কাছে অাসা

কোমল (এপ্রিল ২০১৮)

রওনক নূর
বি‌য়ের দিনে মেয়েদের হাতের মেহেদীর রং তার স্বপ্নগু‌লো বুন‌তে থা‌কে। ছোট্ট থে‌কে যে স্বপ্ন নি‌য়ে একটু একটু ক‌রে এক‌টি মে‌য়ে বড় হয় ,সেই র‌ঙিন স্বপ্নগু‌লো মে‌হেদীর রং‌কে আরো গাঢ় ক‌রে। ‌কিন্তু রু‌চিকার চো‌খের জল তার হা‌তে আঁকা মেহেদীর স্বপ্নগু‌লো‌কে ধূসর ক‌রে দি‌চ্ছে। অথচ এই মে‌য়েটিই তার বি‌য়ে নি‌য়ে কত স্বপ্ন দেখ‌তো। খুব সাদামাঠা ভা‌বেই রু‌চিকার বি‌য়েটা হ‌চ্ছে। বি‌য়ে‌তে দুই প‌রিবা‌রের লোক ছাড়া বাইরে র কেউ নেই। এই বি‌য়ে‌তে রু‌চিকার মত সবার ম‌নেই কোন আনন্দ নেই। বি‌য়েটা শুধু রু‌চিকার বো‌নের সন্তানটার মু‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে হ‌চ্ছে, যে সন্তান আজ থে‌কে রু‌চিকা‌কে মা ব‌লে ডাক‌বে। রু‌চিকার মা হওয়ার স্বপ্ন পূরন হ‌লেও বোন হারা‌নোর ক‌ষ্টে সব আনন্দ ফি‌কে হ‌য়ে গে‌ছে।

‌ছোট‌বেলা থে‌কে রু‌চিকা জা‌নে ও কখনও মা হ‌তে পার‌বেনা। কিন্তু ওর ম‌নে মা হবার তীব্র আকাঙ্খা সেই বুঝ‌তে শেখা থে‌কে। বড় বোন সন্তান সম্ভবা হওয়ার পর থে‌কে তার সব দা‌য়িত্ব রু‌চিকার উপর ছি‌লো। সেই থে‌কে রু‌চিকা বড় বো‌নের বাসায়। বোন প্রায়ই রু‌চিকা‌কে বল‌তো আমিব না থাক‌লে তুই আমার বাচ্চার মা হ‌য়ে যাস। আজ বো‌নের মু‌খের সেই কথা সত্য হ‌তে যা‌চ্ছে। বাচ্চা জ‌ন্মের সময় বো‌নের অনাকা‌ঙ্খিত মৃত্যু আজ প্রত্যেকটা সম্পর্ক‌কে বদ‌লে দি‌চ্ছে।

বাসর ঘ‌রে ঢুক‌তেই এহসান দেখ‌লো রু‌চিকা বাবু সোনা‌কে নি‌য়ে ঘু‌মি‌য়ে আছে । অনাকা‌ঙ্খিত হ‌লেও তার একমাত্র শ্যা‌লিকা আজ থে‌কে তার বউ। য‌দিও সে চো‌খে কখনও দে‌খে‌নি সে রু‌চিকা‌কে। সন্তা‌নের কথা চিন্তা ক‌রেই সে রু‌চিকা‌কে বি‌য়ে ক‌রে‌ছে। রু‌চিকা অবশ্য এহসান‌কে ভাইয়া বলেই ডা‌কে। খুব কষ্ট হ‌চ্ছে মে‌য়েটার জন্য। প্রতিটি মে‌য়ে বাসর রাতটা নি‌য়ে কত স্বপ্ন দে‌খে, আর রু‌চিকার বাসর রাতটা কাট‌ছে বো‌নের সন্তান‌কে বু‌কে নি‌য়ে। বি‌য়েটা‌তে অবশ্য এহসা‌নের অনিবচ্ছা থাক‌লেও রু‌চিকার ইচ্ছাটা ছি‌লো। কারন রু‌চিকা বাবু সোনার মা হ‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো।

রু‌চিকা প্রথম দিন থে‌কে বাবু সোনার মা হ‌য়ে গে‌ছে। এহসান খুব অবাক হয় মে‌য়ে‌টি‌কে দে‌খে । পৃ‌থিবীর কা‌রো বোঝার ক্ষমতা নেই যে রু‌চিকা বাবু সোনা কে জন্ম দেয়‌নি। সব সম্পর্কগু‌লো‌তে ও স্বাভা‌বিক থাক‌লেও এহসা‌নের সা‌থে এখনও স্বাভা‌বিক হ‌তে পা‌রি‌নি। দুজন মানুষ এক ছা‌দের নি‌চে, এক বিছানা‌তে শুধুমাত্র সন্তা‌নের জন্য কা‌টি‌য়ে দি‌চ্ছে দি‌নের পর দিন। এহসানও কখনও স্বামীর অধিকার নি‌য়ে রু‌চিকার কা‌ছে যায়‌নি। ত‌বে স্বামীর অন্যান্য সকল দা‌য়িত্ব পালন কর‌তে এহসান সবসময় রু‌চিকার পা‌শে থা‌কে।

রু‌চিকার সমস্ত কিছু জু‌ড়ে শুধু বাবু সোনা। বাবু সোনা একটু একটু ক‌রে বড় হ‌চ্ছে। আধো আধো মু‌খে বু‌লি ফুট‌ছে। তার মু‌খের প্রথম শব্দটা ছি‌লো মা। যে‌দিন প্রথম বাবু সোনা মা ব‌লে ডে‌কে‌ছি‌লো সে‌দিন রু‌চিকা চিৎকার ক‌রে কেঁ‌দে‌ছি‌লো। তার আন‌ন্দের অশ্রু দে‌খে এহসানও গোপ‌নে চো‌খের জল ফে‌লে‌ছি‌লো। মা হওয়ার এত তীব্র আকাঙ্খাই মে‌য়ে‌দের‌কে সব রকম সে‌ক্রিফাইস কর‌তে সাহায্য ক‌রে।

রু‌চিকার মা এসে‌‌ছে ওদেবর বাসায়। উনি বুঝ‌তে পে‌রে‌ছেন যে এহসান আর রু‌চিকা এখনও স্বাভা‌বিক স্বামী স্ত্রীর সম্প‌র্কে নেই। বিকা‌লে এহসান আর রু‌চিকার মা রু‌চিকা‌কে বুঝা‌লো যে তা‌দের সন্তা‌নের জন্য হ‌লেও স্বামী স্ত্রীর স্বাভা‌বিক সম্পর্ক তা‌দের ম‌ধ্যে গড়‌তে হ‌বে। রু‌চিকা কিছু না ব‌লে চোখ দি‌য়ে শুধু অশ্রু ঝরা‌লো। শুধু বাবু সোনা‌কে বু‌কের ম‌ধ্যে জ‌ড়ি‌য়ে বেঁ‌চে থাকার স্বপ্ন দে‌খে সে। তার কোন স্বপ্ন এখনও এহসান নেই। শুধুমাত্র মা হবার তাড়না‌তে সে এসহান‌কে স্বামী হিসা‌বে গ্রহন ক‌রে‌ছে। কিন্তু এহসা‌নের কথা যে সে ভা‌বেনা সেটাও নয়। সে এহসানকে শ্রদ্ধা ক‌রে। যে সম্মান তা‌কে এহসান দি‌য়ে‌ছে তা হয়ত আর কেউ তা‌কে দি‌তোনা।

বাবু সোনার হঠাৎ জ্বর আসা‌তে রু‌চিকা খুব উদ্বিহগ্ন । সারাটা দিন কিছু মু‌খে নি‌লোনা সে। মধ্যরা‌তে এহসা‌নের ঘুম ভাঙা‌তে সে অবাক হ‌য়ে দেখ‌লো রু‌চিকা জে‌গে আছেস, ফ্যাল ফ্যাল ক‌রে তা‌কি‌য়ে আছে বাবু সোনার দি‌কে। এহসান প্রথম বা‌রের মত রু‌চিকার মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে বল‌লো, " কিচ্ছু হ‌বেনা আমা‌দের ক‌লিজার টুকরার, ও খুব ভা‌লো থাক‌বে। তু‌মি ভয় পেওনা।" এহসা‌নের কথা শু‌নে রু‌চিকা কাঁদ‌তে লাগ‌লো। আজ প্রথমবার এহসান‌কে তার নি‌জের স্বামী ম‌নে হ‌চ্ছে। খুব নির্ভর কর‌তে ইচ্ছে কর‌ছে।

আজ বি‌য়ের দুই বছর হল রু‌চিকা আর এহসা‌নের। কিন্তু এহসা‌নের কা‌ছে দিন‌টি অন্যান্য দি‌নের মত সাধারন এক‌টি দিন। বাসায় ফেরার সময় কিছু না ভেবেই রু‌চিকার জন্য এক ডজন কা‌চের চু‌ড়ি কিনে আন‌লো এহসান। বাসায় ঢু‌কেই সে অন্য এক রু‌চিকা‌কে দেখ‌তে পে‌লো। খুব সে‌জে‌ছে আজ মে‌য়েটা। সবুজ শাড়ীতে অদ্ভুত সুন্দর লাগ‌ছে ওকেস। কপা‌লে লাল র‌ঙের টিপ ওর সৌন্দর্য বা‌ড়ি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে আরও বহু গুন। আজ রু‌চিকা‌কে স‌ত্যিই বউ বউ লাগ‌ছে এহসা‌নের কা‌ছে। ঘ‌রে ঢুকতেই রু‌চিকা এহসান‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ব‌লে, " আজ থে‌কে আমিব আমার সন্তা‌নের বাবার স‌ত্যিকা‌রের স্ত্রী হ‌তে চাই।" এহসান কোন কিছু না ব‌লেই শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে তার সন্তা‌নের মা‌কে। দুজন দুজ‌নের এতটা কা‌ছে যায় যেখান থে‌কে একজন আরে্কজন‌কে খুব আপন ভা‌বে অনুভব করা যায়।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু বোনের অনাকাংখিত মৃত্যুটা খুব দুঃখজনক। যে কখনও মা হতে পারবে না, বোনের সন্তানের মা হওয়ার মাধ্যমে তার মা হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা দূর হলো, এটা অনেক আনন্দের। --- সন্তানের সত্যিকারের মা হওয়ার সিদ্ধান্তটা খুবই সুন্দর। অনেক ভাল লাগল। আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করবেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
নাঈম রেজা অনেক সুন্দর গল্প ধন্যবাদ আপা
কাজী জাহাঙ্গীর ভালই লিখেছেন তবে ক্লাইমেক্সটা কেমন জানি সেরকম আসেনি, যেটাকে হয়তো আরেকটু টানা যেত। অনেক শুভকামনা , ভোট আর আমন্ত্রণ রইল।
মাসুদ হোসেন রনি অনেক সুন্দর গল্প লিখছেন আপনি। ধন্যবাদ আপা আপনাকে।
সালসাবিলা নকি খুব ভালো লেগেছে গল্পটি। এরকম বাস্তবে দেখেছি আমি। তাই আরও ভালো লেগেছে। কাল্পনিক মনে হয়নি।
সাদিক ইসলাম রুচিকার মতো কোমলপ্রাণ মন সবার কাম্য; এটাই নারীত্ব। ভালো লাগলো শেষটুকুতে এসে। শুভ কামনা আর ভোট রইলো।
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া ছোট্ট একটি গল্প;কিন্তু ব্যাপক এর ভাবের পরিধি। বড়ই কোমল মানুষের মন; আরো কোমল তার অনুভূতি প্রকাশের ভাষাগুলো; যখন মনের মধ্যে কিছু একটা তোলপাড় হয়। আর এ তোলপাড়টা করে সেই কোমলতাই। ভালো লাগল ছোট্ট গল্পটি। পছন্দ, ভোট ও শুভকামনা। আসবেন আমার পাতায়।
ম নি র মো হা ম্ম দ কিচ্ছু হ‌বেনা আমা‌দের ক‌লিজার টুকরার, ও খুব ভা‌লো থাক‌বে। তু‌মি ভয় পেওনা...ভালো লাগল প্রিয়।।আমার পাতায় আমন্ত্রণ জানিয়ে গেলাম।।

১৩ নভেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪