কাবিন নামা

বিজয় (ডিসেম্বর ২০১৪)

আব্দুল্লাহ্ আল মোন্তাজীর
  • ১৩
  • ৩৪
১.

ভোরে হালকা নাস্তা করেই মঞ্জু বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল। চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ। দেখতে বিভৎস লাগছে তাকে। তবু হাল ছাড়ার পাত্র নয় সে। শেষ পযর্ন্ত চেষ্টা সে চালিয়ে যাবে। স্বপ্নটা যদি কোন ক্রমে বাঁচানো যায়; সমস্যাটা সমাধানের যদি কোন একটা পথ পাওয়া যায়!

১৯শে জানুয়ারি- আর মাত্র সাতাশ দিন বাকি। কিন্তু তার কাছে মনে হচ্ছে সাতাশটা মুহুর্ত বা তার চেয়েও কম।

বাসা থেকে বেড়িয়ে গিয়ে প্রথমেই জেনির হবু স্বামী শামীম সাথে অফিসে গিয়ে দেখা করল সে। জেনিকে জোর শামীমের সাথে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে- বিষয়টা খুলে বলল। প্রতিক্রিয়ায় মিনমিন স্বভাবের শামীম শুধু বলল, ‘দেখুন বিষয়টা অনেক এগিয়ে গেছে, এখন আমি কি-ই বা করতে পারি। তবে আরও আগে জানালে হয়ত অনেক ভাল হত- যতটা না আপনার, তার চেয়েও বেশি আমার।’
‘মানে?’
‘আপনার “মানে” বুঝতে হবে না। আচ্ছা, আপনারা পালিয়ে বিয়ে করছেন না কেন?’
‘সেটা সম্ভব নয়।’
‘কেন?’
‘কাপুরুষচিত কাজ আমার নীতি বিরুদ্ধ। জেনিও এমনটা পছন্দ করে না।’
শুনে চমকে উঠল শামীম। কোন মতে বলল, ‘ও আচ্ছা!’
এমন সাহসিক কথা শুনে ম্ঞ্জুকে স্যালুট করার ইচ্ছা করছে শামীমের। একটু ধ্যান ধরে গভীর ভাবে ভেবে শামীম বলল, ‘দেখুন যে ভাবেই হোক, আপনার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। এই সূত্রে একটা রিকয়েস্ট করব। আশা করি এটা আপনি রাখবেন।’
‘রিকয়েস্ট!’
‘হ্যাঁ। রাখবেন কি না বলুন।’
‘কি বলতে চাচ্ছেন তা আগে শুনি-’
‘আপনি আমার সাথে বরযাত্রী হবেন!’
‘সেটা কি করে সম্ভব?’
‘যে ভাবে আজকে আমার সাথে পরিচিত হলেন। আমার রিকয়েস্টটা রক্ষা করবেন; প্লিজ।’
‘চেষ্টা করব। তবে কথা দিতে পারছি না।’ বলল মঞ্জু।
‘না; আপনাকে কথা দিতেই হবে। আমার সাথে বরযাত্রী হয়ে আপনার মনের রাজ্যের রাণীর বিয়েতে যাওয়াটা যে কত কষ্টের, তা আমি কিছুটা হলেও অনুমান করতে পাচ্ছি। তারপরও বলছি, সত্যিই যদি আপনি জেনিকে আন্তরিক ভাবে ভালবেসে থাকেন, তাহলে সে দিন আমার সাথে যাবেন। তাছাড়া আপনার ভয়ের তো কিছু নেই। আপনি তো কাপুরুষ নন। বীর পুরুষ বলা ঠিক হবে কি না ভাবিনি। তবে পুরুষ হিসাবে এটা করার ক্ষমতা আপনার আছে বলেই আমার বিশ্বাস।’
‘বললাম তো চেষ্টা করব।’
‘চেষ্টা নয়; আপনাকে যেতেই হবে!’
জেনিও যেতে বলেছে। কিন্তু ভেবে দেখুন, আমার মানষিক দিকটা বিবেচনা করুন- কি ভাবে এটা সম্ভব?’
‘জেনির জন্য হলেও আপনাকে যেতে হবে।’
জেনির কথা বলায় আর অমত করতে পারল না সে।
‘ঠিক আছে; বরযাত্রী হতে পারি বা নাই পারি, সময় মত সেখানে উপস্থিত হব।’
‘খুব খুশি হলাম। আপনার ফোন নাম্বারটা প্লিজ-’ বলে ফোনটা এগিয়ে দিল মঞ্জুর দিকে। নাম্বারটি দিয়ে নিজেও শামীমের ফোন নাম্বার রাখল। শেষে মাথা নিচু করে আনমনে বেড়িয়ে গেল মঞ্জু। এদিকে শামীম অন্য জায়গায় কথা বলতে শুরু করল।


২.

১৯শে জানুয়ারি। জমজমাট জেনিদের বাড়ি। বর আসার একটু আগেই সেখানে পৌঁছল মঞ্জু। বিরাট আয়োজন। মানুষে গমগম করছে বাড়ি। পুরা আসরে খুশির আমেজ। ব্যতিক্রম শুধু মঞ্জু। প্যান্ডলের এক কোণে গালে হাত দিয়ে গোমড়া মুখে বসে আছে সে। আর ভাবছে- ভাগ্যের কি পরিহাস! নিজের স্বপ্ন-হত্যার আসরে নিজেকেই উপস্থিত হতে হল! অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর। সেই পাথরের মতই গা ছেড়ে দিয়ে বসে আছে সে। বর আসল। অনুষ্ঠেয় তথা কথিত প্রথাগুলোকে তার মন চাইছে ধুলিসাৎ করে দিতে। কিন্তু কিছুই করার মত ক্ষমতা রইল না তার।



৩.

ভরা মজলিস। কাবিন নামা লেখা নিয়ে কয়েক জন মুরুব্বির মধ্যে কথা হচ্ছে। তাই অধিক মানুষ থাকা সত্ত্বেও তেমন কোন সরগোল নেই। দু’পক্ষের অনুমতিতে কাজী সাহেব কাবিন নামা লিখার কাজ শুরু করার জন্য প্রস্তুত হলেন। পাঁচ লক্ষ এক টাকা দেনমোহর ধার্য করে কাবিন নামা প্রস্তুতের জন্য কাজী সাহেবকে বলা হল। সবার মনযোগ তখন তার দিকে। এদিকে বিয়ে সংক্রান্ত এ সকল কার্যক্রম যেন মঞ্জুর উপর বজ্রের আঘাতের মত মনে হচ্ছে। প্রতিটি কথা যেন উত্তপ্ত লাল লোহার রড় হয়ে তার কানে প্রবেশ করছে। উদ্ভুত ভয়ংকর অনুমতিটি যেন তার মনকে ক্ষুধার্ত হিংস্র হয়েনার মত খাবলে খাবলে খাচ্ছে। এই অনুষ্ঠনটি ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়ে বহু দিনের স্বপ্নটাকে যেন দাপন করে দিচ্ছে! মনে মনে ভাবছে- না আসাটাই বোধ হয় ভাল ছিল। তাহলে এ রকম নির্মম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হত না। যা হওয়ার তা অন্তত চোখের আড়ালেতো হত! ভাবতে ভাবতে তার চোখ লাল হয়ে এসেছে; মাথা ঝিমঝিম করছে; হাত-পা গুলো অবশ হয়ে আসছে। বুকের ভিতরটা যেন ধপধপ করে ফেটে যাচ্ছে দুঃখে! তবু কাউকে কিছু বলতে পাচ্ছে না। ডাকাতের কবলে পড়ে যেভাবে মানুষ অসহায় হয়ে পরে, সেই রকমই যেন মনে হচ্ছে তার!


এমন সময় সালোয়ার-কামিজ পড়া, মাথায় ওড়না দেওয়া এক সুন্দর যুবতী এসে হাজির। এসেই কাজী সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘কাজী সাহেব দয়া করে কাবিন নামা লিখবেন না।’
‘কে আপনি?’ কাজী সাহেব জানতে চাইলেন।
‘আমি চম্পা। আমার কিছু কথা আছে।’
‘কথা আছে! কি কথা?’
চম্পা শামীমের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কি শামীম- কাজী সাহেব কাবিন নামা লিখবেন না কি?’
প্রশ্নের উত্তরটা না দিয়ে চুপ রইল শামীম। একই সাথে সবাই হতভম্ব হয়ে রইল।
‘কথা বলছ না কেন? কাজী সাহেব কাবিন নামা কি লিখবেন? চুপ থেকো না; মুখ খোল।’ চম্পা চাপ দেয়।
শামীম ভাবে এটাই উপযুক্ত সময়। যা করার এখনই করতে হবে। তাই বলল, ‘আমাকে সবাই ক্ষমা করবেন। আমি পরিস্থিতির স্বীকার। চম্পার ‍সাথে আমার কোর্ট মেরিজ হয়েছে। কিন্তু দুই পরিবার সেটা মেনে নেয়নি। বর সেজে এখানে আসতে আমি বাধ্য হয়েছি।’ একটু থেমে আবার বলল, ‘আবারও সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কাবিন নামা লেখানোর অনুমতি প্রার্থনা করছি। তার আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে চাই সবাইকে। একই সাথে একটা অনুরোধ করব। দয়া করে সবাই এটা বিবেচনা করবেন আশা করি। শুনুন সবাই, জেনিকেও আমার সাথে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল জোর করে।’ কথাগুলো শুনে এ-ওর দিকে চাওয়া-চাওয়ি করছে। এমন সময় সে মঞ্জুকে কাছে ডেকে বলল, ‘আসলে জেনি মঞ্জুকে ভালবাসে। কিন্তু তার পরিবার তাদের এই মতটাকে অগ্রাহ্য করেছে। আর মঞ্জুও জেনিকে মনে-প্রাণে ভালবাসে। তাই আমার অনুরোধ কাবিন নামা লেখা হোক- তবে সেটা আমার আর জিনির নামে নয়- বরং মঞ্জু আর জেনির নামে। তাছাড়া মঞ্জু জেনির জন্য অনুপযুক্ত পাত্র নয়।’


মজলিসে উপস্থিত মুরুব্বিগণ মঞ্জুর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চায়। সে তা স্বীকার করে। তাঁরা তার পরিবার সম্পর্কেও জানতে চায়। পরিবারে যোগাযোগ করা হয়। শুনে মঞ্জুর বাবা শফিকুল ইসলাম আরও কয়েক জনকে নিয়ে আসেন। মুরুব্বিরা তাঁর মতামত জানতে চান। এই বিয়েতে তাঁর কোন আপত্তি নেই বলে জানান তিনি।

আত্মীয়-স্বজন জেনির বাবার মতামত জানতে চাইলে তিনি এ কাজে বেঁকে বসলেন; সবার পীড়াপীড়িতে অবশেষে তিনি মুখ খুললেন। ‘ঠিক আছে। শুভ কাজে দেরি করে আর দরকার কি? কাজী সাহেব, লিখেন কাবিন নামা।’ শামীমের বাবাও চম্পাকে পুত্র বধু হিসাবে স্বীকার করে নেন ভরা মজলিসে।

দুই জোড়া প্রাণের আকুতির বিজয়ে সবার মুখেই স্বর্গীয় তৃপ্তির হাসি ফুঁটে উঠল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রবিউল ই রুবেন ভাই বেড়িয়ে না লিখে বেরিয়ে লিখতে ভালো করতেন। তারপরে ভালো লাগল।
ভালো লাগেনি ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪
*রবিউল ভাই, আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ এ কারণে যে- আপনি আমার লেখার ব্যাপারে সমালোচনা করেছে, অন্তত একটা শব্দ নিয়ে হলেও! আবার আপনার ভাল লাগার কথাও জানিয়েছেন। এই সাইট গুলোর অন্যতম সার্থকতাও কিন্তু এই জায়গায়। ***আপনাকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
ভালো লাগেনি ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি আত্মত্যাগ করে আত্মতুষ্টির মহৎ প্রচেষ্টা.....খুব ভাল গল্প...
ভালো লাগেনি ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্ত্যের জন্য। শুভ কামনা রইল।
ভালো লাগেনি ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪
ruma hamid সুন্দর ! ভালো লাগলো ।
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
Tanjir Chowdhury ভাল গল্প।
ভালো লাগেনি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪
ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য ।
ভালো লাগেনি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ সুন্দর গল্পটা কত সহজ ভাষায় ছোট্র করে তুলে ধরলেন। খুব ভাল লাগল।
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪
কষ্ট করে পড়ে সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪
মাহমুদ হাসান পারভেজ মিলনান্তক ’বিজয়’।ভাল গল্প। শুভকামনা সবসময়।
ভালো লাগেনি ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪
ধন্যবাদ পারভেজ ভাই। আপনার জন্যও শুভ কামনা।
ভালো লাগেনি ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪
রুহুল আমীন রাজু khub sundor golpo....valo laglo. (amar patai amontron roilo)
রাজু ভাই আপনাকে ধন্যবাদ। আসছি আপনার পাতায়। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
রাজু ভাই আপনার পাতা থেকে নিরাশ হয়ে ফিরে এলাম। কারণ আপনার প্রোফাইলটি প্রাইভেট।
anusondhane 'rohul amin raju' likhley ameke pey jaben....
ভালো লাগেনি ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪
শামীম খান সুন্দর বিন্যাস নজর কাড়ে । সাবলীল শব্দচয়ন আর গতিতে গল্পটি বেশ আবেদন তোলে । শুভ কামনা রইল ।
শামীম ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ। চেষ্টা করি ভাল কিছু করার জন্য, হয় কি না জানি না। তবে পূর্ণ অন্ধকারেই থেকে যেতাম- যদি আপনার মত অভিজ্ঞ পাঠকগণ মন্তব্য না করতেন! আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।
হাফিজ রাজু দুটি ভালবাসার বিজয় হল, ভাল লাগল।
দু’টি কেন, আমি চাই উপযুক্ত সকল ভালবাসারই বিজয় হোক। ধন্যবাদ ভাই। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু মঞ্জু ও জেনির ভালোবাসার বিজয়ে খুব ভাল লাগল। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য মঞ্জুর মত এমন বলিষ্ঠ ভূমিকাই রাখা উচিৎ। অনেক ভাল একটা গল্প। শ্রদ্ধা জানবেন।
উত্তরে এতটুকুই বলব- আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।

২৬ আগষ্ট - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪