অসাম্প্রদায়িক

ভৌতিক (সেপ্টেম্বর ২০১৭)

ফেরদৌস আলম
  • ২০
  • ৩৭
একটা সাধারণ সন্ধ্যারাত। শীতের সন্ধ্যা। চারপাশ ঘেষে কুয়াশা থাকার কথা, যথারীতি তাই আছে।গাম্ভীর্য ভর করে আছে সে কুয়াশার পিঠের উপর। সিএনজিটা স্বাভাবিক গতিতেই কুয়াশার কোমল ঢেউ কেটে কেটে সামনে এগোচ্ছে। কী যেন ভাবছিলাম মাথাটা নিচু করে, বহু দূরের অন্ধকারে তাকিয়ে। ভাবনাটা নিজের জন্যই ছিল। স্বার্থপর মানুষ বাইরের বিষয় নিয়ে কম চিন্তা করে, সেদিক থেকে আমি স্বার্থপরই। তাই চারপাশে যে এত যোগ-বিয়োগ প্রতিনিয়ত হচ্ছে-সেদিকে তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই আমার। এই হাবিজাবি ভাবার সাথে সাথে আনমনে দুপাশের গাছ-গাছালির ছুটে যাওয়া অনুভব করছিলাম। হঠাৎ একটা ঘটনা চোখের সামনে এল, নিতান্ত সাধারণ ঘটনা। হর-হামেশায় চোখে পড়ে। খুব কম সময়ই দৃষ্টিতে স্থায়ী ছিল। কিন্তু নিমিষেই চোখ হয়ে দৌড়ে মাথায় গিয়ে জেঁকে বসল। মাথাটা ঘিন ঘিন করছে সেই তখন থেকেই। ঝিম মেরে আছে চিন্তার রাজ্য। ভাল্লাগছে না। কী করব? সে উপায়ও ভেবে পাচ্ছি না। এমন ঘটনা কতই তো দেখি, ভুলেও যাই। কত মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা চোখে পড়ে, এরপর সে কারণে হৃদয় পুড়ে, দু একজনের সাথে আলাপ-আলোচনায় তাতে দরদ, রাগ দেখাই, আবার সমাধান করি মুখে মুখেই। বাসায় ফিরলেই সকল মানব-প্রেম ভুলে আত্মপ্রেমে মজি মুহুর্তেই। আজকের চেনা ঘটনা সেই অভ্যাসটাকেই বদলে দিল, যেন ঘটনা আরো কিছু ঘটনা বলতে চায়। নতুন কিছু শোনাতে চায়, কিছু উপলব্ধি করাতে চায়।যেন আমার চোখে কোন এক অজানা অস্থিরতা নেমে এল।
.
যে ঘটনাটা দেখেছি, তাতে একজন ভুক্তোভুগী আছে, থাকতেই পারে। কিন্তু সে ভুক্তভোগীর সাথে আমার দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। এখন সমস্যাক্রান্ত পৃথিবীতে যে ভয়াবহ অবস্থা চলছে, তাতে প্রত্যেকটা ঘটনায় কোন না কোন পক্ষ ভুক্তভোগী থাকেই। একের দুঃখ তো, অপরের সুখ। ভাবছিলাম ঘটনাটা কাউকে খুব দরদ নিয়ে বলব, কিন্তু যদি হেসেই উড়িয়ে দেয় – তখন বেশ কষ্ট হবে। ঘটনার সাথে এতক্ষণে যে আরো মায়া জমে গেছে। মায়ার জন্য মায়া দেখলে ভালো লাগে, কিন্তু সে মায়ার জন্য বিদ্রুপ দেখলে সহ্য করা যায় না। মানুষের ভিতর বা বাহিরে – যেখানেই হোক, যে জিনিসটা মানুষ মায়া, দরদ কিংবা আবেগ দিয়ে পুষে রাখে, তিলতিল করে সযত্নে লালন করে, তার প্রতি অন্য মানুষের সামান্য অবহেলা, উপহাস, কিংবা অপমান সেই মানুষটাকে যেন মাটির সাথে মিশে ফেলে। তাই দরদ, মায়া, ভালোবাসা, আবেগ কিংবা সব হৃদয়ানুভূতিই মারাত্মক রকমের স্পর্শকাতর। সেটা অন্যের হলে তা নিয়ে বরং অতি সাবধানেই কথা বলতে হয়। আমার দ্বিধাদ্বন্দ্ব বেশ প্রকট হল, ঘটনার ব্যাপারে আমার কী করা উচিত-এই নিয়ে। নিতান্ত নিরুপায় হয়ে চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিলাম। আয়েশ করে হাত-পা লম্বা করে বিছানায় শোলাম। চোখ বুঁজে আছি। তখনও ঘটনাটা মাথার মধ্যে বিড়বিড় করছে। মনের কম্পাস কাঁটা অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু লাভ হলনা। বাধ্য হয়ে একটা পত্রিকা হাতে নিলাম। লেখাগুলো চোখে পড়ে কিন্তু মনঃসংযোগ থাকে অন্যদিকে। ছবিগুলোও দেখতে কেমন জানি লাগে। বেশ মুশকিল হল। মন এত অস্থির হল কেমন করে? হয়তো খেতে বসলেও খেতে পারব না, প্লেটে ভাত-তরকারী নিব হয়তো, কিন্তু আঙ্গুলগুলো প্লেটের এপাশ-ওপাশ বিচরণ করবে অন্যমনস্ক হয়ে। বই পড়তে গেলেও একই হবে। ঘটনাটার একটা হিল্লে করতে হবে। মাথার মধ্যে এমন ঝিঁ ঝিঁ পোকা রাতভর ডাকতে থাকলে নিশ্চিত অসুস্থ হয়ে পড়ব।
.
রাত এভাবে কখন গভীর হয়ে গেছে-বুঝতেই পারিনি। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল। আলসেমিতে ঘড়িটাও ঠিকমত দেখলাম না, হয়তো আনুমানিক বারোটা হবে। দরজা খুলেই দেখি, পরিমল দা! আরে বাবা! এত রাতে! খুশি হলাম অনেক! হাসিই যে মানুষের সরলতার অর্ধেক প্রকাশ করে তার জ্বলজ্ব্যান্ত উদাহরণ পরিমল দা। ভরাট চেহারার মানুষ সে, মাথাটাও বড়। সে মাথায় প্রায় পেকে যাওয়া চুলের দৈর্ঘ্য সোয়া ইঞ্ছির অর্ধেক হবে। বয়স হয়েছে কিন্তু চেহারায় অতটা ছাপ পড়েনি। বড় রাস্তার ধারে লন্ড্রীর দোকান তার। বড় রাস্তাটা কাপ্তাই-রাঙ্গামাটিগামী। তার দোকানের দেয়ালে শাদা চুনকাম করা। একটা লম্বা বেঞ্চও আছে। দুপুরের খাবার খেয়ে তাতেই চিৎপাটাং হয়ে শুয়ে পড়েন। এত সহস্র যানের বিকট আওয়াজ তার সেই ঘুমের কোন ব্যাঘাতই ঘটাতে পারেনা। আশ্চর্য রকমের ‘ডোন্ট কেয়ার’ স্বভাবের মানুষ যেন। খুব খুব সুন্দর আর অমায়িক একটা হাসি দিয়ে বলল, চলে আসলাম দাদা।
.
বেশ ভালো করেছেন! কিন্তু এত রাতে, বেশ রোমাঞ্চকর ব্যাপার তো! বিছানায় বসে পড়েন। এরপর বলেন, ঘটনা কী?
ধরুণ গল্প করার জন্যই আসলাম। গল্প শোনার জন্যই আসলাম। কোন সমস্যা?
আরে ধুর, পরিমল দা! আমি তাই বলেছি নাকি? আমারও একটা গল্প আছে আপনার সাথে।
তাই নাকি, কী গল্প দাদা?
বাজারে যাওয়ার সময় একটা ঘটনা আজ আমাকে বেশ ঝাঁকি দিয়েছে! আমি বেশ ঘাবড়েই গেছি।
কী ঘটনা দাদা?
একটা কুকুর শিকারের ঘটনা! বেশ ভয়ংকর একটা অনুভূতি নিয়ে বললাম।
পরিমল দা, মিটিমিটি হাসল। হাসিটা হাসি না, একটা ব্যাখ্যা, একটা সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন। কিন্তু আমি তখনো বুঝিনি ব্যাখ্যাটা আসলে কী। তাই জিজ্ঞেস করলাম, হাসছেন যে?
পুরো ঘটনাটা শুনিই না আগে!
.
শুনবেন, শুনুন তাহলে। সন্ধ্যারাতে সিএনজি করে বাজারে যাচ্ছিলাম। দু ধারের দোকানগুলোর উজ্জ্বল আলোয় দেখলাম একটা উপজাতীয় মানুষ-চাকমাই হবে সম্ভবত- একটা কুকুর টেনে-হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। মাছের টোপ দিয়ে কুকুরটা শিকার করেছে। গলায় লম্বা বাঁশের ফাঁস লাগিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কুকুরটা বেশ হৃষ্টপুষ্ট। সমস্ত শক্তি দিয়ে পেছনের দিকে হেঁট হয়ে থাকতে চেয়েও মানুষটার শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারছে না। চেহারায় কী ভয় গ্রাস করেছে জন্তুটার, বেঁচে থাকার জন্য কী মায়াময় আকুতি ওর চোখেমুখে। মৃত্যুর জন্য ভয়-একটা জন্তুকেও যে এভাবে গ্রাস করে-আমি ঘটনাটা না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। কী যে ঘটে গেল, আচমকা ওর জায়গায় নিজেকে ভাবার ইচ্ছে হল! নিজেকে ওর জায়গায় কল্পনা করতেই সমস্ত শরীর হিম হয়ে আসল আমার, যেন মৃত্যুর দিকে যাচ্ছি অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও, আর মৃত্যু কত ভয়াবহভাবে আমার দিকে আসছে তেড়ে! তখন থেকেই পুরো মাথাটাই এলোমেলো হয়ে গেছে।
আচ্ছা পরিমল দা, কেমন লাগলো ঘটনাটা?
সত্যিই বলতে তেমন কিছুই না দাদা! দেশে-দেশে মানুষেরই কত বিকৃত বিকৃত হত্যাদৃশ্য, লাশ, আর অসহায় অবস্থা দেখে দেখে তো তেমন কিছুই মনে হয় না আমার। এখন সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
কী বলেন পরিমল দা, মানুষ খুনের ঘটনা দেখেও স্বাভাবিক মনে হয়?
.
কী বলব দাদা, যদি বলি এমন শত ঘটনা তো রোজই পেপারে পড়ি, দু চারজনের সাথে তা আলাপও করি-একসময় স্বাভাবিক হয়ে যায়, একদম স্বাভাবিক। যে না ঘটনার শিকার হয়, সেই বোঝে তার অণু-পরমাণুর মত প্রতিটা মুহুর্তের বিষাক্ত বেদনা। বোঝে তার আত্মীয়-স্বজন, পরম কাছের মানুষগুলো। নিজের হাত কাটলে মানুষ সামান্য ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে তা সারানোর জন্য অস্থির হয়ে উঠে, আর অপরের হলে বলে, হায়্‌, কী মর্মান্তিক গো! ব্যস্‌, এটুকুই। যাই বলেন দাদা, মানুষের আদি পেশাই তো শিকার। জন্তু শিকার, পাখি শিকার, মাছ শিকার আরও কত কী নাকি শিকার করত। এখনও শিকার করেই যাচ্ছে তবে এখন স্ব-প্রজাতিও শিকার করে অনেক, মানে মানুষই শিকার করে মানুষকে, ইচ্ছেমত, নিজে-নিজে, সমাজে-সমাজে বিবাদ করে, দেশে দেশে যুদ্ধ করে-শিকার চলছেই।
জানেন পরিমল দা, এরকম আরেকটা মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা শুনেছিলাম বেশ পেছনের একটা সময়ে। মনে পড়লে অজান্তে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে সেই বেদনায়। শুনবেন?
শোনান না! গল্পের জন্যেই তো আপনার কাছে আসা।
.
বেশ কয়েক বছর আগে আরো একটা শীতের রাতের কথা মনে পড়ে গেল। শোয়া থেকে বসে উঠে আধাশোয়া হলাম। বালিশটাকে খাড়া করে খাটের সাথে লাগিয়ে তার উপরে হেলান দিলাম। আরাম করে চোখ বুঁজলাম। সিগারেটখোর লোক বেশ আয়েশ করে সিগারেট খেতে খেতে যেমন অনেক কথা ভাবে – নিজেকে তেমনই আয়েশী মনে হল নিজেকে। এরপর ধীরে ধীরে অনায়াসে সেই শীতের রাতের কথা মনে পড়তে লাগলো। তখন কিশোর জীবন সবে পার করেছি। ভার্সিটি থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরছি। একটু রাত হয়েছে। সম্ভবত ন’টা বাজে। সিএনজির ভেতরে ডান দিকে বসেছি। আরো দুজন আছে আমার পাশে, মাঝবয়সী এবং সম্ভবত বন্ধু গোছেরই হবে। দুজনেরই দু আঙ্গুলের মাঝে জ্বলন্ত সিগারেট ধরা। দু জোড়া চোখই লাল টকটকে আর অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছিল। শীতের রাত, কিন্তু দুজনের কপাল থেকেই জবজব করে ঘাম ঝরছিল। লোকদুটো রক্তবর্ণ চক্ষু নিয়ে ঝিম মেরে আছে, খানিকটা সামনের দিকে ঝুকে। কাঁধের উপর দিয়ে গলার নিচ পর্যন্ত সাপের মত পেঁচিয়ে আছে ঝাঁকড়া কালো চুল। শীতকালকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দুজনেই দরদর করে ঘামছে। কেমন যেন অদ্ভুত, আবার ভয়ংকরও। চাপা চাপা গলায় কী যেন বলছে আর এক ধরণের নির্মম হাসি হাসছে। হঠাৎ সিএনজির ড্রাইভারকে বলছে, কুদ্দুস ভাই, তুই কি জানিস, একটা মানুষকে খুব সহজে কীভাবে খুন করা যায়? সরব প্রশ্নের সাথে সাথে ওদের মুখ থেকে টাটকা মদের গন্ধ আমার নাকের উপর আছড়ে পড়ে। ড্রাইভারটা আমাকে চোখ টিপে ইশারা করল, যার মানে-কিছু বলেন না ভাই। ও উত্তর দিল, আমি ক্যামনে কমু ভাই? তোরাই তো ভালো জানিস!
হ’রে ভাই। তুই কীভাবে বলবি? তুই তো আর কাউকে খুনও করিস্‌নি, খুনের কাহিনিও শুনিস্‌নি। তবে খুন করা একদম সহজ! বলেই আবার দুজনে দমফাটা হাসি দেয়।
কেমন সহজ? কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ড্রাইভার।
খালি টুটির নিচে একটা টান দিবি, চায়নিজ ছুরি দিয়ে। ব্যস, খালাস! ড্রাইভার ভীত আর আড়ষ্ট গলায় বলে, তাই নাকি? এতই সোজা! আরে বাবা!
একজন আবার গলার নিচের জায়গাটা – যেখানে হাড়ের নিচে গর্তের মত-স সেখানে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, দ্যাখ্‌, দ্যাখ্‌, এই জায়গায়, খালি একটা টান। সাৎ করে, ব্যস্‌! প্রথমজন আবার বলে, শোন্‌ ভাই, যে খুনটার জন্যে এবার জেল খাটলাম-তার গল্পটা করি। শালাকে মারার জন্য আমাদের কন্ট্রাক্ট হল দশ লাখের। শালা আবার ছিল মানবতাবাদী। মিটিং-টিটিং করত এখানে সেখানে। মাঠের সব পক্ষেরই শত্রু ছিল শালা। মাথায় বাড়ি দিলাম তাও অজ্ঞান হয়নি। কষে হাত-পা বেঁধে, মুখে রুমাল গুঁজে তার উপর পট্টি মারতে হয়েছিল। কিন্তু শালার গায়ে দামড়া গরুর মত শক্তি! জান-প্রাণ দিয়ে গোঙ্গাচ্ছিল। চোখ-মুখ যেন সাক্ষাৎ আগুন হয়ে গেল, ঘেমে গোসল হয়ে গেছিল ওর। মৃত্যুর ভয়ে যেন জানোয়ারের মত শক্তি ওর গায়ে ভর করছিল। চোখের সামনে শালা মৃত্যুকে দেখেই যেন নিজেই আজরাইলের মত শক্তি নিয়ে হাত-পা ছোড়ার চেষ্টা করছিল। ওর অবস্থা দেখে আমারই একবার মায়া হবার লাগছিল। বাধ্য হয়ে গাঁজায় টান মেরে পুরা নেশা করতে হল আবার। যাই বল্‌ ভাই, মৃত্যু বড় কঠিন জিনিস্‌রে! এরপর ওকে ধস্তাধস্তি করে টানতে লাগলাম গোটা পাঁচেক মানুষ। একদম আখের খেতের গহীন ভেতরে নিয়ে গেলাম। অমাবশ্যার রাত তখন। ওর চোখের দিকে তাকাইনি আমি, যদি ভয় পেয়ে যাই। আসলে তাকাতে পারতামও না। ‘মৃত্যু আসছে’ এমন একটা কথা যেন চতুর্দিক থেকে ভেসে আসছিল আর আমাকে বেশ অস্থির করছিল। এই কথা, ঐ রাত, ঐ শালার ভয়ংকর বেঁচে থাকার আকুতি-মুহুর্তের মধ্যে সব কেমন ঝাপসা হয়ে এল। সেই টুটির নিচে আমার হাত ঝাপটা কিন্তু গভীর একটা ছোঁ মেরে এল। হাত ভিজে গেল, ঘরঘর আওয়াজ হল। একসময় পুরা দুনিয়ায় কেমন চুপচাপ একটা গরম বাতাস নেমে এল। কিচ্ছু না ভাই, খালি একটা টান! বলেই আবার সেই বিকট হাসি হাসল দুজনেই।এরপরে দুজনেই খানিকটা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল। সেই অগ্নিমুর্তির মত চেহারা নিয়ে। আমি সহসাই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। বাড়ি ফিরে সে রাতে আমার ঘুম আর হয়নি। গোটা দুয়েক দিন লেগে গিয়েছিল পুরোপুরি ঠিক হতে।
.
সেই যে একটা খুনের বর্ণনা একটা খুনির মুখেই শুন্‌লাম-যেটা আজও আমার কানে বাজে। সেই রাতের কথা, যেখানে আধার ছিল, আধারে হিংস্রতা ছিল, উন্মত্ততা ছিল, পাশবিকতা ছিল কানায় কানায় ভরে। একটা মানুষের জীবনে কত রঙ, কত উথান-পতন, সম্পর্কের রসায়ন, স্বপ্নাতুর চকচকে চোখের হাসি, প্রিয়জনদের সাথে নিয়মিত বা অনিয়মিত অধীর প্রত্যাশার মিলন-এই সবকিছু নিমিষেই শেষ-শুধু গলার নিচে একটা টান। খুনিটার কথা ভুলে গেছি, কথাগুলোও প্রায় ভুলে গেছি। কিন্তু ঐ একটা কথাই আজও কানে বাজে ‘খালি একটা টান’ব্যস্‌!

পরিমল দা হঠাৎ আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, জানেন তো দুনিয়ার বড় বড় নামকরা মানুষগুলি বলে, তারা সবার জন্য অনেক চিন্তা করে, রোজ রোজ শত মিটিং করে। কিন্তু যত যত মিটিং হয়, দুনিয়াতে অশান্তি তত বাড়ে, তত হত্যা বাড়ে, তত যুদ্ধ বাড়ে, তত অসহ্যকর লাশের ছবি পেপারে বাড়ে। আসলে তারা বোঝাতে চায়-তারা কী ভীষণ উদার! কিন্তু তাদের মনই সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে হিংসায় ভরা। মানুষের জন্য কেবল সাধারণ মানুষ, গরীব মানুষদেরই বেশি দরদ হয়। আর কারো অতটা হয়না।
আমি অবাক হই, এই পরিমল দা মানুষটা কত সহজ-সরল, দরদী, কতটা বিশ্বমানব প্রেমিক! সব মানুষের জন্য তার দরদ এক, চিন্তা এক, প্রত্যাশাও এক। মানুষটা কী ভীষণ অসাম্প্রদায়িক। দুঃখ হয় ভীষণ, পৃথিবীর সব মানুষ যদি এমন হত! পরিমল দা আঁধারে মিলে যায় ধীরে ধীরে, অনেক দূরে। ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার, ঘেমে ঘেমে গোসল হয়ে গেছে প্রায় সারা শরীরের। প্রায় মাস খানেক আগে পরিমল দা দুনিয়া ছেড়েছেন হার্ট এট্যাকে। জানালা দিয়ে বড় রাস্তার ওপারে তাকাই। অমাবশ্যার অন্ধকার! কত হাত হয়তো এই রাতেও কত গলায় দিচ্ছে, ‘খালি একটা টান’। ব্যস্‌, সব শেষ!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পন্ডিত মাহী প্রথম দিকটা খুব বেশি ভাল লাগে নাই । এমনিতে গল্প ভালো লেগেছে ।
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
সত্য কথাটা সুন্দর করে বলার জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইল আপনার প্রতি।
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
সাদিয়া সুলতানা সকালে এ লেখাটাই প্রথম পড়েছি। কিন্তুরতখন মন্তব্য করতে পারছিলাম না। তাই অাবার অাসতেই হলো। বেশ ভাল অাপনার গদ্যের হাত।
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
বেশ ভালো একটা মন্তব্য পেলাম। একটা দীর্ঘ বিরতির পর। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো।
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
মোঃ আক্তারুজ্জামান প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা খুব সুন্দর গল্প। অনেক অনেক ভালোলাগা রইলো।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
আপনাদের ভাললাগায় এ পর্যন্ত। কৃতজ্ঞতা রইলো অনেক।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত আলম ভাই , আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগল । ভোট সহ শুভকামনা । আমার গল্পের / কবিতার পাতায় আমন্ত্রণ জানালাম ।
ভালো লাগেনি ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক ভাল লাগলো ভাই। কৃতজ্ঞতা নিবেন।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
Salma Siddika বেশ ভালো লেখনী। পড়তে ভালো লাগলো। "ভৌতিক" বিষয়টার সাথে কোথায় যেন ঠিক মিললো না তবে মানুষের হিংস্রতাও ভয়ের কারণ হতেই পারে, ভৌতিক গল্প মানেই ভুত থাকতেই হবে এমন কথা তো নেই , তাই না? শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
নীল খাম বাহ, অসাধারণ ...
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক ভাল লাগলো। ধন্যবাদ ভাই।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
জসিম উদ্দিন আহমেদ গল্প ভাল লাগল, যদিও বিষয়ের সাথে সামান্য ‘অসামঞ্জস্য’ মনে হয়েছে আমার। শুভ কামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইল। তবে অসামঞ্জস্য কেন লাগলো-সেটা বললে ভাল হত।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ভৌতিক বিষয়ের সাথে গল্পের Mood and Settings অসামঞ্জস্য মনে হয়েছে আমার।
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
একমাস আগে মারা যাওয়া একটা মানুষকে স্বপ্নের মধ্যে বাস্তবের মত উপলব্ধি করেছে গল্পের নায়ক। এটুকুই ভৌতিক গল্পের ভিত্তি হিসেবে রেখেছি আমি। বাদবাকীটা পাঠক হিসেবে আপনার বিবেচনার বিষয়। সামনে বিষয়ের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ করে লেখার চেষ্টা করব।
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ঘাস ফুল সম্প্রতি এই ধরনের অসাম্প্রদায়িক লেখার গুরুত্ব অনেক,ভাল লেগেছে আপনার গল্প।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা নিবেন।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি মানুষটা কী ভীষণ অসাম্প্রদায়িক। দুঃখ হয় ভীষণ, পৃথিবীর সব মানুষ যদি এমন হত! পরিমল দা আঁধারে মিলে যায় ধীরে ধীরে, অনেক দূরে। // খুব ভাল গল্প..... শুভ কামনা রইল.....
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো জ্যোতি ভাই।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
কাজী জাহাঙ্গীর ফেরদৌস ভাই আমি কিন্তু এখন আপনার পাঠক, পাঠকের ভাবনা লেখকের সাথে নাও মিলতে পারে সেটাই স্বাভাবিক। সেই স্বাধীন ভাবনা থেকেই বলছি শিরোরামটা ‘চিন্তবিদ’ হলে আমার কাছে ভাল লাগত কারন আমার একজন সেরকম লোকের সাথে পরিচয় ছিল, খুবই স্বল্প শিক্ষিত মানুষ কিন্ত অনেক কিছু ভাবত তার চিন্তাশক্তি বেশ প্রখর। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভুলে যাওয়া লোকটাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আর ভোটত থাকলই।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
অবশ্যই পাঠকের মতামত মেনে নিয়ে বলছি-অবশ্যই ভালো হত 'চিন্তাবিদ' নামটা দিতে পারলে।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
আমার মাথায় আসেনি। দেখি পরে ঠিক করে দেয়ার পরিকল্পনা থাকল। আর আপনার ভালো লাগলো জেনে অনেক খুশি হলাম।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

২৬ ফেব্রুয়ারী - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪