ডুব সাঁতারের নায়ক

ঈর্ষা (জানুয়ারী ২০১৩)

আহমেদ সাবের
  • ৩৫
-১-

মোসাদ্দেকের ডান হাতে মোবাইল - ডান কানে চাপা। আমি পৌঁছাতেই বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে আমাকে একটা শূন্য চেয়ার দেখিয়ে বসার ইঙ্গিত করলো সে। আমি বসলাম না; দাঁড়িয়ে চার পাশে চোখ বুলালাম। বেশ কয়েকটা প্লাষ্টিকের চেয়ার এদিক-ওদিক ছড়ানো। কয়েকটাতে কিছু লোক বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের কয়েকজন আমার দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালো। নদীর পারে কয়েকটা লোক একটা ঝুপড়ির মতো বানাচ্ছে। ফ্রেম বানানো শেষ। দু জন লোক একটা বানানো চালা খুঁটির উপরে উঠাচ্ছে। তার আশেপাশে কিছু লোক গোল হয়ে দাঁড়িয়ে। এক ঝাঁকড়া-চুলো যুবক একটা ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে নদীর তীর দিয়ে ছুটাছুটি করছে এদিক ওদিক। শীতের কুয়াসার জাল কেটে রেশমের গুটি পোকার মতো সূর্যটা মাথা বের করে আকাশে ঝুলে আছে। মোটামুটি বেশ উৎসব উৎসব ভাব চারিদিকে। এখানে আমার বন্ধু টেলিফিল্ম পরিচালক মোসাদ্দেক পাশার নাটক "ডুব সাঁতার" 'এর আউটডোর শুটিং হবে আজ। যায়গাটা ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে, মেঘনা ব্রিজের কাছে, মেঘনা নদীর পারে। এখানে ইয়াকুব ইন্ডাস্ট্রিজের একটা বাংলো আছে। কবি শামসুর রাহমানের বাড়ী স্পটটা থেকে কাছেই। ঢাকা থেকে গাড়ীতে ঘণ্টা খানেকের রাস্তা। মোসাদ্দেকের বিশেষ অনুরোধে আমার আজ এখানে আসা।

মোসাদ্দেক আমার কলেজ লাইফের বন্ধু। আমাদের ব্যাচে দু জন মোসাদ্দেক ছিলো। এক জন বেশ শান্ত-শিষ্ট; ওকে আমরা সাধু-মোসাদ্দেক সংক্ষেপে সাধু বলে ডাকতাম। আর এই মোসাদ্দেকের তখন থেকেই একটু মদ্য পানের অভ্যাস ছিলো বলে আমাদের বন্ধু মহলে সে মদু-মোসাদ্দেক বলে পরিচিত হয়ে পড়ে। অবশ্য অপরিচিতদের সামনে আমরা ওকে মদু'র বদলে মধু বলেই ডাকতাম। ধীরে ধীরে মধু নামটাই ওর ডাকনাম হয়ে যায়। রাজনীতি, সাংবাদিকতা থেকে শুরু করে সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্দর-মহল, সব খানেই ছিলো ওর অবাধ আনাগোনা।

তখন থেকেই আমার এক আধটু লেখার অভ্যেস। একদিন মধু আমাকে ধরে পড়লো একটা কবিতার জন্য। নতুন কবি। কেউ কবিতা চাইলেই অন্তরে ভীষণ পুলক অনুভব করি। দিয়ে দিলাম। কিছুদিন পরে আমাদের কলেজের বার্ষিক সাময়িকী প্রকাশিত হলো। আমার কবিতা চোখে পড়লো সেখানে। কবির নামের দিকে খেয়াল করিনি। বাসায় এসে আবার দেখতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। কবির নাম - আপনারাই অনুমান করুন। রাত এগারোটার দিকে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় দরোজায় টোকা। দরোজা খুলেই মূর্তিমানের চেহারা দেখেই আমার মেজাজ হাউই বাজির মতো তুঙ্গে উঠে গেলো। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেবার আগেই সে আমাকে আমার ঘরে নিয়ে দরোজা ভেজিয়ে দিয়ে আমার পায়ের উপর ঝুপ করে পড়লো। তার পর চললো ওর ভাঙ্গা রেকর্ড-প্লেয়ার। যার মর্মার্থ হলো - আমাদের কলেজের শেলী নামের এক লেখিকার মন জয়ের জন্য ওর এই অতর্কিত এমবুশ। দোস্ত, মাফ কইরা দে। যা কইবি, যেই শাস্তি দেস, সব মাইনা লমু। এই বলে ও আমার পা দুটোর কাঁকড়ার ঠ্যাঙের মতো ধরে থাকলো। অবশেষে, ওর মহব্বতের চেয়ে আমার পা বাঁচানোর তাগিদেই আমার গলা গিয়ে কেমন করে বেরিয়ে গেল, যা দিলাম ছাইড়া এই বারের মতো।

যাক, কোথা থেকে কোথায় চলে গেলাম। এই হলো আমাদের মদু, মধু, মোসাদ্দেক - যেই নামেই ডাকুন না কেন ওকে। আমি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পার করে গত পাঁচ বছরে নানা ধান্দাবাজি করে সাত ঘাটের পানি খেয়ে শেষে সুইডেনে আড্ডা গাড়লাম। আর আমাদের মধু নানা অঙ্গে নানা রূপ নিয়ে অবশেষে মিনি পর্দায় অধিষ্ঠিত। আমাদের সম্পর্কও নানা টানা-হেঁচড়ার পর এখনো টিকে আছে। আপনারা অনেকেই হয়তো ওর পরিচালিত বিখ্যাত নাটক গুলোর সাথে পরিচিত। আমি দূরে থাকলেও ওর সুনামের খোশবু মহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে সেই সুইডেনে গিয়েও ধাক্কা দিয়েছে। কোন অনুষ্ঠানে নাটকের কথা উঠলেই কান টানলে মাথা আসার মতো খ্যাতনামা নাট্যকার মোসাদ্দেক পাশার নামটা এসেই পড়ে। আর আমিও আমার সাথে মোসাদ্দেকের আত্মিক নৈকট্যের কাহিনী শোনাতে ভুল করি না।

মোসাদ্দেক ফোন শেষ করেই আমাকে জড়িয়ে ধরে ধমক লাগালো চেয়ারে বসে থাকা লোক গুলোর উদ্দেশ্যে। আমার বিশেষ বন্ধু বিদেশ থেকে এসেছে, আর তোমরা সবাই পায়ের উপর পা তুলে বসে আছো। ওর ধমক খেয়ে সবাই তটস্থ হয়ে উঠে দাঁড়ালো। আসেন স্যার, বসেন স্যার। আমাকে নিয়ে মহা হুলুস্থুল পড়ে গেলো।

এই, যাও, আমাদের নাস্তা নিয়ে আসো। মোসাদ্দেকের কথা শুনে কয়েকজন ঘরের দিকে ছুটে গেল নাস্তা আনতে। আমাদের নাস্তা আসলো। আমি আর মোসাদ্দেক বারান্দার এক কোনে রাখা চেয়ার-টেবিলে বসে এক্কা-দোক্কা খেলার মতো এ কথা থেকে সে কথায় পাড়ি দেই। বন্ধুদের কথা আসা যাওয়া করে আমাদের কথার বাঁকে বাঁকে। কে কোথায় আছে, কিভাবে আছে? ও কথায় কথায় শুধু বলে ওঠে, জীবনটা ঝামা হয়ে গেল রে দোস্ত। খালি কাজ আর কাজ। এটা কোন জীবন হলো? মুখে দুঃখের কথা বললেও ওর চোখে মুখে তার কণাটুকুও লক্ষণীয় হয় না। নিজের সাফল্যে চোখ-মুখ চকচক করে উঠে ওর। আমি আমার সুইডেনের কষ্টের জীবনের কথা বলি। বিদেশে রাত্রি-দিনের জীবন যুদ্ধের কথা বলি। মোসাদ্দেক সমবেদনা জানায়। এর মধ্যে আবার ওর মোবাইল সুর তরঙ্গ তুলে বেজে উঠে।

মোসাদ্দেক উঠে যেতেই কয়েকজন এগিয়ে এসে ঘিরে ধরে আমাকে। ওদের গলায় এখন সমীহ ভাব। আমি বিদেশে থাকি জেনে, একটু দূরত্ব যেন আপনা-আপনিই তৈরী হয়ে গেছে। কোথায় থাকি, কি করি, ওখানে কি খাই, জীবন কেমন, বাংলাদেশী নাটক-সিনেমা দেখতে পাই কি না - এ জাতীয় কৌতূহলী প্রশ্ন। কথায় কথায় আমারো জানা হয়ে যায়, মধু ভাই 'এর নাটক "ডুব সাঁতার" 'এর তারা পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতা। ঢাকা থেকে নায়ক-নায়িকা , অর্ণব আর চিত্রা আপা এসে পৌঁছালেই নাটকের শুটিং শুরু হবে। এবারের ঈদে নাটকটা আই-টিভিতে দেখাবে। আজকেই নাটকের শেষ দৃশ্যের চিত্রায়ন।

মোসাদ্দেকের কথা শেষ হতেই হুলুস্থুল পড়ে যায়। অর্ণব আর মিত্রা চলে এসেছে। বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা আছে। তাই সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি শুটিং শেষ করতে হবে। আজ শুটিং শেষ না করলে এবারের ঈদে নাটক নামানো যাবে না। শেষ দৃশ্যে নায়িকা স্বামী বিতাড়িত হয়ে পিতার ঘরে চলে আসবে। নৌকায় নায়িকা এসে নামবে নদীর ঘাটে। সেখানে পিতা-কন্যার দুঃখময় মিলন। এমন সময় কোথা থেকে ছুটতে ছুটতে আসবে নায়ক। তার ক্ষমা চাওয়ার মাঝে নাটকের মিলনান্তক সমাপ্তি।

-২-

বৃষ্টি যেন শুটিং শেষ হবার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। বেলা দুটার দিকে শুটিং শেষ হতেই ঝম ঝম করে বৃষ্টি নামলো। নীচের তলার বারান্দায় সবার খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আর আমাদের এক্সক্লুসিভ গ্রুপের জন্য দোতালার খাবার ঘরে। খাবার টেবিলে মোসাদ্দেক, অর্ণব, চিত্রা আর আমাকে নিয়ে আমরা মোট আট জন। বারান্দায় প্লাষ্টিকের চেয়ারে বসে আরো কয়েকজনকে খেতে দেখা গেল। নাটকের চিত্রার বাবা-মা, ঝাঁকড়া চুলের চিত্র-গ্রাহককেও সেখানে দেখা গেলো।

আমরা গাল-গল্পে মেতে উঠলাম। মোসাদ্দেক আমার সাথে সবার একে একে পরিচয় করিয়ে দিল। আমার অচেনা বাকী চার জনের মধ্যে একজন আই-টিভির প্রযোজক আমানুল্লাহ কবির - মোসাদ্দেকের ভাষায়, আমার মা-বাপ। আজ নাটকের শেষ দিনের শুটিং 'এ শত ব্যস্ততা ফেলে তিনি এসেছেন বলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। অন্য একজন মোসাদ্দেকের ম্যানেজার জাতীয় কেউ হবেন, নাম খুরশিদ আলম। মোসাদ্দেকের কথায় - খুরশিদ ভাই আছেন বলেই টিকে আছি। উনিই সব দেখে শুনে রাখেন বলেই আমি এই যায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি। বাকী দুজন দুটো বড় রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা।

অর্ণব কে পরিচয় করিয়ে দিতে ওর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলো মোসাদ্দেক। ওর মতো এমন সহজাত অভিনয় প্রতিভা পৃথিবীতে বিরল। ওর দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের মত একটা তৃতীয় শ্রেণীর দেশে ওর জন্ম। যদি আমেরিকায় ওর জন্ম হতো, টম ক্রুজ, ডেঞ্জেল ওয়াশিংটন, দ্যা-ক্যাপ্রিয়ো কে নিয়ে মাতামাতি না করে সবাই ওকে নিয়েই মাতামাতি করতো। আমি সামান্য পরিচালক। আমি আমার সামান্য ক্ষমতা দিয়ে অন্ততঃ এই দেশে হলেও প্রমাণ করে ছাড়ব, ওর মত অভিনয় প্রতিভা বাংলাদেশে জন্মায় নাই, আর ভবিষ্যতেও জন্মাবে না। অর্ণব বারবার মোসাদ্দেককে থামাবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাল। আপনি আমাকে স্নেহ করেন বলে বাড়িয়ে বলছেন মোসাদ্দেক ভাই।

চিত্রার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিলো মোসাদ্দেক। উত্তরে, ওকে সাধারণ চরিত্রাভিনেত্রী থেকে নায়িকাতে উন্নীত করার জন্য মধু ভাইকে ধন্যবাদ জানালো সে।

এরপর আমাকে নিয়ে পড়লো মোসাদ্দেক। কলেজ লাইফ থেকে ওর সাথে আমার বন্ধুত্বের সংক্ষিপ্ত বয়ান দিলো। সবাই বলে মোসাদ্দেকের নাকি বন্ধু ভাগ্য ভালো না। তবে আমার মতো বন্ধু যার আছে, তার ক্ষেত্রে এমন কথা খাটে না। সুইডেনের ওয়ান অব দ্যা রিচেষ্ট বাংলাদেশী ম্যান যার বন্ধু, তার বন্ধুভাগ্য কি খারাপ হতে পারে? আমাকে নিয়ে সে দারুণভাবে গর্বিত। আমি বারবার মোসাদ্দেককে থামাবার ব্যর্থ চেষ্টা করি। ও যা বলছে, এতটুকুও বিশ্বাস করবেন না। ও সব বাড়িয়ে বলছে। আমি সামান্য ব্যবসা করি ওখানে।

খাওয়ার পর টেবিল চেয়ার নিয়ে বারান্দায় বসলাম সবাই। কথায় কথায় অর্ণব জানালো, ঢাকা থেকে প্রকাশিত আজকের সিনে-সাপ্তাহিক তারকা-কুঞ্জ পত্রিকায় ওর একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। বলতে বলতে পত্রিকার একটা কপি ব্যাগ থেকে বের করে টেবিলের উপর রাখলো সে। পত্রিকাটা দেখে মোসাদ্দেক খুব খুশী হলো। ওয়েল ডান অর্ণব। উন্নতি করতে হলে পত্রিকা ওয়ালাদের খুশী রাখতে হবে। তারপর তাড়াহুড়া করে সে নীচে চলে গেল বিকাল হয়ে এসেছে। অনেকে ঢাকা ফিরে যাচ্ছে। যাদের গাড়ী নাই, তারা দশ মিনিটের মত হেঁটে বড় রাস্তায় গিয়ে বাস ধরবে। মোসাদ্দেক ওনাদের বিদায় জানাতে গেলো। সাথে খুরশিদ ভাই।

অর্ণবের কয়েকটা নাটক আমার দেখা। প্রশংসাসূচক বাক্যে সে কথা গুলো অর্ণবকে বলতেই সে আমাকে ধন্যবাদ জানালো। আমানুল্লাহ কবির কথার পিঠে বলে উঠলেন, অর্ণব নাটক এবং টেলিফিল্মে সুপরিচিত মুখ হলেও মোসাদ্দেক পাশার কোন নাটকে এই তার প্রথম অভিনয়। নিজের মেগা ব্যস্ততার মধ্যেও তার অনুরোধটুকু রাখার জন্য তিনি অর্ণবকে ধন্যবাদ জানান। চা-কফি পর্ব শেষ হবার পর আমরা সবাই নীচে নেমে এলাম। এবার আমানুল্লাহ কবির, অর্ণব এবং চিত্রার যাবার পালা। ওনারা এক গাড়ীতে এসেছেন। যাবেনও এক সাথে।

ওনারা যাবার পর সারা বাড়ীটা যেন হঠাৎ করে ফাঁকা হয়ে গেলো। খুরশিদ সাহেব স্থানীয় কিছু লোকের সাথে টাকা পয়সার লেন-দেন মেটাতে নীচে বসলেন। আমি আর মোসাদ্দেক উপরে উঠে এসে বারান্দায় বসলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক বাতিকে ঘিরে উড়ছে কতগুলো পতঙ্গ। অনেক কথার পর, শেলী ভাবী কি এখনো কবিতা লেখে। আমি প্রশ্ন করি ওকে। হা হা হা করে হেসে উঠে সে। সে যে কবিতা লিখতো, সেটা বোধ হয় ওর নিজেরও মনে নাই। বিয়ের পরের বাস্তব কবিতার ধাক্কায় স্বপ্নের কবিতা কখন যে হাওয়া হয়ে গেছে, আমরা কেউই জানি না। আজ আমার নাটকের শুটিং 'এর শেষ দিন। কতো করে বললাম আসার জন্য। ছেলের স্কুলের প্রোগ্রামের জন্য আসতে পারলো না।

খুরশিদ সাহেব উপরে উঠে এসেছেন। সাথে খাবার টেবিলে পরিচিত হওয়া দুই জন স্থানীয় নেতা। একটু পরে টেবিলে মদের গ্লাস আর কিছু খাবার দিয়ে গেলো বেয়ারা। খুরশিদ সাহেব সবার গ্লাসে পানীয় ঢেলে দিয়ে বললেন, আমাদের প্রোডাকশনের শেষ দিনের শুটিং 'এর নির্ঝঞ্ঝাট সমাপ্তি উপলক্ষে সামান্য আয়োজন। তিনি স্থানীয় নেতাদের মূল্যবান সহযোগিতার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানালেন। সবাই মদের গ্লাস উপরে উঠিয়ে বললো, চিয়ার্স। আমি একটা পানির গ্লাস উঁচিয়ে তাদের সাথে যোগ দিলাম। উপস্থিত সবাই আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। গল্প জমে উঠলো। দ্রব্য মূল্য, দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা, আসন্ন নির্বাচন , তারকা গসিপ - কিছুই বাদ গেলো না।

স্যার, অর্ণব ভাই 'এর সাক্ষাৎকারটা কি পড়ে দেখেছেন? আমাদের গল্পের মাঝখানে প্রশ্ন ছুড়ে দেন খুরশিদ সাহেব। সময় পেলাম কই? প্রশ্নের পিঠে আরেকটা প্রশ্ন মোসাদ্দেকের। একটু পড়ে দেখেন। খুরশিদ সাহেবের কণ্ঠে চাপা বিরক্তির ছাপ। কেন, কি হয়েছে। বলতে বলতে সামনের টেবিলের উপর থেকে সাপ্তাহিক তারকা কুঞ্জ পত্রিকাটা হাতে তুলে নেয় মোসাদ্দেক। পাতা উল্টাতে উল্টাতে পত্রিকার মাঝামাঝি যায়গায় অর্ণবের ছবিতে এসে থেমে যায় ওর হাত।

কেন, কি হয়েছে। ধীরে ধীরে পত্রিকায় চোখ বুলাতে বুলাতে আবার প্রশ্ন মোসাদ্দেকের। দুই পাতার একখান ইন্টারভিউ। আমাদের নাটকের কথা এসেছে মাত্র এক লাইন। আর সারা আর্টিকেলে আপনার নাম কোথাও খুঁজে পেলাম না। খুরশিদ সাহেব উত্তর দেন।

যত সব অকৃতজ্ঞের দল। ঠিক মতো সংলাপটা উচ্চারন করতে পারেনা পর্যন্ত, আবার নায়কের রোল করে! কেউ পাত্তা দেয় না ওরে। কবির ভাই জোর করে ধরে পড়লেন বলে আমার নাটকে চান্স দিলাম। অন্ধকারের দিকে চেয়ে আপন মনে গজগজ করতে থাকে মোসাদ্দেক। হাত থেকে পত্রিকাটা সজোরে ছুঁড়ে মারলো সে। বারান্দার রেলিং 'এর ফাঁক গলিয়ে নীচের অন্ধকারে হারিয়ে যায় সেটা।





সিডনী, ২০-২৪ ডিসেম্বর, ২০১২
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি সামাজিক এবং মানসিক অবক্ষয়ের চিত্রায়ন.... প্রতিটি প্যারায় গল্প বলার দক্ষতার ছাপ পাওয়া যায়...অন্ধকারে চেয়ে থাকা এবং হারিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে .ছোট গল্পের স্বার্খক ফিনিসিং হয়েছে.....সাবের ভাই মুগ্ধতায় মন ভরে গেল গল্প পড়ে.....অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য.....
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১৩
পন্ডিত মাহী গল্পটাকে শুধু গল্প মনে হয়নি, আমাদের জীবনচিত্র নান্দনিক ভাবে উঠে এসেছে। স্বার্থের কারনে কত কিছু হয় এ গল্প তা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। মুগ্ধ হয়েছি মামা।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ পন্ডিত মাহী। শুভকামনা সতত।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩
তাপসকিরণ রায় হ্যাঁ,ভাই! গল্পে দেখছি আপনার হাত বেশ পাকা,লেখালেখি আনেক দিন থেকেই চলছে,তাই তো?আপনার বইটই নিশ্চয় প্রকাশিত হয়ে থাকবে?জানাবেন মশাই,চুপচাপ থাকবেন না।গল্পটি খুব ভালো লেগেছে। আন্তরিক ধন্যবাদ রইলো।
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ তাপস দাদা । আমি তেমন ভালো লিখিনা। তবু, নাড়ির টান বলে কথা। তাই মনে যাই আসে, কাগজে ঢেলে দেই। ঢাকা থেকে আমার "ক্রসফায়ার" নামে একটা উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে ২০১০ সালে। ভালো থাকবেন।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩
তানি হক অনেক দেরিতে সাবের কাকার গল্পটি পড়লাম বলে দুক্ষ প্রকাশ করছি ..খুব ভালো লাগলো কাকা গল্পটি ..বার বার মনে হচ্ছিল যে ..এটা হয়ত সত্যি ঘটনা অবলম্বনে ..ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা আপনাকে ..আমাদের সমাজের বাস্তব একটি কাহিনী তুলে ধরার জন্য ..
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ তানি হক। গল্পটা ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম। তবে, সমালোচনা কাম্য ছিলো। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩
শাহ আকরাম রিয়াদ আপনার গল্প পড়তে বসলে যে বিষয়টি সবসময় খেয়াল করি, এটি পড়া শেষ না হওয়া অবধি আমার আর নিস্তার নেই। বরাবরের মত এটাও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। অসাধারণ ভাবে মানবের একটি কমণ চরিত্র তুলে ধরেছেন। লেখাটি দেরী করে পড়ার জন্য দুঃখিত।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ শাহ আকরাম রিয়াদ। লেখাটি দেরী করে পড়ার জন্য দুঃখিত হবার কোন কারণ নেই। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা কিছুটা হলেও সময় দিতে পারছি। অনেকে জীবন এবং জীবিকার তাগিদে তাও দিতে পারেন না। আর অনেক দুর্ভাগার কম্পিউটারই নেই। শুভেচ্ছা থাকলো।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১৩
Md. Mainuddin সুন্দর একটি গল্প।সরল ও প্রাঞ্জল।খুব খুব ভালো লাগলো আপনার চমৎকার গল্পটি।সুখে ও শান্তিতে থাকুন।।
ভালো লাগেনি ১৮ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ মোঃ মাইনুদ্দিন। পরম করুণাময় আপনাকেও সুখে ও শান্তিতে রাখুন।
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩
বশির আহমেদ আপনার লেখা মানেই অনেক নতুন কিছুর ছোঁয়া । নবীন লেখকদের শিক্ষনীয় কিছু ।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ বশির আহমেদ ভাই। ভালো থাকবেন।
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩
নিলাঞ্জনা নীল এক নিঃশ্বাসে পড়লাম . অর্ণব আমার ভাই এর নাম আর চিত্রা মায়ের ! :)
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ নীল। কি করে তোমরা আবার আমার গল্পে ঢুকে গেলে? তোমার কল্যাণ কামনা করি।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৩
রীতা রায় মিঠু সাবের ভাইয়ের কলম থেকে এমন ভিন্নধর্মী অথচ শতভাগ বাস্তব কাহিণী বের হয়ে আসবে----কীভাবে যেনো ধারণাটি মাথার মধ্যে গেঁথে গেছে। স্যালুট সাবের ভাই। আমি খুব ঈর্ষাকাতর মানুষ, তাই আমিও অন্যের ভালকে খুব বেশীক্ষণ 'ভাল' বলতে পারি না। হা হা হা ১
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ রীতা রায় মিঠু। ঈর্ষায় ঈর্ষায় কাটাকাটি। আমি ১ পেলাম, আপনি শূন্য - হা হা হা। ভালো থাকবেন।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৩
সূর্য অন্যের কবিতায় মেয়ে ভোলানো আর প্রতিষ্ঠিত নায়ককে টমক্রুজ বানানো পরিচালক মোসাদ্দেকরা কখনোই জানতে পারবেনা যে এরা সঠিক জায়গায় নেই। শুধু প্রতারনা করেই এরা "পদ" পাবে আর তা ধরে রাখতেও সচেষ্ট থাকবে। চলমান কলুষতা ঘিরে যে এত সুন্দর গল্প করা যায় তাও আড়াল রেখে সেটা এ গল্প না পড়লে বুঝা যাবে না। অবশ্য অনেকেই গল্পের আসল জায়গাটা ধরতেই পারবে না, আর এখানেই গল্পকারের তৃপ্তী।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ সূর্য। কলুষতা আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে গেছে। এ থেকে নিস্তারের উপায় কি? শুভেচ্ছা থাকলো।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৩

০৭ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪