তখনো সন্ধ্যাবেলা হয়নি। অতিথি পাখি ও শিশুদের হৈ-হুল্লারে মাতাল পরিবেশ। সূর্য ডোবার পালা, মেঘকে সাত রঙে রঞ্জিত করে রেখেছে যেন আকাশ। আর তখন-ই পোস্ট অফিস থেকে ছাইকেলের প্যান্ডেল চেপে সাব্বির নামে একজন লোক আসলেন।
আচ্ছা এটা কি ছয় নাম্বর রোডের পাঁচশত বিশ নাম্বার বাড়ি?
জ্বী। অনেক খোঁজাখোঁজি করে পেয়েছি। এই যে দ্যাখুন সব বাড়ির দরজায় রোডের সাথে ঠিকানার একটি প্লট লাগানো আছে, কিন্তু এই বাড়ির প্লট লাগানো নেই কেন?
অতকিছু জানা নেই ভাই, হয় তো কিছু সমস্যা হয়েছে। ঐ সব না হয় বাদ দেন, বলুন আপনি কার কাছে আসছেন?
আমি রাহাতের সাথে দেখা করতে আসছি। আপনি কি রাহাতকে চিনেন?
রাহাতকে চিনি মানে, আমি রাহাত।
আপনি তাহলে আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন, এখনও নষ্ট করে চলেছেন। জানেন আমি এই সময়তে কত কাজ সেরে ফেলতে পারতাম! রাহাত একটু অবাক হল। আমরা তো বাঙালী তাই না? অকাজে অনেক সময় নষ্ট করতে পারি, আর কাজের সময় আমাদের অলসতা বেড়ে যায়। গ্রামের পাশে-ই তো আমার বাসা। তো শহর আর গ্রামের আনাচে- কোণাচে ঘুরেছেন সমস্যা তো হয়নি, আর একটু অভিজ্ঞতা বাড়লো আর কি। রাহাতকে বলল এসব রঙ- ঢঙের কথা বাদ দেন ভাই। যে অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট নাই, সে অভিজ্ঞতার কোনো প্রয়োজন বটে না। আর সার্টিফিকেট থাকলেও টাকা ছাড়া কাজে আসে না। জানেন আজ আমরা টাকার কাছে অনেকটা বিকিয়ে যাচ্ছি, টাকা ছিল বলেই এই ডাক অফিসে আমাদের মত কিছু লোকের চাকরি হয়। সার্টিফিকেট আগুনে পুড়ে ফেলেছি সেদিন, যেদিন টাকা ছাড়া আমার চাকরি হয়নি।
কথা বলতে বলতে কিছুক্ষণ পর ব্যাগ থেকে নীল ও রঙিন খামে সাজানো দু’টো চিঠি ধরিয়ে দিল। গতকাল আমার আসার কথা ছিল, আসতে পারিনি। খুব ব্যস্ত ছিলাম। আপনার একটি চিঠি এসেছে পরশু দিন, আর একটি কালকে। সাব্বির ভাই বাসা আসেন, বেশি কিছু খাওয়াবো না। কেউ বাসা নেই, নিজ হাতে বানিয়ে এক কাপ লাল চা দিবো। থাক রাহাত ভাই, আমার সময় নেই। অন্য একদিন আসলে খাবো আজ চললাম। মিষ্টি একটু হাসি দিয়ে বিদায় নিলেন।
রাহাত ভাবলো চিঠি মনে হয় বাড়ি থেকে আসলো। অনেকদিন হয়েছে সানজিদার সাথে কথা হয় না। বোকা মেয়েটাকে কত চিঠি দিলাম। চিঠিতে উত্তর দিতে বললাম, কিন্তু আজও চিঠির উত্তর পেলাম না। নাকি অনেকদিন পর আমাকে মনে করে চিঠি লিখেছে! আর একটি মনে হয় মা পাঠিয়েছেন। অনেকদিন মায়ের সাথে কথা হয় না, জানি না মা কেমন আছেন! নাকি আমার কথা ভেবে ভেবে এখনও অশ্রুজলে বালিশ ভিজিয়ে দেন। জানালা খুলে দিয়ে পানের বাটা নিয়ে এখনও আমার অপেক্ষায় রাত্রি জেগে থাকেন। নাকি অনেকটা অভিমান নিয়ে আমার কাছে চিঠি লিখেছেন! ঠিকমত বাড়িতে যাওয়া হয় না। শহরকে প্রবাস বললে কম নয়। বছরে দু’বার কি তিন বার, এর বেশি হয় না। জানি না মা কত ফোঁটা অশ্রু জড়িয়ে চিঠি লিখেছেন। সংসার চালানো কষ্ট, বোন বড় হয়ে গেছে। এ সমাজে বড় বোন টিকিয়ে রাখা কষ্টের ব্যাপার। দেরি হয়ে গেলে চুন- কালি মাখতে হবে। একে একে অনেকটা ইন্টারভিউ দিলাম, কিন্তু একটিতেও তো আমার চাকরি হলো না। শেষের ইন্টারভিউতে দেখি কি হয়, চাকরি হয়ে গেলে কয়েক মাসের ভিতরে বোনটাকে বিয়ে দিয়ে ফেলবো।
রাহাত অনেকটা আনন্দ নিয়ে রঙিন খামের মুখ খুললো। মোড়ানো চিঠি খুলে একটু অবাক হয়ে পড়লো। সেখানে লেখা ছিল- স্যার আপনি ইন্টারভিউতে সবচেয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছন। আপনার এমন অসাধারণ মেধার জন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। আমরা দ্রুত আপনাকে সাদরে আমন্ত্রিত জানাতে চাই। আপনি আগামী মঙ্গলবারে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ এক লক্ষ টাকা নিয়ে আমার সাথে গোপন চুক্তির মাধ্যমে আমাদের অফিসে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ রইল।
এতক্ষণ রাহাতের মুখ খুব হাস্যোজ্জল ছিল। চিঠির দিকে চেয়ে রাহাত কেমন যেন বিস্মিত হয়ে গেল। ক্রমে ক্রমে চারদিকে আঁধার হয়ে যাচ্ছে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে যদিও কিছুটা ভালো লাগার কথা, কিন্তু চিঠি তাকে একবুক অভিমান বাড়িয়ে দিল। আর একটি খাম খুলে তার আর পড়তে ভালো লাগলো না। দিঘির পাড়ে গিয়ে একটু বসলো, আর ভাবতে লাগলো তার বন্ধু রোহানের কথা। এই যে কিছু দিন আগে রোহান একটি চাকরির জন্য আবেদন করলে, তার কাছ থেকে দু’লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছিল। ছেলেটা খুব গরীব ঘরের সন্তান। দারুণ মেধা, কিন্তু রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল। সে টাকা দেওয়ার জন্য এক ভদ্র লোক ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বের হলে তার পিছু পিছু ছুটে এবং কিছু দূর যেতে তাকে ছুড়ি দিয়ে খুন করে টাকার ব্যাগ নিয়ে পালাই। সেখানে দেড় লক্ষ টাকা ছিল। লোকটির সাথে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে পকেট থেকে তার মানি ব্যাগ পড়ে যায়। মানি ব্যাগে তার এনআইডি কার্ড ও পটো কপি সহ পাসপোর্ট সাইজের দু’কপি ছবি ছিল। পরে জনগন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং মানি ব্যাগের ঠিকানা অনুযায়ী তার নামে মামলা হয়। যদিও দু’লক্ষ টাকার ভিতরে পঞ্চাশ হাজার টাকা মাফ পেয়ে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে তার চাকরি হয়, কিন্তু তার নামে মামলা পত্রিকাতে দেখলে অফিস কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
বিভিন্ন চিন্তা রাহাতের বুকে ভর করে ফেলেছে। মা বাবার এত টাকা নষ্ট করে নিজের গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে পড়ালেখা করলাম, কিন্তু তার ফলাফল কি হল? ছোটবেলা থেকে পড়ালেখা না করে যদি কর্মে ঢুকে যেতাম তাহলে আজ এক লক্ষ আর পাঁচ লক্ষ নয় তারচেয়ে বেশি টাকার মালিক হয়ে যেতাম। আমার পিছনে নষ্ট করা মা বাবার টাকাও আজ চৌদ্দ গুণ বেড়ে যেত।
কি করবে ভাবতে পারছে না। আজকে তার এক কলিগের বিয়ের দাওয়াত ছিল, কিন্তু সেখানেও যাওয়া হল না। হয় তো গত মাসের টিউশনির টাকাটা হাতে পেলে সে নিশ্চিত বিয়েতে উপস্থিত হতে পারতো। দিঘির পাড় থেকে রাহাত বাসা চলে আসলো।
একটু আনমনা ভাব। তবুও সে ব্যথা নিয়ে দ্বিতীয় চিঠির মুখ খুলেছে, কিন্তু তার মুখে আনন্দ নেই! খুব হতাশা তাকে ঘিরে ফেলেছে। মোড়ানো চিঠিটা খুলে রাহাত জানতে পারলো-
প্রিয় রাহাত,
আমি সানজিদা। কেমন আছ তুমি সেটা কেউ না জানলেও আমি বেশ ভালো জানি, কিন্তু আমি কতটা ভালো আছি সেটা কেউ না জানলেও তুমি নিশ্চিত জানো। সুখের আর এক নাম অসুখ তা তো বুঝো! যদিও সেটা মনের অসুখ হয়, কিন্তু বনের ওষুধ দিয়ে তার রোগ সাড়ানো যায় না। তুমি অনেক চিঠি দিয়েছো, উত্তর দিতে পারিনি। অনেক কথা জানতে চেয়েছো, বলতে পারিনি। চিঠি লিখেছি ঠিক-ই, কিন্তু চার দেওয়ালের ভিতরে ছাড়া বাহিরে আসার সুযোগ ছিল না। কতদিন লুকোচুরির প্রায়শ্চিত্ব করেছি, তবে মা বাহিরে আসতে দেয়নি। সুযোগ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল বহুদূর। ফিরে না আসার আত্মাহুতি নিয়ে। আজ চিঠি লিখতে বসলাম। বাবা আড়াল থেকে দেখতে পেরেছেন নিশ্চিত। যদি মা দেখে ফেলতেন তাহলে ডাকযোগে চিঠি পাঠানোর সুযোগ আর ছিল না। জানো, এই যে জানালার পাশে দাড়িয়ে কতদিন রাস্তার দিকে চেয়ে চেয়ে সময় কাটিয়ে ফেলেছি, আনমনে তোমার কথা ভেবে ভেবে অশ্রুজলে এই দু’চোখে সাগর বানিয়েছি। একদিন মা’কে বললাম- সুখের কারাগারে বন্দি না রেখে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দাও কূল হারা নাবিকের মত অচেনা পথ খোঁজে নিব। মা রাগান্বিত হয়ে বলল- এই তো আর কয়টা দিন। বাবাকে বললাম- বাবা এতটা কষ্ট দিবে যদি ফাঁসি দেওয়ার সুযোগ দাও না, সাদা কাগজে লিখে যাব আত্মহত্যা করেছি। বাবা অভিমান কণ্ঠে বলল- মা রে যুদ্ধ করতে শিখো, জয় তোমাকে হাত ইশারা দিবে। আর যদি নরম হয়ে পড়ে যাও, তাহলে ভেবে নিও তুমি পরাজয়ের গ্লানি মুঠো ভরে নিয়েছো। বাবা ঠিক-ই বলেছেন- একদিন পরাজয়ের গ্লানি মুঠো ভরে বরণ করে নিতে বাধ্য করলো এ সমাজ! এই তো আর কয়টা দিন। আগামী শুক্রবার আমার গাঁয়ে হলুদ। বলতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে বুঝি! রাগ কর না, তুমি ও তোমার সকল প্রিয়জন আমন্ত্রিত। আসবে এমন প্রত্যাশা রেখে শেষ করেছি। ভালো থেকো।
ইতি,
সানজিদা
অবাক দৃষ্টি দিয়ে রাহাত আকাশের দিকে চেয়ে আছে, তখন গভীর রাত। চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েও পারছে না। নীরব অশ্রুজলে তাকে বুঝে নিতে হয় জীবনের পরিনাম। কলেজ থেকে যে মেয়েটি এতটি বছর অপেক্ষার প্রহর জ্বেলেছে সেও আজ আমার কাছে হেরে গেছে! নাকি আমি তার কাছে হেরে গেছি, বুঝতে পারছিনে!!
দেশ যখন একজন মেধা ও ভালো ছাত্রকে দাম না দিয়ে ইন্টারভিউতে প্রশ্ন পাশ ও ঘুষের কাছে বিকিয়ে যাচ্ছে, তখন কি আর করার আছে; হয় তো অন্যায়কে মাথা পেতে বরণ করে নিতে হয়, নয় তো মাথায় গামছা বেধে লুঙ্গি গোছ মেরে কর্মের জন্য মাঠে নামতে হয়। কিন্তু সেখানেও তাকে মানুষের কুরটনার কথা ভাবতে হয়। যখন নিজের সমাজকে নিজের মেধার সর্বোচ্চ মান দেখানো না যায় তখন সমাজের কাছে নিজেকে মুখ লুকিয়ে হাটতে হয় এবং হেয় মনে হয়।
রাহাত ভাবছে, কি করবে। মঙ্গলবার চলে এসেছে। না পারে কাউকে বলতে, না পারে কাউকে বোঝাতে। সব ব্যথা আত্মগোপন করে বুকে বরণ করে নিতে হচ্ছে তাকে। আত্মাভিমান বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।
সেদিন আকাশে মেঘ ছিল না, ছিল না শ্রাবণের বুকে কোনও বৃষ্টিও। ফাগুনের শুভেচ্ছা নিতে বসন্ত ব্যাকুল। আর রাহাত ব্যাকুল ¯্রােতের জলে পদ্মফুলের মত ভেসে ভেসে বহুদূর হারিয়ে যাওয়ার।
পরেরদিন সকাল এগারটার দিকে ডাক- পোস্টের সাব্বির ভাই সাইকেলের প্যান্ডেল চেপে একটি চিঠি নিয়ে আসলো। ঠিক সেদিনের মত তাকে রাস্তার পাশে পেয়েছে। সাব্বির ভাই রাহাতকে হলুদ খামে সাজানো একটি চিঠি দিয়ে চলে গেলেন। রাহাত চিঠির খাম খুলে দেখে তার বন্ধু সাজিদ তাকে চিঠি লিখেছে। সাজিদ রাহাতের কাছে কখনও নিজের কথা গোপন রাখেনি। আজও সে রাখতে চায়নি। পুরো চিঠি পড়ে রাহাত জানতে পারলো সাজিদের চাকরি হয়েছে। রাহাতকে মিষ্টির দাওয়াতও দিয়েছে, সে সাথে তাদের বাড়িতে কয়েকদিন বেড়ানোর জন্য। চিঠির এক পর্যায়ে লিখেছিল- চাকরি নিয়েছি সেটা তো খুব খুশির কথা, কিন্তু এক-ই সাথে আমাকে দু’টো অপরাধ করতে হল।
এই তো কিছুদিন আগে পরিবারের সম্মতিতে আমাকে বিয়ে করতে বলে। আমি অনেকটা না করলেও আমাকে মাথা পেতে বরণ করে নিতে হয়েছে। মেয়েটি ছিল গরীব ঘরের। মা- বাবার সম্পদ বলতে তেমন কিছু নেই, শুধু কয়েক গন্ডা জমি আছে। সে সব জমি বিক্রি করে আমাকে যৌতুক দেয়। এমন কি তাদের ভিটে- মাটিটুকুও বিক্রি করে ফেলেছে। আর আমি নিদারুণ মহা উৎসবের সাথে আমার স্ত্রীকে বাবার সংসারে ঠাই দিয়েছি। অথচ আমি একটু ভাবিনি যে, আমার স্ত্রী’র মা বাবা কোথায় থাকবেন! সে যৌতুকের টাকা দিয়ে পরে আমাকে চাকরি নিতে হয়েছে। আগে তোকে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু দেশের রাজনৈতিক হট্টগোলের কারণে সে চিঠি আর তোর কাছে পৌছলো না। সে চিঠিতে তোকে বিয়েরও দাওয়াত দিয়েছি, কিন্তু তখনো আমার চাকরি হয়নি। অতঃপর যৌতুকের টাকা ঘুষ দিলে আমার চাকরি হয়।
আরও একটু ক্ষোভ বেড়ে গেল রাহাতের। ক্রমে ক্রমে নিজেকে বুঝাতে পারছে না। বুঝাতে গেলেও কিসে যেন ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। সেই ধাক্কা খেয়ে তাকে আবার দাড়াতে হয়। তাকে মনে করে দেয় পুরনো স্মৃতি, পুরনো কত কথা। ছোটবেলা পড়তে ইচ্ছে করতো না। বাবা বলতো- পড়! ভালো করে পড়!! পড়ার মত পড়লে মানুষ অনেক বড় হতে পারে। অনেক বড় বড় ডাক্তার, বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার, বড় বড় আইনের লোক হতে পারে। তখন বাবার মুখে চুমু খেয়ে বলতাম- সত্যি নাকি বাবা? বাবা বুকের ভিতর ঝড়িয়ে ধরে বলতো- হ্যা সত্যি। দেখেছিস, আজ আমি পড়ালেখা না করে কতটা হেরে গেছি! আর মা টেবিলের পাশে বসে বসে মাথা তোষামদ করে বলতো- বাবা রে, মনের মত করে পড়ালেখা কর। একদিন তুই সমাজ পরিচালনা করবি, তুই মানুষের সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতে পারবি। তবে তোকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। আর আজ আমি ভাবছি, বাবা পড়ালেখা না করে হেরে গেছেন, নাকি আমি পড়ালেখা করে হেরে গেছি! সম্ভবত বাবা হেরে যাননি, বরং আমিই হেরে গেছি। কিন্তু মায়ের কথা-ই ঠিক আছে, আমি হেরে যায়নি। আমাকে আরও কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।
অতঃপর রাহাত ভাবছে মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি, আমাকে বাঁচতে হলে যুদ্ধ করতে হবে। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে খাটি হতে হবে। না হয় সমাজের বিবেকের কাছে হেরে গেলাম, দেশের ঘৃণিত কর্মের কাছে হেরে গেলাম। না হয় ঘুষের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিতে পারিনি বলে সেখানেও হেরে গেলাম, তবুও আমার বিবেকের কাছে আমি এখনো একজন মানুষ। দেশ, সমাজ আমাকে মূল্য দেয়নি তাতে কি, আমি তাদের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। না হয় সেদিন দেশের মানুষ, সমাজের মানুষ বুঝবে আমি কতটা তাদেরকে চেয়েছি। আজ থেকে আমি আবার কঠিন পরিশ্রমে যোগ দিবো।
দিন যায় আর রাহাত কঠিন পরিশ্রমে যোগ দেয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রাহাত অনেক কষ্টের বিনিময়ে অনেক ধন সম্পদের মালিক হয়। এর ভিতর দিয়ে কত শুক্রবার আর কত সানজিদা আসলো আর গেলো, কিন্তু কখনও তাদের দিকে মুখ ফিরে দেখেনি। ঠিক একদিন জীবনের আটাশটি বছর পেরিয়ে এলে সরকারি এক কলেজে তার চাকরি হয়। সেদিন যদিও তার চাকরির প্রয়োজন হয়নি, কিন্তু দেশ আর সমাজকে সচেতন করতে তাকে চাকরিতে যোগ দিতে হয়। যাতে মানুষ বুঝে, শিক্ষা কখনও মানুষকে হেরে যেতে শিখায় না; যুদ্ধ করতে শিখায়, পরাজয় বহণ করেও বিজয়ের জন্য আর একবার প্রস্তুতি নিতে শিখায়। চেষ্টা করতে করতে ঠিক একদিন বিজয় হাতছানি দিয়ে ডাকে।