রাত এলে প্রায়ই উত্তেজনা বোধ করে নাসির। যেদিন মাথায় চিন্তাটা ঢুকে সেদিন ও কোন কাজে মন বসাতে পারে না। কেমন যেন উৎসুক উৎসুক করে। আগে এমনটি ছিল না। আজকেও ওর কোন কাজে মন বসছে না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। নাসির মালিককে বলে কাজ থেকে ছুটি নেয়। বাসায় যেতে হবে। আজকের আকাশটা কেমন জানি। মন খারাপ হয়ে যায় নাসিরের। নিজের অজান্তেই সে বলে উঠে, ধ্যাৎ। তারপর এপাশ ওপাশ দেখে নেয় সে, কেউ শুনলো কিনা। শুনলে হয়তো পাগল ভাবতে পারে। রিকশা নেয় নাসির। গলির মোড়ে নেমে পড়ে সে। ঘরের ভিতর বাতি জ্বলছে। জানালা দিয়ে একবার উঁকি দিয়ে আবার গলির মাথায় আসে সে। রিকশার জন্য অপেক্ষা। এদিকটায় তেমন রিকশা পাওয়া যায় না। তবুও দাড়িয়ে থাকে সে। কোন কারণ নেই। তবুও মিনিট দশেক দাড়ায়। তারপর হাটা ধরে। গুনগুন করে একটা গান গাওয়ার চেষ্টা করে সে। কোন কিছুই আজ তার ভাল লাগছে না। এই রিকশা যাবি? না যামু না। ক্যান, যাবি না? যামু না। নাসিরের মেজাজ আরো চড়ে যায়। দাত কিড়মিড় করে সে। কিছু না বলে সে আরেকটা রিকশাকে হাক দিয়ে উঠে পড়ে। জায়গাটা নুতন। একটু একটু অস্বত্বি লাগছে। আগে এখানে আসেনি নাসির। এক বন্ধু কয়েকদিন আগে তাকে নিয়ে আসে এখানে। তারপর কয়েকবার এসেছে সে। একটা গলির মুখে রিকশা থামিয়ে নেমে পড়ে সে। ভাড়া চুকিয়ে গলির ভিতর হাটা ধরে। ল্যাম্পপোষ্টের হলুদ আলো। কেমন যেন বিষাদমাখা। অন্যসময় সে এই আলোতেই হাটে। কিন্তু আজ তার কেমন জানি লাগছে। রাস্তার দুপাশে থেমে থেমে কয়েকটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে। তাকে দেখে হাসি দেয়। চিরচেনা হাসি। অনেক দেখেছে নাসির। অভ্যাস হয়ে গেছে। তার গন্তব্য অন্য জায়গায়। সে একটা রুমের সামনে এসে দাড়ায়। দরজা ভিড়ানো। দরজা ঢেলে ভিতরে উঁকি দেয় নাসির। মেয়েটা বিছানার উপর বসা। ভিতরে ঢুকে পড়ে সে। পূর্ব অভ্যাস থাকলেও এই কক্ষে আগে আসেনি সে। একটু ইতস্তত লাগছে তার। দরজা আটকিয়ে বিছানার কাছে এসে দাড়ায় সে। অল্প বয়স্ক মেয়ে। চমৎকার চেহারা। নাসির খেই হারিয়ে ফেলে। বিছানার এককোণে বসে পড়ে সে। নাসির মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। কি সুন্দর! মেয়েটি তার দিকে তাকাচ্ছে না। নাসিরের একটু অস্বত্বি লাগে। এরকম মেয়েরা সাধারনত এমন হয় না। কি করবে সে? নাসির একটু গলা খাকড়ি দেয়। মেয়েটি তার দিকে একনজর তাকায়। নাসিরের ভিতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে। আজ এমন হচ্ছে কেন? মেয়েটির বয়স আর কত হবে চৌদ্দ কি পনেরো। এত অল্প বয়সের মেয়ে সে আগে দেখেনি। তার মেয়ের বয়সী। নাসিরের হঠাৎ তার মেয়ের কথা মনে পড়ে। এই মেয়েটির মতই তার মেয়েটি। স্কুলে পড়ে। সালমা নাম। এখানে আসার আগেও জানালায় উঁকি দিয়ে মেয়েটিকে দেখে এসেছে নাসির। ভিতরটা জানি কেমন করছে। অস্বত্বি লাগছে। সালমার কথা বারবার মনে পড়েছে। মা মরা মেয়ে তার। অনেক কষ্ট করে বুকে আগলে রাখে সে। কোন দিন কোন কষ্ট বুঝতে দেয়নি। সালমার মা মারা যাওয়ার পর মেয়ের কথা চিন্তা করে দ্বিতীয় আর বিয়ে করেনি নাসির। কিন্তু এই বাজে অভ্যাসে জড়িয়ে যায় সে। নেশার মত হয়ে গেছে। সালমার মার কথা খুব মনে পড়ছে আজকে। খুব সুন্দর না হলে চেহরাটা খুব মিষ্টি ছিল। খুব ভালবাসত তাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন মরে যায়। নাসির দু দিন জ্যান্ত লাশ হয়ে ছিল। কোন কথা বলত না কারো সাথে। সালমাকে নিয়েই ঘরে পড়ে থাকত। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে সে। সে ভেঙ্গে পড়লে মেয়েটির কি হবে। কিছু ভাবছেন? চৈতন্য ফিরে পায় নাসির। না কিছু না। আপনি যেজন্য আসছেন সেই কাজ সেরে চলে যান। দেরী কইরেন না। খালায় মারব। নাসির কথা হারিয়ে ফেলে। কি বলবে সে। যদি ও সে এই কাজের জন্য এসেছে তবু আজ কেন জানি বুকটা খা খা করছে। আমি তোমাকে তোমার পাওনা দিয়ে দিব। তোমার কথা বল। আমার কোন কথা নাই। তাড়াতাড়ি করেন। আমি কিছু করব না। তোমার কথা বল। কিভাবে এখানে এলে? মেয়েটি চুপ করে থাকে। নাসির ভালভাবে তার দিকে তাকায়। মেয়েটির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে। নাসির হতচকিয়ে যায়। কি করবে সে? কাঁদছ কেন তুমি? আপনে কিছু জানতে চাইয়েন না। খালায় জানলে মারব। খালায় কিছু জানব না। তুমি বল। মেয়েটি চুপ করে থাকে। নাসির দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকায়। সময় দ্রুত ফুড়িয়ে আসছে। সে মেয়েটিকে আরেকবার তাড়া দেয়। মেয়েটি ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলা শুরু করে। এক মাস হয়েছে সে এখানে এসেছে। এক লোকের খপ্পরে পড়ে এখানে চলে আসে। তাকে বিক্রি করে দিয়ে লোকটি পালিয়ে গেছে। নাসির শুনতে থাকে। যদিও পুরোনো গল্প তবু গল্পটা নাসিরেরর ভিতরটাকে নাড়া দেয়। নাসির অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। মেয়েটি অঝোরে কাদছে। নাসির মেয়েটির মাথায় হাত রাখে। আমি তোমাকে এইখান থেকে নিয়ে যাব। মেয়েটি তার দিকে তাকায়। নাসির তার চোখের চাহনি সহ্য করতে পারে না। সে চোখে এক ধরনের জিজ্ঞাসা। এক দীর্ঘ চাওয়া। নাসির চোখ নামিয়ে ফেলে। এইখান থেকে আপনি আমাকে নিতে পারবেন না। নাসিরও জানে এই কাজ তার মত লোকের পক্ষে অসম্ভব। নাসির উঠে দাড়ায়। সালমার মুখটি তার চোখের সামনে ভাসছে। সে পাঁচশত টাকার দুটি নোট মেয়েটির হাতে গুঁজে দিয়ে পা বাড়ায়। মেয়েটি পিছন থেকে ডাক দেয়। আপনি আমারে কবে নিতে আইবেন? নাসির দরজা খুলে বেড়িয়ে আসে। মেয়েটি আরেকবার ডাক দেয়। নাসির গলির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে আসে। সালমা তাকে বারবার ডাকছে। চোখের সামনে মেয়েটির হাসি মাখা মুখটি বারবার ভাসছে। সে আজকের স্মৃতি মুছে ফেলতে চায়। গলি মাথায় এসে দাড়ায় সে। একটা রিকশা থামিয়ে উঠে পড়ে নাসির। রিকশা চলছে। হয়ত এতক্ষনে মেয়েটি ছিড়ে খাচ্ছে অন্য কেউ আর মেয়েটির চাপা গোঙ্গানী এসে মিলিয়ে যাচ্ছে গলির অন্ধকারে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আখতারুজ্জামান সোহাগ
আপনার গল্পে সুন্দর একটা বার্তা রয়েছে। আমাদের সমাজের কিছু মানুষরূপী জানোয়াররা এ রকম অসংখ্য মেয়েকে এ পথে ঠেলে দেয়, রুদ্ধ করে দেয় ফেরার পথ। এ কানাগলি থেকে তাদের বের করা মোটেও সহজ নয়।
এফ রহমান
যেহেতু গল্প পড়ে ভোট দিতে হবে, তাই মনোযোগ দিয়ে গল্প পড়তে বসলাম। ভালোই লিখেছেন। কিন্তু কয়েকটি ব্যাপারে পরামর্শ না দিলেই নয়। লেখক এই গল্পে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করেন নাই। যা আমার মত খুঁতখুতে পাঠককে খুবই পীড়া দেবে। এবং গল্পের প্যারাগুলোর মাঝে একটু স্পেস দিতে হবে। সর্বোপরি চমৎকার একটি গল্প, অল্প কথায় অনেক কিছু ফুঁটে উঠেছে। লেখকের জন্য শুভকামনা।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।