'তোকে আমি ফাল্গুনি বলেই ডাকবো।' 'কিন্তু আমি তো চৈতি।' 'তাতে কি? তোর আর আমার ভালোবাসা তো ফাল্গুনেই।' 'আমি তোকে ভালোবাসি কে বললো?' 'কেন, আলম, জাহাঙ্গীর, সলোমন সবাই। তুই যখন স্কুলে যাওয়ার পথে দোকানে আসিস। মেশিনের একটা ঘড়্ ঘড়্ শব্দটা বন্ধ হলেই বেশ বোঝা যায়। আব্বুর চোখেও একটা সন্দেহ থাকে। দুপুরে আব্বু খতে গেলে ওরা হাঁসা-হাঁসি করে নিজেদের মধ্যে। বলে, জাফর প্রেম করছে। আমার খুব লজ্জা করে।' 'তুই কি বলিস?' 'আমি বলি, ও তোর রেললাইন পেরুতে ভয় পায়। কবরখানার কাছে ওর গা ছমছম করে। তাই একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।' 'তোর আব্বু কিছু বলে না?' 'আম্মুকে বলেছে বোধহয়। হিঁদুর মেয়েকে নিকে করা যায় না। সমাজে এমন চল্ নেই। গ্রাম থেকে বাস ওঠাতে হবে। তোর আব্বু জানে?' 'বাবা জানলে আমার পড়াশোনাই বন্ধ হয়ে যাবে। মাকে অবশ্য একটু আধটু কথা বলেছি।' 'মা কি বললো?' 'মা খুব ভয় পেয়েছে। যজমানি করে অতিকষ্টে সংসার চলে আমাদের। লোক জানাজানি হলে না খেয়ে মরতে হবে। বেজাতে বিয়ে করলে গ্রামছাড়া করে দেবে ওরা।' 'তাহলে আমরা কোনদিনই বিয়ে করতে পারবো না?' 'আঃ! আমার হাতটা একটু চেপে ধরতে পারিস না। খাঁ খাঁ রেললাইনটা যেন ভয়ে দম বন্ধ করে দেয়। মনে হয় এই বুঝি হুস্ হুস্ করে দত্তিটা ঘাড়ে এসে পড়ে আর হ্যাঁ, স্কুলের ছুটি হতে হতে সন্ধ্যে নামে। কবরস্থানটা বড্ড ফাঁকা। আগে ভাগে আসিস্ কিন্তু' 'আচ্ছা বাবা আচ্ছা, আগেই আসবো। তুই এখন স্কুলে যা। আমায় দোকানে ফিরতে হবে। দেরী হলে আব্বু হাঁকডাক শুরু করবে।' **** 'শোন মৈদুল, সারাদিন শুধু সেলাই ঘরে টাকা রোজগার করলেই হবে। ঘর সংসারের খাবার রাখো কিছু?' 'মাফ করবেন হাজি সাহেব। আপনার কথা বুঝতে পারছি না।' 'তা আর কি করেই বা বুঝবে? তোমার লায়েক ব্যাটা জাফর একটা হিন্দু মেয়েকে নিয়ে এগ্রাম ওগ্রাম বেড়াচ্ছে।' 'আমায় একটু সময় দিন হাজিসাহেব। ব্যাপারটা তদারকি করে দেখি।' 'তুমি কি আর করবে? কান পাতলেই শুনতে পাবে সবাই ছ্যা ছ্যা করছে।' 'আমায় কি করতে হবে আজ্ঞা করেন।' 'এমনটা হলে তো জাতধর্ম লাটে উঠবে। দুটো মাস সময় দিলাম। জাতবিরাদরির মেয়ে পছন্দ করে ছেলের নিকে করিয়ে দাও।' **** 'আব্বু আর আম্মি মিলে চুপিসাড়ে আমার নিকে ঠিক করেছে। ইরফান চাচার মেয়। এই ফাল্গুনেই কাজি সাহেব দিনক্ষণ পাকা করেছে।' 'তুই 'না' করিস নি' 'আমার নিকে না হলে ওরা আমাদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেবে বলেছে।'
'তোর এখন ভয় করেছে?' 'একদমই নয়, তোর আর আমার গলার ওপর দিয়ে দত্তিটা কেমন হুস হুস করে ধুঁয়ো উড়িয়ে চলে গেলো। মেন হল আমাদের দুজনকেই নিয়ে যেন কোন অজানায় পাড়ি দিলো। দুরের ওই কবর স্থানটাতেও আর গা ছম ছম করছে না। জাফর, আমার হাতটা একটু চেপে ধর নারে। তাহলে দুজনে কমসে কম একই কবরে নিশ্চিন্তে থাকতে পারি।'
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পবিত্র বিশ্বাস
ভাল লাগলো... শুভ কামনা রইল। আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।