স্বর্ণদ্বীপের পথে

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

রনীল
  • ৭৬
  • 0
  • ৭৩

(১)


লঞ্চ ছাড়ার কথা ছ’টায়। পাঁচটা বাজতে না বাজতেই রাজীব উঠে গিয়ে সবাইকে তাড়া দিতে লাগলো। ঠিক এই ভয়টাই আমি গতকাল রাতে পেয়েছিলাম। চোখদুটো ভীষণ আঠা আঠা, আকাশছোঁয়া দুর্নিবার এক মন্দ্রসপ্তক আমাকে ঠেলেঠুলে গভীর কোন অন্ধকূপে ফেলে দিতে থাকে। রাজীবের ব্যস্ত চটির শব্দ শুনে আমি ধড়মড় করে সে অন্ধকূপ থেকে বের হয়ে আসি।
রাজীবের খবরদারীর কল্যাণেই আমরা সোয়া ছ’টার মধ্যে রূপমঙ্গল বন্দরে পৌঁছে গেলাম। নিদ্রাদেবীর গুনগুনানী এখনো পুরোপুরি বাতাসে মিলিয়ে যায়নি। আমি লঞ্চটির ছাদে বসে ঢুলুঢুলু চোখে নদীর ওপাড়ের দিকে চেয়ে থাকি।
সাতটার দিকে যাত্রীদের দ্বিতীয় দলটি আসামাত্রই সারেঙ লঞ্চ ছেড়ে দিল। সুনীল সাগরের অভিমুখে লঞ্চটি চলা শুরু করলে আমরা নড়েচড়ে বসলাম। মহা উৎসাহে রেলিং- এর পাশে দাড়িয়ে আমরা দুপাশের বন, আকাশ, নদী দেখতে থাকি। তবে ভ্রমনের রোমাঞ্চ ছাড়া আমাদের এই আকস্মিক প্রাণচাঞ্চল্যের অন্য একটি কারনও আছে।
আমাদের চারজনের দলটি ছাড়াও লঞ্চে যে ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রদের দলটি এসেছে- সেখানে তিনটি মেয়ে ও আছে। এর মধ্যে নীল শাড়ি পড়া লম্বা চুলের মেয়েটির দিকে আলাদাভাবে আমার দৃষ্টি চলে যায়। তাকিয়ে দেখি রাজীব ও আমার মত মুগ্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে, চোখের ইশারা করতেই সে চোখমুখ বিকৃত করে বুকের পাশটা চেপে ধরলো।
সজীবের আবার প্রচন্ড তাস খেলার নেশা। ইতিমধ্যেই সে কয়জনকে সাথে নিয়ে ডেকের উপর তাস নিয়ে বসে গেছে।
রতনটা বরাবরই চুপচাপ ধরনের। এখানে আসার পর সে আরো বিকট রকমের গম্ভীর হয়ে গেছে। লঞ্চ ছাড়ার পর থেকেই ক্যান্টিনের পাশটায় দাড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে। কোন কিছুতেই যেন তার কোন আগ্রহ নেই।
তরুন দলটি আমাদের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। আমরা মনে মনে স্ট্রাটেজী ঠিক করছিলাম, এমন সময় সুদর্শন- চটপটে ধরনের একটি ছেলে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো।
- এক্সকিউজ মি... রাজীব ভাই, আমাকে চিনতে পারছেন!
- আরে মোরশেদ! তুমি এখানে!
মোরশেদ এসে উৎফুল্ল ভঙ্গিতে রাজীবের সাথে হাত মেলায়, অন্যদেরও পরিচয় করিয়ে দেয়।
- বন্ধুরা, আমি অত্যন্ত আনন্দিত এ জন্য যে বিশিষ্ট সাংবাদিক-কবি জনাব রাজীব হাসানের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবার সৌভাগ্য আমি এই মাত্র অর্জন করেছি।
রাজীব নীল শাড়ি পড়া মেয়েটির দিকে একঝলক তাকায়, তারপর আপ্লুত কন্ঠে বলে
- আপনারা মোটেও মোরশেদের কথা বিশ্বাস করবেননা। ও সব সময়ই একটু বাড়িয়ে বলে।
দেখা গেল, তরুন দলটির মধ্যে অনেক সাহিত্যানুরাগীও আছে। রাজীব সুযোগটা কাজে লাগাল। সাহিত্য উন্মুখ ক’জন তরুনের উচ্ছ্বাসে লঞ্চের ডেকটি মুহূর্তেই ভরে গেল।
সজীব তো আগেই তাস খেলায় বসে গেছে, রতন পন করেছে সে কারো সাথে কথা বলবেনা। সাহিত্য আড্ডায় আমার ভূমিকাটি হয়ে গেল রাজীবের সহযোগীর। রাজীব পুরো পরিস্থিতিটাকে নিজের কব্জায় নিয়ে এসেছে। তরুনের দলটি মন্ত্রমুগ্ধের মত ওর কথাগুলো শুনছে। আমি কখনো মাথা নেড়ে, কখনো কাষ্ঠ হেঁসে তাতে সায় দিয়ে গেলাম।
- আচ্ছা রাজীব ভাই, কিছু মনে করবেননা- সেদিন একটা ব্লগে আপনার একটা লেখা পড়লাম। নাম- আকাশ বাড়ি। ঐ লেখাটার সাথে রেদোয়ান রনির টেলিফিল্ম প্রজাপতির স্বপ্ন’র কাহিনীর একটু মিল আছে মনে হয়!
স্রোতের বিপরীতে ধাক্কা, রাজীব গোপনে একটু ঢোক গিলে। নীল শাড়ি পড়া মেয়েটির নাম ইতিমধ্যে জানা হয়ে গেছে- বীথি। আমি সন্তর্পণে সেদিকে একবার তাকাই, গভীর দুচোখে এক ঝলক কৌতুকের দেখা পেলাম যেন।
আমি জানি বিদেশী চলচ্চিত্র, গল্প-কবিতা থেকে রাজীব মাঝে মাঝে দুএক ছত্র এদিক ওদিক করে দেয়। তবে রেদোয়ান রনি’র প্রজাপতির স্বপ্ন আমার এখনো দেখা হয়নি।
- কবি রাজীব হাসান ছাড়াও আমার আরেকটা পরিচয় আছে, যেটা তোমরা অনেকে জানোনা! সেই পরিচয়টা আমি তোমাদের পরে বলি... আর রেদোয়ান তো আমার একদম স্কুল জীবনের বন্ধু!
রাজীব খুব সুকৌশলে বিপরীত দিক থেকে আসা স্রোতটির মুখ ঘুড়িয়ে দেয়। উৎসুক তরুন দলটি মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
আড্ডায় হঠাৎ বাঁধা পড়ে, কেউ একজন জঙ্গলে বাঘ দেখতে পেয়েছে। সবাই হুড়মুড় করে সেদিকে ছুটে যায়। লঞ্চটি একদম নদীর মাঝ বরাবর চলছে। বহুদূরে জঙ্গলের ভেতর হলুদ রঙের গোলাকার একটা কিছু দেখা যায়। কারো কারো কাছে সেটা গাছের হলুদ পাতা, কারো কাছে সেটা বাঘের মুখ।
সেই সাথে শুরু হয়ে গেল নতুন খেলা, বাঘ খোঁজার খেলা। তরুণদের দলটি উৎসুকভাবে রেলিং এ ভর দিয়ে জঙ্গলে বাঘ খুজতে থাকে। নিবিড় জঙ্গলের অতি সন্নিকটে, শীতের দুপুরের সেই প্রহরটিতে আমরা কেউই একটা ব্যাপার তখন বুঝতে পারিনি- খুব আগ্রহ নিয়ে কেউ যদি বাঘের প্রত্যাশায় বসে থাকে, তবে সে কখনো তার দেখা পায়না। বাঘ শুধুমাত্র সে মুহূর্তটাতেই দেখা দেয়, যখন তার মুখোমুখি হবার জন্য কেউ প্রস্তুত থাকেনা!





(২)


সারাটা দিন বেশ আড্ডা আর আনন্দতেই কেটে গেল। সন্ধ্যার দিকে আমরা শিবসা নদী আর বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এসে পড়লাম। সারেঙ এর সহযোগীটি সেখানেই ঝপাং করে নোঙর ফেলে দিল। এখানেই আমাদের রাত্রিবাস হবে। মাঝে মাঝে নাকি নদীতে টাঙ্গি হাতে জলদস্যুরা বের হয়। সে হিসেবে এ জায়গাটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ- একটু আগেই আমরা রেঞ্জার সাহেবের অফিসটি পেছনে ফেলে এসেছি।
রাতের খাবার শেষেই রাজীব বিয়ারের ক্যান নিয়ে বসলো। রতনের এসবে আগ্রহ নেই, সজীব ও চলে গেছে তাস খেলতে। আমি আর রাজীব চুপচাপ লঞ্চটির ছাদে বসে থাকি। নিচে মোরশেদদের দলটি তুমুল আড্ডায় মেতে উঠেছে। মাঝে মাঝে রাতের নিরবতা ছাপিয়ে ওদের হৈ হুল্লোড়ের শব্দ ভেসে আসছিল। আমি অনুভব করি, আমাদের লঞ্চটি তার নোঙরটিকে অবলম্বন করে ক্রমাগত চক্রাকারে ঘুরে যাচ্ছে।
অদূরেই লঞ্চের রেলিং ধরে একটি ছায়ামূর্তি উৎসুকভাবে জলের দিকে তাকিয়ে ছিল। ভালো করে তাকিয়ে ছেলেটিকে চিনতে পারলাম, এই ছেলেটি বাবুর্চির যোগানদার হিসেবে কাজ করে। দুপুরের দিকে আমাদের খাওয়ার সময় টুকটাক ফুটফরমাশ খাটছিল।
রাজীব জড়ানো গলায় ছেলেটাকে কাছে ডাকে। ছেলেটি এতক্ষণ আমাদের খেয়াল করেনি। ভয়ে ভয়ে সে এগিয়ে আসে, সংকোচ নিয়ে বিয়ারের ক্যানগুলোর দিকে তাকায়।
- নাম কি তোর?
- জি... জামশেদ।
- কতদিন ধরে এখানে চাকরী করছিস?
- জি... আজকেই প্রথমদিন আমার...
- বলস কি! এর আগে কি করতি?
- আমি আসলে ট্রাকের হেল্পারী করি, মাঝে মাঝে চালাইও... দেশ বিদেশ দেখার খুব শখ, টাকার জন্য পারিনা... তাই এরকম মাঝে মাঝে বের হয়ে পড়ি।
রাজীবের ভেতরের গল্পকার সত্ত্বাটি হঠাৎ জেগে উঠে। নেশা কাটিয়ে সে ভালোভাবে ছেলেটাকে খেয়াল করে।
- বিয়ার খাবি?
- না স্যার।
- এখান থেকে তারপর কোথায় যাবি?
জামশেদের কিশোর মুখটাতে একটু দ্বিধা দেখা যায়। এ ছেলেটাকে দুপুরের দিকে আমিও খেয়াল করেছি। বরাবরই আমাদের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছে। উৎসুকভাবে আমাদের কাজকারবার বোঝার চেষ্টা করেছিল।
- কিরে বললিনা! এই চাকরী কয়দিন করবি? এরপর কোথায় যাবি?
- আমি আসলে স্যার স্বর্ণদ্বীপে যাইতে চাই। কটকার পর মনসা পয়েন্ট, তার আরো গভীরে গেলে স্বর্ণদ্বীপ। আগামীকাল আপনাদের লঞ্চ কটকা থেকে আবার রূপমঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দেবে, তখন আমি চুরি করে লঞ্চ থেকে নেমে যাবো।
রাজীবের অবশিষ্ট নেশাটুকু ও কেটে যায়। জামসেদের কাছে আমরা তখন এক অসংজ্ঞায়িত দ্বীপের লোমহর্ষক বর্ণনা শুনতে পাই।
আন্তর্জাতিক মানচিত্র অনুযায়ী স্বর্ণদ্বীপের কোন অস্তিত্ব নেই। প্রতিবেশী দেশের কিছু সাধু সবার আগে ওই দ্বীপের সন্ধান পায়। প্রায়ই তারা ওখানে একত্রিত হয়ে গোপন আসর বসায়। বর্ষার সময় দ্বীপে অনেক সোঁদাল ফুল ধরে, সে থেকে ঐ দ্বীপের নাম হয়ে গেছে স্বর্ণদ্বীপ। ব্রহ্মচারী সাধুদের ধারনা- স্বর্ণদ্বীপের মাধ্যমেই পৃথিবীর স্থলভাগের পরিসমাপ্তি হয়েছে, এটিই পৃথিবীর শেষ প্রান্ত। কোন এক দুর্বোধ্য কারনে স্বর্ণদ্বীপ সংলগ্ন সমুদ্রপথে কোন জাহাজ ও চলাচল করেনা। দ্বীপের শেষ প্রান্তটিতে দাড়িয়ে নিঃসীম সমুদ্রের বিস্তৃতি দেখলে মহাপৃথিবীর গোলাকার রূপটি সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যায়। সমস্যা হচ্ছে- সংরক্ষিত বনাঞ্চল আর দুর্গম পথ পেরিয়ে খুব কম লোকই শেষ পর্যন্ত সেখানে পৌছাতে পারে।
- তুই এতদূর কিভাবে যাবি? তুই কি রাস্তা ঠিকঠাক চিনিস?
- আমি আসলে একা যাবোনা, আমাদের গ্রামের একজন লোক আছে- নাম সুবলদা। উনি আবার জেল পলাতক আসামী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই এলাকায় লুকিয়ে আছেন, নৌকা-টৌকা চালান, মাছ ধরেন...। সুবলদা ও এখন পর্যন্ত স্বর্ণদ্বীপে যেতে পারেননি। কালকে দুপুরে উনি আগেভাগেই কটকায় এসে লুকিয়ে থাকবেন, আমি গেলে তারপর দুজনে মিলে রওনা দিব- স্বর্ণদ্বীপের পথে...
রাজীবের চোখদুটো দেখে আমি বুঝতে পারি- ও এখন গল্পের প্লট নিয়ে ভাবছে। কল্পনায় আমি ও দেখতে পাই- শুভ্র সে বালুচর, স্বচ্ছজলে ভাসমান আকাশ... স্বর্গ হতে ভেসে আসা অপূর্ব সুন্দর আলোক রশ্মি।
গভীর রাতে তাস খেলে সজীব ফিরে আসে। আমি উচ্ছ্বাসিতভাবে তাকে স্বর্ণদ্বীপের বিবরণ শোনাই। রাজীব প্রস্তাব দেয় জামসেদ আর সুবলের সাথে স্বর্ণদ্বীপে যাবার।
সজীবের খুব একটা ভাবান্তর হয়না, নির্বিকারভাবে বলে- তোরা গেলে আমি আর একা একা কি করবো? চল ঘুরে আসি তাহলে!
আমি আকুতি নিয়ে রতনের দিকে তাকাই, রতন বিমর্ষভাবে হাঁসে,
- আমরা তো পাপী মানুষ... চাইলে ও ওখানে আমরা যেতে পারবোনা, তবু ও চল... চেষ্টা করে দেখা যাক।








(৩)


পরদিন খুব ভোরেই কটকার উদ্দেশ্যে আমাদের লঞ্চ ছেড়ে দিল। কটকায় এসে আমরা লঞ্চ থেকে নেমে জঙ্গলের ভেতর প্রবেশ করলাম। এ বনে নাকি মাঝে মাঝে বাঘ চলে আসে। আমাদের সাথে অবশ্য বন বিভাগের দুইজন অস্ত্রধারী গার্ড আছে।
বীথি আজও নীল শাড়ি পড়েছে। রাজীব বরাবরই ওর আশেপাশে লেগে থাকলো। আমার অবশ্য সেদিকে খুব একটা মনোযোগ নেই। স্বর্ণদ্বীপের কথা ভেবে আমি আগাগোড়াই অন্যমনস্ক হয়ে রইলাম।
দুপুরের খাবার শেষে প্রাণচাঞ্চল্য কিছুটা কমে গেল। অনেকেই নিজ নিজ কেবিনে চলে গেল ভাতঘুম দিতে। আমরা রাজীবের কেবিনটিতে বসে টুয়েন্টি নাইন খেলছিলাম। রতনের তাস খেলায় আগ্রহ নেই। আমাদের চাপাচাপিতে দুতিন দান খেলল- তারপর হঠাৎ ধুৎ বলে উঠে পড়ল।
খেলা মাত্রই জমে উঠেছে, সজীব উঠে গিয়ে কোথা থেকে মোরশেদকে ধরে আনলো। দেখা গেল সজীব- মোরশেদ দুজনেই দুর্দান্ত খেলোয়াড়, দুজনেই পড়েছে একই দলে। রাজীব মোটামুটি খেলে, কিন্তু আমি বারবার ভুল খেলে ওর বকুনি খেতে লাগলাম।
দরজায় হঠাৎ একটা ছায়া পড়লো। নীলশাড়ি পড়া ছায়াময়ীটি এক পলক আমার দিকে তাকায়... তারপর প্যাসেজ দিয়ে আস্তে আস্তে চলে যায়। আমি আবার অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম। বীথির এক ঝলক দৃষ্টি মুহূর্তেই আমাকে আবিষ্ট করে ফেলে, একটু খানি চাহনিতেই যেন সে কত কথা বলে গেল।
রাজীবের মুখটি ঈষৎ হা হয়ে গেছে। যতদূর পর্যন্ত বীথির শরীরটি দেখা যায়, তৃষ্ণার্তের মত ততদুর সে চেয়ে থাকে।
প্যাসেজে দাড়িয়ে থাকা রতনের কোনদিকে খেয়াল নেই। দুপুরের খর রোদের মধ্যেই সে নির্বিকারভাবে দূর সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কোথায় যেন একটা সুর কেটে গেছে। সজীব তাস ফেলে উঠে যায়। তারপর রতনকে জোর করে আবার তার জায়গাটিতে বসিয়ে দেয়। রতন অনিচ্ছুকভাবে কার্ড শাফল করে। রাজীব তখনো প্রকৃতঃস্থ হয়নি, ওর সুদর্শন মুখটিতে শারীরিক যন্ত্রণার ছাপ।
ছোটকালে সপ্তাহে একদিন (বৃহস্পতিবার) টিফিন ব্রেকের পরপর স্কুল ছুটি হয়ে যেত। অর্ধেক কর্মদিবসের সে দিনগুলোতে বাসায় ফিরে অন্যরকম এক অনুভূতি হত। বিকেল না হলে মা খেলতে যেতে দেবেননা। অলস বন্দী দুপুরগুলোতে কি করবো- ঠিক বুঝে উঠতে পারতামনা। মাঝে মাঝে ছোট ভাইটিকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে আকাশ দেখতাম। কত নাম না জানা সুদূর থেকে মেঘগুলো ভেসে আসছে- ভেবে বেশ রোমাঞ্চবোধ হত। তখন থেকেই আমার মেঘের মাঝে নানান অবয়ব খুঁজে বেড়ানোর অভ্যাসটির শুরু। দেখা যেত- যে মেঘটিতে আমি স্পষ্ট সিংহের মুখ দেখছি, আমার ছোট ভাইটি সেখানে ঘোড়ার লেজ ধরে বসে আছে!
আমি আনমনে একটু হেঁসে উঠি। বীথিকে খুব সাংঘাতিক ধরনের সুন্দরী বলা যাবেনা। ওর ঝকঝকে স্বাস্থ্যর জন্যই ওকে সবার চেয়ে আলাদা ভাবে চোখে পড়ে। কিন্তু আমার কাছে বীথি আলাদা- ওর স্বপ্নময় দুটি চোখের জন্য। হয়তো দেখা যাবে- বীথি যাকে বিয়ে করবে, সে কোনদিন ওর চোখদুটোর দিকে তাকানোর অবকাশই পাবেনা, ওর মনের গভীরের স্বপ্নগুলোর কথা কখনো কেউ জানতেই পারবেনা। জীবনের শেষ দিনগুলো পর্যন্ত সে নিজের অজান্তেই গহীনের স্বপ্নগুলোকে পুষে যাবে।
ঢিমেতালে, ক্লান্তভাবে আমরা খেলে যাচ্ছিলাম। খেলা বন্ধ করে ঘুমোতে যাবো কিনা ভাবছি, এমন সময় লঞ্চের পেছন দিকটা হতে ভীষণ চেঁচামেচির শব্দ ভেসে এল।
তাড়াহুড়ো করে গিয়ে আমরা যে দৃশ্যটি দেখলাম, সেটার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলামনা। লঞ্চের লোকজন আর মোরশেদের বন্ধুরা মিলে সমানে সজীবকে চড় থাপড় মেরে যাচ্ছে। আমরা প্রতিরোধে এগিয়ে গিয়ে ও আবার গুটিয়ে গেলাম। সজীবের অপরাধটি বেশ গুরুত্বর- বীথি যখন বাথরুমে ঢুকেছিল, সজীব তখন দরজার ফোকর দিয়ে ওকে দেখার চেষ্টা করে। মোরশেদের বন্ধুরা ওকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।
মোরশেদ এগিয়ে গিয়ে সজীবের কলার চেপে ধরে উন্মত্তের মত চড় থাপড় মারতে থাকে। সজীবের গালদুটো লাল হয়ে যায়, অসহায়ভাবে সে আমদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এমন সময় বলিষ্ঠ পদক্ষেপে রতন এগিয়ে এলো। ঝটকা দিয়ে সবার থেকে সজীবকে আলাদা করে ফেলল। তারপর ওর কলার ধরে প্রচণ্ড জোরে চড় মারে, সজীব অসহায় ভাবে বাথরুমটির সামনে পড়ে থাকে।
- আর কেউ যদি ওকে একটা টোকা ও দেয়... তবে ওকে আমি জানে মেরে ফেলবো। ঐ মেয়েটা যদি পুলিশে কমপ্লেন করতে চায়, তবে একে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হবে। আর না হলে রুপমঙ্গলমুখী কোন লঞ্চে করে ওকে ফেরত পাঠানো হবে... তার আগে কেউ এর দিকে চোখ তুলে তাকাবেনা!
রতন সতর্কভাবে টানটান হয়ে দাড়িয়ে থাকে... একটা হাত কোমরের কাছে। ক্রুদ্ধ হিংস্র মানুষগুলো সেটা লক্ষ্য করে নিজেদের সংবরণ করে, দ্বিধান্বিতভাবে খানিকটা পিছিয়ে যায়।
আমরা সজীবকে ধরাধরি করে সারেং এর কক্ষটিতে নিয়ে গেলাম।


(৪)


সজীবের কাণ্ডটির পর পুরো লঞ্চের চেহারাটাই পালটে গেল। মোরশেদদের দলটির যাবতীয় উৎসাহ যেন মিইয়ে গেছে। দুএকজন গম্ভীরভাবে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। আমাদের সামনে পড়ে গেলে আস্তে করে সরে যাচ্ছে।
রতন সেই দুপুর থেকে লঞ্চের শেষ প্রান্তটিতে নিশ্চল দাড়িয়ে আছে। দুর থেকে হঠাৎ খেয়াল মনে হয় যেন একটা মূর্তি দাড়িয়ে আছে। বীথি সারা দুপুর আর কেবিন থেকে বের হয়নি। একটু আগে ওর বন্ধুরা মিলে ওকে জোর করে বের করে আনলো। চোখমুখ বেশ ফুলে আছে... বোঝা যাচ্ছে কান্নাকাটি হয়েছে বেশ।
বটগাঁও নামক লঞ্চ ঘাটতি কাছে আসতেই সারেং হঠাৎ লঞ্চের গতি কমিয়ে দিল। লঞ্চটি ঘাতে ভিড়তেই দুজন কনস্টেবল সহ একজন পুলিশ অফিসার ব্যস্ত সমস্ত হয়ে লঞ্চে উঠে এলেন। আমি প্রবল বিস্ময়ে বীথির দিকে চেয়ে থাকি।
ঠিক সেই মুহূর্তে যে ঘটনাটি ঘটল, সেটার কথা আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি। পুলিশ অফিসারটি বিকট চিৎকার করে রতনের দিকে ছুটে যায়। রতন চোখের পলকেই অফিসারটিকে পাশ কেটে গুলির মত বের হয়ে যায়, তারপর তড়িৎ লঞ্চের রেলিং এ উঠে নিচে লাফ দেয়।
অফিসারটি ও ততক্ষণে ঘুরে গিয়ে রতনের কোমর আঁকড়ে ধরে ফেলে। অতঃপর দুজনে একসাথে নিচের কাদাপানিতে পড়ে যায়। নিচে পড়েও দুজনের মধ্যে প্রবল মল্লযুদ্ধ হতে থাকে। রতনের ধনুকের ছিলার মত টানটান শরীর, সে তুলনায় অফিসারটির শরীর বেশ নাদুসনুদুস ধরনের। রতন কোনরকমে অফিসারটির আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে বের হয়ে যেতে চায়। কিন্তু ততক্ষণে কনস্টেবল দুজন সেখানে পৌঁছে গেছে। মাথার পেছনে রাইফেলের কুঁদোর প্রচণ্ড বাড়ি খেয়ে রতন কাঁদাপানির তীরটিতে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকে।



(৫)


জামশেদ একটু আগেই চুপি চুপি লঞ্চ থেকে নেমে গেছে। আমি আমার ছোট ব্যাগটি গুছিয়ে রাজীবের রুমে গিয়ে দেখি ও খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পড়ে বসে আছে।
- কিরে যাবিনা?
- নারে দোস্ত... অফিসে তিনদিনের ছুটি নিয়েছি, আজকে শেষ দিন। কালকে আমাকে অবশ্যই অফিসে থাকতে হবে।
- কিন্তু সেদিন তো অনেক বড় বড় কথা বলেছিলি- আমি আমার উস্মা চেপে রাখতে পারিনা।
রাজীব শান্ত ভঙ্গিতে একটা সিগারেট ধরায়, তারপর আরাম করে ধোঁয়া ছেড়ে বলে,
- দেখ ভাই- বিয়ারের নেশায় আমরা অনেকেই অনেক বড় বড় কথা বলি, সকাল হলেই আবার সব ভুলে যাই। স্বর্ণদ্বীপে যাওয়া এতো সহজ ব্যাপার না। অনেক প্রস্তুতি লাগবে, নেক্সট টাইম আবার ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসবো। তাছাড়া জামশেদ-সুবলদের আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিনা, এদের ক্লাসের সাথে আমাদের ঠিক যায়না দোস্ত... জেল পালানো আসামী বলে কথা! জঙ্গলের ভেতর যদি ঠেক দিয়ে বসে, কিছু করার থাকবেনা।
এমনটা যে হবে, আমি ঠিকই জানতাম। রতনের ঘটনাটার পর আমরা পুলিস অফিসারটির জোরালো জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলাম। তখন জানতে পারি- রতন আসলে একটা গুপ্ত বিপ্লবী দলের বেশ বড়সড় নেতা, গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া সিরিজ বোমা হামলার পুরোটাই ছিল তার পরিকল্পনা। অফিসারটি হয়তো আমাদের ও ধরে নিয়ে যেত, রাজীবের ওপরের দিকে জানাশোনার কল্যানে শেষমেশ আমরা বেঁচে যাই।
রতনের কথাটিই শেষমেশ সত্যি হতে যাচ্ছে … আমার এই ছোট জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যর্থতার ইতিহাসে ভরা। নিজস্ব অর্জন বলতে কিছু নেই। সারাজীবন আমি শুধু রাজীব- রতনদের ইচ্ছে-অনিচ্ছাতেই পরিচালিত হয়েছি।
কিন্তু এবার আমি শেষ না দেখে থামবোনা। যেভাবেই হোক- পৃথিবীর শেষপ্রান্তটিতে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও একবার আমাকে দাড়াতে হবে। মৃত্যুর আগমুহূর্তে অন্তঃত স্বর্ণদ্বীপের কথা ভেবে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা অনুভব করতে পারব। সবাই এখন ভাতঘুমে বিভোর। দাঁতে দাত চেপে আমি নিঃশব্দে লঞ্চটি থেকে নামতে থাকি। বীথির সাথে শেষ দেখাটা আর হলনা...
বনের একটু ভেতরেই জামশেদ আর সুবল লুকিয়ে ছিল। আমি সুবলকে এক ঝলক দেখে নেই। মধ্য বয়স্ক, শক্ত পোক্ত ধরনের চেহারা।
জানলাম, শীতকালে খালের পানি নেমে যাওয়ায় নৌকায় যাওয়া যাবেনা। মূল নদী দিয়ে ও যাওয়া যাবেনা কারন এখান থেকে সংরক্ষিত বন এলাকা শুরু।
আমরা তিনজন শীর্ণ খালটাকে বামে রেখে ধীরে ধীরে এগুতে থাকি। কিছু দূর যেতেই বন ঘন হয়ে আসলো। জামশেদ একটা টাঙ্গি দিয়ে জঙ্গল কেটে কেটে পথ বানাচ্ছিল। আমি আর সুবল পাশাপাশি হাঁটছিলাম। আমি খেয়াল করি ওর হাতেও একটা ধারালো টাঙ্গি। নিজের অজান্তেই আমার চোখ বারবার টাঙ্গিটির দিকে চলে যাচ্ছিল। সুবল কেন যেন ব্যাপারটা পছন্দ করলোনা- ইচ্ছে করেই সে একটু পিছিয়ে গেল, তারপর আমার পেছন পেছন আসতে লাগলো।
আমার মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের ঘরটি খালি দেখাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমি আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবীর মানচিত্রের বাইরে চলে এসেছি। কোথা থেকে বিটকেলে ধরনের একটা গন্ধ ভেসে আসছে। অজানা বিপদের আশঙ্কায় আমি দরদর করে ঘামতে থাকি। জামশেদ একমুহূর্তের জন্য থেমে যায়, একবার পেছন ফিরে দেখে- আবার হাঁটা শুরু করে। আমি সতর্কভাবে ডানের জঙ্গলের দিকে চোখ রেখে হাঁটতে থাকি।
ঠিক তখনই ঘটনাটা ঘটলো। এক পলকের জন্য আমি হলুদ রঙের একটা আলো দেখতে পেলাম। আমার পেছনে সুবল মুখ দিয়ে একটা টুঁ শব্দ ও করতে পারলনা।
আমার দুপায়ে যেন খিল ধরে গেছে। কাঁদার উপর বসে আমি বিকারগ্রস্তের মত চেয়ে দেখি, জামশেদ তার টাঙিটি উঁচিয়ে ক্ষিপ্তভাবে জঙ্গলের দিকে ছুটে যাচ্ছে। যেন সতের বছরের অসীম সাহসী এক যোদ্ধা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে... প্রবল কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে।
জামশেদ পাগলের মত এদিক ওদিক সুবলকে খুঁজে বেড়ায়, চিৎকার করে গালাগালি করে। আমি তার কিছুই শুনতে পাইনা। শুধু দেখতে পাই- চারপাশ ভেসে যাচ্ছে রক্তে আর শ্বাপদের রুপ ধরে হিমশীতল মৃত্যু এগিয়ে আসছে খুব সন্তর্পণে।
জামশেদ আমার কাছে এসে দাড়ায়। আমাকে উঠিয়ে দাড় করাতে চায়। মৃত্যু ভয়ে অন্ধ হয়ে আমি প্রবল শক্তিতে ওকে জড়িয়ে ধরি, হিস্টোরিয়াগ্রস্তের মত প্রলাপ বকতে থাকি।
বিটকেলে গন্ধটি এখনো পুরোপুরি বাতাসে মিলিয়ে যায়নি। এই মুহূর্তটিতে জামশেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে দাড়িয়ে থাকাটা খুব জরুরী। অনেক চেষ্টা করেও সে আমার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেনা। শেষমেশ বাধ্য হয়ে ল্যাং মেরে আমাকে পাশের শীর্ণ খালটিতে ফেলে দেয়... চুলের মুঠি ধরে মুখটা চেপে ধরলো ঠাণ্ডা পানিতে। আমি প্রবল যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকি, নোনা জলেরা তাদের নিজস্ব গতিতে আমার উদর, ব্রহ্মতালু পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
একসময় জামশেদ আমাকে ছেড়ে দেয়, আমার নাকের পানি- চোখের পানি মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। জামশেদ কিছুক্ষণ সেদিকে স্থিরভাবে তাকিয়ে থাকে, তারপর সুবলের পড়ে থাকা টাঙ্গিখানি তুলে আমার দিকে এগিয়ে দিল।
- এই মরা খালটা ধরে সোজা উত্তর দিকে এগিয়ে যান... আধ ঘণ্টার মত হাঁটলেই কটকায় পৌঁছে যাবেন... যান।

..................


রাতের প্রথম প্রহর। চাঁদ এখনো উঠেনি। দূরে বহুদূরে শুকতারাটি একা একা জ্বলে আর নেভে... পৌষের ঠাণ্ডা বাতাসে আমি মাঝে মাঝে কেঁপে উঠি। অদূরেই একটা ছোট বন্দর রঙ বেরঙের সব আলো জ্বালিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করে। সেদিকে তাকিয়ে আমি পেছনে ফেলে আসা নিঃসঙ্গ এক কিশোরের কথা ভাবি, গভীর কালো বন ভেঙ্গে যে ক্রমশঃ এগিয়ে যাচ্ছে- স্বর্ণদ্বীপের পথে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রনীল প্রজ্ঞা মৌসুমি- গুনে গুনে ত্রিশ ত্রিশটা দিন অপেক্ষা করতে হল... অবশেষে আপনার কমেন্ট পেলাম। বুঝতে পারছিনা এতো আনন্দ কেন লাগছে! এটা কি আপনার কমেন্টের গুনে নাকি দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে- এই জন্য ! :D গল্পে আমি একটা কারচুরি করেছিলাম... কেউ ধরতে পারেনি... আপনি অবশ্য অনেক কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। সোঁদাল ফুল বলে আসলে কিছু নেই... সোঁদাল নামে একধরণের ওষধি গাছ আছে শুধু। ঔষধি গাছটিকে আসলে ফুল বানিয়ে দিয়েছিলাম দ্বীপের (স্বর্ণদ্বীপ) নামটিকে জাস্টিফাই করার জন্য। :-) ভালো থাকবেন। শুভ কামনা। ভালো কথা- কাঞ্চনজঙ্ঘা নামটা শুনেই অন্যরকম লাগলো... পড়ে দেখতে হবে...
প্রজ্ঞা মৌসুমী সত্যজিত রায়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা মনে আসলো। সেখানে যেমন একটা/দুটো কেন্দ্রীয় চরিত্র/straight narritive line ছিলনা এখানেও অনেকটা তাই। চরিত্র বদল এত দ্রুত হচ্ছিল খুব খেয়াল রাখতে হচ্ছিল নামগুলো। আগ্রহটা কখনই কমেনি পড়ার সময়। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল এখনো দেখা হয়নি; জানার আগ্রহটা সেজন্য আরো বেশি। জায়গার নামগুলো এত সুন্দর; স্বর্ণদ্বীপ, সোঁদাল ফুল দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। শেষের ব্যাপারটা ধরতে পারছিলামনা প্রথমে। সুবল ক্লোরোফরম দিয়ে কিছু করছে কিনা ভাবছিলাম কিন্তু ফ্লোরোফরমের বিটকেল গন্ধ থাকে কিনা মনে আসছেনা। হলুদ আলোটা তবে বাঘ। অন্যরকম একটা গল্প। লেখনীটা ভালো লাগল।
রনীল অনেক পাঠক অনুযোগ করেছেন তারা গল্পে গর্বের বিষয়টি ঠিকমত খুঁজে পাননি। সত্য কথা যদি বলি, গল্পটা লেখার সময় গর্ব নিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তা ভাবনা ও করিনি। আমি বরং মূল গল্প নিয়েই বেশি ভেবেছি। তারপর ও আপনারা যদি গর্বের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান- তবে আমি বলব রাজীবের চরিত্রটি খেয়াল করতে। তবে মূল গল্পে আমি আরো সুক্ষভাবে গর্ব বিষয়টি তুলে ধরতে চেয়েছি... আমাদের সকলেরই একটা আল্টিমেট ডেসটিনেশন আছে। কিন্তু অহং, কাম, মিথ্যা, লালসার মত রিপুগুলোর কারনে আমরা আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌছাতে পারিনা। এখানে আমি শুধু গর্বই না , এর সাথে ইন্টার রিলেটেড বিষয়গুলো ও তুলে ধরতে চেয়েছি। সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা।
রনীল পণ্ডিত মাহি থেকে শুরু করে মনির ভাই পর্যন্ত... যারা 'স্বর্ণদ্বীপের পথে' পড়েছেন- তাদের সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ।
মনির খলজি রনীল দা, দারুন লিখেছেন ! গতিময়, পাঠক টেনে ধরে রাখা, মাঝেমধ্যে পট পরিবর্তন আর পুনফিরে আশা জায়গামত ইত্যাদি লিখাটার বিশেষ দিক ....সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, থ্রিল আর এডভেঞ্চার .......উপস্থাপনাও লক্ষনীয়, অনেক পরিপক্ক লিখা যা প্রশংসার দাবিদার !.....সুভকামনা রইল !
আদিব নাবিল ভাই, একটা আগুনে গল্প ছাড়লেন! দারুন কল্পনাশক্তি! আপনার লেখা মুগ্ধতার সাথে পড়ি।
প্রজাপতি মন অসাধারণ গল্প, অনেক এডভেঞ্চার আছে ঘটনার গতিময়তায়। আমার কেবল স্বর্ণদ্বীপেই মনোযোগ ছিলো। কখন লেখক যাবে স্বর্ণদ্বীপে আর আমাদের সেখানকার মোহময়ী বর্ণনা দিবেন। অনেক অনেক ভালো লাগলো। এখানে বিথীর প্রসংগ বারেবার টেনে আনা ভালো লাগেনি। রাজীবকে একজন ধুর্ত মানুষ বলে মনে হলো। আর কি সবমিলিয়ে যেন চোখের সামনে একটা নাটক দেখতে পাচ্ছিলাম। রহস্যটা রহস্যই থেকে গেলো বলে ভাল লাগল।
আশা অনেক আগে একবার গল্পটি পড়তে শুরু করেছিলাম মাত্র। কিন্তু মুহুর্তেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে এ গল্পের মজাটুকু থেকে এতদিন (পড়ার আগ পর্যন্ত) বঞ্চিত ছিলাম। অসাধারণ রোমাঞ্চ, টান-টান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ আপনার গল্পটি। পড়ার সময়- না জানি- কী হবে ? এমন একটা ভাবনা ছিল মনে। এই বুঝি বাঘ লাফিয়ে পড়ল কথকের ঘাড়ে এমন একটা সম্ভাবনাও আমার মনের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। তো যাই হোক- অসাধারণ আপনার লেখনি। বলতে গেলে বাড়িয়েই বলতে হয়- খ্যাতির চুড়ায় আপনার আরোহণের সমুহসম্ভাবনা বিদ্যমান।
Didarul Islam ইন্টােরিস্টং েলখা ।
Tahasin Chowdhury বর্ণদ্বীপের সৌন্দর্যে আমি এতটাই বিমোহিত হয়েছি যে, তোমার স্বর্ণদ্বীপে আমার একটা বাড়ি চাই

০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪