মাঝারি আকৃতির একটা ঘর । চারদিক নীল রঙের কাঁচ দিয়ে ঢাকা । বাইরে থেকে ভিতরে তাকালে অস্পষ্ট কিছু ছায়া ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না । ভিতরে একটা দৃষ্টি দেওয়া যাক । বেশ কয়েকজন মানুষকে দেখা যাচ্ছে । এদের আলাদা আলাদা বেডে শুইয়ে রাখা হয়েছে । এরা সবাই একটা পরিকল্পনার অংশ । এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার অংশ । ******* ড. ক্লড ভাবতেই পারেননি ব্যাপারটা এত দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে । তাদের কলোনি , দি লেবেনের প্রশাসন যখন তাদের সমস্যাটা তাকে জানায় তখন এই চিন্তা তার মাথায় আসে । অনেক আগে থেকেই দি লেবেনের আশেপাশের কলোনিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগে আছে । এর ভিত্তিতে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় ধরণের সংঘর্ষ হয়ে গেছে । দি লেবেন নিজেদের শান্তিপূর্ণ কলোনি হিসেবে চিহ্নিত করেছে । তাই তারা এতদিন এসব ঝুট-ঝামেলা থেকে মুক্ত ছিল । কিন্তু বর্তমানে অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়েছে । আশেপাশের কলোনিগুলো দি লেবেনের সাথে সাথে আর শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছেনা । তাদের অনেকেরই এখন লক্ষ্য দি লেবেন দখল করে নেওয়া । তাদের ধারণা এই কাজটা করা তেমন কঠিন কিছু হবে না । কারণ লেবেনিয়ানরা শান্তিপ্রিয় জাতি । তারা যুদ্ধ-সংঘর্ষে একেবারেই দক্ষ নয় । দি লেবেনের কোনও সামরিক বাহিনী নেই । লেবানিয়ান প্রশাসন হন্যে হয়ে তাদের বর্তমান সমস্যার সমাধান খুঁজছিল । তাদের প্রথম প্রচেষ্টা ছিল তাৎক্ষনিক একটা সামরিক বাহিনী তৈরি । যা পুরোপুরি ব্যর্থ হল । কাউকেই এ ব্যাপারে উৎসাহী মনে হল না । তারপর তারা ভাবল রোবট ব্যবহার করার কথা । কিন্তু তাদের নিম্নমানের রোবটের কার্যকারিতা সম্বন্ধে সন্দেহ দূর করা সম্ভব হল না । তারপরই ড.ক্লড তার অভিনব পন্থা নিয়ে হাজির হলেন । খুব গোপনে প্রশাসনের সাথে তিনি আলোচনায় বসলেন । তিনি প্রশাসনের কাছে তাদের সমস্যার সমাধান হিসেবে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তাকে এমন রূপ দেওয়া যায় , “কলোনির অন্য সবার মত আমিও এই বিশাল সমস্যা নিয়ে চিন্তিত । তারা (অন্য কলোনিগুলো) যে মুহূর্তেই আমাদের ধূলিসাৎ করে দিতে সক্ষম তা বলতে খুব বেশি বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন পরে না । এই বিরাট সংকটের মাঝে আমি একটা সমাধান নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হয়েছি । আগেই বলে রাখি এই সমাধান এক দিক দিয়ে আমাদের কলোনির ক্ষতি করবে । কিন্তু আমি এ ছাড়া আর কোনও সমাধান পাচ্ছি না বিশাল এই সংকটের , আমাদের কলোনিকে বাঁচানোর । ভালো করে আমার কথা লক্ষ্য করুন । আমাদের কলোনির মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে তাদের আবেগ-অনুভুতি । আচ্ছা , এখন যদি আমরা এমন একটা মনুষ্য দল তৈরি করতে পারি যাদের কোনও আবেগ অনুভূতি থাকবে না । যারা রোবটের বৈশিষ্ট্য ধারণ করবে । তাদের মৃত্যু ভয় পর্যন্ত থাকবে না । হাসি-কান্না-দুঃখ-বেদনা-বিস্ময় কোনও প্রকার আবেগ তাদের থাকবে না । আমি এদের নাম দিয়েছি ‘দি ডিস সেন্সরি’ । তারা হবে আবেগ বিবর্জিত মনুষ্য দল । এই বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা নিজেদের মৃত্যুকে বরণ করে নিবে । আমরা আমাদের অনুভূতি রক্ষা করব অনুভূতি বর্জনের মাধ্যমে । ” তার এই বিবৃতির পর সেইখানে বিস্ময়াভিভূত কিছু চোখের আবির্ভাব ঘটেছিলো । সেখান থেকে একজন প্রশ্ন করেছিলেন , “এটা কি আমাদের কলোনিকে রক্ষা করা হল?” ড.ক্লড বলেছিলেন , “ হ্যাঁ , এক অর্থে রক্ষা করা হল ।” সেই অর্থটা সবাই বুঝে নিয়েছিল । “আপনি এটা করতে পারবেন ? ” অন্যপাশ থেকে ড.ক্লডের আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছিল , “হ্যাঁ , আমি এটা করতে সক্ষম । ” ******* পুরো কলোনিতে আইকিউ টেস্ট এ ভালো ফলাফল করা কয়েকজনকে নিয়ে ড.ক্লড কাজ শুরু করেন । তার আত্মবিশ্বাস আর দক্ষতার সমন্বয়ে তিনি সফল হয়েছেন । এখন তিনি শুধু এই মনুষ্য দলকে বিস্তৃত করছেন । তাদের এই পরিকল্পনার যারা প্রধান অংশ , এই মনুষ্য দলের সদস্য , তারা নিজেরাও এই পরিকল্পনা সম্বন্ধে অবগত নয় । ******* হালকা নীল আলোর মাঝে আস্তে আস্তে চোখ খুলল ডেভিউ । চোখ খুলে সে আশেপাশে তাকাল । চারপাশে নীল রঙের আধিক্য দেখা যাচ্ছে । সে উঠে বসতে চেষ্টা করল । প্রথমে উঠতে পারল না । তারপর ধিরে ধিরে উঠে দাঁড়ালো সে । সামনে একটা আয়না দেখা যাচ্ছে । ডেভিউ আয়নার দিকে অগ্রসর হল । যখন সে আয়নায় তাকাল কেউ একজন তার পিঠে হাত রাখল । লোকটি হচ্ছেন ড.ক্লড , যদিও ডেভিউ তাকে চিনতে পারল না । ড.ক্লড বললেন , “ তোমার কেমন লাগছে ? ” ডেভিউ পাথরের মত মুখ করে বলল , “ কেমন লাগছে !!!” “হ্যাঁ , বল , কেমন লাগছে।” “আমি জানি না । ” ডেভিউ এর পাথরের মত মুখের দিকে তাকিয়ে ড.ক্লড ছোট্ট কিন্তু পরিপূর্ণ একটা হাসি হাসলেন । ****** দি লেভেনের পাশের কলোনি পোর্টফেল আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে । যদিও কলোনি দুটি পাশাপাশি অবস্থিত , এদের মধ্যে বেশ দূরত্ব রয়েছে । পোর্টফেল ইতোমধ্যে দি লেভেনের দিকে যুদ্ধযান নিয়ে অগ্রসর হয়েছে । দি লেভেনের জনসাধারণ , দি ডিস সেন্সরি ভয়ের অনুভূতির ঊর্ধ্বে চলে গেছে । ******* “হ্যাঁ , ভেঙ্গে ফেল । নীল কাঁচটা ভেঙ্গে ফেল।” ঘরের ভিতর থেকে কথাগুলো শুনতে পেলেন ড.ক্লড । বিকট একটা শব্দ করে নীল রঙের কাঁচটা ভেঙ্গে গেল । আহ! এই কাঁচটা কত প্রিয় ছিল ড.ক্লডের । দুই তিনজন সৈনিক মত লোক ঘরটাতে ঢুকল । হাতে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র । ড.ক্লডের চোখে স্পষ্ট ভয় প্রকাশ পেল । কিন্তু তার মুখে একটা ছোট্ট হাসি লেগে ছিল যা কেউ ই লক্ষ্য করল না ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রজ্ঞা মৌসুমী
মানুষের আবেগ-অনুভূতি যেভাবে নিম্নগামী হচ্ছে- দ্য ডিস সেন্সরি হতে আর দেরী নেই। অথবা যারা যুদ্ধ করে স্বাধীনতার জন্য- হয়তো তাদের তীব্র আবেগ-অনুভূতি আছে বলেই মৃত্যুকে এত অনায়াসে বরণ করে নিতে পারে। নীল রঙের কাঁচটা ভেঙ্গে ফেলার দৃশ্যটা সুন্দর ছিল। সব মিলিয়ে আমার পড়তে ভালো লেগেছে।
একদম সঠিক কথা বলেছেন ! কিন্তু আমি এখানে নতুন আর লেখা জমা দেওয়ার শেষ দিনে আমি এই খবর পাই । সময়ের অভাবে লিখতে পারলাম না ! আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ । ভালো থাকুন ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।