর্তিমান অবয়বই হলো ঐ ভেড়া! কাজেই তোর স্বপ্ন ৩য় ক্যাটাগরির! অতএব এটার সমাধান সাধারণ চিন্তা-ভাবনা দিয়েই সম্ভব।
সোজা কথায়, তোর অবচেতন-মনই হচ্ছে ওই ভেড়া! আর, ভেড়াটা তোকে এমন-সব ধাঁধা ধরা শুরু করলো যে তার উত্তর দিতে পারলি নে! তাহলে সে কী এমন প্রশ্ন করে?
আগেই বলেছি ভেড়া আর তুই আসলে একই জিনিস! কাজেই ভেড়ার পক্ষে এমন প্রশ্ন করা সম্ভব না, যেটার উত্তর সে জানে কিন্তু তুই জানিস নে! তাহলে সে কী ধাঁধা জিজ্ঞেস করে?
উত্তর হলো—কিছুই না! সে আসলে জটিল কোনও প্রশ্ন করে না, কিন্তু তোর কাছে স্বপ্নে সেটাকেই জটিল মনে হয়! স্বপ্নে আসলে সহজ বিষয়কেও অনেকসময় জটিল মনে হয়!
এইজন্য তোকে বললাম তাকে পাল্টা প্রশ্ন করতে! কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা আরকি! কিন্তু, সমস্যা হলো—স্বপ্ন তো আর বাস্তব নয় যে, তোকে প্রশ্ন করতে বললেই স্বপ্নে প্রশ্নটা করতে পারবি। কাজেই বুদ্ধি করে তোর সাথে ‘নদী-তীরে চরি, বকবক করি’ টাইপের পাল্টাপাল্টি ধাঁধার খেলা শুরু করলাম। তো, ঐ পাল্টাপাল্টি ধাঁধায় তোর অবচেতন মনে এটা সেট হয়ে গেল যে, কেউ তোকে একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করলে তোকেও আরেকটা পাল্টা ধাঁধা ধরতে হবে!
মনে করে দেখ, এর পর থেকেই তুই ভেড়াটাকে পাল্টা ধাঁধা জিজ্ঞেস করতে শুরু করলি।
কিন্তু সমস্যা হলো, ভেড়াটা তোর ধাঁধার জবাব দিয়ে দেয়! কারণ, ভেড়া আর তোর অবচেতন-মন তো অভিন্ন! কাজেই তুই যদি ধাঁধার উত্তর জানিস, সেও জানবে!
এই কারণে তোকে এমন একটা ধাঁধা শিখিয়ে দিলাম, যার উত্তর তুই জানিস নে! এবং সারাদিন ওইটা নিয়ে চিন্তা করায় স্বপ্নে ঠিক ওই প্রশ্নটাই করে বসলি ভেড়াটাকে! কিন্তু সে উত্তর দেবে কী করে? কারণ উত্তর তো তুইও জানিস নে! হ্যাঁ, আমি ঐ ‘নয়তো ভেড়া,বলদ-ঘোড়া.. ’ ধাঁধাটার কথাই বলছি।
মারুফ এইবার বাঁধা দিয়ে বলল—তাহলে, দুসপ্তাহ পর উত্তর দিল কী করে? আর আমি তো উত্তরটা তখনও জানতাম না!
আমি বললাম—চমৎকার প্রশ্ন! মনে করে দেখ, যেদিন আমরা চুল কাটাতে গিয়ে রিয়াদ সাহেবের সাথে কথা বললাম সেদিনই তোর ভেড়া উত্তরটা দিতে পেরেছে!
আসলে ঘুমের সময়, মানুষের ব্রেন সবচে গভীরভাবে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে ফোকাস করতে পারে। ঠিক এই কারণেই, বিখ্যাত গণিতবিদ রামানুজন তাঁর বড়োবড়ো আবিষ্কারগুলো ঘুমের ঘোরেই করেছেন! তো, ঐদিন রাত্রে ঘুমানোর সময় যখন তোর অবচেতন-মন সারাদিনের অভিজ্ঞতাকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছে, তখনই সে আবিষ্কার করে ফেলল—ধাঁধার উত্তর হচ্ছে, নাপিত!
তুই যদি ঐদিন সেলুনে না যেতিস মনে হয় না, তোর ভেড়া উত্তরটা দিতে পারত!
মারুফ উৎফুল্ল হয়ে বলল—দারুণ! কিন্তু, ভেড়াটা কামড়ে দিলে আমার আঙুলে দাঁতের দাগ বসত কী করে?
আমি বললাম—উত্তর সোজা! তুই নিজেই কামড়াতিস!
মারুফ চোখ কপালে তুলে বলল—কিন্তু, একদিন রাত্রে তুই বলেছিলি, আজকে তোকে ভেড়াটা কামড়াবে না! ঐটা কী করে বুঝলি?
আমি চোখ মটকে বললাম—বেশি কিছু না। প্রতিদিন রাত্রিবেলা তুই যে-চিরতা ভিজিয়ে রাখিস, ঘুমিয়ে পড়ার পর সেইটাই তোর দুহাতের আঙুলে মাখিয়ে দিয়েছি! তাই, ঘুমের ঘোরে কামড়ানোর জন্য যখনই আঙুল মুখে দিয়েছিস, তখনই ওই তিতকুটে জঘন্য স্বাদের কারণে সাথে-সাথেই মুখ থেকে বের করে ফেলতে বাধ্য হয়েছিস!
মারুফ হতভম্ব হয়ে বলল—বাপরে! কী ফিচেল বুদ্ধি!
তারপর হঠাত্ কপাল কুঁচকে বলল—আচ্ছা, তার মানে কি এই যে, শেষে যে ধাঁধাটা তুই বলেছিস ওটার উত্তর যে-দিন আমি বের করতে পারব সেদিন থেকেই আবার ভেড়াটার উৎপাত শুরু হবে?
আমি বললাম—খুব সম্ভবত তাই। তবে, তুই নিশ্চিত থাক, ভেবে-ভেবে যে কঠিন ধাঁধাটা বের করেছি, মনে হয় না শুধু তুই কেন, পৃথিবীর আর কেউই সেটার উত্তর দিতে পারবে!
মারুফ আমার কথা শুনে পরম নিশ্চয়তার একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল। সে জানে, আমি ফালতু বাগাড়ম্বর করি না। তারপর বিড়বিড় করে বলল—
থাবড়া দিলে ঘাবড়াবে সে, ভাব নেবে সে মেলা—
কিন্তুু ধরে গাট্টা দিলে চুপ থাকে তার বেলা!
রাত্রে থাকে পাত্রে বসে, সাঁতরে পেরোয় নদী;
যাত্রাপালার নৃত্য দেখে হাতড়ে বেড়ায় গদি!
গদির নিচে, নদীর নিচে দধির মতোন থাকে!
আটটা করে গাট্টা মারে বধির লোকের টাকে!
২.
মারুফকে আমি আসলে সত্যি কথাই বলেছিলাম! শেষের ধাঁধাটার উত্তর পৃথিবীর আর কেউই দিতে পারবে না! এমনকি আমিও না! কারণ ওরকম জিনিস দুনিয়াতে কোনও কালে ছিল না, নেইও!খালি যা, মনে এসেছে তা দিয়েই একটা ছড়ার মতো বানিয়ে দিয়েছি!