তখনো ভোরের আলো ফোটেনি। সবে ভোরের কাছে সূর্যের আলোর পৌছে যাবার প্রস্তুতি। তখনো গভীর নিদ্রায় মগ্ন প্রতিটি মানুষ। এমন একটা মূহুর্তে শিশুটির জন্ম। গভীর রাত্রির নিদারুণ প্রসব যন্ত্রণা ভুলে পরম তৃপ্তে নবজাতককে বুকে টেনে নেন জননী। পেঁজো তুলোর মতো নরম দেহটা বুকে জড়িয়ে ধরে বিধাতাকে অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। চোখের কোল বেয়ে ঝরে পড়া ফোটা ফোটা আনন্দাশ্রু ভিজিয়ে দেয় নবজাতকের কোমল শরীর। পাখির পালকের মতোই তুলতুলে নরম শিশুটি। চাঁদের মতোই ফুটফুটে। পৃথিবীর কোন কষ্ট স্পর্শ করেনা মাকে। সকল ব্যথার পরিসমাপ্তি ঘটে সন্তানের আগমনে। নব ভোরের আলো স্বাগতম জানায় এ নতুন অতিথিকে। পিট পিট চোখে তাকায় চারদিক সে। পরিচিত হয় নতুন পরিবেশটার সাথে। চতুর্থ বারের মতো আবারো মা হয়েছেন শিশুটির মা। তারপর ও অনুভূতিটা ঠিক প্রথম মা হবার মতোই। মাতৃত্বের সাধ যে কতো মধুর সেটা শুধু মায়েরাই বলতে পারেন। ভুলে যান দশমাস দশদিন গর্ভে ধারণ করার অসহ্য যন্ত্রণা। সকল কিছু ভুলে বুকের গভীরে জড়িয়ে নেন প্রাণপ্রিয় সন্তানকে। মায়ের চিরচেনা মুখের পানে তাকিয়ে নিষ্পাপ হাসি দেয় নবজাতক। ডায়েরীর পাতায় টুকটাক করে পরম যত্নে লিখে রাখেন তার নবজাতকের প্রথম হাসির তারিখটা। পৃথিবীর সকল দিনের চেয়ে তার নবজাতকের ভূমিষ্ঠ হবার দিনটাকেই সবচেয়ে সুন্দর মনে হয় মায়ের কাছে। নরম গালে চুমু খেয়ে নাম রাখেন তুতুন। মায়ের বুকের উপরই শুয়ে বসেই বেড়ে ওঠা তুতুনের। মায়ের ভালোবাসার সেই তুতুন আজকের এই আমি। মায়ের চোখের মনি। শৈশব ছেড়ে কৈশোরের মাঝামাঝি আমার বয়স। তবু ও আমার মায়ের কাছে আমি এখনো সেই তুলতুলে নিষ্পাপ শিশুটি। ঠিক এমনই নিবিড় মমতায় বড় করেছেন আমার অন্য তিনটি ভাইবোনকে। প্রীতি, মমতা, ভালোবাসা দিয়ে শিখিয়েছেন কীভাবে ভালোবাসতে হয় । ভালোলাগে মায়ের বুকে তুলোর মতো লেপ্টে থাকার গল্পগুলো শুনতে। সেই তুলতুলে সেদিনের শিশুটি এতো বড় হয়ে গেলাম কীভাবে? ভেবে অবাক হই আমি। ঘুমের ঘোরে প্রায়ই স্বপ্ন দেখি ছোট্টবেলার সেই আমাকে কাঁধে নিয়ে চাঁদের বুড়ির গল্প শোনাচ্ছেন আমার মা। মধুর চেয়ে ও মিষ্টি সে স্বপ্ন। এ মিষ্টি স্বপ্নের অনুভূতি কোনো অন্য ভালোলাগার অনুভূতির সাথে তুলনা করা যায়না। এ অন্যরকম স্বপ্ন। অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি। ঘুম ভাঙ্গতেই হাতড়ে খুঁজি মায়ের বুক। জড়িয়ে ধরে মুখ গুঁজি বুকে। যেখানে স্বর্গীয় সুধা লুকিয়ে আছে। আমার মনের অনুভূতি চাপা থাকেনা মায়ের কাছে। বুকে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। নিবিড় মমতায়। প্রায়ই একটা প্রশ্ন মনের ভেতর উঁকি দেয়। প্রতিটি মা-ই কী এমন ভালো মা হয়? এতো মমতাময়ী, এতো সচেতন, এতো দায়িত্ববান? না কী শুধু আমার মা_ ই আলাদা? বোকার মতো প্রশ্ন করি মাকে; আচ্ছা আম্মু, প্রত্যেক মা- ই কী মমতাময়ী হয়? আমার কথায় মা মৃদু হাসেন। তারপর বলেন, পৃথিবীতে প্রত্যেক মা- ই প্রত্যেক সন্তানের কাছে মমতাময়ী। সন্তান যেমনই হোক, সন্তান সন্তানই। আর মা যেমনই হোক, মা শুধুই মা। ময়ের কথাটাতে আমার মন ভরেনা। কেন আম্মু বলেনা যে আমার মা-ই সবচেয়ে ভালো মা। আজো কখনো মনে হয়না যে আমি এখন আর সে ছোট্টটি নেই। মা সেটা কখনো আমাকে বুঝতে দেননি। বড় হবার বাধা- বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা কোনো কিছু আমাকে স্পর্শ করতে দেননি আমার মা। বুকের মাঝে আগলে রেখেই শিখিয়েছেন সকল কিছু। শিখিয়েছেন কোনটা ভালো কোনটা মন্দ। কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায়। অফুরন্ত ভালোবাসার কাননে রেখে ট্রেনিং দিয়েছেন আত্মসম্মানবোধ নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি আমাদের একান্নবর্তী সংসার সামাল দিতেন মা একা হাতে। চার-চারটি ছেলে মেয়ে, পরিবারের আমার অন্যান্য চাচাত ভাইবোন সবাইকে সমান ভালোবাসা মমতা দিয়ে লালন পালন করেছেন। মায়ের কাছে শিখেছি কীভাবে মনঃপ্রাণ দিয়ে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। ভালোবাসা দিতে হয়, ভালোবাসা অর্জন করতে হয়। শিখেছি ধৈর্যের বাধ কতোটা মজবুত। পারিবারিক কাজের হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও বুকের তাপে রেখে বড় করেছেন আমাকে। মায়ের বুকের উষ্ণতাই আমার কাছে কনকনে শীতের আরামদায়ক উত্তাপ। মায়ের ভেজা ঠাণ্ডা মুখের ছোঁয়াই আমার কাছে উত্তপ্ত গরমের শীতল অনুভূতি। মায়ের অতি আদরের এই তুতুনকে সবাই ভালোবাসে। আর সেতো শুধু আমার মায়ের জন্যই। মায়ের অনুপ্রেরণা থেকেই আমি বেঁচে থাকার মানে খোঁজে পাই। মা, মাগো! তুমি কিগো মা! তুমি এতোই ভালো মা? প্রতিটি মানুষকে সৃষ্টিকর্তা একটা অমূল্য সম্পদ উপহার দেন। সেতো শুধু তুমিই মা! সন্তানের সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে মহামূল্যবান মা। ধিক্কার দিই তাদের, যাদের মা থেকেও তার মর্ম উপলব্ধি করতে পারেনা। মায়ের ভালোবাসাকে হৃদয়ে ধারণ করার মতো মন নেই যাদের। একমাত্র মা- ই আমার অহংকার। আমার সুখের পৃথিবী। আমার সুখের স্বর্গ। প্রতিটি মা- ই যে কতো মমতাময়ী, কতোটা শ্রদ্ধাশীল সেটা আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। মায়ের প্রতিটি শাসন, প্রতিটি ধমক আমার পরম আশীর্বাদ। প্রতিটি মাকে আমি অনেক ভালোবাসি। অনেক শ্রদ্ধা করি। মা হবার অনুভূতিটা কেমন আমি জানিনা। শুধু জানি একজন মায়ের সন্তান হওয়া কতোটা আনন্দের। কতোটা গর্বের। যেটা শুধু উপলব্ধি করা যায়। কারো কাছে প্রকাশ করা যায়না। গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিটি মাকে শুধু একটা কথাই বলবো। যেটা প্রতিদিন আমার মায়ের বুকে মুখ গুঁজে বলি; আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা........
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওবাইদুল হক
বোন তোমার গল্পে আবার ঘুরে এলাম । একবার নয়, দুই বার নয়, বার বার পড়তে ইচ্ছে করছে তোমার গল্পটা । কারন গত কাল রাত্রে স্বপ্নে দেখলাম মা আমাকে অনেক শাসন করতেছে । কারন ছোট বেলায় আমি অনেক দুষ্ট ছিলাম । যা এখন কার দিন আর আগেকার দিনের মধ্যে অনেক পাথ"ক্য আছে । আর আমার মায়ের জন্য দোয়া করিও । আমি তোমার মায়ের জন্য করি । ধন্যবাদ ।
প্রজ্ঞা মৌসুমী
গতকাল মাকে নিয়ে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলাম। সারা পথে একটা বইয়ে মুখ গুজেছিলাম। হঠাত চোখ পড়ল মা আনমনা হয়ে বাইরে তাকিয়ে। কি অদ্ভুত মায়া লাগছিল। হাতটা ধরতেই মা কি মিষ্টি করে হেসে উঠল। সারাপথ আর হাত ছাড়তে ইচ্ছে করেনি। আমার মায়ের সাথে সব যে মিলে তাও নয়। দুজনের মতামতে বিভেদ হয়, হয়েছে। তর্কও হয়। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাও মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া। ছোটদের কাছেও শেখার আছে সেটাও মায়ের থেকে শেখা। মাকে নিয়ে কোনোদিন কিছু লেখা হয়নি আমার। আমি সবসময়ই অযোগ্য। মাকে নিয়ে আপনি কি সুন্দর অনুভূতির প্রকাশ করলেন। আমি কখনই পারব না। আপনার লেখেন দারুন। আর গল্প...মা নিজেই এক গল্প...তাকে নিয়ে আলাদা কৌশল করে গল্প না বানালেও চলে। মনের কথা তো বলা হলো। আপনার জন্য শুভ কামনা।
বিষণ্ন সুমন
অনেক সাবলীল ও আবেগঘন একটা লিখা. তবে প্যারা না থাকায় মাঝে মাঝেই গতি খেই হারিয়ে ফেলেছে. এদিকটা বাদ দিলে নিঃসন্দেহে একটা চমত্কার সৃষ্টি. শুভকামনা থাকলো.
আশা
মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে বয়সের সাথে গল্পের বিশাল ব্যবধান। চেষ্টা অব্যহত থাকলে বড় হতে হতে একদিন এ ব্যবধান আরো বাড়বে। শুধু মায়ের গল্প বলে কথা। মাতো আর যেন তেন কিছু নয়। স্নেহ-মায়া-মমতা-উদারতা আর পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে বিধি নিজ হাতে যাকে বানিয়েছেন---- তিনি যে আমার 'মা'। সেই মাকে নিয়ে গল্প লিখার জন্য ধন্যবাদ। নম্বর কিন্তু দিলাম (.......?)। কত দিলাম বলব না.........
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।