আলোর প্রজন্ম

প্রত্যয় (অক্টোবর ২০১৪)

তাপস চট্টোপাধ্যায়
  • ১১
ডা. রায়চৌধুরীর কথা শুনতে শুনতে মহাশ্বেতার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে পড়ে। নিজেই বুঝতে পারে দেহের রক্ত সঞ্চলনটা এক লাফে দ্রুত চলাফেরা করতে শুরু করেছে। ঘরের মধ্যে ডা. রায়চৌধুরীর মুখোমুখি বসে মহাশ্বেতা। আজই সে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে, সুদর্শনের ছাড়া পেতে আরো দু-একদিন লাগবে। অঞ্জলি মহাশ্বেতার ভাবী বৌমা, এই বছরেই এম.বি.বি.এস ফাইনাল দেবে। ছেলে রজত এম.বি.বি.এস করে টেক্সাসে গত দু’বছর পড়ছে। এই বছরই পাশ পাশ করেছে। ডিগ্রি নিয়ে ফিরবে। সুদর্শনের ইচ্ছা ছিল ছেলে অঞ্জলির সাথে বিয়েটা সেরেই টেক্সাসে যাক, কিন্তু মহাশ্বেতা বাধ সাধে। রজত, অঞ্জলি, এমনকি অঞ্জলির বাবারও তেমনই ইচ্ছা ছিল।
কোথা থেকে কি হয়ে গেল মহাশ্বেতা এখনও বুঝতে পারে না। একের পর এক শারীরিক এবং মানসিক আঘাত তাকে বিধ্বস্ত করে তুলছিল। ডা. রায়চৌধুরীর ডায়গনিসিসে কোথাও ভুল থেকে যায়নি তো? এ ব্যাপারে উনি কনফিডেন্ট কিনা সেটাও জানা দরকার। হঠাৎ এই ধরনের সিদ্ধান্তে আসার কারণ কি? এলোমেলো একগাদা প্রশ্ন মহাশ্বেতাকে ঘিরে ধরে নাস্তানাবুদ করে তোলে। মহাশ্বেতা কোন থৈ পায় না। বিষয়টার গুরুত্ব ভাবলেও কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না, বন্ধু, আত্নীয় স্বজন, কারো সাথে নয়। তাহলে এখন মহাশ্বেতা কি করবে? সবাই কে চিৎকার করে বলে দেবে। সুদর্শন কেমন করে পারলো এই বিশ্বাসঘাতকতা করতে? মহাশ্বেতা তো জ্ঞানে অজ্ঞানে কোন দোষ করে নি, তাহলে এই শাস্তি কেন?
কদিন আগেও মহাশ্বেতার জীবনে ছিল আনন্দই আনন্দ। সুদর্শন আর্মি অফিসার থেকে রিটায়ার হয়ে একটা সরকারী সংস্থার চিফ সিকিউরিটি অফিসারে জয়েন করে। কলকাতায় নিজস্ব ফ্ল্যাটও পায়। রজত তখন সবে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পড়ছে। মহাশ্বেতাও আর্মির ভবঘুরে জীবন থেকে নিষ্কৃতি পায়। রজত বরাবরই পড়াশোনায় ভালো ছিল। শান্ত, নম্র স্বভাবের। ওকে নিয়ে মহাশ্বেতার কখনও কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি। ডাক্তারি পড়তে পড়তেই অঞ্জলির সাথে ভালোবাসা হয় রজতের। ও রজতের জুনিয়ার ছিল। কথাটা প্রথম মহাশ্বেতা ও তারপর সুদর্শন জানতে পারে। অঞ্জলির বিয়ের জন্য এর বাড়ী থেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। অঞ্জলির মা খুব ঘরোয়াই ছিলেন। উত্তর কলকাতার নামী বংশের মেয়ে হরেও আভিজাত্যের অহংকার ছিল না। মহাশ্বেতার চরিত্রর সাথে অনেকটা মিল ছিল। বাবা ছিলেন খুব রাশভারী প্রকৃতির মানুষ। কেন্দ্রীয় মিউজিয়াম কমিটির সদস্য এবং সক্রিয়ভাবে কলকাতা মিউজিয়ামের সাথে যুক্ত ছিলেন। বেশীরভাগ সময়ই নিজের গবেষণার কাজে ডুবে থাকতে ভালোবাসতেন। এহেন একটা অভিজাত পরিবারে ছেলের বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে মহাশ্বেতা বা সুদর্শনের কোন আপত্তি থাকা উচিত নয়, বরং এক পা এগিয়েই ছিলো।
মহাশ্বেতা জীবনে কোন বড় সামাজিক অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নেয়নি। ছোটখাটো পার্টির অ্যরেঞ্জ করতেও সে একটু বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়তো। বিশেষকরে রজতের চিঠিটা তার আসত্তি আরো বাড়িয়ে তুলতো। রজত লিখেছে যে, সামনের মাসে ষোল তারিখে সে ইন্ডিয়ায় ফিরছে। তারপর দু’মাসের মধ্যে বিয়েটা সেরে আবার টেক্সাসে ফিরতে হবে। অবশ্য ছ’মাসের জন্য, তারপর পাকাপাকিভাবে কলকাতায়। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বিয়ের যোগাড়যন্ত্র করা মহাশ্বেতার মাথায় পাহাড় প্রমাণ বোঝা চেপেছিল। ঠিক এমন সময়ই হঠাৎ মৃন্ময়ীর কথাটা মাথায় আসে। মহাশ্বেতার ণ’মাসির ছোট মেয়ে। বিবাহিতা কিন্তু ডিভোর্সি। একটা ইংরেজি স্কুলে শিক্ষকতা করে। মহাশ্বেতার ণ’মাসির বাড়ী খড়গপুর টাউনে। মৃন্ময়ী ডিভোর্সের পর সেখানেই পাকাপাকিভাবেই থাকে। বিয়ের পর থেকেই মহাশ্বেতার সাথে মৃন্ময়ীর বন্ধুত্ব হয়, তারপর বহুবার কলকাতায় এসে থাকতো। একটু ডানপিটে গোছের ছিল বলে সুদর্শনও চপল স্বভাবের শ্যালিকাকে বেশী পছন্দ করতো। আদর করে ছোট বৌ বলতো। যা কিছু গোপন মহাশ্বেতা মৃন্ময়ীকে অনায়াসে বলতে পারতো। দুজনে সময় অসময়ে কুটকচালিও করতো। খড়গপুর যাওয়ার কথা উঠতেই সুদর্শন এক পায়ে খাড়া হয়ে যায়। অনেকদিন ছোট শ্যালিকার দেখা না পেয়ে বোধহয় মনে মনে অস্থির হয়ে পড়েছিল।
-‘ওকে, ম্যাডাম, লেট আস স্টার্ট ফর এ লং লং ড্রাইভ।‘
সুদর্শনের গলায় উচ্ছ্বাসের সুর সোনা যায়। সুদর্শনের সাথে মহাশ্বেতা গাড়ি চেপে অনেক জায়গাই গেছে। এমনিতে ভালোই চালায়। কিন্তু বয়স তো হচ্ছে। তারপর হাই রোডে অ্যাকসিডেন্ট বাড়ছে অনেক। সেক্ষেত্রে সুদর্শনের প্রস্তাবে। সুদর্শন তার জিদ থেকে এক ইঞ্চিও নড়ে না। বরং বলে ‘তাড়াতাড়ি লঞ্চ সেরে নাও। উই উইল মুভ রাইট নাও টু খড়গপুর। কুইক, কুই গেট রেডি।’ কিছুটা আর্মির কমান্ডের ভঙ্গিতে মহাশ্বেতার দু’টো কাঁধে ঝাঁকিয়ে বলে। হাইরোডে পৌঁছে মহাশ্বেতার সুদর্শনকে সত্তর-এর বেশি স্পিডে ড্রাইভ করতে দেয় না। সামনের সিটে সুদর্শনের পাশেই বাসেছিল। ঘড়িতে সময় প্রায় দুপুর তিনটে। হাইরোডটা অনেকটাই খালি, আগে পিছে দু-একটা ট্রাক বা গাড়ী নজরে পড়ে। কালো সর্পিল রাস্তা অনেকটা দুর পর্যন্ত দেখা যায়। এই সময় মহাশ্বেতার খুব ভালোই লাগে। স্টিরিওতে মহাশ্বেতার একটা ফেভারিট রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছিল। হালকা হালকা মেঘের মধ্যে সূর্যটা মাঝে মাঝে লুকাচ্ছিল। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ, বাতাসে বসন্তের ছোঁয়া। দুপাশের বেশীর ভাগটাই সবুজ চাষের মাঠ, মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম। মেঠো চলা পথের দুদিকে পুকুর, গাছপালা আর কাঁচা বাড়ী। এক আধটা একতলা, দুতলা পাকাবাড়িও নজরে পড়ে।
স্পিডোমিটারের কাঁটাটা আশির উপরেই রয়েছে। সুদর্শন দুহাতে স্টিয়ারিংটা ধরে একমনে চালাচ্ছে। বোধ হয় স্টিরিওয় ভেসে আসা গানটা ওর ভালো লাগছে। মহাশ্বেতাও এক সময় ক্লাসিক্যাল চর্চা করেছে, ও জানে আসলে কোন কোন গান কোন বিশেষ অবস্থা বা পরিবেশেই ভালো লাগে। বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাঙালিকে একটু বেশীই নস্টালজিক করে তোলে। মহাশ্বেতার মায়ের কথা মনে পড়ে যায় হঠাৎ। মা বলতেন ছোটবেলায় একটা ঔষধ ছিল, সালসা। সব বয়সের সব রোগ অব্যর্থ ছিল। রবীন্দ্রসঙ্গীত তেমনি সালসার মতো সব বয়সের একটা চিরন্তর প্রাপ্তি। একটা আনন্দের শিহরণ মহাশ্বেতার সারা শরীরে খেলে যায়। সূর্যটা লাল হয়ে হাইরোডের ঠিক ডানদিকের কোনটায় ডুবে যেতে একটা নিকর কালো অন্ধকার চারিদিকে সবকিছু ঢেকে দেয়। সুদর্শনও হাইরোডের ঠিক ডান দিকের কোনটায় ঢুবে যেতে একটা নিকষ কালো অন্ধকার চারিদিকে সবকিছু ঢেকে দেয়। সুদর্শনও গাড়ীর হেডলাইট জ্বালায়। আশেপাশের গাড়ীগুলো আলো ওদের চোখে এসে আছড়ে পড়ে। একটা কিছু ভেঙে যাওয়ার ঝনঝন আওয়াজ। প্রথমে জোরে, তারপর ক্ষীণ হয়ে যায়। মহাশ্বেতার ডানহাতে আর বুকের উপর একটা প্রচণ্ড চাপ আর যন্ত্রণা অনুভূত হয়। খুব অল্পসময়ে সবকিছু ঘটে যায়, তারপর আর কিছু মনে পড়ে না।
মহাশ্বেতা চোখ খুলতেই সারা শরীরে একটা ব্যথা অনুভব করে। একটা বিছানায় শুয়ে আছে। মাথার শিয়রের জানালায় পর্দার ফাঁকের আলোটা দেখে সকাল হয়েছে বুঝতে পারে। মাথায় কপালে একটা হলকা নরম হাতের ছোঁয়া। অঞ্জলিকে দেখা যায়। এইবার আস্তে আস্তে মহাশ্বেতা বুঝতে পারে যে সে একটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। মহাশ্বেতা চোখটা খুলতেই একটা কমবয়সী নার্স কাছে এগিয়ে আসে, ‘এখন কেমন আছেন?’ গতকালের সন্ধ্যের ব্যাপারটা মহাশ্বেতা ততক্ষণে আন্দাজ করতে পেরেছে। প্রায় সবটাই মনে পড়েছে। - ‘সুদর্শন কোথায়? কেমন আছে?’
ততক্ষণে অঞ্জলি এসে মহাশ্বেতার পাশে বসেছে। নিজের হাতটা মহাশ্বেতার বুকের ওপরে রেখে বলে, ‘বাবা ভলো আছেন। মাইনর একটা অপারেশন হয়েছে। তুমি চিন্তা করো না।’ মহাশ্বেতার বাঁ-পায়ে আর বুকে একটা অস্বস্তি অনুভব করে, কিন্তু তবুও সুদর্শনের জন্য ব্যাকুল হয় মনটা। কেবলই একটা কু-গায়।– ‘ঠিক বলছিস অঞ্জলি? সুদর্শন বেঁচে আছে তো?’ মহাশ্বেতার গলায় একটা শিশুসুলভ ব্যাকুলতা টের পাওয়া যায়।
অঞ্জলি বুঝতে পেরে মহাশ্বেতার মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করে, ‘কি যাতা বলছো? বাবা খুব ভালো আছে। দুটো কেবিন পরেই আছে। তোমার পরে নিয়ে যাবো। তুমি শান্ত হয়ে শুয়ে থাকো। এখুনি ডা. রায়চৌধুরী তোমায় দেখতে আসবেন।’
কথা শেষ হতেই ডা. রায়চৌধুরী ভেতরে আসেন। বয়স প্রায় পঞ্চশেরর ওপর, ফর্সা লম্বাটে গড়ন। মহাশ্বেতার হাতটা তুলে নার্ভ দেখতে থাকেন- ‘কেমন আছেন?’ মহাশ্বেতা হাতের আর বুকের ব্যথার কথাটা বলে।
‘ঠিক আছে, আমরা এক্সরে করে দেখেছি কোথাও ফ্রাকচার নেই। সাডেন সাপ্রেসটয়ে মাসল্-এর ওপর চাপ পড়েছে তাই পেনটা হচ্ছে। পেন কিলার দেওয়া হয়েছে, ভালো হয়ে যাবে। আশাকরি পরশু আপনাকে ছেড়ে দেবো।’
মহাশ্বেতা নিজের সম্বন্ধে জানার চেয়েও সুদর্শনের বর্তমান অবস্থা জানতে বেশী উৎসুক ছিল। ডা. রায়চৌধুরী ব্যাপারটা আন্দাজ করে বলেন, ‘আপনার হাসব্যান্ড ভালোই আছেন। অনেক বড় কিছু ঘটতে পারতো, বাট গড সেভ ইউ বোথ।’ তারপর একটু থেমে বলেন, ‘কাল ওনার একটা মাইনর অপারেশন করেছি। জ্ঞান ফিরেছে, ভালোই আছেন। তবে ওনাকে রিলিজ করতে আরো দু-একটা দিন দেরী লাগবে।’
‘থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ্ ডক্টর।’ মহাশ্বেতার চোখটা আবেগে ছলছল করে এঠে। হাতদুটো জড়ো করে ডা. রায়চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানাতে চেষ্টা করে। ডা. রায়চৌধুরী তখন কেস হিস্ট্রির কাগজগুলোর ওপরে চোখ লোলাতে বোলাতে বলেন, ‘ইট নিডিন্ট, তাছাড়া রজত আমার খুব প্রিয় স্টুডেন্ট। গতকাল রাত্রে ওর সাথে আমি এই ব্যাপারে কথা বলেছি। আই এ্যাম আলসো পার্ট অফ ইউর ফ্যামিলি।’
এরই মধ্যে একটা দিন কেটে গেছে। মহাশ্বেতা এখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছে। বিছানা থেকে নেমে করিডোরে সকালে বিকালে হাঁটাচলাও করছে। অঞ্জলি বেশীরভাগ সময়টাই এখানে অথবা সুদর্শনের কেবিনে কাটিয়ে যায়। মাঝে একবার দুবার মহাশ্বেতাও সুদর্শনের কেবিনে গেছে। অনেকক্ষণ গল্পও করেছে। ওর পায়ে এখনও ব্যান্ডেজ আছে তাই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা বারণ, উঠে বসতে পারে। সুদর্শনের কেবিনে বেশী যাওয়া আসা মানা আছে। তাই একটু লুকিয়ে চুকিয়েই যেতে হয়।
আজ সকালেই মহাশ্বেতার ছুটি হচ্ছে। অঞ্জলি সকাল নটার মধ্যেই এসে গেছে। সঙ্গে ব্যাগে মহাশ্বেতার শাড়ি, সায়া, ব্লাউজ সবই এনেছে। হসপিটালের এ্যাপ্রোনটা বদলে মহাশ্বেতা বাড়ীর জামাকাপড়গুলো পরে নেয়। এরই মধ্যে জানতে পেরেছে যে ওদের এক্সিডেন্ট হওয়া আইটেন গাড়ীটা এখন কোম্পানির গ্যারেজে চরে গেছে। ইন্সিওরেস কোম্পানিই দেখভাল করছে। এরই মধ্যে পুলিশ এসে সুদর্শনের থেকে যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়ে গেছে।
মহাশ্বেতার বাড়ী যাওয়ার প্রায় প্রস্তুত ছিল। একবার সুদর্শনের সাথে দেখা করে সোজা বাড়ী। অঞ্জলি পাশে পাশেই ছিল। তখনই নার্স এসে মহাশ্বেতাকে ডা. রায়চৌধুরীর সাথে দেখা করতে বলে। অঞ্জলি তখন কেবিনের বাইরে গেছে ডিসচার্জের যাবতীয় ফরম্যালিটিসগুলো কমপ্লিট করার ব্যাপারে। নার্স মহাশ্বেতাকে নিয়ে লিফট্-এ চাপিয়ে পরের ফ্লোরে ডা. রায়চৌধুরীর সামনে দাঁড় করিয়ে ফিরে যায়।
‘প্লিজ কাম ইন, বি সিটেড্ প্লিজ।’ মহাশ্বেতা সামনে রাখা চেয়ারটায় বসে পড়ে। ‘থ্যাঙ্ক ইউ, নাই ইউ ফিল অলরাইট?’
‘অ্যবসলিউটলি পারফেক্ট।’ মহাশ্বেতা মৃদু হেঁসে ডা. রায়চৌধুরীকে আশস্ত করে। এর ভাবভঙ্গিতে একটা স্বস্তিও নজরে আসে।
এরপরেই ডা. রায়চৌধুরীকে একটু অস্বাভাবিক আচরণে মহাশ্বেতা অনেকক্ষণ থেকেই একটু অবাক হচ্ছিল। একটা ব্যাপারটা জানার কৌতূহল আরো বেড়ে গেল। ‘ইয়েস, বলুন কি বলতে চান। মেক ইট ক্লিয়ার।’
‘আসলে এটা আপনার হাসবেন্ডের সাথে লিঙ্কড। কিন্তু স্ত্রী হিসাবে আপনারই কেবল জানার অধিকার আছে।’
ডা. রায়চৌধুরীর কথার মধ্যে একটা গোপন এবং গর্হিত কিছুর আভাস থাকে।
একটু দম নিয়ে ডা. রায়চৌধুরী শুরু করেন, ‘ইওর হাসবেন্ড হ্যসবিন এ্যাফেকটেড বাই হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্স ভাইরাস ইনফেকসন আর এ্যাকুয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রম, সর্টলি কলড এইডস।’
ডা. রায়চৌধুরীর শেষ কথাগুলো মহাশ্বেতার কানে অদ্ভুত লাগছিল। একটা প্রকাণ্ড হলঘরের মধ্যে যেন অনেকগুলো ড্রাম বাজছিল। তারস্বরে কিছু অশরীরী আত্মা ওদের অদ্ভুত ছন্দে নাচতে নাচতে চিৎকার জুড়েছিল। ডা. রায়চৌধুরীর ঠোঁটদুটো মনে হচ্ছিল ওঠানামা করে কিছু বলতে চাইছিল। মহাশ্বেতা অনেকটা চেষ্টা করেও কিছু বুঝতে পারছিল না।
‘মিসেস সেন, মিসেস সেন, প্লিজ ডোন্ট বি আফসেট। বি ব্রেভ। এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি।’
হঠাৎ ডা. রায়চৌধুরী মহাশ্বেতার হাতদুটো ধরে ঝাঁকানি দেন। মহাশ্বেতার সম্বিত ফিরে আসে।
‘দেখুন আমি কিন্তু কিছু প্রাইমারি সিম্পটম্পস দেখেই ব্যাপারটা বুঝতে পারি। তাছাড়া ওনার ইউরিনারি সিস্টেমে একটা মাইনর অপারেশনের আগে অন্যান্য টেস্টের সাথে HIV টেস্টটাও করা জরুরী ছিল। বাট ডোন্ট ওরি, দিস ইজ ভেরি আরলি স্টেজ। সি ডি ফোর টি সেল্স এখনও বেশী ক্ষতি হয়নি। এই মুহূর্তে এ্যান্টিভাইরাল ট্রিটমেন্ট শুরু করা উচিৎ।’
ডা, রায়চৌধুরী একটু চুপ করে আবার বলেন, ‘আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ী যান। রজত ফিরলে আলোচনা করে ডিসিশন নেওয়া যাবে।’
কথাটা বলে ডা. রায়চৌধুরী একটু চুপ করে থাকেন। মহাশ্বেতা যেন বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। সব কিছু বেশ স্পষ্ট বলে মনে হয় না, চেয়ার ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করে।
‘আর একটা মিসেস সেন,’ ডা. রায়চৌধুরীর গলায় সেই পুরনো সুরটাই ভেসে আসে, ‘আই মাস্ট সাজেস্ট আপনার আর রজতের ব্লাড সেগমেন্টও একবার দেখা দরকার। আপনার ব্যাপারটা ডিসাইড্ করবেন। স্যরি টু ডিস্টার্ব ইউ।’ ডা. রায়চৌধুরী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাতদুটো জোড়া করেন।
মহাশ্বেতা বুঝতে পারে তার বৈবাহিক জীবনে একটা চরম সঙ্কটের মুহূর্তকে তাকে মুখোমুখি করতে হবে। চেষ্টা করে মনে জোর আনতে, কিন্তু বারবার একটা আশঙ্কা চারপাশ তাকে অক্টোপাসের মত বেঁধে রাখে। একটু অমনোযোগী হয়েই বোধহয় হেঁটে গিয়ে লিফটে চড়ে ওপরের বারান্দায় আসে, তারপর সুদর্শনের কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়।
‘তুমি কোথায় ছিলে? আমি খুঁজছি তামাকে।’ করিডোরে অঞ্জলি মহাশ্বেতার হাতটা ধরে নেয়।
‘চলো বাবা ওয়েট করছেন। দেখা করে ফিরতে হবে।’ মহাশ্বেতা অনেকটা যান্ত্রিকভাবে অঞ্জলিকে অনুসরণ করে সুদর্শনের কেবিনে ঢোকে।
সুদর্শন নিজের বিছানায় হেলান দিয়ে বসেছিল। একদিনে ওকে একটু রোগা লাগছিল। মুখটা একটু ফ্যাকাসে। মাথায় ব্যান্ডেজ, মুখে গলায় বেশ কয়েকটা ক্ষত ড্রেসিং করা হয়েছে। বাঁ হাতের কনুই থেকে কজ্বি পর্যন্ত একটা সাপোর্ট দিয়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। অন্য সময় হলে মহাশ্বেতা হয়তো অনেক বেশী রিএ্যাক্ট করতো। সামান্য দাড়ি কাটার সময় গালে রক্ত দেখলে ও ও ব্যাস্ত হয়ে পড়ত, আজ তার কাছে এসব গুরুত্বহীন বলে মনে হয়।
একটু আগেই কিছু অভিশপ্ত মুহূর্ত তাকে সুদর্শন থেকে অনেক দুরে সরিয়ে দিয়েছে। এতদূরে যে ওকে এখন একেবারে অপরিচিত বলে মনে হয়। মনে হচ্ছে দুজনে যেন একটা ছোট্ট তাঁবুতে ছিল, হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ায় ওটা উড়ে গিয়ে তাদের ঘরসংসার, বিশ্বাস ভালোবাসাকে এক নিমেশে খোলা মাঠে এনে ফেলেছে, সবাই ঘিরে ধরে তাদের এই অসহায়তাকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে। এরই মধ্যে হয়তো সুদর্শন কিছু বরার চেষ্টা করে, হয়তো মহাশ্বেতাকে একটু কাছে আসতে বলে। মহাশ্বেতা পারে না। তার দেহ, মন শরীর সব কিছু যেন তার বশে নেই। অঞ্জলি বিষয়টাকে একটু হাল্কা করে বাবার দিকে এগিয়ে যায়, তারপরে মাথায় কপালে হাত বুলিয়ে কথা বলে। পরিস্থিতিটাকে সামাল দেয়। মহাশ্বেতা আর বসে থাকতে পারে না।
‘আমার শরীরটা ভালো লাগছে না, বাড়ী যাব।’ অঞ্জলি বুঝতে পারে মাহাশ্বেতার যেকোন কারণে শরীর ভালো নেই তাই একটু তাড়াতাড়ি মহাশ্বেতাকে ধরে কেবিনের বাইরে চলে আসে।
বাড়িতে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যই রজতের ফোন আসে। আসলে মহাশ্বেতা জানে আই এস ডি-র রিংটোনটা একটু আলাদা হয়। বাইরের বারান্দার ইজি চেয়ারে মহাশ্বেতা মাথাটা এলিয়ে চোখ বুজেছিল। ভিতরের ঘরে অঞ্জলি ফোনে কথা বলছে, একটু পরেই কর্ডলেসটা এনে মহাশ্বেতাকে দেয়, ‘এই নাও তোমার ছেলের ফোন।’
মহাশ্বেতা ক্লান্ত হাতে রিসিভারটা কানে লাগায়। ওপ্রান্ত থেকে রজতের আওয়াজ শুনতে পায়, ‘হ্যালো মাম্, কেমন আছো? আর ইউ ওকে? অঞ্জু বলছিল তুমি খুব টায়ার্ড ফিল করছো। এখন একটু শুয়ে রেস্ট করো। পরে কথা বলবো। ভেরি গুড নাইট।’
***
এখানেও সবাই খুব চিন্তায় ছিল সামনে এত বড় কাজ। আর তো মাত্র ১০-১২ দিন বাঁকি। হ্যাঁরে আমাদের হ্যান্ডসাম ভালো আছে? মৃন্ময়ী এক ভাবেই কথা বলে। একটা প্রসঙ্গের মধ্যে আর একটা প্রসঙ্গ প্রায়ই মিলেমিশে যায়। মহাশ্বেতা কোন জবাব দেয় না।
তুই একটু তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারিস? খুব দরকার তোকে। মহাশ্বেতা অনুরোধ করে।
'আমি তো দু-একদিনের মধ্যেই আসছি।' মৃন্ময়ী বলে।
'না, না তুই বরং কালই চলে আয়। ভীষণ একা লাগছে।' মহাশ্বেতার গলায় একটু অনুনয়ের সুর শোনা যায়।
'আচ্ছা বাবা, কালই আসছি।'
সন্ধ্যাবেলা অঞ্জলি খবরটা দেয় মহাশ্বেতাকে। রজত দুদিন আগেই কলকাতায় পৌঁছচ্ছে। অন্যসময় হলে মহাশ্বেতার মনটা আনন্দে নেচে উঠতো হয়তো। ঘরদুয়ার গুছোতে রেগে পড়তো কিংবা নতুন কোন রেসিপির খোঁজে পত্রপত্রিকা ঘাঁটা ঘাঁটি করতো। কিন্তু এই মুহূর্তে সেসব কিছুই ওর করতে ইচ্ছে হল না।
মহাশ্বেতার ব্যবহারের মধ্যে একটা পরিবর্তন অঞ্জলির নজর এড়ালো না।
'মা, তোমার শরীরে কোন কষ্ট হচ্ছে?' অঞ্জলি কোন শারীরিক অসুস্থতা আশঙ্কা করে হয়তো।
মহাশ্বেতা জবাবটা এড়িয়ে গিয়ে বরে, 'নাঃ ভালাই আছি। একটু দুর্বল লাগছে।'
ইতিমধ্যে মৃন্ময়ী ঘরের কাজকর্মে লেগে পড়েছে। কদিন ধরে বিকেলের দিকটা অঞ্জলিকে নিয়ে বিয়ের বাজারও করেছে। মহাশ্বেতাকে যাওয়ার জন্য পিড়াপিড়ি কম করেনি। একদিনই গিয়েছিল রজতের বিয়ের পাঞ্জাবি, অঞ্জলির বেনারসিটা পছন্দ করেছে। সোনার দোকানের লোক বাড়ী এসে অঞ্জলির পছন্দমত ডিজাইন নিয়ে গেছে। এতকিছুর মধ্যেও মহাশ্বেতার চলনে, ব্যবহারে একটা পরিবর্তন মৃন্ময়ী একটু বেশী ভাবায়। একটু বেশী রাতে মহাশ্বেতাকে একপ্রকার জোর করেই ছাদের ঘরে নিয়ে যায়।
'কি হয়েছে আমায় খুলে বলতো।' মৃন্ময়ী একপ্রকার নাছোড়বান্দা হয়ে যায়।
মহাশ্বেতা অবেক্ষণ চুপ করে থাকে। ছাদে একটু পায়চারী করে। মৃন্ময়ী বুঝতে পারে মহাশ্বেতা একটা অব্যক্ত যন্ত্রণাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। সেটা যে দৈহিক নয় সেটা বুঝতেও অসুবিধা হয় না। এগিয়ে এসে সস্নেহে মহাশ্বেতার পিঠে হাত রাখে। তখনই মহাশ্বেতা মৃন্ময়ীকে ধরে ওর বুকে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে, '... আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে রে মিনু...।' এরপর একটু সময় নিয়ে বাঁকিটাও সবিস্তারে মৃন্ময়ীকে বলে ফেলে।
দুজনেই চুপচাপ হয়ে যায় অনেকক্ষণ। খোলা আকাশের নিচে অন্ধকার খোলা ছাদের দুই বান্ধবীই একে অপরের মনের গভীরে ডুব দিয়ে কিছু যেন খুঁজতে থাকে, পায় না কিছুই। শুধুই হতাশা আর একটা ধ্বংসের আশঙ্কা।
আজ রজত আসছে। সকাল থেকেই মৃন্ময়ী মহাশ্বেতাকে মানসিকভাবে শক্ত হতে বলে। এরই মধ্যে মহাশ্বেতাও মৃন্ময়ীকে পেয়ে অনেকটা মানসিক জোর পেয়েছে। সকালেই স্নান সেরে সামান্য কিছু প্রসাধনে নিজেকে একটু পালটাতে চেষ্টা করে।
রজত ফিরেই ব্যাগটা রেখে মহাশ্বেতাকে জড়িয়ে ধরে। এটা ওর পুরনো অভ্যাস। ছোটবেলা থেকেই মায়ের সাথে তার একটু বেশী মাখামাখি। স্কুল থেকে এসে মহাশ্বেতার আদর না খেলে জামাকাপড় খুলতো না। রজতের স্নেহের স্পর্শটা আজ মহাশ্বেতাকে হয়তো আগের মতো উচ্ছল করলো না। একটা চাপা কষ্ট বুকটা ঠেলে উঠে গলায় আটকে গেল। দুপাশের চোয়ালের চাপে মহাশ্বেতা নিজেকে সামলে নেয়।
এর দুদিন পরেই গায়ে হলুদ। নিমন্ত্রণের পাঠ কিছুটা মহাশ্বেতা আগেই সেরে রেখেছিল। বাকিটা সুদর্শনই করেছে। গত দুদিন সুদর্শনকে একটু সুস্থ মনে হয়। নিজেই বিভিন্ন কাজে রিক্সা বা অটোতেই বাইরের কাজগুলো সারছে। পরশু থেকেই আত্মীয় স্বজনরা চলে আসতে থাকবে। সুদর্শন পাড়াতেই একটা গেস্ট হাউসকে ক'দিনের জন্য ভাড়া নিয়েছে। ইতিমধ্যেই রান্নার লোক ছাদের প্যান্ডেলের নিচে জলখাবার রান্না শুরু করেছে। ডেকরেটরের লোক বাড়ীর সামনে নহবতের তোড়জোড়ও শুরু করে দিয়েছে। এসব কিছু সুদর্শন নিজেই তদারকি করেছে। মাঝে মাঝে মহাশ্বেতাকেও জানাচ্ছে। মহাশ্বেতা এই কদিনই সুদর্শনকে একটু এড়িয়ে চরেছে। যে দু-একটা কথা না বললেই নয় সেটুকুই শুধু বলছে।
এরমধ্যে মহাশ্বেতার অস্বাভাবিক আচরণটা রজতের চোখ এড়ায় না। অনেকভাবে সে জানতেও চেষ্টা করে। মহাশ্বেতা শরীরের বাহানায় সবকিছু এড়িয়ে যায়। কিন্তু নিজেকে আর বোধহয় আটকাতে পারে না। গায়ে হলুদের সকলেই রজতের গায়ে হলুদ ছুঁইয়ে আশীর্বাদ করতে গিয়েই অঝোরে কেঁদে ওঠে। মহাশ্বেতার এই আচরণে একবাড়ী লোকজন অবাকই হয়ে পড়ে। মৃন্ময়ী একটু কাছেই ছিল। চট করে মহাশ্বেতাকে ধরে ওপরের ঘরে নিয়ে যায়।
গায়ে হলুদের পর্ব শেষ হতেই রজত পোশাক ছেড়ে মায়ের ঘরে চলে আসে। মহাশ্বেতা বিছানায় শুয়ে আছে। রজত চট করে প্রসারটা চেক করে। তারপর একটা ট্যাবলেট খাইয়ে চোখ বুঝতে বরে।
মহাশ্বেতা কতক্ষণ ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল নেই। ঘুমটা ভেঙে যেতেই বুঝতে পারে বিকেল গড়িয়ে গেছে। ঘরে রজত আর অঞ্জলিকে দেখতে পায়। মৃন্ময়ীও ঢোকে। রজত অঞ্জলিকে দরজাটা বন্ধ করতে বলে।
মহাশ্বেতা তখন খাটের ওপর উঠে বসে। একটা অজানা আশঙ্কা তার মনে চেপে বসে। বুঝতে অসুবিধে হয় না, যে নির্মম সত্যটাকে সে এতদিন গোপন কারাগারে বেঁধে রেখেছিল সে সেখানে আর থাকতে চাইতে চাইছে না। এবার বোধহয় তার মুক্তির সময় এসেছে।
রজত কোনরকম ভণিতা না করেই বলতে শুরু করে, ‘মা, মণিপিসির কাছে আমরা সব জেনেছি। তুমি হয়তো অবাক হবে আমি আর অঞ্জলি ব্যাপারটা অনেক আগেই জেনেছিলাম। বাবার আর তোমার একটা রুটিং ব্লাড টেস্টের সময় আমরা অনেকগুলো সেগমেন্টের সাথে এইচ.আই.ভি টেস্টেটাও করিয়ে নিয়েছিলাম। ইন ফ্যাক্ট আমরা আর অঞ্জলিও। আসলে আমাদের প্রফেশনে এটাকে ঠিকুজিকুষ্টি বলে আমরা দেখি। সেই প্রায় বছর খানেক আগে। তখনই আমরা জানতে পারি তোমার এবং বাবার ভাইরাস এফেকসানটা পজিটিভ।’
রজত অনেকটা প্রত্যয়ের সাথে নাটকীয়ভাবে বলে বলে চরে। মহাশ্বেতার সবকিছু যেন অবিশ্বাস্য রাগে। সেই ছোট্ট রজত, মনে পড়ে মাছের কাঁটা বেছে দেওয়ার সময় মহাশ্বেতা চশমা পরে নিত, পাছে কোন ছোট কাঁটাও ওর গলায় না যায়। একবার খেতে বসে জিভ কামড়ে ফেলে রক্তারক্তি, মহাশ্বেতা জ্ঞান হারিয়ে ছিল। সেই ছোট্ট রজত আজ জীবনের এতবড় ঘৃণ্য, অভিশপ্ত, কঠিন সমস্যাকে কত সুন্দরভাবে বলে চলেছে। ওর ব্যক্তিত্বের যে দৃঢ়তা মহাশ্বেতার ক্ষীণ সত্তাকে আলো দিচ্ছে। এবার রজত মহাশ্বেতার খুব কাছে সরে আসে। একেবারে কাছে, হাতটা কোলে, নির্ভীক সবল, ‘তুমি কোনরকম নার্ভাস হয়ো না। এটা অত্যন্ত প্রাইমারি স্টেজে। তাছাড়া অলরেডি তোমাকে আর বাবাকে একজন এইচ.আই.ভি স্পেশালিষ্ট ট্রিটমেন্ট করছেন। তুমি বা বাবা চেনো তাকে। মি. ভেঙ্কেটেশ। ওনাকে তোমাদের সিম্পলি ডক্টর অফ মেডিসিন বলেই জানানো হয়েছে। ইনফ্যাক্ট এ সমস্ত কৃতিত্ব অঞ্জলির। সি হ্যাজ মেড এভরি গেম প্ল্যান।’
মহাশ্বেতা রজতের হাত দু’টো ধরে ফেলে। নির্বাক ঠোঁট দু’টো অনেক কিছু বলতে গিয়েও পারে না। দু’টো চোখ নেমে আসা জলের ধারা দৃষ্টিকে ঝাপসা করে তোলে। রজত মহাশ্বেতার চোখের জল মুছিয়ে কাছে টেনে নেয়।
‘মা, প্লিজ কেঁদো না। বাবা জানলে দুঃখ পাবে। হি ইজ আওয়ার পেসেন্ট, দ্যাটস অল। তাছাড়া এই ভাইরাসে যেকেউ এফেক্টেড হতেই পারে। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ আজ এই ভাইরাসে এফেকটেড। তাছাড়া অনেক সময় কনট্যামিনেটেড ব্লাড ট্রান্সফিউসন, হাইপোডারমিক নিডলস-এর ব্যবহারেও এই ভাইরাস মানুষের রক্তে মিশে যায়। তুমি তো জানো নাইনটিন সিক্সটিটু-র ওয়ারে বাবাকে ফ্রন্টে থাকতে হয়েছিল এবং বাবা বোমার আঘাতে ইনজিওর হয়ে চল্লিশ ঘণ্টা বাঙ্কারে ছিল। তখন অনেকবারই ইনজেকশনও করতে হয়। ইন দ্যাট ইভেন্ট এনিথিং মে বি হ্যাপেন্ড।’
মহাশ্বেতার এতক্ষণ সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হয়। রজতের কথাগুলো ওকে অনেকটা মানসিক শক্তি ফিরিয়ে দেয়।
কথা বলতে বলতে রজত অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। উঠে গিয়ে পর্দাগুলো সরিয়ে জানালাগুলো একে একে খুলতে থাকে। অঞ্জলি এগিয়ে এসে মহাশ্বেতার পাশে বসে ওর পিঠে হাত রাখে।
খোলা জানালা থেকে অনেকটা পড়ন্ত আলো মহাশ্বেতার সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। ঘর ভর্তি গুমোট অন্ধকারটাও কেটে যায়, বোধহয় জ্ঞানের আলোয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # সাজানো--গোছানো বেশ উচুমানের একটি গল্প ।। ধন্যবাদ ।।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু চরম সংকটের মুহূর্তেও রজতের প্রত্যয়মূলক কথায় মহাশ্বেতা আশার আলো দেখতে পায়। চমৎকার একটি গল্প। খুব ভাল লাগলো। শ্রদ্ধা জানবেন।
শামীম খান দারুন লিখেছেন দাদা । সাহসী চরিত্র দিয়ে সময়ের সঠিক চিত্রটি এঁকেছেন । ধন্যবাদ , শুভ কামনা আর ভোট রইল ।
biplobi biplob ভাল লাগল দাদা, ভাইরাসের ইনফেকশন আর জ্ঞানের আলো

১৭ জুন - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪