একটি রূপকথার গল্প

ঘৃনা (আগষ্ট ২০১৫)

মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্
এক দেশে ছিল এক জনদরদী রাজা, নাম ছিল হায়দার আলী। শ্যামলীই ছিল তাঁর এক মাত্র কণ্যা। সে অনেক দিন আগের কথা। তখনকার মানুষ খুব ভাল ছিল। কিন্তু রাজা-রাণীর মনে খুব আক্ষেপ ছিল একটি পুত্র সন্তান না হওয়ার জন্য, তবে সে কারণে আল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের কোন অভিযোগ ছিল না। বরং তাঁরা মনে প্রাণেই বিশ্বাস করতেন যে, আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালর জন্যেই করেন।

রাজা হায়দার আলী দেশের মানুষের কাছে প্রজা বান্ধব একজন প্রিয় মানুষ। রাজ্যের সীমানার মাঝে কোন অশান্তি নেই, নেই কোন অভাব অভিযোগের বিন্দু মাত্র অজুহাত। সুখের বন্যা খেলে যায় সারাটি দিনমান উৎসবের আমেজে। রাখালী বাঁশির সুরে গাছে গাছে পাখী ডাকে। মাঠে মাঠে শষ্য কণা দোলে দখিনা হাওয়ায়। মৌসুমী আনন্দের ঢেউ যেন আছড়ে পড়ে মানুষের হৃদয় মনে সারাটি বছরই বৈকালিক মিষ্টি রোদের কাব্যিক মমতায়।

রাজা হায়দার আলীর প্রহর কাটে প্রজাদের মঙ্গল চিন্তায়। ভাল সময় গুলো নির্ভাবনায় কাটে বলে রাজার মনেও অফুরন্ত প্রশান্তি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শ্যামলী মায়ের বয়স যে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ভরা মৌসুমে পৌঁছে গেছে রাজার সে দিকে কোন খেয়ালই নেই ! অথচ শ্যামলীর রূপ-গুনের আকর্ষণে বিকশিত হতে থাকে দেশ-বিদেশের ভ্রমর কূলের হৃদয় কানন!

অবশ্য শ্যামলীর মাঝে ভরা বর্ষার জোয়ার থাকলেও, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ থাকলেও তার ভয়ঙ্কর প্রকাশ নেই ! দীঘির জলের মতই শান্ত, আর এখানেই তার আকর্ষনের রহস্য ! সে জন্যই সে আলোচিত, আকর্ষিত এবং সর্বজন স্নেহধন্য ! বাবার মতই প্রজাকূলের আস্থাভাজন, নয়নের মনি। পূর্ণিমার চাঁদের মতই আবেদন তার সকলের আঙিনায় ! সুখের নহরে যেন দধির প্লাবণ !

শ্যামলীর জননীও তো রাজমাতা, তাই তাঁর বিবেচনাও যুক্তি গ্রাহ্য। তিনি সবিনয়ে রাজাকে শ্যামলী মায়ের জন্য সু-পাত্রের সন্ধ্যানে মনোনিবেশ করার তাগিদ দেন। রাজা সানন্দে সম্মতি জানান বটে, কিন্তু সাথে সাথে প্রজাকূল ও দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তায় ভেতরে ভেতরে মনোবেদনায় আহতও হন। যেহেতু তাঁর কোন পুত্র সন্তান নেই তাই তাঁর আসন্ন বার্ধক্য এবং জীবনাবসানের চিরন্তন সত্যকে উপেক্ষা না করার মানসিকতাই তাঁকে আরও সচেতন ও সতর্ক সিদ্ধান্তের প্রতি মনোযোগী করে তোলে।

এতদিনে সম্মানিত সভাষদ ও শুভাকাঙ্খী পারিষদবর্গ এই প্রথম লক্ষ্য করলেন রাজাকে ক্ষণিক চিন্তার রেখা যুক্ত কাতরতা নিয়ে দরবারে আসতে ! সবার মাঝেই একটা অজানা আশংকা দানা বাধায় শীতলতার আস্তরনে পরিবেশ যেন আচমকাই নিরবতার গভীরে নিমজ্জিত হ’লো। রাজা লক্ষ্য করলেন, বুঝলেন এবং একটু সময় নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে রাজদুহিতা শ্যামলী মায়ের জন্য একজন সু-পাত্র সন্ধ্যানের আহবান জানালেন। এতক্ষণে সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন এবং ঈষৎ আনন্দের ঘ্রাণ যেন তরঙ্গে ভেসে ভেসে সবাইকে ছুঁয়ে দিয়ে পুলকিত করে দিল। গভীর গুঞ্জরণে উজ্জীবিত দরবার রাজাকে আশাবাদী করে তোলে। ভাল লাগা প্রহর গুলো সব সময়েই দ্রুত লয়ে গত হয়!

রাজদুহিতার পানি গ্রহণের বাসনা জাগে অনেকেরই মনে । এমনকি সীমানার ওপারেও জেগে ওঠে প্রেমিক প্রবর ! রাজা হায়দার আলীর কাছেও পৌঁছে যায় শ্যামলীকে প্রতিবেশী দেশের মহারাজার পুত্রবধু বানাবার সাধের আভাস ! হায়দার আলীর চিন্তার রেখা গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। রাজমাতার ব্যাকুলতার মাত্রাও বাড়তে থাকে বিস্তৃত আকারে। অবশ্য নানান সুত্রে রাজার কাছে আরও সু-পাত্রের খবরাখবর আসতে থাকে, কিন্তু রাজার মনে অশান্তির আগুন ধিক্ ধিক্ করে জ্বলতে থাকে। কারণ অনুসন্ধ্যানে ব্যস্ত পারিষদবর্গ। রাজা পরিস্থিতি অনুধাবন করে সিদ্ধান্ত নিলেন বিষয়টা খোলাসা করার। কিন্তু দৈবাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত সীমান্ত বাসীদের উপর দুরবর্তী অঞ্চলের অরণ্যাশ্রিত দস্যুদের সশস্ত্র আক্রমনে উদ্বিগ্ন রাজা হায়দার আলী সৈন্যদের উপর দস্যু দমনের নির্দেশ দানের সাথে সাথে প্রতিবেশী রাজ্যের রাজপুত্র স্বপ্রণোদিত হয়ে তার নেতৃত্বে অন্য একটা সেনা দল নিয়ে দস্যুদের উপর আক্রমন করে তাদের দমন করার জন্য সহযোগিতা করায় দস্যুরা পরাজিত হওয়ায় দেশে পূণরায় শান্তির সুবাতাস বইতে থাকে।

রাজা হায়দার আলী প্রতিবেশী রাজ্যের মহারাজার প্রতি যথারীতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সত্য, কিন্তু তাঁর সুদুর প্রসারী চিন্তার রেখাচিত্রে ধরা পড়ে একটা নীল নক্সার আগ্রাসী আয়োজনের পূর্বভাস ! তাই তো তিনি প্রতিবেশী মহারাজার পক্ষ্ থেকে কোন প্রকার প্রস্তাব আসার আগেই শ্যামলীর জন্য পাত্র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করতে মনস্থির করলেন।

ইতোমধ্যে রাজার হাতে পাত্রদের যে তালিকা পৌঁছে গেছে তার শীর্ষে যে দুজন পাত্রের অবস্থান, তাদের কেউই শৌর্যে-বীর্যে, জ্ঞান-গরিমায়, বংশ লতিকায় কারো চেয়ে কম নয়। রাজমাতা, পারিষদবর্গ এবং রাজা নিজেও দু’জনেরই আচার-আচরণেও মুগ্ধ। তাই রাজা চাইছিলেন শ্যামলী মায়ের ইচ্ছাকেই চুড়ান্ত রূপ দিতে কিন্তু শ্যামলীও চায় সবার পছন্দকেই সম্মান জানাতে। ফলে বিষয়টা একদিকে যেমন জানাজানি হয়ে গেল তেমনি সৃষ্টি হলো দীর্ঘ সুত্রিতার।

প্রতিবেশী রাজ্যের মহারাজাও যেন এমন একটা সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিলেন। তাই তি্নি এই মোক্ষম সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে নিজের খায়েশ পূরণের রাস্তা তৈরীতে অগ্রসর হতে থাকেন। শান্তিপূর্ণ রাজ্যের মধ্যে অনুচর ঢুকিয়ে, তাদের দ্বারা এমন সব অপকর্ম করে করে দুই পাত্রের বিরুদ্ধেই এমন ভাবে অপবাদের বোঝা চাপিয়ে দিতে থাকে যাতে করে দুই পাত্রের বিরুদ্ধেই সবার মনে ঘৃণার সৃষ্টি হয়, সেই সুযোগে মহারাজা স্বীয় পুত্রের পক্ষে যেন রাজা হায়দার আলীর কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারে।

ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস ! উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজা হায়দার আলীর ধারণাকে পাশ কাটিয়ে রাজ্যের সমগ্র প্রজাকে বিভাজিত করে ভাগ করে দিল দুই শিবিরে ! শান্তির রাজ্যে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল অশান্তির আগুন। রাজা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে যার পর নাই চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর। কিন্তু রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া ঘটনার ক্রীড়নকরা অঘটন ঘটিয়েই সীমান্তের ওপারে গা ঢাঁকা দেওয়ার কারণে কিছুতেই সকল বাহিনীর সদস্যগণ সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ও তদন্তের কোন কূল কিনারা করতে না পারায় চাকরী ও সম্মান রক্ষার্থে ভুল মানুষকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে থাকে। ফলে মানুষের মনে আস্থাহীনতাও বাড়তে থাকে দুরন্ত বেগে ! মুহুর্ত্তে ফুঁসে ওঠে শান্তির সুশীতল ছায়া তলে বেড়ে ওঠা একটা ভূ-স্বর্গ সম সুশৃঙ্খল জনপদ !

রাজদুহিতা শ্যামলীর বিয়ে তো দুরের কথা, মানুষের নির্ঘুম রজনীই হয়ে গেল রাজা হায়দার আলীর দুঃশ্চিন্তার মূখ্য কারণ ! আর প্রতিবেশী রাজ্যের মহারাজাও প্রহর গুনতে থাকে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম খান ভাল লিখেছেন সানাউল্লাহ ভাই । রূপকথার আঙ্গিকে কিছু বক্তব্য তুলে ধরা । এধরনের লেখায় আপনার পদচারনা সফল হক । শুভ কামনা আর ভোট রইল ।
আপনাদের দো’য়া এবং সমর্থন পেলে ইনশঅাল্লাহ পারব । আপনার অনুপ্রেরণামূলক চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা এবং শুভকামনা রইল । এ মাসে আপনার কোন লেখা পেলাম না । আশা করি আগামীতে পাব ।
হাসনা হেনা গল্পের সমাপ্তিটা ইতিবাচক হ্যনি। ভাল হয়েছে। ধন্যবাদ।
আপনি আমার গল্পটা পড়েছেন এতেই আমি খুশি । তবে সমাপ্তিটা আপনার মনের মত হলে আরও ভাল লাগতো । গল্পটা অবশ্য “রূপক”, তাই এভাবেই শেষ করতে বাধ্য হলাম । অসংখ্য ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা রইল ।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ । সাথে শুভ কামনা এবং কৃতজ্ঞতা ।
তুহেল আহমেদ ঘৃণাময় রূপকথা , সুন্দর--
মুগ্ধ হলাম । শুভ কামনা রইল ।
কবিরুল ইসলাম কঙ্ক ভালো লাগলো গল্পটি । রাজা হায়দার আলীর দুঃশ্চিন্তা শেষ করতে আপনি আরেকটি গল্প লিখতে পারবেন বলে মনে হল । শুভকামনা এবং ভোট থাকলো ।
কৃতজ্ঞতা এবং অসংখ্য ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন নিরন্তর ।
ফয়সল সৈয়দ রুপকথা গল্প হিসাবে অসাধারণ লিখছেন।তবে আপনার চিন্তার প্রখরতা আছে ,চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে অনেক ভাল গল্প লিখতে পারবেন। আমাদের দেশে অনেক ভাল ভাল ছোট গল্প রচিত হয়েছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ,শাহেদ আলী,হুমায়ুন আহমেদ এমনকি কবি আল মাহমুদের ছোট গল্পও অসাধরণ। শাহেদ আলী ছোট গল্প ''একই সমতল''তো মনে রাখার মত গল্প।
আপনার দারুন মন্তব্য আমাকে শুধু অনুপ্রাণিতই করেনি সাহসীও করে তুলেছে । ভীষণ ভাল লাগল, ভাল থাকবেন নিরন্তর ।
আবুল বাসার অনেক সাধুবাদ রইল।
আপনার জন্য রইল অফুরন্ত শুভেচ্ছা ।

০৭ সেপ্টেম্বর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৩২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী