অঞ্চলটা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। তারই বিভাগীয় শহরের কয়েক কিলোমিটার পূর্বে একটি পাবলিক ভার্সিটি। পেছন দিকটাতে যে এলাকা আছে তা বেশি বিস্তৃত নয়। তারও বেশির ভাগটা জুড়ে মেস, বোর্ডিং। টিনের চালা, মাটির দেয়ালেরও মেস আছে। নিতান্ত হতদরিদ্র কিছু ছাত্রদের এখানেই প্রথম এসে উঠতে হয়। পরে পলিটিকাল বা লিগ্যালভাবে হলে উঠে যায়। এসব নীড়েরই এক নবাগত অতিথি আমাদের আজকের গল্পের নায়ক। মধ্যমণি। সময়টা এখন জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি। খই-ভাজা গরম পড়ছে চারদিকে। বাইরে দু দণ্ড টেকা যায়না। এক লিটার পানি পান করলে বিনিময়ে শরীর থেকে দুই লিটার বেরিয়ে যায়। এমন ভ্যাপসা গরমে উনি শুয়ে আছেন। দুপুর গড়িয়ে গেছে একটু আগে। তোষকহীন চৌকিতে গরমে এপাশ ওপাশ করছেন একটু পরপর। মাঝে মাঝে হাঁস-ফাঁসও করছেন।
.
.
আবার এমন একটা সময়ে উনি খানিকটা স্মৃতিকাতরও হয়ে পড়ছেন থেকে থেকে। স্মৃতিগুলো কৈশোরের। বেশ কষ্টের। সে সময়টাতে এমন প্রখর রোদেও তিনি অন্যের জমিতে মজুরি খেটেছেন। তাও আবার চরাঞ্চলে। বিশেষ করে নদীতে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পরে যেসব নতুন চর জেগে উঠে-সেসবে। তীব্র রোদ আর গরমে কাজ করতে করতে ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে। দৌড়ে নেমে গেছেন নদীর কোমর পানিতে। আজঁলা ভরে যতক্ষণ পারা যায় নদীর ঘোলা পানি খেয়েছেন। কী স্বাদ সেই মিঠা পানির! সবচেয়ে সুখময় স্মৃতিটা তারও অনেক পরের। যখন ভার্সিটিতে চান্স পেলেন। তখন গ্রামের লোকেরা কত দরদ নিয়ে বলল, “যাক বাবা যাক! আল্লা’ই মুখ তুলে তাকাইছে। বাপ নাই, মাও নাই। ছোটত থ্যাকে কী কষ্টডাই না করলে। যাক, আল্লা’ই অনেক বড় করুক। ব্যাচে রাখুক। ম্যালা দুয়া করি।” এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয় বুঝে গেছেন যে, আমাদের গল্পের নায়ক এতিম ও দুঃস্থ। সেই সাথে নিতান্ত অসহায়।
.
.
কালো ফিতার ক্যাসিও ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে এক ঝটকা মেরে শোয়া থেকে উনি উঠে বসলন। আরে বাবা! আড়াইটা বাজে!
নিজে নিজেই তীব্র আফসোসের সুরে বললেন। তিনটায় প্রথম টিউশনি। দৌড়ে চলে গেলেন টিউবওয়েল পাড়ের দিকে। ‘আমার ভাগ্য নির্ঘাত ভাল’! কথাটা মনে মনে জপলেন। না হলে এমন পঞ্চাশ টাকায় কেনা নকল ক্যাসিও ঘড়ি এখনও ঠিকঠাক সময় দিচ্ছে। এ এলাকায় এমনিতেই টিউশনির মূল্য বেশ উপেক্ষিত। বেতন কম। তার উপর তা পাওয়াও আবার চাকুরির বাজারের মত। যুদ্ধ করে পেতে হয়। দু একদিন লেট করলে বা উল্টাপাল্টা দেখলেই - আউট! স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালে সাঁটানো আছে বর্গাকৃতির একটা মাঝারি সাইজের আয়না। তার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা চিরুনি করলেন। প্যান্ট পড়লেন। বেশ ঢিলা কোমরের। বেল্ট দিয়ে আটকে রাখতে হয়। হাঁটার সময় পেছন দিক থেকে তাকালে বেশ খারাপ লাগে। যিনি প্যান্টটা পরেন তার নয়, যারা তাকে দেখেন-তাদের। শার্টটাও বেশ ঢিলা। বলে রাখা কর্তব্য, এই দুটো পরিধেয়ই অন্যের দান করা, তাও আবার দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর।
.
.
তিনটায় যে স্টুডেন্টটাকে পড়ান সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা ভার্সিটির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। বেতন চারশ টাকা। তবুও শর্ত আছে। ছেলেকে বেশি জোরে ধমক দেয়া যাবেনা। বাবা মা’র একমাত্র ছেলে বলে। পেটের দিকে তাকিয়ে সেটুকুও মেইনটেইন করে চলতে হয়। প্রথম দিনই ছাত্রের বাবা বলে দিয়েছেন – দ্যাখো ভাই, আমি জানি তোমার অভাব অনেক। কিন্তু আমারও অভাবের সংসার। তার উপর জিনিসপাতির দাম দুদিন পরপর হুহু করে বাড়ে। আমাদের বেতন কিন্তু বাড়ে তার উল্টো গতিতে। হুটহাট বেতন বাড়ানোর কথা বলিওনা। তাতে আমি লজ্জাও পাব আর তোমারও ভোগান্তি বাড়বে। তার চাইতে না পোষালে ছেড়ে দিও। পে-স্কেল পাওয়ার আগে তোমার বেতন চারশো থেকে চারশো এক টাকা করার ক্ষমতাও আমার নেই। বুঝেছ?
- জ্বী ভাই, বুঝেছি। আমার পড়াতে কোন-ও সমস্যা নেই। আমি পড়াব। আর সমস্যা হলেও আপনাকে খোলাখুলি বলব।
.
.
শুনে অবাক হবেন না যে-আমাদের গল্পের নায়ক এই বাসায় নাস্তা হিসেবে রোজ একই খাবার পান। তবে তা পুষ্টিকর ও শক্ত খাবার। পেটে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হওয়ার মত। শরীরে শক্তির বেশ যোগান দেয়। খবারটির নাম ছোলা-মুড়ি। এতে অবশ্য উনার অনেক বড় একটা উপকার হয়। মাসের শেষ দশদিনে মাস চালাতে যখন হিমশিম খান, তখন তিনি উপোস থাকেন। দুপুর বেলা করে। সকালের নাস্তা করার পর ঘন ঘন পেট ভরে পানি খান। কিন্তু এই টিউশনিতে এসে ক্ষুধার্ত বাঘের মত ছোলা-মুড়িটুকু খেয়ে নেন। বাটিতে ছোট্ট দু একটা ছোলা বা মুড়ি অবশিষ্ট থাকলেও চামচ দিয়ে সেটাও কোনরকমে তুলে খেতে ভুলেন না। মাঝে মাঝে এইটুকু দৃশ্য তার স্টুডেন্ট আড়চোখে দেখলেও তার কিছুই করার থাকেনা। কেননা ক্ষুধার কোন লজ্জা থাকেনা। তারও নেই। তবে উনার অনাবৃত উদর দেখার সুযোগ যদি কখনো মিলে-তবে দেখবেন তার পিঠ ও পেটের চামড়া প্রায়ই লাগোয়া। খুবই নিকটের। পেটের মধ্যে এমন আগ্নেয়গিরি জ্বলন্ত থাকলেও বাইরে তিনি কী প্রশান্ত ও সুশান্ত মানুষ। কী নিশ্চুপ, কী গভীর নিমগ্ন শুধু নিজের মাঝেই। কোথাও তার এতটুকু আন্দোলন নেই, হাহাকার নেই। নেই কারো কাছেই কোন দাবি বা অভিযোগ। নেই দয়া-ভিক্ষা বা করজোড়ে প্রার্থনা। সবকিছুই তার নিজের একান্ত-বৃত্তে পোষ মানানো। চলুন আমরা তার পরের ঘটনায় যাই।
.
.
প্রথম টিউশনিটা শেষ করে তিনি দ্বিতীয়টার জন্য ছুটেন। মাঝখানের পথটুকুতে হাঁটা পথের দূরত্বে চল্লিশ মিনিট সময় লেগে যায়। ততক্ষণে সন্ধ্যা মিলিয়ে যায়। রাত নেমে আসে শহুরে জনপদে। স্টুডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় স্টুডেন্টটা খুব ব্রিলিয়ান্ট। কিন্তু উল্টো দিকে আবার প্রচণ্ড ফাঁকিবাজ, একরোখা ও খামখেয়ালি। বাবা-মা, ভাই, বা টিচার কাউকেই তোয়াক্কা করে না। নানা কোশল ও ফন্দি এঁটে তাকে পড়াতে হয়। তার বাবা মেট্রোপলিটন থানার ওসি। সুতরাং টাকার কোন অভাব কোন দিক থেকেই নেই। মা’ও উচ্চ শিক্ষিতা। সুতরাং পিচ্চি ছেলে হিসেবে এত বেশি এডভান্স যে, মাঝে মাঝে আমাদের গল্পের নায়ককেই পল্টি খাইয়ে ছাড়ে। আজ যখন তিনি সবকিছু গুছিয়ে পড়ানো শুরু করতে যাবেন তখনই সে মিহি সুরে আবদার করে বলে, স্যার, কার্ড খেলবেন?
- কীসের কার্ড? আর পড়ার সময় কার্ড খেলা কী জন্য?
- আরে-এ-এ স্যার, কার্ড মানে বুঝেন না? আপনি না ভার্সিটিতে পড়েন। ওখানকার সবাই তো খেলে। কার্ড মানে তাস্, তাস্! খেলবেন স্যার?
- মিথ্, তুমি এত বেয়াদব হলে ক্যামনে? স্যারের সাথে কেউ কার্ড খেলে?
- হা হা হা হা ! স্যার আমি হাসতে হাসতে উল্টে পড়ে যাব। আমাকে ধরেন, ধরেন!
- অ্যাঁয়, বেয়াদবি রাখবে?
- আচ্ছা সরি-ই-ই স্যার, বেয়াদবি করছি না। আব্বুর সাথে যদি খেলা যায়, আম্মুর সাথে যদি খেলা যায়, ভাইয়ার সাথে যদি খেলা যায়-তাহলে স্যারের সাথে খেলা যাবেনা কেন?
- তুমি কি তোমার আব্বু-আম্মুর সাথেও কার্ড খেল নাকি?
- আব্বু, আম্মু, ভাইয়া আর আমি-এই চারজনে মিলে প্রায় ছুটির দিনেই তো আমরা কার্ড খেলি। নো প্রবলেম! আমরা কত ইনজয় করি স্যার। আর আপনি এখনও কার্ড খেলা বুঝেনই না! হা হা হা হা!
- তাহলে তো সর্বনাশ!
- কী সর্বনাশ! স্যার?
- না না কিছুনা। তুমি পড়তে শুরু করো।
এরই মধ্যে মিথের আম্মু নাশতা দিতে আসে। যাওয়ার সময় ছেলেকে ধমক দিয়ে বলে গেল - ‘ অ্যাই মিথ্, আবার স্যারের সাথে দুষ্টুমি করা হচ্ছে, না? মনযোগ দিয়ে পড় কিন্তু। মহিলা চলে যাওয়া মাত্রই মিথ্ ফিসফিসিয়ে বলল, স্যার, লাস্ট একটা রিকুয়েস্ট!
- কী? আবার পড়া ফাঁকি দেয়ার মতলব, না?
- না, না, স্যার! পড়ার জন্য মতলব!
- তাই? কী মতলব, বল দেখি। বেশ উৎসাহ নিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
- একটা কুইজ আছে স্যার আপনার জন্য। কুইজটা ধরা হয়ে গেলেই আমি পড়া শুরু করব স্যার, প্রমিজ! একদম প্রমিজ! পাক্কা শিউর! এড়িয়ে যাবার জন্য আমাদের নায়ক বললেন,
- উঁ!
- উঁ না স্যার! কুইজ, কুইজ! পাজল! আপনি বলতে পারলে আমি বাকী সময়টা খুব মনযোগ দিয়ে পড়ব।
- আর বলতে না পারলে পড়বে না? এবার মিথ্ একটা দুষ্টুমির একটা হাসি দিল।
- হি হি হি হি! না, না, স্যার! তবুও পড়ব। আপনি যেভাবে পড়তে বলবেন, সেভাবেই।
- আচ্ছা, বল তোমার কুইজ!
- আ-আ-আচ্ছা স্যার! আজকে আমার আম্মুকে দেখতে একটু ডিফ্রেন্ট লাগছিল। আপনাকে বলতে হবে-ডিফ্রেন্সটা কী ছিল?
- আমি কীভাবে বলব? আমি কি তোমার আম্মুর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকি নাকি? আমি ঠিকমত তো খেয়ালই করিনি। তোমার আম্মু যখন এসেছিল, তখন তো মাথা নিচু করে তোমার বই দেখছিলাম।
- ওহ্ স্যার! আপনি থাকেন কোথায় আসলে? নিশ্চয় তখন ঘুমাচ্ছিলেন, না?
- মি-ই-ই-থ, বেয়াদবি করছ কিন্তু আবার!
- সরি স্যার! আম্মুকে একটু খেয়াল করবেন না। তাহলে তো আমার কুইজের উত্তর সহজেই দিতে পারতেন।
- কেন? উনি কি আজ খুব রেগে আছেন?
- না, স্যার!
- তাহলে? আজকে কি উনার বার্থ ডে?
- ওহ্ নো স্যার। আরেকটু চিন্তা করেন।
- তোমার আব্বুর বার্থ ডে বা প্রমোশন হয়েছে? তাই বেশি খুশি উনি?
- ওসব কিচ্ছু না স্যার! বলুন, আম্মুকে আজ দেখতে কেমন লাগছিল?
- কেমন আবার? প্রতিদিন যেমন লাগে ঠিক তেমনই! আলাদা কিছু ছিল নাকি?
- উঁ হু স্যার, আজকের স্পেশালিটি ছিল আম্মুর চুলে! টানটান উত্তেজনা নিয়ে মিথ বলে। আম্মুর মাথার চুল আজকে খোলা ছিল। অ্যাট লিস্ট এবার বলুন স্যার, চুলগুলোর কোন স্পেশাল কিছু চোখে পড়েছে কিনা?
- এবার বুঝেছি, ফাঁকিবাজ! পড়ার সময়টা পাস করার জন্য আজ আম্মুর চুলের গল্প ফাঁদা হয়েছে, না?
- নো-ও-ও স্যার! সিরিয়াসলি। আরো অবাক করার মত চোখ-মুখ উৎসুক ভঙ্গির মত করে বলে,
- আম্মুর চুলগুলো পার্মিং করা ছিল! দেখতে ভেরি নাইস লাগছিল আম্মুকে।
- কী? কী করা ছিল তোমার আম্মুর চুল।
- পার্মিং, পার্মিং, স্যার। মানে নদীর পানির ঢেউয়ের মত। ঢেউ ঢেউ করা চুলকেই পার্মি বলে স্যার।
- ও-ও-ও তাই। বুঝলাম। ব্যস্, হয়েছে। এখন পড়া শুরু কর।
- নো-ও-ও স্যার। এখনই তো আমার আসল কুইজ, পাজল। বলুন তো স্যার, আম্মুর চুল পার্মিং করতে পার্লারে কত টাকা লেগেছে?
- মিথ্, আমি কোনও দিনও শুনি নাই এসব। সো, নো আইডিয়া।
- তবুও স্যার। একটা কিছু বলেন। আইডিয়া করেন, দেখি আপনার আইডিয়া কেমন?
- জোর করেই আইডিয়া করব।
- হু। মুচকি হেসে বলে মিথ্।
- কত আর হবে। দুই থেকে পাঁচশো।
এবার যতটুকু শব্দ করে হাসা যায় এমন শব্দ করে হাসতে লাগল মিথ্। সে হাসি আর থামতেই চায় না। কিছুক্ষণ পরপর কোন রকমে হাসি থামিয়ে বলে, কত বললেন স্যার, পাঁচশো! বলেই আবার হাসিতে ফেটে পড়ে। একেবারে হাসি থামিয়ে বলে,
- আসলেই আপনার কোন আইডিয়া নেই, স্যার। আম্মু পার্লারে পার্মিএর জন্য পেমেন্ট করেছিল পঁচিশশো টাকা! পাঁচশো থেকে আরো দুই-ই হাজার টাকা বেশি। পঁচিশশো টাকা স্যার, পঁচিশশো!
ততক্ষণে আমাদের গল্পের নায়ক থতমত খেয়ে বলে,
- বলেছিলাম না – আই হ্যাভ নো আইডিয়া।
- ইয়েস স্যার, ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া!
মিথ্ তার প্রমিজ রাখে। পড়া শুরু করে। হতভম্ব হয়ে যায় আমাদের নায়ক। তার টিউশনির ফি থেকেও মিথের আম্মুর চুলে ব্যয় হওয়া টাকার পরিমাণ আরো চৌদ্দশো বেশি। চাইলে তো তারা তার টিউশনির ফি’টা বাড়িয়ে অন্তত একটা রাউন্ড এমাউন্ট বা পনেরশো টাকা করতে পারে। কিন্তু তা তো করে না। সেদিকে হয়তো তাদের খেয়াল করার প্রয়োজন পড়ে না। আর খেয়াল করিয়ে দিলেও তাতে যদি তাদের চিন্তার ব্যাঘাত ঘটে যায়। তখন হিতে বিপরীতে টিউশনিটাই চলে যাওয়ার ভয়।
.
.
মিথের আম্মু আবার একটা খাম নিয়ে রুমে আসে। আমাদের গল্পের নায়কের টিউশন ফি তাতে আছে। মহিলা হাসিমুখে উনার হাতে দিয়েই চলে যান। ‘আন্টি, টিউশন ফি’টা যদি একটু বাড়াতেন’ – এই অনুচ্চারিত ছোট্ট বাক্যটি বলতে গিয়েও নায়ক থেমে যান। মনের ভিতর থেকে হাজারটা বারণ আসে বলে। তবে মহিলার পার্মিং করা চুলে একবার দৃষ্টিপাত করেন এক আকাশ হতাশা নিয়ে। কোত্থেকে তার মনের কোণে ঘন কালো মেঘ জমে যায়। তিনি নিমিষেই আবার স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। মনে পড়ে যায় – কৈশোরের আঁজলা ভরে নদীর ঘোলা পানি খাওয়ার কথা। দুপুরে উপোস থেকে গোগ্রাসে ছোলা-মুড়ি খাওয়ার কথা। ঢিলেঢালা শার্ট-প্যান্টের কথা। চোখের সামনে নেমে আসে এক সুগভীর অথচ লড়াকু জীবনের ইতিবৃত্ত। যেখানে স্বপ্নরা মরিচিকার মত ছলনা করতে থাকে প্রতিদিন। তবুও আমাদের গল্পের নায়ক প্রতিটি মুহুর্তে আশায় বুক বেঁধে সামনে চলতে থাকেন।
.
.
মিথদের ফ্ল্যাট থেকে রাস্তায় নেমে আসেন তিনি। চোখের কোণায় জল ছল ছল করছে তখন। পা দুটো ভারী হয়ে গেছে। স্বল্প দূরত্বের পা ফেলে তবুও উনি চলতে শুরু করেন আবার। সেই চেনা পথে। তার শশব্যস্ত পায়ের পাতার নিচে রাতের আঁধার খানিকটা করে যেন থেতলে যায়। যেন ইচ্ছে করেই। টুপ করে মাটিতে পড়ে হাওয়া হয়ে যায় কপালের ঘাম। মোমবাতির ক্ষীণ আলোয় মোড়ের বাদাম বিক্রেতা তার দিকে তাকিয়ে থাকে একমুঠো বাদাম বিক্রির আশায়। কিন্তু সে খরিদ্দার নয়। সেও এক দোকানী। এক ছোট্ট জীবনের। যেখানে দিন শেষে তার আয়-রোজগার হিসেব করে দিনাতিপাত করতে হয়। তারও একটা ছোট্ট পৃথিবী আছে। সে ভাবে, সেই পৃথিবীটা এখনো কতদূর? সে আবার ভাবে, কেউই কি বুঝবে কথাটার মানে? জগতটা এখনো কতদূর! জগতটা শুধু তারই! অন্ধকারময়!