যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১১)

নাজিরুম মুবিন
  • ১১
  • 0
  • ৫৭
আর দশজন চাকুরিজীবির মতো আফজাল সাহেবও শুক্রবারে ঘুম থেকে একটু দেরিতে ওঠেন। আফজাল সাহেব যখন বিছানা ছাড়লেন ঘড়ির কাঁটা তখন দশের ঘরে। ইতোমধ্যে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে ওঠে পড়েছে। মিসেস আফজাল ডাইনিং টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছেন এদিকে তাদের দুই ছেলে ওহী ও রাহী ড্রয়িংরুমে বসে খেলছে। তাদের বড় ছেলে ওহীর বয়স ছয় বছর আর ছোটটার কেবল চার।
আফজাল সাহেব ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলেন। নাস্তা শেষে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার সাথে সাথে আয়েশি ভঙ্গিতে খবরের কাগজে চোখ বুলাতে লাগলেন। প্রথম পাতার একটা খবরে হঠাৎ তার চোখ আটকে গেল। “আন্তঃ মন্ত্রনালয়ের বৈঠকে শিশুদের সকল প্রকার ধ্বংসাত্নক খেলনা নিষিদ্ধ।” এক নিমিষে পুরো খবরটা পড়ে ফেললেন তিনি। খবরের বিষয়বস্তু ছিল, শিশুদেরকে সাধারণত খেলনা হিসেবে প্লাস্টিকের বন্দুক, পিস্তল, মেশিনগান, শটগান ইত্যাদি কিনে দেওয়া হয়। আরো দেওয়া হয় ছোট ছোট সৈন্য, দূর্গ, সেনাছাউনি, যুদ্ধক্ষেত্র ইত্যাদি। এতে শিশুদের মাঝে একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাবের জন্ম নেয়। এই শিশুরা পরবর্তীতে সাধারণ নাগরিক সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনা। তাই সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে এই ধরণের খেলনা নিষিদ্ধ করা হয়। বৈঠকে আরো সুপারিশ করা হয় খেলনা তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে প্লাস্টিকের ছোট ছোট দূর্গ, সেনাছাউনি তৈরি না করে তৈরি করবে সংসদের ছোট ছোট মডেল, বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের মডেল। ছোট ছোট সৈন্য তৈরি না করে তৈরি করবে সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, রাজনীতিবিদ ইত্যাদি। বৈঠক থেকে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ করা হয় তারা যেন তাদের সন্তানদের খেলনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন থাকে।
আফজাল সাহেব খবরের কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে তাকালেন। তার দুই ছেলে তখন নিবিষ্টমনে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলছে। একপাশে একটা ছোট দূর্গের মডেল। তার ভিতরে একদল খেলনা সৈন্য । দূর্গের বাইরে চারিদিকে আরেকদল খেলনা সৈন্য। দূর্গের বাইরের সৈন্যরা দূর্গের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মারাও পড়ছে বেঘোরে কিন্তু শেষ পর্যন্ত দূর্গের বাইরের সৈন্যদল দূর্গটা দখল করে ফেলল। দূর্গটা দখল করায় দুই ভাইয়ের সেকি আনন্দ। আফজাল সাহেব আঁতকে উঠলেন তার দুই ছেলের অনাগত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে।

দুই সপ্তাহ পরের কথা।
খেলনার দোকানগুলোতে তখন সব নতুন খেলনা। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। এই যান্ত্রিক জীবনেও সন্তানদের নিয়ে বাবা-মায়ের চিন্তার কোন অন্ত নেই।
একদিন অফিস শেষে আফজাল সাহেবও বেশকিছু নতুন খেলনা কিনে বাড়ি ফিরলেন। বাবা নতুন খেলনা নিয়ে এসেছে জেনে ওহী-রাহী দু’জনই মহাখুশি। আফজাল সাহেব প্যাকেট থেকে নতুন খেলনাগুলো বের করে দিলেন দুই ভাইকে।
“এসব কি বাবা?’’ খেলনাগুলো দেখে সমস্বরে প্রশ্ন করলো দুই ভাই।
“এটা হচ্ছে সংসদ ভবন।” একটা প্লাস্টিকের মডেল হাতে নিয়ে বললেন আফজাল সাহেব। “আর উনারা হচ্ছেন মন্ত্রী, এম.পি.। উনারা সংসদে বসে দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। তারপর তার সমাধান বের করেন।” হাসিমুখে বললেন আফজাল সাহেব।
“কিন্তু বাবা সংসদে তো এই লোকগুলো শুধু চিৎকার চেঁচামেচি করে, ঝগড়া ঝাটি করে। আমি টিভিতে অনেকদিন দেখেছি।” আফজাল সাহেবের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বলে উঠলো ওহী। আফজাল সাহেব তার ছয় বছর বয়সের ছেলের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন।
“না বাবা, সংসদে তুমি এই লোকগুলোকে নিয়ে দেশের সমস্যার কথা বলবে। সমাধান বের করবে। ঝগড়া-ঝাটি করার দরকার নেই।” ছেলেদেরকে বুঝাতে লাগলেন আফজাল সাহেব।
“এখন এটা দেখ।” কার্জন হলের একটা ছোট মডেল দেখিয়ে বললেন আফজাল সাহেব। “এটা হলো বিশ্ববিদ্যালয় এখানে ছাত্ররা পড়াশোনা করে, গবেষণা করে, রোবট বানায়। এইযে এরা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক।” কয়েকটা প্লাস্টিকের ছোট ছোট মানুষ দেখিয়ে বললেন তিনি।
“বাবা তুমি কিচ্ছু জানোনা। আমি টিভিতে দেখেছি, এই লাল রঙের বিল্ডিংয়ের সামনেতো কতোগুলো খারাপ ছেলে খালি মারামারি করে। ভালো মানুষকে মারে। বন্ধুকে তিনতলা থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। ওরা রোবট বানাবে কিভাবে?” বাবার কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো ওহী।
“আমরা এসব খারাপ লোকদের বন্দি করে ফেলবো। আমাদের কাছে দুই রেজিমেন্ট সোলজার আছে।” আধো আধো গলায় বলল রাহী।
আফজাল সাহেব তার দুই ছেলের কথা শুনে নির্বাক হয়ে গেলেন। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। মোবাইলের রিংটোনে মোহ ভাঙলো তার। মোবাইলে কথা বলতে বলতে অন্য রুমে চলে গেলেন তিনি।
পাঁচ মিনিট পর, আফজাল সাহেব মোবাইলে কথা শেষ করলেন। ততক্ষণে ওহী-রাহী সংসদ ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলের জানালায় কামান বসিয়েছে। মডেলগুলোর সামনে খেলনা সৈন্য, ট্যাংক। এর কিছুদূরে যুদ্ধক্ষেত্রের মডেলে নতুন কেনা খেলনা নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ। একদল পদাতিক সৈন্য তাদের ঘিরে আছে। রাহী কমান্ড দিচ্ছে , “খারাপ লোকেরা তোমরা আত্মসমর্পণ করো। আমরা বাংলাদেশের মুক্তিসেনা”।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গোলাম ইউসুফ সাগর ভালো লাগলো। নিয়মিত লিখবেন।
সূর্য চমৎকার একটা বিষয় নিয়ে লেখা গল্প। পড়ে গল্প মনে হয়নি, শতভাগ সত্য কথা। (আর এটা মনে হওয়াতেই গল্পের স্বাদ পুরোটা পাওয়া যায়নি।) গল্প পুরো করতে কিছু রস যোগের প্রয়োজন, আর এটা আসবে অনেক পড়া এবং লেখালখির মাধ্যমে। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল----
বিন আরফান. অপূর্ব. খুব ভাল লাগল.
মামুন ম. আজিজ চমৎকার একটা গল্প। এই গল্পটা এতদিন চোখে পড়ে নি , কি আম্চর্য। আমি এর ভেতরে লুকিয়ে থাকা স্যাটায়ারটার প্রতি চমকিত হলাম। ভোট ও দিলাম।
বিন আরফান. oti আনন্দে ভোট dilam.
বিন আরফান. Excellent. ভালো লাগল , একটু সতর্ক হলে আরো ভালো করতে পারবেন. তবে ভোট পাওয়ার মত. আমার লেখা বঙ্গলিপি পড়ার আমন্ত্রণ রইল. http://www.golpokobita.com/golpokobita/article/736/372
বিষণ্ন সুমন সাদামাটা গল্প, ভালই লাগলো
মাকাল ফল আরও লিখতে থাকুন :) ভাল হয়েছে

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪