‘ব্যাকিং’ শব্দটা একেবারেই বরদাস্ত করতে পারে না শাহেদ। বাংলাতে যেন কী বলে শব্দটাকে...ঐ যে পৃষ্ঠপোষকতা! নিজের পিঠকে অন্য কেউ পোষণ করে দেবে, তারপরে একজন সোজা হয়ে দাঁড়াবে...হাহ! এটা একটা কথা হলো?
যেকোন কিছু করতে গেলেই লোকে সবার আগে জিজ্ঞেস করে, মামা-চাচার জোর আছে তো? নইলে কিন্তু কাজ উদ্ধার করতে পারবে না বাপু!
এসব কথা শুনলেই গা জ্বালা করতে থাকে শাহেদের। মামা-চাচা’র জোর আবার কী? মামা-চাচা’র জোর ছাড়াও যে জীবনে কাজ উদ্ধার করা যায়, সে নিজেই তো তার একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ।
শাহেদের মা’র ফুফাতো ভাই, অর্থাৎ সম্পর্কে শাহেদের মামা, সরকারের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। বেশ কাছের সম্পর্কীয়ই বলতে হবে, লতায় পাতায় নয় মোটেও।
অথচ চাকরী হওয়া থেকে শুরু করে আজ অব্দি কোন কাজে শাহেদ তার শরণাপন্ন হয়েছে, এ’কথা সে মোটেও মনে করতে পারে না। মামাই কখনো পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে দেখা সাক্ষাৎ হলে একটু গাল ফুলিয়েই বলেছেন,
‘ভাগ্নে তো সচিবালয়ে বসেও কখনো মামা’র কথা মনে করে না!’
শাহেদ নিরুত্তর থাকে। আসলে সে ইচ্ছে করেই মামার সাথে তেমন একটা দেখা সাক্ষাৎ করে না। মানুষজনের তো এমনিতে কাজকর্ম নেই, খালি পিছে লাগার অভ্যাস। মন্ত্রী মামার সাথে ঘনঘন দেখা সাক্ষাৎ করতে গেলে সবাই ধরেই নেবে যে, শাহেদের নিজের কোন যোগ্যতা নেই। যা কিছু সে করছে, সব ঐ মামার জোরেই!
কিন্তু এমনটা তো সে হতে দিতে পারে না। নিজের যোগ্যতাবলে চাকরি পেয়েছে। আজকাল এ্যাডমিন ক্যাডারে কী তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা! সে সেই প্রতিযোগিতার মধ্যেও কোনরকম পৃষ্ঠপোষকতাকে পাত্তা না দিয়ে দিব্যি বহাল তবিয়তে চাকরিতে নিজের অবস্থানকে মজবুত করেছে। নিন্দুকে যা বলে বলুক, শাহেদ জানে তার যোগ্যতা আছে বলেই কোথাও তাকে আটকাতে হয়নি।
শুধু চাকরিই কেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার আনাগোনা আছে। এত ঝামেলার চাকরির মধ্যেও নিজের শখকে সে হারিয়ে যেতে দেয়নি। স্কুল কলেজে থাকতে যে টুকটাক গান বাজনা’র নেশা ছিল তার চর্চা সে এখনো চালু রেখেছে।
ইদানীং যেকোন ছোটখাট অনুষ্ঠানেই শাহেদের ডাক পড়ে, গান গাওয়ার জন্য।
শাহেদ কাউকেই না বলতে পারে না। সবাই এত পছন্দ করে তার গান শুনতে চায়, এত সমাদর করে তার গানের...এসবকে সে তুচ্ছ করতে পারে না কিছুতেই। তাই শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও সব প্রোগ্রামেই সে হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করে। কাউকেই নিরাশ করতে মন সায় দেয় না তার।
সেদিন সেক্রেটারি স্যারও একটা মিটিং এ বসে তার গানের গলার দরাজ প্রশংসা করলেন। একেবারে উদাত্ত প্রশংসা যাকে বলে। মিটিং এর মাঝখানে সবার সামনে শাহেদ লজ্জায় একেবারে টমেটো হয়ে গিয়েছিল সেদিন। মিটিং এ আসা প্রতিটি মুখ কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে গিয়েছিল তার দিকে। কেউ কেউ তাকে পরেও জিজ্ঞেস করেছে,
‘বলেন কী! আপনি গানও করেন? বাব্বাহ! এত গুণ থাকলে কি চলে? আমাদের মতো বেগুনদের তাহলে কী হবে বলুন?’
শাহেদ বিনয়ের অবতার সেজে বলেছে,
‘কী যে বলেন স্যার! এই একটু আধটু চেষ্টা করি বলতে পারেন। বলার মতো কিছুই নয়।’
‘তা বললে কি চলে? বলার মতো কিছু না হলে কি আর সেক্রেটারি স্যার বাড়িয়ে কিছু বলেন! আমরা তো দিনরাত খেটেও তার এতটুকু সুনজরে পড়তে পারি না।’
শাহেদ স্মিতমুখে চুপ করে থাকে।
সরকারি আমলা সে। নিজের যোগ্যতায় আজ অফিসে তার এত সুনাম, নামডাক। অল্প বয়সেই ডেপুটি সেক্রেটারি হয়ে গেছে। যদিও অ্যাডমিন ক্যাডারে এত ধুমাধুম প্রমোশন হয় না, তবু তার প্রমোশনে কোনো কাঠখড়ই পোড়াতে হয়নি। আগের ব্যাচের প্রমোশন হয়ে পোস্টিং দিতে না দিতেই তাদের ব্যাচকে ধরে ফেলা সারা।
তার সিরিয়াল কিছু পেছনে ছিল, চিন্তায় ছিল শাহেদ। একবার আটকে গেলেই আবার কবে প্রমোশন হবে, কে বলতে পারে! অশেষ ভালো ভাগ্য তার। একেবারে সুড়সুড় করে এগিয়ে গেছে সিরিয়াল। তার সিরিয়ালের পরে আর একজনের হয়েই অবশ্য সেবারের মতো থেমে গেছে।
পরেরজনদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিছুদিন, নাকি কিছু মাস কিংবা বছর, কিছুই বলা যায় না। এখন ভাগ্য ভালো না হলে তো অপেক্ষা করতে হতেই পারে! তার ভাগ্য ভালো, তাই আটকাতে হয়নি।
আর শুধুই কি ভাগ্য? তার মতো পরিশ্রমী ছেলেও কি সহজে চোখে পড়ে? মেধা তো আছেই!
এত খাটাখাটুনির পরেও সে নিজের শিল্পীসত্তাকে হারিয়ে ফেলেনি। গানবাজনার চর্চাটা ঠিকই চালু রেখেছিল। আজ এতদিন পরে হলেও তার কিছুটা তো সুফল পাচ্ছে এখন।
সেদিন একটা ট্যুর শেষ করে সবে একটু অফিসে এসে বসেছে শাহেদ। বাইরে প্রচণ্ড গরম। তাপমাত্রা প্রায় ত্রিশ ডিগ্রীর কাছাকাছি। দরদর করে ঘামছিল সে। রুমে বসে এসিটা মাত্র অন করেছে, এমন সময় পিওন এসে দরজায় নক করলো।
‘স্যার, একজন লোক আপনার সাথে দেখা করতে চায়।’
‘কোন লোক? কী কাজে এসেছে? অফিসিয়াল কিছু হলে বসে থাকতে বল। আমি এইমাত্র একটা ট্যুর থেকে এসেছি।’
‘স্যার অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে।’
গরম চোখে তাকালো শাহেদ। মুখে কিছু বলার দরকার আছে বলে আর মনে করলো না।
পিওন চলে যাচ্ছিল। ইতঃস্তত করে আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,
‘স্যার, মনে হইতাছে মিডিয়ার লোক। হাতে ক্যামেরা আছে।’
এতক্ষণে নড়ে বসলো শাহেদ। মিডিয়ার লোক তার কাছে এসেছে? কী ব্যাপার? এবারে আর আপত্তি জানানোর মানে হয় না। মনের উত্তেজনা চেপে রেখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললো,
‘পাঠিয়ে দাও।’
তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে চোখেমুখে একটু পানি ছিটিয়ে এলো। মিডিয়ার কেউ এসেছে শুনলেই কেমন যেন আলাদা একটা ব্যাপার কাজ করে। যদিও এই অভিজ্ঞতা তার এবারই প্রথম।
আলুথালু বেশবাসের দু’জন ছেলে রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘আসবো স্যার?’
‘জি জি আসুন। বসুন।’
অল্প বয়সী দু’জন ছেলে। বয়স ত্রিশ-বত্রিশের আশেপাশে। তবে একটু নিরাশ হলো শাহেদ। পিওন যে বললো হাতে ক্যামেরা আছে! কোথায় ক্যামেরা? এদের দু’জনের কাঁধে দুটি ব্যাগ ছাড়া তো আর কিছুই নেই।
মনে মনে পিওনের চৌদ্দগুষ্টি তুলে গালাগালি করলো শাহেদ। আজ ব্যাটার খবর আছে!
শাহেদের মুখে আগের গাম্ভীর্য ফিরে এলো। বাইরের ছেলে ছোকরা কী ধান্দায় ঢুকে পড়েছে কে বলতে পারে! হয়ত পিওনকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। কিন্তু সচিবালয়ের ভেতরেই বা ঢুকলো কীভাবে?
ছেলেদুটি কিন্তু বেশ নিরীহ ভঙ্গিতেই বসে ছিল। একজন একটু দম নিয়ে ঝোলা থেকে কাগজ কলম বের করলো, আর অপরজন বের করলো ছোট একটা ডিএইচএল ক্যামেরা।
এতক্ষণে আবার হাসি ফিরে এলো শাহেদের মুখে। যাক, পিওন তাহলে মিথ্যে বলেনি। এবারের মতো বেঁচে গেল ব্যাটা।
শাহেদ তবুও মুখেচোখে কিছুটা কপট গাম্ভীর্যের আবরণ ধরে রেখে বললো,
‘কী ব্যাপার বলুন তো! আপনারা কোথা থেকে এসেছেন?’
‘স্যার আমরা একটা স্থানীয় পত্রিকা অফিস থেকে এসেছি। আপনার একটা ইন্টারভিউ নিতে চাই স্যার। যদি দিতেন, খুব উপকার হতো!’
‘আমার ইন্টারভিউ? কেন বলুন তো!’
‘স্যার, আমরা কিন্তু গুণী মানুষজনের খবর রাখি। আমাদের রাখতে হয় স্যার। আপনি যে এত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সঙ্গীত ভূবনেও অবদান রেখে চলেছেন, এ খবর কিন্তু আমাদের অজানা নয় স্যার।’
শাহেদ মুখের হাসিতে বিনয় আর প্রফেশনালিজমের মিশেলটা ঠিকমত ব্যালান্স করে নিল। পুরো সময়ে এই ব্যালান্সটা ধরে রাখতে হবে।
পাশে বসা অন্য ছেলেটি তখন সুদক্ষ হাতে নানান পোজে শাহেদের ছবি তুলে চলেছে।
তার সঙ্গীটি তখন ব্যস্ত সাক্ষাতকার নেওয়ার কাজে। সঙ্গীত বিষয়ে নানা কথা বার্তা চললো, পেশাগত ব্যস্ততার প্রসঙ্গও মাঝে মধ্যে ঢুকে পড়লো। কীভাবে দুকূল সমান তালে বজায় রেখে চলেছে শাহেদ, সে বিষয়ে সূক্ষ্ণ আলোকপাত ঘটলো আলাপচারিতায়। দেখতে দেখতে প্রায় চল্লিশ মিনিট কোথা দিয়ে যে কেটে গেল, শাহেদ বুঝতেও পারলো না।
যাবার সময়ে ছেলেটি একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘স্যার, সাক্ষাৎকার আগামী সংখ্যাতেই প্রকাশিত হবে। নির্দিষ্ট সময়ে আপনাকে কপি পৌঁছিয়ে দিব স্যার। এটি আমাদের পত্রিকার অফিসের ঠিকানা। আর, আপনাকে কয় কপি দিব স্যার?’
‘আমাকে এককপি দিলেই চলবে।’
‘স্যার, বন্ধু বান্ধব অথবা আত্মীয় পরিজন কারো জন্য যদি নিতে চান...মানে এক্সট্রা কিছু কপি দেওয়া যেতে পারে স্যার। কোন অসুবিধা নেই। ইয়ে স্যার...আপনার মামার জন্য যদি এক কপি নিতে চান...’
‘জি না, তার দরকার নেই। আমাকে এক কপি দিলেই চলবে।’ একটু বিরক্তমুখে বললো শাহেদ।
‘জি স্যার, নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই...’ ছেলেটি আর কথা বাড়ালো না।
ছেলেদুটো চলে যেতেই শাহেদ মনে মনে একটু উষ্মা প্রকাশ করলো। অহেতুক মামার কথা বলে শাহেদের আনন্দের রেশটুকু নষ্ট করে দিল! মামা থাকুক মামার মতো। শাহেদ তো তার কাজের খবর নিতে যাচ্ছে না। শাহেদের কাজের মধ্যে কেন মামার প্রসঙ্গ আসবে?
এই ঘটনার পরে দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। একদিন অফিস থেকে বের হওয়ার সময় সেক্রেটারির রুমে শাহেদের ডাক পড়লো।
সেক্রেটারি সচরাচর ডেকে পাঠান না। কাজেই জরুরি কিছুই হবে এই ভেবে তাড়াহুড়ো করে স্যারের রুমের দিকে রওয়ানা দিল শাহেদ।
সেক্রেটারি স্যার তার রুমে বেশ আরামদায়ক পোজে বসে ছিলেন। স্যারের সামনের টেবিলে রাখা আছে চা ভর্তি টিপট আর দুটো খালি কাপ-পিরিচ। দেখে মনে হচ্ছে, কারো আসার জন্য বুঝি অপেক্ষা করছেন।
শাহেদকে দেখে উষ্ণ গলায় আহবান জানালেন,
‘এই যে শাহেদ এসো এসো। কী খবর তোমার?
একটু আগের উৎকণ্ঠা কেটে গিয়ে শাহেদ নিশ্চিন্ত মনে বসতে বসতে বললো,
‘আমি ভালো আছি স্যার। কোন সমস্যা হয়েছে নাকি স্যার?’
‘না না, তোমার মতো এ্যাক্টিভ ছেলে থাকতে আমার ডিপার্টমেণ্টে সমস্যা কীসের? হাহ হা...এমনি বুঝি ডাকতে পারি না? তারপরে তোমার গানের খবর কী? নেক্সট কোনো ফাংশনে গাচ্ছো নাকি আগে থেকেই জানিও। এবারে ভাবছি তোমার ভাবিকে নিয়ে দেখতে যাবো।’
শাহেদ বিগলিত বিনয়ী মুখে বললো,
‘সামনের মাসে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে গাওয়ার কথা আছে স্যার। ওরা আন অফিসিয়ালি জানিয়েছে। এখনো ফাইনাল কিছু হয়নি।’
‘তাই নাকি? এ তো দারুণ খবর! আরে এই খবরটা এতক্ষণে দিচ্ছো! সেদিন একটা ম্যাগাজিনে নাকি তোমার সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে শুনলাম। অফিসের একজন জানালেন।’
‘ঐ স্যার...স্থানীয় একটা পত্রিকায়। তেমন কিছু নয়!’
‘বল কী! তেমন কিছু নয় মানে? এভাবেই তো আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়বে। যেভাবে তোমার বিজয়কেতন উড়তে শুরু করেছে, সাফল্য তো হাতের মুঠোয়! এসো, চা খেতে খেতে কথা বলি। আরে, তুমি তো এখন সেলিব্রেটি হতে চলেছো! দু’দিন পরে তোমার পাত্তা পাওয়া যাবে নাকি?’
আরো কিছুক্ষণ গান নিয়ে আলাপচারিতা চললো। সেক্রেটারি স্যার শাহেদের জন্যই চা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন, এটা তার জন্য অভাবনীয় ব্যাপার। কাউকে সহজে আশেপাশে ভিড়তে দেন না বলে ব্যাপক কুখ্যাতি আছে সেক্রেটারি স্যারের। গানের প্রতিভা শাহেদের জন্য যেন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
চা খেতে খেতে সেক্রেটারি স্যার বেজার মুখে বললেন,
‘খবর শুনেছো? আমাদের পার্শবর্তী মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারির মেয়াদ নাকি আরো দু’বছর বেড়েছে। আজই শুনতে পেলাম।’
খবরটা শুনেছে শাহেদ। খুব বেশি অবাক হয়নি সে। সেই মন্ত্রণালয়ের অধীনে খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রকল্প চলছে। এখন হুট করে সেক্রেটারি চলে গেলে নতুন সেক্রেটারির অধীনে কাজের গতি মন্থর হয়ে পড়তে পারে। তাই এই এক্সটেনশন জরুরি ছিল। শাহেদ তার অভিমত জানাতেই তার সেক্রেটারি মশা মাছি তাড়ানোর মতো করে বললেন,
‘আরে, তুমি দেখছি ভেতরের খবর কিছুই জানো না! প্রকল্পের গুরুত্ব বুঝে এক্সটেনশন হয় নাকি? উপর থেকে কলকাঠি না নাড়ালে কি সরকারি দপ্তরে কাজকর্ম হয়? আমাদের মন্ত্রী মশাই তো বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরেই থাকেন! আর তাছাড়া সব মন্ত্রণালয়ের পাওয়ার কি আর এক রকম?’
শাহেদ মনে মনে দুঃখিত হলো। সেক্রেটারি স্যারকে সে অন্ততঃ একটু অন্যরকম মন মানসিকতাসম্পন্ন মনে করেছিল। তিনিও তো দেখা যাচ্ছে ভাবনা চিন্তায় সাধারণত্বের গণ্ডী পার হতে পারেননি!
সে অবশ্য সেক্রেটারি স্যারের কথার কোন প্রতিবাদ করলো না। এসব ধ্যান ধারণা একদিনে পাল্টায় না। সবকিছুর জন্যই সময় লাগে। পরিবর্তনের ঢেউ সবে উঠতে শুরু করেছে। সময় দিতে হবে।
শাহেদ উশখুশ করছিল। সেক্রেটারি স্যার আর কী বলবেন, বুঝতে পারছিল না। ইতঃস্তত করে বলেই ফেললো,
‘স্যার, আমি তাহলে এবার উঠি?
‘আ...ও উঠবে? আচ্ছা, ঠিক আছে। তা ভালো কথা, তোমার মামা কেমন আছেন? উনাকে আমার সালাম দিও। চল, একদিন উনার সাথে আলাপ করে আসি। তুমি কোন সময়ের দিকে যাও উনার সাথে দেখা করতে?’
শাহেদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো, এই কাজেই সেক্রেটারি স্যার তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। সে বিনয়ী অথচ নিস্পৃহ মুখে বললো,
‘আমি তো স্যার অফিসে সাধারণত উনার সাথে দেখা করি না।’
‘ওহ...ভুলেই তো গেছি! তাই তো! তুমি উনার সাথে অফিসে দেখা করবে কেন? বাসায় গেলে কখন দেখা করা যেতে পারে উনার সাথে?’
শাহেদের আর একটাও কথা বলতে ইচ্ছে করলো না। তবু নিতান্তই অনিচ্ছাসহকারে বললো,
‘স্যার, আমি তাহলে একবার আলাপ করে আপনাকে জানাই?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ...নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই!’
সেক্রেটারি স্যারের রুম থেকে বের হতে হতে শাহেদ খুব বাজে একটা গালি উচ্চারণ করলো মনে মনে। অকর্মার ঢেঁকি কোথাকার! কী করলে কাজের উন্নতি হয় সেদিকে নজর নেই, ধরাধরি করে চেয়ার আগলে রাখার চেষ্টা! যত্তসব!’
নিজের রুমে ঢুকতে ঢুকতে মুখ থেকে ফসকে বেরিয়েই গেল কথাটা,
‘গাড়ল কোথাকার! সবকিছুই কী আগলে বসে থাকলে চলে!’ কথাটা বলে ফেলেই জিভ কাটলো শাহেদ। পিওন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
চীন মৈত্রী সম্মেলনের বার্ষিক আনন্দমেলায় শাহেদের একক সঙ্গীত সন্ধ্যা উপভোগ করলো সবাই। অনুষ্ঠানের মাত্র এক সপ্তাহ আগে শাহেদকে নিশ্চিত করা হলো যে, এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ শাহেদ। এতটা সে নিজেও আশা করেনি। ভেবেছিল হয়ত টেলিভিশনের পরিচিত দু’একজন মুখের পাশাপাশি সেও গান গাইবে। কিন্তু একেবারে একক হিসেবে গাওয়ার প্রস্তাব আসবে এ যেন কল্পনারও অতীত!
মাত্র সাতদিন আগে কনফার্ম করলেও প্রস্তুতিতে কমতি রাখেনি সে। আরেকটু আগে জানতে পারলে আরো ভালো কিছু উপহার দিতে পারতো সেই আফশোস অবশ্য কিছুতেই গেল না।
অনুষ্ঠানের কলাকুশলীরা নিজেরাও কি আর জানতো যে, একক হিসেবে শাহেদকেই বলা হচ্ছে!
মিডিয়ার জনপ্রিয় শিল্পী ভূবন চৌধুরিকে নিয়ে আসার সবকিছু যখন মোটামোটি ঠিকঠাক, তখনই সেক্রেটারি স্যার নিজে ফোন করে জানালেন যে, একক শিল্পী হিসেবে যেন শাহেদের গান উপস্থাপিত হয়। ব্যস, আর কী! সাথে সাথে সবকিছু আবার নতুন করে ঠিকঠাক করতে হলো!
অনুষ্ঠান শেষে শাহেদকে নিয়ে তুমুল মাতামাতি চললো। সেক্রেটারি স্যার নিজে এসে পিঠ চাপড়ে দিলেন। অন্যরাও তোয়াজের সুরে কথা বলতে লাগলো তার সাথে। একটি অনুষ্ঠান যেন শাহেদকে আরো দশধাপ উপরে উঠিয়ে দিল।
শাহেদের বিজয়কেতন পতপত করে উড়তে লাগলো। জুনিয়র ছেলেপুলেরা এসে অটোগ্রাফ পর্যন্ত নিয়ে যায়। কেউ কেউ আরো এককাঠি এগিয়ে বলে,
‘স্যার, এবারে একটা একক এ্যালবাম বের করে ফেলেন। কত হাবিজাবি লোকজন একটু গাইতে জানলেই এ্যলবাম বের করে ফেলে! আর আপনি এত চমৎকার গান করেন স্যার, আপনার তো অবশ্যই এ্যালবাম বের করা উচিত!’
মনে মনে ইচ্ছেটা শাহেদের নিজের মধ্যেও যে বিড়বিড় করছে না, তা নয়। তবে সে নিজেকে আরেকটু প্রস্তুত করে নিতে চাচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতাটা চলতে থাকুক। এ্যালবামের কাজে হাত দেওয়ার আগে নিজেকে আরেকটু ঝালাই করে নেওয়া উচিত।
এরমধ্যেই একদিন অফিসের মাঝখানেই হঠাৎ মা’র ফোন এলো।
‘কী রে, খবর জানিস না কিছু?’
‘কী ব্যাপার মা? কোন খবরের কথা বলছো?’
‘বাঃ! কিছুই জানিস না? তুই কী রে! তোর মামাকে তো মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন ধরেই নাকি কথাবার্তা চলছিল। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীসভা রদবদল করবেন। তোর মামা বাদেও আরো দু’জন মন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি তো ভেবেছি তুই জানিস! হয়ত আমাকে বলিসনি! আজ তো টিভিতে সারাদিন ধরেই এই নিউজ!’
শাহেদ খুবই অবাক হলো। এই খবরটা সে কীভাবে মিস করলো? আসলে নিজের শখের পেছনে সময় দিতে গিয়ে ইদানীং তেমন একটা টিভি দেখা হয়ে ওঠে না।
তবে খবরটাতে সে খুব বেশি বিচলিতও হলো না। এ বরং একদিক দিয়ে ভালোই হলো। মামার ‘ব্যাকিং’ এর অপবাদটা এবার তার ঘাড় থেকে নামবে।
শাহেদ অবিচলিত গলাতেই বললো,
‘তাই? আমি জানি না তো মা! আসলে এত কাজের চাপ! যাক, চিন্তা করো না। মামা’র বয়স হয়েছে। অনেকদিন মন্ত্রীত্ব’র হাওয়া খেয়েছেন। এবারে একটু অন্যকাজে মন দিক।’
‘শাহেদ, বাবা তোর মামাকে একটা ফোন দিস। এতদিন সমস্যা মেটানোর জন্য মামা’র কাছে যেতে পারতি। এখন তার দূর্দিনে আমরা তাকে ভুলে গেছি, এমনটা যাতে মনে না করেন।’
শাহেদের একবার ইচ্ছে হলো বলে, ‘আমি আমার সমস্যার জন্য কখনোই তার শরণাপন্ন হইনি।’ পরে বাদ দিল। থাক, এসব কথা মাকে বলে কী হবে! শাহেদ আগে যা ছিল এখনো তাই থাকবে।
ব্যাকিং এর থিওরিতে সে কোনকালে বিশ্বাস করেছে?
খুব বেশি কাজের চাপ না থাকলে শাহেদ অফিস থেকে সাধারণতঃ এক দু’ঘণ্টা আগে বের হয়য়। বাসায় গিয়ে একটু রেওয়াজ করার সময় পায় এতে। আজকেও অন্যদিনের মতোই বের হতে যাবে এমন সময় পিওন এসে খবর দিল, সেক্রেটারি স্যার ডেকে পাঠিয়েছেন।
হয়ত সেদিনের মতো চা খেতেই ডেকেছেন, এই ভেবে শাহেদ বেশ হাল্কা দুলকি চালে স্যারের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
স্যারের রুমের সামনে গিয়ে অবশ্য তার এই হাল্কা ভাব বজায় থাকলো না। বেশ গম্ভীর মুখে কীসের যেন একটা চিঠি দেখছিলেন সেক্রেটারি স্যার। শাহেদ অনুমতি নিয়ে রুমে গিয়ে ঢুকতেও সেটার ওপর থেকে মুখ সরালেন না। শাহেদ ইতঃস্তত করে বসতে যাবে, এমন সময়ে মেঘের গর্জন দিয়ে বলে উঠলেন,
‘অফিসের কাজকর্ম থেকে কি মনটাকে একেবারেই সরিয়ে নিয়েছেন জনাব শাহেদ?’
চমকে উঠলো শাহেদ। এই কণ্ঠস্বরের সাথে তার আগে পরিচয় ঘটেনি। কিছু একটা বলতে যাবে, তখন আবার গর্জে উঠলো সেই স্বর।
‘সামান্য একটা চিঠি লিখতে গিয়ে এত ভুলভাল করেছেন? কাকে অনুলিপি দিতে হয়, কোন স্মারক নাম্বার দিতে হয়...কিছুই তো দেখছি জানেন না! ক’বছর হলো চাকরির? এখনো তো কিছুই শেখেননি!’
শাহেদ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। এসব ভুলভাল সে ঠিকমতো কখনো লক্ষ্যই করে না। সেকশন থেকে চিঠি হয়ে আসে, সে শুধু সই করে দেয়। এমনটাই হয়ে এসেছে এতদিন। সেক্রেটারি স্যার ত এভাবে কোনদিন খুঁটিয়ে দেখেননি! আজ হঠাৎ কী মতিভ্রম হলো স্যারের?
‘শুনুন, মন দিয়ে কাজ করবেন বুঝেছেন? অফিস কাজের জায়গা। অন্যকিছু করার ইচ্ছে থাকলে অফিস থেকে ইস্তফা দিয়ে করবেন। আর আপনি নাকি প্রতিদিন দু’ঘণ্টা আগে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েন? এ্যাডমিনে চাকরি করে ঠিকমত অফিস না করলে চাকরি থাকবে মনে করেছেন? এসব এখানে চলবে না। আজ থেকে সতর্ক হয়ে যাবেন, বুঝেছেন? এখন আসুন।’
পুরো সময়ে শাহেদ একটাও কথা বলতে পারলো না।
আজ সেক্রেটারি স্যার এত দূর্ব্যবহার করলেন কেন তার সাথে? হয়ত বাসায় বউয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে, সেই ঝাল তার ওপরে ঝাড়লেন।
নিজের রুমে বসে আপনমনে গজরাতে লাগলো শাহেদ। তবে আজ আর বাসায় যাওয়ার উদ্যোগ নিল না সে। ক্ষেপে আছে পাগলা। দেখাই যাক কিছুদিন। দু’দিন পরেই হয়ত আবার ডেকে নিয়ে ক্ষমা চাইবে।
দিন যেতে লাগলো। পরিস্থিতি পাল্টালো না।
শাহেদের গানের ডাক আসাও কমে যেতে লাগলো। ইদানীং আর কোথাও থেকে তেমন একটা ডাক টাক আসে না। আগে প্রায়ই এটা ওটা ফাংশনে তাকে গান গাইতে অনুরোধ করা হতো। এখন কোথাও থেকে সেরকম অনুরোধ আর আসে না বললেই চলে।
এরই মধ্যে জয়েন্ট সেক্রেটারি স্যার প্রমোশন নিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে তার সম্মানে একটা ছোটখাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। আলোচনা, হাল্কা খাওয়া দাওয়া আর ছোট একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অফিসার্স ক্লাবে আয়োজন করা হলো অনুষ্ঠানটি।
শাহেদ ভেবেছিল এবার তাকে গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। সে কিছুটা প্রস্তুতিও নিয়েছিল। নিজেদের ডিপার্টমেন্টের অনুষ্ঠান, তাকে না বললে কাকে বলবে?
কিন্তু অনুষ্ঠানের আগে এই ব্যাপারে কিছুই বলা হলো না। শাহেদ মনে করেছিল, হয়ত সারপ্রাইজ হিসেবেই তাকে উপস্থাপন করা হবে। সে অপেক্ষা করছিল।
শেষমেষ সারপ্রাইজ একটা উপস্থাপন করা হয়েছিল বৈকি! তবে তা শাহেদের গান দিয়ে নয়, বাইরে থেকে স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পীকে নিয়ে এসে সারপ্রাইজটা দেওয়া হয়েছিল।
অনুষ্ঠান চলাকালীন দু’একটি মুখ যেন ঘুরে ঘুরে ওর দিকেই তাকাচ্ছিল। অবশ্য মনের ভুলও হতে পারে শাহেদের! সে কোনদিকে তাকাতে পারছিল না।
অপমানটা হয়ত একসময় ভুলেই যেত শাহেদ, কিন্তু পারলো না সেক্রেটারির স্যারের একটা খোঁচা’র কারণে।
অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে বিদায় দিয়ে সেক্রেটারি স্যার তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন,
‘শাহেদ, আপনার হারমোনিয়ামটা কি এখনো বাসায় রেখে দিয়েছেন? মন্ত্রিসভার যেদিন রদবদল হলো, সেদিন ওটাকেও দরকারি কিছুর সাথে বদলে নিতে পারতেন! পড়ে না থেকে আপনার কাজে আসতো জিনিসটা। সবকিছুই কি আর আগলে বসে থাকলে চলে!
কী বলেন জনাব শাহেদ?’
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এক সামাজিক লজ্জার গল্প বলতে চেয়েছি আমার গল্প 'ব্যাকিং' এ।
এই সমাজে নির্লজ্জের মতো এর চর্চা হয়ে চলেছে। মেধা অথবা পরিশ্রমের চেয়ে অধিক মূল্যবান হয়ে ওঠে এই ব্যাকিং। যার আছে মামা-চাচা'র জোর, সেই সকলের কাছে সম্মানিত ও সমাদৃত।
গল্পের শাহেদ নিজের পরিশ্রম ও মেধাকেই তার ওপরে ওঠার একমাত্র উপায় বলে মনে করেছে সবসময়। ঘুনাক্ষরেও সে ভাবতে পারেনি, তার শক্তিশালী খুঁটির জোর তাকে তার অগোচরেই ব্যাকিং দিয়ে এসেছে এতকাল। বুঝতে পেরেছে সেদিনই, যেদিন সেই খুঁটি আর তাকে শক্ত রাখতে পারেনি।
সেদিন সে লজ্জা পেয়েছে, অপমানিত হয়েছে। একদা তাকে তোয়াজ করে চলা মানুষেরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করেছে।
কিন্তু সত্যিই কি সেই কেবল অপমানিত ও লজ্জিত হয়েছে? নাকি অপমানিত হয়েছে সমাজ...যে সমাজে এমন নির্লজ্জ ব্যাকিং প্রথা চালু আছে?
০১ ডিসেম্বর - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
৬৭ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৫
বিচারক স্কোরঃ ২.১ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ২.৪ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী