একজন সাধারণ আমেরিকান নাগরিকের সাধারণ জ্ঞান খুবই নি...

স্বপ্ন (জানুয়ারী ২০১৮)

কালপুরুষ
একজন সাধারণ আমেরিকান নাগরিকের সাধারণ জ্ঞান খুবই নিম্নপর্যায়ের হয়ে থাকে ।
ব্যাপারটাকে নেতিবাচকভাবে না দেখার জন্য অনুরোধ করছি । ধরুন, রাস্তায় আপনার সাথে একজন সাধারণ মার্কিন নাগরিকের দেখা হল । তাকে সাধারণ জ্ঞানের কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে দেখুন । অবাক হয়ে দেখবেন, বর্হিবিশ্ব সম্পর্কে তাদের ধারণা আমাদের দেশের ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়া ছেলেদের চেয়ে বেশি নয় । তারা জানে শুধু ট্যাক্সের তীব্রতায় তাদের জীবন বিপর্যস্ত, জানে মুসলিম মানেই টেরোরিস্ট এবং অর্ধেকের বেশি আমেরিকান বিশ্বাস করে ভূতপ্রেতে ।
তাহলে তারা পৃথিবী শাসন করে কিভাবে ? আর কিভাবেই তারা নিজেদের ‘ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট নেশন’ দাবী করে ? ব্যাপারটা অবাক করার মত না ?
খুব সহজভাবে যদি উত্তরটা দিয়ে দিই, সেটা হবে –‘ তারা গুণের এবং গুণীর কদর করতে জানে’ ।
প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশ থেকে তারা মেধাবী, গুণী মানুষদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করে । তাদের মেধাকে তারা সম্মান জানায় তাদের মুদ্রার মাধ্যমে, উন্নত জীবনযাত্রার মাধ্যমে । তারা এই গুণী মানুষদের সুযোগ দেয় কাজ করার, নিজের প্রতিভা বিকশিত করার এবং সম্মানিত হওয়ার । এবং একদিন, এই মানুষগুলো – তারা দেশটির অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করে । তারা আবিষ্কার করে আমেরিকার হয়ে, আমেরিকান মানুষদের জন্য । দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় হয় তাদের মাধ্যমে, তাদের বংশধরদের মাধ্যমে । একটা চমৎকার নাম আছে পুরো প্রক্রিয়াটির – Brain Drain.
আমি নিশ্চিত, আপনার পরিচিত কেউ না কেউ এরকম আছে । যারা প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন সেখানে । যেখানে ধর্ম , গায়ের রং, টাকাপয়সা, জায়গাজমি বা বংশপরিচয় দিয়ে মানুষ বিচার করা হয় না । কাজ এবং যোগ্যতা দিয়ে বিচার করা হয় । এবং এই একটামাত্র কারণেই আমেরিকা উন্নত রাষ্ট্র, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র নয় । এবং কথাটা শুধু আমেরিকা নয়, প্রথম বিশ্বের প্রায় সবকয়টি দেশের জন্যই প্রযোজ্য ।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মাহমুদা সুলতানা নাসার ‘ইনোভেটর অব দ্য ইয়ার’ পুরষ্কার অর্জনে আমি কেন জানি খুশি হতে পারি নাই ।

অবশ্যই আমি তার ত্যাগ, প্রতিভা, কষ্টকে মোটেই ছোট করে দেখছি না । কিন্তু তার এই মহান অর্জনে যারা ‘বাংলাদেশী’ বলে গর্বিত , তাদের দলে থাকতে পারছি না বলে দু:খিত । মাহমুদা সুলতানা ছোটবেলায় সপরিবারে বাংলাদেশ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান । গত এক বছরে দশটির বেশি অবিষ্কার এবং ন্যানোটেকনোলজিতে অসমান্য দখলের জন্য তিনি এই পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হন ।

যদি তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি না জমাতেন, কোথায় থাকতেন ?
২০১৬ সালের অলিম্পিকে অল এ্যারাউন্ড পুরষ্কার জেতেন মার্গারিটা মামুন । তিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত হওয়ায় আবেগের বন্যায় ভেসে যায় সারা দেশ । এই কথাটা একবারও মনে পড়েনা কারো, মার্গারিটার বাবা যদি রাশিয়াতে শিফট না করতেন, অলিম্পিকে স্বর্ণ নয়, বিয়েতে পাত্রপক্ষ কয় ভরি স্বর্ণ দিয়েছে তা নিয়ে সম্ভবত মার্গারিটা ব্যস্ত থাকতেন ।
কথাটা নোংরা শোনালেও সত্যি ।
উইকিপিডিয়াতে গিয়ে দেখেন, মার্গারিটা মামুনের পদকের নামের পাশে রাশিয়া লেখা , বাংলাদেশ নয় । এই অর্জনকে আমি কিভাবে বাংলাদেশের অর্জন বলবো বলুন ?
অথচ এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের হতে পারতো । সারা পৃথিবীজুড়ে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতদের নানা অর্জন আমাদের জানিয়ে দেয়, আমাদের মাঝে সেই পটেনশীয়াল আছে । আমরা অলিম্পিকে পদক পেতে পারি, আমরা নাসায় যেতে পারি, আমরা নোবেল প্রাইজ পেতে পারি ।
বিশ্বখ্যাত খান একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত । ছেলেবেলায় একবার তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন, তার পূর্বপুরুষের জন্মভূমি দেখার জন্য ।

ইউটিউবের বিখ্যাত তিন প্রতিষ্ঠাতার একজন জাওয়াদ করিম বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত জার্মান। নোবেল বিজয়ী অর্মত্য সেনের আদি নিবাস মানিকগণ্জ জেলায় ।
যুক্তরাজ্যের শ্রেষ্ঠ মানবাধিকার আইনজীবি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আবদুল মুয়ীদ খান ২০১৬ সালে ‘সাইলেক্স প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন ।

তিনি বাংলাদেশে থাকলে হয়তো তার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার আগে চিন্তা করতে হতো, এইটা দিলে কি কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হবে ?
প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের জন্য অসংখ্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান । তাদের ত্যাগে এগিয়ে চলে বাংলাদেশ । তাদের কি ইচ্ছা করে না দেশে বসে পরিবার পরিজনের সাথে এরকম সম্মানজনক কোন চাকুরী করতে ? অবশ্যই করে ।

আমাদের মানুষ আছে উন্নয়নের । আমাদের জনবল আছে কাজের । শুধু আমাদের মানসিকতা নেই । আমাদের মানসিকতা নেই গুণীকে সম্মান দেবার । আমাদের মানসিকতা নেই সব কাজকে সমান মর্যাদা দেয়ার । আমরা মানুষকে সম্মান দিতে শিখিনাই । আর যতোদিন না শিখবো, তৃতীয় বিশ্বের এই দেশটা তৃতীয় শ্রেণীর মানুষ দিয়েই ভরে থাকবে ।
সুবোধের সাথে সাথে আমরাও নাহয় ভোরের প্রত্যাশায় থাকি ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ দারুণ।একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৮
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া গল্পের ছলে মনের অনুযোগগুলো বলার চেষ্টা করেছেন। ভাল লাগল। আসবেন আমার গল্পের পাতায়। ধন্যবাদ
মোস্তফা হাসান উদাহরণ গুলো দিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে। অামার লেখা গল্পটি অাশা করি পড়ে দেখবেন।
Farhana Shormin ছোট হলেও গল্পটি অসাধারণ। ধন্যবাদ আপনাকে।

২১ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪