ভাস্কর্য

ভালোবাসা / ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারী ২০১৫)

এম আর সকাল
  • ৫২
আমি একজনকে অনেক ভালোবাসি। এ কথাটা সবাই বলে। কিন্তু আমার কথাটা অনেক আলাদা। আমি জানি একথাটাও সবাই বলে। বলুক । আমি আমার কথাটাই বলছি।
কলেজের একটা অনুষ্ঠানে তার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। আমি নাকি অনেক ভাল উপস্থাপনা করতে পারি। আর একারনেই সে যেচে এসে আমার সাথে পরিচিত হয়েছে। সে আমার এক ইয়ারের জুনিয়র হলেও একই ডিপার্টমেন্ট হওয়ায় মাঝে মাঝেই কারনে াকারনে দেখা হয়। ক্রমেই সে আমার বন্ধুদের তালিকায় নাম লেখায়। সুন্দরী ,স্মার্ট, চঞ্চল একটি মেয়েকে ভাল বন্ধু ভাবতে ভালই লাগছিল। মাঝে মাঝে বই, নোট নেয়া দেয়া হতে থাকে। বিভিন্ন সময় আড্ডায় সে বেশ জমাতে পারে। আচ্ছা আমি কি তার নাম বলেছি ? মনে হয় না। তবে শুনুন । তার নাম স্নিগ্ধা। নামের সাথে তার অনেক কিছুরই মিল আছে।
পরিচয় থেকে বন্ধু তারপর ভাল বন্ধু। আর ভাল বন্ধু মানে অনেক কিছু। কলেজ ক্যাম্পাসে দুজন ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে সময় কাটানো। শহর থেকে বহু দূরে রিক্সায় ঘুড়ে বেড়ানো। পার্কে বসে আড্ডা। মার্কেটে কেনাকাটা। মেলায় স্টলে স্টলে ঘোরা। মান অভিমান। রাগারাগি করে কথা না বলে থাকা। ঝগড়া করে যোগাযোগ বন্ধ রাখা। কলেজের পরিচিত সবাই ভাবতো আমরা দুজন প্রেম করি। আমরা দুজন ঝগড়া করলে অন্য বন্ধুরা আমাদের মিলিয়ে দিত। যতযাই হোক সর্বচ্চ দু-দিনের বেশি দুজন রাগ করে থাকতে পারিনি। হয়তো সে প্রথম এসে সরি বলেছে নইলে আমিই বলেছি। এটা নিয়ে পরে আবার দুজনের কথা হতো।

আমি স্নিগ্ধাকে অনেক ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কোন ভাবেই বলতে পারিনা। আমি ওকে আকার ইঙ্গিতে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু মুখে বলতে পারিনি। আমার মনে হয় সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু মুখে কখনও বলেনি। আমার মনে হয়, আমি যদি ওকে মুখে ভালোবাসার কথা বলি তবে হয়তো সে মনে করবে এতোদিনেও আমি বিষয়টা বুঝিনি। আবার মনে হয়, যদি ও আমাকে শুধুই বন্ধু মনে করে। তাহলে আমার ভালোবাসার কথা শুনে বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যাবে। হয়তো আমি ওকে হারাতেও পারি। আমি ওকে কোন ভাবেই হারাতে পারবো না। বন্ধু হয়েও যদি সাড়া জীবন পামে থাকে তোবুও মনকে শান্তনা দিতে পারবো। কিন্তু ও কি কোন দিনই বুঝবে না। আমি ওকে কতটা ভালোবাসি। ওর সব কিছুই আমার ভালোলাপগে। ওর চেহারা, কথাবলা, ব্যবহার, অঙ্গভঙ্গি বুদ্দিমত্বাম, চাঞ্চল্য সব সব কিছু।

অনেক সুযোগ খুঁজেছি ওকে বলার জন্য। কোন ভাবেই বলতে পারি নাই। বন্ধুদের বলেছি বিষয়টা কিন্তু সবাই হাসাহাসি করে আর বলে, তুই একটা বোকা। এই কথাটাই বলতে পারিস না। আর বলতে হবে না। স্নিগ্ধা ভালো করেই জানে তুই ওকে ভালোবাসিস।
একদিন এক কারুশিল্প প্রদর্শনীতে স্নিগ্ধার অনুরোধে গেলাম। সেদিন একটা বিষয় বুঝতে পারলাম। ভাস্কর্যের প্রতি তার একটা বিশেষ টান। সেদিন আমার মাথায় এলো এক বুদ্ধি। আমার এক বন্ধু ইউনির্ভাসিটিতে চারুকলায় পড়ে। স্কুল ফ্রেন্ড। এখনও যোগাযোগ আছে। সঞ্জিব অদ্ভুদ এক ছেলে। আমি জানি আমার আবদার সে ফেলে দিবেনা। সময় করে চলেগেলাম সঞ্জিবের কাছে। স্নিগ্ধার একটা ভাষ্কার্য বানিয়ে দিতে হবে। সঞ্জিবও এক কথাতেই রাজি হয়ে গেল। সঞ্জিব বলল, তুই স্নিগ্ধার কয়েকটা ছবি নিয়ে আসবি আর পারলে কয়েকদিন সময় আমার কাছে থাকবি। আমিও রাজী হলাম।
একমাস পর। স্নিগ্ধার কয়েকটা ছবি নিয়ে সঞ্জিবের কাছে যাওয়ার পথে আমার ব্যগটা ছিনতাই হয়। সঞ্জিবের কাছে গিয়ে যখন সব বললাম সে হাসতে হাসতে বলল। তুই মনে হয় স্নিগ্ধাকে খুব বেশি ভালোবাসিস না। আর যদি ভালোই বাসিস তাহলে সামান্য ছবি রক্ষা করতে পারিল না। ওকে কিভাবে রক্ষা করবি ? সত্যই আমি লজ্জা পেলাম। কিন্তু পরক্ষনে সঞ্জিব যা বলল তা শুনে আমি সাভাবিক হোলাম। সঞ্জিব বলল তুই চেহারার বর্ণনা দিবি আর আমি ওর মূর্তি বানানোর চেষ্টা করবো। কিন্তু কয়েকদিন আমার সাথে থাকবি। আমার সাথে সময় দিবি। আমার যখন ইচ্ছা হবে তখনই কাজ করবো। দিন রাত সকাল বিকাল যখনই হোক, যেখানেই হোক।
শুরু হলো সঞ্জিবের ভাষ্কার্য তৈরির কাজ। আমি ওর সামনে বসে চেহারার বর্ণনা করে যাচ্ছি। প্রথমে মাটি দিয়ে আকার আকৃতি তৈরি করা হলো। অমি ভেবেই নিলাম অবিকল স্নিগ্ধার চেহারা আসবে। এভাবে কয়েকদিন দিন রাত চেষ্টা করে তৈরি হয়েগেল আমার প্রান প্রিয় মানুষটার ভাষ্কার্য। থেমে থেমে আমি ভাষ্কার্যটার দিকে তাকাই আর অবাক হই এটা কিভাবে সম্ভব। এতোটা মিল কিভাবে আনলো সঞ্জিব। অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে সঞ্জিবকে খুশি করার চেষ্টা করতে কারপূর্ণ করলাম না। সঞ্জিবও আমার মনের মত কাজটা করে খুসি। একরকম হাসি মুখেই সঞ্জিব বলে ফেললো। শোন তুই স্নিগ্ধার বর্ণনা যেভাবে করেছিস তা শুনে আমিই তো ওর প্রেমে পড়ে গেছি। পারলে একদিন আমার সাথে পরিচয় করে দিবি। প্রিয়তমার ভাষ্কার্যটা নিয়ে চলে এলাম বাসায়। ভাবছি কখন স্নিগ্ধাকে ওটা দিব। অর দেওয়ার সময়ই আমার মনের কথাটা বলবো। নিশ্চই ওটা পেয়ে আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাক্ষান করবে না। সময় কাটছে না কখন ওকে দেব মুর্তিটা।

একদিন স্নিগ্ধাকে পার্কে ডেকে মুর্তিটা বাক্স থেকে বেড় করলাম। স্নিগ্ধা মুর্তিটা দেখে যেন আকাশ থেকে পরলো। আমি ওর আনন্দ দেখে নিজেই ভুলে গেলাম কি বলতে চেয়েছিলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ জানালো আমাকে।
বলো না কে বানিয়ে দিয়েছে ভাষকর্যটা ?
আমার এক বন্ধু। ও চারুকলাতে পড়ে।
প্লিজ আমাকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবা ? আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। না দেখে এমন সুন্দর করে ভাষ্কার্য বানাতে পারে ? নিশ্চই সে আমার চেহারাটার একটা ছবি মনের মধ্যে একে নিয়েছিল ? প্লিজ আমাকে তার কাছে নিয়ে যাবা ?
অবশ্যই নিয়ে যাবো। ও আমার বন্ধু আর তোমার সাথে পরিচয় করে দেব না এটা হয়।

আমি বলতে পারলাম না আমার মনের কথা। আজও রয়ে গেলো আমার মনে। কিন্তু সে আজ অনেক দুরে অনেক দূরে তার ভাষ্কার্য শিল্পির কাছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন রাজু সুন্দর গল্প ....শুভ কামনা রইলো .
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
পবিত্র বিশ্বাস অনেক ভাল লাগলো... শুভ কামনা সাথে আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল। ভোট রেখে গেলেম..।
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
মোঃ আক্তারুজ্জামান সত্যি কারো কারো আর বলা হয়ে উঠে না। অনেক সুন্দর লিখেছেন। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
সুস্মিতা সরকার মৈত্র ইশ, বেচারা আমি। বলতেই পারল না, আর... গল্পটা পড়তে ভালো লাগল। ভোট থাকল। শুভেচ্ছাও।
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
ধন্যবাদ...
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
রবিউল ই রুবেন ভালো লাগল। ভোট রেখে গেলাম। আমার কবিতা ও গল্প পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
Sparna Rahman ভালো লেগেছে,ভোট ও দিয়ে গেলাম খুশি মনে...
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
ধন্যবাদ..
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

১২ নভেম্বর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪