এক
ক্রিং...ক্রিং...ক্রিং...
ফোনটা বেজেই চলেছে অবিরাম। ওপাশ থেকে কারো হাতের স্পর্শ না পেয়ে যেন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। প্রায় দশমিনিট ধরে একটানা বাজার পরে ফোনটি রিসিভ হলো। দৌঁড়ে এসে ফোনটা ধরে লোপা হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলো,
‘হ্যালো! হু ইজ দিজ?’
‘হ্যালো...লোপা...মা...এতো দেরি করলি কেন ফোন ধরতে?’ লোপার মা রওশন আরা প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে জিজ্ঞেস করলেন।
‘ওহ, মা তুমি! আমি ভাবলাম এতো সকালে কে আবার ফোন দিলো? কী ব্যাপার! কী হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন? কিছু হয়েছে নাকি?’
‘আগে বল, তুই কী করছিলি? কখন থেকে ফোন করছি। ধরছিলি না কেন?’
‘আমি তো কিচেনে ছিলাম মা! আবিদ আজ নিউইয়র্ক যাচ্ছে একটা কনফারেন্সে এটেণ্ড করতে। তাই ওর ব্রেকফাস্ট রেডি করছিলাম। আরে দেখো কাণ্ড! এতোক্ষণ ধরে ফোন বাজছে, অথচ আমি শুনতেই পাইনি!’
‘ওহ! ফোনটা আবিদকে দে তো! আমি একটু একমিনিট কথা বলবো ওর সাথে।‘
‘এহ হে! এইমাত্র বেরিয়ে গেলো তো! কী বলবে? আমাকে বলো। আচ্ছা, আমি ওকে জানিয়ে দেবো যে, তুমি কথা বলতে চেয়েছিলে। রাখি এখন, ঠিক আছে? আমিও এখন বেরুবো। ইউনিভার্সিটি যাবো। তোমার সাথে পরে কথা বলবো।‘
লোপা ফোনটা রাখতে যাচ্ছিলো, রওশন আরা ব্যস্তসমস্ত ভাবে বলে উঠলেন,
‘লোপা, শোন। খুব জরুরী একটা প্রয়োজনে ফোন করেছি তোকে। ইয়ে, তোর বাবা খুব অসুস্থ। তোকে খুব দেখতে চাইছে। তুই যেভাবে পারিস তাড়াতাড়ি চলে আয়। দেরি করলে খুব খারাপ কিছু একটা হয়ে যাবে...’ রওশন আরা ফোন হাতে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন।
‘বাবা অসুস্থ! কেন কী হয়েছে? আগে তো কিছু বলোনি! এখন হুট করে আমি কীভাবে যাই! আবিদ নাই, আমি একা একা চলে গেলে ...’
‘লোপা, তুই যেভাবে পারিস চলে আয়। আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। তুই না এলে আমরা কেউ আর তোর কাছে কখনো ফোন করবো না। তুই আমাদের মরা মুখ দেখবি...’
‘আহ! কী শুরু করলে, মা! দেখি কী করা যায়...বললেই কী আর এতোদূর থেকে আসা যায়?’
রওশন আরা ফোন রেখে দিয়ে পাশে বসে থাকা লোপার বাবা আজিজ সাহেবের দিকে তাকালেন। আজিজ সাহেব ভাবলেশহীন চোখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। তার সমস্ত অবয়ব জুড়ে এক থমথমে নীরবতা। সেখানে আশা নেই, আলো নেই...কোনো অভিযোগ নেই কারো প্রতি। কিচ্ছু নেই। রওশন আরা উঠে এসে তার হাতটা ধরলেন। আশ্চর্য! হাতটা কেমন শীতল! যেন মৃত্যু এসে ভর করেছে সেখানে। দুজনে চুপচাপ বসে রইলেন কিছুক্ষণ।
‘ইয়ে... আমি তাহলে উঠি আজ। একটু জরুরি কাজ ছিল। লোপা আসলে আমাকে একটা খবর দিতে পারেন, যদি কোনো প্রয়োজন মনে করেন। যদি আমার কোনোরকম সহযোগিতা বা কোনো কিছুর দরকার হয়...’
তারা দুজনে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকালেন বক্তার দিকে। সে দৃষ্টির সামনে কেমন যেন অসহায় বোধ করতে লাগলো আবিদ।
আবিদ...আজ থেকে পাঁচ বছর আগে যার বিয়ে হয়েছিল এদের একমাত্র সন্তান লোপার সাথে।
দুই
ডেস্কে ছড়ানো ছিটানো কাগজপত্র। কিন্তু এসবের ভেতর থেকে দরকারী কাগজটাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ ধরে কাগজটা খোঁজার একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে আবিদ হাল ছেড়ে দিলো। বিরক্ত হয়ে বসে পড়লো পাশের রিভলভিং চেয়ারটায়।
ভালো লাগছে না। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। কী আজব উটকো একটা ঝামেলায় সে পড়েছে কাউকে বোঝাতে পারছে না। জীবনের পুরোনো কিছু হিসেবনিকেশ চুকিয়ে দিয়ে সে এতোদিনে গুছিয়ে নিয়েছিলো ভালোভাবেই। সবকিছুই চলছিলো ঠিকঠাক, স্বাভাবিক ছন্দে। কিন্তু গত পরশুদিন লোপার বাবা-মা’র সাথে বসুন্ধরা সিটিতে দেখা হবার পর থেকেই সব কেমন গোলমেলে হয়ে গেলো! ওর পাশে দাঁড়িয়ে স্ত্রী ছন্দা হাঁ করে শুনছিলো সবকিছু। ওদের সবার মাথায় যেন একটা বজ্রপাত হয়েছিলো সেদিন!
স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার জন্য টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল আবিদ। ছন্দা একটু দূরে দাঁড়িয়ে স্পাইসি কর্ন কিনছিলো। হঠাৎ পাশ থেকে পরিচিত কণ্ঠস্বরে চমকে ওঠে আবিদ।
‘আরে, আবিদ! তুমি এখানে? কবে এসেছো তোমরা? আরে কী আশ্চর্য! লোপা তো কিছুই জানায়নি? বাসায় আসোনি কেন? একটা ফোনও তো করোনি! কী কাণ্ড!’
আজিজ সাহেব বিরতিহীন ভাবে তার বিস্ময় প্রকাশ করে চলেন। তার চেঁচামেঁচিতে আশেপাশের লোকজন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে থাকে। ছুটে আসেন রওশন আরা। তিনিও বিস্ময়ে অভিভূত। খানিকটা অভিমানাক্রান্ত।
‘তোমরা দেশে এসেছো, অথচ আমরা জানিই না!! লোপা কোথায়? কতদিন দেখিনা মেয়েটাকে!!’
আবিদ সরে আসে টিকিটের লাইন থেকে। আজিজ সাহেব আর রওশন আরাকে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। অসংখ্য লোকের ভীড়ে কিছুটা আড়াল খোঁজার চেষ্টা করে। তারপরে কিছুটা সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনারা কী বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! লোপা কেন আসবে আমার সাথে? আপনারা কিছু জানেন না?’
ততোক্ষণে ছুটে এসেছে ছন্দা। পুরো ঘটনাতে সেও হতচকিত। আবিদ ছন্দাকে দেখিয়ে বলে,
‘ও হচ্ছে ছন্দা! আমার স্ত্রী।‘
চমকে ওঠেন আজিজ সাহেব আর রওশন আরা।
‘তোমার স্ত্রী? কী বলছো তুমি! এই মেয়েটি তোমার স্ত্রী হলে আমাদের মেয়ে কোথায়? সে তোমার স্ত্রী নয়?’
আবিদ খুব ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। এখানে যে নাটক চিত্রায়িত হচ্ছে সেটা আশেপাশের সবাইকে বুঝতে দেওয়ার কোনোই মানে হয় না। সে অল্পতে হুঁশ হারানোর মানুষ না। সবকিছুকে সে কেবল আবেগ দিয়ে নয়, মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করার চেষ্টা করে।
‘বর্তমানে এই মেয়েটিই আমার স্ত্রী। জি, আপনাদের মেয়ে লোপা একসময় আমার স্ত্রী ছিল। কিন্তু সেটা দু’বছর আগের কথা। আজ থেকে প্রায় দু’বছর আগে আমাদের অফিসিয়ালি ডিভোর্স হয়ে গেছে। কেন লোপা আপনাদের কিছু জানায়নি?’
আজিজ সাহেব ধপ করে মেঝেতে বসে পড়েন। রওশন আরা দৌঁড়ে গিয়ে তাকে ধরেন। ছন্দা কী করবে বুঝতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মার্কেটে ঘুরতে আসা লোকজন ততোক্ষণে কিছু একটা গোলমাল আঁচ করে ফেলেছে। কেউ কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পানির বোতল নিয়ে ছুটে আসে। দু’একজন কী হয়েছে তা না জেনে না বুঝেই আবিদকে মৃদু ভৎসনাও করে,
‘আরে ভাই! কেমন লোক আপনি! দেখছেন না বয়ষ্ক মানুষ! কোনো খারাপ খবর কী হুট করে এভাবে দিতে হয়!’
আবিদের কপালের দু’পাশ দপদপ করতে থাকে রাগ আর লজ্জায়। কী অপ্রস্তুত অবস্থা! মানসম্মান কিছুই আর থাকলো না।
পরদিন আবিদ নিজেই গিয়ে দেখা করে লোপার বাবা-মা’র সাথে। ঝামেলা এড়িয়ে চলা আবিদকে কেন যেন সবসময়ই উটকো ঝামেলার ভেতর দিয়েই যেতে হয়।
পড়াশুনায় প্রচণ্ড মেধাবী আবিদের প্ল্যান ছিল আমেরিকাতেই সেটল করবে। রেজাল্ট বেশ ভালো ছিল। চাইলেই ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করতে পারতো। কিন্তু ওকে তখন টানছে আমেরিকা। ভার্সিটিতে পড়তে গিয়েই লোপার সাথে ভাববিনিময় হয়ে যায়। লোপা ওর এক ইয়ার জুনিয়র ছিল। পাশ করে বিয়ে করেই দু’জন আমেরিকা পাড়ি জমায়। আবিদের মাথায় তখন অনেক চিন্তা। নতুন দেশে সেটল করা। ভালো গবেষণা, ভালো চাকরি।
কিন্তু সব কিছু ভণ্ডূল করে দেয় লোপা! এমন সস্তা সেন্টিমেন্টের মেয়ে কখনো দেখেনি আবিদ। বিয়ের আগে একবছরের এ্যাফেয়ার ছিল ওদের। তখন সেভাবে বুঝে উঠতে পারেনি আবিদ। আর তাছাড়া তখন ওরা ঝাড়া হাত-পা। বাপের হোটেলে বসে খায়। চিন্তা ভাবনা নেই, কিচ্ছু নেই। সারাদিন শুয়ে বসে আকাশ কুসুম ভাবনা ভাবলেও কোনো কিছু যাবে আসবে না কারো। কিন্তু এখন...এখনো কী এসব রোমান্টিক ভাবনায় দিন কাটালে চলে!
কোন ভাবের জগতে যে বাস করতো লোপা কে জানে! আবিদের পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা করা তো দূর, সে সবসময়ই আজব চিন্তা ভাবনা নিয়ে ঘুরতো। বিয়ের আগে তারা হাঁটতে হাঁটতে গল্প করতো, চিনাবাদাম খেতো কিংবা কবিতার আসরে যেতো কবিতা শুনতে। এসব কী আর বিয়ের পরে একই ভাবে চলতে পারে? ভালো রেজাল্ট করার জন্য আবিদ দিনরাত এক করে গবেষণায় মন লাগানোর চেষ্টা করতো। লোপার তাতে ছিল ঘোর আপত্তি। ওকে কেন আবিদ এখন আর সময় দিচ্ছে না, সেটা নিয়ে সারাক্ষণ ভ্যাজর ভ্যাজর করতো। শেষের দিকে এসে তো লোপার মাথাটাও কেমন নষ্ট হয়ে যাবার মতো হলো। একা একা কার সাথে যেন তুমুল গল্প করতো। আবিদ এসে পাশে দাঁড়ালেও দেখতে পেতো না। রান্নাবান্নাও করতো না ঠিকঠাক। রাতে খাবার টেবিলে এসে আবিদ দেখতো টেবিল শূন্য। ‘খাবার কই?’ জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতো,
‘ওমা! এই মাত্র না খেয়ে গেলে! ‘
আবিদের যে ধৈর্য কম ছিল তা নয়। কিন্তু সে এই ঝামেলা নিজের ঘাড়ে আর রাখতে চাইছিলো না। আর তাছাড়া আবিদ বিবেচক, বিচক্ষণ এবং বাস্তববাদী মানুষ। সে সারাজীবন কোনো আলগা সেন্টিমেন্টকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকতে পারবে না। জীবনটা এগিয়ে চলার জন্য, পিছিয়ে থাকার জন্য নয়। আর তাছাড়া লোপার মানসিক গঠন ভীষণ অপরিণত। এটা আবিদ আগে বুঝতে পারেনি। পারলে শুধু শুধু সে এই ঝামেলা কাঁধে নিতো না।
ওরা ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয়। চিন্তাভাবনা অবশ্য যা করার আবিদই করে। লোপাকে দেখে মনে হতো না, সে বিষয়টাতে আদৌ উদ্বিগ্ন। বেশ হাসিখুশি মেজাজেই থাকতো সবসময়, আর দিনরাত কার সাথে যেন গল্প করতো। আবিদের একসময় সন্দেহও হতে থাকে। কে জানে, হয়তো নতুন কোনো রোমান্সের সন্ধান পেয়েছে ! তার ভাবনাতেই হয়তো সারাদিন বিভোর থাকে, আর একা থাকলেও তার সাথেই কথা বলে। এটা একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে আবিদের জন্য। ওর আর কোনো অপরাধবোধ কাজ করবে না। লোপা নিজেই যেহেতু অন্য একজনকে খুঁজে পেয়েছে!
আবিদের নিজের বলতে কেবল এক বোন। দেশে থাকে। তাকে সে আর শুধু শুধু বিষয়টা জানায় না। একসময় তো জেনেই যাবে! লোপার বাবা-মার সাথে কথা বলতে চাইলে লোপা হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয়। বলে, সে নিজেই জানিয়ে দেবে। ঠিক আছে, আবিদের তাতেও কোনো সমস্যা নেই!
আবিদের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হয় তা হচ্ছে, সে পিএইচডি টা শেষ করতে পারে না। পিএইচডি অর্ধেক পথে রেখেই আমেরিকা থেকে চলে আসতে হয় তাকে। লোপার সাথে ডিভোর্স হয়ে যাবার পর কেন যেন আশেপাশের সবকিছুর উপরই একটা বিতৃষ্ণা চলে আসে আবিদের। লোপা আমেরিকাতেই থেকে যায়। আবিদ আঁচ করতে পারে কারণটা। থাকুক, ওর ব্যাপার। আবিদের সেটা জানার আর কোনো প্রয়োজনও অবশিষ্ট থাকে না। লোপার সাথে ওর মানসিক বন্ধন একেবারেই শূণ্যের কোঠায় তখন। সেজন্য এই ভাবনাটুকু ভাবারও সে কোনো প্রয়োজন দেখে না যে, লোপার কীভাবে চলবে? একা একা দেশের বাইরে সে কী করবে? আবিদ ধরেই নেয়, লোপা নিশ্চয়ই কোনো বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছে। সেজন্যই তার মধ্যে কোনো চিন্তা ভাবনা কাজ করছে না। এই ডিভোর্সে তার কিছুই যায় আসে না। আবিদ তার সাথে কথা বললে সে অন্যমনষ্ক হয়ে বসে থাকে। কথাবার্তা কিছু কানে ঢুকছে বলেও মনে হয় না।
দেশে আসার একবছর পরে বিয়ে হয়ে যায় ছন্দার সাথে, এবারে বোনের পছন্দের উপরেই আস্থা রাখে সে। আর ঝামেলায় গিয়ে কাজ নেই। একবার ভেবেছিল লোপার বাবা-মা’র সাথে গিয়ে দেখা করে আসবে। ওর নিজের কথাটুকু তো অন্ততঃ বলে আসা যেতে পারে। পরে বাদ দেয় ভাবনাটা। থাক গে, লোপা যা বোঝানোর বোঝাক! ওর কিছুই আসে যায় না তাতে।
ছন্দা তার বুদ্ধিমত্তায় আবিদের জীবনে কিছুটা ছন্দ ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল ঠিকই। অতীতকে ভুলে যেতে সময় নেয় না আবিদ। সে পরিণত চিন্তাধারার, বাস্তব জগতে বাস করা একজন কঠিন মনের মানুষ। অতীত আঁকড়ে পড়ে থাকে বোকারা। সে তাদের দলভূক্ত নয় মোটেও।
কিন্তু আজ এতোদিন পরে এসে সব হিসেব নিকেশ গোলমাল করে দিয়ে এ কী বিপত্তি!
তিন
লোপার বাবা-মা, আজিজ সাহেব আর রওশন আরা, মেয়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারেন না। তাদের মেয়েকে তারা সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে আগে ফিরিয়ে আনতে চান নিজেদের কাছে। এর পরের ভাবনাটা পরেই ভাবতে হবে। তাদের মেয়ে আজ দু’বছর যাবত একা একা দূরদেশে আছে। সে কী করছে, কীভাবে দিন যাচ্ছে তার...কিছুই তারা জানেন না। এতোদিন তারা যা জেনে এসেছেন, অর্থাৎ লোপা এতোদিন তাদের যা জানিয়ে এসেছে তার সবই দেখা যাচ্ছে মিথ্যে কথা। ...তাহলে সত্যি টা কী?
প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠে তারা যোগাযোগ করেন আমেরিকাতে থাকা তাদের এক আত্মীয়ের সাথে। তারা জানান যে, লোপার সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। লোপা কারো সাথেই কোনো যোগাযোগ রাখে না।
অনেক অনুনয় বিনয় আর লোপার বাবার শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে তারা অবশেষে সক্ষম হন লোপাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে।
এয়ারপোর্টে নিজের মেয়েকে দেখে চিনতে পারেন না তারা। কী মেয়ে কেমন হয়ে গেছে তাদের! চোখ কোটরে ঢুকে গেছে। তাতে মিশে আছে উদ্ভ্রান্তের দৃষ্টি। শুকিয়ে একেবারে অর্ধেক হয়ে গেছে। লোপা তার বাবাকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে একের পরে এক প্রশ্নবাণ ছুঁড়তে থাকে।
‘তোমরা আমার সাথে এমন মিথ্যে কথা বলতে পারলে? জানো, এই সময় হঠাৎ আসতে গিয়ে কতো কিছু অগোছালো করে রেখে আসতে হয়েছে? আবিদ ফিরে আসলে একা একা কীভাবে থাকবে? কী খাবে? কোনো চিন্তা ভাবনা করলে না?’
রওশন আরা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না। মেয়ের এমন বেহাল অবস্থায় হু হু করে কাঁদতে থাকেন তিনি। লোপার বাবা মেয়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। আর লোপা যেন কিছুই বুঝতে পারছে না। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে সে তাকিয়ে থাকে বাবা-মা’র দিকে। আজ কতোগুলো বছর পরে তার দেখা হচ্ছে বাবা-মা’র সাথে। অথচ ওর সমস্ত চিন্তা চেতনা জুড়ে বসে আছে আবিদ। একমুহুর্তের জন্যও সে আবিদের কথা ভুলে থাকতে পারছে না। তার এক কথা, এমন অকস্মাৎ চলে আসতে হলো তাকে! আবিদ এখন খালি বাসায় এসে কীভাবে থাকবে একা একা?
লোপার বাবা-মা যথাসম্ভব স্বাভাবিক আচরণ করে চলেন লোপার সাথে। কিছুই বুঝতে দেন না ওকে। ইতিমধ্যেই একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে তাদের কথা হয়েছে। উনার পরামর্শ মতোই কাজ করতে থাকেন তারা।
লোপা ঘুমিয়ে পড়লে ওর লাগেজ খুলে দেখেন লোপার মা। তেমন কিছুই নেই ভেতরে। কয়েকটা জামা কাপড়, কিছু দরকারী কাগজ পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট... প্রতিদিনের ব্যবহার্য কিছু জিনিস। উল্টেপাল্টে রেখে দিতে যাবার আগে সেখানে একটা ডায়েরী দেখতে পান তিনি। সাবধানে উঠিয়ে নেন সেটা।
লোপা একেবারে স্বাভাবিক। নিজে থেকেই সে তার বাসার অনেক গল্প করেছে বাবা-মা’র কাছে। সে তার ভিসা ক্যাটেগরি পাল্টেছে। এটা অবশ্য তারা আবিদের কাছ থেকেই শুনেছেন। একটা স্টোরে কাজ করছে। পাশাপাশি কী নাকি পড়ছেও। সত্যি বলছে না কি মিথ্যে কে বলবে! এখন তারা কোনটা বিশ্বাস করবেন আর কোনটা করবেন না নিজেরাও বুঝতে পারছেন না। এই এক ছোট চাকরি করে সে কীভাবে আমেরিকায় থাকছে এটাও তারা বুঝতে পারছেন না।
আবিদের ব্যাপারে তার উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। আবিদ কিছুতেই পড়াশুনা ছাড়া থাকতে দেয়নি তাকে। আর কিছু টাকা জমাতে পারলেই সে স্টোরের কাজটা ছেড়ে দেবে। আবিদের পিএইচডি টাও ততোদিনে শেষ হয়ে যাবে।
একেবারে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো গল্প করে যায় লোপা। আবিদের অংশটুকু বাদ দিলে সে গল্পে কোনোই অস্বাভাবিকতা নেই।
লোপার অগোচরে ওর ডায়েরী নিয়ে বসেন রওশন আরা। বেশ মোটা ডায়েরী। অনেকগুলো পাতা লেখা হয়ে গেছে। একবার ভাবেন, ডায়েরীটা সোজা নিয়ে যাবেন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে। কিন্তু পরক্ষণে ভাবনাটা সরিয়ে রেখে নিজেই পড়তে বসে যান।
কী এমন হলো তার মেয়ের জীবনে? কেন এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে?
চার
২৫শে সেপ্টেম্বর
আবিদ সারাদিন গবেষণা নিয়েই পড়ে থাকে। আজ দুপুরে রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেছি। রাতে আবিদ ফিরতেই ওকে দেখালাম। আবিদ এমনভাবে তাকালো, যেন আমার দোষেই হাত পুড়েছে। আর সেটা ওকে দেখিয়ে আমি আরেকটি নতুন অপরাধ ঘটালাম।
৫ই অক্টোবর
প্রায় প্রতিদিনই আবিদের দেরি হয় ফিরতে। মাঝে মাঝে একা থাকতে থাকতে আমার শরীর ঝিমঝিম করে। দরজায় কোনো টোকা পড়লেই ভয় লাগে। মনে হয় কেউ বুঝি ঘরে ঢুকে যাবে। আচ্ছা, আমি কি ভয়েই পাগল হয়ে যাবো?
২৩শে অক্টোবর
অনেক কাঁদলাম আজ বসে বসে। এমন কেন লাগে আমার? একটা কোনো মানুষ নেই যার সাথে দু’দণ্ড কথা বলবো। আমার কতো কথা বলতে ইচ্ছে করে আবিদের সাথে। বিয়ের আগে আবিদ কতো অন্যরকম ছিল! কতো গল্প করতাম আমরা! সারাদিনে আমাদের গল্পই শেষ হতো না । বাসায় ফেরার পরেও আবিদ বার বার ফোন দিতো। বলতো, ওর নাকি সারাক্ষণই আমার কথা মনে পড়ে। আমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করে। আর এখন...এখন কি ওর একটুও আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না? মানুষ এতো পালটে যায় কীভাবে?
৩রা ডিসেম্বর
আজ বাংলাদেশি কমিউনিটিতে একটা প্রোগ্রামে যাবো বলে সেজেছিলাম। আজ কতোদিন পরে সাজলাম আমি! অথচ আবিদ একটিবারের জন্যও চোখ তুলে তাকালো না আমার দিকে। প্রোগ্রামে যাবার ব্যাপারেও কোনো আগ্রহ দেখালো না। শেষমেষ কী আর করবো! বাইরের কাপড় চেঞ্জ করে শুয়ে পড়লাম। খেতেও ইচ্ছে করলো না। অথচ আবিদ কেমন নির্বিকার মুখে খেয়ে উঠলো!
১৭ই জানুয়ারী
আচ্ছা আবিদ কি অন্য কাউকে ভালোবাসে? মাঝে মাঝে আমার এমন কেন মনে হয়? আমার সাথে কি ওর কোনো মানসিক সম্পর্কই নেই? সম্পর্ক টা কী কেবল দু’কামরার ঘরে টিকিয়ে রাখা দুটি জীবনের অল্প কিছু শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ আর ছেড়ে দেওয়া? নাকি রাতের শয্যায় মিটিয়ে ফেলা কেবলমাত্র কিছু জৈবিক প্রয়োজন?
এর বাইরে কী আর কোনো সম্পর্কের অস্তিত্ত নেই?
রওশন আরা একটু বাদ দিয়ে দিয়ে পড়তে থাকেন। বছরময় লিখে যাওয়া প্রায় প্রতিটি পাতাজুড়েই একই হাহাকার, নিঃসঙ্গতার আহাজারি। পড়তে পড়তে বুক ব্যথা করে তার।
বেশ কিছু পাতা এভাবে পড়ে যাবার পরে একটু অন্যরকম মনে হতে থাকে লেখাগুলোকে। এতোদিনের হাহাকার, কষ্টগুলো যেন নিমেষে উধাও। তার স্থলে অন্য রকম কিছু অনুভূতির প্রকাশ।
আবিদ এখন অনেক সময় দেয় আমাকে। কী আশ্চর্য! আমাকে না দেখে নাকি এখন সে থাকতেই পারে না! প্রতিদিন দুপুরের দিকে বাসায় এসে হাজির। কতো যে কথা তার! সেই আগের দিনের মতো।
দারুণ কাটছে দিনগুলো। ঠিক যেন আমার স্বপ্নের মতো। মাঝে মাঝে মনে হয়, স্বপ্ন টা ভেঙে যাবে না তো!
আবিদকে কারো ফোন ধরাতে রাজি করাতে পারি না। বাবা-মা কতোদিন ধরে ওর সাথে কথা বলতে চাইছেন। কিন্তু সে শুধু আমাকে নিয়েই থাকতে চায়। কারো সাথে কথা বলার আর কোনোই আগ্রহ নাকি নেই তার। আচ্ছা পাগলকে নিয়ে পড়েছি আমি!
পরের সবগুলো পাতা জুড়েই এই উচ্ছাস আর আবেগের চুড়ান্ত প্রকাশ। রওশন আরা ডায়েরী বন্ধ করে মাথা চেপে ধরে বসে থাকেন কিছুক্ষণ। লোপাকে কাল নিয়ে যেতে হবে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে। কীভাবে যে রাজি করাবেন!
পাঁচ
সাইকিয়াট্রিস্ট রফিক আজাদ আজ প্রায় দু’মাস ধরে দেখছেন লোপাকে। এ’ধরণের কেস খুব বেশি আসে না তার কাছে। তাদের সাইকোলজিতে এই সমস্যাটার অবস্থান যদিও বেশ মজবুত। সিজোফ্রেনিয়া। এই রোগে আক্রান্ত একজন ব্যাক্তি তার কল্পনাতে একজন কাল্পনিক মানুষের অস্তিত্ত অনুভব করে। সে তার সাথে মেশে, গল্প করে। এই রোগ মূলত চেতনাকে আক্রান্ত করে বলে ধারণা করা হয়। এটি একই সাথে আচরণ এবং আবেগগত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করে। সম্মানহীন, আত্মীয়হীন পরিমণ্ডলে জীবনযাপনরত একজন সিজোফ্রেনিয়ার রোগী ক্রমাগত এগিয়ে যেতে থাকে ভয়াবহ অসুস্থতার দিকে।
লোপার নিঃসঙ্গ, ব্যথিত, ভালোবাসা পেতে ইচ্ছুক মন প্রচণ্ড ভাবে কল্পনা করে নেয় তার সঙ্গীর আকাঙ্ক্ষিত একটি রূপ, যে রূপটাকে সে সবসময় নিজের মাঝে ধারণ করে চলে। ধীরে ধীরে লোপা হয়ে ওঠে একজন ভয়াবহ সিজোফ্রেনিয়াক। সে তার কল্পনার চরিত্রের সাথে এতোটাই মগ্ন হয়ে থাকে যে, বাস্তবের রক্ত মাংসের মানুষটির একসময় কোনো অস্তিত্তই থাকে না তার জীবনে।
লোপাকে সারিয়ে তোলা কঠিন, তবে অসম্ভব নয় মোটেও। কিন্তু এজন্য লোপার প্রাক্তন স্বামী আবিদের সাহায্য তার প্রয়োজন। আজ আবিদ এসেছে তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে। ডক্টর রফিক তাকে স্ত্রী সহই আসতে বলেছেন। লোপা আর তার মা এসে ঢোকেন খানিক পরেই। লোপা চোখ মেলে আবিদকে দেখে। কিন্তু কোনোই প্রতিক্রিয়া হয় না তার।
ডক্টর রফিক লোপাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
‘দেখুন তো লোপা, আপনার সামনের ভদ্রলোকটিকে কি চিনতে পারছেন?’
‘জি না। আমি কি উনাকে চিনি?’
‘আপনার কি মনে হয় না, আপনি উনাকে চেনেন? দেখুন তো ভালো করে! আপনার খুব প্রিয় একজন মানুষের সাথে মিল খুঁজে পান কিনা!’
‘কার কথা বলছেন ডাক্তার সাহেব?’ লোপা হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে।
‘আমি আবিদ সাহেবের কথা বলছি। দেখুন তো, উনি কি আবিদ সাহেব?’
‘আরে না! কী যে বলেন! উনি আবিদ হতে যাবেন কেন? আবিদ তো এখন আমেরিকাতে।‘
‘জী না, লোপা। আপনি দেখুন ভালো করে। উনিই আবিদ। উনার পাশে যাকে দেখতে পাচ্ছেন উনি আবিদের বর্তমান স্ত্রী। আপনার মনে নেই, আবিদের সাথে আপনার ডিভোর্স হয়ে গেছে?’
লোপা হঠাৎ হো হো করে হেসে ওঠে।
‘ওহ! আপনি আমাকে কী যে এক কথা বলে চলেছেন সেই প্রথম দিন থেকে! আবিদের অস্তিত্ত নেই, সবই আমার কল্পনা। দাঁড়ান, আমি একদিন আবিদের সাথে আপনাকে আলাপ করিয়ে দেবো। কিন্তু কেন যেন ও কারো সাথে কথা বলতে চায় না। ওর নাকি শুধু আমার সাথে গল্প করতেই ভালো লাগে। দেখুন তো কী ছেলেমানুষী! আবিদ আমাকে ছাড়া কিচ্ছু ভাবতে পারে না। ও কেন অন্য একজনকে বিয়ে করতে যাবে? কতোদিন আমি ওর কাছ থেকে দূরে আছি। আমাকে ছাড়া ও কী যে করছে একা একা! ও তো দুইদিনও একা থাকতে পারে না। এতোগুলো দিন একা একা কীভাবে থাকছে কে জানে!’
শেষের দিকে ভারী হয়ে ওঠে লোপার কণ্ঠস্বর।
লোপার মা আঁচলে মুখ গুজে কাঁদতে থাকেন। ছন্দাও বিস্মিত, ব্যথিত মুখ করে বসে থাকে।
আর আবিদ গভীর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে লোপার দিকে। আমেরিকার সেই তিনবছরের জীবনে ও একবারের জন্যও লোপার নিঃসঙ্গতাকে অনুভব করেনি। লোপার একঘেয়ে ক্লান্তিহীন অনুযোগে আবিদ একেবারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলো। শেষের দিকে লোপার উৎফুল্লতাকেও সে বিবাহ বহির্ভূত পাপ মনে করে ভুল বুঝেছে।
যান্ত্রিকতার যাঁতাকলে পিষ্ট মনটা একেবারেই শুকিয়ে গেছে আবিদের। এতোগুলো দিনে ও ভুলেই গেছে কখনো কোনো এক বসন্তের দিনে ভালোবাসা এসেছিল ওর জীবনেও। লোপার সাথে পাশাপাশি হেঁটে চলা অনেকটা পথে ওর সেই বসন্তের দিনগুলো একাকার হয়ে মিশে গিয়েছিল। ওর জীবনে সেগুলো আর ফিরে আসেনি কখনো।
জীবনে প্রতিষ্ঠা এসেছে, বুদ্ধিমতী বাস্তববুদ্ধিসম্পন্না স্ত্রী এসেছে। কিন্তু সেই অর্থহীন, ছেলেমানুষী আবেগে ভরা ভালোবাসার দিনগুলো আর ফিরে আসেনি।
আবিদ খুব শক্ত মনের মানুষ। সে জানে, এসব ঠুনকো আবেগের কোনো অস্তিত্ত নেই জীবনে। এসব বোকা বোকা আবেগগুলো জীবনকে শুধুমাত্র ভারাক্রান্তই করতে পারে। সে তাই জীবনে এগিয়েও গেছে পুরনো সবকিছুকে পেছনে ফেলে।
কিন্তু লোপা? ও তো আবিদের পাশাপাশিই পথ চলছিলো। ও কেন এগিয়ে যেতে পারলো না? এই ঠুনকো আবেগটাকে লোপা কীসের মমতায় আঁকড়ে ধরে থাকলো?
প্রতিটি মানুষেরই তো অধিকার থাকে তার জীবনের বৃত্তটাকে পূর্ণ করার! লোপা কেন অদৃশ্য কোনো এক পরিধিকে আঁকড়ে ধরে ওর জীবনের বৃত্তটাকে পূর্ণ মনে করছে? নতুন পরিধি কেন সে গড়ে নিতে পারছে না?
আজ এতোদিন পরে কোনো এক সুরক্ষিত ক্ষত থেকে রক্তক্ষরন হতে থাকে আবিদের। সেই ক্ষরণটাকে গভীরভাবে অনুভব করতে চায় আবিদ।
দেরিতে হলেও এটার খুব প্রয়োজন ছিল ওর জীবনে।।