বাবার কথা মনে হলেই..................চোখ ভরে আসে জল। আমার বাবা মরহুম হয়েছেন, ১৯৬৮ সালের মার্চ মাসে। খুব ছোট ছিলাম না, ক্লাস সেভেনে পড়তাম। অতোটা খেয়াল করতে পারছিনা মার্চ মাসের কয় তারিখ ছিলো। চত্রি মাসের ১৪ তারিখ ছিলো একথা মনে আছে। আমি ছিলাম বাবা মায়ের বহু সাধনার পাওয়া একমাত্র কন্যাটি। সেই বহু কাংখিত অপত্যে বাবা আমার নাম রাখলেন “সালমা বেগম ওরফে সেতারা”। দশমাস বয়সে হারিয়েছিলেন যেই মাকে, সেই হারানো মায়ের মাতৃত্ব দেখতে চেয়ে ছিলেন বাবা আমা মুখের আদলে, কি জানি কখনও, না দেখা সুদূরের মাতৃ মমতা তাঁর এই কন্যাটির মুখে বিম্বিত হয়! এ জন্যই বাবার চেনা পৃথিবী একদিকে, আর আমি ছিলাম একদিকে। আমারও হলো তাই। চোখমেলে পৃথিবী দেখার শক্তি দিলেন স্রস্টা। হাঁটতে শেখালেন বাবা আঙ্গুল ধরে ধরে। ভীষণ ভয় পেতাম বাবাকে, কিন্তু তার চেয়ে ভালবাসতাম বহুগুণ বেশি। বাবা ছিলেন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মেজাজি, তবে তার সাথে ছিলো অপত্যে মেশানো এক অসাধারণ মমতা মাধূর্য। বাবার সাথে ‘বন্ধুত্ব’ কথাটা বলতে একটু লজ্জা বোধ করি বৈকি, তবে আমরা একটু ব্যাক ডেটেড মানুষ তো! আমরা শ্রদ্ধা ও অপত্যের জায়গাটা বন্ধুত্বের ‘ফিচেল’ শব্দটাতে ফেলতে চাইনা। বোধ করি তাতে করে পিতৃত্বের কণা মাত্রও ভ্রংস হবে না। বন্ধ হয়নি øেহনির্ঝর। বাবা আমাকে আদর করে ‘মা-নি’ বলে ডাকতেন। আবার ‘সেতারার’ সংক্ষেপ করে ‘সেতু’ বলে-ই ডাকতেন। স্কুল শিক্ষক ছিলেন আমার বাবা। বাবা মানুষ হয়েছেন বড় ভাই ভাবীর কাছে। অর্থাত আমার বড় জ্যাঠা ও জ্যেঠি আম্মার কাছে। ছাত্র জীবন কেটেছে কলকাতায় বড় ভাইয়ের চাকরীর সুবাদে। আমার জ্যাঠা ছিলেন কলকাতায় পোষ্ট মাস্টার। দেশ ভাগের পর এ্যাসিস্ট্যান্ট পোষ্ট মাস্টার জেনারেল অব পূর্ব পাকিস্তান হয়ে অবসর নেন। নাম ছিলো ওয়ালী উল্লাহ। আমার বাবার নাম ছিলো “মৌলানা শফিউল্লাহ”। কোলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে “টাইটেল” ডিগ্রী নিয়েছিলেন। অত্যন্ত মেধাবি ছিলেন আমার বাবা। বাবার অসাধারণ দখল ছিলো ইংরেজী, আরবী, ফারসীর উপর। আমাদের বাড়ীটা ছিলো শিক্ষা দীক্ষায় অত্যন্ত সু-শৃংখলাপূর্ণ। যতটুকু সময় পেয়েছিলেন জীবনে বাবা সেটুকু সময় চেষ্টা করেছেন সন্তানদেরকে সৎ শিক্ষায় সু-সম্পন্ন করতে। শেষ পর্যন্ত বাবা পারেননি। সৃজন কর্তার অমোঘ আহ্বানে চলে যেতে হলো চিরন্তন পৃথিবীতে। আমরা পাঁচ ভাইবোন বাবাকে হারিয়ে যারপরনাই অসহায় হয়ে গেলাম। আমার বিধবা মায়ের সংসার তরী আমাদেরকে নিয়ে জীবন সমুদ্রের মাঝখানে বিলাপ করতে লাগলো। আল্লাহপাক তরীয়ে নিলেন। মা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে শক্ত করে হাল ধরলেন। আমরা পাঁচ ভাইবোন সুপ্রতিষ্ঠীত হবার পর মাও চলে গেলেন। বাবার আদর্শ, বাবার শিক্ষা, বাবার অনুভব আজও আছে আমার শয়নে, স্বপনে, জাগরণে। বাবা, ভুলবোনা কোনদিন আপনাকে, চোখ বন্ধ করলেই আপনাকে দেখতে পাই। আপনার øেহভরা চোখ দুটি যেন এখনও চেয়ে আছে আমাপানে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নিয়াজ উদ্দিন সুমন
বাবার আর মেয়ের সম্র্পক মুদ্রার এপিট ওপিঠ....শুভকামনা....
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।