বোকাদের রাজ্য

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০১৬)

জসিম উদ্দিন জয়
  • ৫০
হঠাৎ ধমকে দাঁড়িয়ে জসিম ভাবছে। তাদের ৫ম তলা বাড়ীর চতুর্থ তলায় জসিম‘রা থাকে। মাত্র ২টি সিড়ি বেয়ে নামতেই একটি দৃশ্য দেখা মাত্রই ভাবনায় পরে যায়। তৃতীয় তলার দুটি ইউনিট । ফ্লাট সি-১ ও সি-২ । ফ্লাট সি-১ তে থাকে রহমান চাঁচা। ফ্লাট সি-২ তে থাকে শামীম ভাই তার বিবাহিত স্ত্রী বাসমতি ও দুই কন্যাকে কে নিয়ে। রহমান চাচা গত রাতে মৃত্যুবরন করেছে তার লাশ নিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামছে লোকজন আর অন্যদিকে কান্ড-জ্ঞানহীন শামীম সাহেব হাসতে হাসতে ১০ বাক্স মিষ্টির প্যকেট নিয়ে উপরে উঠছে আর জসিমের দিকে তাকিয়ে বলছে ‘‘জসিম ভাই গতকাল রাতে আমার ছেলে হয়েছে। বাসায় আসেন মিষ্টি খেয়ে যান।’’ কিন্তু জসিম এর মনে অন্যচিন্তা এই বাড়িতে এতকিছু হচ্ছে অথচ সে জানে না। হায় ঢাকা শহর, বড়ই অদ্ভূত। কেউ পৃথিবী ছেরে চলে যাচ্ছে কেউ এই পৃথিবীতে এসেছে। জসিম হাত উঠিয়ে শামীম সাহের-এর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসি দিয়ে মিষ্টি খাওয়ার দাওয়াত গ্রহণ করলো। পরক্ষনে রহমান চাচাঁ লাশের কথা মনে পরতেই আবার দ্রুত যেয়ে লাশের পাশে একটু হেটে সহনাভূতিটুকু দেখাচ্ছে। রহমান চাচাঁ খুবই ভালো মানুষ ও ধার্মিক লোক ছিলেন। সে জীবন্ত তার কাছে কিংবাদন্তি রহমান চাঁচা মারা গিয়েছে আতীতের কথা মনে পড়তেই জসিমের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। এই সিড়িতেই কত স্মৃতি রহমান চাচার সাথে। মাথার চুল একটু বড় হলেই বলতো ‘‘এই দাঁড়াও, দাড়াঁও, তোমার মাথার চুল বড় হয়েছে, এক্ষুনিই চুল কেটে আসো। শিঘ্রই যাও। আযান দিলে জোর করে বুলিয়ে-বালিয়ে মসজিদে নিয়ে যেতে। ইত্যাদি নানান কথা ভাবছে আর সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে জসিম। এই কথাগুলো এখন আর কেউ বলবে না। বলতে না বলতে আবারও চোখের বাধঁ বেয়ে পানি পরতে থাকে। ততক্ষনে রহমত চাঁচার লাশটি বহন করে মূল গেইটের বাহিরে নিয়ে যাওয়া হলো। আশেপাশের অনেক লোকজন আসতে থাকে রহমান চাচার লাশটি দেখার জন্য। জসিম কিছুক্ষন পরপরই কল্পনা জগৎ চলে যায় জসিম পেছন ফিরে তাকালো দেখলো রহমান চাচা পায়ের শব্দ। সে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে আর জসিম উপরে উঠছে কল্পনায় সেই শব্দটি জসিমের কানে বারবার ভেসে আসছে। রহমান চাচাঁ একটি ছেলে একটি মেয়ে। তারা দুইজনই দেশের বাহিরে থাকে। একজন ডাক্তার আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার। আপনজন বলতে তার ছোট একটি ভাই আছে। তেমন আর কেউ নেই। তারা আসতে আসতে ২/৩ দিন লেগে যাবে। এতক্ষন রহমান চাচাঁর লাশ রাখা যাবে না । পাশের মসজিদের ইমাম সাহেব জোর অনুরোধ জানালো লাশটি তারাতারি দাফন সম্পর্ন করার জন্য। রহমান চাচাঁর স্ত্রী আয়েসা চাচীঁ সেও বৃদ্ধ চোখে ভালো দেখতে পায় না। তবু সেই বৃদ্ধের কান্না দেখলে যে কারো চোখে পানি চলে আসবে। তাদের দেখলে মনে হবে হাজার বছরের যুগলবন্ধি, একজন পৃথিবীতে আছে আরেকজন পৃথিবী ছেরে চলে যাচ্ছে। এরই মাঝে রহমান চাচাঁর মেয়ে ফোন করলো, সে চাকুরী ছেরে দিয়েছে। সে জরুরী ভিত্তিতে ৬ ঘন্টার মধ্যেই দেশে চলে আসবে। কিন্তুু রহমান চাচাঁর ছেলে আসতে ২ দিন লাগবে।
দূপুর গড়িয়ে বিকেলে সেনালী আলোর রশ্মিটা রহমান চাচার লাশটি উপর। জসিমের মনে পরে যায় । প্রতিদিন বিকেলে যখন রহমান চাচা আছরের নামাজ পরতে যায় তখন এই বিকেলের রৌদ্রজ্জ্বলতায় রহমত চাচার চেহারাটা বড়ই উ্জ্বল মায়াবী দেখাতো। অথচ আজ সেই আত্মা এই পৃথিবীতে নেই । নিরব নিথর দেহ খানা পরে আছে গেইটের বাহিরে। পৃথিবীর সবকিছু সুন্দর আছে। সূর্য্য তার রশ্মি ঠিক ঠিক দিয়ে যাচ্ছে। পড়ার সবচেয়ে বকাটে রাজু ছেলেটিও একটু আগে রহমান চাচার লাশটি দেখতে এসেছিলো। সেও রহমত চাচাঁ মৃত দেহটিকে দেখে হাউমাউ করে কেঁেদ ফেলেছিলো।
এদিকে সবাই তোরজোর করছে বিকেলের সূর্য্যটাও কিছুক্ষনের মধ্যে ডুবে যাবে। সকলের ডিসিসন সন্ধ্যের মাগরিবের নামাজের পরপর নামাজের যানাজা অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে রহমত চাচাঁর মেয়ে ফোন আসলো, সে এয়ারপের্টে এসে গেছে। রহমত চাচার মেয়ে সাদিয়াকে জানানো হলো তার বাবাকে মসজিদের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মসজিদ থেকে সোজা কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। কথাটা শুনেই রহমত চাচার মেয়ের হাতের ব্যগ ফেলে দ্রুত দৌড়ে এয়ারপোট ত্যাগ করলো এবং দৌড়ে একটি সিনজিতে উঠে পরলো। সেভাবেই হোক সে তার বাবাকে শেষবারের মাতো একটু দেখতে চায়। পথে প্রচন্ড জ্যাম । সে সিনজি থেকে নেমে আবারও দৌড় শুরু করলো। একপর্যায়ে জ্যাম এরিয়ে আবারও সিএনজিও উঠলো। সিএনজি শেষমেষ তার বাড়ি থেকে সামন্য দূরে চলে এসেছে। সেখানোও জ্যাম । সাদিয়া সিএনজি থেকে নেমে আবারও দৌড় শুরু করেছে এই দৌড় তার বাবাকে শেষবারের মতো একটু দেখা। চোখে পানি, সাদিয়ার মুখটি ক্রমশই শুকিয়ে আসছে । তবু শেষ চেষ্টা তার মৃত বাবার মুখটি একটিবারের দেখতে চায় সে। পথে অনেকবার সে পড়ে গিয়েছিলো, গাড়ীর সাথে ধাক্কা খেয়েছিলো, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। পয়ের আঙুল দিয়ে রক্ত ঝরছিলো। সেদিকে সাদিয়ার কোন খেয়াল নেই । সে তার প্রাণপ্রিয় বাবাকে জরিয়ে ধরবে। তার বাবাকে সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে দিবে না। সাদিয়ে দৌড় শেষপর্যন্ত বাড়ি পর্যন্ত চলে আসে। কিন্তু ততোক্ষনে মসজিদে যানাজা শেষ করে লাশ দাফনোর উদ্দ্যেশে কবরস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জসিম তাকিয়ে দেখে সাদিয়ার কপালজুড়েও রক্ত ঝরছে। পায়ের বৃদ্ধাঙুলের সম্মুহে কেটে সেখানে রক্তাক্ত । জসিম তাৎক্ষনিক তাকে তার গায়ের জড়িয়ে থাকা জামাটি দিয়ে সাদিয়ে কপালে রক্ত মুছে দেয়ার চেষ্টা করলো । কিন্তু ব্যর্থ হলো। সাদিয়া একদৃষ্টিতে জসিমের দিকে তাকিয়ে বললো,‘‘ আমাকে তোমরা তারাতারি আমার বাবার কাছে নিয়ে যাও, আমি আমার বাবাকে দেখবো,। জসিম সাদিয়া দিকে তাকিয়ে বলে,‘‘ সাদিয়া তোমার বাবাকেতো এতক্ষনে কবরস্থানে নিয়ে গেছে, । সেখানে মেয়েদের যাওয়া নিষেধ। তাতে কবরবাসীর আজাব হয়। সাদিয়া আজাব, গজব, কি এই সব কথার কোন মানে সে বুঝে না । সে বুঝে তার বাবা কোথায় সেখানে সে যাবে। তার গভীর আকুতি আর আত্মনাত। করুন চোখে তাকিয়ে থাকা আর তার বাবাকে একনজর একটি বার দেখার মিনতি। বার বার জসিম কে অনুরোধ করছে তার বাবার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য । জসিম আবার সাদিয়াকে বোঝাবার চেষ্টা করে বলে,‘‘ সাদিয়া আপু প্লিজ কথাটা বোঝার চেষ্টা কর । কবরস্থানে মেয়েদের যাওয়া নিষেধ,” । সাদিয়া মন কোনভাবেই বুঝ মানছে না। সে তার বাবাকে শেষ বারের মতো একটু দেখতে চায়। কিন্তু তখন সাদিয়ার বাবাকে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । দাফন সম্পন্ন হওয়ার প্রস্তুুতি চলছে। সাদিয়া আত্মনাত দেখে জসিমের চোখে পানি চলে আসে এবং সে ইসলামের রিতীনিতীর কথা ভুলে যায়, তরিঘরি করে সে সাদিয়াকে নিয়ে কবরস্থানের দিকে ছুটে যায়।
এদিকে শামীম সাহেব তার ছেলের জন্ম হয়েছে সেই খুশিতে বাড়িতে জোরে গান ছেরে আনন্দফুর্তি করছে। আর পড়াশুদ্ধ মিষ্টি বিতরণ করছে। অথচ শামীম সাহেবের স্ত্রী বাসমতি বেগম এর ঘরে এর আগে দুই দুইটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছিলো । তখন শামীম সাহেব একটি চকলেটও কাউকে বিতরন করেননি। মেয়ে হয়েছে বলে তিনি রাগে দুঃখে তিন দিন অফিসে যাননি। আর আজ ছেলে হয়েছে বলে পড়াশুদ্ধ মিষ্টি বিতরণে উৎসব করে চলছে। কাল রাতে সে আযান দিয়েছিলো । ‘‘ছেলে হলে নাকি আযান দিতে হয়।’’ তাই গলা ফাটিয়ে সে কাল রাতে আযান দিয়েছিলো।
জসিম ও সাদিয়া দ্রুত ছুটে যাচ্ছে কবরস্থানের দিকে । সাদিয়া এক পর্যায়ে আবার দ্রুত দৌড় দিতে আরম্ভ করে । সাথে জসিম ও তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় কবরস্থানের দিকে । সেখানে কবরস্থানের গেইটে দাড়িয়ে থাকা ধবধবে সাদা পাঞ্চাবি পড়া মোটাসোটা দারেয়ানটি সাদিয়ার পথ আটকে দেয়। তাকে কবরস্থানের ভিতরে প্রবেশ করতে দেয় না। জসিম কবরস্থানের ভেতরে প্রবেশ করে দ্রুত সাদিয়াকে জানাই তার বাবার লাশ এখনও দাফন করা হয় নাই । সাদিয়াকে কবরস্থানে প্রবেশ করতে দিলে সে তার বাবার লাশ দেখতে পাবে। সাদিয়া করুন আত্মনাথ আর আত্মচিৎকার তার বাবাকে একটিবার দেখার জন্য । দাড়েয়ান তাকে আবার নিষেধ করে বললো ‘‘ কোন ভাবেই সম্ভব নয়, এতে কবরবাসীর আযাব হবে। ইসলামীক শরীয়াত পরিপন্থি হবে । এর মধ্যে আরো কয়েকজন এসে গেইটে সামনে দাড়ালো । কয়েকজন সাদিয়াকে বোঝাবার চেষ্টা করলো,‘‘ বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য, বাসায় বসে তার নামাজ কালাম পরে তার জন্য দোয়া দরুদ পরার জন্য । সাদিয়া অবুঝের মতো কোন কিছুই বুঝতে পারছে না । সাদিয়া জানে তার বাবা পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে । বাবার পবিত্র মায়াবী মুখ খানা একটিবার দেখতে চায় সাদিয়া। সাদিয়া আকুতি আজ ইসলামের চারদেয়ালে বন্ধি । একজন মৌলবি এসে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে জানালেন,‘‘ মা, তুমি বাসায় চলে যাও, তোমার বাবার লাশ দাফন হয়ে গেছে, তোমার বাবার জন্য নামাজ-কালাম পরে দোয়া কর।
শেষবারের মতো সাদিয়া তার বাবাকে না দেখতে পেয়ে, তার আত্মচিৎকারে আকাশ -বাতাস সমস্ত কিছু যেন কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ দমকা হওয়া বইতে থাকে , কিছুক্ষনের মধ্যে সাদিয়া চিৎকারের সাথে একাত্ত হয়ে আকাশটি ঘুমরিয়ে ওঠে আঝরে বৃষ্টি পরতে থাকে। সাদিয়া আত্মচিৎকার করে পৃথিবীকে জানিয়ে দেয় শেষবারের মতো তার বাবাকে দেখতে না পাওয়ার যন্ত্রনা। জসিমও দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে, আর সাদিয়া আত্মনাত কান্নার দিকে তাকিয়ে আছে . . . ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রেজওয়ানা আলী তনিমা কষ্টকর। সময় ও নিয়তিকে হার মানানো মানুষের সাধ্যের বাইরে।
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল লেগেছে। ভোট দিতে মন চায়। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
ফেরদৌস আলম ভালো লাগলো !
কেতকী শহুরে জীবনের গল্পে ভোট রইল।
ইমরানুল হক বেলাল অনেক সুন্দৱ একটি গল্প। খুব ভালো। ভোট ৱেখে গেলাম। আমাৱ পাতায় আমন্ত্ৰণ ।
রুহুল আমীন রাজু ভালো লাগলো গল্পটি....
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রন রইল।

১৮ নভেম্বর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ২৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪