একটি দুঃস্বপ্ন এবং কয়েকটি “আমি”

স্বপ্ন (জানুয়ারী ২০১৮)

মোঃ ইকবাল হাসান
  • ১৯
  • ১১
রাত ৩টা বেজে ৪৯ মিনিট। হঠাত করেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ বন্ধ রেখেই মনে করার চেষ্টা করলাম কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছি কিনা। নাহ্। এমন তো কিছু মনে পরছেনা।
চোখ খোলা মাত্রই প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার- চোখ বন্ধ থাকলে সাধারনত যেমন অন্ধকার থাকে। রুমের সবগুলো লাইট বন্ধ থাকায় এমন টা হওয়া স্বাভাবিক, তথাপি ব্যপারটিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে যেন বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দক্ষিনের দেয়ালে লাগানো রেইডিয়ানের স্টিকার টা দেখার চেষ্টা করলাম। উহুম!! চোখে পড়ছেনা কিছু। দেয়ালের দূরত্বও আন্দাজ করা গেলনা। প্রচন্ড ভয়ে শরীর অবস হয়ে আসছিল।
বালিসের নিচে থেকে ফোন টা বের করে হাতে নিলাম এরপর গা থেকে কম্বল টা সরিয়ে নিঃশব্দে নামলাম বিছানা থেকে। পা টিপে টিপে ড্রইং রুম এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, হঠাত ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় চোখ পড়ল, আর যা দেখলাম- সেটা দেখে আমার বয়সি যে কারও পক্ষে স্বাভাবিক থাকা সম্ভব ছিলনা।
ড্রেসিং টেবিল এর স্বচ্ছ আয়নায় হুবহু আমার মত একজন উতসুক দৃষ্টিতে ডেব্ডেব করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তবে এবার ব্যপার টা বুঝতে পারলাম, আন্দাজ করলাম কি ঘটছে এসব। এর আগেও একমন টা ঘটেছে আমার সাথে। হ্যলুসিনেশন। আমি ঘোরের মধ্যে আছি, এসব বাস্তব না, নীজে নীজেই চিন্তা করছি। দিক্বিদিক চিন্তার এক পর্যায়ে হঠাত বিছানায় চোখ পড়ল। এবার যা দেখলাম তাতে রক্তে হিমশীতল একটা স্রোত বয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এবারও যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিলাম। দেখলাম কেউ একজন আমার বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে সুয়ে আছে, ঠিক যেভাবে আমি সুয়ে ছিলাম। ভালভাবে দেখার জন্য আরও একটু এগিয়ে গিয়ে নিশ্চিত হলাম, এটা আমিই। এই প্রথমবারের মত নীজের অস্তীত্ব নিয়ে প্রশ্ন আসলো আমার। তাহলে, প্রকৃত আমি কোনটা!? এই আমি, নাকি যে বিছানায় সুয়ে আছে সে! ফোনের ফ্লাশ-লাইট টা কাজ করছেনা। বেশ কয়েকবার জ্বালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করার শুক্তি হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে হল। কিছু চিন্তা করতে পারছিনা। মিনিট খানেক একই স্থানে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলাম, এরপর ধিরেধিরে বিছানার কাছে এগিয়ে গেলাম।
পরিবেশ এতটাই নিরব ছিল যে; অন্তত ১০০ফুট দূরে কোন রাতের পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ কানে আসলো, সুস্পষ্ট সেই আওয়াজ।
একবার ড্রেসিং টেবিলের গ্লাসের দিকে তাকাতে ইচ্ছা হচ্ছিল, সাহস নিয়ে তাকালামও, নাহ্, কেউ নেই। এবার মুখ ঘুরিয়ে বিছানায় তাকিয়েও অবাক হলাম, সেখানেও কেউ ছিলনা। কেবল আমিই., বিছানার উপর দাঁড়িয়ে, হাতে ফোন নিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। নাহ্! এ কেমন বিড়োম্বনা!! পুরো ঘটনাটা কেমন ধোঁয়াটে ধোঁয়াটে লাগছে। ফোনের চার্জের পরিমান টা খেয়াল করলাম, ১৩% চার্জ বাকি।
আমার এই ফোনের একটা উদ্ভট রোগ আছে, শেষের ২০% চার্জ অযৌক্তিকভাবে এত চট্জলদি শেষ হয়ে যায় যে- মিনিট দু’একের অসমাপ্ত কোন কজও শেষ করার কোন জো নেই।
যাইহোক, এত রাতে ভয় কাটানোর জন্য কোন ফ্রেন্ড কে ফোন দিয়ে বিরক্ত করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা তাই ফেইসবুকে ঢুঁ মারার চিন্তা স্বিদ্ধান্ত নিলাম। অনলাইনে এ এসে দেখি গোটা তিরিশেক নটিফিকেশন আর ৩ খানা অপঠিত মেসেজ। এদের মধ্যে একটি ছিল উষ্ণতার। আমার ফেসবুক ব্যবহারের প্রথমদিকের ফ্রেন্ড। ছোট্ট একটি টেক্সট- শুভ রাত্রি। রিপ্লে করতে যাব এমন সময় খেয়াল করলাম সেও অনলাইন এ। ভাবলাম, যাক্! ভালই হল, মিনিট পাচেঁক কথা বললেও অন্তত ভয়টা কিছুটা কমে যাবে। রিপ্লে করলাম-
"এত রাতে?!"
উত্তর এলোনা, আবারও লিখলাম; "হ্যালো"
তবুও এলনা, তবে মেসেজ সিন হচ্ছে। মেজাজ টা চটে গেল, তবে পরক্ষনেই বুঝতে পারলাম, ব্যচারী হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে, ডেটা কানেকশন অন্ রেখে ঘুমিয়ে পড়ার বদভ্যাস আমারও কমবেশি আছে বৈকি।
ফোন ওয়ার্নিং দিল- " Battery Low"
আর ২% চার্জ আছে। হঠাত করেই ফোনের ডিসপ্লে নিভে গেল, তার মানে একেবারে ডেড। আরেকবার অন্ করার চেষ্টা করলাম, নাহ্ হচ্ছেনা। এমন সময়... একটি আওয়াজ...
খুবই পরিচিত ও গাম্ভীর্য মিশ্রিত একটি আওয়াজ। আমার নাম ধরেই ডাকছে। মনে হচ্ছে, দরজার বাইরে থেকে আসছে। একবার ভাবলাম, মাথার উপর বালিশ দিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকব, ডাকুক গে, কে না কে! আবার ভাবলাম, সুমন হতে পারে। পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে, আমার ছোটবেলার বন্ধু। রাত ক’টা বাজে সেই মুহুর্তে মাথায় এলনা। বিছানা থেকে উঠে দরজার লক্ খুলে দিয়ে এবার যা দেখলাম, তা সহ্য করা গেলনা। আমি!! হ্যা আরও একটি হুবুহু আমি সামনে দাঁড়িয়ে। ঠিক কতক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম জানিনা, তবে আর কিছু মনে নেই। ঘুম ভাঙ্গলো ফজরের আজানে, রুমের লাইটটা জালানো। আমি বিছানায় শুয়ে। চোখ খুলেই বালিশের নিচে থেকে ফোনটা বের করে হাতে নিলাম, ডিসপ্লে অন্ করে দেখলাম; ২% চার্জ!!
ব্রাশ এ টুথপেস্ট লাগিয়ে দাত মাজতে মাজতে ফেইসবুক এ লগইন করলাম। উষ্ণতা বিনতে হাসান আইডির শেষ টেক্সট- "শুভ রাত্রি"। ব্যপার টা আবারও ঘোলাটে হতে শুরু করল এবার। তাহলে গত রাতে আমার পাঠানো রিপ্লে দু'টি!!?
চোখ মোবাইলের স্ক্রিনে থাকায় মেঝেতে পড়ে থাকা টিভির রিমোট টা খেয়াল করিনি। অসাবধানতাবসত রিমোটে পা পড়ায় শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারলাম না। ফোন টা ছিটকে পরল কিছুটা দূরে, মাথাটা সজোরে বাড়ি খেল সোফার হাতলের সাথে।
চোখ বুঁজে গোঙ্গানোর মত আওয়াজ করলাম ব্যথায়। পাশের রুম থেকে মা দৌড়ে এসে বললেন- "কিরে, আজ আবারও দুঃস্বপ্ন দেখেছিস বুঝি?"
তাকিয়ে নীজেকে আবিস্কার করলাম বিছানায়, হাতে ব্রাশ আর ফোনটা মেঝেতে পড়ে থাকার কথা ছিল। তবে অলৌকিকভাবে বালিশের নিচে ফোনের অস্তিত্ব খোঁজে পেলাম আর তাতে ২% চার্জও।
নিস্তব্ধ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম মা'র দিকে, তারপর তাকে প্রশ্ন করলাম- "ক'টা বাজে মা?"
- পৌনে আটটা, উঠ্ জলদি, হাতমুখ ধুয়ে খেতে আয়।
হঠাত আমার কপালের দিকে নজর গেল তার..
-কিরে, কপালের বা'পাশে ওটা কি? ফোলে আলুর মতন হয়ে আছে দেখছি! কার সাথে মারামারি করেছিস আবার?
মা'র কথা শুনে কপালে হাত দিতেই ব্যথা অনূভব করলাম, তাজা ব্যথা। মনে হচ্ছিল যেন আঘাতটা ১০ মিনিটেরও কম সময় আগের।
তবে মা'র প্রশ্নের কোন উত্তর ছিলনা আমার কাছে, তাই কেবলই বোকার মত ফেল্ফেল করে তাকিয়ে রইলাম তার মুখের দিকে...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী জাহাঙ্গীর বলতেই হয় লেখার হাত ভাল আছে, গল্পের শুরু আর ব্যাপ্তিটা ভালই সাজিয়েছেন। বানান ভুলের ব্যাপারটা বলতে চাই না, কেননা একই শব্দ যখন বারবার একই বানানে আসে তখন বুঝতে হবে সমস্যা একটা কোথাও আছে যেটা হয়তো লেখক বুঝতে পারছেন না। আসলে Replay এবং Reply হয়তো বেখেয়াল বশতঃ ‘রিপ্লে’ হয়ে যাচ্ছে যেটা রিপ্লাই হওয়ার কথা। গল্পকবিতায় স্বাগতম, আশা রাখছি আরো ভাল ভাল লেখা পাব। অনেক শুভকামন আর ভোট রইল।
ভালো লাগেনি ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮
অসংখ্য ধন্যবাদ। পরবর্তী লেখায় বানানের বিষয়টায় আরও বেশি সচেতন হবো...
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮
ছবি আনসারী mOTamoTi legeche .vashar pranjolota aro baRate hobe . valo thakben.
%3C%21-- %3C%21-- bhalo laglo. vote rekhe gelam :)
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১৮
অসংখ্য ধন্যবাদ ...
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮
মাইনুল ইসলাম আলিফ গল্পটা খুব ভাল লেগেছে।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১৮
কৃতজ্ঞতা সুন্দর মন্তব্যের জন্য :)
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১৮
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পটা বেশ দারুণ হয়েছে, যেটা প্রায় সময় হয়ে থাকে। তবে আপনার গল্প পড়তে গিয়ে অনেকবার হোচট খেতে হয়েছে, কারণ চোখে পড়ার মত অনেক বানান ভুল। যা হোক, সামনে ঠিক পাবো এমন প্রত্যাশায় শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১৮
অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। অসাবধানতা আর সাবমিটের আগে পুনঃরায় চেক না করার ফলশ্রুতিতে এমন বিড়ম্বনার সৃষ্টি... সামনের বার আশা রাখি এমন কিছু ঘটবেনা। মাঝে সাঝে ঢুঁ মেরে যাবেন আমার পাতায়...শুভকামনা
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১৮
মিলন বনিক সমসাময়িক বিষয়ের উপর সুন্দর গল্প...একেবারে সাবলীল....আর একটু গুছিয়ে নিলে আরো ভালো হবে...
ভালো লাগেনি ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮
মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ :)
ভালো লাগেনি ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ চমতকার একটি আবহ তৈরি হয়েছে। খুব ভালো লাগলো।।
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১৮
অসংখ্য ধন্যবাদ :)
ভালো লাগেনি ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮
মোঃ মোখলেছুর রহমান অধুনা ভুত,বেশ ভাল গল্প।
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১৮
ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা কবির প্রতি
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৮
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি খুব সুন্দর ভুতুড়ে গল্প .... আশা করি আরো ভালো হবে....শুভ কামনা রইলো....আসবেন আমার কবিতার পাতায়....
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৮
ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা কবির প্রতি
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৮
প্রজ্ঞা মৌসুমী ভয়ের আবহ তৈরি করাটা বেশ। শুরুতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে, এভাবে ৩টা বেজা ৪৯ মিনিট, exact time বলাটা খানিকটা বেমানান নয় কি? আবার শেষে ফোনে চার্জ কত সেটা দেখা হলো অথচ সময়টা দেখা হলো না, মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে হলো । গত এক বছরে একা থাকার অভ্যাস করতে গিয়ে এককালের ভীতু আমি জেনেছি অন্ধকারে নিজেকে আয়নায় দেখা ভয়ংকর ব্যাপার। আবার এও জেনেছি ভয়টাকে ব্যাখা দিয়ে না-ভয় করানো যায়। এই যেমন, শীতকালে বিছানায় এমনভাবে কম্বল পাতা থাকে, দেখলে মনে হয় কেউ শুয়ে আছে। অহরহ এরকম কত মনে হয়। তবে শেষের দ্বিধান্বিত অংশটা চমৎকার। চট করে ব্যাখা দাঁড় করাতে পারছি না। পুরো গল্পটাই উপভোগ্য।
ভালো লাগেনি ৯ জানুয়ারী, ২০১৮
অজস্র কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ ভুলগুলোকে ধরিয়ে গঠনমূলক ব্যখ্যাইয় বুঝিয়ে দেয়ার জন্য... পরবর্তি সময়গুলোতে সুধরে নিব আশা রাখি...
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৮

৩০ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪