বৃষ্টির দিনে যদি কোন কাজ না থাকে তাহলে আমাদের মেসের প্রায় প্রতিটি সদস্য খোশগল্পে মেতে ওঠেন। রাজীব ভাইয়া আমাদের মধ্যে সবার বড়। গল্পের এক বিশাল ঝুড়ি তার কাছে আছে। এটা আমাদের মেসে নতুন কোন মেম্বার আসলেও খুঁটি গারার আগেই তা জেনে যায়। এমনই এক বৃষ্টির দিনে আমরা সবাই গল্পে গল্পে মেতে উঠলাম। রাজীব ভাইর বাড়িতে যাবার কথা ছিল। প্রচণ্ড বৃষ্টির কারনে যেতে পারছেন না বলে মন খারাপ করে বসে ছিলেন। কিন্তু এমন আবহাওয়ায় গল্পের ঝুড়িটা নিয়ে কি চুপচাপ বসে থাকা যায়? বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টির বেগও বাড়ছিল। ইলেক্ট্রিসিটিও হঠাৎ চলে গেলো। চানাচুর মুড়ির সাথে চা নিয়ে বসে পড়লাম সবাই গল্পের আসরে। একথা, সেকথার পর হঠাৎ চলে আসলো ভুতের গল্প বলা। আড্ডার আসরে আমাদের নতুন এক মেম্বার ছিল। সে তার এক ফুপুর জিনে ধরা কাহিনী বলল, বিজ্ঞানের এই যুগে এই জিনে ধরা কাহিনী কি সহজে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়? আমরা প্রায় দু’দলে ভাগ হয়ে এই কাহিনীর পক্ষ বিপক্ষে মতামত দেয়া শুরু করে দিলাম। আমাদের থামিয়ে দিয়ে রাজীব ভাই তার ঝুড়ি থেকে এক গল্প বের করলেন। গল্পটা তার এক মামার। তিন বন্ধু নিয়ে তার মামা এক ফ্ল্যাটে উঠলেন, তাদের যে ফ্ল্যাট তার ঠিক পাশেই এক কবরস্থান। পাশে কবরস্থান বলে মামার বন্ধুরা কেউই সেই রুমে থাকতে চাচ্ছিলনা। তাই বাধ্য হয়ে মামাকেই থাকতে হল। তবে যে জানালা দিয়ে কবরস্থান দেখা যায়, সে জানালা পারতপক্ষে খুলতেন না। একদিন কি মনে করে যেন জানালাটা খুলে দেয়া হল। মামার আর মনে রইলনা না জানালাটা বন্ধ করে দেবার। সন্ধ্যার পর হঠাৎ জানালার দিকে চোখ পড়ল। উঠে বন্ধ করতে যেয়েই দেখেন বাচ্চা একটা ছেলে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণের জন্য হতবাক মামা ভুলেই গেলেন জানালা বন্ধ করতে। সম্ভিত ফিরে পেতেই জানালাটা বন্ধ করলেন তাড়াতাড়ি। এরপর থেকে জানালাটা খুলতে না চাইলেও কোন না কোন কারনে জানালা খোলা হয়। আর বন্ধ করতে গেলে প্রতিদিনের মত একই দৃশ্য দেখা হয়, একটি বাচ্চা ছেলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কবরস্থান অন্ধকার থাকা সত্ত্বেও ছেলেটিকে দেখা যায়, যেন হালকা কোন আলো ছেলেটিকে ঘিরে রেখেছে। এতরাতে কবরস্থানের মাঝে একটি বাচ্চা ছেলে এসে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানেই খুঁজে পেলেননা মামা। এলাকার হুজুরের কাছে এই বিষয়ে জানতে গিয়ে দেখেন হুজুর নতুন এসেছে। অগত্যা হুজুরকে সাথে নিয়ে কবরস্থানের খাদেমের সাথে কথা বলতে যায় তারা। খাদেমের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে একটি কবর নতুন। ৬ বছরের বাচ্চা এক ছেলের। দৃষ্টিহীন অবস্থায় যার জন্ম হয়েছিল। চোখে দেখতে পায় না বলে ছেলেটির বাবা ছেলেটিকে একদম সহ্য করতে পারতো না। একসময় কোন এক কারনে জিদের বসে ছেলেটিকে হত্যা করে পাষণ্ড বাবা। আর মামারা যে ফ্ল্যাটে থাকে সেই ফ্ল্যাটেই নাকি ছেলেটি থাকতো বাবা-মায়ের সাথে। ছেলেটিকে হত্যা করার পর বাবাকে জেলে নেয়া হয়, আর মায়ের মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাটটি ছেড়ে দেয় তারা। তারপর থেকে যারাই এই ফ্ল্যাটে আসে তারাই সন্ধ্যার পর এখানে একটি ছেলেকে দেখে, ওই ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকতে। যদিও খাদেম নিজ চোখে এখনো সেই ছেলেটিকে দেখেনি। খাদেমের কথা শুনে এতক্ষণে মামা বুঝতে পারলেন, এই বাড়ি এতসহজে কিভাবে ভাড়া পাওয়া গেলো পাশাপাশি দুজনই খুব অবাক হয়ে গেলেন এই ঘটনা শুনে। হুজুর নিজ উদ্যোগে কোরআন শরীফ খতম দেয়ার কথা বললেন আর ছেলেটির রূহ যেন শান্তি পায়, সেই দোয়া করে গেলেন। ওই দিন রাতে মামার আর ঘুম হয় নি। আর তার দুদিন পরেই ফ্ল্যাটটি ছেড়ে দেয় তারা। কিন্তু আজো ঘুমের ঘোরে ঐ ছেলেটিকে স্বপ্ন দেখেন তিনি। চিৎকার করে ঘুম ভেঙ্গে সারারাত জেগে থাকেন। আমরা সবাই রাজীব ভাইয়ের মামার এই কাহিনী শুনে এতটাই অবাক হয়েছিলাম যে কখন মোমবাতি নিভে গিয়েছে বলতেই পারিনা। অন্ধকার ঘরে চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে খেয়াল করলাম, বাচ্চা ছেলেটির জন্য মনের অজান্তেই খুব দুঃখ হতে লাগলো, আর সেই সাথে ছেলেটির বাবার প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা কাজ করতে লাগলো মনের মধ্যে। এই ঘটনার পর আমারা কেউই সেদিন আমাদের রুমের জানালা বন্ধ করতে পারিনি। ঘরে খুট করে কোন আওয়াজ হলেই চমকে উঠতাম সবাই। কয়েক ঘণ্টার রাত আমাদের কাছে মনে হয়েছে কয়েক বছরের।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
গল্প বলার ধরণটা অসাধারণ। বাচ্ছা ছেলেটির জন্য খুব ব্যথিত হলাম। দৃষ্টিহীন অবস্থায় জন্ম নেওয়াতে তার তো কোন হাত ছিল না। আর দৃষ্টিহীন হলেই বা সমস্যা কি। একটা ছেলের তথা একটা জীবনের মূল্য আছে না! গল্প ভৌতিক বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ। অসাধারণ লিখেছেন। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
একনিষ্ঠ অনুগত
লিখে যান... ভালো হবেই...।। লিখার সময় মনে রাখবেন আপনি লিখছেন স্ব-ইচ্ছায়... এবং নিজের স্বাচ্ছন্দ্যতায়... লেখা আপনা আপনি ভালোর দিকে এগুতে থাকবে।।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।