প্রতিবন্ধী

স্বপ্ন (জানুয়ারী ২০১৮)

মোস্তফা সোহেল
  • ১০
ছোটবেলায় বাংলা ছিনেমা দেখার সময় যখন বিয়ের কোন দৃশ্য দেখতাম তখন ভাবতাম আমার বিয়ের সময়ও একদিন এমনই করে খুব ধুম ধাম হবে সানাই বাজবে।আর আমি লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে ঘোমটা দিয়ে চুপ করে বসে থাকব।মেয়ে হয়ে যতটা লজ্জা থাকার কথা অতটা লজ্জা আমার নেই।মা বরাবরই আমাকে নির্লজ্জ বলেই গালি দিতেন।আর বাবা মায়ের উপরে কোন কথায় বলতে পারতেন না।নিম্ন মধ্যেবিত্ত পরিবারে আমার সপ্ন গুলি ছিল সব খাপ ছাড়া।কত কিছু ভাবতাম,কত কিছু করতে ইচ্ছে হত।তবে কখনই সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারিনি।একবার ভাবলাম বাড়ি ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাব,এক কাপড়ে বেরিয়েও পড়েছিলাম কিন্তু কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে এসেছিলাম।
ক্লাস নাইনে পড়ি যখন তখন বান্ধবীরা সব প্রেম করা শুরু করে দিয়েছে।আমিও ঠিক করলাম প্রেম করব।পড়ার টেবিলে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম পত্র লিখতাম।কিন্তু দেব কাকে।আমি বেশ সুন্দর ছিলাম পাচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা উজ্জল শ্যাম বর্ন।বেশ কিছু ছেলে পেছনে লেগেছিল পাত্তা দেইনি।একটা ছেলেকে এক সময় মনে খুব ধরল।সব সময় তার মুখটা চোঁখে ভাসত।বান্ধবীদের সাথে বললাম শুনে সবাই মুখ ভাঙাল।বলল,দেশে ছেলে আর খুঁজে পেলি না।আসলেই ভালবাসার জন্য ওই ছেলে ছাড়া আর কোন ছেলেকেই খুঁজে পায়নি।বান্ধবীদের বললাম ছেলেটার দোষ কিরে ওর একটা হাত বিকলঙ্গ এইটাই ওর বড় দোষ?ও প্রতিবন্ধী বলে কি ওর কখনও বিয়ে হবে না।কদিন খুব মন খারাপ করে বসে থাকলাম।তারপর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ওই ছেলেটাকেই চিঠি দেব।রাত জেগে লম্বা একটা চিঠি লিখে পরের দিন ছেলেটাকে নিজেই সরাসরি দিয়ে ফেললাম।পরে ছেলেটি উত্তর দিল আমাকে নাকি ভালবাসা ওর পক্ষে সম্ভব না।আমি এত সুন্দর একটা মেয়ে অথচ একটা প্রতিবন্ধী ছেলে আমার ভালবাসাকে প্রত্যাক্ষান করল।মনে মনে আত্বহত্যার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রতিবন্ধী ছেলেটাকে জানালাম।এ কথা শুনে ও রাজি হয়ে গেল।আমি যখন ইন্টারে পড়ি তখন প্রতিবন্ধী ছেলেটি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে।
একদিন হঠাৎ শুনলাম আমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে।মাথাটা ঘুরে গেল।পাত্র পক্ষ আমাকে দেখে পছন্দ করে আংটি পরিয়ে গেছে।ছেলে সরকারি চাকুরি করে।প্রতিবন্ধী ছেলেটাকে সব কিছু বললাম ।শুনে ও আমাকে পরিবারের কথা মেনে নিতে বলল।ওর উপর খুব রাগ হল এই প্রথম ওকে সত্যি সত্যি প্রতিবন্ধী মনে হল।মনে মনে একটা গালিও দিয়ে ফেললাম।শালা প্রতিবন্ধী।
তবুও যতই হোক জীবনের প্রথম ভালবাসা সহজেই কি ভোলা যায়।এক রাতে সাহস করে মাকে সব খুলে বললাম।মা আমাকে সোজা বলে দিল,ওই প্রতিবন্ধী ছেলেটাকে বিয়ে না করে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড় আমার কোন আপত্তি নেই।রাতে অনেক কাঁদলাম।প্রতিবন্ধীটার উপর রাগ করলাম অনেক।পরে ভেবে দেখলাম এখন প্রতিবন্ধীটার কাছে গেলে ও আমাকে রাখবে কোথায়।ওর ও তো কোন পথ নেই।ও নিজেই অনেক অসহায়।আবেগ দিয়ে কি সব কিছু হয়।
আমার বিয়ের দিন বাংলা ছিনেমার মত কোন ধুম ধাম হল না সানাইও বাজল না।খুব সাদা মাটা ভাবেই আমার বিয়ে হয়ে গেল বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলে রাহাতের সাথে।রাহাত ছেলে হিসেবে খারাপ না।তারপরও আমি প্রতিবন্ধীটার কথা ভুলতে পারতাম না।বিয়ের বেশ কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও আমি তখনও মা হতে পারিনি।সবাই কানাঘুষা করে মেয়েটা বন্ধা নাকি।মানুষ জনের কথায় অতিষ্ট হয়ে রাহাতকে বললাম আমাকে ডাক্তার দেখাতে।বিয়ের নয় বছর কেমন করে পার হয়ে গেল আমি বুঝতেই পারিনি।এখনও প্রতিবন্ধীটার কথা ভুলতে পারিনি। আমি গোপনে খোঁজ নেই ও কেমন আছে।শুনেছি পড়াশোনা শেষে প্রতিবন্ধী কোঠায় একটা সরকারী চাকরি পেয়েছে।বিয়ে শাদি করেনি এখনও।ডাক্তারি পরীক্ষায় আমার কোন সমস্যা ধরা পড়ল না।আমি রাহাতকে বললাম,তুমিও ডাক্তারের কাছে যাও দেখ তোমার কোন সমস্যা আছে কিনা।রাহাত আমার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল।ও এমন ভাব দেখাল ওর কোন সমস্যা হতে পারে না।রাগের মাথায় রাহাতকে বললাম আমাকে তালাক দিয়ে আরেকটি বিয়ে করতে।দশ বছরের মাথায় আমার আর রাহাতের সেপারেশন হয়ে গেল।
এর বছর খানেক পরে এক সপিং সেন্টারে প্রতিবন্ধীটার সাথে হঠাৎ দেখা।আমি দেখেও না দেখার ভান করে চলে আসছিলাম।ওই পেছন থেকে ডাকল।তারপন এক রেস্টুরেন্টে বসে কত কথা।জানতে চাইলাম বিয়ে করনি কেন এখনও?বলল প্রতিবন্ধীকে কে বিয়ে করবে।তারপর বলল,সত্যি বলব আমি এখনও পর্যন্ত তোমাকে কিছুতেই ভুলতে পারিনি।আর আমার মনের ভেতরে তোমাকে ছাড়া আর কাউকেই বসাতে পারব না।এর পরে আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রতিবন্ধী বলল,চল আমরা বিয়ে করে ফেলি!প্রতিবন্ধী এখন আমার স্বামী।মা বাবা দুজনই তিনাদের একমাত্র প্রতিবন্ধী জামাইকে মেনেও নিয়েছেন।এ সব কত দিন আগের ঘটনা।আজ আমি আটান্ন বছরের পৌড়া আর আমার প্রতিবন্ধীর বয়স বাষট্টি।
রাত দুপুরে হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেল আর মনে পড়ে গেল পেছনে ফেলে আসা দিন গুলির কথা।সাজ্জাদ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আর আমি ওর ডান হাতটা আমার বুকে চেপে ধরে আছি।যে হাতটা ওর বিকলঙ্গ।এই হাতটার কারনেই সাজ্জাদ প্রতিবন্ধী।এই সমাজের মানুষের কাছে ও বোঝা।আমার ডায়াবেটিক ধরা পড়ার পরেই ফজরের নামাজ পড়ে হাটতে বের হই।আমাকে সঙ্গ দিতে সাজ্জাদও আমার সাথে যায়।আমি সবসময় সাজ্জাদের ডান হাতটা ধরে হাটি।সব সময় সাজ্জাদের ডান হাতটা ধরার কারনে একদিন ও আমাকে বলল,আচ্ছা মাকসুদা তুমি আমার ডান হাতটা ছাড়া কখনই অন্য হাতটা ধরনা কেন?রাতেও এই হাতটা ধরে তুমি ঘুমাও।আমি সাজ্জাদকে বলি,এই একটা হাতের কারনেই তুমি প্রতিবন্ধী।সামাজের মানুষের কাছে তুমি অসহায়।এই একটা হাতের কারনে সবাই তোমার দিকে করুনার দৃষ্টিতে তাকায়।এই একটা হাতের কারনেই তোমার আমার ভালবাসা আমার পরিবার মেনে নেয় নি।তাই আমি তোমার এই হাতটা ধরেই আমি আমার জীবনের পথ চলতে চেয়েছি।এই হাতটাকে আমি কখনই বিকলঙ্গ ভাবি না।তাই তোমার এই হাতটাই সব সময় ধরি।
এসব ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।সাজ্জাদের ডাক শুলে ঘুমটা ভাঙল।কই হাতটা ছাড় আমি পাশ ফিরে ঘুমাব।এক পাশে অনেকক্ষন ঘুমিয়ে ঘাড় ব্যাথা করছে।আমি হাতটা ছাড়তেই সাজ্জাদ পাশ ফিরে শোয়।কিছুক্ষন পরে আমি উঠে আবার সাজ্জাদের অপর পাশে গিয়ে শুয়ে ওর ডান হাতটা ধরে আমার বুকের কাছে চেপে ধরি।কেন জানি না সাজ্জাদের এই হাতটা ধরে আমি যে প্রশান্তি পায় অন্য আর কোন কিছুতেই এতটা প্রশান্তি পায় না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী চমৎকার মানানসই একটি গল্প লিখেছেন, কিন্তু মাঝে মাঝে কেমন যেন খাঁপছাড়া হয়ে গেছে.... যেমন, আপনি প্রতিবন্ধীকে চিঠি দিয়েছেন, সে প্রতিউত্তরে নারাজ করেছেন। এই জন্য আপনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছেন, কিন্তু ধরে-ই কি এমন কিছু হয়? কাউকে ১মের মত স্বপ্ন দেখেছেন, প্রস্তাব দিয়েছেন, সে রাজি হয়নি বলে আত্মহত্যার করতে যাচ্ছেন....? গল্প কখনও এমন হয় না, গল্প সব সময় ধারাবাহিক কিছু খুজে। আর ঐ ধরনের গল্প গুলো ভালো লেখকের বেলায় হয়, কারণ তারা উদাহরনের গাঁ ঘেঁষে গল্পের ইতি টানেন। এ ছাড়াও আরও কিছু এমন হয়েছে..... যাক গে, তবুও বলবো ভালো হয়েছে; চেষ্টা রাখুন, একদিন ভালো কিছু পাবো.....
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮
মাইনুল ইসলাম আলিফ খুব ভাল লেগেছে গল্পটা।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১৮
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি কেন জানি না সাজ্জাদের এই হাতটা ধরে আমি যে প্রশান্তি পায় অন্য আর কোন কিছুতেই এতটা প্রশান্তি পায় না। .....// পড়তে খুব ভালো লাগছিলো ....শেষে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেলো ....প্রশান্তি পায় ....কথাটা....প্রশান্তি পাই হবে....যাইহোক এই ধরণের বানান গুলো দেখে নেবেন....শুভ কামনা রইলো....আসবেন আমার কবিতার পাতায়.....
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৮
সুমন আফ্রী ভালো লেগেছে। কন্সেপ্টটা কিন্তু দারুণ। শুভ কামনা রইলো। আমার পাতায় আপনাকে আমন্ত্রণ।
সালসাবিলা নকি গল্পের কনসেপ্ট খুব ভালো লেগেছে। শুরুর দিকেই সাজ্জাদের নাম আনলে ভালো লাগতো। এই যেমন, 'একজনকে ভালো লাগল। ওর নাম সাজ্জাদ। বান্ধবীদের জানালাম। ওরা শুনে মুখ বাঁকালো। কারন সাজ্জাদ প্রতিবন্ধী।' এভাবেই যদি গল্পটা এগিয়ে যেত ভালো লাগতো। বারবার 'প্রতিবন্ধী' শব্দটা ভালো লাগছিল না। শুধু এই একটা ব্যাপারেই একটু অন্যরকম লেগেছে। গল্পটা কিন্তু ভালো ছিল। অশেষ শুভকামনা
মৌরি হক দোলা অল্প কথায় খুব সুন্দর লেখা... অনেক ভালো লাগল...শুভকামনা ও শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য...
ভালো লাগেনি ৩ জানুয়ারী, ২০১৮
গল্পটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
ভালো লাগেনি ৩ জানুয়ারী, ২০১৮
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে লিখছেন। যথেষ্ট পাকা লেখনী। ভালো লেগেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে দীর্ঘদিন আগে লেখা ‘অভিমানেই রেখেছ বুকের ভেতর’। ধন্যবাদ। আমার গল্পের পাতায় আমন্ত্রন।
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০১৮
কষ্ট করে আমার গল্পটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। নিশ্চয় আপনার পাতায় যাব। ভাল থাকুন ভাই।
ভালো লাগেনি ৩ জানুয়ারী, ২০১৮
Farhana Shormin ভাল লেগেছে। আরো লিখবেন। দেরীতে হলেও নববর্ষের শুভেচ্ছা।

২৪ নভেম্বর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪