সারভেন্ট টয়লেট

ভৌতিক (সেপ্টেম্বর ২০১৭)

সাইফুল বাতেন টিটো
  • ১৫
আমার বিয়ের দেড় বছর পরের কথা। ২০১৬’র জানুয়ারী প্রমোশন পেয়ে আমার পোষ্টিং হলো কারওনার ব্রাঞ্চে। তখনও আমাদের বাসা মিরপুর। বেতন কম বলে বড় বাসা নিতে পারিনি। বিয়ের পর থেকেই সাবলেট আছি। জেসমিন প্রতিদিন বাসা ছাড়ার জন্য ট্যা ট্যা করে। অফিস থেকে প্রোমোশন লেটার এনে জেসমিনের হাতে দেয়ার পর খুলে পড়ে বলল ‘এবার তাহলে বাসাটা পাল্টাই চলো।’
আমিও ভাবলাম আর কত? বেতন কিছু বেড়েছে, ভালো পদ হয়েছে। এখন ঘরে নতুন অতিথি আসার সময়। নাহ্ বাসাটা এবার পাল্টাতেই হবে। দুই তিন দিন ধরে আলাপ-আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বাসা নেব রামপুরা বনশ্রী। অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম দুটি কারণ হলো অল্প টাকায় বড় এবং ভালো বাসা আর দ্বিতীয় কারণটা হলো রামপুরা ব্রিজ থেকে মাত্র ৬/৮ মিনিটে কারওয়ান বাজার পেট্রো বাংলার সামনে নামা যায়। ফেব্রুয়ারী মাসের ২৩ তারিখে আমরা একটা বাসা দেখে অ্যাডভান্স করে ফিরলাম। মার্চের এক তারিখে উঠব। ঐ দিন আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। দুজনের সংসারে মালপত্র বলতে তেমন কিছুই নাই। দুটি ভ্যানে করে আমরা সবকিছু নিয়ে এসে বিকেলের দিকে বাসায় উঠে গেলাম। বেশ বড় বাসা। তিন বেড, ড্রইং, ডাইনিং, দুটি বাথরুম, বিশাল বড় রান্নাঘর। ভাড়া মাত্র আট হাজার টকা মাসে। মাস্টার বেডের সাথে বেশ বড়সড় ঝক ঝকে তকতকে বাথ রুম দেখে জেসমিন তো খুশিতে সোল খান। আমাদের অল্প কয়েকটা জিনিস পুরো ঘরে রাখতে গিয়ে দেখলাম আমরা একটা রুমই ভরতে পারছিনা। জেসমিন লিস্ট করতে বসল কি কি কিনবে এই জন্য। রাতে আমরা বনশ্রীতে একটা রেস্টুরেন্টে খেলাম। আমরা বাইরে খেতে গেলে চা কফি খাই না। জেসমিন এতো ভালো বানায় যে আমি অফিসেও ওর বানানো চা ফ্লাস্কে করে নিয়ে যাই। বাসায় ফিরে কাপড় চোপড় পাল্টে জেসমিন বলল ‘চা খাবে না কফি?’
‘তোমার যেইটা ইচ্ছা।’
আমি অফিসের দেয়া নতুন ট্যাবে পত্রিকা পড়ছিলাম এমন সময় জেসমিনের ডাকে আমার মনোযোগ ছুটে গেলো।
‘এদিকে আসো তাড়াতাড়ি...’
নতুন বাসা, কোথা কিছু পড়ে গিয়েছে কিনা বা ছুটে গিয়েছে কিনা বা কোন দূর্ঘটনা ঘটেছে কিনা এই ভেবে আমি ছুটে গেলাম। আমার বউ কিচেনের দরজায় সহাস্যে দাঁড়িয়ে বলল‘একটা ম্যাজিক দেখে যাও।’
‘কিসের ম্যাজিক?’
‘ভিতরে আসো।’
আমি ভিতরে গিয়ে দেখি কিচেনের যে দরজা তার পাশে খুবই সরু একটা গলি চার পাঁচ হাত লম্বা। গলির শেষে একটা দরজা। আগে সেখানে কয়েকটি খালি কার্টুন ছিলো বলে দরজাটা খেয়াল করিনি। আমি স্ত্রীর সাথে রসিকতা করে বললাম
‘কি ওটা গোপন কুঠুরি? ধন ভান্ডার নাকি?’
‘আরে নাহ, মনে হয় সারভেন্ট টয়লেট।’
‘তাতে তুমিএত খুশি হচ্ছ কেন? আমরা দুজন মানুষ তিনটা টয়লেট দিয়ে কি করব?’
‘না মানে কতো কম টাকায় কত্ত সুন্দর আর ফ্যাসেলিটি সহ বাসা পেয়েছি আমরা, তাই না?’
বেশ চমৎকার বাসা। আমি জেসমিন দুজনেই খুব খুশি। নিয়মিত পানি থাকে। এদিকটায় তেমন লোডশেডিং হয় না। এই বাসাটা পাওয়ার জন্য নিজেই নিজের প্রশংসা করছি মাঝে।
‘আগে খুলে দেখ, টয়লেট বাথরুম না হয়ে আন্য কিছুও তো হতে পারে।’
‘তুমি এসে একটু চেষ্টা করে দেখ না... আমি কয়েকবার ট্রাই করেছি খুলতে পারছি না’
আমি আমার বউকে পাশ কাটিয়ে ছোট্ট ব্রাকেটের মতো হাতল ধরে টান দিলাম। খুলল না। কোথাও কোন হুড়কো বা সিটকানিও নেই। মনে হলো পেরেক মেরে দরজাটা পারমানেন্টলি লাগিয়ে দিয়েছে। আমারা চা-কফি খেয়ে সেদিন ঘুমিয়ে পরলাম।
দিন পনের পরের কথা। লাঞ্চের কিছু আগে বউ ফোন করেই বলল ‘শোন খুলে ফেলেছি...’
‘কি খুলে ফেলেছো? হাপাচ্ছ কেন তুমি জেসমিন?’
‘সারভেন্ট টয়লেট, সারভেন্ট টয়লেটটা খুলে ফেলেছি’
‘ও, কি দেখলে’
‘যা ভেবেছিলাম তাই, সারভেন্ট টয়লেট’
‘যাক, তা কিভাবে খুললে?’
‘তুমি যে বলেছিলে না পেরেক দিয়ে আটকানো, ওটা পেরেক দিয়েই আটকানো ছিলো।’
‘তা তো বুঝলাম, খুললে কিভাবে সেটা বলো।’
‘দারোয়ানকে ১০০ টাকা দিয়ে খুলিয়েছি’
‘ওরে কৌতুহল তোমার.... তা কি এমন ধন রত্ন পেলে সারভেন্ট টয়লেটে?’
‘কিছুই না, তুমি বাসায় আসবা কখন?’
‘কখন আর আসব, ঐ পৌনে ছয়টা ছয়টার দিকে...’
‘আজ একটু আগে আগে আসতে পারবে না?’
‘কেন জেসমিন? কোন সমস্যা?’
‘না, ঠিক আছে রাখলাম’
আমি চেষ্টা করলাম একটু আগে আগে বের হতে। তার পরও বাসায় পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে পঁচটা বেজে গেল। বাসায় ঢোকার সময় দেখি আমাদের গেটে নতুন দারোয়ান বসা। সে নাকি দারোয়ানের ছোট ভাই। দারোয়ান ছুটি টুটি গেলে ও বদলি ডিউটি করে।
দরজা নক করার সাথে সাথেই খুলো দিলো জেসমিন। মনে হলো সিটকানিতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি জেসমিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার মুখ একদম মরা মানুষের মতো ফ্যাকাসে। চোখ মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ স্পষ্ট। যে কেউ দেখলে আগেই আমার মতো জিজ্ঞেস করবে ‘কি হয়েছে?’
‘আগে জামা কাপড় পাল্টাও হাতমুখ ধো তারপর বলছি।’
কিন্তু আমি জামা প্যান্ট পাল্টাতে পাল্টতেই জেসমিন বলা শুরু করল ‘শোন কি হয়েছে, তুমি যাওয়ার পর আমি উঠে থালা বাসন ধুইলাম, কিছু সময় টিভি দেখলাম। কিচেনে গিয়ে দরজাটার দিকে তাকিয়ে আমার মনের মধ্যে আবার কৌতুহল চাপল। আমি আবার হাত দিয়ে বেশ কয়েকবার টান দিলাম, ধাক্কা দিলাম। বটি নিয়ে এসে ফাঁকা দিয়ে ঢুকিয়ে চাড়ি দেয়ার চেষ্টা করতেই খুট করে বটির মাথা ভেঙ্গে গেলো। আমি বিরক্ত হয়ে ক্ষান্ত দিলাম। ঠিক এমন সময় শুনলাম ভিতরে কিসের যেন একটা শব্দ হলো। আমি একটু চমকে গেলাম। আমার মাথায় আরো কৌতুহল চেপে বসল। আমি ইন্টারকমে দারোয়ানকে আসতে বললাম। বললাম দরজাটা খুলতে চাই। ও কতক্ষণ চেষ্টা করে বটির মাথা আরেকটু ভাঙ্গল। শেষে দেখল দরজার পাশ দিয়ে দরজার ফ্রেমের সাথে আড়া আড়ি ভাবে চারটা পেরেক মারা। ও আমাকে বলল মোড়ের মাথা থেকে কাঠ মিস্ত্রির শাবল এনে খুলতে পারবে। আমি ওকে একশ টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। ও শাবল নিয়ে এসে একটু চাড়ি দিতেই পেরেক গুলো আলগা হয়ে এলো। এরপর পেরেকগুলো তুলে ও হাত ধরে দরজায় টান দিলো। কিন্তু দরজা খুলল না। অথচ আর কোথাও কোন পেরেক নাই তা খুজে টুজে দেখেছে। আমিও টান দিলাম, মনে হলো দরজাটা ভেতর থেকে কেউ টেনে ধরেছে। বাহির থেকে টান দিলে একটু স্প্রীং ভাব আসে। ও আমাকে বলল -ভাবী আপনি সরে যান। মনে হয় ভিতর থেকে রশি বা কিছু দিয়ে টানা দিয়ে রেখেছে। আমি পা বাজাইয়া টান দেই। আমি সরে যাওয়ার পর ও দুই হাত দিয়ে হাতল ধরে দেয়ালে পা লাগিয়ে টান দিতেই ঝট করে খুলে গেলো দরজাটা। ভিতর থেকে একটা হীম বাতাস তীব্র বেগে বেরিয়ে এলো। পাশ থেকে কোন মানুষ চলে গেলে যে রকম বাতাস হয় সেই রকম বাতাস কিন্তু অনেক জোড়ে। এতই জোড়ে যে সেই বাতাসের বেগে দারোয়ান ফ্লোরে পড়ে গেল। আমি ভেতরে তাকিয়ে দেখি খুবই কম আলোয় একটা লো প্যানের নোংড়া টয়লেট। পাশে একটা বদনা আর একটা পুরানো ব্রাশ। কিন্তু কোন ভেন্টিলেশন সিস্টেম নেই। কোন লাইট নেই। টয়লেটটা বেশ লম্বা। মধ্যে অন্ধকার। কেমন একটা ইঁদুর পঁচা গন্ধ আসছিলো টললেটটা থেকে। আমি একটা লাইট এনে দিয়ে দারোয়ানকে লাগাতে বললাম। ও লাইট লাগিয়ে সুইচ দিতেই জলে উঠল লাইট। পরিস্কার হয়ে গেলো বাথরুমের ভিতরটা। কিন্তু মিনিট খানেক পরেই দুই তিনবার ফ্লিক করে লাইটটা নিভে গেলো। দারোয়ান চেক করে দেখলো কেটে গেছে। আমি ওকে আবার একটা লাইট এনে দিলাম। আবারও একই ঘটনা ঘটলো। এক সময় টের পেলাম গন্ধটা ক্রমশ বাড়ছে। দারোয়ানকে বললাম দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে কার্টন গুলো আগের মতো সামনে টেনে দিতে। তাদে যদি গন্ধটা করে। দারোয়ান চলে যাওয়ার পর আমি রান্নার কাজে মন দিলাম। কিন্তু আমার হঠাৎ করে মনে হলো এই বাসায় আমি ছাড়া মনে হয় আরো কেউ একজন আছে।’
এই পর্যন্ত বলে জেসমিন একটু থামলো। আমি অবাক হয়ে বললাম ‘কি বলছ তুমি জেসমিন?’ আমি খুবই আশ্চর্য্য হলাম ওর এমন কথা শুনে। ‘কেন তোমার এমন মনে হলো বলো তো?’
‘আমি আসলে তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না বিষয়টা। কেমন একটা অসস্তিকর ফিলিং। মনে হচ্ছে কেউ তাকিয়ে আছে আমার দিকে।’
‘কি বলছ এসব?’
‘হ্যাঁ। আমি তোমাকে বানিয়ে বলতে যাব কোন দুঃখে? তারপর কি হয়েছে শোন। বিকেল থেকে দারোয়ানের ডাইরিয়া শুরু হয়েছে। অবস্থা খুবই খারাপ। আইসিডিডিআরবিতে নিয়ে গেছে বাড়ি ওয়ালার ভাইপো পাভেল।’
‘বলো কি?’
‘হ্যাঁ।’
‘চলো তো বাথরুমটা গিয়ে দেখি।’
গিয়ে দেখি দরজার সমানে আবার সেই কার্টুনগুলো রাখা। আমি সব সরিয়ে হাতল ধরে টান দিতেই দরজাটা খুলে গেলো। একটা ভ্যাপসা পঁচা গন্ধ এসে লাগলো নাকে। কোন প্রাণী মরে পঁচে যাওয়ার পর রোদে শুকালে যেরকম একটা কড়া পঁচা গন্ধ আসে সেরকম। ভিতরটা এখন পুরোপুরি অন্ধকার। আমি আমার মোবাইলের টর্চ বের করে ভিতরে মারলাম। ও যেমন বলেছে তেমন-ই। আমি ভিতরে ঢুকতে যাব এমন সময় বন্ধ হয়ে গেলো মোবাইলের লাইটটা। আবার চেষ্টা করলাম জ্বালাতে খোনে টর্চের সুইচ অন দেখাচ্ছে বাট জ্বলছে না। তার পরও আমি বাথরুমটার মধ্যে ঢুকলাম। আমার কাছে তেমন কিছু মনে হলো না। আমি বেরিয়ে এসে দরজাটা বাহির থেকে হুরকো লাগিয়ে সামনে কার্টুনগুলো টেনে দিলাম। সন্ধায় আমরা একত্রে চা বিস্কিট খেলাম। রাতে আমরা দুজন বসে টিভি দেখছি। আমি রিমোর্ট হাতে চ্যানেল পাল্টে চলেছি। এক সময় ব্লাংক স্ক্রীন চলে এলো, কোন শব্দ আসছে না। ঠিক এমন সময় শুনলাম কিচেনে পানি ফোটার শব্দ। আমি চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে জেসমিনকে বললাম ‘পানি কতক্ষণ আগে গিয়েছো? হয়েছে না? হয়ে গেলে চুলাটা নিভিয়ে দাও।’
‘পানি গরম দিয়েছি তোমাকে কে বলল?’
‘চুলায় পানি ফোটার শব্দ হচ্ছে যে...’
‘কোথায়? কই?’ আমি টিভির সাঊন্ড মিউট করে ওকে বললাম ‘শোন......’
এবার জেসমিন আমি দুজনেই শুনলাম। পানির বলক ওঠার শব্দ। জেসমিন শব্দ শুনে বলল
‘তাইতো.......’ বলে ও খাট থেকে নামলো। আমিও ওর পিছনে পিছনে রওনা দিলাম। কিচেনে যাওয়ার সময়ও আমরা শব্দ শুনতে পেলাম। আরো স্পষ্ট। পানি যদি অনেক বেশী ফুটে যায় তখন যে বলোকের দমকে পানি চুলায় খানিকটা পড়ে ফচফচ শব্দ হয় আমরা সেটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু কিচেনে গিয়ে আমরা দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেলাম। কোথাও কিছু নেই, কোন শব্দ নেই। আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না। দুজনেই কি তবে ভুল শুনেছি? তা কি করে সম্ভব? আমরা ফিরে এসে আবার টিভি দেখতে বসলাম। কিন্তু কান রইলো কিচেনের দিকে। কিন্তু যতক্ষন যেগে ছিলাম ঐ রাতে আর কোন পানি ফোটার শব্দ পাইনি। পরের দিন সকাল থেকে শুরু হলো এক ভয়াবহ উৎপাত। সকাল বেলা নাস্তার টেবিলেই আমরা সার্ভেন্ট টয়লেটের সেই পঁচা গন্ধ পেতে শুরু করলাম। কোন প্রাণী পঁচা গন্ধ ঠিকই কিন্তু এটা একটু অন্য রকম। বেলা বাড়ার সাথে সাথে গন্ধ আরো বাড়তে থাকলো। আমি অফিসে চলে যাওয়ার পর গন্ধ এতো বেশি বড়লো যে আমার স্ত্রী বাসায় তালা দিয়ে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়ে বসেছিলো। কিন্তু সন্ধার দিকে বাসায় এসে দুজন মিলে একত্রে ঢুকলাম। আশ্চর্য্য কোন গন্ধ তো নেই ই বরং কি একটা সুগন্ধ বিরাজ করছে ঘর জুড়ে। তবে সুগন্ধি ব্যাপারটাও আমাদের কাছে ভালো লাগেনি। রাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সামনের মাসেই এ বাসা পাল্টাবো। এখানে অস্বাভাবিক কিছু রয়েছে যা আমাদের চিন্তার বাইরে। আমি নিজে ভূত প্রেত বিশ্বাসও করিনা আবার অবিশ্বাসও করিনা। বিশ্বাস করিনা কারণ নিজের চোখে কোন দিন কিছু দেখিনি বলে। আর অবিশ্বাস করিনা কারণ এত লোক যে বলে তারা কি কোন প্রকার কারণ ছাড়া বলে? রাতে আমরা খাবার দাবার খেয়ে যখন টিভি দেখতে বসরাম তখন আবার গত রাতের মতো পানি ফোটার শব্দ আসতে লাগলো। এবার আমার আর জেসমিনের সত্যিই ভয় লাগা শুরু করল। আমি উঠে কিচেনে যেতে ধরলে জেসমিন আমার টি-শার্ট খামচে ধরে বলল ‘আমি একা থাকতে পারবনা।’ আগত্যা দুজন মিলেই গেলাম। গিয়ে দেখি আবারও সেই একই দৃশ্য, কোথাও কিছু-ই নেই। নেই কোন শব্দ। আমরা আবার টিভি দেখা শুরু কললাম। কিছুক্ষণ পর আবার শুরু হলো। খুব অদ্ভুৎ ব্যাপার কি জানেন? পানি ফোটার শব্দ ও যে অত জোরে হতে পারে তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। ধীরে ধীরে শব্দ বাড়তে থাকলো তো বাড়তেই থাকলো। এক সময় অসহ্য হয়ে উঠলো সে শব্দ। আমাদের প্রচন্ড ভয় লাগা শুরু করলে আমরা আমাদের রুমের দরজা লাগিয়ে দিলাম। জেসমিন প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। ভয় আমারও করছে। কিন্তু আমি ভয় প্রকাশ করলে জেসমিন আরো ভয় পেয়ে যাবে বলে আমি আমার ভয়কে চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। আস্তে আস্তে এক সময় শব্দ একেবারে থেমে গেলো। ঘরের অবস্থা স্বাভাবিক। এক সময় আমরা শুয়ে পড়লাম। যত ভই থাকুক আর যাই থাকুক সারাদিন পরিশ্রম করার পর শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দেয়ার পর ঘুম চলে আসে। আমি অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম। জেসমিন কখন ঘুমিয়েছে জানি না। হঠাৎ জেসমিনের ধাক্কায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি উঠে বসলাম। হতভম্ব জেসমিন বলল ‘তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছো?’
‘কই নাতো।’
‘একটু খেয়াল করে শোনার চেষ্টা করো।’
‘কি হয়েছে বলো। বললেই তো হয়।’
‘তুমি শুনছো কিনা তাই বলো’
আমি কান পেতে শুনলাম আমাদের রুমের বাহির থেকে একটা ক্ষীণ কান্নার শব্দ আসতে লাগলো। একটা শিশুর কান্না। শুনলে মনে হয় শিশুটি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। একবার মনে হলো আমাদের রুমের সামনে, একবার মনে হলো কিচেনে। আবার মনে হলো অন্য কোথাও। বিষয়টি কি দেখার জন্য আমি রুমের বাইরে যেতে চাইলাম। জেসমিন আমাকে কিছুতেই যেতে দিবে না। মোবাইলে দেখলাম রাত তিনটা ঊনিশ। দিনের আলো ফুটতে এখনও বেশ দেরী। এরকম হলে এই বাসায় আর থাকাই যাবে না। ওটা আমাদের কোন ক্ষতি না করুক কিন্তু আমরা তো মানুষ। আমাদের মস্তিস্ক এসব নেয়ার জন্য একদম প্রস্তুত না। নিজেদের অজান্তেই দুজন দুজনকে জড়িয়ে আমরা কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি। ঘুম ভেঙ্গে দেখি পুরো পরিস্থিতি এক দমই স্বাভাবিক। কোথাও কোন সমস্যা নাই। সবকিছু ঠিক ঠাক। দেখলাম সাড়ে দশটা বাজে। আমার অফিস থেকে চৌত্রিশ বার কল করেছে জি.এম স্যার। আমি কল ব্যাক করে স্যারকে সব খুলে বললাম। স্যার শুনে খুবই আশ্চর্য্য হলেন। বললেন বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলতে। এগারটার দিকে আমি গেলাম বিষয়টি নিয়ে বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলতে।
বাড়িওয়ালা থাকে দোতলায়। বাসার সমানে কলাপসিবল গেট দেয়া তার পর মোটা পুরু কাঠের দরজা। সেই দরজায় দুই ধরনের এ্যাটাস্ট লক, দুইটি হুড়কো, কি আছে বাড়িতে? তাদের আচার আচরণ খুবই রহস্যময় মনে হলো। বাসায় কোন পুরুষ মানুষ নাই। আমরা কলিং বেল দেয়ার অনেক পরে ভিতর থেকে জানতে চাইলো আমরা কারা। পরিচয় দেয়ার পর ২৩/২৪ বছরের কাজের মেয়ে উঁকি দিলো দরজার ফাঁক দিয়ে। দরজার সাথে একটা সিকল মতো ঝুলে আছে মেয়েটির মাথা বরাবর। ‘কি বলবেন বলেন...’ মেয়েটি ঐ ফাঁকা জায়গাটুকু থেকেই বলল।
‘বাসায় কেউ নেই?’ জানতে চাইলাম আমি। মেয়েটি খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলল ‘খালুজান তো বাসায় নাই।’
‘কখন আসবে?’
‘সে তো দেশের বাইরে।’
‘আর কেউ নেই?’
‘খালাম্মা আছে সে অসুস্থ।’
‘আর কেউ নেই।’
‘না।’
‘কিন্তু একটু জরুরী কথা ছিলো যে...’
‘কি কথা? আমারে কন।’
‘তোমাকে বলা গেলে তো বলতাম-ই। অনেক কথা। খালুকে বা খালাকে বলতে হবে। তাদের ছেলেমেয়রা হলেও চলবে।’
‘তার এক ছেলে অস্টুলিয়া তাহে আর মেয়ে অসুস্থ।’
‘খালাও অসুস্থ?’
‘জে’
এমন সময় হঠাৎ ঘরের মধ্যে একটা মেয়ের আর্তনাদ আমাদের কানে এলো।
‘তাহলে কথা বললে কি তোমার সাথেই বলতে হবে?’
‘হ। আপনেগো বাসায় কোন সমস্যা হইলে খালাম্মায় আগামী মাসে বাসা ছাইরা যাইতে কইছে।’
‘তাই নাকি?’
‘হ।’
‘খালাম্মার সাথে একটু কথা বলা যাবে না?’
‘আচ্ছা খারান, দেহি।’
মেয়েটি চলে যাওয়ার পর আমরা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম। আবার হঠাৎ শুনলাম একটা মেয়ে কন্ঠ প্রচন্ড জোড়ে চিৎকার করে বলছে ‘তালা খুলে দে নইলে এখনই গায়ে আগুন ধরিয়ে দেব।’
কাজের অল্প সময় পরেই মেয়েটি ফিরে এসে জানালো ‘আফনাগো কাইলকা আইতে কইছে। খলাম্মার গায়ে জ্বর ১০২।’
আমরা বাসায় ফিরে এলাম। বাসা একদম ঠিক ঠাক। কোথাও কোন সমস্যা নেই, নেই কোন দুর্গন্ধ। আজ যেহেতু আমি আর অফিসে যাব না জেসমিন চেষ্টা করছে ভালোমন্দ কিছু রান্না করার। রেজালা আর পোলাও আমার খুব পছন্দ।
আমরা আড়াইটার দিকে খেতে বসলাম। জেসমিনের রান্না অত্যন্ত চমৎকার। প্রথমে আমি বেগুন ভাজা দিয়ে কয়েক লোকমা খাওয়ার পরে জেসমিন আমার প্লেটে রেজালা তুলে দিলো। সুন্দর গন্ধে আমার ক্ষুধা আরো বেড়ে গেলো। আমি ঝোল দিয়ে খেয়ে মাংস সহ এক লোকমা ভাত মুখে দেয়ার সাথে সাথে হড়হড় করে বমি করে দিলাম। জেসমিনও বমি করে দিলো। মাংসের টুকরা দিয়ে ইদুর পঁচা গন্ধ আসছে। আমরা দুজনেই ভিষন ভড়কে গেলাম। খাবার টেবিলে ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম আমি। জেসমিনের বমি থামছেইনা। বিকাল চারটা পর্যন্ত জেসমিন নয়বার বমি করার পর আমি আমার ডাক্তার বন্ধু আরিফকে ফোন করলাম। ও যা বলল তাতে খুশিই হলাম। জানালো নতুন গাড়ী কিনেছে আমাদের অসুবিধা না থাকলে বাসায় আসতে চায়। এমন সময় যদি ডাক্তার বন্ধু বাসায় আসতে চায় তাহলে কি আর কেউ না করে? সাড়ে ছয় টার দিকে আরিফ তার রিকন্ডিশন টয়োটা এক্স কারিনা থেকে নেমে আমাকে ফোন দিলো। আমি তিনতলায় উঠে আসতে বললাম। আরিফ এসে জেসমিনের পাল্স, ব্লাডপ্রেসার ইত্যাদি চেক করে বলল শরীল দুর্বল। এছাড়া আর কোন সমস্যা না। এখুনি কিছু খাওয়াতে হবে। আমি পুরো সমস্যাটা ওকে বললাম। ও শুনে তেমন গা করল না। নানা সাইকোলজিক্যাল বায়োলজিক্যাল যুক্তি টুক্তি দেখালো। শেষে জেসমিনকে ওষুধ কোম্পানীর ফ্রি দুটো বমির ট্যাবলেট দিয়ে যেতে উদ্যত হচ্ছিল তখন ওকে সব খুলে বললাম। সারভেন্ট টয়লেটের দরজা খোলা থেকে আজ পর্যন্ত। এসবের অনেক কিছুর ব্যাখ্যা সাইকোলজিক্যাল না দিতে পেরে শেষ মেস বলল ‘আমি তোর ঐ টয়লেট টা দেখতে চাই।’
জেসমিনের দুর্বল নিষেধ থাকা সত্ত্বেও আমি আরিফকে নিয়ে কিচেনের দিকে রওনা হলাম। টয়লেটের দরজার সামনে থেকে খালি কার্টুনগুলো সরিয়ে টয়লেটের দরজার হুড়কো খুলে হাতল ধরে টানদিতেই দরজা খুলে গেলো। সাথে সাথে আমরা নাক চেপে ধরলাম। তীব্র মাংশ পঁচা গন্ধ মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়লো কিচেনে। আরিফ নাক চাপা অবস্থায়ই বলল ‘এ এই দুর্গন্ধ এখানে আসলো কোত্থেকে?’
‘আমি কি করে বলব? এটা কিসের দুর্গন্ধ?’
‘তুই চিনিস না এই গন্ধ?’ আরিফ জানতে চাইলো আমার কাছে।
‘ইদুর বিড়ার পঁচা গন্ধ ছাড়া আর কি?’
আরিফ নাক চেপে ধরে আমাকে ড্রইং রুমে যাওয়ার জন্য টান দিলো। আমি টয়লেটের দরজাটা লাগিয়ে ওর পিছনে পিছনে এসে যা শুনলাম ভয়ঙ্কর! আমরা বুঝতে পারছিলাম না যে কত বড় ভয়ঙ্কর বাস্তবতা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি নাকে থেকে হাত সরিয়ে টের পেলাম গন্ধ আমার সারা ঘরে ছড়িয়েছে। আরিফ আমাকে ড্রইংরুম থেকে টেনে পাশের রুমে নিয়ে বলল ‘দরজাটা লাগা।’
’কেন?’ আমি বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলাম।
আগে লাগা তারপর বলছি। আমি দরজা লাগিয়ে ওর কাছে যেতেই ও গলা খাদে নামিয়ে বলল ‘তুই কি এই গন্ধ সত্যিই চিনিস না নাসির?’
‘চিনি মানে প্রাণী পঁচা গন্ধ, এ ছাড়া আর কি?’
‘প্রাণী পঁচা তো ঠিক আছে। কিন্তু কোন প্রাণী সেটা বুঝতে পারছিস?’
‘নাহ্’
‘আরে বলদ এটা মানুষ পঁচা গন্ধ।’ আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য জাস্ট জমে গেলাম ওর কথা শুনে। সম্বিত ফিরে পেয়ে বুঝতে পেলাম আমার জিভ ভারী হয়ে গেছে। আমি আরিফকে কি বলব বুঝতে পারছি না। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল ‘কারো লাশ আছে লুকানো আছে ঐ টয়লেটে।’
‘কিক কি কি বলছিস তুই আরিফ। লাশ আসবে কোত্থেকে? তোকে তো বললামই যে ওটা পেরেক দিয়ে আটকানো ছিলো। তারপর থেকে তো আমরাই ছিলাম বাসায়। লাশ আসবে কোত্থেকে?’
‘সে তুই যাই বলিস। এটা মানুষের পঁচা গন্ধ সে ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিৎ নাসির। ভুলে যাসনে আমি একজন এমবিবিএস পাস ডাক্তার, এখন সার্জারিতে পড়ছি। আমি মানুষের মাংস পঁচা গন্ধ চিনব না?’
আরিফের কথার দৃঢ়তা আমাকে আরো বিচলিত করে দিলো। ‘দেখ দোস্ত আমি তোকে মিথ্যে বলব কেন? বা তোকে ভয় দেখিয়ে আমার লাভ কি? ভাবীর সমস্যা আমি বুঝতে পেরেছি। খাওয়ার সময় হঠাৎ বাতাসে বাথরুমের দরজা খুলে গিয়ে থাকতে পারে। খাওয়ার মধ্যে হঠাৎ ঐ বাতাস এসে তোদের নাকে লেগেছে। তোদের মাথা শরীর সেটাকে খুব বাজে ভাবে রিএক্ট করে রিফিউজ করেছে। ভুত ফুত কিৎসু না। অন্য কেউ হলে বলতাম পুলিশে খবর দে। তুই বন্ধু তাই তোকে এমন পরামর্শ দিচ্ছি না। এখানে খুন বা অপঘাতে মৃত্যু ও লাশ গুম করার ঘটনা ঘটেছে। এ গন্ধ সেই লাশের গন্ধ। যার সাথে হয়তো বাড়িওয়ালার লোকজন জড়িত। এই জন্যই তারা তোদের এড়িয়ে গেছে, আমি বুঝতে পারছি।’
বিষয়টি ঘটলেও ঘটতে পারে। ঢাকার শহরে অনেক লোকের বাস। হাজার হাজার বিল্ডিং, লাখ লাখ ফ্ল্যাট। কোন ফ্ল্যাটে কি ঘটে তা কি করে বলব? মিডিয়ার কল্যাণে যা সামনে আসে আমরা সেটুকু দেখি। এর বাইরেও যে অনেক অজানা ঘটনা থাকে তা হয়তো এই বাসাটা ভাড়া না নিলে জানতে পারতাম না। আমি ছা পোষা মানুষ। বলতে গেলে দিন আনি দিন খাই। এক মাস চাকরি না থাকলে আমার বাসা ভাড়া, খাওয়ার খরচ চালানোর জন্য কোন ব্যাকআপ নাই। আমি মানে মানে বাঁচতে পারলে হয়।
আরিফ চলে যাওয়ার পর আমরা বাইরে খেতে গেলাম। বাসায় ফিরতে সত্যি ভয় লাগছে। আরিফ যা বলেছে যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমরা খুন কেসে ফেঁসে যেতে পারি। কিন্তু এই ভৌতিক ঘটনার আমি কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলাম না। রাতে আমরা বাসায় ফিরে ভাবলাম আজ ঘরের সব লাইট জ্বালিয়ে রাখবো। জেসমিন বেশী ভয় পাচ্ছে। ওর মধ্যে এক ধরণের অপরাধ বোধ কাজ করছে, দরজাটা খুলিয়েছিলো বলে। সবচেয়ে খারাপ সংবাদ হলো যে দরজা খুলেছিলো সে দারোয়ান বজলুর অবস্থা খুবই খারাপ। আইসিডিডিআর,বিতে তার অবস্থার কোনই উন্নতি হয়নি। সে কিছুই খেতে পারছেন না। সবকিছুতে নাকি পঁচা মাংসের গন্ধ পায়। গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে রক্ত বমি।
বাসায় ঢুকে দেখি সবকিছুই ঠিক আছে। কোথাও কোন সমস্যা নাই। আমরা কিছু সময় টিভি দেখে বারান্দায় গিয়ে কফি নিয়ে বসলাম। আমরা কোথায় কেমন বাসা নিতে পারি সেসব নিয়ে কথা বলছিলাম। এমন সময় শুনলাম আবার সেই পানি ফোটার শব্দ। আমি উঠতে চইলে জেসমিন আমার হাত ধরে বলল ‘যা হয় হোক তুমি এখানে বসে থাকো।’
যা ঘটার তা এখন কিচেনেই ঘটছে আমাদের বান্দা থেকে কিচেনে খুব দূরে নয়। এক সময় গত কালকের মতো শব্দ বাড়তে থাকলো। আবার আগের দিনের মতো এক সময় শব্দ থেমেও গেলো। আমরা শোয়ার আয়োজন করছি। এমন সময় মনে হলো একটু পানি খেয়ে শুই। আমি ডাইনিং রুমে এলাম পানি খেতে। ডাইনিং রুমে ঢোকার সাথে সাথেই আমার নাকে এসে লাগলো সেই পঁচা গন্ধ। আমি বেশ ভড়কে গেলাম। কারণ জেসমিন যে আমাকে বলেছিলো মনে হচ্ছে আমার দিকে কেউ চেয়ে আছে, ঠিক ঐ মুহুর্তে আমার ঠিক ওরকম একটা ফিল হতে শুরু করলো। আমি আর পানি খেতে পারলাম না। আমার বেশ ভয় করতে শুরু করলো। মনে হলো খুব অশুভ কিছু একটা আমার দিকে স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেমন একটা অস্বস্তি ফিল আমি তা বোঝাতে পারবো না। আমি রুমে ফিরে যাওয়ার জন্য যেই টার্ণ করলাম আমার দৃষ্টি আটকে গেলো কিচেনের দরজায়। আমি আমার নিজের চোখে যা দেখলাম তা মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আমার মনে থাকবে। আমি কেন, পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষেই ঐ দৃশ্য দেখে আর সুস্থ থাকা সম্ভব না। আমিও ছিলাম না। সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম। আমি দেখলাম ৪/৫ বছরের একটি শিশু সেখানে দাঁড়িয়ে আমার দিকে স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু শিশুটির চোখে কোন পাতা নেই। সারা শরীরে দগদদে ঘা। খন্ড খন্ড মাংস খসে পরে গিয়ে সেখান থেকে সাদা সাদা পুজ পড়ছে। মাথাও খাবলা খাবলা মাংস উঠনো। আমি দেখে ৪/৫ সেকেন্ড তাকিয়ে ছিলাম। এরপর শুধু একবার এই যাহ বলতে পেরেছিলাম। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।
পরের দিন খুব ভোরে আমি দেখলাম জেসমিন আমার পাশে আমার মতো পড়ে আছে। আমি ওকে জাগালাম। ও জেগেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কি এক আতঙ্ক ওর চোখে মুখে। আমার সামনে আয়না নেই বলে বুঝতে পারছি না যে আমার অবস্থা কি। ও তোতলাতে তোতলাতে বলল ‘ওট ওট ওটা চলে গেছে?’
আমি বুঝতে পারলাম ও কিসের কথা বলছে। আমি বললাম ‘হ্যা। চলো আমরা এখুনি বাসা ছেড়ে চলে যাই। মাল জিনিস পরে নেব।’
‘কোথায় যাবে? কারো সাথে কথা বলেছো?’
‘কথা বলার দরকার নেই। আগে চলো বাসা থেকে বের হই।’
আমরা বাসা থেকে বেরিয়ে প্রথমেই ফোন দিলাম আমার বাল্য বন্ধু ড. আরিফকে। আমি সংক্ষেপে রাতের ঘটনা বললাম। ও তক্ষণি আমাকে ওর বাসায় যেতে বলল। আমরা বনশ্রী থেকে দীলু রোডের রিক্সা ঠিক করলাম। জেসমিনের চোখে মুখে এখনও ভয়ের ছাপ। আরিফের বাসায় গিয়ে আমরা সবাইকে রাতের ঘটনা বললাম। আরিফের শালা ওর বাসায় বেড়াতে এসেছে। সে আমাকে বলল ‘আপনার অসুবিধা না থাকলে আমি বিষয়টি পুরোপুরি জানতে চাই।’ আমি এক নিঃশ্বাসে তাকে শুরু থেকে বলে গেলাম। সব শুনে শুধু বলল ‘অন ন্যাচারাল ডেথ। সম্ভবত মার্ডার।’
‘মাই গড! বলেন কি? আরিফও বলেছিলো কাল।’
‘তাই নাকি? দুলাভাই তো এসব বিলিভ করেন না।’
‘বিলিভ করে না তা আমিও জানি। ও আমাকে শুধু গন্ধ পেয়ে বলেছিলো যে এটা মানুষ পঁচা গন্ধ।’
‘আপনার আপত্তি না থাকলে আমি বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে চাই।’
‘তাই নাকি? আপনি কি ওঝা নাকি?’ আমার কেমন যেন একটু লাগলো। আধুনিক ছেলে। ল্যাপটপ নিয়ে নেট ব্রাউজ করছে। বয়সে আমার চেয়ে বছর পাঁচেকের ছোটই হবে। এই ছেলে ভুত প্রেত নিয়ে কিসের চর্চা করে?
‘ওঝা না। ও যদিচায় তাহলে তুই ওকে নিয়ে যা। ও এসব একটু চর্চা টর্চা করে।’ ড্রইং রুমে ঢুকতে ঢুকলে বলল আরিফ। আরিফের শালার নাম সায়মন। বয়স ত্রিশ বত্রিশের বেশী হবে বলে মনে হয় না। এতদিন লন্ডনে ছিলো শুনেছি। সেখানে পড়াশুনা করেছে। দেখতে সাধারণ একটা ছেলে। বলে কিনা ভুত টুত নিয়ে চর্চা করে। আমি অনেক ভয় পেলেও কৌতুহল তো আর দমে যায়নি। বিষয়টি কি তা জানার জন্য আমারও মন আকুপাকু করছিলো। জেসমিন এখন আরিফের দেয়া ঘুমের অসুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে। আজ আমার ছুটি। পড়াশুনা শেষ করেই তো চাকরীতে ঢুকলাম। অ্যাডভাঞ্চার করার সুযোগ আর পেলাম কই? এই ফাঁকে যদি একটু অ্যাডভেঞ্চার হয় মন্দ কি? আমি বললাম ‘ঠিক আছে চলেন।’ সায়মন একটা ব্যাগ নিয়ে আমার সাথে বাসায় এলো। বাসায় ঢুকেই প্রথমে ও যেটা বলল তা হলো ‘ও মাই গড ! ভেরি পাওয়ার ফুল এন্ড ব্যাড সোল।’
সায়মন তার ব্যাগ খুলে কয়েকটি যন্ত্রপাতি বের করে সেট করল। তারপর বলল ‘চলেন, সার্ভেন্ট টয়লেট টা আগে একটু দেখি।’ টয়লেটের সামনে গিয়ে ও নিজেই দরজা খুলল। খোলার সাথে সাথে সেই ভোটকা গন্ধটা আবার ছড়িয়ে পড়লো ঘরে। আমরা দুজনেই নাক চেপে ধরলাম। সায়মন ওর পকেট থেকে ছোট্ট একটা টর্চ বের করলো। যার আলো সবুজ। লাইটটা টয়লেটে মারতে যাবে এমন সময় আমি বললাম ‘লাভ নেই কেটে যাবে।’
‘এ লাইট কাটবে না চিন্তা করবেন না।’ লাইটা বাথরুমে মারার আগে আরো একবার চেক করে নিলো সায়মন। তারপর বাথরুমে লাইট মেরে বলল ‘এদিকে আসুন দেখে যান।’ আমি নাক চেপে ধরে গিয়ে দেখলাম ওর লাইটের আলো যে স্থানে পড়েছে সেখানে ছোট ছোট হাতপায়ের দাগ। দেখলে মনেহয় ছোপ ছোপ রক্ত!
‘এটা কি এর আগে আপনারা দেখেছেন?’
‘না।’
‘এটা একটা স্পেশাল রে-লাইট। এটার আলোয় অনেক কিছু দেখা যায় যা খালি চোখে দেখা যায় না। চলুন।’ আমরা দুজন ড্রইং রুমে আমাদের নতুন কেনা সোফায় বসলাম।
‘আপনি বসুন আমি আপনার জন্য চা বানিয়ে আনছি।’
‘তাহলে খুব ভালো হয়।’ সরলভাবে হাসিমুখে বলল সায়মন। আমি চা করে এনে দেখি সায়মন তার ল্যাপটপ অন করে ছোট ছোট মাইক্রোফেনের মতো বেশ কয়েকটি যন্ত্র বের করে কি যেন করতে লাগলো। ম্যাচের মতো সাইজের একটা ক্যামেরা দেখতে পেলাম। ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র সারাইয়ের দোকানে যেরকম মিটার সেরকম একটা মিটারও রয়েছে দেখলাম, তবে সায়মনের টা অনেক আধুনিক। মনিটরটা স্মার্ট ফোরেন মনিটরের মতো দেখতে।
‘এসব দিয়ে কি আত্মা ধরবেন নাকি?’ আমি খানিকটা কৌতুক মাখিয়েই প্রশ্নটা করলাম।
‘ঠিক তা নয়।’ চায়ের কাপ নামাতে নামাতে বলল সায়মন। ঠোঁটে ঝুলে থাকা হাসি দেখে বুঝলাম আমার কথায় রাগ করেনি। ‘আমি আসলে একটা সংকেত বা কোড ধরার চেষ্টা করি।’
‘মানে?’
‘মানে হলো আমি একটা কোড জানি যেটা ওদের সাথে লিংক করতে আমাকে হেল্প করে। মানে বলতে পারেন ওদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি।’
‘সেটা কি করে?’
‘এই যে এতসব যন্ত্রপাতি দেখছেন এর সাহায্যে আমি এক ধরণের সিগনাল রিড করব। ঐ সিগনালটাকে যদি কোডে রুপান্তর করতে পারি দেন চেষ্টা করব কোডটা ভাঙাতে।’
‘ও আচ্ছা।’ আমি মুখে ও আচ্ছা বললেও ওর কথা বুঝতে পারলাম না। সায়মন উঠে ছোট একটা জিডিটাল মিটার দিয়ে একটা ‘রিডিং’ নিয়ে টেপ দিয়ে মেপে মাইক্রোফোন গুলো লাগালো। আমিও ওকে হেল্প করতে লাগলাম। এক সময় এ জায়গায় তার, ওজায়গায় ক্যামেরা, এই রুমে মাইক্রোফোন, ফ্লোরে বিশেষ চিহ্ন ইত্যাদি দিয়ে আমরা ঘরের সমস্ত লাইট অফ করে দিয়ে ওর পিসির মনিটরের সামনে বসলাম।
‘এখন কি হবে?’
‘দেখি কি হয়। সকল আত্মার সিগনাল-ই যে ধরা যায় তা নয়। আবার সেই ধরাপড়া সব সিগনাল -ই যে কোডে রুপান্তর করতে পরব এমন নয়, এমনকি সেই সকল কোড ভাঙিয়ে অর্থ বের করতে পারব তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।’
‘এটা কি ধরা যাবে?’
‘বলতে পারছি না। আমাকে কাজ করতে হবে বলতে পারেন অনেকটা অনুমানের ভিত্তিতে।’
‘আমরা যে কথাবার্তা বলছি তাতে কোন অসুবিধা হয় না?’
‘আসলে সোলদের সবকিছু আমাদের সাথে মেলে না। বলতে গেলে কোন কিছুই মেলে না। ওটা একটা ভিন্ন জগৎ। যা আমার আপনার পরিচিত জগতের চেয়ে একদম অন্যরকম, আলাদা। যেটা মিল সেটা হলো ওরা একটা পাওয়ার, আপনিও একটা পাওয়ার কিন্তু আলাদা। ’
‘ও আচ্ছা।’
সায়মন এটা ওয়ার্ড ডকুমেন্ট বের করে সেখানে অনেকগুলো প্রশ্ন লিখলো। লেখা লেখির এক পর্যায়ে ল্যাপটপে ছোট একটা শব্দ হলো। যা শুনে মনে হচ্ছে কোন সংকেত। সাথে সাথে ল্যাপটপের স্ত্রীনে একটা গ্রাফ উঠলো। তার পাশেই একটা ম্যাপের মতো রেখা টানা। মাইক্রোফোনের সাইন আর নম্বর দেখে বুঝলাম এটা ওর মাইক্রোফোন আর অন্যান্য যন্ত্রপাতি বসিয়েছে তার লে আউট। ও সেই মিটারটা একটা ক্যাবলের মাধ্যমে ল্যাপটপে জুড়ে দিলো। একটা কিট কিট আওয়াজ শুরু হলো কোথাও। সাথে সাথে সায়মন দুই আঙ্গুলে তুড়ি বাজিয়ে বলল ‘ইয়েস গড ইট। ওর সিগনাল আমি রিড করতে পারব মনেহয় ভাইয়া।’
আমি সাইমনের এসব কিছুই বুঝতে পারছিনা ঠিকই কিন্তু একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছি ভেতরে ভেতরে।
‘ভাইয়া এটাতো একটা শিশুর সোল বলে মনে হচ্ছে। এখানে একটা শিশু অপঘাতে নিহত হয়েছে।’
‘মাই গড! বলেন কি?’
‘হ্যাঁ। সম্ভব সে আগুনে পুড়ে বা পানিতে ডুবে মারা গেছে।’
‘তাই নাকি?’
‘হ্যাঁ।’ সায়মন তার ল্যাপটপে দ্রুত কিছু টাইপ করে গেলো। যা কিছুই আমি বুঝতে পারছি না।
‘বিষয়টা কি জানেন? সে কিন্তু ব্যাড সোল হয়ে গিয়েছে এবং সে অবশ্যই প্রতিশোধ নেবে যা কেউ ঠেকাতে পারবে না।’ সায়মন কাজ করছে আর আমার সাথে কথা বলছে।
‘কিরকম প্রতিশোধ?’
‘তা তো বোঝা যাচ্ছে না। তবে....’ এর পরই থেমে গেলো সায়মন। আরো কিছু টাইপ করার পর বলল ‘তবে আপনারা ঐ টয়লেটের দরজাটা খুলে মারাত্মক ভুল করেছেন। এর খেসারত আপনাকে বা কাউকে না কাউকে দিতেই হবে।’
আমার বুকটা ধবাস করে উঠলো কি খেসারত দিতে হবে আমাকে? এই অশুভ আত্মা কি ক্ষতি করবে আমার? ‘আমার কি খেসারৎ দিতে হবে?’ আমি ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলাম ওর কাছে।
‘দেখুন আমি আপনাকে আগেই বলেছি ওদেরও একটা জগৎ আছে। সেখানেও কিছু সিস্টেম আছে। আপনাকে আমাকে যেমন কিছু সিস্টেম মানতে হয় ওদেরও তেমন মানতে হয়। এই শিশুটির আত্মা যখন ওর দেহ ছেড়ে যায় তখন ও কিছু দুষ্ট আত্মার সাথে গিয়ে মেশে। তারা ওকে নিজেদের জন্য খারাপ শক্তিতে শক্তিশালী করতে থাকে। এক সময় ও এখানে উৎপাৎ শুরু করলে ওকে বন্দি করে রাখা হয়। সেটা আবার আরেকটি আত্মা দিয়ে। ফলে ও মুক্তি পেয়েই একটা হত্যা করবে এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যেকটি আত্মাই সে খারাপ হোক কি ভালো তার মুক্তির একটা ইচ্ছা থাকে। এবং মুক্তি পেতে তাদের নানা রকম কাজ করতে হয়। এই শিশুটিকে যদি প্রথমেই আটকানো না হতো তাহলে সে হয়তো তার হত্যাকারীকে খুন করে মুক্তি পেয়ে যেতো। কিন্তু ও মুক্তি পেতে চাইলে ওর দুটি আত্মা লাগবে। অর্থাৎ কমপক্ষে দুটি খুন করবে ও।’
‘কি বলছেন এসব আপনি?’
‘জ্বী, ভয়ঙ্কর শোনালেও এই কথাটি সত্যি। কিন্তু কথা হলো শিশুটিকে হত্যা করলো কে, কেন? নাকি কোন দুর্ঘটনায় মারা গেছে এটা জানা ভীষন জরুরী’
‘এসবস প্রশ্নের উত্তর আপনি বের করতে পারবেন?’
‘জানি না। তবে ওকে এখানে যে বন্দি রেখেছে যে অনেক শক্তিশালী কেউ। আর এটি যদি হত্যাকান্ড হয়ে থাকে তবে আমি পরামর্শ দেব পুলিশে খবর দিন।’ আমরা আরেক দফা চা খেয়ে দারোয়ানকে ইন্টারকমে কল করলাম সায়মনের জন্য কিছু খাবার আনাব বলে। অনেক বার কল বাজার পরও যখন কেউ ধরল না তখন আমি নিজেই নিচে গিয়ে দেখি অনেক মানুষের ভীড়। দারোয়ানের ভাই একটা টুপি মাথায় দিয়ে হাউ মাউ করে কাঁদছে। এক সময় জানতে পারলাম আমাদের দারোয়ান রশীদ আইসিডিডিআরবি তে মারা গেছে। আমি বিস্কুট, কেক পানি নিয়ে এসে দেখি সায়মনকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে।
‘কোন সমস্যা সায়মন?’
‘হ্যাঁ সমস্যাই বলতে পারেন, এবং বড় ধরনের সমস্যা।’
‘কি আমাকে বলা যাবে?’
‘আপনার বাসার শিশুটির আত্মা আরো শক্তিশালী হয়েছে। শিশুটি এখন তার খুনিকে খুঁজে খুন করে এ বাড়ি ছাড়বে, তার আগে নয়।’
‘কি বলেন? এর মধ্যেই আত্মাটা আরো শক্তিশালি হয়ে গেলো?’
‘হুম, আরেকটি কথা- শিশুটিকে খুন করা হয়েছে এবং খুনি এই বাড়িতেই রয়েছে তা বলতে পারেন মোটামুটি শিওর।’
‘কি বলছেন আপনি সায়মন? এটা কি করে সম্ভব? খুন করে খুনি এই বাড়িতেই থাকবে কেন? তার তো পালিয়ে যাওয়ার কথা।’
‘আমার মনে হয় খুনি যেই হোক আর যে কারণেই ওকে খুন করা হোক না কেন খুনি কিন্তু এই বাড়িতেই রয়েছে। আত্মাটির এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য একটা বাধা ছিলো...’ সায়মন ওর পুরো কথা শেষ করতে পারলো না; এর মধ্যে কেউ একজন দরজায় নক করল। আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখি কেউ নাই। সায়মন জানতে চাইলো ‘কে?’
‘কেউ না। হয়তো বাচ্চা কাচ্চা। কাউকে তো দেখছি না।’ আমি ফিরে এস সোফায় বসলে সায়মন আবার বলতে শুরু করলো ‘ওর এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কয়েকটি বাধা ছিলো। মনেহয় এখন আর অতগুলো বাধা নেই। আর দুটো বাধা আছে সে বাধা দুটো অতিক্রম করার পর ও এখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে ওর খুনিকে খুন করতে যাবে এবং খুন করবে।’
‘কোনভাবেই এই খুন এড়ানো যাবে না?’
‘যাবে যদি ওকে এখানে আটকে রাখা যায়। কিন্তু সেটা মনে হয় না আর সম্ভব হবে। আপানারা সার্ভেন্ট টয়লেটটা খুলে একটা বড় ধরনের ভুলই করেছেন।’ আমার নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হতে লাগলো। যদিও আমি কাজটা করিনি। আর জেসমিনই বা কি করে বুঝবে এমনটা হতে পারে? আমি সায়মনকে বললাম ‘আচ্ছা শুনন আপনাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। আমাদের দারোয়ান আইসিডিডিআরবিতে মারা গেছে একটু আগে।’
‘ঐ যে দারোয়ান দরজা খুলেছিলো বলেছিলেন?’
‘হ্যাঁ’
‘ও মাই গড!’ বলে আরো চঞ্চল হয়ে উঠলো সায়মন। ‘কি হলো?’ আমি ওর ল্যাপটপের দিকে একটু ঝুকলাম।
‘একটু আগে কে নক করছিলো জানেন?’
‘কে?’
‘হতেও পারে ঐ দারোয়ানের আত্মা। এই এদিকে আসুন দেখে যান।’
আমি আরেকটু ঝুঁকে ওর ল্যাপটপে সেই গ্রাফটা দেখলাম। আগে যেখানে একটা লাল বিন্দু ছিলো এখন সেখানে দুটি বিন্দু তবে একটা লাল আর একটা কালো। এর মানে কি দারোয়ানের আত্মা এই ঘরে প্রবেশ করেছে? এমন সময় কিচেনের দিক থেকে খুব জোরে একটা দরজা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পেলাম। বুঝতে পারলাম সার্ভেন্ট টয়লেটের দরজা।
‘আমাদের কি এখানে এখনও থাকা ঠিক হবে?’ আমি ভয়ে ভয়ে সায়মনকে জিজ্ঞেস করলাম।
‘আমি থাকতে পারবো, আপনার কথা জানি না।’
‘আপনি থেকে কি করবেন?’
‘অন্তত একটা হত্যাকান্ড ঠ্যাকানোর চেষ্টা করবো।’
‘কিভাবে?’
‘আমাকে প্রথমে জানতে হবে ওর খুনি কে, কিভাবে ওকে খুন করা হয়েছিলো।’
‘এসব জেনে আমাদের লাভ কি? বরং চলুন আমরা চলে যাই।’
‘গেলে তো যাওয়াই যায় ভাইয়া। কিন্তু আমি যদি জানতে পারি কে এই শিশুটিকে হত্যা করেছিলো তাহলে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারি। আগামী কাল অমাবস্যা রাত। তিথি পরিবর্তনের সময় ওর আত্মা আরো শক্তিশালি হবে। সে তার প্রতিশোধ নেবেই। আরেকটি বিষয় হলো শিশুটিকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিলো তা জানতে পারলে লাভ হতো। কারণ শিশুটির আত্মা তার খুনিকে ঐভাবে বা কাছাকাছি কোন পদ্ধতিতে খুন করবে। এটা ওরা করে থাকে।’
‘আপনি কিভাবে রক্ষা করবেন ঐ খুনিকে? আর কেনই বা বাঁচাতে চাইছেন?’
‘দেখুন ভাইয়া আমি খুনিকে বাঁচাতে চাইনা। আমিও চাই খুনি যেই হোক তাকে বিচারের আওতায় আনা হোক। কিন্তু একটা অশুভ আত্মাকে আর আমরা সেই খুনের বিচারের ভার দিতে পারি না।’
‘আমরা ভার দেব কেন? আপনি তো বললেন ঐ আত্মা নিজেই অনেক শক্তিশালী। সে তো নিজেই যা করার করবে।’
‘আমি ঠ্যাকানোর জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করবো। আপনি পুলিশে খবর দিন। না হলে আরো ঝামেলা হবে।’
‘সায়মন দেখুন, আমি ফেঁসে যাবো আমার স্ত্রী ফেঁসে যাবে। পুলিশ, কেস মামলা এসব যে কত্ত ভয়ঙ্কর আপনার কোন ধারণাই নেই।’
‘আপনার কোন ধারণা নাই। সরি ‘দুলাভাই’ আপনার সাথে বেয়াদবি করে করছি। আপনি আমাকে আগে থেকে চিনতেন নাই তাই হয়তো জানেন না। আমি একজন লইয়ার। ব্রিটেনে বার-অ্যাট-ল করেছি। আমি আইন কানুন সব জানি। আপনি শান্ত হোন। আমার বন্ধু সাউথের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। ওর সাথে আমি কথা বলি, ও সিভিল ড্রেসে বাসায় আসুক। আমরা কথা বলি। টেইক ইট ইজি ম্যান। আপনি আপনার স্ত্রী যাতে কোন ভাবেই কোন রকম উটকো ঝামেলায় না জড়ান তা দেখার দায়িত্ব আপনি আমার উপর ছেড়ে দিন। যদি মনে করেন কিছু হয় তাহলে আমি নিজে মাগনা লড়ব আপনার কেস। আপনি নিশ্চিত থাকেন ভাই। আমাকে দেখতে দিন সব। আরেকটি কথা। এই আত্মার কাছ থেকে কিন্তু আপনার স্ত্রীও নিরাপদ নন। সেও কিন্তু দরজা খোলার সময় ছিলো।’ এবার আমি মারাত্মক ভয় পেলাম। আমাদের কি ক্ষতি করতে পারে? আমরা তো কোন অন্যায় করিনি। আমার মনে হলো আমি এখন এক ধরণের নিরুপায়। কথায় বলে বাঘে ছুলে আঠারো ঘাঁ আর পুলিশ ছুলে ছত্রিশ ঘাঁ। সায়মনের কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তো এখানে যে মামলা মোকদ্দমা হবে তা খুন বিষয়ক। আমি কি করব বুঝে উঠতে পারলাম না। আমি আরিফকে ফোন করে সব জানালাম। ও বলল ‘সায়মন যা বলে তাই কর। ও তোর ক্ষতি নয় বরং উপকার করবে নাছির। তুই নিশ্চিৎ থাক দোস্ত।’ আমি দীর্ঘ সময় কথা বলে সায়মনকে বললাম ‘আচ্ছা আপনার পুলিশ বন্ধুকে ফোন করুন।’
সায়মন ফোন করার ঘন্টা খানেক পর যে লোকটি আসলো তাকে দেখলে যে কেউ বলবে মোবাইল কোম্পানীর কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার। আর যাই হোক পুলিশ বলে মনে হবে না। কিন্তু যখন তার বগলের নীচ থেকে পিস্তলের বাট উকি দিলো তখন আর সন্দেহ রইলো না। সবশুনে এসি ইকবাল সায়মনকে বললেন ‘এখন তাহলে আমি কি করতে পারি বন্ধু?’
‘তুই বাড়ীওয়ালাকে চাপ দিয়ে জানবি এখানে আগে করা থাকতো? কি হয়েছে এখানে। আমি হয়তো তোকে কিছু কিছু জায়গায় হেল্প করতে পারবো খুনিকে ধরার জন্য। তুই খুনি ধরে আইনের আওতায় আনবি।’
আমরা তিনজন মিলে বাড়িওয়ালার বাসায় গিলে কথা বলতে চাইলাম। নীচের দারওয়ান মারা যাওয়ায় বাসার মধ্যে অনেক লোক জনের যাতায়াত ছিলো। আমি এক ফাঁকে বাড়িওয়ালার ভাতিজা কে দেখতে পেয়ে ডাক দিলাম। একটুৃ আড়ালে নিয়ে আমি বললাম ‘পাভেল ভাই উনি আমাদের বন্ধু। পুলিশের এসি। আপনি একটু ওনার সাথে কথা বলুন। পুলিশের কথা শুনে পাভেল কেমন চমকে উঠলো। তার ভীতি চেষ্টা করেও ভিতরে লুকিয়ে না রাখতে পেরে বলল
‘কেন কেন? পুলিশ কেন?’
অঈ ইকবাল পাভেলের পিঠে একটা হাত দিয়ে স্মীত হেসে বলল ‘আপনি ভ পাচ্ছে কেন পাভেল সাহেব? আমি এনাদের বন্ধু। পুলিশি কাজে আসিনি, আমার ব্যক্তিগত কাজে কিছু তথ্য জানার ছিলো।’
‘কি তথ্যা বলুন?’ পাভেলের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
‘দাঁড়িয়ে বলব? বসতে দিবেন না? চা বিস্কিট দেন কিছু। আর লোকজন সবাইকে যেতে বরেন। শুধু আমরা এই তিন জন কথা বলব।’
ঠিক এমন সময় আমরা আকাশ বাতাস কঁপিয়ে কোন একটা ভাঙা মহিলা কন্ঠ চিৎকার করে বলল ‘ছাড় আমাকে ছাড় নইলে গায়ে আগুন দিয়ে দেব।’
পাভেল বাদে আমরা সবাই চমকে গেলাম। পাভেল বড় বড় চোখ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইকবাল বলল
‘কে চিৎকার করছে?’
‘আমার কাজিন জারা। ও মানুষিক সমস্যায় ভুগছে।’
‘কবে থেকে?’
‘বছর খানেক।’
‘ট্রিটমেন্ট কারাচ্ছেন না?’
‘জী¡ করাচ্ছি তো। কোন কাজ হয় না।’
‘আচ্ছা আপনাদের এই বিল্ডিং এ মোট কয়টা ফ্ল্যাট?’
‘আট টা স্যার।’ হঠাৎ করে দেখলাম পাভেল অঈ ইকবাল সাহেবকে স্যার বলা শুরু করল। ইকবাল সাহেব কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবার বলল ‘চারদিকে এত জঙ্গি হামলা এই সেই জন্য তো ভাড়াটিয়াদের সব কাগজপত্র নিয়ে চুক্তি টুক্তি করে আপনার বাসা ভাড়াদেন তাই না?’
‘জ্বি স্যার।’
‘এর আগে যে সকল ফ্ল্যাট ভাড়া হয়েছে সবার কাগজপত্র আছে?’
‘আছে স্যার।’
‘নাসির সাহেব যে ফ্ল্যাটে আছেন সেই ফ্ল্যাটে ওনার আগে কারা ছিলো তাদের কাগজপত্র আছে না?’
‘স্যার ওনারা ওঠার আগে ফ্ল্যাট খালি ছিলো।’
‘কোন বাসায় কোন ভাড়াটিয়া উঠলে তারা তো খালি বাসাতেই উঠবে নাকি? আমি বলেছি ওনাদের আগে কারা ছিলো?’
‘কোন ভাড়াটিয়া ছিলো না। বেশ কয়েক মাস খালি ছিলো।’
‘সেই খালি থাকার আগে কারা ছিলো? তাদের কোন কাগজপত্র আছে?’
‘দেখতে হবে স্যার।’
‘যান দেখুন। আর আমরা এতগুলো মানুষ আপনাদের বাসায় এসেছি কেউ একটু চা এমনকি এক গ্লাস পানি পর্যন্ত দিলো না।’
‘সরি স্যার, সরি। আমি এক্ষুনি ব্যবস্থা করছি।’ বাসার সকল লোক চলে গেছে। অঈ ইকবাল উঠে নিজে হাতে দরজাটা দিয়ে এসে বসলো। অল্প একটু সময় পর সেই দিনের সেই মেয়েটি একটা ট্রেতে একটা সুন্দর কাচের জগ আর চার গ্লাস এনে রাখল। যখন চলে যাচ্ছিলো তখন অঈ ইকবাল বলল ‘তোমার নাম কি?’
‘রাহেলা।’
‘এই বাসায় কতদিন ধরে কাজ করছো?’
‘আট নয় মাস।’
‘তার আগে কোথায় ছিলা?’
‘আমাগো গেরামের বাড়ীতে।’
‘তোমাদের গ্রামের বাড়ী কোথায়?’
‘কিশোরগঞ্জ।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে যাও তুমি। পাভেল সাহেবকে পাঠিয়ে দাও।’
‘আইচ্চা স্যার।’
প্রায় দশ পনের মিনিট পরে পাভেল ফিরে এসে বলল ‘স্যার ঐ সব কাগজতো অনেক আগের, খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘তাহলে এক জাক করুন বিগত দুই বছরের এই বিল্ডিং এর যত প্রকার ইউটিলিটিস বিল আছে সব নিয়ে আসুন।’
হঠাৎ করে বাসার মধ্যে আবার সেই নারী কন্ঠ চিৎকার করে বলছে ‘আমাকে ছাড় এখুনি দরজা খোল নাইলে গায় আগুন ধরাইয়া দিমু।’
পাভেল চলে যাওয়ার ভিতরের ঘরে কিছু চাপাস্বরে কথাবার্তা শুনতে পেলাম আমরা। একটু পরেই ষাটোর্ধ একট মহিলাকে নিয়ে ঢুকলো পাভেল। তার চেহারায় বেশভূষায় আভিজাত্যের ছাপ থাকলেও উদ্বিগ্নতা ঢাকতে পারেনি। উনি এসে আমাদের সালাম দিলেন। আর পাভেল বলল ‘আমার চাচীজী। এই বাড়ীর মালিকের বউ। ওনার সাথে কথা বলেন স্যার।’
মহিলা আমাদের সামনের সিঙ্গেল সোফায় বসলেন। আমাদের সবার দিকে তাকলেও কারো চোখের দিকে তাকলেন না। বললেন ‘সরি বাবারা আমি একটু অসুস্থ। হয়তো আরো আগেই আসা উচিৎ ছিলো।’
‘না ঠিক আছে ম্যাম সমস্যা নাই।’ বলল ইকবাল।
এর মধ্যে সেই কাজের মেয়েটি আরেকটি ট্রেতে নুডুলস, মিষ্টি, কাটা আপেল আর বেশ কিছু আঙ্গুর এনে রাখলো টি টেবিলে। সব কিছু নামিয়ে রাখার পর ভদ্র মহিলা কাজের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন
‘চায়ের পানি দিয়েছ না?’
‘জে খালাম্মা।’
‘ঠিক আছে যাও। আচ্ছা বলো তোমরা কি জানতে চাও?’ অঈ ইকবাল আমার দিকে তাকিয়ে বলল ‘আপনি শুরু করুন।’ আমি শুরু থেকে বলা শুরু করলাম। যখনই বললাম বাথরুমের দরজা খুলে ফেলেছি তখনই মহিলা চমকে উঠলেন মনে হলো ভিতর থেকে একটা আর্তনাদ বেড়িয়ে এলো তার।
‘এটা কেন করতে গেলেন আপনারা? ওহ গড........’ বলেই মহিলা দুই হাতে মুখ চেপে ধরে কেঁদে উঠলেন। আমরা তিনজনই ভ্যাচাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। একে অপরের মুখ চাওয়া চাওই করে ভয়ঙ্কর একটা নিরব সময় পার করতে লালাম আমরা। উনি কিছুক্ষন পর শাড়ীর আচল দিয়ে চোখ মুছে আমার দিকে ফিরে বললেন ‘তারপর?’
এমন একটা পরিস্থিতিতে আমি নতুন করে কথা শুরু করতে একটু বিব্রতবোধ করছি দেখে অঈ ইকবাল বলল ‘বলুন নাছির সাহেব সব বলুন।’ আমি এবার বিনা বাধা সব বললাম। আমার কথা শেষ হলে অঈ ইকবাল বলল ‘দেখুন খালাম্মা ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজে ভূত প্রেত অশরীরি আত্মা এসবে বিশ্বাস করি না। তবে মি. নাসির যে সকল কথা বলেছে তা সত্যি হলে সেটা খুব-ই ভয়ঙ্কর। উনি ওনার স্ত্রী নিশ্চই অনেক ভয় পেয়েছেন। ওনাদের হয়তো পারিবারিক বন্ধু সায়মন একটু এইসব আত্মা টাত্মা নিয়ে চর্চা করেন। উনি সব কিছু শুনে ওনার যায়গা থেকে নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলছেন ঐ ফ্ল্যাটে একটি শিশুর অপমৃত্যু হয়েছে যেটা ছিলো আসলে খুন। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য শুনতেই আমরা এসেছি। আমার নাম মোঃ ইকবাল হুসাইন খান, অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ।’
একথা শোনার পর মহিলা একটু ঘাবড়ে গেলো মনে হলো। টেবিল থেকে এক গ্লাম পানি নিয়ে খেয়ে আচল দিয়ে মুখে মুছে নড়ে চড়ে বসলেন। ষাটোর্ধ মহিলার মুখটা হঠাৎ কেমন রক্তশূণ্য মনে হলো। আমরাও সবাই ওনার কথাবার্তা শোনার জন্য নড়েচড়ে বসলাম।
‘আমি ঐ ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে নিষেধ করেছিলাম পাভেল কে।’
‘কেন?’ জানতে চাইলেন অঈ ইকবাল।
‘ঐ ফ্ল্যাটে ঝামেলা আছে।’
‘কি ঝামেলা আমরা সেটাই জানতে চাচ্ছি খালাম্মা। আমাদের হেল্প করলে আপনাদেরই লাভ হবে।’
‘বলছি। অবশ্যই বলব। আজ তোমাদের আমি সব কিছু বলে দেব। আমরা এক পা কবরে। আমি আর কোন কিছু চাপিয়ে রাখতে চাই না।’ কথার এই পর্যায়ে চা নিয়ে এলো কাজের মেয়েটি। তিনি কাজের মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন
‘জারা কি ঘুমিয়ে পড়েছে?’
‘জে’
‘আজাদকে বলো ওকে ঘুমের মধ্যে আরো দুটো ইনজেকশন দিয়ে দিতে। আমি অনেক্ষণ ওদের সাথে কথা বলব।’
অঈ ইকবাল জানতে চাইলো
‘জারা কে?’
‘বলছি সবই বলছি। নাও চা টা শেষ করো।’ শুধু আমি না মনে হয় সায়মন আর অঈ ইকবাল আমরা তিনজনে দ্রুত চা শেষ করলাম এ ঘটনা শোনার জন্য। একটু সময় নিয়ে মহিলা বলতে শুরু করলেন ‘নাসির সাহেব ঐ ফ্ল্যাটে ওঠার আগে বছর খানেক ফাঁকাই ছিলো। ওরা ওঠার আগে ঐ ফ্ল্যাটে আমরাই ছিলাম। আমার স্বামী একটা সরকারি চাকরি করতেন। দুর্নীতির দায়ে সে পাঁচ বছর আগে চাকরি হারায়। কিন্তু সে চাকরি থাকতে যা করেছে তা হয়তো আরো তিনপুরুষ বসে বসে খেতে পারতো। চাকরি হারিয়ে আমার স্বামী এক প্রকার পালিয়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। সেখানে আমাদের একমাত্র ছেলেকে আমরা আগেই পাঠিয়েছি। এপাশে আমি মেয়েকে নিয়ে একা হয়ে যাই। নগদ অর্থ হাতে পেয়ে আমাদের একমাত্র মেয়ে হয়ে যায় এক চরম উসৃংখল নেশাখোর আর সেচ্ছাচারী। তার নামে তার বাবা আগেই ব্যাংকে প্রচুর টাক রেখে গিয়েছিলো। অত টাকা আর অভিবাবক হীন মেয়েটা ধীরে ধীরে মেয়ে হয়ে ওঠে এক ভয়ংকর নেশাখোর। শুরু করে যৌন স্বেচ্ছাচারিতা। আমি কিছুই করতে পারছিলাম না। মাত্র দু বছরের মাথায় তার বাবার রেখে যাওয়া আড়াই কোটি টাকা একেবারে জিরো ব্যালেন্সে নামিয়ে ফেলে। দুর্নীতি দমন কমিশনের কেস চলতে থাকে। একে ক্রক হয় আমাদের চার চারটা বাড়ি। ভাগ্যিস এই বাড়িটা আমার নামে করা হয়েছিলো। দুর্নীতি দমন কমিশন আর আমার মেয়ের নির্যাতন দুটোই এক সাথে চলছিলো একত্রে। এক সময় আমি মেয়েকে জোর করে রিহ্যাবে দিলাম। ছয়মাস থেকে বেরিয়ে এসে আবার যেই সেই। এক সময় ওর সকল টাকার পথ বন্ধ যাওয়ার পর ও ঘরের বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বেচা শুরু করল। মোবাইল, ঘড়ি, ল্যাপটপ, বইপত্র যা যা হাতের কাছে পেতো সব। যখন কিছুই আর বেচার জন্য পেতো না তখন আমার জীবনটা অতিষ্ট করে তুলত টাকার জন্য। টকা না দিলে শুরু করতো নরকীয় তান্ডব। হাতের কাছে যা পেতো তাই ভাঙ্গা শুরু করতো। চোখের সামনে যা পেতো সব ছুড়ে মারত সারা ঘরে। বাধ্য হয়ে এক সময় টাকা দিতাম। প্রায়ই ওর যন্ত্রণায় ভাড়াটিয়ারা চলে যেত। আমাদের নীচের ফ্ল্যাট থেকে মানে আমরা এখন যে স্থানে বসে আছি এই ফ্ল্যাট থেকে রেগুলার চিল্লাফাল্লা করতো। একদিন সন্ধা বেলা ও ঐভাবে সারা ঘরে তান্ডব চালাচ্ছিলো। ঘটনার দিন জারার যন্ত্রনা সহ্যের সীম ছাড়িয়ে গেলো। আটটা সোয়া আটটার দিকে আমি বাসা ছেড়ে ই ব্লকে আমার বোনের বাসায় চলে গেলাম। যাওয়ার সময় দেখে গেলাম জয়ফুল রান্নাঘরে কাজ করছে। চুলায় একটা বেশ বড় ডেকসিতে খাবার পানি ফুটছিলো টগবগ করে। আমাদের বাসায় তখন জয়ফুল নামে একটা অল্পবয়সি বিধাব মেয়ে কাজ করতো। আমাদের বাসায়ই থাকত খেতো। ওকে আমরা খুব পছন্দ করতাম ভালো বাসতাম। ওর সাথে ওর তিন সাড়েতিন বছরের ছেলে মইনুলও থাকতো আমাদের বাসায়। ছেলেটা দেখতে বেশ মিষ্টি ছিলো। আমরা সবাই ওকে খুব আদর করতাম, এমনকি জারা নিজেও ওকে খুব আদর করতো। আমি রাত দশটার দিকে ফিরে দেখি বাসা বেশ শুনসান নিরব। কোথাও কেউ নেই। জারাকে খুজতে গিয়ে দেখি ঘরের মধ্যে লাইট বন্ধ করে গুম মেরে বসে আছে। আমি জয়ফুলকে ডেকে দেখরাম সে কোথাও নেই। জারার কাছে জনাতে চাইলাম জয়ফুল কোথায়? সে বলল ‘জয়ফুলকে সিগারেট আনতে পাঠিয়েছিলাম এখনও ফেরেনি।’ বললাম মইনুল কোথায় জানতে চাইলে বলল মইনুল জয়ফুলের পিছনে পিছনে গিয়ে নাকি আর ফেরেনি। কি অদ্ভুৎ কথা! আমি খুবই অবাক হলাম। জয়ফুল এরকম মেয়েই না। আমার দুশ্চিন্তা শুরু হলো। জয়ফুল দেখতেশুনতে বেশ ভালো ছিলো। এত রাতে সে বাইরে থাকলে তার নিশ্চিত কোন বিপদ হবে। আমি যতদুর সম্ভব দারোয়ান আর পাভেলকে পাঠিয়ে মা ছেলেকে খুঁজতে পাঠালাম। কিন্তু ওরা রাত একটা পর্যন্ত খুঁজেও মা ছেলে কাউকেই পেলো না। ভাবলাম পরেরদিন থানায় জিডি করব। কিন্তু রাত একটার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করলো আসল ঘটনা। শরীরে অসম্ভব জলুনি শুরু হয়ে গেলো। সময় মতো মাদক না নিতে পারলে এমন অস্থিরতা ওর মধ্যে আগেও দেখেছি। আমি ভেবেছি সেরকম কিছু। কিন্তু সেদিনকার যন্ত্রনা ছিলো একেবারে ভিন্নরকম। বলছে সারা শরীর জ্বলছে। টিকতে না পেরে বাথটাবে গিয়ে গলা ডুবিয়ে বসে থাকে কতক্ষন, বরফ ডলে, এসি ১৬ তে দিয়ে ফ্লোরে শুয়ে থাকে কিন্তু শরীরের জ্বলুনী আর কমে না ওর। তার পর এক সময় টিকতে না পেরে বলল ‘মম আমি একটা ভীষন অন্যায় করে ফেলেছি।’ জানতে চাইলাম কি অন্যায় করেছিস? বলল জয়ফুলকে সিগারেট আনতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমার কাছে তো কোন টাকা ছিলো না। বাকিতে আনতে পাঠিয়েছিরাম। কিন্তু অনেক সময় যাওয়ার পরও জয়ফুল যখন ফিরছিলো না তখন আমি রাগে মইনুল কে ফুটন্ত সেই ডেকসিতে ছেড়ে দিয়েছে।’ এক মুহুর্তের মধ্যে আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমরা কে কি বলব কি করব বুঝতে পারলাম না। অঈ ইকবালই শুধু সেই ভয়ঙ্কর নিরবতাটা ভাঙ্গলেন। বললেন ‘তারপর?’
নিজের আচল দিয়ে চোখ মুছে ধরা গলায় মহিলা বলল ‘এরপর সে নিজের রুমে গিয়ে শান্তভাবে টিভি দেখতে শুরু করে। যখন মনে হলো জয়ফুল এসে তার ছেলেকে ডেকসির মধ্যে দেখবে তখন জারা মইনুলকে পানি থেকে তুলে সার্ভেন্ট টয়লেটে লুকিয়ে রাখে। ওর মা সিগারেট নিয়ে আসার পর মইনুলের কথা জিজ্ঞেস করলে জারা তাকে বলে বলল মইনুল তো তোমার পিছনে পিছনে নীচে গেল। জয়ফুল সেই যে তার ছেলে খুঁজতে গেলো আজ পর্যন্ত আর সে আর ফিরে আসেনি। জয়ফুল দেখতে অনেক সুন্দরী ছিলো। না জানির কি ঘটেছে মেয়েটার ভাগ্যে।’ বলে মহিলা আবার ডুকরে কেঁদে উঠলো। কান্না থামিয়ে আবার বলা শুরু করলো ‘আমি তখনি দৌড়ে সার্ভেন্ট টয়লেটে গিয়ে দেখি খালি। সেখানে কিচ্ছু নেই’
‘বলেন কি? কোথায় গেলো?’ বিস্ময়ে জানতে চাইলো এসি ইকবাল।
‘কি করে বলব বলুন?’
‘কিন্তু এত সব আপনাকে কি আপনার মেয়ে জারাই বলেছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘ও যে সত্যিই বলেছে তার প্রমাণ কি?’
‘কেউ কি খুন করে মিথ্যে বলে অফিসার?’
‘তারপনর?’
‘তারপর থেকে বাসায় শুরু হলো দুই অশুভ আত্মার অত্যাচার।’
‘দুই অশুভ আত্মা মানে?’ প্রথম কথা বলল সায়মন।
‘দুই অশুভ আত্মা মানে মৃত মইনুলের আত্মা আর আমার মেয়ে জারার জিবিত আত্মা। কোন ভালো আত্মা কারো মধ্যে থাকলে সে কি একটা শিশু হত্যা করতে পারে?’
‘কি শুরু হলো বলুন তো...’ এসি ইকবাল আরেকটু ঝুঁকে জানতে চাইলো।
মহিলা পূণরায় চোখ মুছে বলা শুরু করলেন ‘শিশুটির আত্মা যা করতো তা তো আপনারা দেখেছেন-ই। আর জারা তার সকল প্রকার নেশা নিজে থেকে বাদ দিয়ে দিলো। প্রত্যেক দিন সন্ধা থেকে ভোর পর্যন্ত তার শরীর জ্বলা করা শুরু করলো। খালি বলে ওর শরীরে যেন কেউ ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়েছে। খালি মরতে চায়। কত ডাক্তার কবিরাজ দেশ বিদেশ করলাম কিছুতে কিছু হয় না। ঠান্ডা বরফের মধ্যেও রেখিছি কিছুই হয় না। দিন দিন জ্বালা বাড়ে। ও যা করে তা যদি দেখেন তাহলে বলবেন ওর মারা যাওয়াই ভালো। এত কষ্ট পায় যা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। শত হলেও আমি তো ওকে নয় মাস পেটে ধরেছি। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। নাসির সাহেব আপনি সারভেন্ট টয়লেটটা খুলে বরং ভালোই করেছেন।’
‘মানে? আমি জিজ্ঞেস করলাম মহিলাকে।’
‘আত্মার যন্ত্রণায় আমরা যখন অতিষ্ট হয়ে যাই তখন এক তান্ত্রিক এনে ঐ টয়লেটটায় মইনুলের আত্মাকে আটক করার ব্যবস্থা করি। তান্ত্রিক আমাদেরকে ঐ টয়লেটের দরজা খুলতে নিষেধ করেছিলো বারবার। সে বলেছিলো দরজা খুললেই নাকি আত্মাটি বাইরে বেরিয়ে আসবে আর খুন করে ফেলবে ওর খুনিকে।’
আমরা দুজনেই একত্রে সায়মনের দিকে তাকালাম। সায়মন বলল ‘আপনাদের দারোয়ান যে ঐ আত্মাটি দ্বারা খুন হয়েছে তা কি জানেন?’
‘হ্যাঁ আপনারা বলার পর আমি বুঝতে পেরেছি।’
সায়মন সবার দিকে তাকিয়ে বলর ‘এখন শিশুটির আত্মা আরো শক্তিশালী হয়েছে। এখন সে চাইলেই প্রতিশোধ নিতে পারবে।’
‘জারাকে বাঁচানোর কি কোনই উপায় নেই?’ সায়মনকে প্রশ্নটি আমি করলেও সবাই উত্তরের আশায় তাকিয়ে রইলো। সায়মন খুন শক্ত আর নিরব ভাবে বলল ‘না। একেবারেই না।’
‘আমি যদি ওকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আমাদের বিশেষ হেফাজতে রাখি?’ সায়মনের কাছে জানতে চাইলো অঈ ইকবাল।
‘তা রাখতেই পারিস কিন্তু তাতে কোন লাভ হবে বলে মনে হয় না। আত্মার কাজ করার পদ্ধতি আর ডাকাত খুনিদের কাজ করার পদ্ধতি এক নয়। ওরা আবেগ তাড়িত নয়। মানুষের সাথে ওদের অনুভুতি মেলে না। ওরা খেলে পাওয়ার ভার্সেস পাওয়ার। ওদের সাথে ওদের লেভেলের পাওয়ার দিয়ে লড়তে হয়। তোর কামান বন্দুক কোন কাজে আসবে বলে মনে হয় না। তার পরও তুই যেটা ভালো মনে করিস সেটা করতে পারিস।
‘ঐ শিশুর আত্মার বিপরীতে শক্তিশালী কাউকে দাড়াতে হলে সে কেমন পাওয়ার হতে হবে?’
‘সে হতে হবে ওর চেয়ে শক্তিশালী কোন শুভ আত্মা। যার পাওয়ার ওর চেয়ে অনেক বেশী। কিন্তু সেটা হতে হবে পজেটিভ এনার্জি।’
‘কিন্তু কোথায় পাব সেই পজেটিভ এ্যানার্জি? কোথায় আছে সেই শুভ আত্মা?’ উদ্বিগ্নহয়ে জিজ্ঞেস করলো জারার মা। সায়মন আমতা আমতা করে বলল ‘সে বিষয়ে কোন ধারণা নেই আমার। আজ রাতে অমাবস্যা। আজ রাতের পর যে কোন কিছু ঘটতে পারে। আপনারা অবশ্যই সাবধান থাকবেন। তবে মনে হয় না সাবধান থেকে কিছু হবে।’
‘সায়মন আমি বরং ওকে এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যাই।’ বলল এসি ইকবাল।
‘তোর ইচ্ছা’
আমরা আরো কিছু সময় পরে সবাই চলে এলাম। সন্ধার কিছু আগেই আমরা একটি পিকাপে সবকিছু নিয়ে বন্ধু আরিফের বাসায় চলে এলাম। জারাকে কোথাও নেয়া গেলো না। কারণ দেখে মনে হেলো একমাত্র পাগলা গারদ ছাড়া ওকে অন্য কোথাও নিয়ে রাখা যাবে না।
আরিফের বাসা অনেক বড়। ৬/৭টি রুম। ওর বউ বলল ‘আপনারা বাসা খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত এখানে থাকুন। প্রয়োজন পড়লে সব সময়ই থাকতে পারেন। এটা আমার বাবার বাড়ি। ভাড়ার কোন চিন্তা নাই।’
পরের দিন সকালে আমি আর আরিফের শালা সায়মন ড্রইরুমে বসে চা খাচ্ছিলাম আর টিভি দেখছিলাম। টিভির স্ক্রলে আমার চোখ আটকে গেলো। ‘রামপুরার বনশ্রীতে রান্না ঘরে আটকে থাকা গ্যাসে আগুন লেগে নিহত হয়েছে একই পরিবারের চারজন। পুলিশ মইনুল নামের এক চার বছরের শিশুকে ঐ বাসা থেকে অক্ষত উদ্ধার করেছে তবে শিশুটি বাসার কার কি সেটা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।’
আমি সায়মনকে ডাক দিয়ে নিউজটা দেখালাম। সায়মন বলল ‘ও মাই গড না জানি এবার কি হয়..’
আমি বললাম ‘কেন?’
‘মইনুলের এখনও অনেক কাজ বাকি। আপনারা একটু সাবধান থাকবেন দুজনেই।’
এমন সময় আরিফের বউ হৃদি এসে আমাকে বলল ‘নাসির ভাই আপনি একটু ভাবির কাছে যান। ভারি বেশ অসুস্থ’ বলছে সারা শরীর জ্বলছে’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Arpita Basak Nice story ????????
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি গল্পটা খুব কষ্ট করে পড়েছি ....কারণ লেখার মান এত সুন্দর যে লেখক পড়িয়েই ছেড়েছে ....খুব ভাল ........
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
তবে কষ্ট কেন হলো ভ্রাতা বুঝতে পারলাম না? যাই হোক আপনি কষ্ট করেছেন জেনে আমার খারাপ লাগল। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা।
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
মোঃ আক্তারুজ্জামান খুব সুন্দর লিখেছেন। অনেক অনেক ভালো লাগা নিয়ে লেখাটি পড়েছি। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক ধন্যবাদ। এতবড় লেখা যে ধৈর্য্য ধরে পড়েছেন সে জন্য কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা। ভালো থাকবেন সবসময়।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
রুদ্র আমিন আপনার শব্দশৈলীর খেলা বেশ ভালো, ভৌতিক গল্প যদি মনে শিহরণ জাগাতে না পারে তবে সে ভৌতিক হয়ে উঠে না কিন্তু আপনার গল্পটি পেরেছে তেমন হৃদম তুলতে... খুব ভালো লাগছে, শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক অনেক ধন্যবাদ রুদ্র ভাই। ধৈর্য্য ধরে এতো বড় গল্প পড়েছেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ইমরানুল হক বেলাল অনেক বড় গল্প, আমি যখন পড়তে শুরু করি কেমন যেমন বিরক্তিকর লেগেছিল, পড়তে পড়তে ভৌতিক কাহিনীর অনেক রহস্য জানতে পারলাম, তার পর এতটাই ভালো লেগেছে যে পুরো গল্পটা শেষ না করে পারিনি। গল্পের চরিত্র কাহিনী সংলাপ বাস্তব মনে হলো। আসলে আমি ভূত পেরত্নীকে আমিও বিশ্বাস করতাম না, একদিন আমাকে ও ভূত বিপাকের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এটাও সত্য যে, একজন মানুষকে যখন নিরহভাবে খুন করা হয়, কোনো কোনো মানুষটির মৃত দেহ আত্মা হয়ে যায়। সেই আত্মা ভয়ংকর রূপ ধারণ করে খুনিদের হত্যা করা আগ পর্যন্ত পিছু ছাড়েনা। কয়েকটি বানান ভুল হয়েছে এই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন কবি ভাই, আমি মুগ্ধ হয়ে ভোট রেখে গেলাম। সময় হলে আমার পাতায় ঘুরে আসবেন। শুভকামনা নিরন্তর।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক ধন্যবাদ বেলাল ভাই সময় নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য। আপনার পর্যবেক্ষন দেখে আমি রীতিমতো মুগ্ধ। আপনার উল্লেখিত বিষয় গুলি পরবর্তী লেখায় অবশ্যই মনে রাখব। অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
Khairul Baku Bepok voy paise, Oti Osadharon, golpo-kobitay pora prothom golpo, e golpo pore niomio porar issa ase, pls regular likhben
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য।
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
কাজী জাহাঙ্গীর মনে হল পুরো একটা উপন্যাস পড়ে থেমেছি। গল্প অনেক বড় হলেও আপনার শৈল্পিক কারসাজি একেবারে শেষ না করে থামতে দেয়নি, যদিও বেশ কবার চা’য়ে চুমুক দিতে হয়েছে। কিছু বানান প্রমাদ থাকলেও বর্ণনা শৈলী যে নিখুত সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না এবং সেটাই বলে দেয় গ/ক তে প্রথম হলেও মনে হয় লেখায় নতুন না। সেজন্য থাকল অনেক অনেক শুভকামনা । গল্প কবিতায় স্বাগতম, আশা করি পদচারনায় মাতিয়ে রাখবেন সামনের সংখ্যাগুলো। পরিশেষে ভোটটা দিয়ে বাক্সটা ভালো করে আটকে দিলাম যেন কোন অশুভ আত্মা ছায়া ফেলতে না পারে।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনে ধন্যবাদ জাহাঙ্গীর ভাই ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য। বানানের বিষয়ে আমি মনে করেছিলাম গক এডিট করবে। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ফেরদৌস আলম প্রথম মন্তব্যের সাথে একমত। অনেক মুভি দেখেছিলাম এরকম। শেষ পর্যন্ত একটা ক্লু থেকেই যায়। কিন্তু আপনার বর্ণনা আর ভৌতিক গল্পের স্বকীয়তা আপনার শতভাগ দক্ষতা প্রমাণ করেছে। বড় হলেও আমার বেশ ভালো লেগেছে।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক অনেক ধন্যবাদ ফেরদৌস আলম ভাই। আমি খুবই আনন্দিত যে আমার এত্ত বিশাল বড় গল্প আপনি সময় নিয়ে ধৈর্য্য ধরে পড়েছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
মোঃ মোখলেছুর রহমান এবারের সংখ্যায় এটা দিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম,অসাধারন,অতএব ভোট রইল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ মোখলেছুর ভাই। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
আহা রুবন আমার কাছে বর্ণনা বেশ নিখুঁত মনে হল। সু-সাহিত্যিকের লক্ষণ। বড়সড় গল্প হিসেবে খুব ভাল হয়েছে। উচ্চাশা কামনা করি।
অনেক ধন্যবাদ আমার এত্ত বড় গল্প ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমার লেখা কেউ পড়বেই না হা হা হা..... আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

১৫ ডিসেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪