‘আপা, ইয়ে আপনি কি একদিন একটু সময় দিতে পারবেন? কিছু কথা জিজ্ঞেস করার ছিল আপনাকে...’
প্রশ্নটা শুনে ডাঃ শিরিন বানু তাকালো রেহনুমা আক্তারের দিকে।
বাচ্চাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে প্রতিদিন এই সময়টা একটু গল্প করতে করতে সামনে এগিয়ে যায় দু’জনে। দুজনেই ব্যস্ত মানুষ। একজন ব্যস্ত নিজের পেশাগত জীবন নিয়ে, অন্যজন তার সংসার নিয়ে। এর বেশি সময় হয়ে ওঠে না গল্প গুজব করার। তবে দুজনেই পরষ্পরের সঙ্গ পছন্দ করে। কোথায় যেন দুজনের জীবনের একটা সুর আছে, যা একই ছন্দে বাঁধা।
শিরিন সময় পায় না নিজের কর্মজীবনকে কিছুক্ষণের ছুটি দিয়ে সংসারে মন দিতে, আর রেহনুমা সময় পায় না সংসার থেকে দু’দণ্ড মুখ ফিরিয়ে বাইরের জগতটাকে দেখতে। অথচ দুজনের প্রাণই আকুলিবিকুলি করে অপরটির স্বাদ নিতে।
শিরিন অবাক হয়ে বললো,
‘এখুনি বলুন না আপা! কী ব্যাপার?’
রেহনুমা ইতঃস্তত করতে থাকে,
‘উ...না এখন ঠিক বলতে চাচ্ছি না। একটু সময় নিয়ে বলতে চাই।’
‘কী ব্যাপার? মেয়েলী কোনো সমস্যা?’
‘জি...ঐ আর কী! সময় নিয়ে বলবো আপা। কখন কথা বললে সুবিধা হয় আপনার জন্য?’
শিরিন পেশায় গাইনোকলজিস্ট। চাকরির বয়স প্রায় বারো বছর। এই লাইনে রোগীর অভাব নেই। পৃথিবীতে জন্ম যেমন বন্ধ হবে না, তেমনি বন্ধ হবে না জন্মদাত্রীর শরীরের নানাবিধ ঝুট ঝামেলা। এ এক আদি অনন্তকালের বহমান ধারা।
রেহনুমা’র ইতঃস্তত ভাব দেখেই শিরিন যা বোঝার বুঝে নিল। বললো,
‘আপা, আপনি আমার চেম্বারে চলে আসুন না! আমি একটা ক্লিনিকে বসি, সপ্তাহে পাঁচদিন বিকাল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। আপনাকে আমার একটা কার্ড দিই। রাখুন।’
রেহনুমা হাত বাড়িয়ে শিরিন বানু’র কার্ডটা নিয়ে দেখলো। বললো,
‘আচ্ছা আপা, দেখি...যাব একদিন।’
রেহনুমা তবুও কেমন সন্দিহান। যেন কী বলবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। শিরিন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে রেহনুমার কুণ্ঠিত মুখের দিকে। তারপর বলে,
‘আপা, সমস্যা থাকলে দেরি করবেন না। তাড়াতাড়ি চলে আসেন।’
‘না...তেমন সমস্যা ঠিক না। আসলে কিছু প্রশ্ন জাগছে মনের মধ্যে...তাই ভাবলাম...’
শিরিন হাতঘড়ির দিকে তাকায়। আর দেরি করা যায় না। হাসিমুখে বলে,
‘এত না ভেবে চলে আসুন। আরাম করে কথা বলা যাবে। ভয় নেই, আপনার কাছ থেকে ফি নেব না। আপনি আমার বন্ধু মানুষ। তবে আপনি চাইলে আপনার সেই চালতা’র আচারটা নিয়ে আসতে পারেন। সেটাতে আপত্তি করবো না...হাহ হা...’
রেহনুমা অবাক হয়ে বলে,
‘ও মা! সেই আচার আপনার এত ভাল লেগেছিল! আগে বললে তো আমি... আচ্ছা দাঁড়ান, আরো কয়েক বয়াম বানিয়ে রাখবো পরেরবার। আপনাকে কয় বয়াম দিব?’
‘ওরে বাবা! আগে রোগীকে তো দেখি! আগেই ফি দিয়ে দিবেন?’
দু’জনে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে যার যার গন্তব্যে পা বাড়ালো। প্রত্যেকের মনের মধ্যেই কর্মব্যস্ততা ভরা দিনের ছবি ফুটে উঠেছে।
শিরিন বানুর সাথে কথা বলে বাড়ির পথে যেতে যেতে রেহনুমাও ভাবছিল, এক ফাঁকে গিয়ে একটু কথা বলে আসা যেতেই পারে। কতক্ষণই আর লাগবে? মনের খচখচানিটা দূর করা যাবে।
বাসায় পা দিয়েই সে কথা আর মাথায় থাকলো না তার। কিছুক্ষণের জন্য ছোট বাচ্চাটাকে কাজের মেয়ের কাছে রেখে মেয়েটাকে স্কুলে দিয়ে আসতে গিয়েছিল। এই সময়টুকুর মধ্যেই একেবারে লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে গিয়েছে।
কাজের মেয়েটাকে নতুন কাজে রাখা হয়েছে। আগের মেয়েটা বেশ কাজের ছিল। এই মেয়েকে একটা বললে আরেকটা করে। কথাবার্তাও ঠিকমত বুঝতে পারে বলে মনে হয় না।
রেহনুমা একদিন তাকে ডিটারজেন্টের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘কাপড়গুলো সাবান দিয়ে বালতিতে ভিজিয়ে রাখ। আধাঘণ্টা পরে ধুয়ে নিস। আর ততক্ষণ থালাবাসনগুলো ধুয়ে নিস, বুঝেছিস?’
সে প্রবল বেগে মাথাকে উপর নীচে নামায়। তার সেই উপর নীচে মাথা নামানোর বেগ দেখে কাজ করতে পারার সম্ভাবনা নিয়ে মনের মধ্যে আর কোনো সন্দেহই থাকলো না।
রেহনুমা সেই সময়টুকু বাচ্চাকে খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ফিরে এসে দেখে, তার কাজের মেয়ে সুন্দর করে সব থালা বাসন ধুয়ে বাথরুমে যাচ্ছে কাপড় কাচতে। রেহনুমা নিশ্চিন্ত হয়। যাক, মেয়েটা তাহলে কাজের আছে!
খেতে বসে থালা বাসনে কেমন যেন সাবান সাবান গন্ধ! কী ব্যাপার? জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেল, সে ডিটারজেন্ট দিয়ে থালাবাসন ধুয়ে কাপড় পানি কাচা করে ধুয়ে দিয়েছে। ধোওয়ার আগে কাপড় আধাঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখেছে। সে কাজে তার ভুল হয়নি।
রেহনুমা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ভেবেছে,
যাক, তাও ভালো যে ডিস ওয়াশিং লিকুইড দিয়ে কাপড় ধোয়নি!
এমন করিৎকর্মা মেয়ের কাছে তিন বছরের বাচ্চাকে রেখে যাওয়া বিরাট দুঃসাহসিকতার কাজ। তবু উপায় নেই।
বাসায় ফিরে রেহনুমা দেখতে পেল, কাজের মেয়েটি তার বাচ্চাকে ঘরের মধ্যে একা রেখে বাইরে কাপড় উঠাতে গেছে। আর তার বাচ্চা এই সুযোগে সারা বাড়ি লণ্ডভণ্ড করে বসে আছে। রেহনুমা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বিমূঢ় হয়ে বসে রইলো।
তার শিশুটি একা একা রান্না ঘরে চলে যেতে পারতো। চুলার কাছেই ম্যাচের কাঠি রাখা আছে। মেঝেতে এক কোনায় বটি। কী হতে পারতো কে জানে!
কাজের মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল। সে ভালোমানুষের মতো মুখ করে বললো,
‘দেওয়া আইছে। বৃষ্টি হইবো। তাই কাপড় উঠাইবার গ্যাছি!’
নিরীহ মুখে উত্তর দিয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে কত্রীর মুখের দিকে চেয়ে থাকলো সে।
রেহনুমা কথা খুঁজে পায় না। এই মেয়েকে বকাঝকা করেই বা কী হবে! সামনের দিনগুলোর দুশ্চিন্তায় সে অধীর হয়ে ওঠে।
শামীমকে কিছু বলতে গেলেই বলে,
‘ওসব তোমার ডিপার্টমেণ্ট। তুমি কীভাবে সামলাবে তা তুমি বুঝবে। শুধু কিছু কেনাকাটার দরকার হলে এই বান্দাকে জানাবে। সামনে এনে হাজির করে দিব।’
রেহনুমা অবাক হয়। এটা কোন কথা হলো! সংসারটা কি ওর একার?
এরমধ্যেই শুরু হয়ে গেল শামীমের বোনের বিয়ের আয়োজন। শামীমের বাবা-মা আর বোন দেশের বাড়িতে থাকেন। শামীম তাদের একমাত্র ছেলে। রেহনুমা সেই বাড়ির একমাত্র বউ। তার এই আয়োজনে বসে থাকলে চলে না।
বিয়ের সব কেনাকাটা করার দায়িত্ব এসে পড়ে রেহনুমার কাঁধে। শামীমের সেই এক কথা। তার ডিপার্টমেণ্ট নাকি শুধু ফিনান্স। কাজেই সে অন্য কোন কিছুতে নাক গলালে কাজের ক্ষতি বৈ লাভ হবে না।
মেয়েটার সামনে পিএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার পরেই তার ফুপুর বিয়ে। পড়াশোনাতে তার মনোযোগ এখন শূণ্যের ঘরে। উত্তেজনা নিয়ে সে ফুপুর বিয়েতে যাওয়ার দিন গুনছে।
এই উত্তেজনার মধ্যেই তাকে ধরে বেঁধে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করানোর পুরো ভারটাও পড়ে গেল রেহনুমারই ওপরে। তার আর দম ফেলার ফুরসত রইলো না।
এসবের মধ্যে ও একসময় ভুলেই গেল, ডাঃ শিরিনের কাছে কী জানতে চেয়েছিল।
শুধু মাঝে মাঝে বুকে হাত দিলে কেমন একটু যেন হাতে বাঁধে। খুব হাল্কা কোনো অমসৃণতা। মনটা কেমন একটু খুঁতখুঁতিয়ে ওঠে। কীসের যেন চাপা অস্বস্তি।
রেহনুমা পাত্তা দিতে চায় না। নিজেকে প্রবোধ দেয় এই বলে, ওসব কিছু না! মেয়েদের হতে হয় ইস্পাতের মতো শক্ত। সামান্য একটু কিছুতেই তাদের ভেঙে পড়লে চলে না!
পি এস সি পরীক্ষার দু’মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে গেল।
ডাঃ শিরিন বানুর সাথে আর দেখা হয় না রেহনুমার। মনে মনে সে ঠিক করে রাখে পরের সিজনে খুব ভাল করে দু’বয়াম চালতার আচার বানিয়ে দেবে শিরিন আপাকে। একদিন সামান্য একটু আচার প্লাস্টিকের কৌটাতে করে নিয়ে গিয়েছিল। সেটা খেয়ে যে আপা এত খুশি হবে, একদম ভাবতে পারেনি।
ননদের বিয়ের কেনাকাটাও ফাঁকে ফাঁকেই চলতে লাগলো। বসে থাকলে চলবে না। সব কাজ শেষ করে ফেলতে হবে।
মেয়ের পরীক্ষা আর ননদের বিয়ের ঝামেলা চুকে গেলে তবে সে একটু হাঁফ ছাড়ার সময় পাবে।
ইদানীং গোসলের সময়ে অমসৃণতাটা খুব বেশি যেন হাতে বাঁধে। শরীরে আরো কিছু পরিবর্তন টের পায় রেহনুমা। আকৃতিতে বৈসাদৃশ্য...মাঝে মাঝে হাল্কা ক্ষরণ।
আচ্ছা, শামীমকে কি জানাবে বিষয়টা? ও যদি পাত্তা না দেয়! যদি হেসে উড়িয়ে দেয়!
কখনো তেমন একটা জ্বরজারি হয় না রেহনুমার। তাই তেমন একটা শুয়ে বসেও থাকা হয় না। তবু কখনো কখনো তো ক্লান্তও লাগে মানুষের। সে একটু শুয়ে থাকলেই শামীম বলে,
‘কী শুয়ে যে!’
‘ভালো লাগছে না। মনে হয় জ্বর আসবে।’
শামীম বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
‘ব্যাঙের আবার সর্দি!’
এবারও যদি তেমনই কিছু মনে করে? থাক, শুধু শুধু অপদস্থ হতে হবে।
গোসল শেষ হয়ে গেলে বিষয়টা আর মনে থাকে না। হাজার কাজের মাঝে আবার নিজেকে জড়িয়ে নেয়।
একসময় পরীক্ষা শেষ হয়, ননদের বিয়ের ঝামেলাও চুকে যায়। রেহনুমার তবু হাঁফ ছাড়ার সময় আসে না। এক দায়িত্ব শেষ হয়, নতুন দায়িত্ব ঘাড়ে এসে পড়ে।
কাজের মেয়েটা অনেক ঘটনা অঘটন ঘটিয়ে সবে একটু লাইনে এসেছে। বড় বড় ঘটনা ঘটানোর হার কমেছে যদিও, তবু ছোটখাট এটা ওটা এখনো লেগেই আছে। ওসব থামতে আরো সময় দিতে হবে।
শরীরটা আর চাঙ্গা থাকে না সবসময়। এখন আর আগের মতো কাজ করার উদ্যম পায় না রেহনুমা। শরীর মনে কেমন যেন ক্লান্তি এসে ভর করে। ইচ্ছে করে সবসময় ঘুমিয়ে থাকতে। বাচ্চাটা মর্জি করলে খুব বিরক্ত লাগে। মাঝে মাঝে লাগিয়েও দেয় দু’চার ঘা।
একদিন খেতে বসে শামীম বেশ একটু উষ্মার সুরেই বললো,
‘তুমি কিন্তু ইদানীং অল্পতেই রেগে যাচ্ছো রেহনুমা। এভাবে একটুতেই রেগে গেলে তো মুশকিল, তাই না?’
এই কথা শুনেও রেহনুমা রেগে ওঠে।
‘তুমি কি বলতে চাইছো, আমি কোন কাজ ঠিকমত করছি না? না না বল তুমি...কী বলতে চাইছো...আমি আমার দায়িত্বে অবহেলা করছি?’
শামীম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ইদানীং রেহনুমাকে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। এত অল্পতে রেগে ওঠার মানুষ তো সে নয়! কীসের যেন একটা ছন্দপতন...রেহনুমা যেন ঠিক নিজের মধ্যে নেই।
সেটা রেহনুমাও বুঝতে পারে, ও এখন আর নিজের মধ্যে বাস করে না। ওর বাস যেন অন্য কোথাও। নিজের চেহারার দিকে তাকালেও খুব অবাক লাগে। কেমন যেন একটা রুক্ষ্ণতা চোখে মুখে। খুব দূর্বল লাগে সারাক্ষণ। মাথাটা কেমন যেন হাল্কা বোধ হয়।
একদিন ঘরের মধ্যেই মাথা ঘুরে পড়ে গেল রেহনুমা।
বাচ্চাটাকে খাইয়ে সবে শুইয়ে দিয়েছে সে। মেয়েটা প্রাইভেটে গেছে। তাকে আনতে হবে। বাসার কাপড়টা পাল্টে নিয়ে চুলে চিরুনি বোলাতে বোলাতেই রেহনুমার মনে হলো, ওর সারা পৃথিবীটা যেন দুলছে।
কোনমতে বিছানার এক পাশটা ধরে টাল সামলাতে গিয়েই হঠাৎ সবকিছু কেমন যেন অন্ধকার হয়ে গেল।
কতক্ষণ অচেতন হয়ে পড়েছিল সে, রেহনুমা জানে না। কাজের মেয়েটা অনেক বুদ্ধি করে পাশের বাসার প্রতিবেশিনীকে ডেকে এনেছে। তিনি এসে ফোন দিয়েছেন রেহনুমার স্বামীকে।
সেদিনই রেহনুমাকে নিয়ে যাওয়া হলো ক্লিনিকে। গাইনোকলজিস্ট রেহনুমার ব্রেস্টের সিস্ট পরীক্ষা করে বললেন,
‘কতদিন ধরে এটা শরীরে আছে আপনার?’
‘প্রায় মাস ছয়েক...’
‘ডাক্তার দেখাননি কেন?’
চুপ করে থাকে রেহনুমা।
এই প্রশ্নের উত্তরটা ওর জানা নেই। অনেক সময়ই মনে হয়েছে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার বিষয়টা। তবু কীসের জানি ব্যস্ততা এসে সামনে দাঁড়িয়েছে বারবার।
প্রতিমূহুর্তে মনে হয়েছে, ওটা করা হয়নি। আগে ওটা করে করে নিই...তারপরে...। এক ব্যস্ততা শেষ হতে না হতেই আরেক ব্যস্ততা শুরু হয়েছে।
সময় হয়নি রেহনুমার। এখনো মাথায় ঘুরছে কত কাজ!
বাচ্চাটাকে এ’কদিন ঠিকমত দেখাশোনা করতে পারেনি...মেয়েটার পড়া দেখিয়ে দিতে পারেনি।
বর্ষাকাল আসতে চললো। চালতার আচার বানাতে হবে শিরিন আপার জন্য... আরো কত কাজ!
সময় কোথায় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হবার?
কিছুদিন পরে রেহনুমার রিপোর্ট এলো।
ডাক্তার জানালেন, রেহনুমা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। ইতিমধ্যেই অনেকদূর ছড়িয়ে পড়েছে ক্যান্সার। সারভাইভাল চান্স কমে এসেছে অনেকখানি। ক্লিনিকে ভর্তি হতে হবে তাকে।
রেহনুমার স্বামীকেও শক্ত মুখে বলেন,
‘আপনার স্ত্রী যে এত অসুস্থ আপনি কিছুই বুঝতে পারেননি? এটা জানা কি আপনার দায়িত্ব ছিল না?’
শামীম পরিস্থিতির আকস্মিকতায় বিমূঢ়। সে এসে ম্লান মুখে দাঁড়িয়ে থাকে রেহনুমার বেডের পাশে। তার মাথায় ঘুরতে থাকে অনেক প্রশ্ন...রেহনুমা একবার কেন ওর অসুস্থতার কথা তাকে বললো না? এভাবে নিজের মধ্যে কেন রেখে দিল সে? শামীম কি তার আপন নয়?
মন্থর হয়ে আসে রেহনুমার দিনগুলো। মেয়েটা মাঝে মাঝে বাবার সাথে মাকে দেখতে আসে। বাচ্চাটাকে কাজের মেয়েটার কাছেই রেখে আসতে হয়। ওকে নিয়ে আসলে রেহনুমাকে ছাড়তে চায় না কিছুতেই।
শামীমের দায়িত্ব এখন বেড়ে গিয়েছে অনেকগুণ। অফিস শেষে মেয়েকে পড়ানো। সংসারের যাবতীয় খুঁটিনাটির দেখাশোনা।
তাকে দেখে পাংশু মুখে হাসে রেহনুমা,
‘কী...ফিনান্স ডিপার্টমেণ্ট এতদিনে শিফট হলো তাহলে!’
খবর পেয়ে একদিন শিরিন বানুও আসে রেহনুমাকে দেখতে। ব্যথিত মুখে বসে থাকে রেহনুমার পাশে। ওর ডাক্তারের সাথে কথা বলে শিরিনের মুখটা আরো কালো হয়ে ওঠে।
এক চিলতে হাসি বহু কষ্টে ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে তুলে রেহনুমা বলে,
‘আপা, আপনার আচারটা বুঝি আর বানানো হলো না!’
শিরিন সঙ্গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে। প্রশ্নটা খচখচ করতে থাকে মনের ভেতর,
‘কেন সেদিন নিজেকে প্রকাশ করলেন না আপা?’
কোন প্রশ্নেরই উত্তর কারোরই জানা হয় না। অলিখিত বিধিলিপির মতো সেগুলোও হারিয়ে যায় অব্যক্ততার গহ্বরে।