তোমার সাথে, পায়ে পায়ে চলা

বাংলা ভাষা (ফেব্রুয়ারী ২০১৩)

আহমেদ সাবের
  • ৪৫
  • ১১
  • ২৫
পঞ্চান্ন হাজার বর্গের এই বদ্বীপ ভূমিতে, বটের ঝুরির মতো বয়ে যাওয়া
শত শত বহতা নদীতে অতি ক্ষুদ্র পলি-কণা হয়ে,
তুমিও তো মিশে যেতে, হারাতে অনেক আগে দক্ষিণের সুনীল সাগরে -
যেমনি হারিয়ে গেছে মান্দান, নূকাক, কুরাণা, মোহাক, আরাবানা আর
হাজার নামের সব তোমারই পূর্ব-পুরুষেরা।

প্রভুরা এমনি করে লিখেছিলো নাটকের পাঠ; বিভীষণ ছিলোও প্রস্তুত, নরকের সান্ত্রীর মতোই।

তুমি-হীন সে নাটকে রবীন্দ্র-উদ্যান নেই,
বাজে না বিষের বাঁশী, আঁকেনা কখনো কেউ পদচিহ্ন ভগবান বুকে,
বনলতা সেন হয় নির্বাসিত রাক্ষস পুরীতে,
সোজন বাদিয়া কভু ভেড়ায় না তরী শিমুলতলীর ঘাটে,
পাল্কিতে যায়না বধূ বাপের বাড়ীতে, রাখালিয়া বাঁশীগুলো নিস্তব্ধ দুপুর;
ডাকেনা দোয়েল, শ্যামা, ফোটেনা শাপলা ফুল ময়ূরাক্ষী জলে।
রুক্ষ-শুষ্ক পাথরের প্রাণহীন পটে, বিকেলের ক্লান্ত রোদে,
ছায়াকে পেছনে রেখে হেটে যায় পেশোয়ারী বাদামী খচ্চর।

কতিপয় হারকিউলিস গোপনে লিখে ফেলে আরেক নাটক, অন্য কুশীলবে, অন্য সমাপ্তিতে।

সে নাটকে একে একে, পঞ্চান্ন হাজার বর্গে জ্বলে ওঠে
পঞ্চান্ন হাজার কোটি বিদ্রোহের অনির্বাণ শিখা;
টেকনাফ থেকে উঠে সমুদ্র-নির্ঘোষ, নিমেষে লাভার মতো ছুটে যায় অন্য প্রান্তে;
ছুঁয়ে দেয় তেতুলিয়া - প্রতিবাদে নির্মম নিষ্ঠুর। ছিঁড়ে ফেলো
অচেনা আকাশ। আবার নতুন করে আঁকো, নব পত্রে বঙ্গীয় সুষমা।
তারা ভালবেসে, বুকের রুধির ঢেলে এঁকে দিলো লাল কৃষ্ণচূড়া
নতুন ক্যানভাসে। সকলি তোমার জন্যে, হে বঙ্গ দুহিতা।

তাই তুমি বেঁচে গেলে। তাইতো তোমার সাথে, পায়ে পায়ে চলা হলো এতগুলো বর্ণীল বছর।

আমি এক স্বপ্নময় কবিতা পূজারী, তোমার চরণধূলি গায়ে মেখে
গীতাঞ্জলীর দেশ থেকে দোলনচাঁপার লতা বেয়ে বারবার ফিরে আসি
এই বাংলায় শঙ্খচিল বেশে। "হোমারের স্বপ্নময় হাত"
আমার চোখের মাঝে ঝলসে উঠে মেঘ চেরা বিদ্যুতের ফলার মতোন।
"দেনমোহর চেওনা হরিণী" বলে ভিক্ষা নিয়ে "সোনালী কাবিন",
"চান্নি পশর রাতে" জোৎস্নাভুক আমি, একা একা গিলে ফেলি পুরোটা আকাশ।


---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মান্দান, নূকাক, কুরাণা, মোহাক, আরাবানা - এগুলো বিভিন্ন দেশের কতগুলো লুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় ভাষার নাম। এই সব নাম গুলোর সাথে বাংলা ভাষার নামও যুক্ত হয়ে যাবার কথা ছিল। একটা জাতিকে ধ্বংস করে দেবার জন্য তার মাতৃভাষাকে কেড়ে নেয়াই যথেষ্ট - কারণ মাতৃভাষাকে কেড়ে নেয়ার অর্থ হলো সে জাতির অতীত গৌরবের সাথে সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। আমাদের সৌভাগ্য, ভাষা শহীদেরা তা হতে দেন নি। তাদের পবিত্র স্মৃতির উদ্দেশ্যে এ ক্ষুদ্র নিবেদন।




সিডনী, জানুয়ারী ১৩, ২০১৩
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শেখ একেএম জাকারিয়া এরকম একটা ভাল কবিতায় আমি মন্তব্য করার দু:সাহস দেখাচ্ছিনা ।তবে যে কয়টা কবিতা এ সংখ্যায় পড়েছি, তার মধ্যে আমার কাছে এটিই সবচেয়ে ভাল মনে হয়েছে.
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস খুব ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
Md. Mainuddin আমি আপনার দেখা আজো পাইনি হে পরবাসী গুরু। আমার উপর রাগ করেছেন মনে হয়। যতদুর মনে হয় আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে গেছেন।।আপনার প্রত্যাবর্তন হোক এই মোর কামনা।। ভালো থাকুন।
ভালো লাগেনি ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
আরমান হায়দার যতই পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। অসাধারন কবিতা।
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
Lutful Bari Panna অনেকগুলো বিষয় চলে এসেছে কবিতায়। অনেক ইতিহাস, আমার প্রিয় ভাষাটির স্বগৌরবে অস্তিত্বমান থাকার খুটিনাটি। মনে পড়ে গেল আপানার কবিতায় উল্লেখিত সোনালী কবিন সনেটগুচ্ছের কথা। সেরকমই ঋদ্ধ একটি লেখা।
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মোহাঃ ফখরুল আলম অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে , ভালো লাগলো |
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
জোনাকি ঝুরির হবে ? নাকি ঝুড়ি ? ঠিক বুঝতে পারলাম না ! কবিতা অসাধারন ।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ঝুরি শব্দের অর্থ "বড় গাছ থেকে ঝুলে পড়া জটা ( যেমন - বটের ঝুরি ) " আর ঝুড়ি শব্দের অর্থ "বাঁশ বা বেতের চ্যাঙারী ( যেমন - আমের ঝুড়ি )"।
ভালো লাগেনি ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
রীতা রায় মিঠু বাহ! বুকটা শান্তিতে ভরে গেলো সাবের দাদা!
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ওসমান সজীব তুমি-হীন সে নাটকে রবীন্দ্র-উদ্যান নেই, বাজে না বিষের বাঁশী, আঁকেনা কখনো কেউ পদচিহ্ন ভগবান বুকে, বনলতা সেন হয় নির্বাসিত রাক্ষস পুরীতে, সোজন বাদিয়া কভু ভেড়ায় না তরী শিমুলতলীর ঘাটে, অসাধারন কবিতা
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
বশির আহমেদ পাল্কিতে যায়না বধূ বাপের বাড়ীতে, রাখালিয়া বাঁশীগুলো নিস্তব্ধ দুপুর;/ডাকেনা দোয়েল, শ্যামা, ফোটেনা শাপলা ফুল ময়ূরাক্ষী জলে। /রুক্ষ-শুষ্ক পাথরের প্রাণহীন পটে, বিকেলের ক্লান্ত রোদে, /ছায়াকে পেছনে রেখে হেটে যায় পেশোয়ারী বাদামী খচ্চর। শ্যামল বাংলার প্রকৃত রূপটা তুলে ধরেছেন কবিতার খেড়ো পাতায় ।
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

০৭ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪