তিমির দেয়াল

রমণী (ফেব্রুয়ারী ২০১৮)

বালোক মুসাফির
সব ঠিক ঠাক থাকলে সামনের মাসের ২২শে অগ্রহায়নে দিনমজুর বাবার জ্যৈষ্ঠ কন্যা ফরিদার বিয়ে। পাশের গ্রামের মইজ ব্যাপারীর দ্বিতীয় ছেলে রাজমিস্ত্রি করিমের সাথে। এ বিয়েতে ফরিদার বাবা পন হিসেবে নগদ দশ হাজার টাকা ও একটা সাইকেল দেওয়ার কথা। বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে। যথাসময়ে নির্দিষ্ট দিনে ফরিদা আর করিমের বিয়ে হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্য বশত ফরিদার বাবা মেয়ের পনের সাইকেলের ব্যবস্থা করতে পারলেও নগদ টাকার জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়। তাই বর পক্ষের কাছে কাকুতিমিনুতি করে বুঝিয়ে শুনিয়ে পনের টাকার জন্য সময় চেয়ে নেয় এবং ফরিদাকে বরের হাতে তুলে দেয়।
ফরিদার শ্বশুরের সংসারে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এবং স্বামী ছাড়া তার একজন বাসুর ও একজন ননদ রয়েছে। স্বামীর সংসারে ফরিদা খুব একটা ভালো না থাকলেও ততটা খারাপও চলছে না। সুখে-দুঃখে ফরিদার দিন কাটতে থাকে। এভাবে দেখতে দেখতে মাস পুরিয়ে যায়। এ দিকে ফরিদার বিয়ের পনের টাকার সময়ও ফুরিয়ে আসে। এক সময় তার স্বামী পনের টাকার কথা বলে। ফরিদা চুপ করে থাকে। ফরিদার নীরবতা দেখে তার স্বামী তাকে অকথ্য ভাষায় বকাঝকা এবং গালি-গালাজ করে। এক পর্যায়ে তার গায়ে হাতও তোলে এবং তাকে তার বাপের বাড়ীতে পনের টাকা আনতে পাঠিয়ে দেয়।
মা হারা ফরিদা তার বাবাকে সব খুলে বলে। তার বাবা ধার দেনা করে পাঁচ হাজার টাকা জোগাড় করে ছোট ভাই কাশিমের সাথে তাকে স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
কিছুদিন যেতে না যেতে ফরিদা তার স্বামীর পূর্ব রূপ দেখতে পায়। সাথে যোগ হয় ননদ-শ্বাশুড়ীর সীমাহীন বকাঝকা। প্রতিদিন রুটিন করে যৌতুকের দায়ে পনের বাকী টাকার জন্য স্বামীর হাতে মার খেতে হয়। থাকতে হয় উপোশ। খেতে দেয় না শ্বাশুড়ী। দু’দিন উপোশ রেখে এক বেলা খেতে দেয় তাও আবার আধা পেট। এভাবে অসহ্য কষ্ট আর যন্ত্রণার মধ্যে ফরিদা দিনাতিপাত করে। এ দিকে তার শ্বশুর এবং বাসুর এত কিছুর পরও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। তারা দেখেও কিছু না দেখার ভান করে কেটে পড়ে।
একদিন রাত দশটার সময় মাগো ও বাবাগো বলে ফরিদার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় করিমের চাচাতো ভাই পলাশ । ফরিদা ভাবীর কান্নার আওয়াজ বুঝতে পেরে তাদের ঘরে ছুটে যায় পলাশ। পলাশ ফরিদার উপর করিমের অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন বন্ধের দাবী জানায়। করিম এবং পলাশের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এতে করিম পলাশের উপর ক্ষেপে যায় এবং তাকে গালি-গালাজ করে মারদরের হুমকি দেয়। পলাশ কথা না বাড়ীয়ে চুপ হয়ে যায় বটে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে রাগে ক্ষোভে প্রায় ফেটে পড়ে।
পলাশ ফরিদার উপর এমন মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার বাপের বাড়ীতে জানায়। তার অসহায় বাবা নিরুপায় হয়ে করিমের বাবা অর্থাৎ ফরিদার শ্বশুরকে জানায়। কিন্তু ফরিদার শ্বশুর কিংকর্তব্য বিমূঢ় ভূমিকা পালন করে এবং চুপসে যায়। ফরিদার বাপ বিয়াই এর এমন আচরণ লক্ষ্য করে কোন উপায় না দেখে মেয়ের ভাগ্যে যা আছে তা হবে ভেবে হাল ছেড়ে দেয়।
ফরিদা পলাশের এমন আন্তরিকতা দেখে তাকে ধর্মের ভাই ডাকে। এদিকে পলাশও তার কোন বোন না থাকায় তাকে বোনের মত জানতে থাকে এবং ফরিদাকে তার বড় বোনের আসনে বসায়। পলাশ গোপনে ফরিদার খোঁজখবর নিতে থাকে। মাঝে মাঝে কেউ না থাকলে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে পলাশ ফরিদার ঘরে আসে এবং এটা সেটা দিয়ে যায়।
দিন যতই অতিবাহিত হতে থাকে যৌতুকের দায়ে ফরিদার উপর স্বামী এবং ননদ শ্বাশুড়ীর অমানবিক অত্যাচার বাড়তেই থাকে। এক পর্যায়ে ফরিদার উপর শ্বশুর বাড়ীর নির্যাতন দিন দিন চরম আকার ধারন করে। এমন পরিস্থিতি লক্ষ্য করে একদিন পলাশ গোপনে ফরিদাকে মাতাব্বরের কাছে নিয়ে যায়। ফরিদা মাতাব্বরের কাছে তার উপর শ্বশুর বাড়ীর সমস্ত নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন এবং তার অসহায়েত্বের কথা প্রকাশ করে তার প্রতি এই অন্যায়ের বিচার দাবী করে। লোভাতুর মতলববাজ মাতাব্বর ফরিদার দূর্বলতাকে পূঁজি করে ঝোপ বুঝে কোপ মারতে চেষ্টা করে। ষাট উর্ধ্ব রমিজ মাতাব্বর ফরিদার শারীরিক সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে তাকে অসামাজিক কাজের কু-প্রস্তাব দেয়। এবং তার উপর তার স্বামীর বাড়ীর লোকদের নির্যাতনের কঠিন বিচার করে দেয়ার অঙ্গীকার করে। ফরিদা তার কু-প্রস্তাবে রাজী না হয়ে তার মুখের উপর থু মেরে ফিরে আসে। মাতাব্বর ফরিদার এমন আচরনে রেগে ফুলে উঠে।
এদিকে ফরিদার প্রতি পলাশের আন্তরিকতাকে ফরিদার ননদ শিউলী ও তার পরিবার বাড়া-বাড়ি ও কটু দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। তার আরেকটি অন্যতম গোপন কারণও রয়েছে। তাহলো শিউলীর পরিবার পলাশের সাথে শিউলীর বিয়ের প্রস্তাব দিলে পলাশের পরিবার তা প্রত্যাখান করে। এতে শিউলীর পরিবার অপমান বোধ করে। তারপর থেকে এমনিতেই পলাশ শিউলীর চক্ষুশূল। তার উপর ফরিদার প্রতি দিন দিন পলাশের এমন আন্তরিকতা শিউলীর চোখে হিংসার টান ধরায়। তাই শিউলী ফরিদা আর পলাশের পিছনে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে থাকে। সেই সুবাধে শিউলীর পরিবার এক ডিলে দুই পাখি বধের চিন্তা আটে।
পূর্ব শক্রুতার জের ধরে এক পর্যায়ে পলাশের সাথে ফরিদার সখ্যতা এবং ফরিদার ঘরে তার আসা যাওয়ায় কে পূঁজি করে করিমের পরিবার তার উপর মিথ্যা গুজব ছড়ায়। পলাশ ফরিদার উপর তার শ্বশুর বাড়ীর জঘন্য নির্যাতন এবং তার আর ফরিদাকে নিয়ে রটানো ঘটনার প্রতিবাদ করে। এতে করিমের পরিবারের সদস্যরা পলাশের উপর আরো হিংসাত্মক হয়ে উঠে। ফলে তারা ফরিদা এবং পলাশকে আপত্তিকর অবস্থায় হাতে নাতে ধরা পড়ার মিথ্যে গুজব চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়। ফরিদার স্বামী, ননদ, শ্বাশুড়ী মিলে ফরিদার সাথে পলাশের অবৈধ সম্পর্কের ঘটনা রটায়। তারা নিজেরা স্বাক্ষী দিয়ে গ্রামের পঞ্চায়ের কাছে পলাশ ও ফরিদার নামে অসত্য নালিশ করে।
এদিকে দুঃশ্চরিত্র লম্পট মাতাব্বর ফরিদাকে শাস্তি প্রদানের হুম জারি করে। পঞ্চায়েত প্রধানও পলাশ এবং ফরিদার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। মধ্যযুগীয় শালিশী কায়দায় মজলিসের সর্ব সম্মূখে ফরিদাকে একশত ডোররা প্রদানের ফয়সালা হয়। অন্য দিকে পলাশকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করে। গ্রামবাসী এবং পঞ্চায়েতের উপস্থিতি সকলের সামনে ফরিদাকে একশত বেত্রাঘাত করে। লজ্জা, অসম্মান, ভয় এবং বেত্রাঘাতের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ফরিদা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে ধরাধরি করে তার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন সকাল পর্যন্ত ফরিদার আর জ্ঞান ফিরে না। একথা কানাগুনায় জানা-জানি হয়ে থানা পর্যন্ত পৌঁছায়। থানা থেকে পুলিশ এসে ফরিদার মৃত লাশ উদ্ধার করে। ফরিদার শ্বশুর বাড়ীর কুলাংকার লোকজন তার আত্মহত্যার গুজব উঠায়। ফরিদার ছোট ভাই তার মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে বাদী হয়ে তার হত্যার জন্য দায়ী ফরিদার পাষন্ড স্বামী, ননদ, শ্বাশুড়ী, পঞ্চায়েত প্রধান এবং মাতাব্বরের বিরুদ্ধে মামলা করে। থানার তদন্ত পরিদর্শক ফরিদার মৃত্যু রহস্য তদন্ত করে। আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট তৈরি করে এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে।
রহস্যের ধুম্রজালে আবদ্ধ ফরিদার মৃত্যু রহস্য। তবু এটাই কঠিন চিরসত্য সামাজিক ব্যাধি যৌতুকের দায়ে আজ অকালে ঝরে গেল ফরিদার মত এমন একটি সাধা-সিধে তাজা প্রান। ফরিদার অকাল প্রয়ান একটা আত্মহত্যা কিংবা নিচক হত্যা কিনা এ প্রশ্নের উত্তর অনেকের কাছে অজানাই থেকে যায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মৌরি হক দোলা সুন্দর গল্প... তবে একটু ধীরে ধীরে এগোলে মনে হয় আরো বেশি ভালো লাগতো... ভালোলাগা ও শুভকামনা রইল...
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
Thanks Apu, bestotar moddeo somoy dear jonno.
ভালো লাগেনি ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
সালসাবিলা নকি গল্পের প্লট ভালো ছিল। কিছু কিছু জায়গায় পড়ার সময় সংবাদ পড়ছি মতো মনে হচ্ছিল। বর্ণনাভঙ্গীর দিকে আরেকটু যত্নবান হলে ভালো হবে। বর্ণনাভঙ্গী এমন একটা কৌশল যেটা সাধারণ ঘটনাকেও অসাধারণ করে তুলতে পারে।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
Many many thanks for this important advice.Be well and pray for me that i can success.
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মোঃ নিজাম উদ্দিন অসাধারন লেখনী। শুভেচ্চাসহ ভোট রেখে গেলাম। শুভকামনা শতত।
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মনজুরুল ইসলাম oti sadharon ghotona.kono notunatta nei.sobde durbalata roeche.sei sathe sobdo proyoge.suru theke shes porjonto kono akorshon onuvob korini.vabissote valo likhben. ami kono golpo bishesoggo noi.ata amar dharona. apni kivabe neben jani na.valo thakun.
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
ধন্যবাদ ভাই। আমরা নবীন সবে মাত্র শুরু করেছি। আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আপনাদের পর্যন্ত পোছতে সময় দিতে হবে।
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মাইনুল ইসলাম আলিফ সুন্দর গল্প।শুভ কামনা রইল গল্পকার।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
Many many thanks Alif vai.....
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া বন্ধু, সমাজের একটি নিদারুন বাস্তব গল্প তুলে এনেছেন আপনার লেখনীতে। লেখনীতে জোর আছে-সমাজে শুভবুদ্ধির উদয় হোক, গল্পটি হোক চেতনার হাতিয়ার। পছন্দ, ভোট ও শুভকামনা রইল। আপনি কিন্তু এবার আমার গল্পটি পড়েননি বন্ধু। সময় পেলে আসবেন।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
ধন্যবাদ রশীদ ভাই, দোয়া করবেন , আপনাদের জন্যই আমি এত দূর আসতে পেরেছি। আর হ্যাঁ অবশ্যই পড়ব। সাময়ীক একটু অসুস্থ এবং অসবিধার মধ্যে আছি।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
বালোক মুসাফির সত্যিই ভাই আপনাদের মূল্যায়নই আপনাদেরই দোয়ার বরকত। আপনাদের মত গুনি লোকদের অনুপ্রেরনাই আমি অদমের সম্ভল। সব সময় পাশে থেকে দোয়া করবেন।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি চিরাচরিত একটি কলঙ্কজনক ঘটনা হলেও লেখকের গল্প লেখার প্রশংসা করতেই হয়.....খুব সুন্দর ভাবে পাঠযোগ্য করে উপস্থাপনের জন্য....বালক মুসাফির ভাই আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো সেই সাথে মূল্যায়ন....অনেক ধন্যবাদ....
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
ইমরানুল হক বেলাল অসাধারণ সুন্দর গল্প। হৃদয় ছুঁয়ে গেল পাঠে।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
দোয়া করবেন আরো ভালো লিখার জন্য। আপনাদের ভাললাগার কথা শুনলে সব সময় ভল লাগে এবং নিজের পরিশ্রম সার্থক বলে মনে হয়। ধন্যবাদ, অবশ্যই সব সময় পাশে থাকবেন।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

১৭ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪