মহাপ্রস্থানের পথে

উচ্ছ্বাস (জুন ২০১৪)

মিনতি গোস্বামী
বড় ছেলে স্বাধীন এসে মাকে বলে,মা এবার পাততাড়ি গোটাতে হবে.তোমার কখনো কোনো অসুবিধা করিনি,এখনো কোনো অসুবিধা হবেনা.তোমার জন্য কোলাহল মুখর শহরের বাইরে,একেবারে নির্জন এলাকায় গ্রাম্য পরিবেশে একটা বৃদ্ধাশ্রম ঠিক করেছি.সেখানে তুমি অনেক সঙ্গী পাবে.যে কটা দিন বাঁচবে,মুক্ত বাতাস টেনে শান্তিতে বাঁচতে পারবে.আমরা দু ভাই মিলেই ওই সুন্দর জায়গাটা তোমার জন্য বেছেছি .
মালতি দেবী শুনেছিলেন ষোলোআনা পাপ করলেই মাথায় বাজ পড়ে.কিন্তু তিনি কি ওই সীমানাও অতিক্রম করে গেছেন.তাই সাত সকালে ঝর নেই জল নেই,তার কান এই বজ্রাহত অবস্থা হলো? তিনি কি অচৈতন্য হে পড়েছেন?না ফিরে গেলেন তার এই আগলে থাকা মাটি টুকুর শিকড়ে?
মালতি দেবীর আজ মনে পড়ে সেই নব বধুর সাজে এই শশুরের ভিটেতে প্রথম পা রাখার দিনের কথা.পরে পরে শাশুড়ি শুনিয়ে ছিলেন তাদের পরিবারের করুন কাহিনী.বাংলাদেশের রংপুরে ছিল তার শশুরের পৈত্রিক নিবাস.দেস ভাগ হবার পর হাজার হাজার শরণার্থীর সঙ্গে রাতের অন্ধকারে তার শ্বশুর মা আর বউ কে নিয়ে কোনো রকমে সীমান্ত পার হযে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে পা রেখে ছিলেন.কিছুদিন ডোল খেয়ে ছিলেন.কিন্তু শাশুড়ি ছিলেন উদ্যোগী মহিলা.দেশ থেকে গরু বেচার কুড়িটি টাকা খুটে করে বেঁধে আনতে পেরে ছিলেন,আর এনে ছিলেন দু একটা গহনা.দিন পনের পর ই কলকাতা থেকে বর্ধমানে চলে আসেন.আলোম্গন্জে পাঁচ কাঠা জমি ত্রিশ টাকায় কেনেন.জমি বলতে শিয়াল চড়া জঙ্গল ছিল.
ভাড়া বাড়িতে থেকে তিনটি প্রাণী ঠোঙ্গা বেঁধে মুড়ি ভেজে বড়ি দিয়ে কোনো রকমে সংসারতা দাড় করান.এ দেশে এসেই জন্মায় তার স্বামী কমল.অভাবের সংসারে তার স্বামী লেখা পরা শিখে সরকারী অফিসে ভালো চাকরি পাই.চাকরি পাওয়ার দু বছর পর এ মালতি দেবীর সঙ্গে কমলের বিয়ে হই .
কমল ই আসতে আসতে বাবার কেনা জমিতে বাড়িটা তৈরী করে.পরিশ্রমী কমল তিন কাঠা জমির ওপর অট্টালিকা বানিয়ে ছিল.বাংলাদেশে সুপারি,নারিকেলের বাগান,কলা গাছের জন্য মায়ের মনটা খুব খারাপ হত বলে,দু কাঠা জমিতে বাগান বানিয়ে ছিল.
কমলের ছেলেরা কৃতী একজন আমেরিকায় ইন্জিনিয়ার,চত থাকে বাঙ্গালোরে.দুজনেরই একটি করে ছেলে.
মালতি দেবীর মনে পরে বউ কালের সেই ভরন্ত সংসারের কথা.শ্বশুর, শাশুড়ি, ঠাকুমা, স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে তার সংসার যেন ভরা দামোদর.কানায় কানায় তার উচ্ছ্বাসে পাড়ার লোকেরা বলত লক্ষ্মী মন্ত শাশুড়ির লক্ষ্মী বউ হেছে বটে.কোজাগরী লক্ষ্মীর ঘট তার হাতে তুলে দিয়ে শাশুড়ি বলেছিল দেখো বৌমা আমার পূর্ব বঙ্গের স্মৃতি বলতে এই লক্ষ্মীর ঘটটি.ওই দেশের টাকায় এই ভিটাটা কিইন্যা ঘর করসি.তুমি এই ভিটা ছাড়া যাবনা.মালতি দেবিও সম্মতি দিয়ে ছিল ঘাড় নেড়ে,শাশুড়িকে প্রনাম করে তুলে নিয়ে ছিল লক্ষ্মীর ঘট.শিক গুলো যখন মাথার ওপর থেকে একটা একটা করে ভেঙ্গে যাই তখন ছাতা হীন মালতি দেবী ভিটে টাকেই ছাতার মত আগলে বসে ছিলেন.
কমল থাকতেই ছেলেরা বাইরে চলে যায় চাকরি সুত্রে.বাবা মারা যাবার পর শ্রাদ্ধ শান্তি করতে এসে ছিল.চুকতেই চলে যায়.মা কেমন করে কোথায় থাকবে একবারও বলেনি .
আজ বাড়ি বিক্রির পালা.প্রমটারের কাছে টাকা পয়সা আগাম নিয়েছে ছেলেরা.মালতি দেবী ছোটো থলিতেলক্ষ্মীর ঘট স্বামী,শশুর ,শাশুড়ির ছবি আর কিছু জামা কাপড় নিয়ে পথে নামলেন.পিছন ফিরে তার ভিটের দিকে তাকিয়ে দেখলেন,সেখানে আর ভরা দামোদরের উচ্ছ্বাস নেই,শুধু বালি বালি আর বালি.একেই বোধ হই ভাটা বলে.ছেলেদের দাঁড় করানো গাড়ির দিকে ফিরেও তাকালেন না.পদব্রজেই যাত্রা করলেন মহাপ্রস্থানের পথে.
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Abdul Mannan স্বল্প পরিসরের গল্পে আপনার ভাবনা আমাকে মুগ্ধ করলো ।আপনার গল্পে সন্তানের কর্তব্য ও দায়িত্ব সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন তা আপনার গল্পের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে ।ভালো থাকুন ।আমার পাতায় আসার আমন্ত্রণ জানালাম ।
প্রজ্ঞা মৌসুমী "একেই বোধহয় ভাটা বলে"- এই একটা মাত্র কথাতেই কেমন এক তোলপাড়। দেশভাগ, সংসারের টানাপোড়েন, অবহেলা- স্বল্প পরিসরে কত কিছু উঠে এসেছে। শেষের লাইনে মালতি দেবীর আত্নসম্মান-জেদ দেখে শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। গল্পের থিম আমার ভালো লেগেছে। নিরন্তর শুভ কামনা
সকাল রয় সুন্দর লেখা। ভালৈা লাগলো খুব।
biplobi biplob Golpoti Darun likasan didi. Akti kotha nabollay noy, manus jokon jibonas shas prantha chola asa, thoko ai dhoronar golpo kobita & mritu k niya juka pora. Ata ami ROBINDRONATH ar kathra o dakaci.
ওয়াহিদ মামুন লাভলু বেদনাদায়ক গল্প। সন্তানেরা আজ ভুলে যাচ্ছে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা। খুব ভাল লিখেছেন। ভালো লাগা জানালাম ও আপনার প্রাপ্য ভোটটিও দিলাম। শ্রদ্ধা জানবেন।
এফ, আই , জুয়েল # বেশ ভালো -----,, অনেক সুন্দর একটি গল্প ।।

২৫ জানুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪