মানিব‌্যাগ

লাজ (জুন ২০১৮)

শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান
  • ৪৮
রোমেল একা একা পার্কের ভেতরে পায়চারি করছিল।লেখাপড়া শেষ করে কর্মজীবনের খোঁজে তার সময় কেটে যাচ্ছে ।নানাবিধ চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। হাঁটতে হাঁটতে সে পার্কের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছল। সহসা তার দৃষ্টিগোচর হলো একটু দূরে একটা মানিব্যাগ পরে আছে। রোমেল মানিব্যা গটা দেখে একটু চিন্তা করেনিল,প্রথমে সে ভাবল কার না কার মানিব্যাগ ওটা দেখে শুধু শুধু চিন্তা করে লাভ কি ওটা পরে থাক আমি আমার পথে চলে যাই। রোমেল ভাবনা অনুযায়ি নিজের কাজে ফিরে চলল। কিছুটা পথ হেঁটে একটু দূরে গিয়ে রোমেল আবার ভাবল না মানিব্যা গটা নিয়ে দেখি কেউ ভুলে ফেলে গেছে হয়ত তার কাছে ফিরিয়ে দিলে হয়ত লোকটার উপকার হবে। এবার রোমেল তার দ্বিতীয় ভাবনা অনুযায়ি কাজ করল। সে আবার পিছন ফিরে হাঁটা শুরু করল। আস্তে আস্তে মানিব্যা গটা যেখানে পড়েছিল সেখানে গিয়ে হাজির হলো রোমেল।মানিব্যা গটা হাতে নিয়ে রোমেল আবার নিজের গন্তব্যের পানে হাঁটা শুরু করল।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর রোমেল মানিব্যা গটা খুলে দেখল ।রোমেল লক্ষ্য করল মানিব্যা গের ভেতরে অনেকগুলো হাজার টাকার নোট রয়েছে। রোমেল আর বেশি মানিব্যাগটা ঘাটাঘাটি করল না সে নিজের পকেটে মানিব্যাগটা ভরে রাখল।
রোমেল ধীরে ধীরে পার্কের ভেতর থেকে বের হয়ে এলো। সে রাস্তায় এসে একটা লোকাল বাসে উঠে পড়ল। এবার রোমেলের লক্ষ্যল হলো তার নিজের বাসস্থান। ঘন্টা দেড়েকের মধ্যো রোমেল তার স্টেশনে এসে হাজির হলো।রোমেল বাস থেকে নেমে পড়ল।সে একটা রিক্সা নিয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যো রওনা হলো। গ্রামের ছেলে রোমেল।মেধাবি স্টুডেন্ট,লেখাপড়া শেষ করেছে সবে মাত্র।তার ইচ্ছা সরকারি কোনো বড় কর্মকর্তা হওয়ার । সে উদ্দেশ্য, নিয়েই রোমেল লেখাপড়া করে যাচ্ছে যেন সে তার ইচ্ছা পূরণ করতে পারে। আর তাই সে এ কারনেই এখনো শহরের বুকেই অবস্থান করছে। একটা ভাড়া করা বাসায় রোমেল থাকে।সে আর তার একজন বন্ধু দুজনে মিলে একটা রুম ভাড়া নিয়ে কোনো রকমে এই শহরে মাথা গুজে আছে।
রোমেল বাসায় পৌঁছে দেখল তার বন্ধু বাসায় এসে এখনো পৌঁছায়নি। হয়ত টিউশনি তে আছে।রোমেল দরজা খুলে ফ্রেশ হয়ে নিল।এবার বিছানার ওপরে শুয়ে রোমেল পকেট থেকে পরে পাওয়া মানিব্যাগটা বের করে দেখতে লাগল। রোমেল লক্ষ্যল করল মানিব্যাগের ভেতরে দুইটা চেক রয়েছে পাচ লক্ষ করে মোট দশ লক্ষ টাকার। এবার সে নগদ টাকা গুনে দেখল, ষাট হাজার টাকা রয়েছে মানিবযাগের মধ্যের।রোমেল মানিব্যাগের মধ্যে আর ও পেল একটা ছবি আর সেই ছবির পেছনে লেখা একটা ঠিকানা। সে ঠিকানাটা পরে দেখল ,জাফরান খান ,২২৮,ব্লক ডি,মিরপুর-১।রোমেল আর কিছু তেমন মানিব্যাগের মাঝে খুঁজে পেল না। সবকিছু দেখে রোমেল আবার ঠিকঠাক মতো মানিব্যাগে সবকিছু ভরে রাখল। এবার সে চিন্তা করতে লাগল, এত সবকিছু হারিয়ে জাফরান খান নিশ্চয়ই খুব চিন্তার মধ্যে রয়েছে যত দ্রুত সম্ভব যার জিনিস তার কাছে সবকিছু ফিরিয়ে দিতে হবে।রোমেল মানিব্যাগটা সম্পর্কে তার করনীয় কি সেটা ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। যার জিনিস তাকে খুঁজে বের করে তার কাছে পৌঁছে দেয়াই হচ্ছে রোমেলের প্রধান কাজ।রোমেল ভাবতে লাগল কিভাবে শুরু করবে সে তার হাতে তেমন টাকাও নাই।কিন্তু গচ্ছিত মানিব্যাগ তো তাকে ফেরত দিতে হবে কারণ এই মানিব্যাগটা এখন তার কাছে আমানত স্বরুপ।সুতরাং এর খেয়ানত করা যাবে না। যার জিনিস তাকেই এটা বুঝিয়ে দিতে হবে।রোমেল ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ল।
দরজায় টোকা মারার শব্দ শুনে রোমেলের নিদ্রা ভঙ্গ হল। রোমেল চোখ কচলিয়ে নিজের ঘুমকে তাড়িয়ে জিগ্যেকস করল কে?
বাহির থেকে জবাব এলো, আরে ভাই খোল ,আমি পরাগ। এই সন্ধ্যের সময় কেউ ঘুমায়। কতক্ষণ থেকে তোকে ডেকে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি দরজা খোল ,কে কে করিস না বন্ধু তোর কাছে তো আর কোনো সুন্দরী তরুনী আসবে না যে কে কে করছিস। নে দরজা খোল।
রোমেল বন্ধুর কথা শুনে দরজা খুলে দিল । তার বন্ধু পরাগ রুমে ঢুকে বিছানার ওপরে বসে পরল।রোমেল এবার বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলল, আরে ব্যাটা এত বকবক করা লাগে । আমি তো তোর জন্যলই অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম ।তা কি এমন করে এসেছিস যে এক মিনিট দরজায় দাঁড়িয়েই অস্থির হয়ে উঠেছিস।
কি আর করে আসব প্রতিদিন যা করে আসি টিউশনি করে এসেছি । আর এক মিনিট না পাক্কা দশ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম বুঝেছিস। আর কথা বলিস না আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নেই তার পর যা বলার বলিশ। রোমেলের কথা শুনে তার বন্ধু পরাগ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে বাথরুমে ঢুকল।
রোমেল আর কোনো কথা বলল না। সে বিছানার ওপরে বসে পরাগের জন্যব অপেক্ষা করতে লাগল। দশ মিনিট পরে পরাগ বাথরুম থেকে বের হল। পরাগ বের হতেই রোমেল তাকে উদ্দেশ্য করে বলল,দোস্ত শোন কথা আছে।
কি কথা?পরাগ রোমেলের কাছে জানতে চাইল।
এবার রোমেল তার বন্ধু পরাগের কাছে মানিব্যাগ পরে পাওয়ার কথা সবকিছু খুলে বলল। আর মানিব্যাগের মধ্যে কত টাকার কি রয়েছে তা ও বলে দিল।সবকিছু শুনে পরাগ পুনরায় রোমেলের কাছে জানতে চাইল তা এখন এসব নিয়ে কি করতে চাস।
রোমেল বলল, কি আর করব তুই তো টিউশনির এ মাসের টাকা পেয়েছিস সেখান থেকে আমাকে চার পাচ হাজার টাকা দিস,আমি দেখি এর মালিক কে খুঁজে বের করে তার কাছে সবকিছু ফিরিয়ে দেব।
রোমেলের কথা শুনে পরাগ বলে উঠল,পাগল হয়েছিস আমার এমনিতেই হাত টান রয়েছে তার ওপরে তুই আবার চাচ্ছিস কি দরকার আছে এত্ত কষ্ট করার ভাগ্যেনর জোড়ে যা পেয়েছিস তা নিজের কাছে রেখে দে না ।আর তোর আর আমার তো চাকুরীর দরকার তার জন্যো না হয় ঐ টাকাগুলো ঘুষ হিসেবে ব্যয় করব, কি বলিস?
তুই টাকা দিবি কিনা তাই বল ? পরাগের কথা শুনে রোমেল কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বলে উঠল।
আরে বন্ধু রেগে যাচ্ছিস কেন ,তাহলে তুই ঐ সৌভাগ্যের মানিব্যাগটা ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছিস এই তো। আচ্ছা ঠিক আছে তোকে তো আমি কখনো না বলিনি কিন্তু তুই আর একবার ভেবে দেখিস আর যা লাগে আমার পকেট থেকে নিয়ে নিস।তবু রাগ করিস না বন্ধু । রোমেলের কথা শুনে তার বন্ধু পরাগ রোমেল কে শান্ত করে কথাগুলো বলল।
রোমেল আর বেশি কথা বলল না। সে পরাগের কথার জবাবে শুধু বলল,এইত আমার ভালো বন্ধু । সকালে টাকাটা দিস আমি এর মালিককে খুঁজে বের করে তার কাছে সবকিছু ফিরিয়ে দেব।
আচ্ছা ঠিক আছে । চল এবার আমরা খেয়ে নেই।আমি জানি তো তুই কোনো অপরাধ করবি না খুবই নীতিবান বন্ধু আমার । আর এ কারণেই তোকে আমার এত পছন্দ।পরাগ রোমেলকে ভালো লাগার কথা বলল।
এবার রোমেলের মাথাটা ঠান্ডা হলো।সে পরাগ কে বলল, হয়েছে হয়েছে চল এবার আমরা খেয়েনেব। আর তোকেও আমার খুব পছন্দ, কারণ সব সময় তোর কাছ থেকেই তো আমি জোড় করে টাকা ধার করে থাকি।
রোমেলের কথা শুনে পরাগ আর কিছু বলল না । কারণ রোমেল যদি আবার রেগে যায়। তাই সে চুপ করে রইল।

সকাল বেলা দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে পরল রোমেল ।জাফরান খানকে সে খুঁজে বের করবে সে উদ্দেশ্য নিয়ে বেরিয়ে পরল ।কারণ মানিব্যাগটা জাফরান খানের তাই সেটা তার কাছে পৌঁছে দেওয়া রোমেলের নৈতিক দায়িত্ব । আর এই নৈতিক দায়িত্ব বোধের কারণেই রোমেলের এই রকম সিদ্ধান্ত। যার জিনিস তার কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই রোমেলের মনে তৃপ্তি আসবে।

রোমেল মিরপুরে গিয়ে হাজির হলো ।ব্লক ডি খুঁজে বের করল সে।এবার তাকে ২২৮নং বাড়িটা খুঁজতে হবে। রোমেল সে বাড়িটা খুঁজতে লাগল।পদব্রজে রোমেল একটার পর একটা গলি পার হতে লাগল। আধাঘন্টা হেঁটে অবশেষে রোমেল বাড়িটা খুঁজে পেল। মনে মনে সে বলল যাক বাবা বাঁচা গেল।জাফরান খানের হদিস তো এবার পাওয়া যাবে।রোমেল কলিং বেল চাপতে এক লোক বের হয়ে এলো । রোমেল তার কাছে জাফরান খানের কথা জানতে চাইল।সে বলল,আমি তো বলতে পারবো না বাবা। তবে তুমি ঐ দুইতলায় চলে যাও। আমি দরজা খুলে দিচ্ছি। সে দুইতলায় ডানপার্শ্বে থাকত।
লোকটার কথা মতো রোমেল দুই তলায় গিয়ে ডানপার্শ্বের দরজায় টোকা দিল।একটা লোক দরজা খুঁলে দিয়ে জিগ্যেস করল,কাকে চাই ?
জবাবে রোমেল বলল ,জ্বি আমি একটু জাফরান খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
সে তো এখানে আর থাকে না। লোকটা বলল।
তাহলে তাকে কোথায় পাব ? রোমেল জানতে চাইল।
আমি একটা ঠিকানা দিতে পারি সেখানে খুঁজে দেখতে পারেন। লোকটা রোমেলের কথার জবাবে বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে । দয়া করে তবে তাই দিন । আমি না হয় সেখানে গিয়ে তাকে খুঁজে নেব।রোমেল লোকটার কাছে জাফরান খানের নতুন ঠিকানাটা চাইল।
আচ্ছা একটু দাঁড়ান আমি লিখে নিয়ে আসছি। এই বলে লোকটা ভেতরে চলে গেল।রোমেল দরজায় দাঁড়িয়ে রইল। আর মনে মনে ভাবতে লাগল এ কোন ঝামেলায় পরলাম। কোথায় লুকাল জাফরান খান। এ মানিব্যাগ তার কাছে পৌঁছে দিতে না পারলে রোমেলের যে রাতে ঠিকভাবে ঘুম হবে না।
একটু পরে লোকটা এসে রোমেলের হাতে একটা টুকরা কাগজ দিয়ে গেল। রোমেল তাকে ধন্যজবাদ দিয়ে কাগজটা হাতে নিয়ে নিচে নেমে এলো।
রোমেল ঠিকানাটা পরে দেখল। রামপুরার একটা বাসার ঠিকানা দেয়া হয়েছে তাকে। কি জানি কি ফাপরে পরেছে সে কে জানে ।রোমেল ভাবতে লাগল। সে ভেবেছিল বাসায় এসে মানিব্যাগটা ভেরত দিযে যাবে আর তার দায়িত্ব শেষ। কিন্তু এখন দেখল জাফরান খান লোকটা ভাড়া থাকত,কোথায় আছে আল্লাহ্ই ভালো জানে। আবার এখন তাকে খুঁজতে রোমেল কে রামপুরা যেতে হবে।
রোমেল কিছুতেই অন্যেরর জিনিস হরণ করবে না এই নিষ্ঠা তার মধ্যে রয়েছে। সুতারং জাফরান খানকে তার জিনিস ফিরিয়ে দিতে হবেই।আর এটাই রোমেলের একমাত্র দায়িত্ব।রোমল তার ভাবনা অনুযায়ি এবার রামপুরার উদ্দেশ্যো রওনা হয়ে গেল।
রামপুরা পৌঁছে রোমেল লোকটার দেওয়া ঠিকানাটা খুঁজে বের করল। কিন্তু রোমেলকে এবার ও হতাশ হতে হলো। যে বাসার ঠিকানাটা তাকে দেয়া হয়েছে সেখানে আরো সাত আট মাস আগে জাফরান খান বসবাস করত।
রোমেল এই বাসায় এখন যারা থাকে তাদের কাছে জাফরান খানের কোনো ঠিকানা আছে কিনা জানতে চাইল।তারা ও রোমেলকে একটা ঠিকানা লিখে দিল। জাফরান খান লোকটা কি তবে সবার কাছে তার ঠিকানা রেখে গেছে। তাও ভালো করেছে না হলে রোমেল তো তার কোনো হদিস খুঁজে বের করতে পারত না। জাফরান খানের কোনো মোবাইল নাম্বার আছে কিনা রোমেল এবার ঠিকানাটা নেবার পর জানতে চাইল।
কোনো মোবাইল নাম্বার দিয়ে যায় নাই। বাসার একটা ছোট ছেলে রোমেলের প্রশ্নের উত্তরে বলে দিল।
রোমেল পুনরায় এই বাসা থেকে ঠিকানাটা নিয়ে বের হয়ে পরল। আর মনে মনে ভাবল আহ্ কি যে এক মুশকিলে পরলাম । এই জাফরান খান লোকটা কোথায় লুকাল। আর কেন যে তার মানিব্যাগটা আমার হাতে এস পরল। এই মানিব্যাগটা ফেরত না দেয়া পর্যন্ত আমার তো কোনো শান্তি নাই।
রোমেল এবার ঠিকানাটা পরে দেখল এবার তাকে উত্তরা যেতে হবে। রোমেল খুবই দুঃশ্চিন্তায় পরল কেন যে সে এই মানিব্যাগটা হাত দিয়ে ধরেছিল। পরে থাকা কোনো জিনিস আর সে জীবনেও ধরবে না। কিন্তু এখন যেটা তার হস্তগত হযেছে তা কিভাবে সে জাফরান খানের হাতে পৌঁছে দেবে সে চিন্তাই করতে লাগল রোমেল।
এবার রোমেল উত্তরা এসে হাজির হলো। সে বাসাটা খুঁজে বের করল। আর মনে মনে বলল, ইয়া আল্লাহ্ এবার যেন ঐ জাফরান খানের দেখাটা পাই। রোমেল সারাদিন কাটিয়ে দিল জাফরান খানের খোঁজে। কিন্তু এখনো তাকে খুঁজে পেল না।যা হোক এবার অনেক আশা নিয়ে রোমেল দরজায় নক করল। এক বৃদ্ধ লোক দরজা খুঁলে দিল। সে রোমেল কে দেখে জিগ্যে্স করল,কাকে চাই বাবা ?
জবাবে রোমেল বলল, জাফরান খান সাহেব কে একটু ডেকে দেবেন চাচা।
এ নামে তো কেউ এখানে থাকে না বাবা তুমি ঠিক করে বল কাকে চাও। বৃদ্ধ লোকটা বলল।
এবার রোমেল ভীষণ বিপাকে পরল। কিভাবে সে বৃদ্ধ চাচাকে বোঝাবে যে রোমেল এই নাম ছাড়া আর অন্য কিছু জানে না। এবার সে বৃদ্ধ লোকটাকে উদ্দশ্যে করে বলল, জ্বি চাচা ওনার নাম জাফরান খান।আমি ওনাকেই খুঁজছি।
রোমেলের কথার জবাবে এবার বৃদ্ধ লোকটা বলল, তাহলে তুমি ভুল ঠিকানায় এসেছ বাছা।এ নামে এ বাসায় কেউ থাকে না । আমি এই দুইতলা বাসার সবাই কে চিনি। তুমি আসতে পারো।এতটুকু বলে লোকটা দরজাটা বন্ধ করে দিল।
রোমেল কিছুটা অবাক হলো। সে আপাততঃ আর কিছু বলল না। বাসার কাছ থেকে ফিরে এসে রাস্তায় দাঁড়াল। অনেকটা ক্লান্ত এখন সে। সারাদিন ঘুরে ঘুরে তার আর তেমন উৎসাহ রইল না জাফরান খানকে খুঁজে বের করার। কিন্তু তাকে তো ক্লান্ত হলে চলবে না যার জিনিস তাকে তো ফিরিয়ে দিতে হবেই। এই মানিব্যাতগটা তার কাছে আমানত স্বরুপ।সুতরাং এটার খেয়ানত করা যাবে না। অতএব তাকে হাল ছেড়ে দিলে হবে না।
রাস্তায় আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে রোমেল এবার মোবাইলে তার বন্ধু পরাগকে কল করে তার সারাদিনের কর্মকান্ড খুলে বলল।
সবকিছু শুনে পরাগ বলল, ক্লান্ত হয়ে গেছ তোমার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে সুতারং বাসায় ফিরে এসো দোস্ত এখনকার মতো ।তারপর দেখা যাবে তুমি কি করতে পার।
রোমেল বন্ধুর কথা শুনল এবার। সে নিজের ঠিকানার উদ্দেশ্যো রওনা হলো ।

আজ পরাগের চেয়ে পরে বাসায় ফিরল রোমেল। আর সারাদিন ঘুরে ঘুরে যারপরনাই ক্লান্ত হয়ে এসেছে রোমেল।তাই খেয়েই সে ঘুমিয়ে পরল। পরাগের সাথে আর তেমন কোনো আলোচনা করল না এ বিষয়টা নিয়ে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার তৈরি হয়ে নিল রোমেল। তাকে এত তাড়াতাড়ি তৈরি হতে দেখে পরাগ জিগ্যে স করল, কি কোথায় যাচ্ছিস, আবার জাফরান খানের খোঁজে রওনা হচ্ছিস নাকি ?
ঠিক ধরেছিস। রোমেল পরাগের কথায় সায় দিয়ে বলল।
পরাগ বলল, কি দরকার এই পাগলামির বলত। এত বড় শহরে তুই কোথায় পাবি ঐ লোকটাকে খুঁজে। আর তোর এই সময় আছে এখন, কোথায় কোনো কাজ খুঁজে বেরাবি তা না একটা পাগলামি শুরু করেছিস।
রোমেল বলল, তোর কাছে যেটা পাগলামি আমার কাছে সেটা দায়িত্ব।বেশি কথা বাড়াস না ,আর দে আর এক হাজার টাকা দে তো লাগতে পারে।আমি এক্ষুণি বের হবো।
কত নিলি এখন পর্যন্ত তার তো কোনো হিসেব নেই দিতে পারবি শোধ। আর কি দরকার এসবের , নিজে না নিতে চাস রেখে দে ঐ ফালতু মানিব্যা গটা, ফেলে রাখ।তোর মতো এত দায়িত্ববান কেউ নাই এখন। পরাগ কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল।
ওকে টাকাটা আগে দে। তারপর দেখব হিসেব করে ।যত্তসব , এই বলে রোমেল পরাগের কাছ তেকে টাকাটা নিয়ে বের হতে উদ্যতত হলো। আবার একটু থেমে রোমেল বলল, সব কিছু লিখে রাখ দোস্ত একবারে শোধ করে দেব।
হয়েছে হয়েছে এখন বের হ। পরে হিসেব নেব তোর কাছ থেকে ।পরাগ এবার রোমেল কে যাওয়ার জন্যে উৎসাহ দিয়ে বলল। আর যাই হোক রোমেল কে পরাগ খুবই ভালোবাসে।কারণ এই রোমেল ই শুরু থেকে সব ধরনের সাহায্যয করেছে তাকে। আর রোমেল কখনো কোনো খারাপ কাজ করবে না মানুষের এই বিশ্বাস রয়েছে পরাগের।
রোমেল বাসা থেকে বের হয়ে পরল। এবার তার উদ্দেশ্য আবার সেই উত্তরা।সেই বাসায় আবার গিয়ে নক করবে সে যেখান থেকে শেষ করেছিল গতকাল।
রোমেল আবার উত্তরা এসে হাজির হলো। এবার যেন অন্য কেউ দরজা খোলে রোমেল এমনটা আশা করে দরজায় নক করে দাঁড়িয়ে রইল। রোমেলের আশা পূরণ হলো। তার বয়েসি একটা ছেলে দরজা খুলে দিল। রোমেল কে দেখে সে জানতে চাইল, কি ভাই কি করতে পারি আপনার জন্যা।
রোমেল বলল, জ্বি ভাই আমি একটু জাফরান খানের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
কেন বলুন তো ? রোমেল কে প্রশ্ন করল ছেলেটা।
ছেলেটার কথায় রোমেল বুঝতে পারল একে দিয়ে কাজ হতে পারে। তাই সে একটু বুদ্ধি করে বলল, ভাই খুবই দরকার আমার জাফরান সাহেব কে দয়া করে একটু বলুন সে কোথায় আছে।
রোমেলের কথার আকুতি দেখে ছেলেটা বলল, ভাই আপনার খুব প্রয়োজন মনে হচ্ছে ঐ জাফরান ভাইকে। তবে সে এখন কোথায় আছে আমি তা জানিনা। আমাদের বাসায় সে ভাড়া ছিল কিছুদিন।হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে কোনো ভাড়া পরিশোধ না করে উধাও হয়ে গেছে।আমাদের কাছে তার একটা বায়োডাটা রয়েছে। সেখানে হয়ত তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা থাকতে পারে। আর আমরা সবাই তাকে রানা নামে চিনতাম । কয়দিন আগে আমি তার উধাও হওয়ার কারণে বায়োডাটা খুলে দেখি সেখানে তার নাম রয়েছে জাফরান খান রানা লেখা। আপনি হয়ত গতকালকেও তার খোঁজে এসেছিলেন বাবা বলল। বাবা তাকে রানা নামেই জানত।
রোমেল বলল, জ্বি এসেছিলাম ভাই আমার তাকে খুব দরকার।যদি তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানাটা দয়া করে দিতেন।
আমার নাম সালমান ।আপনি বসুন।আমি ওনার বায়োডাটাটা নিয়ে আসি।
রোমেল ছেলেটার নাম জানতে পারল তার নিজে থেকে বলার জন্য । রোমেল বসতে বসতে সালমান কে বলল, ভাই আমার নাম রোমেল। আপনি আমাকে জাফরান খানের ঠিকানাটা দয়া করে দিন।
আচ্ছা বসুন আমি নিয়ে আসছি।
ভিতর থেকে সালমান জাফরান খানের বায়োডাটা নিয়ে এলো। আর রোমেলের হাতে দিয়ে বলল, এই যে তার বায়োডাটা। মোবাইল নাম্বার টা বন্ধ রয়েছে প্রায় দুইমাস হলো। আর দেখেন তার গ্রামের বাড়ি হচ্ছে সিরাজগঞ্জের হাঁটিকুমরুল।আমি ভেবেছিলাম একবার যাব সেখানে আমাদের ভাড়াটা আদায় করার জন্যজ। কিন্তু সময়ের অভাবে আর যাওয়া হয়নি।
রোমেল একটা কাগজে ঠিকানাটা লিখে নিল। তারপর সালমানকে উদ্দেশ্যভ করে বলল, আমি এখন রওনা হচ্ছি সিরাজগঞ্জের হাঁটিকুমরুলের উদ্দেশ্যো। আপনি ইচ্ছে করলে আমার সঙ্গে যেতে পারেন।
বুঝেছি আপনার প্রয়োজন খুব বেশি। যেতে পারলে ভালো হতো কিন্তু ব্যাবসার কাজে আমাকে ব্যস্ত থাকতে হবে।আপনি একাই যান আপনার কাজ সেরে আসুন। আর যদি পারেন আমাদের বাকি টাকাটা দিয়ে যাওয়ার জন্য ওনাকে একটু বলবেন।
আচ্ছা ঠিক আছে সালমান ভাই। আমি তাহলে এবার আসি।আর অবশ্যমই বলব আপনাদের ভাড়ার কথা যদি আমি জাফরান খানের দেখা পাই তাহলে।রোমেল এতটুকু বলে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে পরল।
রোমেল এবার তার বন্ধু পরাগ কে মোবাইলে কল করে জানিয়ে দিল যে সে জাফরান খানের খোঁজে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যেন রওনা হয়ে গেছে।
পরাগ কিছুটা বিস্মিত হলো তার বন্ধু রোমেলের আদর্শ দেখে। তাই সে বেশিকিছু না বলে রোমেলকে উপদেশ দিয়ে বলল,অচেনা যায়গায় যাচ্ছিস, খুবই সাবধানে চলাফেরা করিস।
আচ্ছা বলে রোমেল লাইন কেটে দিল।
রোমেল দূর পাল্লার গাড়ির স্টেশনে এসে সিরাজগঞ্জের গাড়িতে উঠে পরল। প্রায় বিকেল হয়ে গেল রোমেলের গন্তব্যে পৌঁছাতে। সিরাজগঞ্জে এসে রোমেল লোকজনের কাছে জিগ্যেস করে হাঁটিকুমরুল যাওয়ার ব্যতবস্থা জেনে নিয়ে হাঁটিকুমরুলের উদ্দেশ্যেো রওনা হয়ে গেল।ঘন্টাখানেকের মধ্যে রোমেল হাঁটিকুমরুল এসে উপস্থিত হলো।
এবার রোমেল পকেট থেকে ঠিকানাটা বের করে একজনকে দেখাল।সে চিনিনা বলে রোমেলের কাছ থেকে কেটে পরল।রোমেল দমে যাওয়ার পাত্র নয় ।একে একে সে দশ বার জনকে দেখাল,শেষে যাকে ঠিকানাটা দেখাল রোমেল সে রোমেলের খোঁজের সন্ধান দিতে পারবে বলল। রোমেল তাকে প্রথমে ধন্যনবাদ দিয়ে বলল,দয়া করে বলুন আমি জাফরান খানকে কিভাবে পেতে পারি।
অস্থির হবেন না আমি নিয়ে যাব। আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন আর আমার দেখা পেয়েছেন।আমি জাফরান খানের ভাইয়ের ছেলে সবুজ। চলুন ওনার কাছে নিয়ে যাই আপনাকে।এই বলে রোমেল কে নিয়ে সবুজ একট রিক্সায় উঠে স্থানীয় থানায় এসে হাজির হলো।
রোমেল তাকে জিগ্যেইস করল এখানে কেন ?
সবুজ বলল,চাচা এখন থানায় বন্ধি আছে।সে বেশি সুবিধের লোক নয়, কয়েকটা চেক চুরিকরে সে ধরাপরেছে।তবে চেকগুলো সে মানিব্যাগসহ হারিয়ে ফেলেছে।সুতরাং তার শাস্তি হয়ে যাবে।
সবুজের কথা শুনে রোমেল বলল,চলুন আপনার চাচার কাছে যাই।
রোমেল পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারল জাফরান খানের সম্পর্কে । সে একজন চোর তবে এর চেয়ে আর বড় কোনো অপরাধের কাজ এখনও সে করেনি। রোমেল পুলিশের কাছে অনুরোধ করায় জাফরান খানকে তারা রোমেলের সামনে হাজির করল।
জাফরান খান কে সামনে রেখে এবার রোমেল সবকিছু খুলে বলল আর তার মানিব্যাগটা তার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে চুরি করা সবকিছু পুলিশকে ফিরিয়ে দিতে বলল।
জাফরান খান রোমেলের পায়ে পরে বলল,ভাই আমি অনুতপ্ত,লজ্জিত।আপনি আমার জীবন বাঁচালেন।এর মধ্যে হয়ত আপনি খুঁজে পাননি এক কোটি টাকার একটা চেক ও ছিল। যা ফেরত না দিতে পারলে সারাজীবন আমি জেলে পচে মরতাম। আপনি আমাকে চিরকালের জন্যট শরমিন্দা করে দিলেন।আপনার হাত ধরে কথা দিচ্ছি আপনার মতো আদর্শবান হবো।আর চুরির মতো লজ্জার কাজ কোনোদিন করবো না।
আচ্ছা ঠিক আছে আপনি আপনার সবকিছু বুঝে নিয়ে আমাকে দায়িত্ব মুক্ত করুন।রোমেল জাফরান খানকে উদ্দেশ্য করে বলল।
জাফরান খান তার মানিব্যা গ হাতে নিয়ে পুলিশকে দিয়ে দিল আর বলল,আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার সবকিছু এখানে আছে। এটা নিয়ে দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন স্যা র।
রোমেলও পুলিশকে অনুরোধ করল। এবার রোমেলের অনুরোধ পুলিশ রাখল। তারা জাফরান খান কে আর কোনোদিন ও চুরি করবে না সেই শর্তে মুক্তি দিল।
এবার রোমেল জাফরান খানকে চুরি না করার জন্য অনুরোধ করে নিজের গন্তব্যে র উদ্দেশ্যো ফের রওনা হলো।জাফরান খান রোমেলের মোবাইল নাম্বার রেখে দিল,ভাল মানুষ হয়ে তার সঙ্গে দেখা করবে কোনো একদিন এই প্রত্যাকশায়।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ জামশেদুল আলম অনেক জায়গায় বিশেষ করে প্রথমাংশে বার বার 'রোমেল' নামটা ব্যবহার করাটা বিরক্তিকর লেগেছে। শুভ কামনা আপনার জন্য।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু রোমেল কুড়িয়ে পাওয়া মানিব্যাগের মধ্যেকার সবকিছু নিজে না নিয়ে অনেক কষ্ট স্বীকার করে জাফরান খানের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত দেখা করলো, এটা সত্যিই খুবই প্রশংসনীয় ও অনুসরণযোগ্য। রোমেলের এই সৎ কাজের ফলে জাফরান খান অনেক বড় শাস্তি পাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেল এবং ভালো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য অনুপ্রাণিত হলো। ভাই, অনেক অনেক ভাল লাগলো আপনার গল্পটি। আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করবেন। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন।
%3C%21-- %3C%21-- শুভকামনা রইল। সময় পেলে আমার লেখাটি পড়ে দেখবেন। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ অশেষ।শুভ কামনা আপনার জন্যও।
রবিউল ইসলাম Very nice. Best wishes and vote for you. I invite you to my poem. Cheers!

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

একজন আদর্শবান মানুষের নিষ্ঠা দেখে লজ্জিত হয়ে একজন অপরাধি কিভাবে পরিশুদ্ধ হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে তার কাহিনী বিবৃত হয়েছে এই গল্পে।সুতরাং গল্পটি বিষয়ের সাথে সামঞ্জস‌্যপূর্ণ।

২২ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪