কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একজন মানুষের সবচেয়ে কম কত সময় লাগে? জরীর মনে আছে মনোবিজ্ঞানের ক্লাস নিতে এসে প্রথম দিন বাদল স্যার এ প্রসংগে বলেছিলেন। 'এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ।' সেই ক্লাসের পর থেকে আজ পর্যন্ত জরী ছোট বড় অনেক বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সময়ের ব্যাপারটা কখনো ভেবে দেখেনি। আজ সকালে জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নিতে গিয়ে জরীর মনে হল বাদল স্যারের কথাই ঠিক। তার খুব ইচ্ছা করছিল ফোন করে স্যারকে বলতে, 'স্যার আমি আজ রাতে আত্নহত্যা করবো- এই সিদ্ধান্তটি আমি এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ সময়েই নিয়েছি।' পরক্ষনেই তার মনে হল, স্যার আজ তাকে বাসায় ডেকেছেন।
এর আগে জরী স্যারের বাসায় কয়েকবার গেছে। তবে কখনো একা নয়। আজ স্যার তাকে একা ডেকেছেন। কে জানে কী বলবেন। হলের ডাইনিং থেকে খাবার খেয়ে রুমে আসার সময় বাবা ফোন করলেন গ্রামের বাড়ি থেকে। 'জরী, মা আমার, সপ্তা খানিকের জন্য বাড়ি আয়। ওরা এখন আংটি পড়িয়ে রাখবে, তোর অনার্সটা শেষ হলেই না হয়...।' জরী লাইন কেটে দিয়ে ফোন অফ করে রাখে। জানে বাবা কষ্ট পাচ্ছেন, মা কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু তার কী-ইবা করার আছে। সিদ্ধান্ত যা নেবার তাতো নিয়েই ফেলেছে। এখন শুধু শুধু তার চার পাশের মানুষদের আশা দিয়ে কি লাভ।
দুপুরে ফোন অন করতেই নেহা, তরু, রবি, কাজল আর শ্রেয়া ফোন দেয়। 'জরী! তোর কী হয়েছে বলতো। মানুষের জীবনে কি দুঃখ-কষ্ট আসেনা? নিরবচ্ছিন্ন সুখ কি সবাই পায়? তাছাড়া একটা স্বার্থপর আর লোভীর জন্য কেন এভাবে কষ্ট পাচ্ছিস? বিকেলে টি.এস.সি. আয়। জমিয়ে সবাই আড্ডা দেব। তোর গান শুনিনা কতদিন হয়। এই আমাদের কথা একটু ভেবে দ্যাখ জরী। আয় আগের মত আমাদের সাথে। দ্যাখ পৃথিবীটা কত সুন্দর।' ওরা একে একে বলে যায় কথাগুলো। ফোন রেখে দিয়ে জরী কেবল একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দূরে কোথাও একদল কাক কা কা করে ওঠে কর্কশ গলায়।
বিকেলে জরী বাদল স্যারের বাসায় যায়। তাকে দেখেই স্যারের ছোট্ট মেয়ে অহি এসে গলা জড়িয়ে ধরে। জরী তাকে আলতো আদর করে দেয়। বাদল স্যার জরীকে নিয়ে বসেন তার স্টাডি রুমে। এরপর কথার জাল বোনেন। জরী একবারও তাকায়না স্যারের চোখের দিকে। 'জরী, ভেবে দেখ। ভুল ভালবাসা না পেয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়ার চেয়ে টিকে থেকে ভালবাসতে পারাটাই কি ভাল নয়?' শেষ প্রশ্ন করে স্যার জরীকে বিদায় দেন। রিকসা করে টি.এস.সি'র দিকে ফিরতে ফিরতে জরী পাখির ওড়াউড়ি দ্যাখে। পাশের রিকসায় বসে থাকা দম্পত্তির খুনসুটির দিকে তাকায় একপলক। বাতাসে কোন এক বটবৃক্ষের সবগুলো পাতা 'জরী' বলে উল্লাস করে ওঠে।
রিকসা থেকে নেমে টি.এস.সি'র ভিতরে ঢোকে সে। মাঠে গোল হয়ে বসে আছে ওরা। জরীকে দেখেই হইচই করে ওঠে সবাই। 'এই যে আমাদের জরীনা বিবি এসে গেছেন। জরী দ্যা গ্রেট। এবার আসর জমবে। জরী ঝটপট গান ধরতো একটা।' রবি চেচিয়ে বলে কথাগুলো। জরীও দেরি করেনা। জুতা জোড়া খুলে একপাশে ঠেলে দিয়ে সবার মাঝে বসে পরে। তারপর সমস্ত আবেগ দিয়ে গেয়ে ওঠে- 'আমার সকল দুঃখের প্রদীপ জেলে...।' গাইতে গাইতে জরীর চোখে জল চলে আসে। সে ভাবতে পারেনা বেঁচে থাকাটা এত সুন্দর। এত সুখের!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রওশন জাহান
ছোট গল্প হিসাবে হয়ত চলে. কিন্তু আকর্ষনীয় নয় . জরীর আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেবার আগে একটু পুর্ভাবাস থাকলে (আগের ছোট কোন ঘটনা উল্লেখ করলেও ) ভালো হত. আর হঠাত করে জরীর মন বদলে যাওয়াটা সিনেমাটিক হয়ে গেল। বিশ্বাস যোগ্য হলনা.
মিজানুর রহমান রানা
ভুল ভালবাসা না পেয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়ার চেয়ে টিকে থেকে ভালবাসতে পারাটাই কি ভাল নয়?'-----------রাজিব ভাই, কবিতাগুলো শেষ করে প্রথমেই আপনার গল্পে উড়ে এসে জুড়ে বসলাম। পুরো গল্পটি পড়ে যে ম্যাসেজটা পেলাম তা কিছুটা আমার জীবনের সাথে মিল আছে। আমি কয়েকবার আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে ভাবলাম, এটা তো কাপুরুষোচিত কাজ। কিছুদিন বেঁচে থেকে দেখি না কী কী ঘটে আমার জীবনে। আপনার গল্পটি ভালো লেগেছে, বলা যায় অভূতপূর্ব। ধন্যবাদ সংক্ষেপে এমন সুন্দর গল্পের জন্যে।
বিন আরফান.
গল্পটি পড়লাম প্রিয় ব্যক্তিদের মতামত দেখলাম আমি কি বলব ভাষা না খুজে পেলাম. আমি একটু ভিন্ন পরচর্চা করি. অন্যদের ক্ষেত্রে তা করি না. কেননা সমালোচনা করলে প্রতিফল কি দ্বারায় আমার চেয়ে বেশি আপনার অভিজ্ঞতা আছে যা আমি দেখেছি. কথা গুলো হলো স্টাডি রুম + জরি দ্যা গ্রেড এখানে বাংলা প্রতিশব্দ জুড়ে দিলে বাংলা গল্পের পূর্ণতার ঘাটতি দেখা দিত না, //পাখির ওড়াউড়ি দ্যাখে।// বানানটি চোখে লাগলো. এছাড়া গল্প তুলনামূলক অসাধারণই বটে.
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।