স্বপ্নাগার

স্বপ্ন (জানুয়ারী ২০১৮)

Puja Dhar
  • ২৪
এইবার দেখছি এর একটা বিহীত না করলে নয় । আর মেনে নেওয়া যাচ্ছেনা । আবার সবকটা বই উধাও । অবশ্য এই বাড়িতে বই উধাও হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয় । প্রত্যেক মাসের শেষে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার মতো এটিও একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই নিয়ে মোট ২৯৯ খানা বই উধাও । উধাও না বলে অনেকটা চুরি বললেও বোধহয় খুব বেশি ভুল হবেনা । লোকের ঘর থেকে শুনেছি টাকা- পয়সা , গয়না , ঘড়ি এইসব চুরি হয় । কিন্তু রায় গিন্নী কিছুতেই বুঝতে পারেনা তার বাড়ি থেকে শুধু বই কেন চুরি যায় । চোর কি তবে খুব বিদ্বান ?রায় গিন্নীর যে বই-পত্র খুব একটা পছন্দ না চোর বাবাজী নিশ্চয় তা জানে । আর জেনে বুঝে তার গায়ের জ্বালা আরো বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এ ফন্দী এঁটেছে সে। আপন মনে বিড়বিড় করে চোরের গুষ্ঠি উদ্ধার করতে শুরু করেন তিনি । তা বাপু এতোই যদি বই পড়ার শখ থাকে তবে মুখ ফুটে চাইলেই তো হয় । বই না দিলেও কিছু সাহায্য তো তিনি করতেন । খালি হাতে তো আর ফিরিয়ে দিতেন না । অযথা এইসব ঝামেলা সৃষ্টি করে তাকে চিন্তিত রাখার মধ্যে ঐ বিদ্বান চোরটি যে কি আনন্দ খুঁজে পায় একবার ওটিকে ধরতে পারলে জিজ্ঞেস করা যেত । যদি কখনো ঐ চোরটি পরে তবে তার শাস্তি হবে তার বাড়ির জমানো যতসব পুরনো খবরের কাগজ আছে সব তাকে পড়ে শেষ করতে হবে নয়তো বাছাধন ছাড়া পাবেনা । এই কথা ভাবতে ভাবতে রায় গিন্নীর ঠোঁটের কোণে একটি হাঁসির রেখা ফুটে উঠে । কিন্তু মুহূর্তের মাঝেই সেটি আবার বিলীন হয়ে যায় । ভেবেছিলো যতোসব পুরনো খবরের কাগজ , ম্যাগাজিন আছে সেগুলো বিক্রি করে টুকটাক যা পাওয়া যাবে তাতেই তার লাভ । সে টাকা দিয়ে একটা লিপস্টিক কিনেলেও মন্দ নয় । কিন্তু ব্যাটা চোরের হাত থেকে সেগুলোও আর রক্ষা পেলোনা ।
এমনিতে দানময়ী হিসেবে পুরো পাড়া জুড়ে রায় গিন্নীর বেশ সুনাম রয়েছে । কেউ তার কাছে সাহায্য চাইতে এসে খালি হাতে ফেরত গেছে বলে আজ অবধি তা শোনা যায়নি । কিন্তু এই বই কেনার ব্যাপারটি কেন জানি তার মোটেও পছন্দ নয় । তার মতে বই কেনার মানে টাকা শ্রাদ্ধ ছাড়া আর কিছু নয় । কেউ একজন তার মনের যত আজগুবি চিন্তা-ভাবনা আছে সেসব লিখে সাদা পাতা কালো কালি দিয়ে ভর্তি করবে আর সেসব নাকি আমাদের পড়তে হবে । পরীক্ষায় যে বই গুলো থেকে প্রশ্ন আসবে সেগুলো পড়লেই তো হয় । পড়া মুখস্থ করবো আর তা পরীক্ষায় লিখে পাশ করবো । এটাই তো যথেষ্ট । অতো গল্পের বই পড়ে কি হবে শুনি । রায় গিন্নীর কাছে বেকার লোকের সমার্থক শব্দ হচ্ছে বই-পড়ুয়া। ঐ টাকা দিয়ে ফর্সা হওয়ার ক্রিম কিনবও , তাও ভালো । কিন্তু ঐসব বইটয় যে লোকে কেন কিনে তা তিনি বুঝতে পারেন না ।
“লোকের কথা আর কি বলবো , আমার মেয়েটায় হয়েছে তাই । ছাত্রী হিসেবে খুব মেধাবী । কিন্তু সেই বই এর নেশায় মত্ত ।‘’ কতবার তাকে বলা হয় “ যানা মা , পার্লরে গিয়ে একটু ফেসিয়াল , স্পা এইসব করে আয় । অযথা টাকা নষ্ট করে এইসব বই কিনে কিহবে বলতো । তোর যা দরকার পরীক্ষায় ভালো নাম্বার সেটা তো তোর আছে । “ কিন্তু কে শোনে কার কথা । এমন ভাব যেন তিনি একটা পুতুলের সাথে কথা বলছেন যে কিছু শুনে বা বোঝেন না । শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে । সব হয়েছে মেয়ের বাবার জন্য । মেয়েকে আসকারা দিয়ে মাথায় তুলেছেন। আজকালকার অন্য মেয়েরা যেখানে বন্ধু-বান্ধব , নতুন সিনেমা , পোশাক এইসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর তার মেয়ে মুখ বুঝে পরে থাকে ঐ বস্তা পচা জিনসটাকে নিয়ে । ভাবতে ভাবতেই তিনি হতাশার জগতে ডুবে যান । “ যে জিনিসটা আমি সবচেয়ে অপছন্দ করি আমার নিজের মেয়ের কাছে সেটি সবচেয়ে প্রিয় ।কি আর করবো । সবি আমার কপাল “।
“ আজ অফিস থেকে এতো জলদি চলে এলে? মেয়েও তো দেখছি সেজেগুজে নিয়েছে । তো বাপ মেয়ে কোন গন্থাগারে যাওয়া হচ্ছে শুনি ‘’। “ আমি , তুমি আর বাবা আমরা তিনজন মিলেই যাব “ কোথায় যাব সেটি তো আগে বল” “ সেই তুমি গেলেই দেখতে পাবে । এখন চুপচাপ আমার লক্ষ্মী মায়ের মতো তৈরি হতে নাও দেখি”। “আমার মেয়ের শরীর আজ ঠিক আছে তো ? মায়ের এতো প্রশংসা করছে । আবার দেখছি মায়ের পছন্দমতো সাজগোজ করেছে । আজ মনে হচ্ছে আমার দিনটা ভালোই যাবে ।“
“ এই কোথায় নিয়ে এলি আমায় ? ঠিক যা ভেবেছিলাম । তোরা বাপ মেয়ে কি এইবার আমাকেও বইপোকা বানিয়ে ছাড়বি । ? এইসব লাইব্রেরীতে আমায় আনার দরকারটি কি ছিল তোদের ‘’ কিন্তু লাইব্রেরীর সাইন বোর্ডটা দেখে হঠাৎ তিনি থমকে গেলেন । “ চারুলতা গ্রন্থাগার”। তার নামে গ্রন্থাগার । লাইব্রেরীর ভেতর যাওয়ার পর তার অবাক হওয়ার মাত্রাটা যেন আর বেড়ে গেলো । তার বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া সব বই দেখছি এখানে ।আর যারা বই গুলো পড়ছে তাদের দেখে মনে হচ্ছে এদের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল নয় ।
“ শুভ জন্মদিন মা “ । তিনি তো ভুলেই গেছিলেন আজকের দিনটার কথা । “ মাকে দেওয়ার মতো এর চেয়ে ভালো উপহার আমার কাছে ছিলোনা । বইগুলো তোমার কাছ থেকে চাইলে তুমি হয়তো দিতে চায়তেনা আর না হলে মুখ ভার করে দিতে । সেটি আমার খুব একটি পছন্দ হতোনা । তাই এই ব্যবস্থা । আমি হয়তো পার্লারে গিয়ে ক্ষণিকের জন্য নিজেকে সুন্দরী ভাবাতে পারতাম কিন্তু এখন দেখো , আমারি পড়ার বই গুলো কত বাচ্চাকে সুন্দর কিছু সময় উপহার দিচ্ছে আর সাথে জ্ঞান।আমার মায়ের নামের গ্রন্থাগারে হাসি ফুটবে অনেক শিশুর, এই স্বপ্ন খুব যত্নে মনেরকোণে জমিয়ে রেখেছিলাম। আজ তা পূরণ হলো। মা,তুমি খুশি তো? " চারুলতা দেবীর আজ প্রথম বারের জন্য বোধ হল তার শুধু বয়সটাই বেড়েছে কিন্তু তার মেয়ের মতো এতো সুন্দর মন তার নেই । তিনি শুধু নামেই শিক্ষিত কিন্তু তার এই মেয়েটি স্বশিক্ষিত ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ ভাল লেগেছে ভাই।শুভ কামনা।ভোট রইল।আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১৮
মোঃ মোশফিকুর রহমান ভালো, সামনে আরও ভালো করতে হবে! আপনার জন্য শুভকামনা.......
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৮

০১ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪